লড়াই বাকী আছে : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৪ আগস্ট ২০২০ | ৪০৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
দুটি সমকামী ছেলের আত্মহত্যা করার ঘটনা নিয়ে কপি-পেস্ট করার মত আবেগ (এবং হ্যাশট্যাগ) বাজারে ছাড়া যায় না। ওটা নিয়ে আমরা চায়ের টেবিলে আলোচনা করতে পারি না যে। আর মাস হিস্টিরিয়ার উপাদান তো নেইই। আবেগ আর ভাবাবেগ ঠিক এক জিনিস নয়। আবেগটা নিজের ভিতর থেকে আসে। দ্বিতীয়টা অনেকটা গড্ডলিকাপ্রবাহের মত। একটা ধর্ষণের ঘটনার পর প্রচুর লোক আছে যারা "ডেথ পর রেপিস্ট" বলে হ্যাশট্যাগ দেয়। যাদের দায়বদ্ধতা থাকার কথা - সরকার, পুলিশ, আইনব্যবস্থা- এরাও কিন্তু চায় একটা সহজ ভাবাবেগ নিয়ে মানুষ মেতে থাকুক- কারণ খুঁটিনাটি সংস্কার অনেক সময়সাপেক্ষ, সংসাধনসাপেক্ষ কাজ। যেসব বিষয় নিয়ে গোষ্ঠী-আবেগ, ভাবাবেগ এগুলো জাগানো যায় না সেগুলো কম মনোযোগ পায়।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - প্রথম পর্ব - ইতিহাসে উপেক্ষিত: এট্রাস্কান সংস্কৃতি : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১০ অক্টোবর ২০২০ | ২৮৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পরলোকের জীবনকে পান-ভোজনের মাধ্যমে উদযাপনে বিশ্বাস করত এট্রাস্কানরা, তাই কফিনের ঢাকনা আর দেয়ালচিত্র দুই জায়গাতেই এই ছবি। যৌনতা ও নাচগানের দেয়ালচিত্রও সমাধিগৃহে থাকত। দুই, নারী-পুরুষের বৈষম্যও এট্রাস্কান সমাজে কম ছিল। কীভাবে বোঝা যায়? এই ধরনের পানভোজনের দৃশ্যে, গ্রীক সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষকে কখনওই একসাথে দেখা যেত না। গ্রীক নারী ছিল মূলতঃ অন্তঃপুরবাসিনী- রাজনীতি ও সমাজে তার ভূমিকা ছিল সীমিত। অতএব গ্রীক কুমোরশিল্পে গোষ্ঠীগত পানভোজনের দৃশ্যগুলোতে পুরুষেরাই একে অপরের সাথে থাকত। রোমানরাও এই ব্যাপারে গ্রীকদের থেকে খুব আলাদা ছিল না। অন্যদিকে এট্রাস্কানদের পানভোজনের দৃশ্যে নারী-পুরুষ একত্রে সামাজিকতা করত।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - দ্বিতীয় পর্ব - ভারতবর্ষের সুলতানী যুগ : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ৪০৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভারতে যখন সুলতানী যুগ, তখনও পৃথিবীর বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ১২৮ অব্দে নির্মিত রোমের প্যান্থেওন। দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ইস্তানবুলের আয়াসোফিয়া (তখন গীর্জা)। আয়াসোফিয়ার গম্বুজ ইঁটের। প্যান্থেওন ইঁটের গম্বুজ ছিল না, কংক্রীটের, তবে একই পদার্থবিদ্যার নিয়মে তৈরী। প্যান্থেওনের সমতুল্য মাপের গম্বুজ ভারতে তৈরী হয় অনেক পরে- সপ্তদশ শতকে- সেটিও একটি সমাধি, যার কথা আমরা পরে বলব। প্যান্থেওনের আরএকটা বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এটিই এই বিশ্বে একমাত্র বাড়ী যা টানা ১৯০০ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে- আগে রোমান মন্দির ছিল, পরবর্তীকালে গীর্জা।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - তৃতীয় পর্ব - ভারতবর্ষের মুঘল যুগ : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ নভেম্বর ২০২০ | ৪৬০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আগের পর্বের আলোচনাটা অনেক বেশী দিল্লী-কেন্দ্রিক ছিল। এই পর্বে বিজাপুর, লক্ষ্ণৌ এবং মাইসোরের আলোচনা হল। এবার বলব বাংলার কথা। অর্থনৈতিকভাবে মুঘলযুগে বাংলার বিশেষ স্থান ছিল, কিন্তু যে কারণেই হোক, বাংলায় খুব আড়ম্বরপূর্ণ সমাধি নেই। বাংলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমাধিসৌধ হল ত্রিবেণীর জাফর খাঁ গাজী মসজিদ, মালদহের একলাখি সমাধিসৌধ আর ফতে খাঁর সমাধিসৌধ, এবং মুর্শিদাবাদের আজিমুন্নিসা বেগমের সমাধি। এর মধ্যে প্রথম দুটি সুলতানি যুগের, শেষের দুটি মুঘল বা মুঘল-পরবর্তী যুগের। প্রথমটি সমাধির থেকেও দরগা এবং মসজিদ হিসাবে বেশী পরিদৃষ্ট হয়। দিল্লীতে আমরা যেরকম দেখেছি, বাংলায়ও একইরকম বিবর্তন দেখা যায়।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - পঞ্চম পর্ব - নকশ-এ-রোস্তম : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০১ জানুয়ারি ২০২১ | ৩৯৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
জন্মপরিচয়ের উপর এত গুরুত্ব কেন? তার কারণ দারায়ুস সাইরাসের বংশজাত ছিলেন না, আর সাইরাস এবং তিনি একই বংশজাত সেটা প্রমাণ করার দায় তাঁর ছিল। তার জন্য আমাদের দেখতে হবে দারায়ুস কীভাবে সিংহাসনে বসেন। সাইরাসের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় ক্যাম্বিসেস, আর তার মৃত্যুর পর সাইরাসের অন্য পুত্র বরদিয়া। কিন্তু রাজদরবারের সাতজন সম্ভ্রান্ত মানুষ দাবি তোলেন এই বরদিয়া সত্যিকারের বরদিয়া নয়, সে আসলে একজন ম্যাজাই (জাদুকর), যে ছদ্মবেশ ধরে বরদিয়া সেজে বসে আছে- যার আসল নাম গৌমাত। সাতজন সম্ভ্রান্ত মিলে এই গৌমাতকে হত্যা করে- দারায়ুস তাদেরই একজন। ইতিহাস কোনওদিনই জানতে পারবে না এই গৌমাত আদৌ কোনও ছদ্মবেশী বহুরূপী ছিল, না কি সিংহাসনের ন্যায্য উত্তরসুরী বরদিয়াই ছিল, যাকে ছলনা করে সরানো হয়।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - ষষ্ঠ পর্ব - মিশরের পিরামিড : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৫২৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
অন্ত্যেষ্টিশিল্পের আলোচনা এখানেই শেষ। অনেক দেশ এবং অনেক সময়কালের কাহিনী বাকী রইল। আশা করি সেগুলি তুলে ধরার জন্য কখনও এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে ফিরে আসব। যাবার আগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই- কেন এই ধারাবাহিক শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন সমাজের সামাজিক গঠন, তাদের ভিতরকার উঁচু-নিচুর শ্রেণীভেদ, লিঙ্গবৈষম্য, সাজপোশাক, খাদ্যাভ্যাস এগুলো তাদের সমাধি ও অন্যান্য বিদায়-উপহার দেখে বোঝা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বনাম গোষ্ঠীবোধ- কোন সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটারও আভাস পাওয়া যায়। পরলোক বিষয়টিকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কীভাবে কল্পনা করে এসেছে তার ধারণা পাওয়া যায়। বোঝা যায় সমাজগুলির শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন। পাওয়া যায় সামরিক অভিযানের কাহিনী, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিষয়ে অনেক তথ্য। পাওয়া যায় কিছু প্রেমকাহিনী, কিছু সমাধিলেখ, কিছু কবিতা। সামগ্রিকভাবে মানবসভ্যতার লিপিবদ্ধ ইতিহাসের অভাবকে অনেকটাই পুষিয়ে দেয়- অন্ত্যেষ্টিশিল্প।
পুরুষার্থ (২) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৩ জুলাই ২০২১ | ২৪৭০ বার পঠিত
ঋষভ লক্ষ্য করেছে, ভাল স্মৃতি মন ভাল করে। ভাল স্মৃতির অভাব তার পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনে নেই। প্রয়োজনের থেকে বেশিই আছে। তবে সব ভাল স্মৃতিকে রোমন্থন করতে ইচ্ছা হয় না। খালি একটা স্মৃতি আছে যেটাকে মন্থন করা যায়, যার সবটা মনে নেই, হয়তো সবটা সে বোঝেনি। হয়তো একটু ধোঁয়াশা ছিল, অতএব সেই ধোঁয়াশার পিছনের বস্তুটিকে নিজ মাধুরী দিয়ে সাজানো যায়। যা করার সময় বা সাহস সেই চারবছর আগে হয়নি, এখন করা যায়, কল্পনায়। সেইজন্য হয়তো এই ধোঁয়া ধোঁয়া স্মৃতিটার রোমন্থনযোগ্যতাটা একটু বেশি!
পুরুষার্থ (৩) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ জুলাই ২০২১ | ২১৫৭ বার পঠিত
জেট ল্যাগ হলে, বা জ্বরজারি হলে, মাঝরাতে অনেক সময় এরকম বাজে ভাবে ঘুম ভাঙে। এরকম বাজে একটা স্বপ্ন আসে, ঘাম দেয়। ঘুম ভাঙারপর মানুষ টের পায় না সে কোথায় আছে। ঋষভ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যেখানে ওর ঘুম ভাঙল জায়গাটা কোথায়? ওর কলকাতার বাড়ি, না আমেরিকার বাড়ি, না কি হাম্পির হোটেল। হোটেলের খাট থেকে তো বাঁ দিক দিয়ে নামার কথা, এখানে তো মনে হচ্ছে উল্টোটা। স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবার পরেও যেন হাত-পা বাঁধা! ঋষভ শুনেছিল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে একটা কিছু হয়- মানুষ ভাবে সে জেগে আছে- কিন্তু হাত-পা ঘুমন্ত মানুষের মত অচল!
পুরুষার্থ (৪) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৭ জুলাই ২০২১ | ২০৪৪ বার পঠিত
ঋষভের মনে হয়েছিল ঐদিন ও হেরে গিয়েছিল, আর রেশমী জিতেছিল। কারণ ঋষভের একটা গর্ব ছিল, যে দক্ষতা নিয়ে ও দুটো আলাদা আলাদা জগৎকে সামলায়- সেটা নিয়ে। ও যেভাবে কাছের মানুষের ছোট ছোট জিনিসগুলোর যত্ন নেয়, তা আর কেউ পারবে না- সেটা নিয়ে। গর্ব ছিল যেভাবে ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলায় সেই নিয়ে। গর্বের জায়গাটা ভেঙে যাওয়া একটা চুড়ান্ত গ্লানি আর হতাশার বিষয়। রেশমী ঐ গর্বের জায়গাটাই ভেঙে দিল। ঋষভ একবার ভেবেছিল বলবে "ভালো তো অন্য কাউকে বাসিনি, সমস্ত লোভ লিপ্সা বাড়ির বাইরেই রেখে এসেছি", কিন্তু সেটা আর বলা হয়নি!
পুরুষার্থ (৮) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৪ আগস্ট ২০২১ | ১৫৮৬ বার পঠিত
ঋষভ গাড়ি চালাতে চালাতে সারথিকে দেখছিল। আবার ঐ এক কথা ঋষভের মাথায় খেলল- টাকা পকেটে থাকলেই সব পাওয়া যায় না। হঠাৎ তার মনে হল- অর্থের বিনিময়ে অনেক কিছু পাওয়া যায়, অনেক কিছু যায় না। আর যেগুলো পাওয়া যায়না সেগুলো পাবার জন্যই মানুষ আরও দিশাহারা বোধ করে। হঠাৎ করে মনে হয় অর্থের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত। নিজের সামাজিক অবস্থানটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু পাওয়া যায়, অনেক কিছু যায় না। হঠাৎ করে মনে হয় নিজের সামাজিক অবস্থানটাও গুরুত্বহীন। অর্থগুলো মূল্যহীন মনে হয়, আর পৃথিবীটা অর্থহীন মনে হয়।
পুরুষার্থ (৭) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৭ আগস্ট ২০২১ | ১৫১২ বার পঠিত
মিনিট দশেক পর এক জেলে এসে হাজির হল, দা হাতে। ঋষভের খুব হতভম্ব লাগছিল- মাছের জায়গায় মানুষ দেখে জেলে কী ভাববে, আর কিছু জিজ্ঞেস করলে ঋষভই বা কী উত্তর দেবে। তবে সে কিছু জিজ্ঞেস করল না, ঋষভ শুধু চোখমুখ দিয়ে আকুতি করল। দা হাতে নিয়ে জেলে কিছুক্ষণ ঋষভকে দেখল। দা দেখে ঋষভের ভয় লাগছিল। জেলে আর ঋষভ একে অপরের ভাষা বিশেষ বুঝবে না, তাই প্রশ্নোত্তরের বিশেষ সুযোগ নেই। জেলে বিশেষ প্রশ্ন না করেই জাল ছাড়িয়ে দিল। তার জালে মাছের বদলে মানুষ ধরা পড়লে তারও বিশেষ লাভ নেই- ছাড়িয়ে দিলেই তার পক্ষে কাজের কাজ। ঋষভ অনাবৃত দেহে বুক হাত দিয়ে চেপে বেরিয়ে এল। সংকোচ হচ্ছিল। জেলে মুচকি হেসে তার পিঠের ঝোলা থেকে কী একটা বের করে ঋষভের গায়ে ছুঁড়ে দিল। ঋষভেরই শার্ট।
পুরুষার্থ (৯) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ আগস্ট ২০২১ | ১৫৪৬ বার পঠিত
সারথির কথা শুনে ঋষভ ভেবেছিল, এই হোম-স্টের মালিক বিনোদ স্যার খুব রাশভারী রাগী একজন মানুষ হবেন। যখন দেখা হল দেখল উনি মোটেই ওরকম নন, আবার খুব আলাপী মানুষও নন। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। রিসেপশনে ম্যানেজারের চেয়ারে ম্যানেজার অর্থাৎ সারথির বদলে বিনোদ স্যার বসে, একটা অনেক ছবি-টবি আঁকা চকচকে টি-শার্ট পরে – মানে ঐ বয়স হয়ে গেলে লোকের খুব রঙীন হবার শখ হয় – আর সারথি ওঁর ঘাড়ে-কাঁধে-পিঠে ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। ঋষভ মনে মনে বলল – আমেরিকায় মালিক যদি ম্যানেজারকে দিয়ে এই কাজ করায়, ওখানকার লেবার আইন অনুযায়ী রীতিমতো কোর্টে একটা মামলা হয়ে যেত! সারথি অবশ্য কাজটা হাসিমুখে করছে!
পুরুষার্থ (১০) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৪৪৬ বার পঠিত
বিনোদ স্যার ঋষভকে বললেন, ফোর্ট কোচিতে প্যালেস আর পর্তুগিজ যুগের বাড়িঘর দেখে আসতে। সুন্দর সুন্দর বিখ্যাত কেরালা মুরাল পেন্টিং আছে প্যালেসে। ঋষভ একাই বেরিয়ে পড়ল। প্যালেসের দেয়ালে রামায়ণ পেইন্ট করা – রঙ ফিকে হয়ে গেছে – তবে অদ্ভুত সুন্দর। ভেবে অবাক হল – বাড়ির দেয়ালে রামায়ণ নিয়ে কিছু মানুষ বাস করত।
ফোর্ট কোচির সমুদ্রপাড়ে চাইনিজ ফিশিং নেট দেখতে দেখতে সে ভাবছিল, বছর দুয়েক আগে হয়তো মঞ্জুনাথের বিয়ে হয়ে যায়, সারথি কেরালা চলে আসে। তারপর মঞ্জুনাথের ছেলে হয়, সেই জন্য হয়তো সারথি ওর সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয়। কপাল ফাটে। আবার পুরনো এবং পছন্দের ক্লায়েন্ট ডঃ শ্রীধরের সাথে হয়তো ও সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয় নূতন লোক অর্থাৎ বিনোদ স্যারকে পাবার পর। আর বুড়োর পয়সার তো কোনো অভাব নেই। তবে এগুলো সবই ‘হয়তো’। সব জুড়ে জুড়ে গল্প সে নিজেই বানাচ্ছে, তাও সেই লোকটাকে নিয়ে যার সত্যি মিথ্যার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।
পুরুষার্থ (১১) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৭৭ বার পঠিত
প্লেন একটু একটু করে রাতের আকাশে উঠল। আজ পূর্ণিমা। রাত্রি আটটার ধূসর কমলা রঙের একথালা চাঁদ আকাশে! তলায় দেখতে পেল, সমুদ্রের পাড় দেখা যাচ্ছে, আর আলো-অন্ধকারের বিন্যাসটা দেখে ব্যাকওয়াটারের অস্তিত্বটাও বোঝা যাচ্ছে। সমুদ্র আর ব্যাকওয়াটারের মাঝে কত কত গ্রাম। কোনও একটা গ্রাম হয়তো কুজিপল্লি। তলার কোনও একটা বিচে শুয়ে আছে সে আর সারথি! বালির মধ্যে থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে কুড়িয়ে সে মালা গাঁথছে একের পর এক, আর পড়িয়ে দিচ্ছে সারথির বুকের উপর। পূর্ণিমার চাঁদে জল চকচক করছে, সেই জলে ওরা ভেসে বেড়াচ্ছে – না, শান্ত তুঙ্গভদ্রা নদীর কোরাকল ভেলা নয়, দোল খাওয়া সমুদ্রের মাঝে মেছো নৌকায়। প্রতিবারই সারথি তার হাতে একটা জিনিস তুলে দেয়, কল্পনার রসদ, নতুন নতুন কল্পনার রসদ। কল্পনা কল্পনাই, কল্পনা সারথির মতনই মিথ্যা বলে, কল্পনা সারথির মতনই মন ভোলানো গল্প বলে, কল্পনাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে!
রাশিয়ায় জাতিভিত্তিক গণউচ্ছেদের ইতিহাস : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ইতিহাস | ০১ মার্চ ২০২২ | ৭৪৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪০
নূতন সোভিয়েত সরকারের জাতি-উচ্ছেদ নীতি কিন্তু পুরোনো জার শাসিত রুশ সাম্রাজ্যেরই ধারাবাহিকতা।
ঊনবিংশ শতকেই পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উচ্ছেদের সূচনা হয়। সেই যুগে রাশিয়ার সামরিক পরিসংখ্যানবিদরা রীতিমত এই নিয়ে গবেষণা করে স্ট্রাটেজি বানাতেন – কোথা থেকে কাকে সরানো উচিত! যেটা পাওয়া যায়, সেটা হল “অবিশ্বাসযোগ্যতার ভৌগোলিক অভিমুখ”। এই কাজের জন্য মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় – স্লাভিক (রুশ এবং সমজাতীয় ভাষাগোষ্ঠীগুলি) ও অ-স্লাভিক (পশ্চিম ইউরোপীয়, মধ্য এশীয়, ইহুদি, ও ককেশাস পর্বতীয় জাতিগুলি)। তারপর কোন ভৌগোলিক অঞ্চলে কাদের অনুপাত কীরকম – তার ভিত্তিতে অঞ্চলগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও অবিশ্বাসযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়। তারপর হত অবিশ্বাসযোগ্য অঞ্চলগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য বানানোর প্রক্রিয়া – মূলত রুশিকরণের মাধ্যমে।
তাজমহলের বিবিধ সত্তা : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ইতিহাস | ১৫ জুন ২০২২ | ২১১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
এই আমলক, কলস, উল্টোনো পদ্মফুল- হিন্দু শিল্পরীতির প্রভাবগুলো কিন্তু মুঘল আমলের অনেক আগে থেকেই ভারতীয় মুসলিম শিল্পে দেখা যায়। সৈয়দ ও লোদী বংশের সমাধিসৌধগুলোতে এদের দেখা পাওয়া যায়। বরং সেইযুগের কিছু হিন্দু প্রভাব, যেমন মকরতোরণ তাজমহলে নেই। মকরতোরণ হল দরজার উপরে দুদিকে মকরের মত দেখতে ভাস্কর্য যা হিন্দু মন্দিরে বহুপ্রচলিত।
ভারতীয় গম্বুজের সূচনা ত্রয়োদশ শতকে বলবনের সমাধির মাধ্যমে। প্রথমে অর্ধগোলক আকৃতি থেকে শুরু করে, ইউরোপীয় গম্বুজগুলি একটু সঙ্কুচিত হয়ে মোচার আকৃতি নেয়, কিন্তু ভারতীয় এবং রাশিয়ান গম্বুজগুলি তাদের মধ্যদেশকে কিছুটা স্ফীত করে পেঁয়াজের আকার ধারণ করে । হয়তো এই পেঁয়াজের আকারটা আসলে পদ্মের আকৃতি। মন্দিরের ছাদ থেকে ঝুলানো পাথরের বা পোড়ামাটির তৈরি উল্টানো পদ্ম এর অনুপ্রেরণা হতে পারে।
তাজমহলকে শুধু শাহজাহানের সৃষ্টি বললে এর সঙ্গে যুক্ত ডিজাইনার, আর্কিটেক্ট আর ইঞ্জিনিয়ারদের অবজ্ঞা করা হবে। তাঁদের ব্যাপারেও জানা যাক। সব মিলিয়ে ৩৭ জন ডিজাইনার এবং আর্কিটেক্টের নাম মুঘল সরকারি নথি থেকে পাওয়া যায় যাঁরা তাজমহলের প্রধান স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন।
কর্মক্ষেত্রে যৌন সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ২২৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (diversity and inclusion) জরুরি কেন? কারণ হল বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা – যার মুখোমুখি সংখ্যালঘুরা হয়। এছাড়া কর্পোরেটের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক এতে কর্পোরেটের কী লাভ: ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির কর্মী কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে আসে। দশজনের মস্তিষ্ক একইরকম ভাবে কাজ করলে সেটা দশটা মস্তিষ্ক হয় না, দশের কম হয়। আগে মানুষ ভাবনার বৈচিত্রকে ভয় পেত, এখন সেটাকে কাজে লাগাতে জানে। পশ্চিমী দুনিয়ার কর্পোরেটগুলো এখন মানববৈচিত্র বিষয়টাকে বুঝতে শিখেছে। তবে এমন নয় যে সবাই বৈচিত্রের গুরুত্ব বোঝে, বা বুঝলেও কর্মক্ষেত্রে মানববৈচিত্র্য আনার বিষয়ে সক্রিয়। বৈচিত্র আনার ও রক্ষার উপায় কী? উত্তর হল, কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনা, আর যে কর্মীরা আছে তাদের জন্য অনুকুল কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। এই অনুকুল কর্মক্ষেত্র কিরকম? সেখানে কী আশা রাখা যায়?
পায়েসের বাটি : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ১৮০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শিখা পায়েসের বাটিটা নিয়ে ছাদে উঠল। দোতলা বাড়ির ছাদ। চিন্তিত মুখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে, একবার পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে, সবদিক নজর করে শেষে পায়েসের বাটিটা সে ছাদের পাঁচিলে রাখল। তারপর গলার মঙ্গলসূত্রটা চেপে ধরে কি যেন ভাবা শুরু করল। পাশের বাড়ির ছাদে সপ্তর্ষি, বছর চোদ্দর ছেলে হবে, হাতে খাতা, মুখে পেন। খাতা উল্টেপাল্টে দেখছে আর পাশে বসে থাকা পায়রাটাকে কীসব পড়ে শোনাচ্ছে। ছেলেটি একঝলক শিখাকে দেখল, শিখা সেটা খেয়াল না করে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এল।
মণিপুরের অস্থিরতা - কারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২০ জুন ২০২৩ | ২৬৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মৈতৈরা সিংহভাগ হিন্দু। কিছু সংখ্যক মৈতৈ মুসলিম, সানামাহি-ধর্মী ও খৃষ্টান। কুকিরা বেশিরভাগ খৃষ্টান। দাঙ্গার কারণ ধর্মীয় নয়, জাতিগত। দাঙ্গায় মৈতৈদের সতেরোটা মন্দির পুড়েছে, কুকিদের ২২১টা চার্চ- ২রা জুনের ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট অনুযায়ী। ঐ সময় অবধি মৈতৈদের প্রায় দু'হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। কুকিদের প্রায় দেড় হাজার।
শুরুতেই অনেকগুলো সংখ্যা একের পর এক তুলে ধরার উদ্দেশ্য হল দাঙ্গার ব্যাপ্তি ও ভয়াবহতাটা বোঝা। হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষিত ভারতীয়রা শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যার গল্প শুনে ভারতে ভোট দেয়, তাই দেশের ভেতরের সমস্যার কথা তাদের বলার জন্য সবার প্রথমে ঘরহারা মানুষ আর ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি ও ধর্মস্থানের সংখ্যা তুলে ধরা জরুরি।
পরিযায়ী শ্রমিক, মহিলা ভোটার আর ২০২৪ নির্বাচনের কিছু গণিত : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : লোকসভা - ২০২৪ | ০৮ জুন ২০২৪ | ৯৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মঙ্গলসূত্র, মুসলিম, মাটন, মাচ্ছি, মোষ, মুজরা- এসবের মাঝে যে দুটো ম-এর কাহিনী চাপা পড়ে গেছে সেটা হল মহিলা ভোটার আর মাইগ্রেন্ট লেবারার। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দুই দফায় যে বিষয়টা নজর কেড়েছিল সেটা ছিল ভোট শতাংশ কমে যাওয়া। নির্বাচনের শেষের দিকে যেটা নজর কেড়েছে সেটা হল পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশিমাত্রায় অংশগ্রহণ। নারীদের মধ্যে অতিরিক্ত ভোটদানের হার বিশেষভাবে দেখা গেছে বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় এবং ঝাড়খণ্ডে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হল বিহার। বিহারে প্রথম দফায় নারীদের ভোট শতাংশ পুরুষের চেয়ে কম ছিল। দ্বিতীয় দফা থেকে বাড়তে শুরু করে। বিহারে যেটা কমেছে সেটা হল পুরুষদের ভোটদানের হার- এটা ৫৫.১% থেকে ৫৩.৩% এ নেমে এসেছে। মহিলাদের ভোটদানের হার ৫৯.৪% যা ২০১৯এর প্রায় সমান।
নোবেল ২০২৪- অর্থনীতির গবেষণায় ইতিহাসের প্রয়োগ : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১২৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ইতিহাসে নোবেল পুরস্কার হয় না, কিন্তু এবারের অর্থনীতির নোবেল অনেকটাই ইতিহাস ঘিরে। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারে গাণিতিক বিষয়েরই প্রাধান্য- রাশিবিজ্ঞান, গেম থিওরি, ফিনান্সিয়াল ম্যাথমেটিক্স। ২০২৪এ অর্থনীতির নোবেল পেলেন দারন আসেমোগলু (Daron Acemoglu), জেমস এ. রবিনসন (James Robinson) আর সাইমন জনসন (Simon Johnson)। বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন - সাধারণ মানুষের সুখসমৃদ্ধিতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানব্যবস্থা কী ধরণের ভূমিকা পালন করেছে এবং করতে পারে।
এঁদের মধ্যে প্রথম দুজনের লেখা একটা উল্লেখযোগ্য বই হল "Why Nations Fail: The Origins of Power, Prosperity, and Poverty"- অর্থনীতির চেয়ে বইটিকে ইতিহাসের বইই বেশি করে বলা যায়। বইটিতে দারন আসেমোগলু এবং জেমস এ. রবিনসন দেখিয়েছেন কেন কিছু রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়, আর অন্যরা দারিদ্র্যের জালে আটকে থাকে। তাঁদের মতে, একটি দেশের সাফল্যের মূল কারণ হল তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমন্বয়মূলক প্রতিষ্ঠান (inclusive institutions) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেয়, এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আনে। এর বিপরীতে, শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান (extractive institutions) ক্ষমতা ও সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত করে, আর সমাজকে অসাম্য, স্থবিরতা এবং ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যায়।