“দিল্লির রাস্তায় ধেয়ে আসা উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের কর্পোরেট কৃষকদের সমস্যা অতি বিচিত্র – সে সাত দশক ধরে পুঁজিতান্ত্রিক কর্পোরেটের হয়ে যতরকম কুকম্ম গ্রামে সমাধা করার, করেছে - কর্পোরেটের অঙ্গুলিহেলনে বিষাক্ত চাষবাস ঢুকিয়েছে, চাষির বীজ ধ্বংস করেছে, জমি দখলদারি করেছে, কারিগর উচ্ছেদ করেছে, যন্ত্রনির্ভর একফসলি চাষ নিয়ে এসেছে, চাষির স্বনির্ভরতা লোপ ইত্যাদি গ্রামে চাপিয়ে দিয়েছে। এবার হঠাৎ করোনার আবহাওয়ায় দেখতে পাচ্ছে, তারা যাদের লাভের জন্যে নিজেদের মাথা এমনকী বকলমাটাও বিকিয়ে দিল, সেই কর্পোরেটরা রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে নতুন বিলে নিজেদের এক কণা অধিকার ও লাভ ছাড়তে রাজি নয় বরং কর্পোরেট চাষিদের কাছে বেণীর সঙ্গে মাথাও চাইছে।
কর্পোরেট কৃষকেরা দেখল এটাই তার সাত দশকের কর্পোরেটিয় সবুজ বিপ্লব রূপায়ণ করে কর্পোরেট পায়ে নিজেদের সঁপে দেওয়ার প্রাপ্তি”।
তিন কৃষি বিল নিয়ে উত্তর পশ্চিম ভারতের কৃষকেরা বিশেষ করে পাঞ্জাবের শিখ আর জাঠ কৃষকেরা কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর খড়গহস্ত, অন্যান্য কর্পোরেটকেও ছেড়ে কথা বলছে না। এক বছর আগের শাহিনবাগের আন্দোলনের মত উত্তর পশ্চিম ভারতের কৃষকদের আন্দোলন দেশজ ভৌগোলিক ব্যপ্তি না পেলেও রাজনৈতিক আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে বিদেশেও। আন্দোলন সম্বন্ধে নতুন কিছু বলার নেই, বাংলার অধিকাংশ প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদমাধ্যম দিল্লি আন্দোলনের সংবাদ প্রচারে খুব একটা মুক্তহস্ত না হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক সংবাদ মাধ্যম সেই ঘাটতি পূরণ করে দিচ্ছে, প্রতি মুহূর্তের সংবাদ পাওয়া এখন খুব একটা সমস্যার নয়। বহু যোগ্য মানুষ এই কাজ করছেন। তাই আন্দোলনের বিভিন্ন প্রকরণ নিয়ে এই প্রবন্ধে টিপ্পনি না করাই ভাল।
আরও পড়ুন, সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলন ও কৃষিসমাজের বিভিন্ন বর্গের অবস্থান- একটি উপক্রমণিকা
এই আন্দোলনকে তীব্রভাবে সমর্থন করে ছোট্ট প্রবন্ধটিতে দুটি বিষয় আলোচনা করব। প্রথমটি কেন্দ্রীয় সরকারের নানান দমনমূলক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকার জোরটা এই আন্দোলনের কৃষকেরা কীভাবে অর্জন করল, তা বুঝব পাঞ্জাব আর শিখদের ইতিহাস থেকে। দ্বিতীয়ত, লেখক যেহেতু কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সেই প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে, পশ্চিমি পুঁজিনির্ভর জাতিরাষ্ট্রীয় কেন্দ্রিভূত রাষ্ট্র ব্যবস্থা উপনিবেশের সময় থেকেই সাধারণ বহুফসলি অকেন্দ্রিভূত কৃষি ব্যবস্থার বিরোধী এবং কর্পোরেটিয় এক ফসলি পুঁজি নির্ভর কৃষিব্যবস্থার মদতদার – যে ব্যবস্থা পুঁজিনির্ভর, বিদ্যুৎনির্ভর, শ্রম প্রতিস্থাপনকারী শিল্পবিপ্লবীয় কারখানা পদ্ধতির বিস্তৃতিমাত্র। বর্তমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে যে সব কথা উঠে আসছে, সে সব আলোচনায় অকর্পোরেটিয় কৃষি, কৃষকের স্বাধীনতা, গ্রামের স্বনির্ভরতা, খাদ্য সুরক্ষা ইত্যাদির মত অস্বস্তিকর প্রশ্নের ঠাঁই কোথায় সেই প্রশ্নে এই প্রবন্ধটি শেষ করব।
উত্তর পশ্চিমের, বিশেষ করে পাঞ্জাবের শিখ সমাজের এই কৃষকেরা রাষ্ট্রকে হাড়ে হাড়ে চেনে সেই উপনিবেশের আগে থেকে। কেন বললাম এই কথা? পাঞ্জাবের শিখ সমাজ উপনিবেশ-পূর্ব সময়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালিয়েছিলেন এবং পরের দিকে তাঁরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতার অংশীদার হন। সেই বিষয়গুলি চুম্বকে আলোচনা করি।
১৬৯৯ সনে গুরু গোবিন্দ সিংহ নববর্ষে, বৈশাখীর দিনে বিপুল শিষ্য সমাবেশ ঘটিয়ে পাঁচজন শিষয়কে নির্বাচিত করলেন খালসার মূল ধারণার ধারক বাহক হিসেবে। প্রত্যেককে নির্দিষ্ট আচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হল - সকলে একটি পাত্রে একসঙ্গে পান করলেন। নিয়মও তৈরি হল - শিখেরা মাথার চুল আর দাড়ি কাটবে না, মদ, তামাক পরিহার করবে, হালাল মাংস খাবে না, মুসলমান মহিলাদের সঙ্গে সঙ্গম করবে না। প্রত্যেকের উপাধি হবে সিংহ। আকাটা চুল (কেশ) রাখবে, চুলে চিরুনি ডুবিয়ে রাখবে (কাঙ্গা), হাঁটু পর্যন্ত জামা পরবে (কাচ্ছা), ডান হাতে ইস্পাতের বালা পরবে (কাড়া) এবং তলোয়ার (কৃপাণ) বহন করবে (সূত্র: বারনারড কোহন, কলোনিয়ালিজম এন্ড ইটস ফর্মস অব নলেজ, অনুবাদে সাম্রাজ্যের মন ও মান, প্রকাশক ডাকঘর)। একবদ্ধতার মন্ত্রে গড়ে উঠল শিখ সমাজ। ১৭০৭-এ আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরে মুঘলদের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব হ্রাস পেতে থাকে এবং ভারত জুড়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পশ্চিমে শিখ রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। শিখ রাষ্ট্র টিকে থাকে প্রায় দেড়শ বছর, ১৮৪০-এর দশকের মাঝামাঝি ব্রিটিশদের হাতে পর্যুদস্ত না হওয়া অবধি।
শিখদের ক্ষমতার সঙ্গে বোঝাপড়ার দীর্ঘ ইতিহাস। বহুকাল উপনিবেশপূর্ব, ঔপনিবেশিক জাতিরাষ্ট্র দুই ব্যবস্থার অংশীদার হওয়ার ফলে তারা জানে ক্ষমতা কোন ভাষা বোঝে। এরা জানে কীভাবে রাষ্ট্রের হাঁটু ভাঙানো না গেলেও বাঁকানো যায়। দিল্লি সীমান্তে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্যে হয়ত তারা তৈরিও। চাষিরা আন্দোলনের যে রণনীতি নিয়েছে, তা যে কোনও পোড় খাওয়া কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষি করতে দক্ষ আন্দোলনের নেতাকে ঘোল খাইয়ে দিতে পারে। মন্ত্রীর চেম্বারের গ্ল্যামার, মিটিঙে পাঁচ তারকার ১০০০ টাকার লাঞ্চের থালি দেখিয়ে কাজ হয় নি, সব খাবার ফেলে সঙ্গে কৃষকরা সঙ্গে করে নিয়ে আসা রুটি খেয়েছে। এই জোরের জায়গা থেকে উপনিবেশ উত্তর সময়ে বঙ্গ-পাঞ্জাব ভাগের দেড় দশকের মধ্যেই সবুজ বিপ্লবের অংশীদার হতে চেয়ে রাষ্ট্রকে পাশে রেখেই কর্পোরেটদের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরেছিল শিখ সমাজের একটা বড় অংশ।
এবারে দ্বিতীয় প্রশ্ন। এই আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ কর্পোরেট কৃষক – এরাই সবুজ বিপ্লবের ধারক বাহক। কর্পোরেটদের সঙ্গে ফসলের চুক্তি চাষের বোঝাপড়াটা তারা সফলভাবে করে এসেছে গত দু’দশক - তাই এ অংশ জানে ক্ষমতার সঙ্গে কীভাবে লড়তে হয়। আমরা যারা কারিগর-হকার উৎপাদন ব্যবস্থার কথা বলি তাদের ভাবনা অন্য এক বিন্দুতে।
আরও পড়ুন, কৃষক আন্দোলনের দাবির নেপথ্যে
পাঁচের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই বড় পুঁজি, বিশেষ করে ফোর্ড ফাউন্ডেশন এবং রকফেলার ফাউন্ডেশন ভারতে কর্পোরেট কৃষি চালুকরার পরিকিল্পনা নেয়। কর্পোরেট লবি আজকের জৈব কৃষির মসিহা এম এস স্বামীনাথনকে ভারত সরকারের কৃষি ব্যবস্থায় বসানোর পরিকল্পনায় রিচারিয়াকে অসম্মান করে তাড়িয়ে দেয়। রিচারিয়া নিয়ে বিশদে ক্লদ আলভারেজ আটের দশকে ইলাস্ট্রেটেড উইকলিতে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন। দ্য গ্রেট জিন রবারি নামক প্রবন্ধও লেখেন তিনি। রিচারিয়া ছিলেন দেশের অন্যতম প্রধান কৃষি, ধান বিশেষজ্ঞ। আজকের দিনের দেবল দেব অথবা অনুপম পাল হাতেকলমে দেশিয় কৃষিকর্মে যে বৈপ্লবিক কর্মগুলি সাধিত করছেন, সেই কাজটি তিনি সরকারি স্তরে শুরু করেছিলেন পাঁচের দশক থেকে তত দিনে পাঞ্জাব, বাংলা ভাগ করে ঔপনিবেশিক পুঁজির হাতে ভারত আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। উত্তর ভারতীয় কৃষিতে ফোর্ড, রকফেলার ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা এবং বহুপাক্ষিক সংগঠনের সহায়তায় ভারত সরকার দেশজ কৃষির বৈচিত্রময় বনিয়াদ ধ্বংস করে নিয়ে আসছে বহুজাতিকদের উৎপাদন তত্ত্ব অনুসারী বৈচিত্রহীন লাভজনক অর্থকরী বড় পুঁজির অসামাজিক কৃষিকর্ম। পাঞ্জাবে শুরু হল নতুন কৃষি বিপ্লব – আদতে ঔপনিবেশিক লুঠ। অনুপম পাল দেখিয়েছেন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী ছাড়া ভারতে দানা শস্যের ঘাটতির সমস্যা ছিল না। কর্পোরেট কৃষিতে শস্য ঘাটতি স্রেফ বাহানা।
রিচারিয়া ভারত সরকারের বড় পুঁজির হাতে কৃষিকে তুলে দেওয়ার বিরোধী ছিলেন – ফলে যখন জৈব কৃষির অন্যতম প্রবক্তা স্বামীনাথন দেশজ কৃষি ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছেন বহুজাতিকদের সরাসরি সমর্থনে, তখন রিচারিয়াকে ছুঁড়ে ফেলা হল বিস্মৃতির অন্ধকারে। তিনি নিজস্ব উদ্যোগে ১৯০০০ ধান নথিভুক্ত করেন এবং বহু সংখ্যক প্রজাতির ধান সংগ্রহ করেন। তিনি সরাসরি আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা সংস্থার রচিত ভারতীয় কৃষির যন্ত্রীকরণের এবং গবেষণাগারে জিন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং রাসায়নিক দিয়ে বীজগুলিকে সংকর করার এবং মাঠে নির্বিচারে রাসায়নিক প্রয়োগের সরাসরি বিরোধিতা করায়, সরকারি এবং রাজনৈতিক দলগুলির বিরাগভাজন হন। তাঁর সংগ্রহ করা ১৯০০০ দেশিয় বীজ ছত্তিশগড়ের ইন্দিরা গান্ধী এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির হাতে ছিল। সঙ্গে জুড়েছিল আরও ৫০০০টি প্রজাতি। ২০০২-এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৪০০০টি প্রজাতি বহুজাতিক কৃষি সংস্থা সিনজেন্টার হাতে ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা’-র জন্য তুলে দেওয়ার চুক্তি করে। কোম্পানিটি সেই বীজগুলির জিন পরিবর্তন করে বাজারে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ খবর স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় চুক্তিটি আটকে যায়।
উপনিবেশ-উত্তর সময়ে উত্তর পশ্চিম ভারতের কৃষি অর্থনীতির একটা অংশের রাশ কর্পোরেট কৃষকদের হাতে চলে যায় সেই ছয়ের দশক থেকে। ফল হিসেবে ছোট জমির নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে থাকে বড় কৃষকদের কবলে। পুঁজি নির্ভর কর্পোরেট কৃষি যাকে ভারতীয় অর্থনীতি সবুজ বিপ্লব নাম দিয়েছে, তার ফলে ছোট কৃষকেরা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে দ্রুত।
কর্পোরেট কৃষির প্রথম দশকেই এই প্রবণতা দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায় ইউনিভার্সিটি অব দিল্লির অ্যাগ্রো ইকনমি রিসার্চ সেন্টারের করা পাঞ্জাবের নতুন পুঁজি, তেলে চলা যন্ত্রনির্ভর কৃষি সমীক্ষায়। পরে, আট, নয় এবং শূন্য দশকে এটি চরম রূপ ধারণ করবে। ইকনমিক এন্ড পলিটিক্যাল উইকলির ১৯৬৯-এর সেপ্টেম্বরের রিভিউ অব এগ্রিকালচার সংখ্যায় এই সমীক্ষাটি প্রকাশ করেন অশোক রুদ্র, এ মজিদ এবং বি ডি তালিব। শীর্ষক ছিল, ‘বিগ ফার্মার্স অব পাঞ্জাব – সাম প্রিলিমিনারি ফাইন্ডিংস অব আ স্যাম্পল সার্ভে’। সমীক্ষাকারেরা মুখবন্ধের সারাংশতে লিখছেন – ‘দিস পেপার প্রেজেন্টস সাম পারশিয়াল এন্ড প্রিলিমিনারি রেজাল্টস অব আ স্যাম্পল সারভে অব লার্জ ফারমস অফ পাঞ্জাব ক্যারেড আউট ইন দ্য সামার অব ১৯৬৮-৬৯।
‘অ্যান আইডিয়া অব দ্য এক্সপ্যানশন অব লার্জ স্কেল ফারমিং ইন পাঞ্জাব মে হ্যাড ফ্রম দ্য ফ্যাক্ট দ্যাট ল্যান্ড ওন্ড বাই ফারমার্স উইথ মোর দ্যান ২০ একরস ইনক্রিজড বাই এবাউট ৯.৫ পারসেন্ট বিটুইন ১৯৫৫-৫৬ এন্ড ১৯৬৭-৬৮। দিস অ্যাভারেজ, এগেইন হাইডস আ সিগনিফিক্যান্ট রেঞ্জ অব ভ্যারিয়েশন ইন দ্য রেটস অফ এক্সপ্যানশন। ফারমার্স অব দ্য সাইজ গ্রুপ ২০-২৫ একর্স এক্সপ্যান্ডেড বাই অনলি ৪ পারসেন্ট হয়ারএজ দোজ ইন দ্য সাইজ গ্রুপ ১০০-১৫০ একর্স এক্সপ্যান্ডেড বাই ৪০ পারসেন্ট।
‘দ্য এক্সপ্যানশন অফ লার্জ স্কেল ফারমিং হ্যাজ বিন অ্যাকম্পানিড বাই র্যাপিড গ্রোথ অব মেকানাইজেশন অ্যান্ড আ হাই রেট অব ক্যাপিট্যাল ফরমেশন। আ সিগনিফিক্যান্ট পোরশান অব ক্যাপিট্যাল ফরমেশন বাই ক্যাপিট্যালিস্ট ফারমারস ওয়াজ মেড পসিবল বাই স্টেট অ্যাসিস্ট্যান্স।
‘অলসো প্রেজেন্টেড হিয়ার আর সাম ইন্টারেস্টিং ফাইন্ডিংস অ্যাবাউট দ্য পারফরম্যান্স অফ দ্য বিগ ফারমারস ইন রেস্পেক্ট অব হাইইল্ডিং ভ্যারাইটিজ। বিটুইন ১৯৬৬-৬৭ অ্যান্ড ১৯৬৮-৬৯ দেয়ার ওয়াজ আ বিগ শিফট অব ল্যান্ড ফ্রম অর্ডিনারি ভ্যারাইটিজ অব হুইট, রাইস, মেইজ, বাজরা এন্ড সুগারকেন টু দ্য করেসপন্ডিং ইমপ্রুভড ভ্যারাইটিজ। দিজ শিফটস অয়ার হাউএভার অ্যাকম্প্যানিড বাই শার্প ড্রপস ইন ইল্ড পার একর’।
বড় কর্পোরেট কৃষকদের আরও বড় কর্পোরেটযোগ্য হয়ে ওঠবার এই প্রবণতা আরও জোরদার হয় ১৯৯১-এর পরের সময় ওয়ালমার্ট, ভারতী, বিড়লা, টাটা ইত্যাদি দেশি বিদেশি কর্পোরেটরা খুচরো কৃষিপণ্যের বাজারে প্রবেশ করতে থাকায়। শুধু জমির হাত বদল নয়, আনুষঙ্গিক আরও অভিচার চলতে থাকে পাঞ্জাব এবং উত্তর পশ্চিম ভারতের পুঁজি নির্ভর কৃষিক্ষেত্রগুলিতে।
এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলা দরকার – আমরা কারিগর ব্যবস্থার মানুষেরা, বড় কৃষক বা কুলাক আর কর্পোরেট কৃষকের মধ্যে মৌলিক ভেদ করি। কুলাকেরা গ্রামের মাটিতে থাকে। সে বৃহত্তর গ্রাম সমাজের অংশ, গ্রামের ওঠাপড়া, অন্যান্য সমাজের ভাল থাকা মন্দ থাকায় তার যায় আসে, গ্রামের কারিগরদের, তার কৃষির কাজের অঙ্গাঙ্গী হাতিয়ার। সে সাধারণত একফসলি চাষ করে না – তাই সামগ্রিকভাবে যান্ত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তার পথ নয়। তার উৎপন্ন ফসলের বাজার গ্রামে বা তার আশে পাশে। তার মূল লক্ষ্য বিদেশের বাজার নয়, স্থানীয় বাজার, উদ্বৃত্ত সে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু কর্পোরেট কৃষকেরা দেশিয় চাষের জোর, তার মৌলিকতা, ফসল বৈচিত্র বিষয়ে চরম উদাসীন। তাদের লক্ষ্য কর্পোরেটের উদরভরণ। সে কর্পোরেটের মত গ্রামকে পশ্চাৎপট এলাকা হিসেবেই ভাবে। গ্রাম সমাজের, গ্রাম কাঠামোর ওঠাপড়ায় তার কিছুই যায় আসে না। সে ১০ লেনের রাস্তা চায়, যেখানে কম্বাইনার, হারভেস্টার, ঠান্ডাগরম নিয়ন্ত্রণ করা ফসল তোলার ৩০ চাকার গাড়ি বাঁধ ছাড়া মাঠে ঢুকে আসতে পারে নির্বিবাদে। কর্পোরেট কৃষকদের এই পরিকল্পনায় গ্রামসমষ্টির ভূমিকা নগণ্য। এটাই কর্পোরেটিয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল কৃষি। কর্পোরেটদের চাষে গ্রামের বড় অংশেরই কিছু করার নেই।
ছোট চাষি কুলাকদের জমি ভাগে নিয়ে চাষ করে, গ্রামের কারিগর সেই বৈচিত্রওয়ালা জমিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জোগাড় দেয়, গ্রামের অকৃষি শ্রমিক সেখানে বিভিন্ন কাজ করে। গ্রামের পুকুর, চাষের সঙ্গে জুড়ে থাকা কৃষ্টি - গান, নাচ, যৌথ খাওয়া, ফসল হাতে তোলার সময়ে জমিতে যে ফসল চলকে পড়ল, তা খেয়ে ইঁদুর সাপের বেঁচে থাকা, এ সবের কোনওটাই কর্পোরেট কৃষিতে ঘটে না, ফলে এই কর্পোরেট কৃষি দিনের শেষে সাধারণ মানুষের ক্ষুণ্ণিবৃত্তির বিনাশক। আজ বন্দনা শিবা, অনুপম পাল, দেবল দেবেরা সামাজিক কৃষি ফেরত আনার যে লড়াই চালাচ্ছেন, তা কিছুটা হলেও পথ খুঁজে পাচ্ছে নানান স্তরে। শহুরে ইওরোপমন্য ভদ্রবিত্ত হয়ত বুঝতে পারছে রাসায়নিক, একমাত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তাঁর পরিবার ও সমাজের স্বাস্থ্য রক্ষা করে না।
অদ্ভুত !!বিস্ময়কর !!জানতাম না এই ব্যাপার গুলো !!আরো জানবার অপেক্ষা নিয়ে রইলাম !!
"কর্পোরেট লবি আজকের জৈব কৃষির মসিহা এম এস স্বামীনাথনকে ভারত সরকারের কৃষি ব্যবস্থায় বসানোর পরিকল্পনায় রিচারিয়াকে অসম্মান করে তাড়িয়ে দেয়"।
--আমি কি ভুল বুঝছি? এম এস স্বামীনাথন তো ষাটের দশকের শেষে নরম্যান বোরলাগকে এনে ভারতে সবুজ বিপ্লব ( উচ্চফলনশীল বীজ+ কেমিক্যাল সার + কীটনাশক) শুরু করান। তাহলে উনি জৈব কৃষির মসীহা কেন ?
হ্যাঁ, ডঃ রিছারিয়া ভারতের নিজস্ব ধানের বীজ এবং অরগানিক চাষের পক্ষে কথা বলায় তাঁকে কোণঠাসা করে একঘরে করা হয়। পরবর্তী জীবনে ছত্তিসগড়ের রায়পুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ করে বস্তারের প্রায় ১০০টি ইন্ডেজেনাস ধানের নমুনা ও বীজ সংগ্রহ করেন, একসময় এখানেই প্রয়াত হন। কিন্তু এখান থেকে তারপরে ধানের জিন বাইরে বেচে দেয়া আটকানো যায়নি।
একটু টাইপো। ১০০টি নয় , ১০০০০এর বেশি , উড়িষ্যা ও ছত্তিশগড় মিলিয়ে। ১৯০০০ হতেই পারে।
কিন্তু কিছু জিন বেচে দেয়া ঠেকানো যায়নি। উনি প্রয়াত হওয়ার পর যারা ছিলেন অনেকেই লোভ সামলাতে পারেননি।
১৯৮৬ সালের দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় ‘পদদলিত, কিন্তু হারি নি’ শীর্ষক রিচারিয়াজীর একটি সাক্ষাৎকার নেন ক্লদ আলভারেজ। আমার ফেবুপোস্টে সাক্ষাতকারটির বাংলা আছে সেখানে রিচারিয়া জানিয়েছেন স্বামীনাথনের ভূমিকা। https://www.facebook.com/biswendu.nanda/posts/10214612927667765
ইংরেজি সাক্ষাতকারটির ওয়েব ঠিকানা
http://satavic.org/dr-richharias-story-crushed-but-not-defeated/?fbclid=IwAR1qEh4gLtZT1E3V-P8vCxYvau6Bu7OrBjerXJ9EkafQxkqM51-Rkeb100o
তাছাড়া ক্লদ আলভারেজের একটি লেখা আছে দ্য গ্রেট গ্রিন রবারি,সেটারও লিঙ্ক দিলাম
http://www.vijayvaani.com/ArticleDisplay.aspx?aid=2137
প্রবন্ধটি শুরুর স্তবক
In 1982, Dr M.S. Swaminathan withdrew from his position as Chairman of the Scientific Advisory Committee to the Cabinet (SACC) and deputy chairman of the Planning Commission – he was also earlier secretary to the Ministry of Agriculture – and defected to join the International Rice Research Institute (IRRI) based at Los Banos in the Philippines as Director-General. The word ‘defected’ is used here on purpose: in no other country of the world would a scientist in such a strategically important position, privy to all the country’s scientific secrets particularly of those related to food, be permitted to leave and overnight become the employee of an institution controlled by two private foundations so closely allied to American capitalism and US foreign policy interests.
ক্লদ আলভারেজের লেখাটা বাংলায় পাবেন- https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=16102&srchtxt=%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87%20%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF
রঞ্জনবাবুর উদ্বেগ আমি বুঝতে ভুল করেছিলাম, স্বামীনাথন নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই মুখোশ পালটে জৈব কৃষির প্রবক্তা হয়ে উঠেছেন। 'আজকের' শব্দটা আমি ব্যবহার করেছি অর্থাৎ সেদিন তিনি ছিলেন না পরে হয়ে উঠেছেন।
অনেক ধন্যবাদ বিশ্বেন্দুবাবু ও সোমনাথ রায় (তাতিন?),
ওই সময়টায় আমি নিয়মিত ইলাস্ট্রটেড উইকলি রাখতাম। সম্ভবতঃ তখন কামাথ সরে গিয়ে প্রীতীশ নন্দী এডিটর ছিলেন । এক-সে-এক ইন্টারভিউ! খুবই স্বাদু পত্রিকা, তাতে অনেক বিভাগ।
ক্লদ অ্যালভারেজের লেখা এবং তার পরে বাদানুবাদ এবং স্বামীনাথনের পক্ষে একটি গাজোয়ারি খোলা চিঠি যাতে প্রায় পঞ্চাশজন 'সরকারি' কৃষি বৈজ্ঞানিকের নাম ছিল , মনে পড়ছে। আমি যে এনজিও'র সঙ্গে যুক্ত তার প্রোগ্রাম ডায়রেক্টর দীপ ব্যানার্জি ডঃ রিছারিয়ার ছাত্র ছিল । ওর স্বপ্ন , কিছু টাকা পয়সা জমাতে পারলে ১০ একড় জমি কিনে ওনার আইডেন্টিফায়েড অন্ততঃ ১০০টি ইন্ডোজেনাস ধানের প্রজাতি নিয়ে চাষ করে দেখাবে।
এত বছর পরে ওই লেখাগুলোর লিংক পেলাম, আপনাদের ধন্যবাদ।
প্রয়োজনীয় লেখা। তবে, ভারতের কৃষিব্যবস্থা যাঁদের নিয়মিত চর্চার বিষয় নয়, তাঁদের পক্ষে স্বামীনাথন-এর ভূমিকাটা বুঝতে অসুবিধে হতে পারে বলে মনে হয়।
এবং বিশ্বেন্দু বাবু পরে মন্তব্যে যা লিখেছেন 'স্বামীনাথন নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই মুখোশ পালটে জৈব কৃষির প্রবক্তা হয়ে উঠেছেন' - সেটা ভীষণই ঠিক। কিন্তু মুখোশ পাল্টানো-র বিষয়টাও আরও ব্যাখার দাবী রাখে। কারণ তাঁর 'evergreen revolution'-এর ধারণা কোথাও গ্রীন রেভোলুশন-এর ধারণাকে নাকচ করে না।
তার চেয়েও মারাত্মক ব্যাপারটা এই যে ভিলেজ নলেজ সেন্টার বা জ্ঞান চৌপল-এর যে ধারণা তিনি পরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন,সেটাকে কখনও প্রয়োজনীয় রকমে এক্সপোজ করা হয়নি।
আচ্ছা এখানে অটোকারেক্ট/সাজেশন/রেকমেন্ডেশন - এটাকে অফ করে কি করে? সুবিধে করতে গিয়ে অসুবিধে বেশি করছে।
বিশ্বেন্দুদার এই লেখাটা খুব জরুরি ছিল। এই বিকল্প ভাষ্য না তুলে ধরা হলে আন্দোলনের একবগগা ন্যারেটিভ আসতেই থাকবে। বাংলা-বিহারের কৃষিমজুর যাঁরা পাঞ্জাব-হরিয়ানার 'কৃষক'-দের কৃষিজমিতে কাজ করে দিন গুজরান করেন, সেখানে একটা সীমারেখা টানা উচিত।
খুব ভালো লাগল লেখাটায় অনুপমবাবুর উল্লেখ করায়। আর বার্নার্ড কোহনের উল্লেখও দারুণ লাগল।
প্রত্যেককে কৃতজ্ঞতা
তবে আজকে সরকারি জৈব কৃষি আরেকটি কর্পোরেট এজেন্ডা।
আমরা দেশিয় কৃষির পক্ষে।
---
অনুপমদা সর্বক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম। তাঁর নাম উল্লেখ না করা বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
এই কটা স্তবক মূল লেখা থেকে উড়ে গেছে।
--
বিজেপি আর সঙ্ঘ পরিবারের সার্বিক ফ্যাসিবাদী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কর্পোরেট কৃষক, ছোট জোতের কৃষক, প্রান্তিক কৃষক, কৃষি শ্রমিক, কৃষির সঙ্গে জুড়ে থাকা নানান পেশার মানুষ আজ একজোট। কৃষকদের আন্দোলনটি জেতার কামনা করছেন সর্বস্তরের মানুষ। তবুও গত ৭০ দশক ধরে দেশিয় চাষে যে মৌলিক সমস্যা পীড়ন করছে, তার কী হাল হবে এই প্রশ্নটা তুলতেই হবে - কেন পাঞ্জাবে এত বেশি ক্যান্সার রোগী, কেন জমির পর জমিতে নোনা ধরছে, কেন জলস্তর নেমে যাচ্ছে এই প্রশ্নের সমাধান এই আন্দোলন জিতলেও নেই হারলেও নেই কারন কর্পোরেট কৃষি, কৃষি নয়, কারখানার এক্সটেনসন – এই উত্তর দেওয়ার দায় এই আন্দোলনের মূল আয়োজকদের কারোর নেই।
মাথায় রাখতে হবে এই লড়াইটা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ক্ষেত্রের দুই ইনসাইডারের লড়াই – একদল কৃষি কর্পোরেট যাদের ৭০ বছরের কর্পোরেট কৃষির ইতিহাস বর্তমান। যাদের প্রতিনিধি ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি যেমন আমলাতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীতে বিপুল সংখ্যায় রয়েছে, আর রয়েছে ক্ষমতা পরিচালনা দীর্ঘ ইতিহাস যার বলে আজ তারা কেন্দ্রিয় সরকারের চোখে চোখ রেখে লড়াই দিয়ে চলেছে। তাদের বিপক্ষে ইওরোপমন্য জাতিরাষ্ট্রব্যবস্থা নির্ভর অতীব ক্ষমতাধর কর্পোরেট যাদের ৪০০ বছরের বিশ্বদখলদারির ইতিহাস, যাদের উতপাদনের পদ্ধতি নকল করছে কৃষি কর্পোরেটরা।
তবুও কৃষি কর্পোরেটদের সঙ্গে মিলে অন্যান্য চাষী আর পেশাদারেরা লড়াইটা খোলা রাস্তায় পৌঁছে দিয়ে রাষ্ট্রকে প্রাথমিকভাবে হাঁটু বাঁকাতে বাধ্য করেছেন।
জয় চাষীর জয়। দেশিয় চাষীর জয়।
একটি ছোট তথ্য:
"হাঁটু পর্যন্ত জামা পরবে (কাচ্ছা)"
কাছা মানে অন্তর্বাস, জামা নয় |
"Kachera/Kaccha undershorts/undergarment which resemble boxer shorts are one of the five Sikh articles of faith, given as gifts of love by Guru Gobind Singh at the Baisakhi Amrit Sanchar in 1699 they are worn by all Sikhs, initiated into the Khalsa. Both males and females Sikhs wear the same type of kachera. This was one of five articles of faith, collectively called Kakars that form the external visible symbols to clearly and outwardly display ones commitment and dedication to the order (Hukam) of the tenth master.
This Kakar was given by Guru Gobind Singh to remind his Sikhs that they should control their sexual desire, Kam (lust). The Kacha is a long underwear that comes to just above the knees and gives a feeling of dignity, modest and honour to the person who wears this garment. The garment is usually made from white light-weight cotton material. It served to cover the person's private parts, as well, as remind Sikhs of the Guru's message to think of the opposite sex as they would think of their other family members and not as objects.
The Kaccha is secured and tied with a "nala" (drawstring). This serves as another reminder that while one takes the time to untie the drawstring one is given time to think about what one is about to do. The Guru reminds us how while remembering the Lord, sexual desire can be overcome, thus:
The Kacha is the Guru's gift and it reminds the Sikhs of the Guru's message regarding the control of the Five Evils especially lust. Further, this garment allows the Sikh soldier to operate in combat freely and without any hindrance or restriction. It serves its purpose efficiently and effective and is easy to fabricate, maintain, wash and carry compared to other under-garments of the day, like the dhoti, etc
Gurbani reminds the Sikh to renounce worldly desire and seek the sanctuary of the Lord thus: "Renouncing sexual desire, anger, flattery and slander, they enter the Sanctuary of God." (SGGS page 469)"
"... আজ বন্দনা শিবা, অনুপম পাল, দেবল দেবেরা সামাজিক কৃষি ফেরত আনার যে লড়াই চালাচ্ছেন, তা কিছুটা হলেও পথ খুঁজে পাচ্ছে নানান স্তরে। শহুরে ইওরোপমন্য ভদ্রবিত্ত হয়ত বুঝতে পারছে রাসায়নিক, একমাত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তাঁর পরিবার ও সমাজের স্বাস্থ্য রক্ষা করে না।"
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখাটা!
একটা ব্যাপার এখানে লক্ষণীয়, বিশেষ করে যে টেবিলটি আপনি দেখিয়েছেন, তাতে সমস্যাটি, অন্তত যেটি নিয়ে আন্দোলন চলছে, সেটি যতটা না প্রোডাকশনের তার চেয়ে বেশী শস্যের ডিস্ট্রিবিউশনের। যার জন্য লক্ষ করা যেতে পারে যে বিশ্ব খাদ্য সূচকে ভারত বহু বছর ধরে "serious" থেকে "alarming", যদিও ভারতে খাদ্যশস্যের উৎপাদনের অভাব হয়নি | তার ওপরে সমাজ ও পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপার রয়েছে।
খাদ্য বিতরণ ও বণ্টনের সুষমতার জন্য অন্তত পশ্চিম ভারতের সবচেয়ে বেশী শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চলের আড়তিয়াদের একটা ভূমিকা আছে, যেটি অনস্বীকার্য | তাকে কর্পোরেট মিডিয়েটর দিয়ে অকেজো করে দিলে (বস্তুত যে ভয়টা কৃষক সম্প্রদায় করছেন), তাতে আখেরে লোকসান হবে সাধারণ মানুষের, এবং কৃষকদেরও (কুলাক বা করপোরেট উভয় তরফে) | আপাতভাবে দেখলে ভারত সরকারের আনা বিলগুলো হয়ত ভালই, কিন্তু খাতায় কলমে এক ব্যাপার, আর বিষয়টি যদি করপোরেট এগ্রিবিজনেসের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তার পরিণাম ভারতের মতন জনবহুল ও বড় দেশে মারাত্মক হবে |
১৯৮৪ সালে নিউজিল্যাণ্ড সরকার ফারমিং সাবসিডি তুলে দেন, কৃষিকে সম্পূর্ণ বৃহৎ পুঁজির হাতে ছেড়ে দিয়ে | প্রথম কয়েকটা বছর কৃষকদের সাংঘাতিক সমস্যা হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু নিউজিল্যাণ্ড সরকার অন্যান্য নানান ভাবে কৃষকদের সহায়তা করতে থাকেন, অল্প জনসংখ্যার দেশ, পরিস্থিতি অন্যরকম। তাহলেও এখানে কৃষিজাত পণ্যের দাম খুব বেশী, এবং দুধ প্রভৃতি, সাধারণ মানুষকে আন্তর্জাতিক দরে কিনে খেতে হয়।
অতএব, এই বিল এবং এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে দেশে খাবারের দাম বাড়বে। এতে করে ভারত সরকার কতটা sustatinable development goal এর লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হল, সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।
কর্পোরেট চাষি-টা কী বস্তু?অ্যাবসেন্টি ল্যান্ডলর্ড ? কর্পোরেট মানে হল, যে পুঁজির কোনো সংশ্লিষ্ঠতা নেই ব্যবসার সঙ্গে , ব্যবসা দেখে ম্যানেজমেন্ট, পুঁজি দিনশেষে ডিভিডেন্ডটি বুঝে নেয়। সে কোনোভাবেই চাষি নয়। শুধু মুধু এই ধরনের কাল্পনিক শব্দযুগল ব্যবহার করে কর্পোরেট এবং চাষি এই দুই শব্দের অর্থেরই বিকৃতি ঘটিয়ে কী লাভ?তার চেয়ে অ্যাবসেন্টি ল্যান্ডলর্ড শব্দটা ব্যবহার করাই কি ভালো নয়? অ্যাবসেন্টি ল্যান্ডলর্ড লভ্যাংশ ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। সে চাষের মাথামুণ্ডুর খবর রাখে না। তাতে জৈব চাষ হচ্ছে কি অজৈব,জল আকাশ থেকে আসছে কি পাতাল থেকে,তাতে তার কচু। সে কোনোভাবেই চাষি নয়। খালি খালি চাষির মাথায় কর্পোরেট বসানো কেন? আরেকটা কথা -- জৈব চাষের দৃষ্টিকোণ খুবই সংকীর্ণ। সেই দৃষ্টিকোণ দিয়ে কৃষক আন্দোলনকে বিচার করা খুবই বিপজ্জনক। পশ্চিমবঙ্গে ৫২ লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। তার মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জৈব চাষ হয়। অর্থাৎ শতাংশের বিচারে শূণ্য দশমিক চার শতাংশের মতো। যদিও জৈব চাষি সরকারি সাহায্য অজৈব চাষির চেয়ে কম নয়, বরং বেশিই পায়। জৈব চাষির পক্ষে অবস্থান নিয়ে যদি অজৈব চাষিকে তার বিপ্রতীপে দাঁড় করানো হয়,তাহলে সেই দৃষ্টিকোণটি কৃষকবিরোধী গাড্ডায় পড়ে যেতে পারে।
@শমীকবাবু,
আমি যতদূর বুঝি যে ১) কর্পোরেট চাষি ও ২)অ্যাবসেন্টি ল্যান্ডলর্ড ঠিক সমার্থক নয়।
১) যিনি জমির মালিক, শহরে থাকেন ও খাজনা পেলেই খুশি, চাষ কি হচ্ছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।
২) ইনি শহরে থাকেন কিন্তু জমির মালিক নন , কিন্তু কী ফসল ফলানো হবে সেটা নিয়ে দস্তুরমত মাথাব্যথা। কারণ তিনি পুঁজি বা শিল্পের মালিক। যা ফসল ফলানো হবে সেটা উনিই ঠিক করেন কারণ সেটা ভবিষ্যতে গুদামজাত হয়ে তাঁর বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা শিল্পের কাঁচামাল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখানে জমির মালিক বা চাষির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক চুক্তিভিত্তিক চাষের। আমার ভুল হলে বিশ্বেন্দু শুধরে দেবেন।
ভালো লেগেছে প্রবন্ধটি। এলের কাছে বিশ্বেন্দু দার পান্ডিত্যের গল্প শুনেছি, খুব ই ভালো লাগলো।
কিন্তু যে আন্দোলনে কৃষক রা বৃহৎঅ পুঁজির আগ্রাসনের বিরোধিতা করছে, সেই আন্দোলন আরো ছোট জমির চাষীদের স্বার্থের পরিপন্থী কেন বুঝি নি যদিও এটা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না, যে যারা আন্দোলন করছেন, তারা এম এস পি ব্যাবস্থ কে কাজে লাগাতে পেরেছেন, এবং অপেক্ষাকৃত বড় জমির মালিক, আবার এটাও লেখক বলছেন, তাদের নিজেদের একটা ইকো সিস্টেম আছে এবং সেটাই প্রতিরোধের এক ধরণের ভিত্তি। এটা শুধু কৃষির বৈষিষ্ট না, যে কোনো পেশা বা ট্রেড ভিত্তিক আন্দোলনে ছোটো বড়র সমস্যা থাকে, চেম্বার অফ কমার্স থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিয়ন অবদি কিন্তু কত গুলো কমন গ্রাউন্ডে কেন আসা যাবে না বুঝতে পারছি না, যদিও, যেখানে মান্ডি নেই, সেখানকার বিভিন্ন পরিবর্ত ব্যবস্থ গুলি কি আছে এবং সেখানে বিগ রিটেল এর ঢোকা সহজ হয়েছে না কঠিন হয়েছে, এবং এট রাজ্য ভিত্তিক অবস্থা কি, এট না জানলে সলিডারিটি কেন করা যাবে না, অন্তত রাজনৈতিক লম্বা দৌড়ে সেটা বুঝতে পারছি না।
আরেকটা সাধারণ প্রশ্ন আছে, কৃষি র কমারশিয়াল সমস্যা র কথা উঠলেই লোকে বলে সর্ব রোগহরণের উদ্দেশ্যে সাসটেনেবল এবং প্রজাতি নির্বাচনের দিক থেকে পরিবেশ বান্ধব কৃষির কথা বলে থাকে। স্কেল ডাউনের কথা বলে থাকে। ই এফ শুমাখার দের প্রথম দিক কার থিসিস এর নাম ই স্মল ইজ বিউটিফুল, এবং সেটা এসেনশিয়ালি পুঁজিবাদের একটা ক্রিটিক, মেটেরিয়ালিস্ট কিনা, সেই নিয়ে তর্ক ও আজকাল বোকা না হলে কেউ করে না। কিন্তু ঘটনা হল, আমি যেটা বিকল্প তত্তএর কাছ থেকে পাই না, সেটা হল, পরিবেশ বান্ধব যে কৃষি তার প্রজুকতি , তার বিজ্ঞান ও তার কনজামপশনের কারণেই তাতে কমারশিয়াল সমস্যা। তার অভাব থাকার কথ না,, সেগুলি তাইলে কি। এই আলোচন না হলে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সলিডারিটি গড়তে তো অসুবিধে হবার কথা।
এই লেখাটা তাত্বিক মূল জোর যেটা সেটা কারিগর ও কৃষক কে এক জায়্গায় আনা। কিন্তু সেটার ঐতিহাসিক ও আধুনিক দুটি রূপেই কমারশিয়াল সমস্য নাই তা তো না।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
শ্বেতকারি সংগঠন আজাকের গলপ না। কি যেন নাম ছিল লোকটার শারদ যোশী। আমাদের এমারজেন্সী বাল্য থেকে এদের নাম শুনছি। কিন্তু আমাদের যেটা রিয়ালি দরকার, সেটা হল, রাজ্যভিত্তিক , অঞ্চল ভিত্তিক স্থানীয় কৃষি কর্মার্সের সামারি। প্রচুর রাজ্যে নানা কিছু কৃষি কমার্স এর আইন ও অর্ডার আছে, তার পরিবর্তন ও হয়েই চলেছে, এবং সকলেরি যুক্তি , পোলিটিকাল কারণেই, উৎপাদক এর হাতে পয়সা আসা, মধ্যসত্ত্বভোগী রা এই চিত্রে ভিলেন। এই একটা কৃষক আন্দোলনের পোলিটিকাল রেটোরিকটা ছোটো মধ্য সত্ত্ব ভোগী রা পার্ট অফ দ্য ইকো সিস্টেম বলে প্রশংসিত। তো বিগ রিটেলের দাপটে আর কি কি নতুন অয়লায়েন্স হল কৃষিতে সেটা জানতে চাই। আর কমোডিটি স্পেকুলেশন কে কৃষির বড় অ্যাগ্রিগেটর দের হাতের একটা বড় অস্ত্র মনে করা হয়, সেটার ব্যাপারে, ও জানতে চাই , তার রিপিল এর দাবী কি কোথায় উঠেছে জানতে চাই। সাধারণ ভাবে বলা হয়, অতি বৃহত ক্যাপিটাল কে বাধা দিতে অসংস্খ্য স্তর ও স্থানীয় করণ ই অস্ত্র। তো সেটা কি ক্ষুদ্রতর চাষী , ভোক্তা, কৃষি ব্যবসায়ী , দের সংগে আন্দোলনকারী দের সলিডারিটির একটা জায়গা হতে পারে না? তত্ত্ব তো করা যায়, আরেকটু সার্ভে চাই।
টেকো বুড় দা, এইটা মনে পড়ছে? <https://indianexpress.com/article/explained/who-are-shetkari-sanghatana-the-group-backing-govt-on-the-farm-laws-7107905/>
বোধি
অবশ্যই।
এই শ্বেতকারী সংঘটনা কৃষিতে অন্য পণ্যের মত নিয়ন্ত্রণবিহীন খোলা বাজার চায়। বিশ্ব বাজারের অংশ হতে চায় , আবার সামাজিক প্রশ্নে , যেমন জেন্ডার , একেবারে প্যাট্রিয়ার্ক।
প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা। শ্বেতকারীর মত বেশ কিছু সঙ্গঠন আছে যেমন বিকেইউ কর্পোরেটের ধামাধরা সঙ্গঠন কর্পোরেট এজেন্ডা পূরণের সঙ্গঠন।
উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণে কৃষক কারিগরদের ওপর আস্থা পেশ করার একটা গপ্প ৪০০ বছর আগেই বাংলায় আছে। দক্ষিণ এশিয়ার বলা দরকার মোট উতপাদনের মাত্র ১০% ইওরোপে রপ্তানি হত। এই উতপাদনের ৭০-৮০ ভাগ অংশিদারি ছিল বাংলার। ১৬৩০এর পরে পর পর বাংলায় ডাচ ব্রিটিশ ফরাসি এবং পিটের দাদুর মত ইন্টারলোপারদের অন্যান্য ইন্টারলোপার খুচরোরাও ছিল,কিছুটা পর্তুগিজ ছিল - এদের সম্মিলিত ক্রয় ক্ষমতায় বাংলায় বস্ত্র চাহিদা বাড়ল। বাংলায় ডাচদের ইতিহাস নিয়ে কাজ করা ওম প্রকাশ আগরওয়াল বলছেন ৩০/৪০ বছরে ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হল - অধিকাংশ হল বস্ত্র এবং সোরায়। আমরা কিন্তু এই উৎপাদন বৃদ্ধিকে ইন্টারনালাইজ করেছিলাম - ইওরোপের মত কেন্দ্রিয় কারখানা করি নি - ভূমিতলে বেড়েছিলাম চাষ বাড়িয়েছিলাম, তাঁতিদের সঙ্গে জুড়ে থাকা নানান পেশাদার বাড়িয়েছিলাম - তাদের দক্ষতা বাড়িয়েছিলাম - এবং তার জন্যে দানা শস্য চাষের জমিতে টান ধরে নি। ৬২০র পরে ১৭৭০ অবদি অর্থাৎ ছিয়াত্তরের গণহত্যা,যা বিশিল্পায়নের সূচনাও সেই অবদি বাংলার চাষী কৃষক এবং তাদের আড়ং এবং একই সঙ্গে প্রশাসনিক তালমিলে যৌথভাবে এই উৎপাদন বৃদ্ধিকে আত্মীকরণ করে নেওয়া গিয়েছে - যে জন্য ডাও বলছেন ১৭৫০ নাগাদ বাংলায় ১ কোটি মানুষ শুধু পরিবহন ক্ষেত্রে ৩% অর্থাৎ ৩ লক্ষ শ্রমিক কাজ করতেন যেটা বিপুল অংশ ছিল। উপনিবেশিক জাতিরাষ্ট্র, এই ক্ষমতা সুযোগ কেড়ে নিল।
অরিনকে ধন্যবাদ 'কাছা' বিষয়টা পরিষ্কার করার জন্যে।
বিশ্বেন্দু দা কে অনুরোধ হল এই লেখাটা কে অন্তত তিনটে চারটে ভাগে, গভীর ভাবে সংযুক্ত ভাগেই , ভাগ করে লিখতে। একটা কলোনী ও কৃষি বিপনন এর ইতিহাসে , আরেকটায় স্বাধীন ভারতের পলিসিতে, আরেকটা কৃষক আন্দোলনের রাজনৈতিক দিকটা, আরেকটা ভবিষ্যতে র জনজীবনে ভবিষ্যতের কৃষি এই রকম এম্ফাসিস গুলো একটু আলাদা করে নিয়ে লেখেন ভালো হয়।
বোধিসত্ত্বকে কৃতজ্ঞতা এই কাজ আমার যোগ্যতার বাইরে। কেউ উদ্যোগ নিলে সাথে আছি।