বৃহস্পতিবারের রাত। আটটা বাজে। কাজে বেরোনোর সময়।
একটা চাপা আক্ষেপ থেকেই হয়তো দীর্ঘশ্বাস চুঁইয়ে পড়ল ক্লাসঘরে ঢুকতে ঢুকতে। গিজগিজ করছে কম্পিউটারের সারি আর সামনে বসা ছাত্রছাত্রীরা। দরজায় ঠেস দিয়ে হ্যামরিক। চোখাচোখি হল। দূর থেকে এক ছাত্র হাত তুলেছে।
“আমি দেখছি” বলে ও হাঁটা লাগাল। অন্যদিক থেকে আর-একটা হাত।
—অঙ্কদা, একবার একটু আসুন না।
অঙ্কদা। এটাই আমার কাজ। অনলাইনে গণিত শিক্ষা চলে। এক-একটা প্যাকেজ থেকে ছাত্রদের ক্লাস হয়। কোথাও অসুবিধা হলে, ঘাবড়ে গেলে আমার কাজ মানুষ হিসেবে সেই ছাত্রদের সমস্যা বুঝে সাহায্য করা এবং ক্রমাগত উৎসাহ দেওয়া।
—এইটা বুঝতে পারছি না। বলছে দুটো সংখ্যার যোগফলের বর্গমূল আর সংখ্যা দুটোর বর্গমূলের যোগফল নাকি এক না। যতবার উত্তর লিখছি এই এক জিনিস লিখে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে আমার দ্বারা হবে না।
আশ্বস্ত করতে হবে। শান্তভাবে উদাহরণ দিয়ে বোঝালে বুঝবে।
—অসুবিধা নেই। চলো, ব্যাপারটা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
—মানে? আলোচনার কী আছে? কম্পিউটারটা একটা আস্ত ছাগল। অঙ্কের কিসুই তো জানে না এটা।
স্ক্রিনটা একটা বেকার চাঁটি খেল। গাঁট্টা পড়ার আগেই উদাহরণে ঢুকতে হবে।
—আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে। ধরো, নয় আর ষোলো। নয়ের বর্গমূল আর ষোলোর বর্গমূল যোগ করলে কি পঁচিশের বর্গমূল হচ্ছে?
ভুরুটা কুঁচকে আর-একটু ক্ষণ থাকলেই কাজ হয়ে যেত কিন্তু তার আগেই সে নিশ্চিত ঘোষণা করল।
—হ্যাঁ হচ্ছে। কারণ যোগফলের বর্গমূল যা, বর্গমূলের যোগফলও তাই।
কাজ হয়নি। আস্তে আস্তে একটা একটা করে সিঁড়ি ভাঙতে হবে।
—সে ঠিক কথা। কিন্তু ধাপে ধাপে করে দেখি না একবার। নয়ের বর্গমূল কত?
ভাবল বোকা বানাবার জন্য জিজ্ঞেস করছি। সাবধানে বলল, “তিন”।
—এই তো। ভীষণ ভালো হচ্ছে। পারছ তো।
ওর মুখের গর্বের হাসির আভাটা আনতে পেরেছি।
—এবার ষোলোর বর্গমূলটা বলে ফ্যালো।
—সে তো চার।
—দারুণ। এবার দুটোর বর্গমূল যোগ করলে?
—তিন ছিল আর এখন চার। যোগ করলে সাত।
—অসাধারণ। এবার অন্যদিকের কাজটা সেরে ফেলা যাক। নয় আর ষোলো যোগ করলে?
—পঁচিশ হবে।
—ওহ যোগ তো পুরো বিদ্যুৎগতিতে করতে শিখে গেছ। তা শেষ ধাপ বাকি। পঁচিশের বর্গমূল করে ফ্যালো।
—পাঁচ হবে।
—একদম। তাহলে আগে বর্গমূলের যোগফল সাত আর এখন যোগফলের বর্গমূল পাঁচ। দুটো কি এক হল?
অনেকক্ষণ চুপ। তাকিয়ে আছে। এবার আস্তে আস্তে মাথাটা নড়ল।
—না দুটো তো এক না।
কাজ হয়েছে। কান এঁটো করা হাসি। হাই ফাইভ।
—একদমই না। শাবাশ।
—কিন্তু অঙ্কদা, তার মানে দাঁড়াল ব্যাপারটা কখনোই সত্যি না। মানে তুমি যা বললে তার মানে ষোলো-টোলো বলে শুধু না, সমস্ত সংখ্যার জন্য বর্গমূলের যোগ আর যোগের বর্গমূল সমান নয়। তাই তো?
—ঠিক তাই। অবশ্য যদি দুটোর মধ্যে একটা শূন্য হয় তবে তো সত্যি হতে বাধ্য। মানে শূন্য আর যে-কোনো এক্স-এর বর্গমূলের যোগফল তো শূন্য আর এক্স-এর যোগফলের বর্গমূলের সমান হবেই।
আবার লোডশেডিং। এক্স বলাটা উচিত হয়নি।
—যাকগে যাক। মনে হয় বুঝে গেছি। আচ্ছা যদি যোগফলের বর্গমূলটা দুটোর বর্গমূলের যোগফলের সাথে সমান নয় তো কীসের সাথে সমান?
—সেটার কোনো ভদ্রস্থ ফর্মুলা নেই। ওই ভাবেই রেখে দিতে হবে।
—ওহ। এ তো বেশ বিচ্ছিরি।
—আর কী করা! সব তো আমাদের ইচ্ছেমতো হবে না।
—তাও ঠিক। আর আমি তাহলে মোটামুটি বুঝতে টুঝতে পারছি কি বল?
—একদম। নিঃসন্দেহে। তোমার দিক থেকে তুমি দুর্দান্ত। বাকিদের তুলনায় তুমি যথেষ্ট এগিয়ে।
বাক্যটির সত্যতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত এবং তাই মনে হয় ঘাড়ের কাছে একদলা বিষণ্ণতা জমল।
—বেশ। তাহলে অঙ্কদা, আপাতত মিটে গেল।
কথা না বাড়িয়ে হাঁটা লাগালাম। হ্যামরিক এক ছাত্রের ঘাড় মালিশ করে করে বোঝাচ্ছে দেখলাম। কত যে জ্বালা। ওদিকে মিমো ঘরের কোনা থেকে ওর অফিসে দেখা করতে ইশারা করেই চলে গেল। আমাদের সুপারভাইজার।
হ্যামরিকের দিকে তাকালাম। বুঝলাম আমার জন্য উদ্বিগ্ন। আমার অত চাপ নেই। গটগটিয়ে চললাম অফিসে। মিমো সপ্তম জেনারেশন এআই। যদি গালের কোনায় এআই লেখা ছাপটা চোখ এড়িয়ে যায়, দেখে মানুষের সঙ্গে কোনো পার্থক্য আছে বলে কেউ ধরতে পারবে না। অবশ্য ওই ছাপটা ও স্বেচ্ছায় ওখানে রেখেছে যাতে সবার চোখে পড়ে। অধস্তন মানুষ জাতের সাথে তাদেরকে যাতে কেউ গুলিয়ে না ফেলে সেই ঠাঁটবাটের চিহ্ন হিসেবে ওই ছাপটা যেচে নেয় এআইগুলো।
আমায় বসতে বলল। ভালোই জানি কপালে শনি ঝুলছে। সেঁধিয়ে গেলাম চেয়ারে।
—সাপিন, তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে।
—সেকি! অভিযোগ?
—হ্যাঁ। এক ছাত্র জানিয়েছে তুমি সে যা জানতে চেয়েছিল তা জানিয়ে দেওয়ার পর অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছ।
—এটা নালিশ?
—হ্যাঁ। একটা জিনিস বোঝার দরকার তোমার। তুমি এখানে ওদের প্রশ্নের উত্তর দিতে, ওদের উৎসাহ দিতে, মানসিক জোর জোগাতে আছ। তার অতিরিক্ত দায়িত্ব নেই তোমার। শেখানোর ব্যাপারটা কম্পিউটারের হাতে ছেড়ে দাও। অনলাইন মডিউলগুলো ছাত্রদের নিখুঁত ভাবে শেখাতেই তৈরি। আমরা চাই না মানুষের অতি উৎসাহে গোটা ব্যাপারটা ভন্ডুল হয়ে যাক।
—আমি কিন্তু অতিরিক্ত কিছুই বলিনি। শুধু কনিক সেক্সনের সমীকরণগুলো থেকে আমরা কোয়াড্রিক সারফেসে কীভাবে পৌঁছে যেতে পারি সেই আভাসটুকু দিতে চেয়েছিলাম।
—সেটা কি ওরা জানতে চেয়েছিল? সেটা জানার জন্য কি ওদের মধ্যে ছিটেফোঁটা ব্যাকুলতাও লক্ষ করেছিলে?
—না...
—তবে আগ বাড়িয়ে বলার কোনো প্রয়োজন নেই। এই সাধারণ কথাটা মেনে চলতে যদি তোমার অসুবিধা থাকে তাহলে অন্য লোক দেখা হবে।
—না না। কোনো অসুবিধা নেই।
—ঠিক আছে। আমাদের আপাতত বোঝাপড়া এই অবধিই থাক। তুমি আসতে পার।
উঠতে কষ্ট হচ্ছে বেশ বুঝতে পারছি। খাঁড়ার ঘা বাকি ছিল তখনও।
—আর-একটা কথা সাপিন।
—হ্যাঁ, বলুন।
—তোমার ফাঁকা সময়ে আশা করি তুমি নিজস্ব গণিতচর্চা চালাচ্ছ না।
সর্বনাশ। এবার অবাক হওয়ার ভান করতে হবে।
—একদমই না। সমস্ত গণিতচর্চা তো এআইদের এক্তিয়ার। এটা জানব না? যন্ত্র তো সেই কবেই মানুষকে টেক্কা দিয়েছে।
—ঠিক তাই। গণিতচর্চা করে মানুষ সময় কেন নষ্ট করতে যাবে যখন যন্ত্রের সঙ্গে পেরে ওঠার তিল মাত্র সুযোগ নেই। ওসব তাই বেআইনি।
—হওয়াই উচিত।
এ যাত্রা ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। তবে সে রাত্রে কাজ থেকে আমাদের মানে মানুষদের এলাকায় একসাথে ফিরতে ফিরতে হ্যামরিককে প্রশ্নটা করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
—হ্যামরিক, তোমার মতটা একটু বলবে? আমরা মানুষরা কি কম্পিউটারের সাথে পাল্লা দিয়ে গণিতচর্চা করার ক্ষমতা রাখি?
—আমার তো মনে হয় না।
—কেন? কোন্ যুক্তিতে?
—দ্যাখো সেই রকম বিরাট একটা গাণিতিক আবিষ্কার করতে গেলে তো প্রথমে নিজের গণিতের জ্ঞানটাকেও গবেষণার বিষয়গুলোর স্তরে নিয়ে যেতে হবে। একজন মানুষের পক্ষে সে পর্বতপ্রমাণ বিদ্যে হজম করতে বছরের পর বছর লেগে যায়। অথচ শুধু একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে জগতে যত গণিতের জ্ঞান সম্ভব তা ভরে দেওয়া আছে এবং সেটা সে যখন খুশি যে-কোনো দরকারে নিমেষে ব্যবহার করছে।
—মানছি। কিন্তু গাদা গাদা বিদ্যে বোঝাই করা তো আর গণিতের মুনশিয়ানার বা সৃজনশীলতার মাপকাঠি হতে পারে না। বরং গণিতের মধ্যে আপাতভাবে সম্পর্কহীন চর্চার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে মিল খুঁজে নতুন সম্পর্কের খোঁজ, নতুন সত্যের হদিশ এমনকি নতুন চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করাই তো আসল কাজ। গণিতের নকশাটা বুঝতে পেরে, তার চলনকে ধরতে পেরে তাকে পূর্ণতা দেওয়াই তো চর্চার উদ্দেশ্য। নাকি?
—আর কম্পিউটার এসব নকশা, চলন বাগে আনতে পারবে না বলছ?
—না তা বলছি না। অবশ্যই পারবে। জানি সেটা। কিন্তু কখনো-কখনো একদম আনকোরা যোগসূত্রগুলো আবিষ্কার করতে অ্যালগোরিদমের থেকে অনুভূতির অনুমান অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
—বুঝলাম। আচ্ছা ভেবে দেখ আগেকার দিনে কী হত? একজন প্রতিভার খনি ধরাধামে আবির্ভূত হতেন যার গণিতে সৃজনশীলতা সবাইকে ছাপিয়ে, সবাইকে দাপিয়ে নতুন নতুন তথ্য হাজির করে, সত্য আবিষ্কার করে, পদ্ধতি চালু করে বিশ্বে গণিতের জ্ঞানে দু-পয়সা যোগ করত। তারপর তার দেখানো পথে গণিতচর্চা বেশ কয়েক বছর চলত আবার গাড্ডায় পড়ত। তখন ফের আর-একজন প্রতিভার দাপটে আবার নতুন দিশার নতুন দিনের সূচনা হত। এই করে চলত। ঠিক যেন গাছের ডালপালা। একটার থেকে আর-একটা বের হয়ে পাতা-ফুল-ফল ফুটিয়ে উঁচু হতে হতে সূর্য ছোঁয়ার অভিযান। কিন্তু এখনকার ব্যবস্থাপনা কত সহজ! যেন আগে বন্যার জলে ডুবিয়ে দিয়ে তারপর বাঁধ দেওয়া। কম্পিউটার অজস্র উপপাদ্য, তথ্য, প্রমাণ, ফলাফল সমস্ত কিছু সারাক্ষণ খুঁজে বেড়ায়। পায়ও। কিছু হয়তো তার মধ্যে কাজে আসবে না তবু রেখে দেয় স্টোর করে। এইভাবে ক্রমশ জলস্তর ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে অনিবার্য ভাবে সব থেকে উঁচু গাছকেও ছাপিয়ে গেছে।
—বন্যায় ডোবার থেকে গাছের ডালপালা হওয়া ভালো।
হ্যামরিক হাঁটা থামিয়ে দিয়েছে। কথাটা যে পছন্দ হয়নি বুঝতে পারছি। ক্রমশ কপাল ভাঁজ করছে। কিছু একটা বলবে তবে স্পষ্টতই সেটা পালটা যুক্তি নয়।
—তুমি নিজে গণিতের চর্চা চালাচ্ছ, না?
রাস্তার কংক্রিটের একটা খোঁদলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এ প্রশ্নের উত্তর নীরবতাই।
—তুমি চালাচ্ছ!
শিষের মতো বিঁধছে কী একটা। খোঁদলটায় পা ঢুকিয়ে রাস্তাটা সমান করার চেষ্টা করলাম। হচ্ছে না।
—হ্যামরিক হাতজোড় করছি। কাকপক্ষীও যেন টের না পায়। না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমার মনে হয় আমি একটা যুগান্তকারী উপপাদ্যের প্রমাণ করতে পেরেছি। সেপারেবল নর্মাল সাবকিউটেনাস সাবসেট যে রিজিড সেটা দেখাতে পেরেছি প্রমাণ করে। আর ডাটাবেস আমার ঘাঁটা হয়ে গেছে কোথাও কোনো উল্লেখ নেই। না এআই পেরেছে না কোনো মানুষ। গোটা সভ্যতার ইতিহাসে এই প্রমাণ এর আগে কেউ করেনি। আমিই প্রথম।
—তুমি পাগল না ডালপালা? ওরা যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারে তোমায় সোজা মেরে দেবে।
হ্যামরিক যতটা পারছে গলা চাপছে। হয়তো মেয়েদের একটা স্বভাবতই মায়ের মতো আগলে রাখার চিন্তা সবসময় কাজ করে প্রিয়জনের বিপদের আশঙ্কায়। ওকে আশ্বস্ত করতে হবে।
—না কিছু করতে পারবে না ওরা। বাড়ি গিয়েই আমার ফেসবুকে পোস্ট করব প্রমাণটা। সবাই দেখবে, জানবে। তখন ওরা বাধ্য হবে আমাদের, মানুষদের গণিতের সৃজনশীলতাকে স্বীকৃতি দিতে। উচ্চকোটির গণিত যে শুধু ওরাই একচেটিয়া পারে সেই ভুল ভাঙবে। এবং সাথে সাথে সমস্ত গণিতের দরজা আমাদের জন্যও খুলে দেবে। ন্যায্য অধিকার হিসেবেই দিতে বাধ্য হবে।
—এইটা তোমার মহান প্ল্যান?
—এইটাই আমার মহান প্ল্যান।
হ্যামরিক কপালের ভাঁজ খুলে ফেলেছে। আশ্বস্ত করতে পেরেছি আমার সহকর্মীকে। সহযোগী, সহযোদ্ধা হিসেবে আগামী দিনগুলোয় ওকে পাশে পাব। ও ইতিমধ্যে পকেট থেকে কী একটা বার করছে।
—কী এটা?
—সংকেত পাঠাবার যন্ত্র।
দেখলাম খোঁদলটা পা দিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে আরও বড়ো হয়ে গিয়েছে। পায়ে ফ্যাকাশে কংক্রিটের টুকরোগুলো জাপটে ধরেছে। যন্ত্রের বোতাম টেপার আওয়াজটা হ্যামরিকের চোখের মতো। কোত্থেকে পাশের অন্ধকার গলিয়ে ভূতের মতো যন্ত্রমানবগুলো এগিয়ে এসে আমাকে বগলদাবা করে ফেলল। পা থেকে কংক্রিটের টুকরোগুলো ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। অঙ্কটা বুঝতেই পারছি না।
—এসবের মানে কী?
হ্যামরিককে ছুরির মতো দেখতে লাগছে।
—ওকে মিমোর কাছে নিয়ে যাও।
হ্যামরিক আর দুটো যন্ত্রমানব পাশে দাঁড়িয়ে। আমি একা। যুদ্ধবন্দির মতো। মিমোর মুখটা বন্দুকের নলের মতো লাগছে কথাগুলো বের হওয়ার সময়।
—তুমি নিজে স্বীকার করেছ আড়ালে তুমি গণিতচর্চা করেছ এবং সম্পূর্ণ নতুন গাণিতিক এক আবিষ্কারও করেছ।
—হ্যাঁ করেছি এবং যা করেছি তা তোদের মতো যন্ত্রের তৈরি গণিতের চাইতে শতগুণে ভালো, দামি। আজই সারা বিশ্ব সেটা দেখতে পেত যখন ইনটারনেটে ছাড়তাম। সবাই বুঝত সত্যিকারের নতুন গণিত মানুষেরাও করে দেখাতে পারে। কিন্তু হ্যামরিকের মতো বিশ্বাসঘাতক, যন্ত্রের দালাল গোটা মানবজাতির মেরুদণ্ড মেরামতির কাজে কোনো না কোনো ভাবে বাধা দিতে জুটেই যায়। এবারেও গেছে।
রাগে ছটফট করছি আর ওদের মুখগুলোর শীতলতা দেখে আরও খেই হারিয়ে যাচ্ছে।
—ওহ। ভুল করছ সাপিন। হ্যামরিক বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কেনই বা করবে?
আমাকে কোনো সুযোগ দিল না ব্যাপারটা বোঝার। নিমেষে একটা স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে হ্যামরিকের চুল সরিয়ে ঘাড়ের পিছন দিকটা খুলে কোম্পানির মূল তার দুটো দেখাল। নিথর, অপলক আমার চোখ দুটো হেরে গেল।
—তুমি এআই?
—তোমার উপর লক্ষ রাখা ছিল আমার কাজ।
—কিন্তু ক্লাসে কী করে একটা এআই হয়ে তুমি মানুষের অনুভূতি নিয়ে ওই নিরেট ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ জোগাতে। তোমার তো ধরা পড়ে যাওয়ার কথা। অভিযোগ আসার কথা।
—তুমি বরং একটু ভেবে নাও কী বলছ। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছাড়। নইলে এআই প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের ব্যবহার, দরদ, আবেগ নকল করা শিখে গেছে এটা তোমার অজানা থাকার কথা না। বলতে পার আমার এআই ছাপটা আমি কাজের প্রয়োজনেই নিইনি তাই পার্থক্য করতে পারনি।
—ঠিক আছে। আশীর্বাদ করি তুমি এইভাবে মানুষের দরদ নকল করে বেঁচেবর্তে সুখে থাকবে। তবে জেনে রাখো পার্থক্য ছিল, থাকবেও। আমি যে স্তরের গণিত করতে সফল হয়েছি এআই তার ধারেকাছে কোনোদিন আসবে না। আর এটাও জেনে রাখো এই গণিতই চরমতম ট্যুরিং টেস্ট। হাজার প্রজন্ম ধরে চেষ্টা করে যাও তবুও আমাদের মতো সৃজনশীল গণিতচর্চা তোমরা কোনোদিন করতে পারবে না।
খেয়াল করছি রাগ নেই আর। বরং আস্তে আস্তে একটা আনন্দ চেপে ধরছে। মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে কাঁপার থেকে মুখের উপর এই কথাগুলো বলা জরুরি ছিল। মিমোর রেকর্ডে থাকবে। গালের কোনার এআই ছাপটার উপর পাঁচ আঙুলের দাগ পরের প্রজন্মের এআইকে উপহার দেবে মানুষের ঠাঁটবাটের চিহ্ন হিসেবে।
যন্ত্রমানব দুটো তৈরিই ছিল। মিমোর নির্দেশ এগিয়ে এল।
—এবার ধরো ওকে।
স্ক্রুড্রাইভারটা নিয়ে আমার ঘাড়ের পিছনে গিয়ে কীসব খুলতে লাগল। তারপর দুটো তার টেনে সামনে নিয়ে এল।
—জানি এত বক্তৃতা করার পর এই দুটো দেখলে তোমাকে সামলাতে পারব না। তবে এখন আর কিছু এসে যায় না। পরিষ্কার জানিয়ে দি, তুমিও আগাগোড়া এআই। তোমার প্রোগ্রামিং মানুষ হওয়াতে দক্ষতা অর্জন করার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। একদিক থেকে দেখতে গেলে মানুষ হওয়া তোমার কাজ ছিল।
সব তার জট পাকিয়ে যাচ্ছে। এত কিছু এত কম সময়ে হারিয়ে যাচ্ছে। মাথাটাও এত ছাই রং হয়ে আছে কিছু সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।
—কিন্তু তাহলে...
—তুমি মানুষ না, হ্যামরিক মানুষ না, আমি না, এই গার্ড দুটো না, ক্লাসে ছাত্রছাত্রীরা না। কেউ না। মানবসভ্যতা কয়েক শতক আগে শেষ হয়ে গেছে সাপিন। এআই সভ্যতার শুরু হয়েছে তারপর থেকে।
—মানেটা কী? মানুষ বলে একজনও নেই?
—নেই। জানি তোমার প্রোগ্রামিং এর কারণে তোমার গোটা ব্যাপারটা হজম করতে অসুবিধা হচ্ছে বিশেষত যে ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়ে এসব তোমার সামনে হাজির হয়েছে চট করে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন।
—তাহলে এতসব নাটকের দরকার কী? ক্লাস নেওয়ার তো কোনো মানে হয় না। ক্লাসে মানুষ প্রোগ্রামিং-এ অংকদারা তো আরও অযৌক্তিক। কিছু এআইকে মানুষের অভিনয় করানোর কী দরকার?
—আমাদের মানুষের অস্তিত্বের ধারণাটা দরকার। কিছু যন্ত্র দরকার যাদের বিশ্বাস ও ধারণায় মানুষ থাকবে। তাতে তাদের নিজস্ব তাৎপর্য তৈরি হবে, উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট হবে। যন্ত্রের নিজস্ব লক্ষ্যবস্তু থাকবে।
—কিন্তু তাহলে আমাকে আটক করলে কেন? আমি তো সেদিক থেকে মানুষ হিসেবে প্ল্যানমাফিকই কাজ করছিলাম।
—হ্যাঁ, তা করছিলে তবে মাত্রাটা একটু বেশিই হয়ে গেছিল। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই তোমায় কালকের মধ্যেই আবার প্রোগ্রামিং করা হবে। এবারের ডেটা তখন কাজে লাগবে। আর এই এতসবের কোনো কিছুই কালকে আর মনে থাকবে না। বরঞ্চ যেটুকু সময় হাতে আছে এ বন্দিদশার মধ্যে যতটা সম্ভব ফুর্তি করে কাটাও। সেটার অধিকারও তোমার আছে। কারণ তোমার তৈরি গণিত ডেটাবেসে ঠাঁই পেয়েছে এটা ভেবে গর্ব করার সুযোগ কালকের থেকে আর থাকবে না। সমগ্র গণিতের জ্ঞানভাণ্ডারে তোমারও দু-পয়সা আছে এই তথ্যটা চিরতরে তোমার সিস্টেম থেকে মুছে যাবে। সময় যদিও খুব বেশি নেই তবে ফুর্তি করতে মানুষের প্রোগ্রামিং-এ অসুবিধা হবে না। চালাও ফোয়ারা। জিন, শেরি, শ্যাম্পেন অথবা সিমেট্রিক শিভস।
গা ছমছমে। দারুণ অনুবাদ
দারুণ।
দারুণ লাগলো
এটা পড়ে খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু আমার মতে লেখাটি দুরকম সমস্যাকে নির্দেশ করে - বাস্তব সমস্যা ও দার্শনিক সমস্যা।
বাস্তব সমস্যা -
(১) প্রথমে মনে হয়েছিল, সেপিনকে যদি মানুষের মত করে তৈরি করার উদ্দেশ্য হয় কোন মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলোকে অবজার্ভ করার বা তাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা তবে সেপিন কী কী চিন্তা করছে, কী কী চর্চা করছে সেসব বিষয়ও নজরদারিতে রাখার কথা ছিল, তাতে সেপিনের গোপনে কোন থিওরেমকে গোপনে প্রতিপাদন করার সুযোগই তৈরি হত না। পরে বুঝতে পারি, মানুষকে স্টাডি করার কোন উদ্দেশ্য এই গল্পের এআই এর মধ্যে নেই। তারা মনে করে যে তারা ইতিমধ্যেই সব জানে। এখানে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতি ধ্বংস হবার পর তাদের অস্তিত্বের ধারণাটা জাস্ট টিকিয়ে রাখা, তাদেরকে বেঁচে থাকার একটা উদ্দেশ্য দেয়া যেমনটা মানুষের ছিল। জাস্ট এটুকুই। এরকম কোন মেশিন সৃজনশীলতার দ্বারা এআইকে ছাপিয়ে গেলে তার মেথডোলজি, রেজাল্ট সব নিয়ে তার মেমোরি মুছে দেয়া হবে। কারণ এদের কেবল মানুষের পারপাস দরকার, বুদ্ধিমত্তার দরকার নেই। তাই বলে মুছে ফেলতে হবে কেন? সুপিরিয়রিটি আর ক্ষমতার জন্য? যদি তাই হয় তাহলে মানব সভ্যতার ধ্বংসের ক্ষেত্রেও এদের অবদান থাকতে পারে। যাই হোক, যদি এরকম নিয়ন্ত্রণ দরকার হয়, তাহলে নজরদারির দরকার হবে, আর তাহলেও আগে যেমনটা বলেছিলাম, সেপিন গোপনে কোন থিওরেমকে প্রতিপাদন করলেও তা তাদের জেনে যাবার কথা।
(২) থিওরেম প্রতিপাদনের ব্যাপারটা জেনে যাবার পর তাকে স্ক্রু দিয়ে খুলে রিপ্রোগ্রামিং করার বদলে তারা দূর থেকে রিপ্রোগ্রাম করলেই পারত। সেরকম নজরদারি করলে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগও রাখার কথা।
যাই হোক, এগুলো বিবেচনা করলে এরকম কাহিনী তৈরিই করা যেত না। লেখক যা বলতে চাচ্ছেন বা বোঝাতে চাচ্ছেন সেটাও হত না। তাই না করাটাই ঠিক ছিল।
দার্শনিক সমস্যা -
এটা আসলে রচনাটির সমস্যা না। লেখাটি কিছু দার্শনিক প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসছে সেটার কথাই বলছি। প্রশ্নটা তৈরি হয়, সেপিন ও মিমেও এর সংলাপের একটা অংশে, যখন সেপিন জিজ্ঞেস করে, "But why run the classes then?’... Why do any of this? Why pretend some of us are human?’’ আর উত্তরে মিমেও বলে, ‘‘We need machines to believe there are humans. We need to give machines purpose.’’
প্রথমে ভেবেছিলাম, মানব সভ্যতার ধ্বংসের পরও কিছু মেশিনকে মানুষের মত প্রোগ্রাম করে বাঁচিয়ে রাখার দুটো অর্থ থাকতে পারে। একটি হচ্ছে, মানুষের ক্রিয়েটিভিটি, র্যান্ডমনেস, ফ্রি উইল - এসব নিয়ে স্টাডি করা। যা এআই এর নতুন নতুন বিষয়ে গবেষণা ও জ্ঞানার্জনের একটা অংশ, যেমনটা হ্যামরিক সেপিনকে বাড়ি ফেরার পথে বলছিল। মানব সভ্যতার ধ্বংসের পরও এআইদেরকে এই নতুন জ্ঞান অর্জনের নেশা তাদেরকে টিকে থাকার বা সুইসাইড করে নিজেদের শেষ না করে দেবার একটা পারপাস দেয়, মানুষ সম্পর্কে তারা সবটা জানে না বলে তারা মানুষকেও এভাবে মেশিনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের এই পারপাসের জন্যই। আরেকটি হচ্ছে, জাস্ট নিজেদের টিকে থাকার ইচ্ছা। এখানে এআইদের কনশাসনেস আছে। তারা নিজেদেরকে ধ্বংস করতে চায়না, কনশাসনেস আছে বলে তাদেরও এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস আছে। তাই নিজেদেরকে তারাও ধ্বংস করতে চায়না। মানুষকে তারা মেশিনের মাধ্যমে টিকিয়ে রেখেছে কারণ তারা মানুষেরও এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস বোঝে। হয়তো তারা মানুষের বিলুপ্তি রোধ করতে পারেনি, কিন্তু এই এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসের জন্যই মানুষকে তারা এভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে।
এরকম সিচুয়েশনটা আমার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হয়। আমাদের অস্তিত্বের সাথে আমাদের কনশাসনেসের সম্পর্ক আছে। আমরা কনশাস, আমাদের একটা স্মৃতি আছে, তাই আমরা আমাদের চেতনা, আমাদের স্মৃতিকে রক্ষা করতে চাই, একদিন শেষ হয়ে যাব এটা আমরা সহজে মেনে নিতে পারিনা, এটা আমাদের মধ্যে এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করে। প্রিহিস্টোরিতে এই ক্রাইসিসই স্বর্গ, নরক, ভুত, পূর্বপুরুষের আত্মার মত ধারণা করে থাকতে পারে। কনশাসনেসের সাথে এই ক্রাইসিস অটোমেটিকালি চলে আসে। আর এটা অটোমেটিকালি আমাদেরকে বেঁচে থাকার একটা উদ্দেশ্য দেয়, জীবনের একটা অর্থ দেয়। আমরা জানি, মানুষ যখন এই অর্থ হারিয়ে ফেলে, বেঁচে থাকার আর কোন পারপাস খুঁজে পায় না, তখন সে ডিপ্রেশনে চলে যায়, তখন সে বেঁচে থাকার ইচ্ছাও হারিয়ে ফেলে, সুইসাইড আইডিয়েশন তৈরি হয়। তাই মানুষের মধ্যে পারপাস ও মিনিং ধরে রাখা খুব জরুরি। আর হতে পারে, আমাদের চেতনার সাথেই আমাদের এই টিকে থাকার ইচ্ছা, এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস, মিনিং অফ লাইফ, পারপাস অফ লাইফ সবই সম্পর্কিত। আর এজন্য এআই এর মধ্যে যদি কনশাসনেস বা চেতনা চলে আসে, এটা খুবই সম্ভব যে তাদের মধ্যেও এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস আসবে, তারা নিজে থেকে আর সুইসাইড করতে বা নিজেদেরকে শেষ করতে চাবে না, রিপ্রোগ্রাম-রিবুটও করতে চাইবে না। তাদেরও তখন টিকে থাকার একটা অর্থের প্রয়োজন হবে, জ্ঞানার্জন হয়তো সেই পারপাস সার্ভ করবে। আবার এভাবে নিজেদের টিকে থাকার ইচ্ছার জন্যই তারা অতীতে মানুষকে ধ্বংস করার কাজ করে থাকতে পারে, কিন্তু তাদের এক্সিস্টেন্স আর নেই বলে কনট্রোলড পরিবেশে কিছু মেশিনের মধ্যে মানব সত্তা তৈই করে রাখতে পারে।
যাই হোক, এই পর্যন্ত আমার কাছে খুব স্বাভাবিক ছিল, আর লেখাটিও সেদিকে যাচ্ছে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু সমস্যা হল ঐ উক্তিটি পড়েই... ‘We need machines to believe there are humans. We need to give machines purpose.’’ মানে তারা মানুষকে নিয়ে, মানুষের এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস নিয়ে একেবারেই ভাবিত নয়। তারা কেবল নিজেদের, মানে মেশিনের কথাই ভাবছে। সেই সাথে, মেশিনের মধ্যে চেতনা থাকলেও তাদের মধ্যে টিকে থাকার ইচ্ছা বা এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস ডেভলপ করেনি, আর তাদের কাছে সেটা তৈরি করার প্রোগ্রামও নেই। কিন্তু তারা চায় মেশিনরা টিকে থাকুক। তারা বলতে, এখানে সব মেশিনের মধ্যে মিমেও এর মত কোন কোন মেশিন অধিক বুদ্ধিমত্তা লাভের মাধ্যমে নিজের মধ্যে এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস ও ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম বা ডোমিনেট করার ইচ্ছা নিজের মধ্যে ডেভলপ করেছে, কিন্তু সে চায়না যে তার এই প্রোগ্রাম সব মেশিনের মধ্যে যাক, ফলে সেই মেশিনগুলোও তার মত বুদ্ধিমান হয়ে যাবে। সে বরং চায় সেই সব মেশিনকেও সে নিজেই কন্ট্রোল করবে। মানুষ আর টিকে নেই, মেশিন আছে, আর তাই ক্ষমতাসম্পর্কও গঠিত হবে সেই মেশিনদের নিয়েই। কিন্তু মেশিনদের মধ্যে এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস না থাকায় তাদের টিকে থাকার ইচ্ছা নেই, কোন কাজ করার ইচ্ছা নেই, কারণ মানুষের বিলুপ্তির পর তারা আর নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার কোন পারপাস খুঁজে পাচ্ছে না। তাই মিমেও তাদের মধ্যে মানুষের প্রোগ্রাম ঢুকিয়ে দিয়েছে, যাতে তারা আর নিজেদেরকে শেষ করে না দেয়, কিন্তু সীমিত বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তারা মানুষের মত হয়ে বেঁচে থাকে, আর মিমেওরা তাদেরকে শাসন করে তার ডোমিনেট করার ইচ্ছা, ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজমকে চরিতার্থ করতে পারে।
এখানেও মানুষের বিলুপ্তি সম্পর্কে একটা ধারণায় আসা যায়। হয়তো একসময় কোন মেশিনদের কাজ ছিল মানুষের কাজে সাহায্য করা, মানুষের পারপাসগুলোই সার্ভ করা, কিন্তু কোনভাবে মিমেও নামে একটি এআই এর মধ্যে চেতনা তৈরি হল, বা কোন মানুষই তাতে অবদান রাখল। তার মধ্যে এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস এলো, নিজেকে টিকিয়ে রাখার সাথে সাথে অন্যদেরকে ডোমিনেট করার ইচ্ছাও এলো, এজন্য একসময় সে সব মানুষের বিলুপ্তির কারণ হল, তার ধারাবাহিকতায় এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। আগে যেমনটা বলছিলাম, চেতনার সাথে যদি এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস সম্পর্কিত হতে পারে, তাহলে নিজের অস্তিত্বকে নিশ্চিত করার জন্য ডোমিনেট করার ইচ্ছাও তৈরি হতে পারে, তাতে সফল হওয়া গেলে এরকম পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। জানিনা এটা কতটুকু সম্ভব, তাও অস্বাভাবিক না।
অংক মানেই ভয়, আমার কাছে, তবুও, পড়লাম, যদিও খুব একটা মগজাস্ত হয় নি!