আমরা বাঙালি। হিন্দুরাষ্ট্রের হিন্দুস্থানী হিন্দি আমাদের ভাষা নয়। আমাদের ভাষা যদি আমরা হারিয়ে ফেলি তবে তা হবে আমাদের একটা বড় বিপর্যয়। যদি তা রুখতে হয় তবে দরকার বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাংলা পক্ষ আসুক,এরকম আরো সংগঠন আসুক। দুর্গ গড়ে উঠুক আমাদের ঘরে ঘরে। রুখে দাও হিন্দুস্থানী সাম্রাজ্যবাদ - যে সাম্রাজ্যে বাঙালির মর্যাদা ক্রীতদাসের চেয়ে বেশি কিছু নয়।
অন্তত রাজ্য সরকার তো তার অভ্যন্তরীণ সমস্ত অফিসিয়াল চিঠি চালাচালি নোটসিট এগুলো তো বাংলাতে করতে পারে। 2003-04 মহাকরণে এমন এক প্রচেষ্টা হয়েছিল তার পর আবার সেই ইংলিশ।
লেখাটাতে চাবুকের জোর। তবু কি মগজে ঢুকছে ? কোনো সংগঠন বা সরকার নয় , মানসিকতার পরিবর্তন দরকার প্রতিটি বাঙালীর যারা ''কান খুলে শুনে নেয়'' , আত্মসমীক্ষা করার সময় নিজেকে ''ছান বিন'' করে , কোথাও থেকে 'চলে আসে' না বরং ''এসে যায়'' , জীবনে ''ঝেলে'' যায়। এমনি শব্দের ব্যবহারের তালিকা এক অসীম গুণোত্তর শ্রেণী। হিন্দি মুলুকে থাকি তো , স্বজাতির এই হিন্দি-প্রেম দেখে বড়ো বেদনা বোধ হয়।
আরে দাদা ।...কেলানো ছাড়া কোনো রাস্তা নেই I যত গুটকা পার্টি আছে , মাথায় করে কলা আর যাবতীয় ফল নিয়ে ""চ্যাটের"" পুজো করতে গঙ্গায় যায় ... শালা হাগতে মুততে পর্যন্ত জানেনা এখন এদের ওষুধ হচ্ছে রাম প্যাদানী !! তবে মেও ধরবে কে ??এখানেতো আমরা গনেশ পুজো হনূমান চালিসা , রামনবমী এইসব গো বলয়ের পুজো আর্চাতে বেশ মজে আছি !!বাচ্চারা এখন হিন্দি ভাষায় কথা বলে , বাংলা বললে হাঁ করে তাকায়।.. মুম্বাই জগতের কত গুলো মদ্যপ দুশ্চরিত্র উলঙ্গ বিলাসী লোক আমাদের আইডল , এমতাবস্তায় মেও ধরার লোক পেতে অসুবিধে হবে!! নাহলে ওই শুওরের বাচ্চাদের একমাত্র দাওয়াই হলো কেলানো !!!!
ফের শুরু করেছেন? কে ক্যালাবে আপনি?
এই লেখাগুলোর এখন আদৌ কী প্রয়োজন জানি না । এসব নিয়ে অনেক কথা হয়েছে তো । বাঙালি কি নির্দোষ - বলে একগাদা উদাহরণ - কাদের উদাহরণ? না শহরের বাবু বিবিদের । এই গ্রুপকে তো দুটো সেট এ পুরোপুরি রাখা যায় । এক, আবাল জনতা, হালকা মুসলিম বিদ্বেষ, পিজ্জাহাট এর কুপন স্পেশালিস্ট । দুই, বিশ্বমানব । পাশের রাজ্য থেকে আসা ছাত্র এই রাজ্যের লোকের ট্যাক্সের টাকায় চলা ইউনিভার্সিটি ভর্তি করলে সমস্যা নেই, কারণ তাদের ছেলেমেয়ে আম্রিকা যাবে পড়তে । কই এখানে মালদার সেই মেয়েটার কথা নেই তো যে হিন্দি জানে না বলে টাউনের শপিংমল থেকে বরখাস্ত হলো । বাংলা অক্ষরজ্ঞান থাকা যে লোকটা ব্যাংকে গিয়ে বাবুবিবিদের কাছে হাতজোড় করে হিন্দি/ইংরেজিতে লেখা উইথড্রয়াল স্লিপ ফিলাপ করার জন্য - তার কথা কই?
বাংলাপক্ষ একটা বাস্তব সংগঠন । বায়বীয় ফেবু সংগঠন না । তাদের বিদ্বেষ ছড়ানো সাপোর্ট করতেই হবে এমনটা বলছি না । কিন্তু ভাষা তো ভৌগোলিক বা আরো ফান্ডামেন্টাল একটা মার্কার । সেটা দিয়ে এগ্রেসিভ জাত বলা হচ্ছে । আমি তো প্রচুর বড়লোক ডিগ্রিধারী নর্থ ইন্ডিয়ানকে চিনি যারা অল্পপরিচিত লোককেও কীভাবে বউকে বিছানায় নিজে ঢিট করে সেটার টিপস দেয় ।বাঙালি মুসলিম, পয়সাওয়ালা, এই সেটে কজনের অনেক বউ থাকে? কজনের দুটোর বেশি বাচ্চা? আমার দেখা 90% হিন্দিভাষী, পয়সা ও শিক্ষা নিরপেক্ষভাবে, পাশ দিয়ে মেয়ের বয়সী কেউও হাফপ্যান্ট পরে গেলে - রান্ডি কা বহত গর্মি হ্যায় । মেরা চলতা তো ইহাপে হি...... বলতে শুনেছি ।
হিন্দু খতরে মে হাই - 75% হিন্দু কটা মুসলিম সংস্কার পালন করে?? আর শহরের বাঙালি কুল সাজার জন্য হিন্দির পা চাটে না? খতরা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে??
ভাষা হিসেবে বাংলা উঠে গেলে আমার সমস্যা হবে না তেমন । ওই আমার মেয়েটা সুকুমার পড়তে পেলো না গো মার্কা কান্না জুড়বো বড়জোর । কিন্তু আমার বাবলের বাইরের বাঙালি? বাংলার ওপর যাদের পেটের ভাত নির্ভর করছে? সেই বাঙালি মালদার মেয়ে? ওর কী হবে?
প্রতীকের বক্তব্য যুক্তিসঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক | কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে আসলে বাংলাদেশের মানুষের বাংলা ভাষার ওপর যে মমতা ও অহংকার বোধ আছে সেটি এপার বাংলার মানুষের নেই | তারা নিজের ভাষার জন্য লড়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের বাঙালির গত একশো বছরে কোনো কৃতিত্ব নেই | এই জাতি আসলে নিজেদের বাঙালি বলে কোনো গর্ববোধ করেনা | অসম , নাগাল্যান্ড , পাঞ্জাব বা কাশ্মীরের মানুষ যেইভাবে নিজেদের ভাষা ,সভ্যতার জন্য হিন্দি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে সেটা এখানকার মানুষ পারলোনা তাই ইতিহাসের নিয়মেই তাদের টিকে থাকার কোনো অধিকার নেই |
এখানে শেখ মুজিবের মতো কোনো নেতাও নেই | শেখ মুজিবের ভাষা আন্দোলনের এবং পরবর্তীকালীন ছয় দফা দাবি ও মুক্তিযদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিহারি অনুপ্রবেশ বন্ধ করা | এখানে কোনো রাজনৈতিক দলেরই এই রকম কিছু করার ক্ষমতা নেই বরঞ্চ পশ্চিমবঙ্গকে পূর্ব বিহার করার আরএসএস এর চক্রান্ত্যের পক্ষে সবকটি দল আছে | পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের এখন যেকরে হোক পশ্চিমবঙ্গে বিহারি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে একজোট হয়ে কাজ করা |
রাখো তো মশাই।
হিন্দি আর বলিউড পুরো ছড়িয়ে গেছে। আর সেটার জন্যে (আমার মতে ১০০% দায়ী) বাংলার পপুলার কালচারের কলকাতা কেন্দ্রিকতা। কলকাতাকে জোর করে ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে, বলাই বাহুল্য, বাকি বাংলা রিজেক্ট করবে। করেওছে।
পপুলার পশ্চিম বাংলার কালচারের একটা খুব বড় ব্যাপার (যদিও very much under wraps) হল The upper-caste-upper-class-kolkata-centric-ization of popular culture.
সমসাময়িক একটা মডার্ন বাংলা সিনেমা বলো, যেটা কলকাতা বা তার আশেপাশের শহরতলীর চরিত্রদের -দের না নিয়ে বানানো। বর্ধমান? নদীয়া? দার্জিলিং? আসানসোল / দুর্গাপুর? নৈব নৈব চ
দার্জিলিং এর লোকজন নিয়ে কিন্তু দারুন ভালো সিনেমা হয়েছে - বাংলায় নয়, হিন্দিতে - Barfi.
আসানসোল বা তার আশেপাশের লোকজন নিয়ে দারুন ভালো সিনেমা হয়েছে - বাংলায় নয়, হিন্দিতে - Gangs of Wasseypur.
দুর্গাপুর এর লোকজন নিয়ে জঘন্য বাজে সিনেমা হয়েছে - বাংলায় নয়, হিন্দিতে - Goonday.
Net Net তুমি যদি একটা ছাড়া বাকি সবকটা সাব-কালচার কে পুরো undermine করো, subjugate করো, হেয় করো, টিটকিরি করো --- আবার তারপর আশা করো যে তারাই বাংলা বাংলা করে ধেই ধেই নাচবে। কেন নাচবে? বাংলা তো তাদেরকে reject করেই দিয়েছিলো।
বাঙালি নিজে নিজের ভাষার, সংস্কৃতি র কোনো গুরুত্ব দেয়না, নিজের কাছে অসৎ তাই আজ এই অবস্থা। আন্দোলন ওপর থেকে সবসময় শুরু করতে হবে তার কোনো মানে নেই, গ্রাউন্ডলেভেল থেকে নিজে কাজ শুরু করুন। দিনভর বাংলায় কথা বলুন, এবং শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করুন। ঝেলা, জিন্দেগি, এসব বাদ দিন। পাড়ার দোকানে গিয়েও যদি বিহারী বা গুজরাটির দোকান হয় বাংলায় কথা বলুন, শপিং মলেও তাই। বাাচা দের বাাঙলা বই পড়তে, শুনতে উৎসাহ দিন। ফাংশনে বাংলা গান গান, সাা রে গাা মাা পা, বাংলা টি ভি র বর্ষষবরণের অনুুুষ্ঠানে কেন পর পর হিন্দি গান চলে প্রশ্ন তুলুন।
আমার মনে হয় এই 'শুদ্ধ বাংলা' জিনিসটা একটা অবান্তর জিনিস - ভাষা জঙ্গম, নতুন নতুন শব্দ তার মধ্যে ঢুকবে, তাকে সমৃদ্ধ করবে, তাকে সময়ের সাথে আধুনিক করবে। 'শুদ্ধ বাংলা' জিনিসটা উচ্চবর্গ-উঁচুজাত-কলকাত্তাই-আঁতলাদের মৌরসীপাট্টারই রকমফের। ওপার বাংলায় তো ভাষায় একগাদা নতুন শব্দ ঢুকছে ঢুকেছে - তাতে মন্দ নয়, ভালোই হয়েছে বোধয়।
আমার মামারা জ্যাঠারা ভাইয়েরা এখনো কথা বলেন স-দোষের সঙ্গে, 'জিন্দেগী' তো আমাদের সীমান্ত-অঞ্চলের প্রায় সবাই বলতো। আমার মা কোলকাতা-অনুরাগী ছিলেন, তিনি বলতেন না। আমাদের কথ্য ভাষা ছিল সীমান্ত-বাংলা : কিছুটা আজকালকার সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষীর মতন। কিন্তু বাংলায় গলদ ছিল না - গড়গড় করে বাংলা বলতাম। লিখতাম।
যখন প্রথমবার কলকাতা এলাম - কী অপদস্থ, কী অপদস্থ ! " স্কুল ম্যাগাজিনে লিখবি? হাহা, এই জায়গাটা একটু পড়ে শোনা , বেশ একটু খোরাক হবে" . আমি তখন নিতান্তই ভীরু কমপ্লেক্সে-ভোগা কিশোর কিংবা সদ্যযুবক। বছরতিনেকের মধ্যে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছিলাম।
এই জায়গাটা একটু বেশিমাত্রায় ব্যক্তিগত হয়ে গেলো বোধয়, মাফ করবেন।
ব্যক্তিগত হতে পারে, তবে এটা খুবই সত্যি।
ত্রিপুরায় জনজাতি পরিবারগুলি থেকে আসা ছেলে মেয়েদের কথার টান উচ্চারন নিয়ে হামেশা বাঙালীরা উত্যক্ত করে। এটা একটা বড় কারন, অনেক সময়ই অভিজাত জনজাতি পরিবারগুলি, তথা রাজপরিবারের আত্মীয়স্বজনরা ছেলেমেয়েদের অবাংলাভাষী রাজ্যে পড়তে পাঠিয়ে দেয়, এবং তারপর তারা হিন্দি ইংরেজিতে চোস্ত হয়ে ফেরে; বাংলা তো আগেই তাঁদের বিদ্বিষ্ট করেছে।
আবার এইসব বাঙালী ছেলেমেয়েরাই তারপর কলকাতা গিয়ে কলকাতার লোকেদের কাছে তাদের পূর্ববঙ্গীয় টান, অশুদ্ধ উচ্চারন নিয়ে হ্যাটা খায়।
কাল একটা ব্যাপার হলো। আমার মেয়ে অনাবাসীদের আয়োজিত একটা অনলাইন আবৃত্তি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করছিল, সঞ্চালিকা ওর পরিচয় করাতে গিয়ে বললেন, ও কিন্তু আমাদের মত কলকাতার নয়, ওর মা বাবা ত্রিপুরা থেকে এসেছে, ওদের উচ্চারন হয়তো একটু অন্যরকম। এবার এতে আমি আহা দেখো কি ইনক্লুসিভ বলে আল্হাদে আটখানা হব, না ডিস্টিংক্ট ত্রিপুরা অরিজিন নিয়ে গর্বিত হব, না ব্যাপারটাকে উৎকট প্যাট্রনাইজিং হিসেবে নেবো, না একটা বাচ্চা যে কথা বলতেই শিখেছে দেশের বাইরে তার উচ্চারনে তার মা বাবার জন্মভূমির টান কতটা থাকতে পারে তার স্যাম্পল সার্ভে করবো - কিছু বুঝতে না পেরে মাথা চুলকোতে লাগলাম।
ধন্যবাদ r2h, মনের কথাটাই বলেছেন। আমি হয়তো উৎকট প্যাট্রোনাইজিঙই ধরতাম। তবে কিছুটা গর্বিতও হতাম .
আমার ছেলে একেবারেই খোকা এখন, ব্যাঙ্গালোরের স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা বাংলা নিয়ে পড়ে - ব্যাঙ্গালোরে হাতে গোনা দুয়েকটি স্কুলে এই সুবিধেটা আছে । তৃতীয় ভাষা কন্নড় - যে মাটিতে বড় হচ্ছে , সে মাটির ভাষাও প্রাথমিক কিছুটা জানা উচিত। ছেলের উচ্চারণ ন্যাচারালি কলকাতার বাংলা ভাষাভাষীদের মতন নয়, আর সেটা সম্ভব-ও নয়।