এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • ইমেজপ্রবণতা

    দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ | ৯১২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • এবং এইসব দিনে মনে হয় পৃথিবীতে কেউ বেঁচে নেই। সভ্যতা মুছে গিয়ে পড়ে আছে শুধু ধু ধু তেপান্তরের মাঠ আর নিঃশব্দ তুষার যুগ। এইসব দিনে আমার সেই ঠান্ডা গন্ধের কথা মনে পড়ে। সিরিঞ্জে রক্ত টেনে নেবার পর তুলোয় ভিজিয়ে যে স্পিরিট ক্ষতস্থানের বা রক্তবিন্দুর মুখে প্রথমে হালকা করে বুলিয়ে পরে কনুই ভাঁজ করে কিছুক্ষণ চেপে রাখতে বলে নার্সরা। হুবহু সেই তুলোয় মাখা গন্ধ আমি এইসব দিনে পাই। 
    সেদিনই , মনে আছে  ,আমি নীচে তাকিয়ে মেঝেতে সাদাকালো মার্বেল দেখছিলাম। আর একজন নার্স আমার হাতে শিরা খুঁজতে খুঁজতে জিজ্ঞেস করলেন - "তোমার নাম কি ?" উত্তর দিতে না দিতেই হঠাৎ পিঁপড়ে কামড়ানোর মত সিরিঞ্জটা আমার সবুজ শিরা কামড়ে ধরল। সেদিনই , মনে আছে , আমাকে বলা হয়েছিল আমার একটা অসুখ করেছে। আর সিরিঞ্জ ভর্তি রক্তের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল প্রশ্নটার উত্তর দিতে গিয়ে আমি ঠকে গেলাম। আমাকে বোকা বানানো হল। 


    “আর্য কে আছেন ?”
    এতক্ষন আমার বুড়ো আঙুলদুটো মোবাইলের স্ক্রিনে টকাটক ওপরের কথাগুলো টাইপ করছিল। কাউকে পাঠানোর জন্য নয়। রেসেঞ্জারে নিজেই কিছু কথা লিখে নিজেকে পাঠিয়ে রাখা যায়। এসব লেখা অন্য কারুর পড়ার জন্য নয়, রেসবুকেও দিলে সবাই হাসাহাসি করবে। সেজন্য নিজেকেই পাঠাই। টাইপ থামিয়ে মুখ তুলে তাকালাম। আমাকেই ডাকছে। 
    "হ্যাঁ এই যে"
    "এরপর আপনি"
    #কাপলগোলস  
    এখানে আসার কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। বসুন্ধরার জোরাজুরিতে আসতে হয়েছে। বসুন্ধরার সঙ্গেই আমার কয়েকদিন বাদে বিয়ে হবার কথা। 
    এটা একটা ক্লিনিক। যেরকম একটু আগেই লিখছিলাম , সেইরকম ছোটবেলার ক্লিনিকের মত নয়। এখানে রক্ত নেওয়া হবে না।  
    "তোমার কাঁধে জামায় সাদা সাদা খুশকি। ঘ্যাস ঘ্যাস করে মাথা চুলকোও মাঝে মাঝে আর আরো আরো খুশকি ঝরে পড়ে। হাতের নখগুলো অসমান। অভিজ্ঞ কেউ একনজর দেখলে বলে দেবে তুমি আঙুলের নখ খাও। মেয়েরা দেখবে, বলবে না। মনে মনে হিসেব রাখবে। আমাদের নজর সাংঘাতিক।" - দুদিন আগে সন্ধ্যেবেলা খেতে গিয়ে বসুন্ধরা এসব বলেছিল। "এভাবে হবে না। আমার চেনা ক্লিনিক আছে। আমি নাম লিখিয়ে রাখব। কালকেই তুমি যাবে।"- বলেই যাচ্ছিল। 
    ক্লিনিকটা নানারকম অল্পবয়সের ছেলেমেয়েতে ভর্তি। অনেকেই জোড়ায় জোড়ায় এসেছে। আমাকে একটা ঘষা কাঁচের কনফারেন্স ঘর দেখিয়ে দিয়ে যে নাম ডাকছিল সে বলল চলে যান। সেখানে একজন মহিলা বসে ছিলেন। 
    এটা সেটা কথার পর উনি আমার দিকে একটা ছোট আয়না তুলে ধরলেন - "আয়নাটা দেখুন ভালো করে। কাকে দেখছেন?"
    "নিজেকে "
    "আপনাকে নয়। আপনি নিজের ইমেজকে দেখছেন। প্রতিবিম্ব। আপনার চামড়ার ত্বকের নিচে কি আছে তা আয়নায় দেখা যাচ্ছেনা। তাই ওটা নিয়ে আমাদের কনসালট্যান্টরা ভাবেন না। আমরা ইমেজ কনসালট্যান্ট। আপনার প্রতিবিম্ব চকচকে করে দেব। অপটিক্স বোঝেন? পলিটিক্যাল লিডাররা সবসময় এখন ফিটফাট থাকেন দেখেননি? সবজায়গায় ছবি উঠছে। কেউ বলে তুলছে , কেউ না বলে। আমার আপনার সবার জীবনে সবসময় ছবি উঠছে।"
    "আর কি কি করেন আপনারা এখানে?"
    "মাথার চুল গজানো। ওজন কমানো। দাঁত ঝকঝকে সাদা করা। নানারকম প্লাস্টিক সার্জারি। তবে ওগুলো আপনার জন্য নয়। আপনার শুধু কয়েকটা বেসিক মেকওভার দরকার। বড়জোর ১০ সিটিং। আমাদের কনসালট্যান্টরা আপনাকে পুরো স্ট্রিট স্মার্ট করে দেবে। এ সবই গীতায় আছে। বাসাংসি জীর্ণানি। শোনেননি?"
    "না"
    “ভালো সেলসম্যান হতে গেলে গীতা পড়া জরুরি। আপনি কি করেন? ”
    “মার্কেটিং”
    "তাহলে তো আপনার আমার থেকেও ভালো জানার কথা। "
    "এমবিএ পড়ার সময় এরকম নিজেকে প্রেজেন্টেবল করার কোর্সওয়ার্ক হয়েছিল। কিন্তু ..."
    "কিন্তু সেটা তো রাশভারী ব্যাপার। আপনার ফিয়াসেঁর মনে হয় ব্যক্তিগত জীবনে ওই কর্পো টাইপটা ঠিক পছন্দ না। উনি একটু কুল ড্যুড সাজেস্ট করছেন। করে দেব। "
    ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে আবার ছোটবেলার মত ঠকে যাব কিনা এসব ভাবতে ভাবতে অফিসে এসে দেখি ফায়ার ড্রিল হচ্ছে। বাঁচা গেছে , আগেও দেখেছি নমাসে ছমাসে কাউকে না জানিয়ে যেদিন কোনো কারণে এত দেরি করে যাই সেদিনই অফিসে ফায়ার ড্রিল।
    এই ড্রিলে প্রথমে বিকট সাইরেন বাজে , লিফ্ট বন্ধ করে দিয়ে সবাই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে নামে। তারপর অফিসবাড়ির বাইরে এক একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ভিড় করে দাঁড়ায়। কিছু দমকলের গাড়ি আসে। লোকজন দৌড়োদৌড়ি করে দেখে জলের লাইন , আগুন নেভানোর সিলিন্ডার এইসব কাজ করছে কিনা। তারপর তারা চলে গেলে একদল হুড়মুড়িয়ে আবার অফিস ঢুকতে চায় , আর আরেকদল বাইরে ঘুরতে চলে যায় , দুপুরে খাবার বাইরে খেয়ে অফিস ঢোকে। আমি আমার অফিসের নির্দিষ্ট জমায়েতের জায়গায় গিয়ে একটু আড়ালে দাঁড়ালাম যাতে চেনা কেউ দেরি করে আসা আমাকে ব্যাগ কাঁধে দেখতে না পায়। 
    বসুন্ধরা দেখলাম রেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠিয়েছে। শহরের বাতাসে বীভৎস ধোঁয়াটে বিষ। নকল বৃষ্টি ঝরানোর জন্য ব্যবস্থা করছে সরকার। বৃষ্টি হলে বায়ুদূষণ কমে যাবে। 
    অফিসটা বড় মজার জায়গা। প্রতি ডেস্কে ৩ ৪টে করে ট্রেন্ডিং মনিটর লাগানো থাকে। ভিউটিউব , গিন্টারেস্ট , রেসবুক , ফিন্সটাগ্রাম , হুইটারে কি কি হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং হচ্ছে সেসব বড় বড় ড্যাশবোর্ডে দেখায়। গ্রাফে ক্লিক করলে ড্রিল ডাউন হয় আরো বিশদে গ্রাফের ডেটা বোঝার জন্য। ট্রেন্ডের ওপর মিম টেমপ্লেট আর নানারকম কনটেন্ট তৈরী থাকে। ডিজিট্যাল মিডিয়াতে ঢেলে দিতে হয়, হুড়হুড়িয়ে ছড়ায় আর আমাদের ক্লায়েন্টদের প্রমোশন হয়। সেসব কতজন দেখছে, কত শেয়ার করছে, কত ছড়াচ্ছে, এসব দেখতে হয়। রিপোর্ট দশ মিনিট বাদে বাদেই আমাদের সামনে দেখাতে থাকে। 
    #OOTD
    আজ সকালে উঠে দেখলাম বসুন্ধরার কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ ব্লক করে দিয়েছে সব জায়গা থেকে। ঝগড়া হলেই ও এরকম করে। আবার কদিন বাদে রাত্তিরে একা লাগলে আনব্লক করে দেবে। তারপর সব ব্লকিং পর্ব ভুলে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলবে যেন কিছুই হয়নি। 
    আমার স্কুলের বন্ধু জীবেগজা এখানে থাকে না। সারাবছর তার পাত্তা পাওয়া যায় না। শুধু প্রতিবছর পুজোর সময় ও এখানে আসে। আর পুজোর পরেই রেসেঞ্জারে পিং করে -"দেখা কর একদিন। সন্ধ্যেবেলা একটু বসি। " 
    আজ তাহলে ওর সঙ্গে দেখা করা যায়। 
    "বাজারে এসব কি শুনছি? তুই নাকি বসুন্ধরাকে বিয়ে করছিস? ফিন্সটাগ্রাম প্রোফাইল তো পুরো একঘর দেখলাম। উনিশ হাজার অনুসরণকারী। পুরো সময় কনটেন্ট বানায়?"
    "লজিস্টিক্সে আছে। ফিন্সটাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সার হওয়াটা সাইড ইনকাম। প্রচুর অ্যাড, নানারকম ব্র্যান্ডের সঙ্গে কোলাবোরেশন।"
    "পোচ্চুর নোট ছাপছে তাহলে? ওর সব ছবি , ফিতে ভিডিওতে কমেন্টে দেখি পরপর দুতিনটে করে আগুনের ইমোজি দেয় পাবলিক। কিন্তু ঠোঁট দেখে তো আমার ভাই একটু সন্দেহ আছে , লিপ ফিলার লাগিয়েছে হয়ত।"
    এই প্রসঙ্গ উঠতেই ঢোঁক গিললাম। জীবেগজা জানে না বসুন্ধরাকে একান্তে অন্যরকম দেখতে লাগে, ইনফ্লুয়েন্সার প্রোফাইলের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। অন্যরকম না, ভুল বললাম। ওটাই তো বসুন্ধরার আসল রূপ। 
    "কি রে। চুপ করে গেলি কেন?"
    একেকদিন বসুন্ধরাকে এক একরকম দেখতে লাগে। কোনোদিন চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা , কোনোদিন ওর চেহারা রোগা লাগে। বসুন্ধরার এক পায়ের গোড়ালিতে ছোট প্রজাপতির ট্যাটু। আরেকটা গোড়ালিতে একটা রুপোর হার পরা। আমি মনশ্চক্ষে বসুন্ধরার পায়ের আঙুলের নখগুলোতে টকটকে লাল নেলপালিশ দেখি। দেখি তিনচার রকম পরচুলা। সাজানো দাঁতের সারি। ফাউন্ডেশনের ধুলো। লিপস্টিকের তুলি। নকল নখ। নকল ভুরু। চোখের তলার কালো বৃত্ত ঢেকে রাখে রূপটানে। 
    "নাহ তোর নেশা হয়ে গেছে, একদম চুপ মেরে গেলি। অনেক রাত হল। বাড়ি যাই।"
    বসুন্ধরা বলছে ইমেজ ইমেজ ইমেজ। ইমেজ গড়তে টাকা লাগে। আরো পঞ্চাশমত ব্র্যান্ড বিজ্ঞাপনের ফিতে ভিডিও করলে স্যান্টোরিনি বা ডাবরভনিক যাবে। বসুন্ধরাকে ফিন্সটাগ্রামের প্রোফাইলের পরিচিতির প্যারাতে সমস্ত দেশের পতাকার স্টিকার লাগাতেই হবে। ইতিমধ্যেই মনে হয় ১১ খানা আছে। "যত স্টিকার তত ব্র্যান্ড আসবে। এখনই এত ম্যানসপ্লেইনিং কোরো না।" - বসুন্ধরা বলছে আমাকে।
    #ফলোফরফলোব্যাক
    আমার এই অসুখের কথাই আপনাদের এতক্ষণ বলা হয়নি। আমি নিঃসঙ্গতাকে একজন নারী হিসেবে দেখতে পাই। নিঃসঙ্গতাকে নাইটক্লাবের আলো অন্ধকারে,বোতল থেকে গ্লাসে  ঢালার সময় নিরাকার থেকে সাকার হতে দেখি। রাত্তিরে ঘুম  ভেঙে গেলে দেখি আলমারির ওপর বসে পা দোলাচ্ছে। সকালে চানঘরের মাথার ওপরের জলের ঝাঁঝরি দিয়ে লক্ষ লক্ষ ফোঁটায় নিঃসঙ্গতা ঝরে। সবসময় আলাদা আলাদা পোশাক পরে থাকে। যার যার নিঃসঙ্গতা ব্যক্তিগত। শুধু তারাই দেখতে পাবে। অন্য কারুর নিঃসঙ্গতাকে আমি দেখতে পাবো না। 
    কাল রাত্তিরে এসব কখন লিখে রেখেছি এখন সকালে উঠে আবিষ্কার করলাম। 
    "কোনো মেসেজ এলে তোমরা যখন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে হাসিহাসি মুখে কিছু টাইপ করো , সেই মুহূর্তের ছবি কেউ তোমাকে তুলে দেখিয়েছে? "
    প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি নিঃসঙ্গতা বেসিনে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখেচোখে রাগের ছাপ। রাগলে নিঃসঙ্গতার সুন্দর গোল মুখ চৌকো হয়ে যায়। নাম না করতেই এসে গেছে , অবশ্য এমনিতেও অনেকদিন বাঁচবে, নিঃসঙ্গতা তো অবিনশ্বর। 
    আজকে অফিসে হঠাৎ ফোন করে বসুন্ধরা বলল "তোমাদের অফিসের ওখানে দাঙ্গা লেগেছে?" আমি আকাশজোড়া জানলা দিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। ধোঁয়াশার চোটে কিছু দেখা যাচ্ছে না কিন্তু কোথাও আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলীর চিহ্নমাত্র নেই। নিচে রাস্তায় গাড়ির ভিড়। দুটো পুলিশের গাড়ি লাল নীল আলো জ্বালাতে জ্বালাতে দ্রুত চলে গেল। 
    "ফেক ভিডিও ছড়াচ্ছে কেউ কোয়াটস্যাপে? আমাদের অফিসে সবাই কিন্তু বলাবলি করছে যে দাঙ্গার জন্য শহরের ইমেজ খারাপ হবে।" 
    ট্রেন্ডিং মনিটরে দাঙ্গার কোনো খবর নেই। অবশ্য ইনপুট ডেটা ফিডগুলো রাজনীতি ট্যাগ করা ট্রেন্ডিং টপিক আমাদের কাছে ফিল্টার করে বাদ দিয়ে পাঠায়। 
    আমাদের অফিসেও লোকজন বলাবলি করছিল দাঙ্গার ব্যাপারে। কিন্তু কেউ ঠিক করে কিছু বলতে পারছে না।  
    "এইসব ঝাঁ চকচকে অফিসাঞ্চলে দাঙ্গা ছড়ায় না। অন্য এলাকায় হয়।"
    "কদিন আগেই তো ফায়ার ড্রিল হল।"
    এই সবের মাঝেই ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেকে বললেন - "একজন নতুন ভিউটিউবারের একলাখ সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে হবে আর কিছু ভিডিও ট্রেন্ডিং বানাতে হবে। কাজ শুরু করে দাও।" ওনার মাথা ভর্তি পাকা চুল দেখে বুঝলাম আজ কোনো কারণে কলপ করতে ভুলে গেছেন। 
    অফিসে সেন্ট্রাল এসি নিঃশব্দে চলে। ভেতরের আলো , তাপমাত্রা সবই নকল। কাঁচের ওদিকের ঋতু গ্রীষ্ম না শীত বোঝা যায় না। বর্ষাকালে কাঁচের দেওয়ালে বৃষ্টির ছাঁট ধাক্কা মেরে চুপ করে যায় , ভেতরে একটুও শব্দ আসে না। দীপাবলীর সময় এলইডির নকল মোমবাতি জ্বালানো হয়। অফিসবাড়ির বাইরে আকাশের তলায় নকল সবুজ ঘাসের কার্পেট। ওটার ওপর শুলে বোঝা যায় মাটির একটুও গন্ধ নেই। নকল পোকামাকড়ের দল সেই কার্পেটের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়। 
    "পঞ্চাশ টাকা পঞ্চাশ টাকা পঞ্চাশ টাকা। হরেক মাল পঞ্চাশ টাকা। প্রচার গাড়ির সামনে আসুন।" পাড়ায় অনেকে যখন ঠেলাগাড়িতে কিছু বিক্রি করতে করতে যায় এরকম চিৎকার করে লোককে জানান দেয়। নিজেকে সেরকম নকল মালের ফেরিওয়ালা মনে হল।
    এটা একটা ঠান্ডা কসাইখানা। ইনফ্লুয়েন্সারদের শরীর টেবিলের ওপর রাখা। তুমি ডুবে যাচ্ছ কাদায়। শ্বাস আটকে আসছে তোমার। তোমাকে লোভ কুরে কুরে খাচ্ছে। এই লোভের মধ্যে একরকম হিংস্রতা আছে। এককৌটো চালের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দেবার মত আরাম আছে। 

    জানলার কাঁচে টকাটক শব্দে স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে তাকাই। চারপাশে ক্লিনিকের অপেক্ষারত সবাই যে যার মোবাইলে ব্যস্ত। সকলেই মোবাইলে সকলকে দেখে। 
    আজ নিঃসঙ্গতা এক কমলা রঙের শাড়ি পরে এসেছে। বাইরের দেওয়াল জোড়া জানলায় তাকে একটা হলুদ ডানাওলা প্রজাপতির পিছনে দৌড়তে দেখে বসুন্ধরার শরীরের নকল গন্ধ মনে পড়ে। কিন্তু একসময় দৌড়াদৌড়িতে হঠাৎ পেটের ওপরের শাড়ির আঁচল সরে যেতে দেখলাম নিঃসঙ্গতার পেটে কোনো নাভি নেই। 
    বায়ুদূষণ কমানোর জন্য বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নামল। নকল বৃষ্টি। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ | ৯১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:০৮526550
  • মন খারাপ করা লেখা
  • Ranjan Roy | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১৩526556
  • এই জাতের লেখার লোক এখন গুরুচণ্ডালিতে একটু কম।
    ইন্দোডাক্তার, একক অনেকদিন লেখে না। আপনার লেখা আরও পড়তে চাই। 
  • দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১২:০৪526568
  • যোষিতা, এখানে কিন্তু নিঃসঙ্গতা মানে লোনলিনেস নয়। ওটা এমনিই একটা মেয়ের নাম। তবে এই মেয়ে প্রাক্তন প্রেমিকার স্মৃতি ধরনের কিছু হতে পারে। জীবেগজা যেমন এখানে মিষ্টির নাম নয়, একটা ছেলের নাম। সব নামেরই একটা করে আভিধানিক মানে আছে, কিন্তু নাম শুনলে আমাদের চোখের সামনে যে ছবিটা ভেসে ওঠে সেটাও একধরনের ইমেজপ্রবণতা এবং অনেকসময়ই অভিধানের সঙ্গে তার মিল থাকে না। এই গল্পে চারটে নামই ইচ্ছাকৃত এরকম ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। 
     
    ধন্যবাদ রঞ্জনদা, অমিতাভদা। অবশ্যই আরো চেষ্টা করব। 
  • | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৪২526583
  • দীপাঞ্জনের যে কটা গল্প পড়েছি তার মধ্যে এইটে সবচেয়ে ভাল লাগল। ( এবং মোটেই একক বা ইন্দ্রনীলবাবুর মত লাগে নি )
  • F | 49.207.***.*** | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ২০:২৩526584
  • দারুন তো !
  • দীমু | 182.69.***.*** | ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ০০:০৭526590
  • ধন্যবাদ দ , F
     
    আমিও মিল খুঁজে পাই নি laugh তবে রঞ্জনদা মনে হয় এই বেখাপ্পা ন্যারেটিভ স্টাইলের কথা বলেছেন। বিষয়বস্তু তো পুরোপুরি আলাদা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন