বাংলায় সিপিএম প্রার্থীরা পরাজিত হওয়ার পরে অনেক বাম-সমর্থক নাকি লিখেছেন বাংলায় মানুষ শিক্ষার বদলে ভিক্ষাকে বেছে নিয়েছেন। আমি ফেসবুক থেকে দূরে। গুরুচন্ডালির পাতাতেই প্রথম দেখলাম খবরটা । এই ধরণের কথা খুব বিরক্তিকর, বিশেষতঃ কেউ যদি নিজেকে বামপন্থী বলে দাবি করেন তাঁর থেকে। সবথেকে বড় কথা, এই ধরণের মতামত বামপন্থী পার্টিগুলির গ্রহণযোগ্যতা আরও কমিয়ে দেবে। আমি সংখ্যার জগতের মানুষ। তাই ভাবলাম একটু তলিয়ে দেখি যে বাম প্রার্থী হিসেবে সারা দেশে যাঁরা জিতলেন, তাঁদের থেকে কি তৃণমূলের হয়ে যাঁরা জিতলেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব আলাদা কিছু? এবং বাংলায় যে বামেরা হারলেন আর বাংলায় যে তৃণমূল জিতলেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার খুব কিছু ফারাক আছে? (আমার তুলনাটা কিন্তু শুধুই ডিগ্রির ভিত্তিতে, কে কোন প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি পেয়েছেন এবং কোন প্রতিষ্ঠানের মান কেমন সেই তুলনা করার তথ্য আমার কাছে নেই) আমি সমস্ত প্রার্থীদের মধ্যেও এই তুলনাটা করতে পারতাম কিন্তু তাতে একটু সময় বেশি লাগত কারণ তৃণমূল মূলত পশ্চিমবঙ্গে প্রার্থী দিলেও, বাম প্রার্থী সারা দেশেই ছড়িয়ে আছে। সামাজিক মাধ্যম এবং এদিক ওদিক থেকে যা খবর পেলাম তাতে তিনটি দল থেকে বাম প্রার্থীরা জিতেছেন – সিপিআই, সিপিআই(এম) আর সিপিআই(এমএল)(লিবেরেশন)। আমি নিচের সারণীতে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দিলাম। আমার সূত্রঃ
https://www.news18.com/elections/। কিন্তু তথ্যের মূলসূত্র নির্বাচনী কমিশনে পেশ করা এফিডেভিট।
সারণী ১ বিজয়ী বাম প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা
এরপর, আমি পশ্চিমবঙ্গে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা একটি সারণীতে প্রকাশ করব। এক্ষেত্রে তথ্য নেওয়া হয়েছে
https://www.myneta.info সাইট থেকে
সারণী ২ঃ বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা
এর পরে আমরা দেখি পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়ানো বাম প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার হিসেব যাঁরা সবাই ভোটে হেরেছেন।
সারণী ৩ঃ পরাজিত বাম প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা
এরপর এই তিনটি সারণীর ভিত্তিতে আমরা তিনটি পাইচিত্র বানাই যেখানে যথাক্রমে দেশের মধ্যে জেতা বাম প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিন্যাস, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের জেতা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিন্যাস আর পশ্চিমবঙ্গে বাম্ফ্রন্টের হারা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিন্যাস
চিত্র১ঃ দেশের মধ্যে জেতা বাম প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিন্যাস
চিত্র ২ঃ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের জেতা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিন্যাস
চিত্র ৩ঃ পশ্চিমবঙ্গে বাম্ফ্রন্টের হারা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিন্যাস
এই তিনটি বিভাগের মধ্যে তেমন যে খুব ফারাক আছে তা নয় কিন্তু। মানে কোন ভাবেই জয়ী বাম প্রার্থীদের, জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের থেকে বেশি শিক্ষিত বলা যায় না। বরং শতাংশের হিসেবে, জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের মধ্যে পোস্ট গ্রাজুয়েটের শতাংশ বেশি। এরপরে দেখা যাক পশ্চিমবঙ্গের বাম ও তৃণমূল প্রার্থীদের মধ্যেকার তুলনা। বাংলার বামেদের খুব কিছু ফারাক কী আছে তৃণমূলের সঙ্গে? একমাত্র বলার মত ফারাক হল বামেদের হয়ে দুজন পিএইচডি করা প্রার্থী ছিলেন যা তৃণমূলের ক্ষেত্রে অমিল। কিন্তু যদি গ্রাজুয়েটের শতাংশ দেখেন তাহলে তৃণমূলের ক্ষেত্রে তার শতাংশ ৪৫% আর বামেদের ক্ষেত্রে তা ৩৭%। অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিক বা তার নিচের শিক্ষাগত যোগ্যতার লোক তৃণমূলের জয়ীদের মধ্যে আছে ২১% আর বাম প্রার্থীদের মধ্যে আছে ২৩% । সুতরাং, শিক্ষাগত যোগ্যতায় যে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী আর বামেদের পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে যে বিরাট কোন ফারাক আছে তা নয়। অন্যদিকে অন্যরাজ্যের যে বামেরা জিতলেন আর আমাদের রাজ্যে যাঁরা হারলেন তাঁদেরও মধ্যে খুব ফারাক কিছু নেই। জেতা বামেদের মধ্যে গ্রাজুয়েট বেশি কিন্তু হারা বামেদের মধ্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বেশি -- এরকম ধরণের ফারাক। কিন্তু খুব মূলগত ফারাক কিছু নয়। আসলে জেতা বা হারার সূত্রটা অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে। সেটা না খুঁজে জনগণকে দোষারোপ করলে আখেরে ক্ষতি কিন্তু বাম রাজনীতির।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।