এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • এক ডক্টর কি মউত 

    Anirban M লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আগে যা ঘটেছে

    আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারের নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে মাসাধিককাল অতিক্রান্ত। এই ঘটনা কেন্দ্র করে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল শহর জুড়ে, কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি তাঁরা জরুরি পরিষেবার কাজেও ফিরেছেন। অন্যদিকে সিবিআই-এর তদন্ত চালাচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়াও জারি রয়েছে, যা দীর্ঘ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। কতটা দীর্ঘ সেটা দুটি উদাহরণ দিয়ে একটু মনে করিয়ে দিই। গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া দিল্লির নির্ভয়া ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১২ তে, আর বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে দোষীদের শাস্তি হয়, আট বছর পরে, ২০২০ তে। অন্য ঘটনাটি সুতপা চৌধুরির যাকে প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করে সুশান্ত চৌধুরি, ২০২২ এর মে মাসে। মোট বিয়াল্লিশ বার ছুরির কোপ মারা হয়। ঘটনাটির সাক্ষী ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ ছিল, সুশান্ত নিজেও দোষ স্বীকার করে নেয় -- জানায় প্রেমে প্রত্যাখাত হয়েই তার এই চরম সিদ্ধান্ত। তারপরেও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারক ফাঁসির সাজা শোনান প্রায় একবছর পরে, সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ। এরপর এই মামলা হাইকোর্টে যাবে, তারপর সুপ্রিম কোর্ট। ফলে বোঝাই যাচ্ছে আপাত দৃষ্টিতে তথ্য প্রমাণ থাকলেও বিচার প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। কিন্তু ভারতে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এবং তার ভালো-খারাপ দিক এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়। আর জি কর ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গ বিশেষত কলকাতার মানুষ  যেভাবে প্রতিবাদে নামলেন তা অভুতপূর্ব এবং রাজনৈতিক আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের মাথায় যে প্রথাগত ধারণা আছে তা এই নাগরিক আন্দোলন অনেকটাই ভেঙ্গে দিয়েছে। এই নতুন রাজনীতির ধরণই এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়।  

    তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ

    আলোচনায় ঢোকার আগে অর্থনীতির লেন্স কীভাবে রাজনৈতিক বিশ্বাসকে দেখে সেই বিষয়টি একটু স্পষ্ট করা দরকার। অর্থনীতির মূল আলোচ্য সমাজে সম্পদের বন্টনের বিষয়টি যা হতে পারে রাষ্ট্র, বাজার এমনকি স্থানীয় তোলাবাজের মাধ্যমেও। অর্থনীতির দৃষ্টিতে রাজনৈতিক মতাদর্শ মানে আসলে সম্পদের বিভিন্ন বন্টনের ন্যায্যতা সংক্রান্ত বিশ্বাস। যেমন, কেউ যদি বাজার যেভাবে সম্পদ বন্টন করে সেটাই ন্যায্য মনে করেন সেটা একটি রাজনৈতিক বিশ্বাস।  আবার কেউ যদি বিশ্বাস করেন যে সম্পদের সমবন্টনই নৈতিক, সেটি আরেকটি রাজনৈতিক বিশ্বাস। একটু ভেবে দেখলে দেখবেন আপনার যা যা রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে তা আসলে  ব্যাপক অর্থে সম্পদ বন্টনের নৈতিকতা সংক্রান্ত বিশ্বাস। কর্মক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার, কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, জাতিভিত্তিক অগ্রাধিকারের মত যেকোন বিষয়ে আপনার মতামত কিন্তু আসলে আপনার সম্পদ বন্টনের নৈতিকতা সংক্রান্ত বিশ্বাস থেকেই উঠে আসে। এরকম রাজনৈতিক বিশ্বাস সবার থাকে, কিন্তু তা বলে রাজনীতি সবাই করেন না। তাহলে এই তত্ত্ব কাঠামোতে রাজনীতি কে করেন? আমরা সবাই চাই যে আমাদের মতে যা নৈতিক সেই বন্টনই সমাজে প্রচলিত হোক। যিনি রাজনীতি করেন তিনি অতিরিক্ত কিছু চান। তিনি একটি বিশেষ বন্টনের পাশাপাশি, সেই বন্টনটি কার্যকরী করার ক্ষমতাও চান। অর্থনীতির উপযোগ তত্ত্ব দিয়ে বললে, আমরা সবাই আমার পছন্দের বন্টন প্রচলিত হলে তার থেকে একটা উপযোগ পাই। কিন্তু সমাজে এরকম কিছু লোক থাকেন যাঁরা তাঁদের হাত দিয়ে বন্টনের কাজটি হলে (অর্থাৎ তাঁর হাতে ক্ষমতা এলে) অতিরিক্ত উপযোগ পান। এই অতিরিক্ত উপযোগটিকেই আমরা সাদা বাংলায় ক্ষমতার স্বাদ বলি। যাঁরা এই ক্ষমতার স্বাদটি চান, সমাজে তাঁরাই রাজনীতি করেন। কিন্তু রাজনীতি যাঁরা করেন তাঁরা যে সবাই এই ক্ষমতা পান, তা তো নয়। ক্ষমতা মূলত কুক্ষিগত থাকে নেতাদের হাতে। কিন্তু যেকোন দলে নেতা ছাড়াও একটা বড় কর্মীদল থাকেন যাঁদের ক্ষমতা সেভাবে থাকে না। এই তত্ত্ব কাঠামোতে যাঁরা রাজনীতি করতে আসছে তাঁরা সবাই ক্ষমতার স্বাদ পেতে চান অর্থাৎ তাঁরা সবাই নিজের হাতে সম্পদ বন্টন করা থেকে একটা অতিরিক্ত উপযোগ পান। তাই তাঁরা রাজনীতি করতে আসেন। কিন্তু শেষমেশ কার কত ক্ষমতা হবে তা নির্ভর করবে পার্টির আভ্যন্তরীণ ইঁদুর দৌড়ে কে উপরে উঠবে তার ওপরে। এ যেন সবাই ফার্স্ট ডিভিশন পেতে চেয়ে পরীক্ষায় বসে, কিন্তু সবার ভাগ্যে প্রথম ডিভিশনের শিকে ছেঁড়ে না।  এই তত্ত্ব কাঠামোতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বেশি হওয়ার মানে বেশি বেশি লোকের সম্পদ বন্টনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা। আমাদের দেশে সেই ভাবে দেখলে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর, কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা তার চেয়ে কম, আবার কোন পুরসভার কাউন্সিলরের ক্ষমতা তার চেয়েও কম। কিন্তু মনে রাখতে হবে কারও ক্ষমতাই চূড়ান্ত নয়।  দেশের সংবিধান, আদালত এবং আমলাতন্ত্র রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার ওপর বেড়ি পড়িয়ে রাখেন। এবার আসা যাক যে কোন আন্দোলনের সঙ্গে এই ক্ষমতা বিন্যাসের সম্পর্কের প্রসঙ্গে।

    রাজনীতির ছক

    যে কোন আন্দোলন ক্ষমতার প্রচলিত কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ করে, তাকে সরাতে চায়। যেসব ক্ষেত্রে সরকার বিরোধী আন্দোলন পরিচালিত হয় কোন রাজনৈতিক দল দ্বারা, তখন কারা বর্তমান ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের প্রতিস্পর্ধী তা বোঝা সহজ। কিন্তু  বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আন্দোলন শুরু হয় স্থানীয় কোন ঘটনার কারণে, অঞ্চলের মানুষের দ্বারা এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য কোন পার্টি সেই আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রিজওয়ানুরের মৃত্যু পরবর্তী আন্দোলন এবং সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন। এই দুটি আন্দোলনের শুরুর দিকে নাগরিক সমাজ মুখ্য ভূমিকায় থাকলেও ধীরে ধীরে আন্দোলনের রাশ চলে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু সবসময় যে এরকম হবেই তা বলা যায় না। যেমন রাজারহাট উপনগরী তৈরির সময় জোর করে কৃষকের জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে এরকম অভিযোগে নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে একটি আন্দোলন শুরু হলেও তা কাঙ্খিত সাফল্য পায় নি এবং তার নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য কোন রাজনৈতিক দলও ঝাঁপায় নি। এছাড়া অনেক আন্দোলন নতুন রাজনৈতিক দলের জন্মও দিতে পারে। যেমন, ২০১১’র আন্না হাজারের নেতৃত্বে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন। সেই আন্দোলন থেকে নেতা হিসেবে উঠে এসেছিলেন আন্না হাজারে এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এঁদের মধ্যে আন্না হাজারে রাজনৈতিক ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হলেও, কেজরিওয়াল প্রতিষ্ঠিত আপ দিল্লি অ পাঞ্জাবে ক্ষমতায়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করলেও এরকম একটি ধরণ উঠে আসে।  উপরের আলোচনার মূল উপজীব্য হল যে সাধারণত কোন গণআন্দোলনের যে ঘূর্ণাবর্ত হয় তাতে একটা কেন্দ্র তৈরি হয়। সেই কেন্দ্র কখনও কোন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ করে, আবার কখনও নতুন কোন রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। আর জি করের আন্দোলন এখানেই আলাদা হয়ে গেছে।

    ছক ভাঙ্গা আন্দোলন

    কলকাতা আন্দোলন, মিছিল কম দেখে নি – সেই খাদ্য আন্দোলন থেকে হালফিলের নন্দীগ্রাম এর মিছিল। কিন্তু এই সমস্ত আন্দোলনেরই একটা ভরকেন্দ্র ছিল। সেই ভরকেন্দ্র হয় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের তৈরি করা বা তৈরি হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের হাইজ্যাক করা।আর জি করের আন্দোলন আমার দেখা প্রথম বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন। এরকম নয় যে কেউ সেই আন্দোলন দখল করার চেষ্টা করে নি। ছাত্রসমাজ নামে একটি সংগঠন নবান্ন অভিযান সংঘটিত করার চেষ্টা করে। সম্ভবত তারা বিজেপির রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী এবং বিজেপি খোলাখুলি সেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই অভিযান যে জনমানসে সাড়া ফেলেছিল তা বলা যায় না। ডাক্তারদের আন্দোলনে সিপিএম এবং অন্যান্য বামদলের একটা প্রভাব আছে এরকম খবরও বেরিয়েছিল। সেটা সম্ভবত সত্যি কারণ যে সব ছাত্রনেতাদের নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তাদের অনেকেই বিভিন্ন অ-সিপিএম বাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তার পরেও এই আন্দোলনের রাশ বাম বা বিজেপি কেউই পায় নি। কারণ সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে নিজের নিজের মত করে। অথচ, নতুন নেতৃত্বের জন্ম-সম্ভাবনা যে তৈরি হয় নি তা নয়। প্রথম যে রাত দখলের কর্মসূচী  থেকে আন্দোলন গতি পায়, তার ডাক দিয়েছিলেন রিমঝিম সিংহ। কিন্তু তিনিও আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠতে পারেন নি। তার কারণ শহরের অলিগলি, পার্ক বা রাজপথে প্রতিদিনই ডাক দেওয়া হচ্ছিল নতুন মিছিলের। যারা দিচ্ছিলেন, তাঁরা বুঝে বা না বুঝেই রাজনীতিবিদ হয়ে উঠছিলেন। তৈরি হচ্ছিল একটা অভুতপূর্ব আন্দোলন কাঠামো।

    প্রযুক্তির নতুন ছক

    কিন্তু কেন এমন হল? এ কি শুধুই আকস্মিক দুর্ঘটনা না কি এর পেছনে কোন সামাজিক প্রক্রিয়া রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। আমার মতে এই পরিবর্তনের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্যে। অন্য যেকোন পেশার  মত রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার পেছনেও একটা স্থিরব্যয় থাকে। যিনি রাজনীতিবিদ হতে চান তাঁকে কেরিয়ারের শুরুতে সেটা বহন করতে হয়, বিনিয়োগ করতে হয় রাজনীতিতে সফল হওয়ার জন্য। এটা সব পেশার জন্যই সত্যি। আপনি যদি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চান তাহলে আপনাকে অন্ততঃ চার-পাঁচ বছরের জন্য মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নাম লেখাতে হবে। শিক্ষাগ্রহণের এই ব্যয়টি স্থির এবং পুরোটাই বহন করতে হবে। এরকম সম্ভব নয় যে চার বছরের পরিবর্তে দু-বছর পড়ে আপনি হাফ-ইঞ্জিনিয়ার হলেন। সেরকমই রাজনীতির কাজটাও সহজ নয়। আপনাকে জনসংযোগে বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের সামাজিক শ্রেণীর (মানে যারা পরিষেবা ক্ষেত্রে যুক্ত উচ্চবিত্ত) লোকেদের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে যেহেতু বর্তমান রাজনীতিতে দুর্নীতির ছায়া অতি দীর্ঘ, তাই যার কিছু হয় না সে রাজনীতি করে। ব্যাপারটা ঠিক অতটা সহজ নয়। দুর্নীতির জন্য ক্ষমতা আবশ্যিক এবং সে কাজ খুব সহজ নয়। ক্ষমতা মানে কিন্তু শুধু সরকারি পার্টির ক্ষমতা নয়। সরকারে না থাকা নেতাদেরও নানা ক্ষমতা থাকে। আরেকবার মনে করিয়ে দিই, আমাদের তত্ত্বকাঠামোতে ক্ষমতা মানে বন্টনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা। একটু ভাবলেই বুঝবেন অনেক স্থানীয় প্রভাবশালী মানুষই (এই প্রভাবশালী ব্যক্তিটি যেমন রাজনৈতিক নেতা হতে পারেন তেমনই স্থানীয় ক্লাবের সেক্রেটারিও হতে পারেন) কোন সরকারি ক্ষমতা ছাড়াই আপনার বাড়ির সামনে জলের কল করে দিতে পারে, ভাড়াটে তুলিয়ে দিতে পারে, জঞ্জাল পরিষ্কার করিয়ে দিতে পারে বা পাড়ার কাউকে স্থানীয় থানায় চা-বিক্রির কাজ করিয়ে দিতে পারে। এই সবই সম্পদ বন্টন প্রভাবিত করার উদাহরণ। কিন্তু সেই জায়গায় উঠতেও একজন নেতাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয় – সবাই নেতা হয় না। নেতা হতে গেলে মূল যে ক্ষমতাটা লাগে তা হল লোকের কাছে নিজের কথা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা। আমি কিন্তু বাগ্মীতার কথা বলছি না, বলছি কারো কথা শুনে ভরসা করার কথা। সেই জায়গায় পৌঁছনর জন্য একজনকে কোন একটা জায়গায় অনেকদিন ধরে পরে থাকতে হয়, সময় দিতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়। এই যে ব্যয় এটিই রাজনীতি করার বিনিয়োগ।  

    আমার মূল যুক্তি হল, প্রযুক্তি বিশেষতঃ সমাজমাধ্যমের প্রযুক্তি এসে এই স্থিরব্যয় অনেক কমিয়ে দিয়েছে। ফলে তথাকথিত অরাজনৈতিক মানুষও খানিকটা নিজের অজান্তেই রাজনৈতিক হয়ে উঠছেন।  একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আমাদের এক প্রাক্তন ছাত্রী আর জি কর কান্ডের প্রতিবাদে একটি মিছিল ডাকে আমাদের বিভাগের প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের জন্য। মিছিলের গন্তব্য ছিল সিঁথি মোড় থেকে শ্যামবাজার। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেও প্রায় দেড়শ মানুষ সেই মিছিলে হাঁটেন। যে মেয়েটির ডাকে মিছিলটি সংগঠিত হল তার যে কোন রাজনৈতিক অতীত আছে এরকম কিন্তু না। কোন সংগঠনের সংস্পর্শ ছাড়াই দেড়শ লোকের একটা মিছিল সংগঠিত করছে কেউ -- তিরিশ বছর আগে এটা অকল্পনীয় ছিল। এখন সম্ভব হল কারণ প্রযুক্তি এসে রাজনৈতিক প্রতিবাদ সংগঠনের স্থির ব্যয় কমিয়ে; স্মার্টফোন এবং সমাজমাধ্যম ছাড়া এই মিছিল অসম্ভব ছিল। প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের ফলে রাজনীতি এবং অ-রাজনীতির সীমা ক্রমশ অস্পস্ট হয়ে যাচ্ছে। যাদের এতদিন অরাজনৈতিক বলে মনে হত, তাঁরা নিজের অজান্তেই রাজনৈতিক হয়ে উঠছেন। তার ফলে সমাজমাধ্যম প্রভাবীরা ( যাঁদের মধ্যে পেশাদার  ভ্লগার ছাড়াও  কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, পরিচালক সবাই আছেন) রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছেন নিজেদের অজান্তেই এবং হঠাৎ আবিষ্কার করছেন কবিতা লেখা বা গান করার জন্য বা নিতান্ত কার্টুন শেয়ার করার অপরাধে তাঁদের নামে মামলা হয়ে যাচ্ছে। আমার দুই বন্ধুকে কারগিলের যুদ্ধ বিরোধী সভা করার জন্য বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ জেলে পাঠিয়েছিল ১৯৯৯  সালে। বেশ কয়েকমাস জেল খেটে তারা বেরোয়। কিন্তু তখনও যুদ্ধ বিরোধী কবিতা লেখার অপরাধে কাউকে জেলে যেতে হয় নি। অথচ সাম্প্রতিক অতীতে মিম শেয়ারের অপরাধে কারাবাস করতে হয়েছে অধ্যাপককে। তার মানে এই নয় যে, শাসকরা আগের থেকে বেশি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছেন। আসলে আগে যে সব কাজ আপাতনিরীহ এবং অরাজনৈতিক বলে গণ্য হত, প্রযুক্তি পরিবর্তনের ফলে তাই এখন বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসকের কাছে। সেই কারণে আগে যেসব প্রভাবীদের সরকার বা জনগণ কেউই রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করত না, এখন কিছু ঘটলে সবাই তাঁদের দিকেই তাকান। তাঁরা পছন্দমত কথা না বললে প্রত্যাঘাতও নেমে আসে – কখনও সরকারের দিকে থেকে কখনও জনগণের দিক থেকে -- হয় জেল নয় ট্রোল। অথচ ভেবে দেখুন, বিয়াল্লিশের আন্দোলনের সময় কেউ কি জানতে চেয়েছিল যুবক বুদ্ধদেব বসু বা বিষ্ণু দে কী ভাবছেন? রোজ বৃটিশ বিরোধী বিবৃতি না দেওয়ার জন্য গণ-তিরস্কারের সম্মুখীন কী হতে হয়েছিল তাঁদের? অথবা পঁচিশের যুবক শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিন্দিত হয়েছিলেন খাদ্য আন্দোলনের যথার্থতা নিয়ে বক্তব্য না রাখার জন্য? তার মানে এই নয় যে যে তখন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা রাজনৈতিক বিষয়ে মাথা ঘামাতেন না। অবশ্যই ঘামাতেন এবং অনেকেই নানা ভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণও করতেন। কিন্তু সেখানে আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্বে মূলত সর্বসময়ের রাজনৈতিক কর্মীরাই থাকতেন, শিল্পীরা তাঁদের মত করে অংশগ্রহণ করতেন মাত্র। এখনকার মত সব শিল্পী নিজেরাই এক একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন নি প্রাক-সমাজমাধ্যম যুগে। তাই সেই সময়ে, তাঁরা কী ভাবছেন বা বলছেন তাতে রাজনীতির কিছু যেত আসত না। কিন্তু এখন যায় আসে। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যম প্রভাবীরা আন্দোলন পরিচালনার জায়গাতেও চলে যান। কিছুদিন আগে ভারতীয় সেনা অগ্নিবীর নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করে যেখানে ভারতীয় সেনায় অস্থায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা হয়। উত্তর ভারতে এর বিরূদ্ধে যে প্রবল প্রতিবাদ সংঘটিত হয় – যা অনেক ক্ষেত্রেই সহিংস রূপ নেয় – তার মূলে বেশ কিছু সমাজমাধ্যম প্রভাবীর ব্যাপক প্রভাব ছিল।

    আন্দোলন যা শেখালো 

    রাজনীতির গঠন পাল্টাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে। আমার মতে রাজনৈতিক আন্দোলন ক্রমশ বিকেন্দ্রীকৃত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলি সবসময় চেষ্টা করে সেই বিকেন্দ্রীকৃত প্রতিবাদকে নিজের দিকে টেনে এনে ক্ষমতার মসনদে বসার। কিন্তু আর জি কর আন্দোলন দেখালো যে সেটা সবসময় সফল হচ্ছে না। কিন্তু সেটা ভালো না খারাপ? একদিক থেকে এই রাজনীতির কোন মানে নেই কারণ তা ক্ষমতার পট পরিবর্তনের দিশা দেখাতে পারছে না। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তন যে সব সময় সুসংবাদ নিয়ে আসে না, হালফিলের বাংলাদেশের দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রশ্ন হল এই বিকেন্দ্রীকৃত রাজনীতি কি আদৌ কোন পরিবর্তন আনতে পারে? আমার বিশ্বাস পারে। এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক আর জি কর আন্দোলনের দাবিগুলির কথা ভাবুন। মুল দাবী অর্থাৎ অপরাধের বিচার, দ্রুত মেটা সম্ভব নয় বলেই আমার ধারণা। তাছাড়া যদিও বা মেটে এবং কেউ শাস্তি পান সেটাকে কারো ন্যায়বিচার বলে মনে নাও হতে পারে। কারণ তা^রমনা হতে পারে আসল অপরাধী অন্য কেউ।   তাই ন্যায়বিচারের দাবী আদায়ের পথে আন্দোলন তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে দেওয়া ছাড়া আর খুব কিছু করতে পারে বলে মনে হয় না। আইনের পথ খুব দীর্ঘ এবং জটিল এবং আইনি প্রক্রিয়ার ফল জনতার দাবী মেনে চলবে সেটা খুব বাঞ্ছনীয়ও নয়।

    আমার মতে  আন্দোলনের সাফল্য জুনিয়র ডাক্তারদের তোলা অন্য দাবীগুলির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। ডাক্তাররা অন্য যে দাবীগুলি তুলেছেন তার মধ্যে দুটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে এবং দুটিই সমাধানযোগ্য। যদিও সেই দাবীগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সংক্রান্ত এবং সম্ভবতঃ এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। তার মধ্যে একটি হল রোগী রেফার করার একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা যাতে রোগীর হয়রানি কমে এবং জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে না হয়। বর্তমান প্রযুক্তিতে এই সমস্যার সমাধান কোন ব্যাপারই নয়। মুখ্যসচিব এই মর্মে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিবকে এবং আশা করা যায় এই সমস্যার একটি সমাধান হবে। অন্য বিষয়টি হল থ্রেট কালচার বা ভয়ের সংস্কৃতি। এই সমস্যাটি গভীর।

    ডাক্তারবাবুরা অভিযোগ জানিয়েছেন যে ক্ষমতাশালীদের কথা শুনে না চললে তাঁদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হত। মনে রাখা দরকার ভয় দেখানো, ক্ষমতার একটি অপরিহার্য অস্ত্র। কখনো সে জেলের ভয় দেখায়, কখনো প্রাণের আবার কখনো সামাজিক বয়কটের। যেহেতু সমস্যাটি কালচারের তাই তার সমাধানও কঠিন। এই মূহুর্তে হয়তো যাঁরা ভয় দেখাতেন তাঁদের অপসারিত করা হবে বা তাঁদের শাস্তি হবে। কিন্তু এটাতো সংস্কৃতি, তার বাস মানুষের মাথার মধ্যে – তাকে তাড়ানো এত সহজও নয়। আজ একদল ভয় দেখাচ্ছিলেন, কাল তার বদলে অন্য কেউ ভয় দেখাবেন। ভয় দেখানোর সংস্কৃতি, ক্ষমতার সংস্কৃতি। কিন্তু ক্ষমতা যে শুধু কেন্দ্রে বা রাজ্যের সরকারি পার্টির থাকবে এমন তো নয়। গতবছর যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছেলেটি র‍্যাগিং এর ভয়ে চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেল, সেও ভয় পেয়েছিল। কিন্তু তাকে যারা ভয় দেখিয়েছিল তারা তো কোন সরকারি পার্টির নেতা নয়। হয়ত যাদবপুরের আভ্যন্তরীণ ছাত্র সংগঠনের নেতা বা তাও নয়। হয়ত তারা শুধুই ক্ষমতাশালী যাদবপুরের মেন হোস্টেলের ভেতরে। কিন্তু তাতে ভয়ের সংস্কৃতি প্রচলনে আটকায় নি। আটকায় না কখনো। কারণ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার, বা ক্ষমতাশালীর পদলেহনের বীজ আমাদের ভেতরেই থাকে। সময়, সময় তা বাইরে বেরিয়ে আসে এই যা। আর জি কর আন্দোলন যদি সমাজের সমস্ত স্তরে ভয় দেখানোর সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে, আমাদের নিজেদের ভেতরে জিজ্ঞাসার জন্ম দিতে পারে তাকে আমি এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করব।   

     (কৃতজ্ঞতাঃ এই লেখার ভাবনাগুলি এসেছে আমার তিন অগ্রজপ্রতিম, বন্ধু অর্থনীতিবিদের সঙ্গে চলতে থাকা আলোচনার প্রবাহ থেকে। আমি ঋণী মৈত্রীশ ঘটক, সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং সৌরভ ভট্টাচার্যের কাছে। ভুলভ্রান্তি যা আছে, তা একান্ত আমারই দায়)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৯৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
    আরও পড়ুন
    বটগাছ - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sambuddha Bisi | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৭537939
  • খুব ভালো লাগলো। আপাতত এই আন্দোলনের কঠিন সময় শুরু। এই  বিকেন্দ্রীভূত  ক্ষমতার স্বাদ মানুষ যেন সহজে না ভোলে, "মার খেতে খেতে বেধড়ক মার খেতে"ও যারা একবার বেছে নিয়েছিল। 
  • . | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২৯537940
  • "কিন্তু এটাতো সংস্কৃতি, তার বাস মানুষের মাথার মধ্যে – তাকে তাড়ানো এত সহজও নয়। আজ একদল ভয় দেখাচ্ছিলেন, কাল তার বদলে অন্য কেউ ভয় দেখাবেন।"
     
    এই ব্যাধি নির্মূল করার জন্য চটজলদি টোটকা বা হটফিক্স পাওয়া যায় না, এ এক দীর্ঘ এবং কঠিন প্রক্রিয়া।
  • kumarjit mandal | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩১537952
  • লেখাটা সময়োপযোগী এবং বিশ্লেষণ খুবই উচ্চমানের।
     এই নতুন প্রযুক্তি দুদিকেই কাটে। থ্রেট কালচার যে আজ সর্বব‍্যাপী হয়ে উঠতে পেরেছে তার জন্য ও অবদান আছে এই নতুন প্রযুক্তির। থ্রেট কালচার জারি রাখার প্রথম শর্ত নিরন্তর নজরদারি। সেই নজরদারি একটা ব‍্যয়বহুল ব‍্যাপার। আগে পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়া এই ব‍্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন নয়া প্রযুক্তির আগমনে এই নজরদারির খরচপাতি অনেক কমেছে। তাই এখন এই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে একজন স্থানীয় মাতব্বর অনেক সহজে তার পোষিতদের মধ্যে থ্রেট কালচার বজায় রাখতে পারে।
  • বনানী রায় ভট্টাচার্য | 182.6.***.*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৭538008
  • আসলে তো থ্রেট কালচার বন্ধ  করবার জন্য কোনও নিয়ম, আইন লাগু করা খুব সহজও নয় সুফলদায়কও নয় ।  নজরদারিও করা যায় না প্রতি ইঞ্চিতে  । যতক্ষণ মানুষ ভয় পাবে, ততক্ষণ এটা চলবে । ভয় কাটানোর উপায় নিজেদেরই বার করতে হবে । 
  • অভিজিৎ। | 103.87.***.*** | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৭538129
  • খুব ই প্রানিধানযোগ্য ও সময়োচিত লেখা । 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন