প্রতিদিনই গঙ্গা-আরতি শেষ হবার একটু আগেই ঘাট থেকে উঠে গোধুলিয়া মোড়ের দিকে হাঁটা লাগাই, নাহলে ভিড় হয়ে যায়। সিগরা যাওয়ার অটো পাওয়া যায় না। স্থানীয় নয় জানতে পারলেই অটোওয়ালারা রিসার্ভে যাওয়ার জন্য জোর করে, যে রাস্তা সাত টাকায় যাওয়া যায় তার জন্য ১৫০ টাকা দেওয়ার কোনো মানে হয় না, তাই প্রতিদিন তড়িঘড়ি স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হয়। সিগরা মোড়ে নেমে কিছুটা হেঁটে গেলেই একটা গলিতে আমার এককালীন কাশীবাসের অস্থায়ী ঠিকানা। গলিতে ঢোকার মুখেই ডানদিকে একটা ছোট্ট একটা পানের দোকান। আজ ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে একখিলি বানারসওয়ালা পান খাওয়ার। কাশীতে আসা ইস্তক পানের দোকান অনেক নজরে পড়েছে ঠিকই কিন্তু বেশির ভাগ দোকানের সামনে দণ্ডায়মান বাইকবাহিনীর জটলার দিকে চোখ পড়তেই আর দাঁড়িয়ে পান খাবার ইচ্ছে হয়নি। শুধু পান নয় চায়ের ঠেকগুলোর সামনেও সর্বক্ষণ এমন জমায়েত চোখে পড়ে। আজ রাত হয়ে গেছে, তার ওপর ঠান্ডাটাও পড়েছে জাঁকিয়ে। তাই দোকানে কোনো খদ্দের নেই দেখে পান খাওয়ার ইচ্ছেটা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে। দোকানে গিয়ে দাঁড়াতেই দোকানি জিজ্ঞাসা করলেন—“মিঠা পাত্তা?” অমনি আউড়ে দিলাম—
“মিঠা পাত্তা, বিনা কত্থা
লক্ষ্মীচুর, চমনবাহার
সোঁফ, সুপারি, ইলাইচি ভি
চাটনিকে সাথ!’’
সেই না শুনে চাড় দেওয়া তাগড়াই গোঁফওয়ালা পানওয়ালার চোখ ছানাবড়া। ছড়াটা নাকি সাংবাদিক স্নেহাশিস শূর মহাশয়ের, আমার কাছে পৌঁছেছিল এক পরিচিতের হাত ঘুরে!
ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে দোকানি যতক্ষণে ক্ষিপ্রহস্তে পান বানাচ্ছেন তিনি আমার মাথার মধ্যে ততক্ষণে সুকুমার রায় এসে উপস্থিত। ফিসফিয়ে বললেন—
“খান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির পাঁচ বোন থাকে কালনায়/নুন দিয়ে তারা ছাঁচি পান সাজে, চুন দেয় তারা ডালনায়।’’
ডানপাশে রাখা একটা থার্মোকলের বাক্সের ভেতর থেকে একতাড়া পান বের করে দোকানি তার সামনে বিছানো কালো কাপড়টার ওপর রাখল। পানগুলির রং অদ্ভুত রকমের সুন্দর আর স্নিগ্ধ, ঠিক কচি কলাপাতার মতো। মিষ্টি পান বা ছাঁচি পানের পাতা তো কলকাতাতেও কতবার খেয়েছি, কিন্তু এমন রং তো কই চোখে পড়েনি।
দোকানিকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম এটা বানারসওয়ালা পানের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একে বিশেষ উপায় প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। মান্ডি থেকে কিনে এনে পানকে বেতের ঝুড়ি বা টুকরিতে করে চটের বস্তা ঢাকা দিয়ে একটা বদ্ধ ঘরে রাখা হয়। যেখানে টুকরির থেকে দেড় থেকে দু-ফিট দূরত্বে কাঠকয়লার ভাট্টি জ্বালানো হয় ছয় থেকে আট ঘণ্টা। এভাবে তিন-চারদিন ধরে হালকা আঁচে একটু একটু করে পানপাতার রং গাঢ় সবুজ থেকে সাদাটে সবুজ হলে তা দোকানে আসে বেনারসি পানের খিলি বানানোর জন্য। কারণ, কাঁচা সবুজ পানের চেয়ে পাকা সাদা পানেরই স্বাদ বেশি। সেসব পানের আবার অনেক জাত—সাঁচি, দেশি, বাংলা, কড়ুই, গাজিপুরি, গেছো, ঘনগেঁটে, বাগেরহাটি, মঘাই, জুক্কি, চন্দ্রকলামাটিয়ালি, জগন্নাথি, মজাল, মিঠা, হরগৌরী, কর্পুরী ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে নাকি মঘাই স্বাদে গুণে সর্বোৎকৃষ্ট।
বেনারসি পান। খাঁটি কুলীন। কাশীবাসীদের পানবিলাস চোখে পড়ার মতো। বেনারসের প্রত্যেক মহল্লায় ছোটোবড়ো পানের দোকান নজরে পড়ে। ভালো কথা, এই যে আমি মিঠা পান খেলাম, তা না খেয়ে আমি কিন্তু চিবোতে পারতাম, এই বেনারসী গলিতেই কম সে কম আরও নয় কিসিমের পান, পাতা ও মশলার তারতম্য অনুযায়ী — সাদা পান, পঞ্চমেওয়া পান, জরদা পান, গুলাব পান, কেসরী পান, নবরতন পান, রাজরতন পান, আমাবৎ পান এবং গিলোরি পান!
বেনারসের পানের জগৎজোড়া খ্যাতি হলেও সেখানে পান চাষ বিশেষ হয় না। পানের পাতা আসে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো থেকে। আর সেই অনুযায়ী হয় তাদের নামকরণ। রসিকজনে নামেই চেনে। বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, ওড়িশার গঞ্জাম জেলা থেকে আমদানি করা পান জড়ো করা হয় ‘পানদারিবা’ বা পানের মান্ডিতে। সেখান থেকে পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীরা পান কিনে নিয়ে যায় আড়তদারদের কাছ থেকে। ১৯৫২/৫৩ সালে কাশীর বারুজীবী সম্প্রদায় গঠিত ‘শ্রীবারুইসভা সংগঠন’ এই পানদারিবার যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করে।
তবে পশ্চিমবঙ্গের পান কেনাবেচার হিসেবটা একটু অন্যরকম। নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৩২ টি পানে একগাছে। ৯৬টি পানে এক শ এবং ১২ শ পানে একপাই। পূর্ববঙ্গে আবার বিড়া, পণ, কাহন বা কোণার হিসেব।
বাংলাদেশের বাগেরহাটে বিখ্যাত পানের বাজার
একই মশলা দিয়ে বানানো সাঁচি পান বেনারসে খেলে একরকম আর অন্য শহরে আর-একরকম। বেনারসি পান মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।
দোকানে খরিদ্দারের চাহিদা অনুযায়ী চুন সুপারি খয়ের বা কাত্থা ছাড়াও মধু গোলাপের পাপড়ির সংমিশ্রণে তৈরি গুলকন্দ, লবঙ্গ, ছোটো এলাচ, ধান চাল বা ধনে বীজ, রুপালি তবকে মোড়ানো বড়ো এলাচের দানা, লালচে রঙের সুগন্ধি মিষ্টি সুপুরি, কর্পূর, মৌরি ও লাল সবুজ হলুদ রঙে রাঙানো ছোটো টুকরোয় কাটা পেঠা বা ছাঁচিকুমড়োর মিঠাই, চমনবাহার প্রভৃতি সহযোগে খিলি বানিয়ে বিক্রি করা হয়। পান সাজা হয়ে গেলেই পানপর্ব শেষ নয়। দোকানি সেই পান যত্ন করে কচি কলাপাতায় মুড়ে খরিদ্দারের হাতে ধরান। তবে অনেকে সুন্দর ছোট্ট বাক্সে পান ভরে দেন। আবার আছে আড়াইশো টাকা দামের ‘দ্য ফার্স্ট নাইট’ পান। হালফিলে নাকি ফুলশয্যার রাতের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি সোনালি ও রুপালি তবকে মোড়া কেশর দেওয়া পান খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কোনো কোনো নামি দামি পান দোকানে পানের খিলির মধ্যে শুধু জাফরানই নয় থাকে বহুমূল্য কস্তুরীও, দেওয়া হয় আসল মুক্তোর গুঁড়ো। তবে সেসব মহার্ঘ্য পান রাজাউজিরের ভাগ্যে জোটে। আমার জন্য এই পাঁচ-১০ টাকার পানই যথেষ্ট।
মনে পড়ে গেল ছোটোবেলা মাঝে মাঝে দিদার কাছ থেকে বায়না করে পান চেয়ে খেতাম। আমার দিদিমার একটা আয়তাকার রুপোর পানের ডিবে ছিল, তাতে খোদাই করে লেখা ‘অলকা’—দিদিমার নাম। ডিবের মধ্যে সুন্দর করে থরে থরে সাজানো থাকত যত্ন করে সাজা পানের খিলি, একটা এদিক তো পরেরটা উলটো দিকে মুখ করে। তার পাশেই একটা ছোট্ট দোক্তার কৌটো থাকত। দিদিমার মুখে শুনেছি স্বদেশি যুগে ঠাকুমা-দিদিমারা বিপ্লবীদের নাম লিখে রাখতেন পানের বাটায়। কেউ লেখাতেন বিনয় বাদল দীনেশের নাম, কেউ আবার মাতঙ্গিনী। এইভাবে অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা মা-দিদিমাদের ঘরের সন্তান হয়ে যেতেন। আর অন্তঃপুরবাসিনী সেইসব মা বোনেরা চার দেয়ালের বন্দি জীবনে বসেই বিপ্লবীদের প্রতি আশির্বাদী বার্তা পানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন লোকের মুখে মুখে।
দিম্মার মুখেই শোনা, আগেকার দিনে মেয়েরা পান খেত যাতে পানের রঙে ঠোঁট টুকটুকে লাল হয়। অর্থাৎ প্রসাধনী হিসেবে পানের ব্যবহার হত। তাই তো কৃষ্ণপ্রেমে আকুল বিদ্যাপতির রাধাকে বলতে শোনা যায়—শ্রীকৃষ্ণ তার কাছে—
‘‘হাতক দরপণ মাথক ফুল,
নয়নক অঞ্জন, মুখক তাম্বুল,
হৃদয়ক মৃগমদ, পীমক হার,
দেহক সরবস্ব, গেহক সার,
পাথীক পাণ, মীনক পানী,
জীবক জীবন হাম তুরা জানি।’’
পানের রসের সঙ্গে আবার শৃঙ্গার রসের একটা সূক্ষ্ম যোগাযোগ আছে। যে যুগে ওষ্ঠরঞ্জনী হিসেবে লিপস্টিক বাজারে আসেনি এবং মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে চিউইংগামের নামই কেউ শোনেনি সেসময়ে নবদম্পতিরা রাতে শুতে যাওয়ার আগে একখিলি করে পান মুখে দিতে ভুলতেন না। কর্পূর এলাচ লবঙ্গের গন্ধ দিব্য মুখশুদ্ধি হিসেবে কাজ করত আবার পানের রসে সিক্ত লাল টুকটুকে ঠোঁটে সঙ্গে একাকার হয়ে যেত সোহাগের রস। সেকালের প্রেমিক-প্রেমিকারা নিশ্বাসের নির্মলতা বজায় রাখার জন্য পান সেবন করতেন। শরীর ও মনে স্ফুর্তির সঞ্চার করতেও এটি ব্যবহৃত হত। কালক্রমে,পানপাতা নারী ও সুপুরি পুরুষের প্রতীক হয়ে ওঠে।
তবে যেহেতু পানের রস কামোদ্দীপক তাই শাস্ত্রমতে নাকি বিধবা মেয়েদের পান খাওয়া নিষিদ্ধ। প্রাচীনকালে সস্ত্রীক শয্যাগ্রহণের আগে এলাচ, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রী আর কপূর্র এই পাঁচপ্রকার গন্ধদ্রব্য সহযোগে বানানো তাম্বুল সেবন করার রীতি প্রচলিত ছিল। আবার মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ আছে চাঁদ সদাগরের স্ত্রী সনকা পানের সঙ্গে খয়ের ইত্যাদি মিশিয়ে পান খেতেন যাতে ঠোঁট লাল হয়। সেই লালা টুকটুকে ঠোঁট দেখে পাগল হতেন চাঁদ সদাগর। অতএব, যে সমাজে বিবাহ অন্নপ্রাশন উপনয়নের মতো মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে বিধবাদের কোনো অধিকার নেই সে সমাজে পান খাবার অধিকার যে তাদের থাকবে না সে তো বলাই বাহুল্য।
এককালে কলকাতার পানবিলাসী ফুলবাবুদের বড়ো প্রিয় পানের ঠেক ছিল কলেজ স্কোয়ারের কল্পতরু ভাণ্ডার। ৬/১ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ‘কল্পতরু’ পান দোকানটির নাম শোনেননি, এমন মানুষ উত্তর কলকাতায় খুব কমই রয়েছে।
কল্পতরু ভাণ্ডার, কলকাতা
রাধাবিনোদ দত্ত আর সনাতন দত্ত দুই ভাই মিলে এই পানের দোকান চালু করেন ১৯৩৭ সালে। মানে স্বাধীনতার ১০ বছর আগে। বারাণসী, এলাহাবাদ ও লখনউ থেকে পানের মশলা, জর্দা আমদানি করে কল্পতরু। পানের নামেরও কত বাহার! বাদশাহী, বেনারস রুচি, মনমাতোয়ারা, দিলখোস, মুখবিলাস, মুখরঞ্জন। মিঠামশলা পান মাত্র ৫ টাকায় যেমন পাওয়া যায়। তেমনই এদের স্পেশ্যাল পানের দাম ১,০০১ টাকা।
প্রতিষ্ঠাতার ছবিও টাঙানো রয়েছে ছোট্ট দোকানটির দেয়ালে। ছবির নীচে লেখা—‘পদার্পণ করে বদন প্রসন্ন করুন’। পানসম্রাট সনাতন দত্ত। জানা যায় মহানাম ব্রত ব্রহ্মচারী তাঁকে ‘পানসম্রাট’ উপাধি দিয়েছিলেন। সেই দত্তবাবুর বংশধররাই কল্পতরুর পানের ধারা বয়ে নিয়ে চলেছেন। কলেজস্ট্রিট এলাকায় গিয়ে মহাবোধি সোসাইটি আর ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলের একদম গায়েই একফালি একটা দোকান। দোকানে গেলেই দেখতে পাওয়া যায় ফ্রেমে বাঁধানো সব সার্টিফিকেট। রাজনীতি থেকে শিল্প-সংস্কৃতি জগতের দিকপালরা কল্পতরুর পানের স্বাদ গ্রহণ করেছেন। প্রাক্তন রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু, জাদুসম্রাট পি সি সরকার (সিনিয়র), অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ক মান্না দে, গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় সকলেই ছিলেন কল্পতরুর ভক্ত। কল্পতরুর পান খেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও।
পুজোপার্বণে বা যোগ্যিবাড়ির খাওয়াদাওয়ার পর এই কল্পতরুর পান আনানো হয় অর্ডার দিয়ে।
কল্পতরুর মতো অতটা বিখ্যাত না হলেও কলকাতার আর-একটি উল্লেখযোগ্য পানের দোকান আছে নিউমার্কেটের আমিনিয়ার দোকানের গেটের ঠিক বাঁ দিকে, তাজমহল পানশপ। দোকানের মালিক মোহম্মদ রাফির একনিষ্ঠ ভক্ত বলে দোকানে সবসময় রফিসাহেবের গান বাজে আর দোকানের ওপরেও বড়ো বড়ো হরফে লেখা—“সুন্দর গান, সুন্দর পান।’’ এই দোকানে গুলকন্দ দেওয়া বরফিলি মিঠা পানের স্বাদ যিনি একবার পেয়েছেন তিনি যদি পান-রসিক হন তাহলে আবার যেতে বাধ্য।
তাজমহল পান শপ, কলকাতা
সংস্কৃত ‘পর্ণ’ শব্দটি থেকে এসছে পান। এই পান মঙ্গলকারী ও সৌভাগ্যের প্রতীক। একবার নাকি অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় পানের জন্য দুনিয়া তোলপাড় করেন পঞ্চপাণ্ডব। হস্তীনাপুর ছাড়িয়ে নানাদিকে খোঁজ পড়ে যায়। কিন্তু কোথাও পান নেই! খুঁজতে খুঁজতে সন্ধানীরা পৌঁছান পাতালপুরীতে। সাপের রানির ঘরে। তখন বাসুকী তাঁদের উপহার দেন হাতের কনিষ্ঠ আঙুল। সেই আঙুল মাটিতে পুঁতলে জন্মায় পানের বল্লরী। সেগাছের ফুল নেই, ফল নেই। কেবল কচি সবুজ পাতা। সংস্কৃতে তাই পানের আর-এক নাম ‘নাগ বল্লরী’।
আবার একাহিনিও চলে যে, সমুদ্রমন্থনে উঠেছিল হলাহল। সেই বিষের ভাণ্ড নিয়ে মহাবিপদে পড়েন দেবকুল! অবশেষে সেই বিষ কণ্ঠে ধারণ করে দেবাদিদেব হলেন নীলকণ্ঠ। বিষের জ্বালায় তিনি মূর্ছা যান। তখন তাঁর কপালের ঘাম আর শরীরের ময়লা থেকে জন্মায় এক সুদর্শন পুরুষ। নারায়ণ তাঁর নাম রাখেন তাম্বূলপুত্র। তার বিয়ে হয় নাগকন্যার সঙ্গে। জন্মায়, পানরূপী নাগবল্লরী। তবে এসবই কল্পকথা। মোদ্দাকথা হল পানের লতা কোনোকিছুকে অবলম্বন করে বা সাপের মতো জড়িয়ে থাকে বলে সংস্কৃতে পানের আর-এক নাম নাগবল্লরী বা নাগবল্লী।
শ্রীমদ্ভাগবত থেকে শ্রীকৃষ্ণের পানবিলাসের কথা জানা যায়। শুধু কি শ্রীকৃষ্ণ? অবসরে পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রও নাকি পরম আহ্লাদে তাম্বুলসেবন করতেন। পানের ওপরে সুনজর ছিল সীতাদেবীরও।
ভাবা যায়!! প্রামাণ্য হিসেবে কম সে কম সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে পান চিবিয়ে চলেছে মানুষ। তবুও ক্লান্তি নেই। পুরাণ থেকে আয়ুর্বেদ, সবজায়গাতেই পানের উল্লেখ। আবার চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে আছে রাজার নির্দেশে ধনপতি সওদাগরকে যেতে হবে সিংহলে। ও দেশে গুয়া বা কাঁচা সুপারির বড়ো অভাব! রাজা চিন্তিত! কীসে সাজা হবে তাম্বুল, কী দিয়ে রাখবেন অতিথিদের মান? কাজেই, রাজ-নির্দেশে ধনপতি নৌকা ভাসালেন নোনাজলে। হাত পেতে নিতে হল রাজার দেওয়া তাম্বুল। সেইসঙ্গে শালবস্ত্র, লক্ষ মুদ্রা, তুরঙ্গ, বর্ম ও ফলাকাটারি। যথাসময়ে যাত্রা শুরু হল। পিছনে পড়ে রইল উজানিনগর, দুই স্ত্রী লহনা আর খুল্লনা।
সংস্কৃতে পানকে বলে তাম্বুল, তামিলে ভেট্টিলাই, তেলুগুতে তমলপাক, মারাঠিতে বিদয়েচি, গুজরাটিতে পান/নাগর-বেল, বার্মিজে কুন আ, কানাড়িতে বিলেদেলে, মালয়লমে বেত্তিনাই, খেমারে মেলু, থাই ভাষায় প্লু, সিংহলিতে বলাত, মালয়ে দেউনসিরিহ, আরবিতে তানবোল, ফারসিতে বগেঁতাবোল/তাবোল, ফিলিপাইন্সে ইকসু ও ভিয়েতনামে ট্রাউনামে পান পরিচিত। অথচ পানের অস্ট্রিক নাম ছিল বর। বর শব্দটি থেকেই ‘বারুই’ ও ‘বারুজীবী’ শব্দের উৎপত্তি, পান চাষই যাদের বংশানুক্রমিক পেশা। পানের বাগানকে বলে বরজ। কিছু গবেষকের মতে অস্ট্রালেশিয়ান বণিকদের হাত ধরেই নাকি ভারতীয় উপমহাদেশে পানের আগমন, তারা আবার ওই পান আমদানি করেছিল জাভা সুমাত্রা দ্বীপ থেকে।
আমার মামার বাড়িতে দুর্গাপুজোর শেষ দিন অর্থাৎ বিজয়া দশমীর দিনে মা দুর্গা ও তার ছেলেমেয়ের প্রত্যেক হাতে একটা করে ঝাড়খিলি পান দেওয়ার প্রথা চলে আসছে বহু বছর ধরে। একটা গোটা পানের শুধু বোঁটা আর শিরাগুলো রেখে বাকি অংশ কেটে বাদ দিয়ে তারপর প্রতিটা শিরার মুখে পরম যত্নে একটা করে ছোট্ট ছাঁচি পানের খিলি আটকে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে দেখতে অনেকটা ঝাড়লণ্ঠনের মতো বলে এর নাম ঝাড়খিলি পান।
ঝাড়খিলি পান। ছবি মৌমিতা ভৌমিক
আসামে সৌজন্যের প্রতীক পান। বাড়িতে সম্মানীয় অতিথি এলে একটি কাঁসার রেকাবিতে পানের খিলি, কাঁচা সুপারি সহযোগে শুকনো নারকেল কুচি সঙ্গে জল বাতাস দিয়ে তাঁকে আপ্যায়ন করা হয়, সঙ্গে থাকে সাদা রঙের অহমিয়া গামছা। সেদেশে কাঁচা সুপুরিকে বলে গুয়া। অসমদেশে পানের বাটায় কাটা হয় নানা নকশা। পানের বাটা তা সে পিতল হোক বা রুপো, তার পিছন দিকে থাকে ছিলাকাটা নকশা।
কাম্বোডিয়ায় পাওয়া সপ্তদশ বা অষ্টাদশ শতকের পানদান। ন্যাশনাল মিউজিয়াম কাম্বোডিয়া
পান রাখা ও খাওয়ার পদ্ধতির মধ্যে একটা বৈচিত্র্য দেখা যায় সারা ভারত জুড়ে। পান যেখানে রাখা হয় তাকে বলে ডাবর এবং পান যাতে করে পরিবেশন করা হয় তাকে বলে বাটা। যেখানে পান ধুয়ে লাল শালু কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়, যাতে শুকিয়ে না যায়। পেতলের অথবা রুপো দিয়ে তৈরি হয় এই বাটা। তবে এদের আকার আকৃতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হয়। বাংলায় দেখতে পাওয়া পানের বাটাগুলি হয় গোল স্ফীত বেশ গম্ভীর চরিত্রের। যেন হৃষ্টপুষ্ট গোলাকার গৃহিণী থুপ করে বসে আছেন ঘরে। অলস দুপুরের গৃহিণীর একান্ত আপন সঙ্গী। আজও বেশ কিছু পুরোনো বাড়িতে খুঁজলে ময়ূর আকৃতির পানের কৌটোর দেখা মেলে। ময়ূরের দেহের বিভিন্ন অংশে রাখা থাকে পান, চুন, খয়ের, জর্দা, সুপরি, পানের মশলা। অসমের পানের বাটার আকৃতি পাহাড়ে চূড়ার মতো। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, লখনউ, বেনারসে পান রাখার পাত্রকে বাটা বলা হয় না। একে বলে পানের কৌটো। এখানে পানের সঙ্গে রাখা হয় নানারকম সুগন্ধি দ্রব্য ও মশলা। এতে নাকি পান ‘রংদার’ হয়।
তবে কেবল মুখশুদ্ধি বা নেশার বস্তু হিসেবে নয়, বাঙালির ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন লোকাচারে পানের বিশেষ ভূমিকা আছে। যেমন, বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্যায়ে পান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কনে এবং বরপক্ষের তত্ত্বে পান যায় পান সুপারি ও বাতাসায় সাজানো থালা। শুভদৃষ্টির সময় কনে চোখ ঢেকে রাখে জোড়া পান দিয়ে। চিন্তাহরণ চক্রবর্তীর ‘হিন্দুর আচার-অনুষ্ঠান’ গ্রন্থে পানের ব্যবহার নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে। সেখানে লিখছেন—‘‘পান মাঙ্গলিক বস্তুরূপে পরিগণিত। আদর আপ্যায়নের উপকরণ হিসাবে বহুল ব্যবহৃত। মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে অতিথি অভ্যাগত বিশেষ করিয়া সধবা মহিলাদিগকে পান দিয়া অভ্যর্থনা করিবার রীতি ছিল। ভোজনান্তে অতিথিকে পান দেওয়ার প্রথা আছে। শুধু ভারতবর্ষই নয়, পুরো বিশ্ব জুড়েই ভিন্ন কৃষ্টির জনগণের কাছে এটি বহুমূল্য সম্পদ। মালয়েশিয়ার মালয় সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় কথা প্রচলিত আছে। ‘বাগাইকান পিনাঙ্গ দিবেলাহ দুয়া’। অর্থাৎ, নববিবাহিত ও উপযুক্ত জুটি একটি দ্বিধাবিভক্ত পান পাতার মতোই।
বাংলায় পানের প্রচলন ঠিক কবে হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্যের ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’ এবং অন্যান্য গ্রন্থ থেকে জানা যায় বহু প্রাচীনকাল থেকেই বঙ্গদেশে পান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ৪০০ থেকে ৩০০ পূর্বসাধারণাব্দে পালি ভাষায় লেখা বৌদ্ধ ‘জাতক’ এবং সংস্কৃত ‘ধর্মসূত্রে’ পানের উল্লেখ রয়েছে। জাতকের গল্পে এবং একাধিক পালি গ্রন্থেও তাম্বুল বা পান ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিষ্ণুশর্মা রচিত ‘হিতোপদেশ’-এর গল্পে পানের দুর্লভ তেরোটি গুণের উল্লেখ আছে। প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে রচিত আয়ুর্বেদ গ্রন্থকার সুশ্রুত রচিত ‘সুশ্রুত-সংহিতা’য় ভুক্ত বস্তু পরিপাকের আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, গুরুভোজকারীরা যেন আহারান্তে কোনো কোষ্ঠরোধক বা কটূ স্বাদ ফল কিংবা সুপারি, কর্পূর, জায়ফল, লবঙ্গ প্রভৃতি সহযোগে তাম্বুল চর্বণ করেন। পানের উপকরণের এই তালিকা থেকে বোঝা যায় সুশ্রুতের কালেই পান খাওয়া বিলাসিতায় রূপান্তরিত হয়েছিল এবং তা কতখানি পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। দ্বাদশ শতকে রচিত সংস্কৃত কোষগ্রন্থ মানসোল্লাসে যে আটরকম ভাগের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে তাম্বুল একটি। ওই গ্রন্থে তাম্বুলে যে পঞ্চ সুগন্ধ ব্যবহারের কথা বলছেন সেগুলো হল এলাচ, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রী আর কর্পূর।
পণ্ডিতেরা প্রাচীনকালের আরও যে-সব গ্রন্থে তাম্বুল বা পানের নজির পেয়েছেন তার মধ্যে ‘চরক-সংহিতা’ ও কালিদাসের বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ষোলো শতকের প্রথমদিকে রচিত ‘জ্যোতির্নিবন্ধ’ নামের ধর্মশাস্ত্র বিষয়ক এক গ্রন্থে পর পর চব্বিশটি স্তবকে পান খাওয়ার শুভ মুহূর্ত, ব্রাহ্মণকে তাম্বুল দানের পূণ্য, দেবতার প্রীতার্থে পানের ভূমিকা, মিত্র অথবা শত্রুর জন্য পান সাজাবার বিভিন্ন প্রক্রিয়া, নানাশ্রেণির পানের গুণাগুণ প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তৃত নির্দেশ দেওয়া আছে। পণ্ডিতদের দেওয়া এসব তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষে পান খাওয়ার প্রথা এক গার্হস্থ্য শিল্পকলার রূপ নিয়ে প্রায় সর্বজনীন হয়ে উঠেছিল।
অষ্টাদশ শতকের মিনিয়েচার চিত্রকলায় পান। কাশ্মীরের বাসোলি-র রাজাকে তাম্রকূট ও পান (বাঁ-হাতে) পরিবেশন করছেন এক নারী। সৌজন্য অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়াম, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
চর্যাপদে বৌদ্ধ গান ও দোহায় পানের সঙ্গে মশলা হিসেবে কর্পূর ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। চতুর্দশ শতকে লেখা বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর দুটি পদ এইরকম ‘গুয়াপানদি অদূতী পাঠায়িলোঁ তারে’ আর ‘সকল ব্রাহ্মণ করয়ে ভোজন, সকলে দিলেন পান। দ্বিজচণ্ডী দাস (ষোড়শ শতক) লিখেছেন, মুখে মুখে দিয়া পান গুয়ানিয়া/ঘুরিয়া বেড়ায় সুখে। ভারতচন্দ্রের (অষ্টাদশ শতক) অন্নদামঙ্গলে দেখি ‘পান বিনা পদ্মিনীর মুখে উড়ে মাছি’ এবং ‘খুন হয়েছিনু বাছা চুন চেয়ে চেয়ে।/ শেষে না কুলায় কড়ি আনিলাম চেয়ে’।
এসব দেখে শুনে সহজেই অনুমান করা যায় ওইসময়ে পান-বিলাস কতটা জনপ্রিয় ছিল। সেকালে ডাবরকে ‘তাম্বুলকরঙ্ক’ বা ‘তাম্বুলপেটিকা’ বলা হত। পানের ডিবার নাম ছিল তাম্বুলসম্পুট। তখন রাজপরিবারেও পানের প্রচলন ছিল। রাজাকে পান দেওয়ার জন্য নিয়োজিত থাকত বিশেষ শ্রেণির দাস, যারা তাম্বুলকরঙ্ক বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। বানভট্টের কাদম্বরীতে তাম্বুলকরঙ্ক বাহিনীর কথা উল্লেখ রয়েছে। ত্রয়োদশ শতকের পর্যটক মার্কো পোলো তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখেছেন, ‘তাদের (ভারতীয়দের) দাঁত যে এত চমৎকার তার কারণ তারা একরকম ভেষজ গুণসম্পন্ন পাতা চিবাতে অভ্যস্ত যাতে তাদের দেহের বিশেষ উন্নতি হয় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে।’ মুসলমানরা ভারতে এসেই পান চিবানোর অভ্যাস রপ্ত করে ফেলে। ১৩৫০ সালে ইব্ন বতুতা বর্ণনা করেছেন সুলতানি আমলে দিল্লির প্রাসাদে এলাহি ভোজনের পরে কীভাবে পান খাওয়া হত। মুহাম্মদ বিন তুঘলক দিল্লিতে একটা মণ্ডপ তৈরি করেছিলেন। সেখানে স্থানীয় মানুষ কিংবা ভিনদেশি গেলেই তাকে শরবত, পান আর সুপারি দেওয়া হত বিনামূল্যে।
ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়েরের বিবরণ থেকে জানা যায় সম্রাট শাহজাহান একবার সন্দেহ করেন, তাঁর বড়োমেয়ে জাহানারার সঙ্গে নজর খাঁ নামের এক উচ্চবংশীয় সুপুরুষ যুবা গোপন প্রেমে লিপ্ত। দরবারে বাদশাহ কাউকে নিজের হাতে পান দিলে তা অতি সৌজন্যমূলক ও উচ্চসম্মান প্রদর্শন বলে গণ্য করা হত। একদিন সম্রাট রাজসভায় সকলের সামনে সেই যুবককে একটি বিষ মেশানো পানের খিলি উপহার দিলেন। প্রথা অনুযায়ী তাকে তখনি তা মুখে দিয়ে চিবাতে হল। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনায় মশগুল হয়ে সে দরবার ছেড়ে তার পালকিতে গিয়ে উঠল। কিন্তু তীব্র বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হল বাড়ি পৌঁছানোর আগেই।
তবে পানে বিষ না মেশালেও ঝাল মিশিয়ে নতুন জামাইকে বিব্রত করার রেওয়াজ আমাদের সমাজেও ছিল একসময়। শুনেছি মায়ের বিয়ের দিন বরযাত্রীরা আসতেই আমার বড়োমাসির মেয়েরা ও বাকি দুই মাসি মিলে পানের খিলির মধ্যে কাঁচালঙ্কা ঢুকিয়ে রুপোর রেকাবিতে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করেছিল তাদের। আর সেই ঝাল পান খেয়ে হবু জামাই আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের যা নাকের জলে চোখের জলে অবস্থা হয়েছিল তা আর না বলাই ভালো।
সাংসারিক জীবনের সুখদুঃখের সমীকরণ পানের ক্ষেত্রেও খাটে। তাই পান নিয়ে উপমাবহুল লোককথা পল্লীবাংলায় মুখে মুখে আজও ফেরে।
যেমন:
‘ভালোবাসার এমনি গুণ,
পানের সঙ্গে যেমনি চুন;
বেশি হলে পোড়ে গাল,
কম হলে লাগে ঝাল।’
খুব ভাল লেখা।
ছত্তিশগড়ে কপুরী পান আসে নাগপুর থেকে। মুখে মিলিয়ে যায়। আমার পছন্দ। বাংলাপাত্তি ঝাল ঝাল। তবে জনপ্রিয় হল মিঠিপাততি। দামও বেশ।
অনবদ্য লেখা। পান নিয়ে এত সুন্দর লেখা আগে পড়িনি। পুরাতন সাহিত্য থেকে চমৎকার সব উদ্ধৃতি অন্য মাত্রা যোগ করেছে। খুব মজা হল বন্ধু স্নেহাশিসের মুখে শোনা ছড়ার প্রসঙ্গ এখানেও দেখতে পেয়ে।
অসাধারণ লেখা। সমৃদ্ধ হলাম।
""পান খায়ে সাইয়া হামার ""।....আশা ভোসলে জির গাওয়া এই গান পান কে আরো মহান করে তুলেছে তাই না ? সত্যজিৎ রায় তাঁর ""জলসাঘর "" ছবিতে পান খাওয়া কে সুন্দর ভাবে দেখালেন হিন্দু সমাজে , এবং মুসলিম সমাজেও পান একটা বিরাট জায়গা করে নিয়েছে তাই না ??কত ভালো হতো যদি ""পান পাত্র "" ছেড়ে সবাই শুধু পান কে আপন করতে পারতো ??
এই লেখা পড়ে তাম্বুল রসে মন মজল।
খুব ভালো লাগলো