বিদেশি ভাষায় বিজ্ঞান রচনার একটা ঐতিহ্য আছে, বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা প্রায়শই সাধারণ পাঠকের জন্য কলম ধরেছেন। যদি নোবেলজয়ীদের তালিকার দিকেই শুধু চোখ রাখি, তাহলে দেখব একদিকে যেমন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, এরউইন শ্রয়ডিঙ্গার, স্টিভেন ভাইনবার্গ, ইলিয়া প্রিগোজিন বা রিচার্ড ফেইনম্যানরা তাঁদের বিজ্ঞানচিন্তাকে সাধারণের বোধগম্য করে পরিবেশন করার চেষ্টা করেছেন, অন্যদিকে জেমস ওয়াটসন, মার্টিন কারপ্লাসের মতো বিজ্ঞানীরা তাঁদের জীবনের বা আবিষ্কারের ইতিবৃত্ত লিখেছেন। সেই তালিকার বাইরে রিচার্ড ডকিন্স, স্টিফেন জে গোউল্ড, কার্ল সাগান, রজার পেনরোজ, মিচিও কাকু, আব্রাহাম পাইস এমন বহু বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম করা যায় যাঁদের বই পাঠকদের মধ্যে অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বইগুলি সাধারণত খুব দ্রুত অন্য ইউরোপীয় ভাষাভাষীদের জন্য অনূদিত হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাতে এই ধরনের বইয়ের অনুবাদ খুব অল্পই আমার চোখে পড়েছে।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা অনুবাদ করা অপেক্ষাকৃত সহজ, কারণ সেখানে সাহিত্যগুণ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে হয় না। বিজ্ঞানের ভাষার একটা নিজস্ব শৈলী আছে, সেখানে সবই স্পষ্ট করে বলতে হয়, আভাস, ইঙ্গিত, দ্বর্থ্যকতা ইত্যাদি সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। বোধগম্য হওয়াটা নিশ্চয় জরুরি, কিন্তু ডারউইন, গ্যোয়েটে বা গ্যালিলিওর বিজ্ঞান লেখার অসাধারণ সাহিত্যগুণের জন্য কেউ তাঁদের অনুবাদ পড়েন না। পরিভাষা অবশ্যই একটা সমস্যা, কিন্তু আমরা এখন মোটামুটিভাবে নতুন বৈজ্ঞানিক টার্মের ক্ষেত্রে বিদেশি শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছি; সিঙ্গুলারিটি, কোয়াসার, মিউটেশন, কোয়ান্টাম, ক্লোনিং—এসমস্ত শব্দ আমাদের ঘাবড়ে দেয় না।
তা সত্ত্বেও আধুনিক বিজ্ঞানের সেরা বইগুলির বাংলা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে কম। নিশ্চয়তার একটা কারণ এই ধরনের বইয়ের পাঠকদের একটা অংশবিশেষ ইংরেজি বই পড়াতে যথেষ্টই স্বচ্ছন্দ। তাঁদের জন্য বাংলা তর্জমা হয়তো অনুবাদক বা প্রকাশকদের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। অপর একটা কারণ হল আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের সমাজে এখনও বাইরে থেকে আরোপিত, তার ভিত্তি খুবই দুর্বল। তাই বিজ্ঞানের বইয়ের অনুবাদ আদৌ পাঠকের কাছে গ্রহণীয় হবে কি না সে প্রশ্ন থেকে যায়। ডারউইনের অরিজিন অফ স্পিসিস যখন ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত ধর্মবিশ্বাসের মূল ধরে নাড়া দিয়েছিল, আমাদের সমাজে তার কোনো ছাপ পড়েনি; তাই আমাদের পাঠকসমাজে কখনোই সেই বইয়ের কদর হয়নি। সেই কারণেই কিন্তু সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে আধুনিক বিজ্ঞানের মূল কথাগুলিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই বইগুলির অনুবাদ জরুরি।
গত পঞ্চাশ বছরে যেসমস্ত বিজ্ঞানের বই আমাদের চিন্তার জগতকে নাড়া দিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নিঃসন্দেহে স্টিফেন হকিং-এর ‘আ ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম: ফ্রম দ্য বিগব্যাং টু ব্ল্যাক হোলস’। এই বই যখন প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে, আমরা তখন কলেজে। বইটি শুরু করে, বুঝি বা না বুঝি, এক নিঃশ্বাসে শেষ করেছিলাম। ১৯৯২ সালে ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: বৃহৎ বিস্ফোরণ থেকে কৃষ্ণ গহ্বর’ নামে তার বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে বাউলমন প্রকাশনী, অনুবাদ করেছিলেন শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত। এই লেখা মূল বইটি নিয়ে আলোচনা তো নয়ই, সেই অনুবাদের সমালোচনা বা রিভিউও নয়; অনুবাদটিকে সামনে রেখে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার অনুবাদ সম্পর্কে আমার মতের প্রকাশ।
অনুবাদক শুরুতেই বলেছেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানপ্রচার প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য বাঙালিদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কৌতূহল সৃষ্টি, সেদিক থেকে মনে হয় তিনি অনেকটাই সফল। মূল ইংরাজি বইটি সবাই না হলেও অনেকেই পড়েছেন; হকিং অত্যন্ত সহজ ভাষাতে নানা উদাহরণ দিয়ে অত্যন্ত জটিল তত্ত্বের আলোচনা করেছেন। অনুবাদটি মূলানুগ কিন্তু বাক্য ধরে ধরে অনুবাদের চেষ্টা নয়। ফলে ভাষা ঝরঝরে, টানা পড়ে যাওয়া যায়, কোথাও খটকা লাগে না। অনুবাদক উপমাগুলি কখনো-কখনো পরিবর্তন করেছেন, ফলে পাঠকের কাছে তা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। অনেক বাঙালির কাছেই spaghetti অপরিচিত, তাই অনুবাদক লিখেছেন সেমাই। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে। জনৈক মার্কিন বিজ্ঞানী যখন বক্তৃতাতে লম্বাটে গড়নের নিউক্লিয়াস বোঝাতে ফুটবলের উপমা দিয়েছিলেন, অন্য দেশের শ্রোতাদের বুঝতে সময় লেগেছিল। যাঁদের এখনও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিই, আমেরিকানরা যাকে ফুটবল বলেন, আসলে তা আমেরিকান ফুটবল, রাগবি গোত্রের খেলা, যার বল হয় লম্বাটে, মাকুর মত।
সহজ কথায় বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাতে হকিং-এর ক্ষমতা অসাধারণ সন্দেহ নেই, কিন্তু তাঁর গবেষণার বিষয়ই তিনি লেখার জন্য বেছেছিলেন এবং তা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দুরূহতম সমস্যাগুলির মধ্যে পড়বে। কাজেই বইয়ের বেশ কিছু অংশ খুব ভালোভাবে পড়া প্রয়োজন। পদার্থবিদ না হয়েও অনুবাদক বিষয়টার মূলে প্রবেশ করতে পেরেছেন সন্দেহ নেই, তা না হলে সেই সমস্ত জটিল জায়গার সঠিক অনুবাদ সম্ভবই হত না। বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে নিজের কিছু বক্তব্য অনুবাদক ভূমিকাতে বলেছেন, সেগুলির সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না। কিন্তু কখনও অনুবাদের মধ্যে তার অনুপ্রবেশ ঘটেনি, ফলে পাঠক হকিং-এর চিন্তাধারারই স্বাদ পেয়েছেন। পাদটীকার মাধ্যমে—অর্থাৎ মূল লেখার গতি ব্যাহত না করেই—সাধারণ পাঠকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিয়েছেন অনুবাদক, কিন্তু তার সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়ে অনুবাদটিকে পণ্ডিতীয় লেখাতে রূপান্তরিত করেনি। বইয়ের শেষে পারিভাষিক শব্দকোশটিও বেশ উপযোগী। সংক্ষেপে বলতে পারি যে অনুবাদটি বেশ ভালো সন্দেহ নেই, বাংলা মৌলিক বিজ্ঞান রচনাতেও অনেক সময় এই স্বাচ্ছন্দ্য থাকে না।
অনুবাদক নিজে কিছু পরিভাষা তৈরি করেছেন। অনেক জায়গায় সেগুলির অর্থ বেশ পরিষ্কার, তবে সব জায়গায় যে সফল হয়েছেন তা বলব না। Grand Unified Theory-র অনুবাদ হিসেবে ‘মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব’ বেমানান। এখানে Grand অর্থ পূর্ণাঙ্গ, Unified অর্থ ঐক্যবদ্ধ নয়, একীকৃত। কিছু শব্দ একটু চোখে লাগে, তার কারণ সেগুলোর যে বর্ণীকরণ বা অনুবাদ আমরা ব্যবহার করি, তার সঙ্গে মেলে না। Quark শব্দের মূল উচ্চারণ জেমস জয়েস বা স্টিফেন হকিং-এর কাছে যাই হোক, কোয়ার্কই এখন সর্বস্বীকৃত, তাকে কার্ক বলাটা সমীচীন নয়। তেমনি General Theory of Relativity-র বাংলাতে সাধারণ আপেক্ষিকতা হিসেবেই প্রচলিত, তার জন্য ‘ব্যাপক অপেক্ষবাদ’ লেখার দরকার ছিল না। কণাবাদী যে পার্টিকল নয়, কোয়ান্টামের অনুবাদ, তা বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিল। পরিভাষা একবার চালু হয়ে গেলে তাকে পরিবর্তন না করাই ভালো।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে আসে। এক অগ্রজ পদার্থবিজ্ঞানী ও বিখ্যাত বিজ্ঞান লেখক গ্যালাক্সি বোঝাতে ছায়াপথ শব্দের ব্যবহারে আপত্তি করে বলেছিলেন ছায়াপথ শব্দটা যে সময়ে তৈরি তখন আমাদের গ্যালাক্সির বাইরে অন্য কোনো গ্যালাক্সির কথা আমাদের জানা ছিল না; সংস্কৃত বা বাংলা ভাষাতে প্রচলিত কোনো শব্দকে নতুন আবিষ্কারের পরিভাষা হিসেবে প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীও কিছুটা একই ধরনের কথা বলেছিলেন। সাধারণ পাঠক, যিনি বইটা সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তাঁর কাছে এই অনুবাদের শিরোনামে ‘বৃহৎ বিস্ফোরণ’ কি বিগব্যাং-কে সঠিকভাবে সূচিত করল? বিস্ফোরণ বলতে সাধারণভাবে যা মনে আসে, বিগ ব্যাং মোটেই তা নয়। মনে রাখতে হবে মূল বাক্যবন্ধটি কিন্তু আসলে বিদ্রূপ, সেটি বানিয়েছিলেন বিগ ব্যাং তত্ত্বের তীব্র বিরোধী ফ্রেড হয়েল।
বিজ্ঞান অনুবাদের ব্যাপারে সাধারণভাবে কয়েকটা কথা বলা যায়। অনুবাদককে সবসময়েই মনে রাখতে হয় তাঁর নিজের মত যেন লেখকের ঘাড়ে না চেপে বসে। বিজ্ঞান অনুবাদে এই সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম, কিন্তু অনুপস্থিত বলতে পারি না। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় আছে, যা সম্ভবত সব ধরনের অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়—সঠিক অনুবাদের জন্য একই বিষয়ের অন্য বই পড়া প্রয়োজন। মূল লেখার বাইরে গিয়ে ব্যাখ্যা করাটা অনেক সময়েই বাঞ্ছনীয় হতে পারে। সব শেষে প্রয়োজন হল কাণ্ডজ্ঞানের প্রয়োগ। শব্দের অভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন, তা কি লেখকের বক্তব্যকে প্রকাশ করছে? অন্য একটি বইয়ের অনুবাদে দেখলাম Experiment শব্দের অর্থ হয়েছে গবেষণা, তা অনুসরণ করলে বিজ্ঞানচর্চার একটা বিশাল অংশ বাদ পড়ে যাবে।
পপুলার সায়েন্স বইয়ের বাংলায় অনুবাদ বেশ কম। অন্তত এই বঙ্গে। বাংলাদেশে, শুনেছি, বেশ নিয়মিত অনুবাদ হয় - বই বাজারে এসে জনপ্রিয় হওয়ার বছরখানেকের মধ্যে ওপারে অনুবাদ হয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত এরকম গল্প-উপন্যাসের অল্পবিস্তর অনুবাদ পড়ে দেখেছি - ভালো লাগেনি। আর দামও সস্তা সংস্করণের ইংরেজি পেপারব্যাকের চাইতে বেশী বই কম নয়।
অতএব, লেখার এক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চলে এলাম। বিজ্ঞানের বই ইংরেজিতেই পড়ে নেওয়ার অভ্যেস। এবং এই ব্যাপারটাকে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়ার অভ্যেস।
হকিং-এর বই বিশ্ববিখ্যাত - সর্বকালের অন্যতম সেরা বেস্টসেলার। নাম শুনে থাকলেও, সে বই যাঁরা পড়েননি, বা ভাষার ব্যবধানে পড়তে পারেননি (সংখ্যায় কতজন!!), তাঁদের মধ্যে সে বইয়ের অনুবাদের একটা চাহিদা থাকে। কিন্তু, জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বাকি বইয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একই নয়।
পাশাপাশি, অধিকাংশ জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বইই বেশ দুরূহ - উচ্চমাধ্যমিক স্তরের তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশীই সেবিষয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড নলেজ দাবী করে। এদেশে বিজ্ঞানশিক্ষার অনেকটাই ইংরেজিভিত্তিক হয়ে যাওয়ার সুবাদে সে বইয়ের বঙ্গানুবাদের প্রাসঙ্গিকতা কমেছে - বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ইংরেজিতেই (বা হিন্দিতে) বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে বলে সাম্প্রতিক সরকারি সিদ্ধান্তে এই প্রাসঙ্গিকতা উত্তরোত্তর বাড়বে।
তবু, জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বইয়ের বঙ্গানুবাদ জরুরী। বিশেষত, বিল ব্রাইসনের শর্ট হিস্ট্রি অফ নিয়ারলি এভরিথিং ধরণের বইয়ের অনুবাদ জরুরী। ক্লাস সেভেন এইট নাগাদ ছেলেমেয়েরা যখন বিজ্ঞানের দরজার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে, সেই মুহূর্তে এমন বই তাদের সামনে বিজ্ঞানের আকাশ দেখাতে পারে। বিজ্ঞানের গভীরতর পাঠে উৎসুক করতে পারে।
এবং সেই অনুবাদের ক্ষেত্রে গৌতমবাবুর এই লেখায় উল্লেখিত কথাগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেললাম। লেখাটা পড়ে ভারি ভালো লাগল, কথাগুলো মনের মধ্যে এসে গেল - তাই, কিঞ্চিৎ অনধিকার চর্চাও করে গেলাম।
শুরুর দিকটায় একটু ভুল লিখে ফেলেছি।একটু শুধরে নিই।
বাংলাদেশে, শুনেছি, বেশ নিয়মিত অনুবাদ হয় - বই বাজারে এসে জনপ্রিয় হওয়ার বছরখানেকের মধ্যে ওপারে অনুবাদ হয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত এরকম গল্প-উপন্যাসের অল্পবিস্তর অনুবাদ পড়ে দেখেছি - ভালো লাগেনি - কাজেই বিজ্ঞানের বইগুলো পড়ে দেখিনি।
আরে শেষের দিকে -
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ইংরেজি বা হিন্দিতে দিতে হওয়ার সাম্প্রতিক নির্দেশাবলির কারণে এই প্রবণতা উত্তরোত্তর বাড়বে বা বঙ্গানুবাদের প্রাসঙ্গিকতা কমবে (কেননা, লেখাপড়ার ভাষা ইংরেজি হলে পপুলার সায়েন্স পড়ার জন্যে বাংলা বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা কম)।
এটা লিখতে গিয়ে উল্টো লিখে ফেলেছি। এডিট যে কেন করা যায় না!!!
আমি লেখকের সাথে এই বিষয়ে একমত যে অনেক ইংরাজী প্রচলিত টার্ম জোর করে বাংলা অনুবাদ করার দরকার নেই। এমন এমন শব্দ ব্যবহার করা দেখেছি অনুবাদে যে চাপ হয়ে যায় বোঝা।
একটা জায়গায় একটু ভুল দেখলাম - আমেরিকান 'ফুটবল' আর রাগবি এক জিনিস নয়।
তবে আমার নিজের মনে হয় অনুবাদকের অন্য নানা বই পড়া তো জরুরী বটেই কিন্তু তার থেকেও জরুরী নূন্যতম সাহত্যজ্ঞান থাকা। না হলে লেখা এমন কাঠ কাঠ হয়ে যায় যে পড়ে সুখ নেই।
একজন মানুষের ফিজিক্স আর সাহিত্য দুটতেই দখল থাকবে অপ্টিমাম লেভেলে সে মনে হয় দুরাশা। এক্ষেত্রে একটা টীম হিসেবে কাজ করলে বা অন্তত দুজন, যার মধ্যে একজন সাহিত্য বুঝবে ভালো এবং ফিজিক্স কাজ চালানো মানের, আরেকজন ঠিক এর উল্টো ; সেটা একটা দারুন জুটী হতে পারে, অনুবাদের।
একই কথা আমার সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রেও মনে হয়। টীম ওয়র্ক ক্যান ডু ওয়ান্ডার। আধুনিক বিগ্যান এত স্পেশালাইজড যে, পেশাদার রিসারচার টীমে না নিয়ে আধুনিক কল্পবিগ্যান লিকতে যাওয়া সমস্যার।
এককের সাথে একমত - টিম ওয়ার্ক হলে তো সবচেয়ে ভালো। কিন্তু ওই যে বাংলা বইয়ের বিজ্ঞান অনুবাদের মার্কেট খুব বেশী না হওয়াতে এগুলো মনে হয়ে সম্ভব হয় না।
আমি নিজে এটা নিয়ে মাঝে মাঝেই ভাবি - এখানে যে বিজ্ঞানীদের বই গুলোর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে এবং এর বাইরেও আরো যে সব পপুলার সায়েন্সের বইগুলো আছে তার মধ্যে প্রবল মিল একটা আছেই - তা হলে বইগুলো সহজ পাঠ্য। তা সে ভাষাগত বা উপস্থাপনাগত যাই হোক না কেন।
স্যাপিয়েন্স কি প:ব: এ অনুবাদ হয়েছে? চোখে পড়ে নি। ওটা অনুবাদ হওয়া খুব ই দরকার .
বাঙলাদেশে কিন্তু অনুবাদ হয়েছে আর খুব জনপ্রিয়তাও পেয়েছে ।অনুবাদ যদিও একটু আড়ষ্ঠ
* দ্ব্যর্থতা *পরিভাষাকোষ
আমার কাছে বাউলমনের অনুবাদগুলো অবোধ্য লাগে।
তবে পরিভাষা নিয়ে যেটা বললেন—বাংলায়ন শুরু না হলে ইংরেজি ঘাড়ে চেপে বসতেই থাকবে। ফেসবুক পেজের জার্মান ভাষান্তর হয়েছে Seiten; অথচ বাংলায় পৃষ্ঠা বললে মনে হয় ঠাট্টা করছে। কারিগরি শব্দের বাংলা করা দুষ্কর বা অদরকারি এই ধারণার পেছনে রয়েছে আমরা ভাষার দায়িত্ব সাহিত্যিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে রেখেছি। তাই দেখা যায়, ফরফর করে ইংরেজি বলা ও ভুলহীন লেখা যেসব গবেষকদের দিয়ে চলে, তারা বাংলা লিখতে গিয়ে ভালো রকম ভুল করেন—ওটা তো বাংলার শিক্ষকদের কাজ! যতদিন বিজ্ঞান গবেষণাপত্র বাংলায় না বেরোচ্ছে, ততদিন এই অবস্থাই থেকে যাবে।
সুকি ঠিক বলেছেন American Football ও Rugby এক খেলা নয়। একই গোত্রের খেলা বলাই যায়। এটা একেবারেই সম্পাদকীয় ত্রুটি। অবশ্যই শুধরে দেওয়া হবে।