দিনে দিনে ক্রমশ: অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি বলে নিজের আত্মচেতনা সজাগ হচ্ছে এই বলে যে কিছুটা অন্তত এফর্ট দেওয়া দরকার আমার তরফে যাতে করে একদম বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই -
তা এফর্ট দিচ্ছি আজকাল। আর সেই এফর্টের আগে-পরে যা হচ্ছে সেগুলো ডকুমেন্টেড করে রাখাই এই লেখার উদ্দেশ্যে----------------------+--------------------+------
প্রথম প্রচেষ্টা
--------------
ট্রেনে করে যাচ্ছি পাশে এক ছেলে মেরুণ রঙের প্যান্ট আর সাদা জামা পরে বসে আছে। হাওড়ায় ঢোকার আগে ট্রেন দাঁড়িয়ে গেল - বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল ট্রেন নড়ে না আর। ভাবলাম একটু সামাজিক হবার চেষ্টা করা যাক। ছেলেটিকে বললুম
- ভাই, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলব?
- হ্যাঁ বলুন না
- মানে বলছিলাম কি, এই যে তোমার জামার লোগো LG যেমন ভাবে লেখা আছে, এতেই তোমার ইস্কুলের দৈনতা টের পাওয়া যায়
- মানে?
- শুধু ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে গালভরা নাম দিলেই তো হবে না স্কুলের! স্বাধীন ভাবনা চিন্তা করতে হবে। স্কুলের নাম লিখবে জামার বুক পকেটে ঠিক আছে, কিন্তু লোগোটা কেমন হবে, সেটা কি নিজেদের ভাবনা থেকে বের করা যেত না? এখানেই ভারত পিছিয়ে পড়ে - শুধু নকল আর টুকলিবাজি। LG কোম্পানীর লোগো আর লেটারিং হুবাহু নকল করে দিয়েছে তোমার ইস্কুল। স্যারকে গিয়ে বলো, এই ভাবে শিক্ষা হয় না! কি শিখবে ছেলেরা? যে কষ্টের কোন দরকার নেই আর - শুধু নেট থেকে টুকে দিলেই হবে!
- দাদা, আপনি কি বলছেন কিছুই বুঝতে পারছি না!
- তোমার বোঝার দরকার নেই বেশী, ইস্কুলে গিয়ে স্যারকে বোলো যে ট্রেনে একজন এমন বলছেন
- সমস্যাটা কি?
- LG টা কোম্পানী LG র মত কেন লেখা জামায়?
- আচ্ছা মুশকিল তো! তো কেমন লেখা থাকবে? মৌলালির মোড়ে LG শো রুমে আমি কাজ করি, মালিককে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নেবেন চলুন। এক কাজ করুন, আমার সাথেই আসুন, সাক্ষী থাকবেন যে ট্রেন আজ সত্যিই ঝুলিয়েছে। না হলে আবার লাল কালি পড়বে
আমি আর কি বলি, বেশী সামাজিক হতে গিয়ে ছড়িয়েছি। এবার রিট্রিটের পালা
- কিছু মনে কোরো না ভাইটি, আসলে গরমে মাথাটা আউলে গেছে আমার
চৈত্রের পচা গরম উদ্ধার করল আমায় এই যাত্রায়
---------------------------------------------------
দ্বিতীয় প্রচেষ্টা
---------------
তো সামাজিক হবার চেষ্টা আমি কলকাতার বুকে নেমেও চালাবার চেষ্টা করলাম। ওলা এবং উবের ড্রাইভারদের ব্যবহার দেখে আবার অসমাজিক হয়ে যাব কিনা খানিক ভাবতে হল।
এদের ব্যবহারের থেকে সর্বদা রাগী মুখে থাকা মিনিবাস কনডাকক্টরকে বেশী কাছের মানুষ মনে হওয়াতে বাসেই চড়লাম
বাসের একদম পিছনে জানালার ধারে সিট পেলাম একটা, মনটা ফুরফুরে হয়ে আবার কিভাবে সামাজিক হওয়া যায় ভাবছি। পিছনের সিটের সামনেই লেডিজ সিট, একটি কলেজ পড়ুয়া দেখলাম ফেসবুকে ভিডিও দেখছে মেক-আপের নানা কৌশলের। এই বিষয়েও আমার ভালো জ্ঞান, তাই সেই মেয়েটির সাথে সামাজিক আলাপ জুড়ব কিনা ভাবলাম। আর অপশন বলতে তার পাশের মুখে কালো পেটি বাঁধা অন্য একটি মেয়ে, যার শুধু চোখ দুটি বেরিয়ে আছে। এই ব্যবস্থা গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য নাকি ধর্মীয়, নাকি প্রাইভেসির জন্য সেটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে উনাদের ঘাঁটালাম না।
তাহলে বাকি রইল ডান দিকে বসা ভদ্রলোক। উনার সাথে সামাজিক হতে যাব কি, কল চলে এল উনার -
- এ্যাই শোন না, তুলি বায়না করছে খুব
- সেকি! তুলি বায়না করছে কেন? তুমি মাকে ফোন দাও
বুঝলাম ওদিকে মা ফোন পেলেন, এদিকে ইনি
- মা, তুলি কাঁদছে কেন?
- তা তো জানি না বাবা। আমি তো অন্য ঘরে ছিলাম
আমি উদাস হয়ে গেলাম, তুলি কেন কাঁদছে তা জানতে আর ইন্টারেষ্ট এল না
এদিকে বাস গ্যাছে জ্যামে আটকে, বেশ গিট্টু জ্যাম, ছাড়ছেই না। আমি আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে উতসাহ হারিয়ে বাইরের ব্যাপারে নজর দিয়েছি। লক্ষ্য করলাম যে একদম বাসের গায়েই, আমার সীটের নীচেই বাইকে দুই ছেলে। পিছনের জন বসে মোবাইল ঘাঁটছে, এখনকার সব বড় স্ক্রীণ বলে দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। সেই মোবাইল দেখে টাইম পাস করছি -
দেখছি যে সেই ছেলে জিমেল থেকে বায়োডাটার মতন কি খুলছে, চার পাঁচটা করে মেয়ের ছবি। জুম করে ছবিগুলি দেখে বায়োডাটার এক বিশেষ অংশ দেখে নিচ্ছে
বুদ্ধি খাটিয়ে যা বুঝলুম, এগুলো খুব সম্ভবত ম্যাট্রিমনি থেকে পাঠাচ্ছে, পেড মেম্বারশিপ। আর ছেলে বায়োডাটা থেকে বয়স দেখে ইনিশিয়াল স্ক্রীণিং সারছে
অনেকগুলি ম্যাচ দেখলাম। এবার সেই ছেলে কি মনে করে একসময় উপরের দিকে তাকিয়েছে, দ্যাখে আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। কি আর বলি, চোখাচোখি হতেই সামাজিক হলাম -
- দাদা, ম্যাট্রিমনি থেকে পাঠিয়েছে নাকি?
অবাক চোখে তাকিয়ে আমার দিকে, এদিকে আমি আরো সামাজিক হতে চেয়ে বলে চললাম -
- আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব শেষের আগের মেয়েটাকেই সবচেয়ে সুন্দর দেখতে। যদিও বয়সটা পড়তে পারলাম না
এবার কেস বুঝতে পেরেছে সে -
- আপনার লজ্জা করে না লোকের প্রাইভেট ম্যাটারে লুকিয়ে নজর দিতে
- ভাই, লুকোলাম আর কোথায়! বাসের জানালায় তো পর্দাও নেই যে আমাকে সরাতে হয়েছে! জাষ্ট চোখ মেলেই আপনার ম্যাট্রিমনি
- ও, তাহলে ঠিক আছে। তা কোন মেয়েটা বললেন ভালো লেগেছে?
- একদম শেষের আগেরটা, পানপাতার মত মুখের ছাঁদ মেয়েটির। আমার ঠাকুমা বলত -
সবে সামাজিকতা জমে উঠেছে, বাস দিল হুড়মুড়িয়ে ছেড়ে -
-------------------------------------------------
তৃতীয় প্রচেষ্টা
----------------
সেদিন ছেলেকে স্কুলে দিতে গিয়েছিলাম, প্রথম স্কুল শুরু হয়েছে বলে কিছুটা আগে ছেড়ে দিচ্ছে, ফলত: একেবারে নিয়েই ফিরব বলে গাছ তলায় বসে আছি। মানে কয়েক ঘন্টার ধাক্কা।
আমার মত আরো অসংখ্য পাবলিক বসে, বেশীর ভাগই মায়েরা। খানিক উনাদের আলোচনা শুনে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করলাম। এনাদের তুলনায় প্রায় কিছুই জানি না। ছেলে মানুষ করব কি করে! যা কিছু শিখলাম শুনে শুনে তার কয়েকটি হল -
- সাহা টেক্সটাইলে আর মাত্র দুদিন ভালো ছাড় দিচ্ছে
- বাড়ির কাজের লোককে পুজোর সময় টাকা দেওয়াই ভালো। কাপড় ওদের পছন্দ হয় না, যাই দিন না কেন (এটাতে ১০০% ইতিবাচক ভোট পড়ল)
- ম্যাগি আগের দিন সিদ্ধ করে জল ঝড়িয়ে ফ্রীজে রেখে দিন, কোন সমস্যা নেই
- সকালে ঘি, আলুভাতে, ভাত খাইয়ে ছেলেকে স্কুল পাঠানোই বেষ্ট। এতে পেট ঠান্ডা থাকবে আর পড়াশুনায় মন বসবে। ব্রেড ইত্যাদি খাওয়া মানেই পেট গরম, বাঙালী পেট ওই জিনিস নিতে পারে না।
- আমি ছেলেকে বলে দিয়েছি সবাইকে হাসাবি, এই আমি যেমন হাসিখুশী থাকতে ভালোবাসি। ম্যাডাম সেদিন জানিয়েছে আমার ছেলে ক্লাশে সবাইকে হাসাচ্ছে অলরেডি। আমি শুনে খুব খুশী, কিন্তু ম্যাডামের মুখ দেখে উনি খুশী কিনা বুঝতে পারলাম না।
এই সব শিখছি আর আপ্লুত হচ্ছি, নিজেকে ভগ্যবান ভাবছি সেই গাছতলায় বসেছি বলে, এমন সময় আরেক মা এলেন ফোনে কথা বলতে সেখানে বসতে -
পরবর্তী দুই ঘন্টায় ইনি খান তেইশ কল করলেন নানা আত্মীয়, ছেলের ক্লাসমেটের মা (যারা সেদিন আসেন নি), দুধওলা, আবাসনের গেট ইত্যাদি। এর মধ্যে আত্মীয়দের সাথে কথাবার্তা আমার খুব ভালো লাগল। ইনি সবাইকেই বলছেন যে, "জানো তো আমি ব্যস্ত খুব, তাই বেশী কথা বলব না, আর এমনিতেও ফালতু কথা বলা আমার পোষায় না"
এদিকে স্কুলের ছুটির সময় এগিয়ে আসছে। আরো সামাজিক হতে হবে বলে চেষ্টা জারি আছে আমার তরফে। এক সময় ফোনপ্রবাহে একটু ফাঁক এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম উনাকে -
- আচ্ছা, তাহলে আপনার ছোট জ্যেঠিমার ননদের আরামবাগের ফ্ল্যাটটা শেষ পর্যন্ত কি হল? উনি কি বললেন ঠিক শুনতে পেলাম না পাশ থেকে
- আপনি শুনতে পাননি? যাকগে ভালোই হয়েছে, শুনলেই আপনার মাথা গরম হয়ে যেত। আপনিই বলুন, আরামবাগে ২৫ লাখ দিয়ে কেউ ফ্ল্যাট কেনে? কি মনে হয় আপনার?
- না, মানে আমি ঠিক জানি না এই সব ব্যাপার
- তা বললে তো হবে না! আপনার বউ কি এই সব দেখে? শুধু বউয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরব, এটা ভালো জিনিস নয়। তাও কিচেনে টাইলস দেয় নি
কি বলব ভাবছি, ওদিকে ছুটির ঘন্টা বাজল, আমি সেদিনের মত সামাজিকতার হাত থেকে রেহাই পেলাম
---------------------------------------------------
চতুর্থ প্রচেষ্টা
---------------
সেদিন ফ্লাইটে এক ককটেল দাদার সাথে মুলাকাত হয়ে গেল। ককটেল মানে ইনি হলেন গিয়ে ঘনাদা, টেনিদা, ঋজুদা, ব্রজদা, ফেলুদা সহ নানা কলকেত্তীয় দাদা এবং আমাদের নিমোর বাউরি পাড়ার সুবলদার মিশ্রণে তৈরী।
প্লেনে উঠে দেখলাম ইনি অলরেডী মাঝের সীটে বসে বিরাজ করছেন, এদিকের সীটে এক ভদ্রমহিলা। খানিক পরে বুঝব এই মহিলা উনার অফিসের জুনিয়ার। এঁরা হলেন সেই প্রজাতির মানুষ যাঁরা সীট নাম্বার মেনে বোর্ডিং পছন্দ করে না। ধর্মতলার বাসে ওঠার মত গুঁতোগুঁতি করে না উঠলে উনাদের মনে হয় প্লেন ভাড়া ঠিক উসুল হল না।
ক্রমে বুঝলাম দাদা ককটেল হলে এই দিদি মকটেল - বাংলা সাহিত্যের তেমন দিদিদের নাম আমার জানা নেই, তাই সাহিত্যিক উপমা দিতে পারছি না। কিন্তু এনাকে স্টেজে তুললে ইনি যে আমাদের একমেবাদ্বিতীয়ম দিদিকে বেগ দেবেন তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম
আমি কোনক্রমে উইন্ডো সীটে গিয়ে বসলাম, ততক্ষণে এনাদের গল্প শুরু হয়ে গেছে জোর কদমে। দাদা সেই দিদিকে জিজ্ঞেস করছে
- অ্যাই, তুমি ভীমতাল দেখেছো?
- উফফ, সে কি জিনিস। তাছাড়া সাততালও অপূর্ব
- ওদিকের তাল গুলো সব অপূর্ব। দারুণ দেখতে - ব্রহ্মতাল, পদ্মতাল,
- আর বলবেন না প্লীজ, গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আবার যে কবে ওই সব তাল দেখবো
আমি পড়েছি ধ্বন্ধে এবার - তাল নিয়ে এত আদিখ্যেতা হাই সোসাইটির লোকের মধ্যে কোনদিন দেখিনি। এদিকে আমার সামাজিক হবার প্রচেষ্টা জারি আছে। মুখ খুলতেই হল,
- দাদা, কিছু মনে না করলে একটা কথা জানার ছিল। এই সব তালের সিজিন কোনটা?
- সিজিন মানে ধরুণ আপনি শীতের সময়ে যেতে পারবেন না। তাছাড়া বছরের অন্য সময়ে সিজিন
শুনে তো আমি হাঁ! এত তাল নিয়ে কারবার আমাদের, ওদিকের কুলপোকড়ো পাড়ের তাল, এদিকে পোদ্দেরে, বড় বামনা, ঠাকুরঝি - কারো পাড়ের তাল গাছেই তো সারা বছর তাল দেখি নি! তাই বলতেই হল -
- দাদা, মানে বছরে সাত আট মাস সিজিন বলছেন? স্বাদ হয়?
- মানে? কিসের স্বাদ?
- আসলে এগুলো কি হাইব্রীড তাল নাকি যে সারা বছর তাল দিচ্ছে তাই ভাবছিলাম। আমাদের দিকে তো এমন হয় না!
আমার কথা শুনে কেন জানি না উনারা হকচকিয়ে গেলেন। ভদ্রমহিলা কেমন একটা চোখে তাকালেন
- আমরা বেড়াতে যাবার গল্প করছি। তাল মানে হ্রদ, যেমন রাক্ষসতাল যেখানে রাবণ তপস্যা করেছিল। খাবার তাল নয়
- মানে শ্রীলঙ্কাও গেছেন আপনারা?
উনারা আর আমার সাথে বাক্যালাপ করলেন না। শুনলাম একে অপরকে মৃদু গলায় বলছেন
- আজকাল যে পারছে প্লেনে চড়ে পড়ে। ভাড়া কম হলে এই হয়
- না দাদা, বুঝলেন, এনার মনে হয় তেমন কেস নয়। হাতে আইপ্যাড দেখছেন না
- ছাড়ো তো ! আমাদের পাড়ার টুকুন সাড়ে ষোল হাজারে আইফোন সেভেন কিনেছে। আপেলের আর সেই স্ট্যাটাস নেই
আমি আর কি করি, একঘরে হয়ে গিয়ে সামাজিকতা আর করতে পারলাম না। বাইরের মেঘ দেখছি আর উনাদের কথাবার্তা শুনছি
- এ্যাই তুমি সুইজারল্যান্ড থেকে গরুর ঘন্টা কিনলে?
- কিনব না আবার! অনসাইটে কাজে গিয়ে একদিন ছুটি পেয়েই ঘুরেছি। বর শুনে বলে, তুমি একা যাবে ফ্রান্স থেকে সুইজারল্যান্ড?
- তোমার তো আসুবিধা হবার কথা নয়। ছবি তো দেখেছি তোমার, যা তোমার গায়ের রঙ, বরফের মাঝে দাঁড়ালে তুমি বিদেশী নয় বোঝাই যায় না!
- দাদা, আপনারা জুংফ্রো গেছেন?
- যাব না? টপ অফ ইউরোপ। কিন্তু ওটা ছাড়াও আরো একজায়গায় সবাই যায়
- কোথায়? ইন্টারলাকেন?
- না গো, নামটা ঠিক মনে আসছে না।
- আচ্ছা, ওইটার কথা বলছেন। বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমারও মনে আসছে না নামটা। নেটেও যে দেখে নেব তার উপায় নেই!
এবার শুরু হল উনাদের যন্ত্রণা - নাম পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছে না, এ জিনিস যে কি অস্বস্তির, কেবল ভুক্তভুগীরাই জানেন! অনেকটা হাঁচি এসেও না হবার মত
বাকি রাস্তা নীরবতা। ফ্লাইট ল্যান্ড করে পাঁচ নাম্বার বেল্টের কাছে দাঁড়িয়ে আছি, সেই ভদ্রলোক সামনে। ভাবলাম এনাদের সাথে শেষ সামাজিকতা আজকের মত করেই যাই। বললাম,
- দাদা, যে জায়গাটার নাম আপনার মনে আসছিল না, সেটা হল টিটলিস।
ভাবলাম উনি খুশী হবেন। ওমা উল্টে গেলেন খচে
- আপনি মশাই মহা ইয়ে তো! যদি জানতেনই তো প্লেনে বলেন কি কেন? অসামাজিক কোথাকার
- আমি তো সামাজিক হতে চেয়ে নিজে থেকে আপনাদের কাছে তালের সিজিন জানতে চেয়েছিলাম। আপনারাই তো মুখ ঘুরিয়ে নিলেন!
উনি আর কথা বললেন না - বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলেন।
এবারেও আমার সামাজিক হওয়া হল না।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।