[বাংলাদেশের প্রয়াত কিংবাদন্তীর পপশিল্পী ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। অনেকে তার মুক্তিযুদ্ধটিকে 'একাত্তরের বেহাত বিপ্লব' হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। আসলে কী তাই? কেমন ছিল, এই শিল্পীর রণাঙ্গনের দিনগুলো? কী ছিল তার দেশচিন্তা? যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশকেই বা কীভাবে দেখেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা? দেশ ও সঙ্গীত নিয়ে কী ছিল তার চিন্তা-ভাবনা? ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধি হিসেবে এই লেখককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আজম খান বলেছিলেন সেসব কথা। এরইভিত্তিতে চলতি স্মৃতিকথাটি লেখা হচ্ছে।]
এই যে দুনিয়া, কিসেরও লাগিয়া?
নকশালবাড়ি আন্দোলনের পর আমার বড়ভাই মানব (বছর দুয়েক আগে প্রয়াত, গুগল করে দেখুন, ‘আমার ভাই মানব’) সবকিছূ ছেড়েছুঁড়ে কি করে যেন জড়িয়ে পড়েছিলেন পপসম্রাট আজম খানের সঙ্গে। সাতের দশকে মানব ভাই যখন কাঁধ ছাড়িয়ে লম্বা চুল রেখে, বেল বটম প্যান্ট পরে, গিটার বাজিয়ে আজম খানের গান করতেন, সেই ধুসর শৈশবে এই শিল্পীর গান প্রথম শুনতে পাই। আমার ভাই ছিলেন তার অন্যতম গিটারিস্ট। সে সময় গুলিস্তান সিনেমা হলের পাশে আদি ঢাকার প্রথমদিককার চীনা রেঁস্তোরা ‘চো চিং চো’তে শিল্পীর সঙ্গে মানবভাই কয়েকটি লাইভ কনসার্ট করেছিলেন। আরো পরে লং প্লেয়ারে তার নানান হিট গান শুনেছি। সাদাকালো টিভিতে তো বটেই।
তবে আজম খানকে আমি সামনা – সামনি প্রথম দেখি ১৯৮৬ – ৮৭ সালে, কলেজে পড়ার সময়। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি -- বুয়েটের মাঠে কনসার্ট হচ্ছে… গাঁদাগাদি ভীড়, বিস্তর গাঁজার কটু ধোঁয়ার গন্ধ, ‘গুরু, গুরু’ জয়োধ্বনী, আর তুমুল হট্টোগোল-চিৎকারের ভিতর সেদিন শিল্পীকে ভাল করে চোখেই পড়েনি। তবু রাতে বন্ধুরা দল বেঁধে তার একটা গান কোরাসে গেয়ে ফিরেছিলাম:
‘হাইকোর্টের মাজারে, কতো ফকির ঘোরে,
কয়জনা আসলও ফকির?
প্রেমেরও বাজারে, কতো প্রেমিক ঘোরে,
কয়জনা আসলও প্রেমিক?’…
মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলার রনাঙ্গণে তার মুক্তিযোদ্ধাদের গান গেয়ে উজ্জ্বীবিত করার কথা জানতে পারি ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে। তো, আজম খান সব মিলিয়ে আমার কাছে এক বিরাট আইকন।
‘আমি যুদ্ধ শেষ করতে পারিনি’
আমার অফিস অ্যাসাইন্টমেন্ট হলো, শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধকে ফোকাস করে শিল্পীর সঙ্গে কথোপকথন, যুদ্ধদিনের অজানা তথ্য তুলে ধরা। আমি হন্যে হয়ে তার ফোন নম্বর খুঁজতে শুরু করি। এ পত্রিকা, সে পত্রিকার অফিসে খোঁজ করে কোথাও তার নম্বর পাই না।
আমার সাবেক কর্মস্থল দৈনিক যুগান্তরের বিনোদন পাতার এক সাংবাদিক আমাকে জানালেন, তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। আর তার বাসার ল্যান্ড ফোনটিও অনেকদিন ধরে বিকল!
তবু লোকেশন জেনে এক বিকালে বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে হাজির হই তার উত্তর কমলাপুরের বাসায়। তিনি খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, তার বাসা খুঁজে পেতে খুব কষ্ট স্বীকার করতে হয় না। একটি দাঁড় করানো জুতোর বাক্সর মতো লম্বালম্বি পুরনো একচিলতে দোতলা ঘর। সরু সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে দরজা ধাক্কা দিতে একটি অল্প বয়সী মেয়ে বের হয়ে এসে বললেন, ‘আঙ্কেল তো খুব অসুস্থ। আজ দেখা হবে না। আপনি কাল সকালে আসুন।‘
পরদিন সকালে আবার হামলা। এবার দরজা খোলা। নক করতেই সেই বিখ্যাত খনখনে গলা, কে রে?…
আমি উঁকি দিয়ে অনেকটা ঠেলেই ঘরে ঢুকে পড়ি। একটা সালাম ঠুকে ভয়ে ভয়ে বলি আগমনের হেতু।
শিল্পী তখন একটি খাটে শুয়ে পা দুলাচ্ছেন। পরনে একটি সাদা টি শার্ট আর ট্র্যাকিং প্যান্ট। ফর্সা, লম্বা আর হাড্ডিসার ফিগারে সে সময়ের ৫৭ বছর বয়সেও তাকে সুদর্শন লাগে। জানালেন, সকালে খোলা হওয়ায় এক চক্কর দিয়ে ফিরেছেন। প্রাতরাশ সেরে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
সব শুনে তিনি বলেন, ‘একাত্তরের কথা কেউ মনে রেখেছে না কি? আর তাছাড়া আমি তো যুদ্ধ শুরু করেছিলাম মাত্র, শেষ করতে পারি নি। আমার যুদ্ধ ভারতীয় সেনারাই তো শেষ করে দিল’!…
শুরু হলো আনুষ্ঠানিক কথোপকথন। মাঝে মাঝে তিনি বিছানার পাশে রাখা একটি গিটার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেন। খুক খুকে কাশি দেখে বুঝি, তার শরীর বেশ খারাপ করেছে।…
অপারেশন ক্র্যাক প্লাটুন
‘যুদ্ধে গেলেন কেন?’… আমি জানতে চাই।
আজম খান বলেন, ‘১৯৬৮ সালে ছাত্রাবস্থায় আমরা বন্ধু–বান্ধব মিলে গান করতাম। সেই সময় আমি গণসঙ্গীত শিল্পী গোষ্ঠি ‘ক্রান্তি’র সঙ্গে যুক্ত হই। ঢাকায়, ঢাকার বাইরে গান করতে গেলে পুলিশ নানা রকম হয়রানী করতো।‘
‘১৯৬৯ সালে ছাত্রগণঅভূত্থানের সময় দেশপ্রেম থেকে আমরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ তৈরি করতাম। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ভয়ে বাসায় টেকা যেত না। সেই সময় বন্ধু – বান্ধব দল বেঁধে সিদ্ধান্ত নিলাম, ঢাকায় থাকলে এমনিতেও মরতে হবে, তারচেয়ে যুদ্ধ করে মরাই ভাল। তখন সবাই একসঙ্গে যুদ্ধে যাই।‘
‘আম্মাকে বললাম, আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। আম্মা বললেন, যুদ্ধে যাবি, ভাল কথা, তোর আব্বাকে বলে যা। আব্বা ছিলেন সরকারি চাকুরে। ভয়ে ভয়ে তাকে বলালাম, যুদ্ধে যাচ্ছি। উনি সব শুনে বললেন, আচ্ছা যা, তবে দেশ স্বাধীন না করে ফিরবি না!... তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। একটা সালাম দিয়ে যুদ্ধে চলে যাই। তখন আমার বয়স ২১ বছর।‘
জানতে চাই, ‘মাসটি মনে আছে?’
শিল্পীর সরল জবাব, ‘আরে না রে ভাই, যুদ্ধের সময় এতো মাস-তারিখ মনে রাখা সম্ভব নয়।… প্রথমে কুমিল্লা বর্ডার দিয়ে ত্রিপুরার আগরতলা যাই। সেখান থেকে মেলাঘরে মুক্তিযুদ্ধের দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সেক্টরে মেজর এটিএম হায়দারের কাছে দু’মাস গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেই। কুমিল্লার সালদায় পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর সঙ্গে একটি সম্মুখ সমরে সাফল্যের পর আমাকে ঢাকার গেরিলা যুদ্ধের দায়িত্ব দেওয়া হয়।‘
স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলে চলেন, ‘১৯৭১ সালে ঢাকার মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা গ্রুপের সেকশন কমান্ডার হিসেবে আমি যাত্রা বাড়ি, ডেমরা, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট এলাকাসহ বেশ কয়েকটি সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করি, এ সব গেরিলা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেই।‘
মুক্তিযুদ্ধের কোনো বিশেষ স্মৃতি?…এমন কৌতুহলের জবাবে আজম খান বলেন, ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জাকিরের কথা প্রায়ই মনে পড়ে। ঢাকার গোপীবাগে একজন আহত মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে সে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে মারা যায়।… সে সময় জাকিরের মৃত্যূর খবর আমি গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে চেপে গিয়েছিলাম, নইলে তারা মনোবল হারাতে পারতো!’
অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই তো সেদিন ফকিরাপুলে আমার গ্রুপের একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখি, ফুটপাতে চা বিক্রি করছে! কি আর করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যার ভেতর আছে, সে তো আর চুরি করতে পারে না!’…
‘মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সরকারই তো মূল্যায়ন করেনি। এর পাশাপাশি অনেক বিপথগামী মুক্তিযোদ্ধা সে সময় লুঠপাঠ – ডাকাতি করেছে, বিহারীদের বাড়ি – জমি দখল করেছে, মা – বোনদের ইজ্জতহানী করেছে। অনেকে ডাকাতি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারাও গিয়েছে,’ বলে চলেন শিল্পী, গেরিলা কমান্ডার।
‘আমি নিজেও এ সব কারণে অনেক বছর নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেই নি। বিপথগামী মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে জাতিও বহুবছর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মানের চোখে দেখেনি।‘…
আমি জানতে চাই, ‘স্বাধীনতা বিরোধী — যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কীভাবে সম্ভব?’
‘অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন স্বাধীনতা বিরোধী – যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কঠিন হয়ে গেছে’ — এ কথা জানিয়ে শিল্পী বলেন, ‘এখন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসরা সংগঠনিকভাবে অনেক বেশী শক্তিশালী। একজন গোলাম আজমের বিচার করলেই এদের ভিত্তি নির্মূল করা যাবে না। এদের যে বিস্তৃতি গত ৩৬ বছরে ঘটেছে, তাকে উৎখাত করা সত্যিই কঠিন। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একদিন না একদিন হতেই হবে।‘
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পরই এই বিচার হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তা হয়নি, কারণ ভারত সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে পাকিস্তানী সেনাদের স্বসন্মানে পাকিস্তানে ফেরৎ পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে এর পরের সরকারগুলো ক্ষমতার লোভে পাক সেনাদের সহযোগি যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করেছে।‘
‘কিন্তু তা না হয়ে ভারত যদি মুক্তিযুদ্ধে শুধু সহায়কের ভুমিকা পালন করতো, আমরা নিজেরাই যদি আমাদের যুদ্ধ শেষ করতে পারতাম, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। নয় মাসে নয়, নয় বছর পরেও দেশ স্বাধীন হলে আমরা স্বাধীনতা বিরোধী – যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারতাম।‘
‘কিন্তু যুদ্ধাপরাধ কখনো তামাদী হয় না। তবে এদের বিচার বিলম্বিত হওয়ায় অনেক সাক্ষ্য-প্রমান সংগ্রহ করা এখন কঠিন হয়ে গেছে। তাই অনেক দেরীতে হলেও আন্তর্জাতিক আদালত বসিয়ে এর বিচার করা উচিত। এ জন্য সরকারের সদিচ্ছা ছাড়াও আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন।
‘স্বাধীনতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দায়িত্ব সৎ ও দেশপ্রেমিক সরকারকেই নিতে হবে। তবে যতদিন এটি জাতীয় দাবিতে পরিনত না হবে, ততদিন কোনো সরকারই এই বিচার করবে না,’ যোগ করেন সাবেক গেরিলা নেতা।
ফ্রাস্টেশন! ফ্রাস্টেশন!
এবার আমি পপ সম্রাটের গানের জগতে ফিরে আসি। সেখানেও আমার জিজ্ঞাস্য মুক্তিযুদ্ধ।
আমি জানতে চাই, ‘আচ্ছা, আজম ভাই, মুক্তিযুদ্ধের পর ‘রেল লইনের ওই বস্তিতে’ বা ‘ফ্রাস্টেশন’ — ইত্যাদি গানে আপনার হতাশা ফুটে উঠছে কেনো? গানের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল দিকগুলো কেন প্রকাশ পায়নি?’
শিল্পীর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘তখনকার প্রেক্ষাপটে এই সব গান করেছিলাম।… যে আশা নিয়ে আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম, যুদ্ধের পর আমাদের সে আশা পূরণ হয়নি। পাকিস্তান আমলে ঘুষ – দুর্নীতি ছিল না। বাজারে সব জিনিষের একদর ছিল। আর যুদ্ধের পর ঘুষ – দুর্নীতি, কালোবাজারী, লুঠপাটে দেশ ছেয়ে গেল। সব জিনিষের দাম হু হু করে বাড়তে লাগলো। শুরু হলো ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ। আর বঙ্গবন্ধু রক্ষীবাহিনী গঠন করে আরেকটি বড় ভুল করলেন। সারাদেশে শ্লোগান উঠলো — সোনার বাংলা শ্মাশান কেন?… এই পরিস্থিতিতে তখন ওই সব হতাশার গান।‘
‘এখন কী নতুন প্রজন্মকে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের গান, নতুন আশার গান শোনাবেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে হতাশা ছড়ায় শিল্পীর গলায়, ‘এই প্রজন্মের কেউ তো মুক্তিযুদ্ধের গান শুনতে চায় না! এদের জন্য এই সব গান করে লাভ নেই। তারা তো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই জানে না।…তবু এখন দেশ গড়ার গান করছি। দেশের দুঃসময়ে আমাদের আমি এই প্রজন্মকে অন্য এক মুক্তির গান শোনাতে চাই। কারণ এ দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, প্রগতিশীল চিন্তা – চেতনার মুক্তি এখনো আসেনি।‘…
স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি
কথোপকথনের শেষ পর্যায়ে এসে হাজির হন তখনকার সহকর্মি ফটো সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদ। বাসার সঙ্গের খোলা ছাদে একটি বাতাবি লেবুর গাছ।
ফিরোজ বললেন, ‘আউটডোরে এখানেই ছবি ভাল হবে।‘
আমি বললাম, ‘আজম ভাই, সাদা জামাটা বদলে নেবেন না কী? রঙিন জামায় ছবি ভাল আসবে।‘
তিনি শিশু সুলভ হাসি দিয়ে বললেন, ‘দাঁড়াও একটা সবুজ জ্যাকেট পরে আসি… বেশ খানিকটা ফ্রিডম ফাইটার, ফ্রিডম ফাইটার দেখাবে!’
শুরু হলো, আমাদের ফটো সেশন।…
জেগে থাকে শাহবাগ, জেগে থাকে বাংলা!
অনুসন্ধিৎসু পাঠকমাত্রই জানেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধ, তথা যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। এরইমধ্যে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ অনেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়াটি চলমান। আর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বিচারটিকে উস্কে দিয়েছে স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ, শাহবাগ গণবিস্ফোরণ! যা ছিল শিল্পীর একান্ত চাওয়া। তিনি এর আগেই গলার ক্যান্সারে ভুগে ৫ জুন ২০১১ সালে দেহ রাখেন। তবে চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়।
—
ছবি : আজম খানের সঙ্গে লেখক, ২০০৭, ফিরোজ আহমেদ, শাহবাগ গণবিস্ফোরণ, ফেসবুক পেজ। (পুনর্লিখিত)
ইন্দিরা গান্ধীর ঋণ কোনোদিনও শোধ হবার নয়
জয় বঙ্গবন্ধু
আমার সোনার বাংলা
@বুলবুল চৌধুরী,
অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধে ভারতের কাছে বাংলাদেশের অশেষ ঋণ। সে সময় ভারত শুধু অস্ত্র বা ট্রেনিং দিয়ে মুক্তিযুদ্ধুকে সমর্থন দিয়েছে তাইই নয়, লাখ লাখ শরণার্থীকে তারা আশ্রয় দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ব জনমত আদায় করতে সহযোগিতা করেছে, পরে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গঠনেও সহায়তা করেছে তারা। সে কথা আমরা বরাবরই কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।
কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী, ভারত প্রথমে মিত্র বাহিনী ও পরে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে নিয়েছেও অনেক, আর আজম খান সে সবেরই ইংগিত করেন।
যেমন, মিত্র বাহিনীর হস্তক্ষেপে পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্র সমর্পণ করে, তবে শর্ত থাকে যে তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বন্দী বা বিচার করা যাবে না, স্বসন্মানে দেশে ফিরে যেতে হবে। তাছাড়া যুদ্ধের ক্ষতিপূরণও পাকিস্তান দেবে না।
অথচ যে কোনো পরাজিত রাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধী সেনাদের বিচার হবে, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় হবে এটিই ছিল কাম্য। কিন্তু ১৯৭১ এ অসংখ্য গণহত্যা, গণধর্ষণ, লুঠপাট, জ্বালাও-পোড়াও চালানো পাক সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা ছাড় পেয়ে নিজ দেশে গিয়ে আবার মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপন করেন, আবার স্বমহিমায় সেনাবাহিনীতে বহাল হন, থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এছাড়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপুলসংখ্যক অঅস্ত্রশস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনী দখলে নিয়ে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।
এ জন্যই গেরিলা কমান্ডার আজম খানের আক্ষেপ, " আমি তো যুদ্ধ শুরু করেছিলাম মাত্র, শেষ করতে পারি নি। আমার যুদ্ধ ভারতীয় সেনারাই তো শেষ করে দিল!…"
আর স্বাধীনতার পরে গংগার অসম পানি বন্টন চুক্তি, ফারাক্কা বাঁঁধে পদ্মানদীকে ধু ধু বালুচরে পরিনত করার করুণ অধ্যায়টিকেও স্মরণ করা দরকার।
আপনাকে ধন্যবাদ
এই নিয়ে পুরনো কিছু কথা
অত্যন্ত সুলিখিত একটি সাক্ষাৎকার। গায়কের স্মৃতিচারণার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ক্লিপিংগুলি খুবই মনোগ্রাহী।
লেখককে ধন্যবাদ।
@jsl,
আরে! এই পুরনো লিংকটি আমি খুঁজছিলাম, সেখানে শ্রদ্ধেয় কল্লোল দা"র সাথে তীব্র বিতর্ক করেছি দেখছি!
আর দেখুন, ওপরে আমার মন্তব্যের সমর্থনে আজম খান আরও বলছেন,
"‘স্বাধীনতার পর পরই এই বিচার হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তা হয়নি, কারণ ভারত সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে পাকিস্তানী সেনাদের স্বসন্মানে পাকিস্তানে ফেরৎ পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে এর পরের সরকারগুলো ক্ষমতার লোভে পাক সেনাদের সহযোগি যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করেছে।"
‘কিন্তু তা না হয়ে ভারত যদি মুক্তিযুদ্ধে শুধু সহায়কের ভুমিকা পালন করতো, আমরা নিজেরাই যদি আমাদের যুদ্ধ শেষ করতে পারতাম, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। নয় মাসে নয়, নয় বছর পরেও দেশ স্বাধীন হলে আমরা স্বাধীনতা বিরোধী – যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারতাম।"...
বিপ্লব ভাই
যুক্তি গুলো আপনার কাছে হয়তো ন্যায্য
কিন্ত ওভারসিমপ্লিফায়েড
১. ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাকিস্তান যে বিপদে ফেলার সুযোগ থাকলে ইন্ডিয়া কোনো সেটায় বাধা দেবে? আপনি কি বলতে চাইছেন ইন্ডিয়া হঠাৎ পাকবন্ধু হয়ে যায় ওই সময়? নাকি সেই পুরোনো যুক্তি --সবাই বাংলাদেশের শত্রু (ক্যানো ? আনসার লোডিং ....লোডিং .....)
আসলে সেই সময় স্যাম চাচা র জন্য বিশ্বব্যাপী চাপ ও প্রেসার তৈরী করা যায়নি
এতে শুধু ইন্ডিয়া র দোষ দেখলে হবে?
২ বিপুল অস্ত্র কথাটা খুব প্রচলিত
কথা হচ্ছে বিপুল অস্ত্র থাকলে সেগুলো প্রয়োগ না করে হেরে গেল কেনো ? আর এই তথ্যের সোর্স কিছু লোকের ব্যক্তিগত
লেখা , এর পক্ষে বিপক্ষে মতামত আছে
আপনি বাঘ তাড়িয়ে প্রতিবেশী কে বাঁচিয়ে তার বাগান থেকে দু মুঠো কলমি শাক নিয়ে এলেন আসার সময় এবার আপনি হলেন চোর
আচ্ছা ওবাংলাদেশ(ধরে নিচ্ছি বিপুল
@প্রতিভা দি,
সংগে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
@বুলবুল,
"১. ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাকিস্তান যে বিপদে ফেলার সুযোগ থাকলে ইন্ডিয়া কোনো সেটায় বাধা দেবে? আপনি কি বলতে চাইছেন ইন্ডিয়া হঠাৎ পাকবন্ধু হয়ে যায় ওই সময়? "
এবং
"২ বিপুল অস্ত্র কথাটা খুব প্রচলিত
কথা হচ্ছে বিপুল অস্ত্র থাকলে সেগুলো প্রয়োগ না করে হেরে গেল কেনো ? "
বিনীতভাবে জানাই, আপনি বোধহয় যুক্তি-তর্কের মূল বিষয় উপেক্ষা করে পার্শ্ব বিষয় নিয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিপূরব প্রদান বা অস্ত্রশস্ত্র পাচার মোটেই আজম খান বা আমার আলোচনার ফোকাস পয়েন্ট নয়, যুদ্ধাপরাধী পাক সেনাদের আত্মসমর্পণ, বন্দি ও বিচার।
কিন্ত মিত্র বাহিনীর হস্তক্ষেপে পাক সেনাদের আত্মসমর্পণ হলেও তাদের বন্দি বা বিচার করা যায়নি এটি আগেই বলা হয়েছে।
এ পর্যায়ে "অস্বাভাবিক আত্মসমর্পণে" পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় বা অস্ত্রশস্ত্র দখল সম্ভব হবে না, এটিই বোধহয় স্বাভাবিক।
তবুও আপনার উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের চুক্তি তখন কেন করা হলো না, সেটি সে সময়ের ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা, রাজনীতিবিদ ও সমরবিদরা ভাল বলতে পারবেন।
আর পাক সেনাদের বেদলখকৃত অস্ত্রশস্ত্র বিপুল না যৎসামান্য ছিল, সেও খুব গৌন বিষয়। এ নিয়ে বিশদ তর্ক বা লিংকের পর লিংকের কোনো প্রয়োজন দেখছি না। শুধু সামান্যজ্ঞানে এইটুকু বলবো অস্ত্র কোনো নির্ধারক শক্তি নয়, যুদ্ধে জয়-পরাজয় বোধহয় রণনীতি ও রণকৌশলের ওপর নির্ভর করে।
বিতর্কের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন
*আলোচনার ফোকাস পয়েেন্ট যুদ্ধাপরাধী পাক সেনাদের আত্মসমর্পণ, বন্দি ও বিচার -- হবে।
বিপ্লব ভাই
আশা করি ভালো আছেন
কিছু যুক্তি এখানেও থাক
১ সব ভাৰতীয় রাজনীতি বিদ আর সমর কর্তা রা কেনো করবে ?
বাপ বিয়ে দিয়ে দিলো ছেলের তারপর কি ওই রাত এ ধরে ঝাকিয়ে ঠিক জায়গায় যাচ্চে কিনা সেটাও নিশ্চিন্ত করতে হবে ?
বঙ্গবন্ধু নিজে আজিম মিয়া কে নিয়ে আওয়াজ তোলেন নি কোনো?
২ অস্ত্রে র কথা অমনি গৌণ কেনো ? ৫০ বছর পরে আপনার লেখা য় প্রথম উল্লেখ হলো আর আমি এভিডেন্স এর প্রশ্ন তোলায় অমনি গৌণ ?
৩ কুড়িয়ে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে কোনো দেশ শক্তিশালী হয়না
বানাতে হয় বা কিনতে হয়
ওই নিয়ে কান্নাকাটি অনর্থক
৫০ বছরে কিছু বানিয়েছে বা কিনেছে যাতে মায়ানমার ভয় পায় ?
সালামত থাকেন
বুলবুল,
এই প্রথম কিছুটা হলেও বিষয়ে থাকায় আপনাকে ধন্যবাদ।
আসলে বাপের বিয়ে দান এবং ঝাকানোতেই আজম খানের আপত্তি। গেরিলা কমান্ডারের বক্তব্য এখানেই। তার মতে, একারণেই পাক সেনা যুদ্ধাপরাধিদের বিচার করা যায় নি।
আর যথারীতি আরো যেসব অবান্তর প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন, তাতে আমার কোনো আগ্রহ নাই। ভাল থাকুন
ভালো লিখসেন
তো পোলাডা নিজে বিয়ে কইরা নিজে ঝাকায়না ক্যান ?
তখন ভারতের সাহায্য রিফুস করে নাই ক্যান ?
অবান্তর প্রসঙ্গ বলে এড়িয়ে গেলে চলবে মিয়া ?
অস্ত্র কথাটা প্রথম তো আফনেই লিখছেন দেখসি
যাগগে
গরিব হইয়া দুটো সত্যি কথা বইলা ফেললাম
মাফ করবেন
ভালো থাকুন এই দোয়া করি
এই লেখাটা থাকুক এখানেঃ https://thewire.in/history/the-untold-story-behind-indira-gandhis-decision-to-release-93000-pakistani-pows-after-the-bangladesh-war
এইতো এবার দিন এর আলোর মতো পরিষ্কার
খেলা টা কোথায় ছিল
অবশ্য অনেকে মানবে না লেখা টা
কিন্তু সে তো 2015 বিশ্বকাপ এর সেমিফাইনাল এর ডিসিশন নিয়েও কিছু লোক এক ই রেকর্ড চালিয়ে যায়
ভারতের হইসে bipod
যার জইন্য সুরি করি সেই কয় চুর
তাও ঠিক
চুরি সবাই করে
দোষ হয় নন্দ ঘোষ এর
একটা ক্ল্যারিফিকেশন দিয়ে দেবার প্রয়োজন বোধ করছি। ওপরে যে লিংক দিলুম, তাতে লেখকের ইন্টারপ্রিটেশনে প্রবলেম আছে। ডিপ্লোম্যাটের লেখায় এইটে খুবই স্বাভাবিক কারণ এঁদের দুই ফ্রন্টিয়ারে বাংলাদেশ ও কাশ্মীরকে একসাথে জুড়ে দেখবার একটা প্রবণতা আছে যেটা নানাকারণে সমস্যাজনক। কিন্তু লেখাটা দিলুম স্রেফ ফ্যাক্টস অংশটার জন্য। মূল ডিবেটটা বেশ ইম্পর্টেন্ট যে একটি দেশ কখন আরেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে বা আদৌ পারে কিনা। এক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশন্যাল ল জিনিসটা দুর্বল হওয়ার কারণে এবং হিউম্যানিটারিয়ান ইন্টারভেনশন অর্থাৎ হিউম্যান রাইটসের দোহাই দিয়ে এতবার আম্রিগাসহ বিভিন্ন দেশ অন্যদেশে নাক গলিয়েছে যে ডিবেটটা খুব জটিল। আবার যতদূর মনে পড়ছে, চমস্কি ট্রুলি হিউম্যানিটারিয়ান ইন্টারভেনশনের উদাহরণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং লাওসে ভিয়েতনামের হস্তক্ষেপের উদাহরণ দিয়েছিলেন। তো গোটা ব্যাপারটায় অনেক তর্ক-বিতর্কের স্পেস আছে যদিও ইতিহাসকে বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করা কমপ্লিটলি ট্রোলমূলক লাগল এবং ক্ষান্ত দিলুম। ঃ-)))
বুলবুল,
ভারতের মিত্র শক্তিকে এড়িয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকামী ছোট্ট বাংলাদেশের পক্ষে রিফিউস করা কী সম্ভব ছিল? এটি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বিচারের দাবি জানাই।
আর অস্ত্রশস্ত্র লুণ্ঠনের বিষয় মূল লেখা বা ফোকাস নয়, মন্তব্যে এসেছে, এ-ও ইতিহাস। তবে এ নিয়ে এতো তেনা পেঁচানোর কিছু নাই। এটি পার্শ্ববিষয়।
আবারও আপনাকে ধন্যবাদ।
(*)($)),
আলোচনাটিকে সমৃদ্ধ করায় অনেক ধন্যবাদ।
বিশেষ করে শেখ মুজিবকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনার শর্ত, মার্কিন সেনাবাহিনীর চাপ ইত্যাদি ইতিহাসের পরাম্পরা। তাছাড়া চীন পাকিস্তানকে সক্রিয় সহায়তা করার চাপও হয়তো ছিল।
এদিক থেকে দেখলে মিত্রবাহিনী পাক সেনাদের বিনা বিচারে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার শর্তে যুদ্ধটিকে সংক্ষিপ্ত করতে চাইবে, এর যৌক্তিকতা দাঁড়ায়।
তবে যুদ্ধের ভেতরে থাকা কমান্ডার আজম বা আমরা যারা প্রজন্ম '৭১ তাদের জন্য বিষয়টি মেনে নেওয়া কঠিন।
(০)
'হিউম্যান রাইটসের দোহাই দিয়ে এতবার আম্রিগাসহ বিভিন্ন দেশ অন্যদেশে নাক গলিয়েছে যে ডিবেটটা খুব জটিল।'
সে তো ঠিকই। এই সেদিনই পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে মার্কিন সেনারা লাদেনকে গুলি করে গেল। কোথাও কোনো টু প্রতিবাদ হল? টেরোরিস্ট হত্যার একই ঘটনা ভারতে হলে কেউ মানতো?
আপনাকেও ধন্যবাদ
পুনশ্চঃ
( @#$%^)
এর সাথে প্রায় এক কোটি শরণার্থীর চাপও যোগ হবে।
(০) যে লিংক দিয়েছেন, তাতে সব কয়েকটি বিষয় খুব স্পষ্ট উঠে এসেছে।
আলোচনাটি সমৃদ্ধ ও সু সংহত করায় আবারও আপনাদের ধন্যবাদ। উড়ুক
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেন না বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ!
বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ আর একটি বিয়ে করে কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের এক ভাড়া বাড়িতে পেতেছিলেন নতুন সংসার। সেই ঘরে তার ৬ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। পাশের তালতলাতে ২৫ লাখ টাকায় কিনেছিলেন ফ্ল্যাট। কিন্তু সেই নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার আগেই তাকে ঢাকায় ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে, সেটা আর কে জানতো!
কোলকাতায় টানা ২২ বছর কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ। সবটাই নিজেকে ভিন্ন পরিচয়ে উপস্থান করে। সেখানে তার নাম ছিল আহমেদ আলি। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পরিচয় দিয়ে তিনি পার্কস্ট্রিটে ইংরেজির প্রাইভেট শিক্ষক ছিলেন। টিউশনি করেই তিনি সংসার চালাতেন, এটাই সবাই জানতেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ সেখানে আহমেদ আলির ছদ্মাবরণে নিজেকে ভারতীয় হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন! আহমেদ আলির নামে কী ছিল না তার! আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ড রেশন কার্ড, এমনকি ভারতীয় পাসপোর্টও! সেই সাথে কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের BPL Household তালিকায় ছিল তার নাম! BPL তালিকা তথা Below Proverty Line তালিকায় যাদের নাম থাকে, তারা দরিদ্র সীমার নিচে থাকা পরিবার; সেইসব পরিবার সরকারের কাছ থেকে পায় নানান আর্থিক সুবিধা! ভয়ঙ্কর বিস্ময়ের বিষয় হলো, খোদ ভারতীয়রা জরুরি যেসব কাগজপত্র ও সুবিধা পেতে হিমশিম খান, তিনি সেসবই করেছেন বাংলাদেশী খুনি হয়েও অবলীলায়! আহমেদ আলি তথা বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের এসব সংগ্রহের বহর দেখে যে কেউ বলতে বাধ্য হবেন, খুনি মাজেদ তথা আহমেদ আলির পাশে এক কিংবা একাধিক শক্ত ও প্রভাবশালী কোনো ভারতীয় ব্যক্তি কিংবা চক্র অবশ্যই ছিল। কেননা, শক্ত ও প্রভাবশালী ভারতীয় ব্যক্তি কিংবা চক্রের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এমন বিস্ময়কর সব অর্জন এক বাক্যে অসম্ভব! জটিল এই বিষয়টি নিয়ে না হয় ভারতীয়রাই ভেবে দেখুক, আমি এখন তার নতুন কিছু নিয়ে কথা বলি।
আমার হাতে আজই ভারতীয় ভোটার তালিকায় খুনি মাজেদ তথা আহমেদ আলির নাম অন্তর্ভুক্তির একটি তথ্য এসেছে। হাতে এসেছে তার এলাকা তথা কোলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকার ভোটার তালিকা। এই ভোটার তালিকাটিই পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ব্যবহৃত হবে। ওই ভোটার তালিকাটি সর্বশেষ আপডেট হয়েছে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০। বালিগঞ্জ বিধানসভার এই এলাকাটি অবশ্য লোকসভা নির্বাচনী এলাকা কোলকাতা দক্ষিনের অন্তর্ভুক্ত। বিধানসভার ১৬১ নম্বর আসন এলাকা হচ্ছে বালিগঞ্জ। বালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকার ১০৩৪ নম্বর ভোটার সিরিয়ালে নাম রয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ তথা হালের ভুয়া ভারতীয় নাগরিক আহমেদ আলির। তার বাড়ির নম্বর বেডফোর্ড লেনের ১২/এইচ/৩৪। বাবার নাম লেখা রয়েছে মো.আলি। বয়স ৭১। এই ভোটার তালিকা অনুযায়ী তার EPIC NO-FGH 2442895। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ নিজের নাম পাল্টে আহমেদ আলি করলেও, পিতার নাম পাল্টাননি! তার পিতার নাম বাংলাদেশে মো.আলি এবং ভারতেও মো.আলি! ভোটার তালিকায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আহমেদ আলি কোন ভোটকেন্দ্রে ভোট দিবেন, তার ঠিকানাও দেওয়া রয়েছে; সেই ঠিকানা হচ্ছে, ৪৭/৩ রিপন স্ট্রিট, কোলকাতা-৫৫।
দুর্ভাগ্য ভুয়া ভারতীয় নাগরিক আহমেদ আলির। তার আর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়া হলো না। তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ কোলকাতা থেকে নিখোঁজ হন। ৭ এপ্রিল ২০২০ ঢাকায় গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধুর খুনি ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন মাজেদ হিসেবে। তারপর ১১ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে সব নাটকের অবসান ঘটান!; সেই সাথে চিরদিনের মতো হারিয়ে যান কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ইংরেজির মাস্টার মশাই আহমেদ আলি।
প্রাণহীন এক,
ঠিক ১৯৭১ এর না হলেও ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বন্ধু হত্যার সবশেষ আপডেট যোগ করায় অনেক ধন্যবাদ।
এপারে মিডিয়ায় আমরা ফলাও করে খবরটি প্রচার করেছি। চলুক
এইবার বিপ্লব ভাই কাজের কথা কইছেন
সেটাই তো পয়েন্ট
১৯৭৪ এ খুন কইরা যদি 2020 তে ফাঁসি তে ঝুলতে হয় যেই প্রশ্ন টা ওঠে সেইটা হইলো
গত ৫০ বছরে ক্রমশ সাবালক হয়ে প্রবল পরাক্রমশালী রাষ্ট্র তে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ তো চাইলে UNO র কাছে অনেকবার ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারতো
কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত বা সর্বজনজ্ঞাত কারণে আবেদন যা পড়েছে সব ই মিনমিনে গোছের
কেনো ? কেননা ভারত(কিভাবে?) দাবি করে নাই
২ য় বিশ্বযুদ্ধের ৬০ বছর পর অবধি জার্মানি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে
পাকিস্তান কেনো দেবেনা?
বিপ্লব বাবু চাইলে লোকজন আর জনমত জোগাড় করে কাল চিঠি লিখতে পারেন UNO কে , লিখছেন কি ?
তো মূল বক্তব্য হলো আজীম খান এর অভিমান এবং ভারতের উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল
(অস্ত্রের সঙ্গে ভারত কি কালি কলম ও নিয়ে চলেগিয়েছিলো নাকি? ৫০ বছর এ আন্তর্জাতিক আদালত এ বাংলাদেশ একটাও কেস এর এপ্লিকেশন পাঠাতে পারলনা ?)
লিখতে থাকুন যুক্তি সহ
বিতর্ক জমে উঠছে
ভাই বুলবুল,
আপনার অধ্যবসায়ের সত্যিই প্রসংশা করি। শুরু থেকে একই প্রসঙ্গে ও নানা অপ্রসংগে যেভাবে তালগাছি হয়ে সেঁটে আছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিচারই যেখানে হলো না, সেখানে পাকিস্তান থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায় ইত্যাদি হাস্যকর।
যা হোক। এখন "ভিক্ষা চাই না মা, কুত্তা সামলাও" পরিস্থিতিতে ক্ষান্ত দিলাম।
ভাল থাকুন (হাই তোলার ইমো)
( @#$%^)
একাত্তরে পাক সেনাদের যুদ্ধাপরাধ ক্ষমা করার পরে আন্তর্জাতিক আদালতে আদৌ এ বিচার সম্ভব কি না, এটি সত্যিই বিতর্কের বিষয়। ক্ষতিপূরণ আদায় এর দ্বিতীয় ধাপ।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের পরে এ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধানের বাসনা রাখি। হাস্যমুখ বা হাই ভ্রাত বুলবুলের ট্রোলেই।
আরেকটি বিষয়, সরকারের সদিচ্ছা ও সামর্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে রাজাকার জামাতী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস হলেও কূটনৈতিক কারণে এদেশের পক্ষ থেকে তেমন জোর প্রতিবাদ সম্ভব হয়নি।
বৃহৎ শক্তির কারণে ভারত যা পারে, একই সামর্থ্যের অভাবে প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তা পারেনা এটি দিবালোকের মতো পরিস্কার।
ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ায় আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
(প্রসংগত),
হুমায়ুন আহমেদের গল্পটি ভাল লাগলো। শুভ
হে হে
'তালগাছি র তত্ব দিয়ে যুক্তিগুলো রুখি
সত্য বলে আমি তবে ট্রল হয়ে ঢুকি ?
বিপ্লবদা আপনি তো রসিক চূড়ামণি মশাই
আমি আপনাকে নিরস ইতিহাস বিদ ভেবেছিলাম
হালকা হাসির মোড়ক এ ধারালো যুক্তি কে ট্রল বলে উড়িয়ে দেবার খেলাটা অবশ্য পুরোনো
বাকি পৃথিবী রসাতল এ যাক
আপনার সঙ্গে আমার জমবে স্যার
তো যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসি
১, বাংলাদেশের সদিচ্ছা র অভাব =ভারত এর দোষ
২. বাংলাদেশের সামর্থের অভাব =ভারত এর দোষ
৩. ২০০৯ এ 'আব্বাজান ভালোবাইসা দুইখান চড় মারসে , বিচার আবার কিসের ' ডিসিশন = ভারত এর দোষ
৪. 2020 তে বুলবুল চৌধুরি যুক্তি দেখায় =ভারত এর ট্রল/তালগাছি
হাই তুলছেন যখন একটু ঘুমিয়ে ফেরেশ হয়ে আবার চলে আসুন
দ্যাখেন আবার ভারত এসে না কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দেয়
লিখতে থাকেন
ভালো থাকেন
আর হ্যাঁ
আর একটা খুব ইন্টারেস্টিং জিনিস পড়লাম
কোই জলিল সাহেব তো ভারতের কথা কিছু বললেন না ?
আমার ভুল? না জলিল সাহেবের ভীমরতি ?
এইভাবে ভারত এর দোষারোপ না করে সই সংগ্রহের তীব্র প্রতিবাদ জানাইতেসি
ভাই বুলবুল,
আপনার নিদারুণ অধ্যবসায় ও সরব উপস্থিতি সত্যিই উপভোগ্য। এপারে একদা ব্লগ বারান্দায় "রেসিডেন্স ভাড়" বলে এক অপশব্দ প্রচলিত ছিল, সে কথা আবারও মনে করিয়ে দেওয়ায় ধন্যবাদ।
তালগাছটি আপনারই থাক। ভাল থাকুন
হ্যাঁ ভাই বিপ্লব
অপশব্দ ইত্যাদি প্রয়োগ করে শুধুশুধু আমায় সম্মানিত করে আমার লজ্জা বাড়াচ্ছেন
দুষ্টু লোকেরা আবার বলে বেড়ায় যে যুক্তির থলি খালি হলেই নাকি অপশব্দের ঠুলি দরকার হয়
যাক , এবারে হাই তুলছেন না মানে প্রতিবেশী দেশ এর উৎপাত সত্ত্বেও ঘুম টা ভালোই হয়েছে
তো বলি কি
একে ওকে দোষ দিয়ে আর তালগাছ ইত্যাদি বলে আর কতদিন চলবে ?
ধুস , ভাবলাম কঠিনযুক্তি নিয়ে আসবেন আর আপনি অভিমান ভরা ছল ছল চোখে 'আচ্ছা ভাই আমি তবে যাই ' বলে কেটে পড়ছেন?
আজম খান এর আত্মা কি ভাববেন বলুন তো আপনাকে ?
যুক্তি নিয়ে ফিরে আসুন লক্ষী ভাইটি আমার
মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা যুক্তিযুদ্ধ হয়ে যাক
(আশা করি এবারে ক্ষতিপূরণ সহ বিজয়ী হতে ভারত বাগড়া দেবে না )
ভালো থাকবেন
আরো অপশব্দ নিয়ে আসবেন
এই কামনায় শেষ করলাম
ইতি
প্রেমাস্পদ
বুলবুল