এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • অতিমারী, গণতন্ত্র ও আস্তিক্যের রাজনীতি: তিন তাস

    শিমূল সেন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৭ জুলাই ২০২০ | ২৫৫১ বার পঠিত
  • মোক্ষম বোমাটা ফাটিয়েছেন শংকরাচার্য স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতী। কারণ কী জানা নেই, তবে কিঞ্চিৎ কাণ্ডজ্ঞান খাটিয়েই দ্বারকাপীঠের ভূতপূর্ব শংকরাচার্যের ঘোষণা: রূপান্তরিত বাবরি মসজিদ, থুড়ি রামমন্দিরের শিলান্যাস-নির্ঘণ্টটি ‘অশুভ’। নানা মহলেও তোলপাড়, যে সময় মহামারীতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে দেশ, কিঞ্চিৎ শ্রদ্ধাবশতই কি সে’ সময় স্থগিত রাখা যেত না আলো-ঝলমলে এই সব অনুষ্ঠানের বাহার? যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য গাঁট। তিনি বলেছেন, যা তিথি পড়েছে এই বছর, তেমন শুভ দিনক্ষণ গত পাঁচশো বছরে পড়ে নি৷ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং হাজির থাকবেন৷ শিলা পোঁতার আগের আটচল্লিশ ঘণ্টা তামাম অযোধ্যায়, এক্কেবারে পৌরাণিক অনুষঙ্গে জারিত হয়েই, জ্বলবে প্রদীপ, উদযাপিত হবে অকাল-দীপাবলি। দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হয়ে দেশবাসীর কাছে বাহিত হবে রামের ঘর-ফেরার সে’ সব ভিজুয়ালগুচ্ছ।

    তবে খটকাটা লাগছেই। এই ঘটনাকে যদি সরিয়েও রাখি, মহামারী যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল আমাদের আলোচনায় ও তর্কে, ততটা পাচ্ছে কি? আর কিছু না, নেহাত ভদ্রতাবশতই এতগুলি মৃত্যুর সামনে কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হওয়ার মৌলিক পাঠটুকু কি আমরা বেমালুম ভুলে মেরে দিলাম? সতর্ক সমালোচক অবশ্য বলবেন, ‘এই আমরা-টা কে? আর, কেন-ই বা তার জনচিত্তে ততটা দোলা লাগায় না মহামারীর অভিঘাত, তার একটা ঐতিহাসিক পরম্পরাগত কার্যকারণ বের করাও দরকার নয় কি?’

    জানি না। যদিও, কুঁদুলে রাজনীতির ঢেউ চলছে৷ সচিন পায়লট কংগ্রেস ছাড়বেন কি-না, রাজস্থানে সরকার পড়বে কি পড়বে না, মুকুল রায় পুনরায় তৃণমূলে ফেরার সাঁট করলেন না-কি, কেন্দ্রীয় কমিটি গড়ে মমতা কি বিকেন্দ্রীকরণেরই বার্তা দিচ্ছেন না দলে, আচ্ছা, পরের আমেরিকার পরের প্রেসিডেন্ট কে হতে পারেন… তালিকা লম্বা করা যায়। দুনিয়া-কাঁপানো অতিমারীতে যে এঁদো, ছেঁদো প্রভাতী কৌতূহলগুলির গৌণ হয়ে পড়ার কথা ছিল– তা হয় নি। এ’ থেকে একটা সিদ্ধান্ত করাই যায়, গণপ্রতিনিধিত্বের নামে যে রাজনীতি দুনিয়াব্যাপী চলছিল এবং চলছে, তার মোদ্দায় গণ্ডগোল লেগে আছে৷ অনেকটা ভাষাতত্ত্বের মিথ-এর মত: প্রতিনিধি অবিরাম নিজেরই প্রতিনিধিত্ব করছে, বাকিরা অপাংক্তেয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিহিত শৃঙ্খলা, যাকে আমরা খুব স্বতঃসিদ্ধ বলে ঠাউরে নিই, তা যে কোনও দিন ধসে পড়তে পারে এই মিথবাদে।

    কিন্তু সে পথে আমি যাচ্ছি না। সোফির দুনিয়া উপন্যাসের একটা কথা বেশ মনে রাখার মত। এই মহাবিশ্ব যেন-বা এক জাদুকরের টুপি থেকে বের করে আনা আচমকা খরগোশ, যার রোঁয়া ধরে থাকতে থাকতে মানুষ ঢুকে গেছে চামড়ার কাছে। ফলে, বাইরের আবরণটা যে নেহাতই পলকা ও উদ্বায়ী, তা তার চোখে পড়ে না। ‘দ্য হিস্ট্রি ম্যানিফেস্টো’ বলে একটা বই বের হয় বছর কয়েক আগে, লিখেছেন ডেভিড আর্মাটেজ ও জো গুল্ডি, তার শুরুটাই হয় মার্কসের পরিচিত ধরতাই ঈষৎ অদলবদল করে: ‘একটা ভূত যেন বিশ্বচরাচরকে ধাওয়া করছে৷ সে ভূত স্বল্প-সময়ের ভূত।’ স্বল্প সময়ের ভূত মানে, আগামী পাঁচ বছর, দশ বছর, বা জীবৎকাল: গার্হস্থ্য মানুষ যেটুকু জোটাতে পারলে বেঁচেবর্তে যায়। গভীর ভাবে, চোদ্দো পুরুষ পরে দেশ-দুনিয়ার হালত কী দাঁড়াবে, গভীর উন্নয়ন-আক্রান্ত সময়ে কেউই এত তলিয়ে ভাবতে চান না। সত্যি বলতে, কোনও ব্যবস্থাই তার নাগরিককে এতখানি ভাবার সুযোগ দেন না, এবং ততখানি প্রাপ্তমনস্ক মনে করেন না, যাতে সে হাজার বছর নিয়ে ভাববে, বা নীতি-রূপায়ণে প্রত্যক্ষ মত দেবে৷ ‘যা কিছু জড় সকলই উবে যায়’, ফলত ছুটন্ত পুঁজি-মাখোমাখো সময়ে অধুনা-ই সত্য, ঘড়িও গলে যায়। প্রশ্ন হল, গণতান্ত্রিক সরকারও কি ভাবে হাজার বছর নিয়ে? ভাইরাস-জনিত মহামারীর উৎপাত, কিংবা শ্রেণিদ্বন্দ্ব: সবই, এক কথায়, নানা আদলের লং টার্ম প্রশ্ন। ছুটন্ত নিওলিবারাল দুনিয়ায়, পপুলিজম-আশ্লিষ্ট গণতন্ত্রের কি সত্যি সে’ দায় আছে? ওপরের দৃশ্যমান রাজনীতির তলায় লুকোনো গহিন নিরেট স্তরকে সে ছুঁয়ে দেখে?

    কিন্তু, এই লং টার্ম আর শর্ট টার্মের দ্বন্দ্বেও আমি যাচ্ছি না। আমার প্রস্তাবনাটা অন্যত্র, এবং তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা-সংক্রান্ত। গণতন্ত্রে সম্ভবত একটি জিনিস আবশ্যিক। তা: আদর্শ। গোটা থিয়েটারটাই একাধিক আদর্শের মল্লযুদ্ধের মঞ্চ। যাকে আদপে নীতিহীন বলে গাল পাড়ি, তারও কতগুলো আদর্শগত ভিত থেকে যায়। পপুলিস্ট ও কৌশলবাদী মমতা যখন ক্ষমতায় আসেন, কোনও স্পষ্ট নীতি না থাকলেও, তাঁর জীবনমরণ পণ ছিল সিঙ্গুরের চারশো একর অনিচ্ছুক চাষির কাছে ফেরানো। ওই রাষ্ট্রীয় ঘোষণাতেই সম্ভবত গোটা উপন্যাসপ্রতিম কাহিনির যবনিকা– নায়িকার সাফল্য, ভিলেনের পরাজয়। মমতা না-হয় আজ-আছি-কাল-নেই উদ্বায়ী রাজনীতির লোক, কিন্তু গণতন্ত্রে এমন কী গোঁড়া আদর্শবাদী দলেও এ’ যবনিকা ও সমাাপন সর্বদা রক্ষিত। যা থেকে এই লেখার সুতো নেওয়া, সেই রামমন্দিরও তো বিজেপির কাঙ্ক্ষিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির যতিচিহ্ন-বিশেষ। সিপিএমের কাছে তা হয়তো ছিল অপারেশন বর্গা। হয়তো, আপাদমস্তক আদর্শবাদী দলের রাজনীতি ছুটকো মন্দির বানানোতেই আটকে থাকে না– তা প্রতিশ্রুত থাকে অচ্ছে দিনের রাজনীতিতে, যা কখনও এনে দেবে ঈপ্সিত মুক্তি। হয়তো সেই মোক্ষ কোনও দিন আসবে না, তবু মানুষধর্ম সেই উত্তরণের খোঁজে পায়ে পায়ে ঘোরে।

    আদর্শবাদের কৌটোয় গচ্ছিত থাকে দৃঢ় আশাবাদ৷ গণতন্ত্রের থিয়েটারে এই রাজনীতি, মনে হয়, যেন-বা, ‘আস্তিক্যের রাজনীতি’। কাছে-দূরে কেবলই ঘর ভাঙে যখন, গ্রাম পতনের শব্দ হয় ইতস্তত– আদর্শ তার মধ্যে উত্তরণকে খোঁজে। সে জানে, এক দিন সেই স্বর্গরাজ্য সম্ভব। গোটা বিমূর্ত প্রকল্পটাই এক দিন বাস্তবে ঘটে যাবে। অথবা, সেই উপন্যাসের নায়ক নিয়ত চায় তার ছুটকো প্রতিপক্ষকে খুঁজে বের করতে। হিন্দুত্ববাদে এই গোত্রের রাজনীতির তুমুল রমরমা: মুসলিমকে বাদ দাও, সব ঠিক হয়ে যাবে আপনা৷ আজ, এই বীভৎস করোনাক্রান্তির মরশুমে দেখছি মহল্লায়, পাড়ায়, জনচিত্তে ছড়িয়ে পড়ছে হিন্দুত্বের উৎসব। সে মানে, তার দেহ শুদ্ধ ও সুস্থ: জাতীয়তাবাদী আত্মিক ধারণা-কল্পনায় এই উৎকট জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারে এক মাত্র তার বিরোধী: অপর। পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় মাথাচাড়া-দেওয়া উগ্র জাতীয়তাবাদী হাওয়া তাই সন্দেহপ্রবণ বহিরাগতটিকে শনাক্ত করে বেড়াচ্ছে অপরাধী খোঁজার তরিকায়। ধাত্রীভূমি কলকাতায় উত্তর-পুব ভারতের মানুষ দেখলে ‘করোনা’ স্বরে ব্যঙ্গ-আপ্যায়ন, ইতস্তত গণপিটুনি ও চিহ্নিতকরণ এই রাজনীতির মব-ভিত্তিকে টের পাইয়ে দেয়। যে ভিড়ের ‘গণ’, স্বভাবতই, পৃথগন্ন হয়ে যায় গণতন্ত্রের বিবেচক, আলোকপ্রাপ্ত ও আদর্শ ‘গণ’র তালিকা থেকে।

    এই রাজনীতির মধ্যে এক ধরনের মস্তিষ্ক-বিকার রয়েছে। হিস্টিরিয়া রয়েছে। এমন কী, সমষ্টির সিজোফ্রেনিক লক্ষণও হয়তো আছে। কিন্তু তবু তা শারীরিক নয়। সাংস্কৃতিক। ভিড়ের সংস্কৃতি। যে আদর্শ মনে করে, ‘খ’ যদি করোনা ছড়ায় তা হলে জবরদস্ত সমাধান ‘খ’-কে পাড়াছাড়া করা। নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীকে বের করে দিলেই তল্লাটে পুনরায় স্থিতি ফিরে আসবে। আর, কে না জানে– স্থিতিই হল প্রগতির সেই দ্যোতক: যে সড়কে মৃদু পদক্ষেপে আমরা বেচালবিহীন, নিয়মমাফিক পৌঁছে যাব আগামীর সেই পরমতম সমাপ্তিতে।

    কিন্তু আদর্শ থেকে চোখ ফেরাই যদি? যদি নজর রাখি এই নিঃশেষিত সভ্যতার কাঠামোর বাস্তবতায়? নবারুণ একটি আশ্চর্য গল্প লিখেছিলেন না, ‘সব শেষ হয়ে যাচ্ছে’! আজ থেকে বহু মিলিয়ন দশক পরের লয়প্রাপ্ত নক্ষত্রের কিসসা ছুঁয়েছিলেন তিনি এই ছোটগল্পে, মহাজাগতিক স্পর্শে। ধ্বংসের এক অবিরাম নকশার মধ্যে এই বিশ্বচরাচর জেগে। রোজকার ক্ষণিক, আপতিক এলোমেলো থেকে মুখ তুলে তাকাই যদি– যদি তল্লাশ করি গভীর আগামীর কথা– তা হলে এনট্রপি-ই, অন্তিমের তুমুল আয়োজনই সভ্যতার নির্বিকল্প নিয়তি৷ আদর্শ নয়– বাস্তববাদীর এক মাত্র পুঁজি এই নেতিবাদী হতাশা। সভ্যতা ও মহাজগতের গ্রন্থিগুলো মিহি পারম্পর্যে এক জটিল ভঙ্গিমায় গ্রথিত। তার একটায় টান লাগলে গোটা ব্যবস্থা দুলে ওঠে, ঠিক যেমন করোনা এখন কাঁপিয়ে দিচ্ছে চরাচর প্রাণ ও প্রকৃতি৷ চিন সাগরে প্রজাপতির মৃদু ডানা-ঝাপটানো স্তব্ধ করে দেয় গোটা উত্তর আটলান্টিক বাণিজ্য-ব্যবস্থা, তো করোনা কোন ছার!

    নিওলিবারাল দুনিয়া মানুষকে এক ধরনের আপস শেখায়। তা-ও বিচিত্র গতের আদর্শ বই কী। সেই আদর্শ বুলি কপচায়, ব্যবস্থামাফিক এসে গেছে ইতিহাসের অন্তিম সেই মাহেন্দ্রক্ষণ: এ’ পথেই বাঁধা ক্রমমুক্তি, অদেখা উড়ান। করোনার নির্ঘোষে যা-ই হয়ে যাক, দেশের উচ্চশিক্ষা মঞ্জুরি কমিশন এখনও নাচার: পরীক্ষা ওঁরা নেবেনই। ব্যবস্থার প্রতি এই অন্ধ ভরসা, এবং ধারণা যে সবই দিব্যি অক্ষত থাকবে– মূলত, নিওলিবারাল আদর্শের রকমফের। পুঁজি, পরিবহণ ও গতায়াত ব্যতিরেকে, এই মতাদর্শ-মাফিক, দুনিয়া চলে না। বড়বাবুরা কবে গলফ খেলতে মালয়েশিয়া যাবেন, থিয়েটার হল কবে খুলবে, অফুরন্ত বিনোদন-সম্ভার কবে উপুড় হবে ফের– সে’ সবের অপেক্ষায় নিওলিবারাল ভোক্তা হাপিত্যেশ! এগুলি যে নিতান্তই অধুনার অবদান, কোনওটিই মানুষের অস্তিত্বের কাছে স্বতঃসিদ্ধ নয়– ব্যবস্থা তা শেখায় না। প্রকৃতির স্বরাট বিপুলতার সামনে সে শেখায় না ক্ষুদ্র ও মৌনী হতে, সম্ভ্রম নিয়ে স্তব্ধ হতে। নয়া-উদারবাদ ভাঙে তবু মচকায় না: যেন সে এনেই ছাড়বে সেই পরম জ্যোতিমুহূর্ত। গণতন্ত্রের ভেক ধরে একটা বায়বীয় ব্যবস্থার সঙ্গে নয়া-উদারবাদের, অতএব, খাপে-খাপ মিতালি।

    অতঃপর কী ঘটে, শ্যামলাল জানে। দেশজোড়া বীভৎস কান্নার মাটি খুঁড়ে রামের জন্মসৌধ বানানো হয়। হাততালি ছেয়ে যায় গণতান্ত্রিক দেশময়।

    (অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাভিয়ট: অনেকেই এই লেখা পড়ে ভাববেন, তবে কি গণতন্ত্র পরিত্যাজ্য? যে মতবাদ মধ্যমেধা-শাসিত পিগমি-প্রসবের খোঁয়াড়– তাকে ঝটপট বদলালেই তো হয়! সত্যিই, বলসনারো ট্রাম্প মোদী আর জনসন, সবাই গণতান্ত্রিক ইচ্ছার মূর্ত সংস্করণ– অতএব তাঁদের বাদ দিয়ে উন্নত, কৃত্রিম মেধা-রাজ, প্রশিক্ষিত পলিসি মেকারের শীতল ডিক্টেটরশিপ আনলেই তো ল্যাটা চুকে যায়। এই লেখার শেষে তা হলে এই উল্লেখও থাকুক, যে, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া বা কিউবা-র মত গণতান্ত্রিক কিংবা প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা করোনা রুখতে পেরেছে। এবং, যথোচিত গুরুত্ব-সহকারে। গণতন্ত্র শিশুতোষ নয়, সচেতন ও প্রাপ্তমনস্ক নাগরিক তার স্বাস্থ্যের খেয়াল নিজেই রাখেন। আমি অনেকান্ত জল্পনার দলে, গণতন্ত্রের দলে। করোনামথিত সংকট-মুহূর্তে, মানুষী চেতনার প্রতি অবিরল আস্থাই সেখানে হয়ে ওঠে আস্তিক্যবোধের চূড়ান্ত গন্তব্য। এই নাছোড় ভরসাকে কখনও, কোনও যুক্তি দিয়েই কাটতে ইচ্ছে হয় না)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৭ জুলাই ২০২০ | ২৫৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sumit Roy | ২৭ জুলাই ২০২০ ২২:৩৩95615
  • গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবসময়ই ধর্মভিত্তিক বা "আস্তিক" রাইট উইং পপুলিজমের বিকাশ ঘটার সুযোগ থাকেই। আর কোভিড ১৯ এর মত প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে পাবলিক যেখানে অনেক বেশি অনিরাপত্তায় সেখানে এর সুযোগ আরও বেড়ে যায়, রাইট উইং পপুলিস্টরাও এখানে নিজেদের সুযোগ তৈরি করে নেয়। এদিকে পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য পাবলিকের সাথে সম্পর্কিত যেসব সেক্টরে অনেক বেশি মনোযোগ দেবার দরকার ছিল, অর্থনীতির লিবারালাইজেশনের দরকার ছিল, জনগণের আর্থিক নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য খাতে নিরাপত্তা তৈরির দরকার ছিল তা এরা করে না, করতে চায়ও না। এই পরিস্থিতিতে যে দলটিকে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে হয় তারা হচ্ছে বুদ্ধিজীবী, এদেরই কাজ জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সম্পর্কিত হয়ে তাদের মধ্যে তাদের স্বার্থে জনমত তৈরি করা যাতে তাদের মধ্যে পপুলিজমের প্রভাব না পড়তে পারে। এই কোভিড ১৯ এর ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। 

    কেন হচ্ছে না, সেখানেই হয়তো আপনার নিওলিবারালদের প্রতি সমালোচনাগুলো সম্পর্কিত... " বড়বাবুরা কবে গলফ খেলতে মালয়েশিয়া যাবেন, থিয়েটার হল কবে খুলবে, অফুরন্ত বিনোদন-সম্ভার কবে উপুড় হবে ফের– সে’ সবের অপেক্ষায় নিওলিবারাল ভোক্তা হাপিত্যেশ"... তবে আমার মতে সমস্যাটা নিওলিবারালিজমে নয়, এই পরিস্থিতিতে নিওলিবারালরাও নিজেদের মতই বিকশিত হবেই, সমস্যাটা হল এদের একাংশের জনসমৃক্ততায় অনীহা, জনগণের থেকে দূরে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রেখে একরকম আধুনিকতার চর্চায় নিজেদের ব্যস্ত রাখা, যেখানে সমাজ নিজে আধুনিক নয়। আধুনিকতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেই আধুনিকতাটাকে অর্জন করতে হবে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে, কিন্তু এরা জনসম্পৃক্ত হয়ে সেই আধুনিকতার আন্দোলন না করেই একটি ক্ষুদ্র প্রগতিশীল পকেট তৈরি করে (হয়তো রাষ্ট্রের দয়াতেই) তাতেই আধুনিকতার ফল লাভে ব্যস্ত, যেখানে সমগ্র সমাজে আধুনিকতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি, যার জন্য সাধারণ মানুষের ন্যুনতম আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজন ছিল। এখানেও আমি বলব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল সেই সব ইন্টেলেকচুয়ালদের যারা জনসম্পৃক্ত হবেন, এবং তার মধ্য দিয়েই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। আপনি যাদেরকে নিওলিবারাল বলছেন তাদের মত জনগণ থেকে দূরে সরে গিয়ে আধুনিকতার আন্দোলনে না গিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে আধুনিকতার ফল ভোগ করা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন না। 

  • শিমূল সেন | ২৮ জুলাই ২০২০ ১৯:৩২95638
  • মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পরে খুঁটিয়ে পড়ে বক্তব্য জানাচ্ছি, তবে আপাতত আপনার প্রথম বাক্যটা নিয়ে একটা অনুযোগ রাখছি। আস্তিক্যের রাজনীতি ঠিক ধর্মভিত্তিক রাইট উইং পপুলিজম নয়। যদিও, লেখাটায় সমালোচনা করা হয়েছে মূলত সেটারই।

     আস্তিক্যের রাজনীতি: অস্তি কথাটা অস্ ধাতু থেকে এসেছে। এই অস্-এর মানে হয়ে-ওঠা। এই হয়ে-ওঠা'য় একটা আশাবাদ নিহিত থাকে৷ ট্রান্সেন্ডেন্স, ইমানেন্স বা বিপ্লব– আদর্শের নানা খুপরিতে নানা ডাকনাম তার। আদর্শ আশাবাদী। কিন্তু এক জন বাস্তববাদী পেসিমিস্টের কাছে রিয়েলিটি নন-লিনিয়ার, কমপ্লেক্স, ডায়নামিক৷ কোলাপ্স থিওরির প্রণেতারা সব সময় এটাই দেখাতে চেয়েছেন। এঁদের কাছে গল্পের ক্লোজার-টা খুব অস্তিবাদের নয়। নেতি-র।   

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন