এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  অর্থনীতি

  • লবনাক্ত টাকা এবং সুদ হারের স্লুইস গেট

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৬৮৫ বার পঠিত
  • কিছুদিন আগে এক ভাই মন্তব্য করলেন, পৃথিবীর সব থেকে সহজ কাজ হচ্ছে ব্যাংকিং; বস্তুত, টাকা দেয়া ও নেয়া ছাড়া ব্যাংকারদের আর কোন কাজ তার চোখে পড়েনি। আমি অবশ্য আগুপিছু না ভেবে উত্তর দিয়েছিলাম, একজন ব্যাংকারের কাছে এই দেয়া-নেয়াটাই পৃথিবীর কঠিনতম কাজ। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ তাকে উদ্বেগে থাকতে হয় তার ভল্ট নিয়ে। সে জানে, টাকা শুধু কতগুলো কাগজ মাত্র নয়, এর শিরা উপশিরা জুড়ে ঝুঁকি আর দুর্যোগের প্রলয়োল্লাস!

    আমাদের সরকারি একাউন্ট এই কিছুদিন আগেও হাবুডুবু খাচ্ছিল প্রায় ১৮,০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্যে যার পেছনে বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাত্র ২৪% বাস্তবায়নকে একটি বড় কারণ হিসেবে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বলছে, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গিয়ে ঋণ করেছে ২০২১ অর্থবছরে। যার স্বাভাবিক পরিণতি - ব্যাংকিং খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার কম ঋণ করেছে সে। ওদিকে করোনা অনিশ্চয়তার মুখে বেসরকারি খাতের ঋণ-প্রবৃদ্ধিও ১৪.৮% লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৮.৪% বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর এসব কিছুরই অমোঘ নিয়তিতে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো জুন, ২০২১ শেষে ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্যের জোয়ারে ভাসছিল । যার মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা একেবারেই অলস পড়ে ছিল।

    একদিকে টাকায় থই থই করছিল ব্যাংক, অন্যদিকে টাকার জন্য ঘুরে মরছিল দেশের লাখো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী; চিত্রটি মনে করিয়ে দেয় কোলরিজের সেই অবিষ্মরনীয় গাঁথা – পানি, পানি, পানি রয়েছে সর্বত্র, যদিও একটি ফোঁটাও নেই কোথাও, একটুখানি গলা ভেজাবার জন্য। সমুদ্রের পানি লবনাক্ত, কিন্তু টাকার সাথেও রয়েছে লবনের পুরনো সম্পর্ক। প্রাচীনকালে রোমান সৈন্যদের পারিশ্রমিক দেয়া হত লবনের বস্তায় করে, আর সে থেকেই ইংরেজী ‘স্যালারি’ শব্দটার সৃষ্টি। তো সেই লবনাক্ত টাকার বুদবুদ অহর্নিশি দুশ্চিন্তায় রাখে সবাইকে - একটি ব্যাংক শাখা যেমন উদ্বিগ্ন থাকে তার ভল্ট রিজার্ভ নিয়ে, একটি ব্যাংকের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট তার নগদ পজিশন নিয়ে, তেমনি একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্বেগে থাকে দেশের মুদ্রা সরবারহ নিয়ে।
    করোনাকালে বেসরকারি খাতসহ ঋণের সার্বিক প্রবৃদ্ধি স্লথ থাকায় ব্যাপক মুদ্রা সরবারহের প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়। ফলে পূর্ববর্তী বছরের ৫.৬৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২১ এর জুনে মূল্যস্ফীতি ৫.৫৬ শতাংশে নেমে আসে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ মুদ্রানীতির অর্ধবার্ষিক পর্যালোচনা জানাচ্ছে, সিপিআই মূদ্রাস্ফীতি ৬.০৫ দাড়িয়েছে ডিসেম্বর ২০২১ এ, যা রাজস্ব ও মুদ্রানীতিকে ভন্ডুল করে ৭.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আইএমএফ এর ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক বলছে ৩৪ টা অগ্রসর অর্থনীতি এর মধ্যে ১৫ টিতেই মুদ্রাস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশী। এদিকে ১০৯ টি ইমার্জিং মার্কেট এন্ড ডেভলপিং ইকোনোমি’র মধ্যে ৭৮ টিতেই ৫ শতাংশের উপর। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বর্তমানের বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি উৎপাদনকারীদের হাতে তৈরী, কারণ সোভিয়ে যুগের শেষে যখন সুপার মার্কেট খালি ছিল, এখনো তেমনি দেখা যাচ্ছে, মানুষ ধর্ণা ধরেও তার আকাংখিত বস্তুটি পাচ্ছে না।  তাদের মতে, করোনাকালের সরবারহ অভিঘাত ১৯৭০ এর দশকের তেল-কেন্দ্রিক সরবারহ অভিঘাতকে ছাপিয়ে গিয়েছে যা বর্তমানের নজিরবিহীন বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিকে অন্তত দুই বছর টিকিয়ে রাখবে।   

    মূল্যস্ফীতির দৈত্যকে সামলাতে যদিও বিশ্বের অনেক উন্নত অর্থনীতি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির দিকে ঝুঁকেছে, আমাদের দেশে সম্প্রসারনমূলক মুদ্রানীতিই বহাল রাখা হয়েছে, করোনার ধাক্কা সামলাতে অর্থনীতিকে আরো কিছু বুস্টার ডজ দেয়া প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে। এজন্যই নীতি সুদ হার, যাকে করোনাকালে ৪% এ নামিয়ে আনা হয়েছিল ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে, তাকে আর বাড়তে দেয়া হচ্ছে না।  

    একটি মজার ব্যাপার হল, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যেই প্রনোদিত ছিল। যখন কোভিড ১৯ এর খবর কেউ জানতো না পৃথিবীতে, তখনই একক সুদের হার যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। অথচ সুদহারের বুস্টার ডোজ দৃশ্যমান স্পন্দন জাগাতে পারেনি অর্থনীতির দেহে। ঋণের প্রবৃদ্ধি১৪.৮% লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০' জুনে ৮.৪%এবং ২১' জুনে ১১% অর্জন  করতে সক্ষম হয়। সরকার ঋণ নিচ্ছে না, খারাপ কোম্পানি ঋণ পাচ্ছে না। একটি ভাল কোম্পানিকে ঋণের জন্য সাধাসাধি করছিলাম, কিন্তু সে আরো দুবছর দেখতে চায়। তাই সরকার টাকা তুলে নেয়ার পরও উদরাময় রোগ থেকে পুরো মুক্তি পায়নি আর্থিক খাত।  এখানে প্রনিধানযোগ্য হতে পারে ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’-এ দেবেশ রায়ের একটি উক্তিঃ ‘’আলোচ্য তিস্তা ১৯৬৮ – এর বন্যাতে… প্রমান… পাওয়া গেল যে,  তিস্তা  বাঁধ বাঁধার ফল, আরো অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।‘’  দুই প্রকার ক্ষুধা আছে, ব্যবসা ক্ষুধা এবং ঝুঁকিবিহীন ব্যবসা এড়ানোর ক্ষুধা। যারা ঝুঁকি এড়ানোর ক্ষুধায় থাকে, তারা  টাকার স্লুইসগেট বন্ধ করে দেয়, যাতে উজান থেকে বন্যার পানি ঢুকতে না পারে। অন্যদিকে, যাদের ব্যবসার ক্ষুধা বেশী, তারা স্লুইস গেট খুলে দেয়, ফলে বন্যার পানির মত টাকা সব কিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। স্মরনকালের শিথিল ঋণ শ্রেণীকরনের কালেও  আমাদের ডিফল্ট লোন ১৬.৩৮% বেড়েছে, এমতাবস্থায় ব্যাংকগুলো ব্যবসার পরিবর্তে ঝুঁকি এড়ানোর ক্ষুধাকে নিবৃত্তি করতে চাইবে, সে আর বিচিত্র কি!
     
    আসলে সুদের হার কমিয়েই যদি দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটানো যেত, তাহলে সেই হার শূন্যেই তো নিয়ে যাওয়া যেত, তাহলে দেশের সবার আয় থাকতো, আর সবাই বাড়ি করতে পারতো সরকারের আকাঙ্ক্ষার সাথে সাজুয্য রেখে। কিন্তু তা করতে গেলে অতিরিক্ত রড সিমেন্ট গ্লাস লাগতো, আর সেইসব উৎপাদন করতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগতো। কিন্তু এই উৎপাদনের উপকরণগুলি তো আর অসীম নয়, তাই এক সময় চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে না পেরে দাম বেড়ে যেত এদের। ঠিক যে, উৎপাদনকারীরা বেশী আয় করবে, কিন্তু তাদের ব্যয়ও করতে হবে বেশী উপকরণের জন্য। এদিকে ভোক্তাদের আয় বাড়বে মজুরি বৃদ্ধির ফলে, কিন্তু তাদের ব্যয়ও তো বেশী হবে। এক সময় দাম বাড়ার একটি প্রত্যাশা তৈরী হবে অর্থনীতিতে, তা আরো দাম বাড়িয়ে তুলবে। সুতরাং, অর্থনীতিতে সংখ্যাই  বাড়বে সব কিছুর, কিন্তু কেউ আগের থেকে ভাল আছে, সে কথা বলতে পারবে না, অর্থনীতির প্রকৃত জিডিপি বা উৎপাদন যে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

    তাই বলে প্রবৃদ্ধির কোন উপায়ই আর নেই? আঠার শতাব্দীর মধ্যভাগে অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক ডেভিড হিউম অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবারহের প্রভাব নিয়ে বলেনঃ ‘’মুদ্রা সরবারহ বাড়ানো হলে প্রতিটা নাগরিকের শ্রমকে ত্বরান্বিত করতে হবে তাদের শ্রমের মূল্য বৃদ্ধির আগে।‘ হ্যা, আমরা অধিক পরিশ্রম করতে পারি, অথবা, আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়তে পারে, আগের বরাদ্দ সময়েই বেশী কাজ করতে পারি, অথবা প্রযুক্তিগত বুমের কারণেও অল্প সময়ে বেশী উৎপাদন হতে পারে। অথবা, বেকারদের কাজ দেয়া যেতে পারে বা বাইরে থেকে লোক নেয়া যেতে পারে। এগুলোর কোনটার ক্ষেত্রেই দাম বাড়াতে হবে না। কিন্তু এরো তো একটা লিমিট আছে। কারণ ওভারটাইম খাটালে পরে শ্রমিকরা বিদ্রোহ করে বসতে পারে। আবার, টেকনোলজির পরিবর্তন তো নিয়ন্ত্রনযোগ্য নয়। যেকোন সময় যেকোন কিছু হতে পারে। এজন্যই একটি মাত্রা ঠিক করতে হয় দাম বাড়ার। উন্নত দেশে এই মাত্রা ৩% এবং উন্নয়নশীল দেশে ৬% বলে একটি ব্যাপক স্বীকৃত বিশ্বাস রয়েছে।

    যখন কোন দেশে প্রবৃদ্ধির উৎসব চলতে থাকে, তখন মাঝে মাঝে ডালা থেকে পানচুন তুলে নেয়ার দরকার পড়ে, না হলে খাবারে টান পড়তে পারে, অতিথিদের শুকনো মুখে ও রিক্ত হস্তে বিদায় নিতে হতে পারে। আমেরিকায় সুদের হার নামতে নামতে ১৯৭২ সালে ৩ শতাংশে পৌঁছেছিল,  প্রবৃদ্ধির উদ্দাম বাতাসে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মানুষ ভোজের টেবিলে উঠে উদোম নৃত্য শুরু করেছিল। সেই সময় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর পল ভোকার সুদের হারকে বাড়াতে শুরু করেন, যা ১৯৮২ তে ১৬ শতাংশে এসে দাঁড়াল। দেশের পন্য উৎপাদনকারীরা আবিষ্কার করল, তাদের ক্রেতারা যেন হঠাৎ করেই বাজার থেকে উধাও হয়েছে! এক পর্যায়ে লোকসান কমাতে তারা শ্রমিক ছাটাই করতে শুরু করল। বছর না ঘুরতেই দেশটির বেকারত্ব বাড়ল ১০ শতাংশ,  জিডিপি সংকুচিত হল ৩ শতাংশ, , মুদ্রাস্ফীতি নেমে এল ৩ শতাংশে। আর এভাবে ভোকার টেবিল থেকে নৃত্যকারীদের তুলে দিলেন, যদিও এজন্য তাকে একটি ‘কৃত্রিম মন্দা’ উপহার দিতে হয়েছিল দেশবাসিকে! এই নিরাময় কম যন্ত্রনাময় হত, যদি শুরুতেই স্পিডমিটারের প্রয়োগে প্রবৃদ্ধি উৎসবের অতিথিদের কলহাস্য কালকে শ্লথ করে দেয়া যেত।   

    মূল্যস্ফীতির স্পিডমিটারটি যদি ঠিকমত ঘুরানো যায়, তাহলে ‘মূল্যস্ফীতির’ দেখা হয়ত মিলবে, কিন্তু ‘অতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি’কে শত হাত দূরে থাকবে। দুঃখ হল, অনেক দেশের অসৎ প্রশাসন স্পিড লিমিটকে ছাড়িয়ে এমন রুদ্ধশ্বাসে ছোটে যে, এক সময় মূল্যস্ফীতির চাকা বিষ্ফোরিত হয়ে ধোঁয়া উঠতে থাকে। যারা সরকারকে ঋণ দিয়েছিল, মূল্যস্ফীতির তোড়ে তাদের সুদ আয় উড়ে যায় না শুধু, আসল টাকার বাঁধও দুলে উঠে। আর যারা টাকা ধরে রেখেছিল হাতের মুঠোয় বা ঘরের সিন্দুকে, তারাও ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মাথা চাপড়াতে থাকে।  সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ভবিষ্যত নাগরিকেরা, কারণ দেশটি পরে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পায় না। এইসব দেশের সরকার তখন টাকা ছাপিয়ে হলেও তার সামরিক যন্ত্রকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বড় করতে থাকে আর এভাবে নিজের মসনদকে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালায়; এক্ষেত্রে জনগনের কাছ থেকে কর আদায় করা হচ্ছে না সত্য; তবে তাদের টাকার মূল্য ব্যাপক অবনমন ঘটে, যা অর্থনীতিবিদগনের কাছে মুদ্রাস্ফীতি কর নামে পরিচিত।

    রুপি করের একটা কবিতায় আছেঃ ‘আমি জল/এত নরম/যে জন্ম দিতে পারি/এত কঠিন/যে ডুবিয়ে দিতে পারি।‘  জলের সাথে অনেক মিল টাকার। আমাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে ভাবি ‘আসল’ টাকাটা নিরাপদ থাকবে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি তাও খেয়ে ফেলে; পুঁজিবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করে কেউ যদি ১০% মূলধনী মুনাফা অর্জন করে, তাহলে তার পুরোটাই গ্রাস করতে পারে সমহারের একটি মূল্যস্ফীতি। সম্পত্তি পুনর্বন্টনেও খেল দেখায় মূল্যস্ফীতি; আমি যদি ১০০ টাকার ঋণ করি ১০ টাকা সুদে, তাহলে আমার সুদাসল ১১০ টাকা ৫৫ টাকা হয়ে যাবে ১০০% মূল্যস্ফীতিতে। মানে, মূল্যস্ফীতি ব্যাংকের জন্য খারাপ, কিন্তু ঋণগ্রহীতার জন্য স্বর্গ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২১ সালের একটি স্থির সুদের বন্ধকি ঋণের পুরোটাই শোধ করা যেত ১৯২৩ সালের একটি পত্রিকার মূল্য দিয়ে। লাতিন আমেরিকায় ৩০ বছরের মর্টগেজ এখনো প্রায় নিষিদ্ধ। মূল্যস্ফীতির অমোঘ টানেই বাংলাদেশে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের জন্য পাগলপারা হয়ে ছুটতে দেখা যায় অনেককে।

    একটা সুষম বাজেট থাকার পরেও মূল্যস্ফীতির কারণে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিতে পারে; সরকারকে বেশী টাকা খরচ করতে হয় ঘোষিত কর আয়কে অপরিবর্তিত রেখেই।  ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক গভর্নর অ্যালান গ্রিনস্প্যানকে ‘Maestro’ নামক বইতে বব উডওয়ার্ড একজন হিরো হিসেবে দেখিয়েছেন, যিনি ১৯৯০ এর দশকে আমেরিকাকে একটা ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারন উপহার দিয়েছেন। কিন্তু সেই তাকেই এখন ২০০৮ এর মহামন্দার জন্য দায়ী করা হয় - সুদ হার দীর্ঘদিন কম রেখে তিনি পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে বুদবুদ তৈরীতে সহযোগীতা করেছেন। সম্প্রতি ওয়ারেন বাফেট দুঃখ করেন যে, ৭১৩ বিলিয়ন বার্কশায়ার হাথাওয়ে এর জন্য আকর্ষনীয় কোন বিনিয়োগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না - দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার নিম্ন থাকায় শেয়ার বাজার, অ্যাপার্ট্মেন্ট,  তেল কুপ, কৃষি খামার, সব কিছুরই দাম বাড়তি।  

    বাংলাদেশের মদ্রানীতির মূল লক্ষ্য মাঝারি মাত্রার মূল্যস্ফীতির ঢেউ সামলে অর্থনীতির তরীকে সন্মুখপানে এগিয়ে নেয়া এবং সর্বাধিক উৎপাদনের স্বর্নদ্বীপে নিরাপদে পৌঁছুনো।  মূল্য স্থিতিশীলতাকে বজায় রেখে প্রবৃদ্ধিকে করোনা পূর্বের ধারায় ফেরানোর লক্ষ্যে আমাদের সর্বশেষ মুদ্রানীতি পর্যালোচনায় আভাষ দেয়া হয়েছে,  ব্যাপক মুদ্রা (এম  ২) এর প্রবৃদ্ধি  ডিসেম্বর-২০২১ এর ১৩.৮% কে ছাড়িয়ে জুন-২০২২ এ ১৫% এ  পৌঁছুবে। মুদ্রা সরবারহের এই হার একই সাথে জাতীয় প্রবৃদ্ধি টার্গেট ৭.২% এবং মূল্যস্ফীতি টার্গেট ৫.৩% - দুটোই পূরণ করতে সক্ষম হবে কিনা, তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।  

    প্রবৃদ্ধি উপকার করে জাতিকে, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি যদি মানুষের চাকরি, মজুরি ইত্যাদির উপর থাবা বসায়, তাহলে দেশে দাঙ্গা পর্যন্ত বেঁধে যেতে পারে।  তাই একটি নীতি মনে হয়, বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকই মেনে চলেঃ কিছুটা কম প্রবৃদ্ধি মেনে নেয়া যেতে পারে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি না। একটি অর্থনীতির ভোক্তা- জনসাধারণকে মূল্যস্ফীতির আগুনে পুড়তে হলে, জিডিপির পুরো গোলাই হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তে পারে, কারণ গোলার ৭০-৮০ শতাংশ তাদেরই দখলে থাকে। ১৯৭০ সালের শুরুতে ভারতে যে মূল্য স্ফীতির জন্ম হয়েছিল, তার পেছনে মুদ্রা সরবারহের কোন দায় ছিল না। বরং পণ্যের এক অভাবনীয় সরবারহ সংকট দাম করে তুলেছিল আকাশচুম্বী, আচমকাই। অর্থনীতির প্রধান এজেন্ট ভোক্তাকে বাঁচাতে তখন  মুদ্রার মেদকেই ঝেরে ফেলতে দেখা গেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

    আমাদের দেশেও  মূল্যস্ফীতির উপর বারবার চড়াও হতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এ জন্য ব্যক্তি খাতের ( জিডিপির ৩৫-৪০ শতাংশ) ঋণ প্রবৃদ্ধির ব্রেক কষে দিতে দেখা গিয়েছে কখনো সখনো। যেমন, ২০১৫এর জুলাইতে ব্যক্তিখাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫% নির্ধারণ  করলেও পরে  ১৪.৮% এ নামিয়ে আনা হয়। বেশী ঋণ সস্তা টাকায় বাজার সয়লাপ করে  উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্ম দেয়, যা আবার প্রকৃত ভোগ, বিনিয়োগ সবকিছুকে উপড়ে ফেলতে ওস্তাদ। বাজারে টাকার বুদবুদ বাষ্পাকারে উড়তে থাকে, বিপুল বেগে পাচার হতে থাকে লবনাক্ত টাকা। অন্যদিকে ঋণ প্রবৃদ্ধির মাত্রায় সতর্ক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে, মধ্যম ও নিম্ন খাতের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠিগুলোর অন্দরে প্রবেশের একটা পথ খুঁজে পায় টাকা। ঋণ প্রবৃদ্ধির হার কমালেও বিদেশি ঋন খুলে দেয়া হয়েছিল বড় কোম্পানিগুলোর জন্য যাতে অধিক ঋন প্রবাহ যায় এসএমইর জন্য। ফলে ঋণের বন্টন ও গুনগত মান উন্নত হয়। খেয়াল করার বিষয়, ২০১৩ সালে যেখানে ২০% ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে, সেখানে ২০১৫ সালে মাত্র ১৩% ঋণ প্রবৃদ্ধি সম অংকের জাতীয় প্রবৃদ্ধি উপহার দিয়েছে দেশকে। সম্ভবত কেইনস আবিষ্কৃত ‘পুঁজির প্রান্তিক দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা’  তত্বের উপর আস্থা রেখেই ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধির জন্য ১৪.৮% কে যথেষ্ট মনে করা হয়েছিল।   
    ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ঋনের মান ও সঠিক ব্যবহার বেশী গুরুত্বপূর্ণ পরিসর বাড়ানোর থেকে। ২০০০ সালে ব্যক্তিখাতের ঋণ জিডিপির মাত্র ২১% ছিল এবং মোট বিনিয়োগ জিডিপির ২৩% ছিল; ২০১৩, সালে সেই ব্যক্তিখাতের ঋণই বেড়ে জিডিপির ৪২% হয়েছে, অথচ মোট বিনিয়োগ বেড়ে জিডিপির মাত্র ৩০% হয়েছে।  স্পষ্টতই, ব্যক্তি খাতের ঋণ বাড়লেই দেশের প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরী উচ্চতর পুজি সংগঠন হয়েছে নিশ্চিত করে বলা যায় না। মূলধনী যন্ত্রপাতিতে না যেয়ে একটা বড় অংশ ট্রেডিংয়ে চলে যেতে পারে, একটি বড় অংশ গুপ্ত ও সমান্তরাল অর্থনীতিতে চলে যেতে পারে। ২০১২-১৩ এর ঋণ কলঙ্ক সেই বার্তা দেয়। 

    বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের ঋণ জাতীয় উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক, যেখানে রাজস্ব বাজেট হল এর এক- পঞ্চমাংশ। এই ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ব্রেক কষলে অখুশি হন ব্যবসায়ী সমাজ।  হ্যা, যদি প্রত্যাশিত প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায় উৎপাদনশীলতার চাকায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি ঘটিয়েও অর্থনীতি ভাল থাকবে, চাকা বড় হবে, এবং ঘুরতেই থাকবে। কিন্তু টাকাগুলো যদি চলে যায় অনুৎপাদনশীল খাতে? শোনা যায়, অনেকে জমি-জমা কিনে, অথবা, সরিয়ে নেয় দেশের বাইরে, সেক্ষেত্রে উল্টো পানিশূন্যতায় ভুগবে অর্থনীতি। শোনা যায়, বর্তমানে আমাদের পাইপলাইনে বিদেশী ঋণ আছে ৪.২৮ লাখ কোটি টাকা। পরপর দুই বছর মিলিয়ে প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাপ্তিতে বাংলাদেশকে কোন অর্থকষ্টে পড়তে হয়নি, টাকা প্রচুর আছে দেশে। কিন্তু বিদেশ থেকে আসা ঋণের টাকা দিয়ে যদি সঠিক বিনিয়োগ না করা যায়, তাহলে এক সময় টাকার সংকটে পড়বে বাংলাদেশ সরকার শ্রীলংকা, কেনিয়া, আর্জেন্টিনার মত।

    অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সুদের হার বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে আসবে, তাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা বেঁচে যাবে। অন্যদিকে, সুদের হারকে তলানিতে রেখে দিলে সঞ্চয় ইন্টারমিডিয়াশনে না ঢুকে ভৌত সম্পদে চালান হতে পারে, যা  সম্পত্তি বুদবুদ  তৈরী করে দেশে দীর্ঘমেয়াদী মন্দা ডেকে আনতে পারে। ২০১৫ এর মুদ্রানীতি ‘সিলেকটিভ ইজিং’, মানে, কৃষি, মহিলা উদ্যোক্তা, সবুজ প্রকল্প, ক্ষুদ্র -মধ্যম উদ্যোগ এবং রপ্তানি – এসব খাতে ঋণ সরবারহের মাধ্যমে ব্যাপক মুদ্রা বাড়ানোর ঘোষনা দিয়েছিল।  ঋণের পরিমান নির্বিচারে না  বাড়িয়ে বা সুদ হারের স্লুইস গেট সবার জন্য খুলে না দিয়ে, নীতি সুদ হারে এরকম কিছু বিশেষ খাতকে প্রণোদিত করলে দেশের দীর্ঘমেয়াদী  উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত হবে।

    পরিমান বাড়লেই গুনগত পরিবর্তন ঘটে, যখন দুইটি অক্সিজেন অনু থাকে তখন পানি পাওয়া যায়, যখন অনুর সংখ্যা তিনটি হয়ে যায়, তখন ওজনে পরিবর্তিত হয়, যা জীবননাশী। কিন্তু এই ওজনই আবার বড় জারক, যা দিয়ে তেল থেকে সালফারের মুক্তি ঘটে। আমাদের টাকার অতিরিক্ত তারল্যকে জারকে পরিণত করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে ছেঁকে নেয়া যেতে পারে এমন কিছু উদ্যোক্তা, এমন কিছু স্টার্ট আপ, যাদের মধ্যে অনন্ত সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু শুধু পুঁজির অভাবে এগিয়ে আসতে পারছিলেন না।  এভাবে লবনাক্ত টাকার বন্যা থেকে দেশের ভাগ্য বদলে দেয়া উদ্যোগ-পলিটুকু বের করে নিতে সুদহার-স্লুসগেটকে দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে হবে আমাদের।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৬৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন