এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • ঐর্যনম বৈজ - আর্য উৎসভূমির সন্ধানে - দ্বিতীয় পর্ব

    Sudipto Pal লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ০৬ জুন ২০২০ | ৩৪৫১ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় পর্ব
    © সুদীপ্ত পাল, May, 2020

    আগের পর্বে সাহিত্য ও ভাষার ইতিহাস দিয়ে আর্য শব্দটার উৎস আমরা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। এবার আমরা জেনেটিক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখব।

    তিন) জেনেটিক্স: আপনি ভারতীয় উপমহাদেশের একজন সাধারন মানুষ। চলুন আমি আপনার বংশলতিকা বানাই। অনেক সময় শুধুমাত্র পুরুষ পূর্বসূরীদের নিয়েই বংশলতিকা বানানো হয়, সেরকম বানাই। আপনার বাবা, তার বাবা, তস্য বাবা। চলুন এটাকে বলি পিতৃবংশলতিকা। তেমনি আপনার মা, তার মা, তস্য মা- এভাবে বানাই মাতৃবংশলতিকা। এর বাইরেও হাজার রকম ভাবে বংশলতিকা বানানো যায়- ধরুন আপনার বাবা, তার মা, তার বাবা, তার মা, তার মা, তার বাবা... ইত্যাদি। আপাতত পিতৃ ও মাতৃ বংশলতিকায় মনোনিবেশ করি। প্রথমটা খোঁজা যায় Y chromosome ধরে কারণ এটি শুধু পিতা থেকে পুত্রের মধ্যে আসে। দ্বিতীয়টা মাইটোকন্ড্রিয়ার DNA ধরে খোঁজা যায় কারণ আমরা এটি শুধুমাত্র মায়ের থেকে পাই।

    মাতৃবংশলতিকা ধরে ধরে আপনি যদি দশ হাজার বছর পিছোতে পারেন (নব্য প্রস্তর যুগের শুরুতে), দেখবেন আপনার পূর্বসূরিনীরা আশি শতাংশ এদেশেই বসে আছেন। এনাদেরকে আমরা আদি ভারতমাতা বলতে পারি। এই ভারতমাতাদের এখনকার সবচেয়ে সদৃশ রূপ হল আন্দামানের ওঙ্গে আদিবাসীরা, অথবা কেরালার পানিয়া আদিবাসীরা। দশ হাজার বছর আগের এই ভারতমাতাদের মূল জীবিকা ছিল শিকার ও জোগাড়।

    আপনার পিতৃ বংশলতিকা ধরে নব্যপ্রস্তর যুগের শুরুর দিকে এগোলে তিন চতুর্থাংশ ক্ষেত্রেই আপনি ঠেকবেন ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে- জাগ্ৰোস পর্বতের চাষী, স্তেপে তৃণভূমির পশুপালক, অথবা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার চাষীদের মাঝে। এই দ্বিতীয় গোষ্ঠী অর্থাৎ স্তেপের পশুপালকদেরকে আমরা আর্য বলতে পারি। কেন সেটা পরে বলছি। একটা বড়সংখ্যক ভারতীয়র পিতৃবংশলতিকাটা স্তেপের য়মনায়া অঞ্চলের (ককেশাস থেকে কয়েকশ কিমি উত্তরে) এই পশুপালকদের মধ্যে গিয়ে ঠেকে।

    এই স্তেপের পশুপালক (steppe pastor) পুরুষরা ব্রোঞ্জ যুগের শুরুতে দলে দলে বেরিয়ে পড়েছিল স্তেপে ছেড়ে। মহিলারাও বেরিয়েছিল- তবে অনেক কম। এই পরিযানটা নব্যপ্রস্তর যুগের প্রথম দিককার বা প্রাচীন প্রস্তরযুগের পরিযানগুলোর মত ধীরগতির নয়। কারণটা হল ঘোড়া আর স্পোকযুক্ত চাকা। স্পোকযুক্ত চাকার গতি স্পোকহীন ভরাট চাকার থেকে অনেক বেশী- এবং এটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল। এই দুটি জিনিস- ঘোড়া আর স্পোকযুক্ত চাকা এই দুটোই পরবর্তীকালে দেখা যাবে স্তেপের পশুপালকদের এগিয়ে রেখেছিল স্থানীয় পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়, এবং ঘোড়ার গাড়ীর তীব্রগতিতেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তাদের জিন ও সংস্কৃতিকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। ধীরগতির পরিযানে মেয়েদের চলার সুযোগ থাকে। কিন্তু দ্রুতগতির পরিযানে সে সুযোগ কম কারণ মেয়েদের একেকটা বছর বা তারও বেশি চলে যায় সন্তান ধারণ ও পালনে।

    স্তেপের পশুপালকরা ‍(বেশীরভাগই পুরুষ) য়ুরোপে গিয়ে মিলিত হয়েছিল য়ুরোপের আদি কৃষিজীবীদের (বেশীরভাগই নারী) সাথে। ওই আদি কৃষিজীবীরা ছিল য়ুরোপের শিকারী সংগ্ৰাহক আদিবাসী ও আনাতোলিয়ার চাষীদের (যারা নব্য প্রস্তর যুগের শুরুতে য়ুরোপে আসে) মিশ্রণ।

    একই ভাবে স্তেপের পশুপালকরা ‍(বেশীরভাগই পুরুষ) উত্তর পশ্চিম ভারতে এসে মিলিত হল সেখানকার কৃষিজীবী ও নগরবাসীদের (বেশীরভাগই নারী) সাথে। য়ুরোপের সাথে একটা পার্থক্য হল এই আদিবাসিন্দারা শুধুই কৃষিজীবী ছিল না, ভারতে সিন্ধু সভ্যতার মত নগর সভ্যতাও ছিল, যদিও সেটা ক্ষীয়মান হতে শুরু করেছিল। এই আদি কৃষিজীবী ও নগরবাসীরা কারা ছিল? একটু আগে যাদের আদি ভারতমাতা বলেছিলাম তারা তো ছিলই, এবং তাদের সাথে ইরানের জাগ্রোস পর্বত থেকে আসা চাষীদের মিশ্রণে তৈরী হয়েছিল ভারতের কৃষিজীবী ও নাগরিক সমাজ। এই মিশ্রণ হয়েছিল স্তেপের পশুপালকরা আসার অনেক আগে, ষষ্ঠ বা সপ্তম পূর্বসহস্রাব্দে, মেহেরগড়ের যুগে। জাগ্রোসের চাষী আর আদি ভারতবাসীদের মিশ্রণটিকে নাম দেয়া হয়েছে ASI (Ancestral South Indian), এবং অমিশ্রিত আদি ভারতবাসীদের নাম দেয়া হয়েছে AASI (Ancient Ancestral South Indian)।

    Y chromosome haplogroup R1a M417 এর স্থানিক আর কালিক গতিপথ স্তেপে থেকে পরিযানের ইঙ্গিত দিয়েছে। স্তেপে তৃণভূমির যমনয়া অঞ্চল থেকে এই হ্যাপ্লোগ্ৰুপের প্রসার হতে দেখা গেছে য়ুরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ায়, ব্রোঞ্জ যুগে। ডেভিড রিচ, বাগীশ নরসিংহন সহ যারা এনশিয়েন্ট জিনোম নিয়ে কাজ করছেন তাদের বক্তব্য এমনটাই। এনশিয়েন্ট জিনোম নিয়ে কাজ গত দুই দশকেই শুরু হয়েছে, কম্পিউটার সায়েন্সের উন্নতিকে কাজে লাগিয়ে।

    তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে স্তেপের পশুপালকদেরকেই কেন আর্য বলা হচ্ছে? অনেকে বলেন হরপ্পার লোকেরাও তো বৈদিক আর্যজাতি হতে পারত। সেটা কেন নয়?

    একে একে দুটই প্রশ্নের উত্তর দেই। আগের পর্বেই দেখেছি ঋগ্বেদের বক্তা বা যজমানের আত্মপরিচয় হল আর্য। ঋগ্বেদেরই পুরুষসুক্তে এবং পরবর্তীকালীন বৈদিক সাহিত্য বা বেদাশ্রয়ী শাস্ত্রে যাদেরকে নিজের লোক হিসাবে (অর্থাৎ দাস-দস্যু বা শূদ্রদের থেকে আলাদা করে) দেখানো হয়েছে তারা হল মূলত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। এখনকার বর্ণহিন্দুদের মধ্যেই স্তেপের পশুপালকদের জিন সবচেয়ে বেশী দেখা যায়, অন্যান্য ভারতীয়দের তুলনায়। যারা বৈদিক যুগের শুরুর দিকে নিজেদের আর্য আত্মপরিচয় দিচ্ছিল তাদের আজকের উত্তরসুরীদের মধ্যেই স্তেপের জিন বেশী করে দেখা যায়- এটাই স্তেপের সঙ্গে আর্য পরিচয়টাকে যুক্ত করছে। মহাভাষ্য ও মনুস্মৃতিতে আর্যাবর্ত বলতে যে অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে, সেই অঞ্চলে স্তেপের পশুপালকদের বংশগতি সবচেয়ে বেশী, এবং এটাও আর্য পরিচয়টাকে স্তেপের সাথে যুক্ত করে। ইরানীয়রা নিজেদের আর্য আত্মপরিচয় দিত বা এখনও দেয়- তাদের মধ্যেও আজকের দিনে স্তেপের পশুপালকদের বংশগতি আমরা বেশী বেশী করে দেখতে পাই। তবে দক্ষিণভারতে এবং অনুচ্চবর্ণের মানুষের মধ্যেও স্তেপের পশুপালকদের জিন কম হলেও ভালমতই আছে।

    দ্বিতীয় প্রশ্ন- হরপ্পাকে কেন বৈদিক আর্যদের সাথে যোগ করা যায় না? ধাপে ধাপে উত্তর দেই-
    ১) হরপ্পা ও বৈদিক সংস্কৃতির মৌলিক বৈসদৃশ্যগুলি লক্ষনীয়- যেমন হরপ্পার নগর বনাম বৈদিক যাযাবরপ্রায় বা গ্রামীণ জীবন, হরপ্পায় লিঙ্গযোনিপূজা বনাম এগুলোর প্রতি বৈদিক বিদ্বেষ, হরপ্পার কবরের আধিক্য বনাম ঋগ্বেদে শবদাহের আধিক্য।
    ২) হরপ্পায় ঘোড়ার বিরলতা ও স্পোকযুক্ত চাকার অনুপস্থিতি। হরপ্পার প্রথম ঘোড়া ১৮ পূর্বশতকে, অর্থাৎ একদম শেষ পর্যায়ে‌, একটি শহরেই তার চিহ্ন পাওয়া গেছে। আর ঋগ্বৈদিক সংস্কৃতিতে যেহেতু ঘোড়া প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ, অতএব দুটোই সম্ভাবনা: এক, ঋগ্বেদ সংহিতা এই স্তেপে মাইগ্রেশনের পরবর্তীকালে রচিত (যখন ঘোড়া এসে হাজির হয়েছে), আর দুই, যদি এই মাইগ্ৰেশনের আগে ঋগ্বেদ রচিত হয় সেটি সপ্তসিন্ধু ও স্তেপের মাঝামাঝি জায়গাগুলোয় বসে রচনা করা হয়েছে। দুটো সম্ভাবনাই স্তেপে মাইগ্ৰেশনের ইঙ্গিত দেয়।
    ৩) আধুনিক জিনের মধ্যেও পাই সংমিশ্রণের চিহ্ন।‌‌ প্রিয়া মূর্জানি ইত্যাদির গবেষণাপত্রে দেখা যায় যে মোটামুটি ২২০০ পূর্বাব্দ থেকে ১০০ অব্দ অবধি স্তেপের পশুপালকদের সাথে স্থানীয় ভারতীয়দের মিশ্রণ হয়েছে- ধাপে ধাপে। একাধিক পর্যায়ে মিশ্রণের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই গবেষণাপত্রে দেখা গেছে একশ অব্দের পর সংমিশ্রণের হার কমে এসেছে অর্থাৎ অসবর্ণ বিবাহের হার কমে এসেছে, সেটা মনুস্মৃতির সময়কালের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
    ৪) ঋগ্বেদে পুরুষ দেবতার আধিক্যও পুরুষকেন্দ্রিক মাইগ্ৰেশনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। হরপ্পায় কিন্তু পুরুষমূর্তির থেকে নারীমূর্তি কিছু বেশীই পাওয়া গেছে। নারী-পুরুষের কবরের আয়তন ও আড়ম্বরও প্রায় একরকম। কবর থেকে পাওয়া গেছে কিছু মাতৃবংশধারার পরিবারের ইঙ্গিতও।

    স্তেপের পশুপালকদের সাথে বৈদিক আর্যদের একটা পার্থক্যও বলি- স্তেপের পশুপালকরা জমকালো ভাবে অস্ত্রশস্ত্র সহ কবর দিত। অনেক সময় রথসহ ঘোড়াসহ বড় স্তূপ বানিয়ে কবর দিত। এই স্তূপগুলোকে কু্রগান বলা হয়। বৈদিক আর্যরা শবদাহই বেশি করত। শবদাহটাও যাযাবর জীবনের ইঙ্গিত দেয়, কারণ কবরের সাথে স্থাবর জমি যুক্ত। তবে কাজাকস্তানের ফেডোরোভো সংস্কৃতিতে শবদাহ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে এবং এই সংস্কৃতিকে য়মনায়া আর ইন্দো ইরানীয় সংস্কৃতির মধ্যবর্তী পর্যায় বলে মনে করা হয়।

    আবার আমরা এক ঝলক সাহিত্যে ফিরব। বৈদিক সাহিত্যের ক্রমবিকাশ দেখলে দেখবেন সবার প্রথমে কর্মকাণ্ড আসে (অর্থাৎ সংহিতা ও ব্রাহ্মণ), তারপর জ্ঞানকাণ্ড (আরণ্যক আর উপনিষদ), তারপর দর্শন। এটাও যাযাবর জীবন থেকে স্থিতিশীল জীবনের দিকে এগোনোর ইঙ্গিত দেয়। আগের পর্বে দেখেছি- ঋগ্বেদ থেকে মহাভাষ্য থেকে মনুস্মৃতি- সময়ের সাথে সাথে আর্যদের বাসভূমির প্রসারের ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে- সপ্তসিন্ধু থেকে গাঙ্গেয় সমভূমি থেকে পুরো উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ভারত- এটাও পরিযানের ইঙ্গিত দেয়।

    স্তেপের পশুপালকরা যেহেতু সব জায়গাতেই স্থানীয় মানুষদের সাথে মিশ্রিত হয়েছে (কারণ তারা খুব বেশী মহিলা সঙ্গে আনেনি) অতএব শুদ্ধ আর্য জাতি বলে বিশেষ কিছু হয় না‌। মনে রাখবেন অল্প সংখ্যক পুরুষ অনেক অনেক মহিলার গর্ভনিষেক করতে পারে কারণ একটা সন্তান ধারণের জন্য মহিলাদের অনেক সময় দিতে হয়।

    যারা আউট অফ ইন্ডিয়া মাইগ্রেশনের যুক্তি দেখান তাঁরা খুব বেশী কিছু জেনেটিক বা আর্কিওলোজিকাল এভিডেন্স দেখিয়ে উঠতে পারেননি। বছর দুয়েক আগে মিডিয়াতে দেখলাম উত্তর প্রদেশের সিনৌলিতে নাকি খনন করে একটা রথ পাওয়া গেছে, তাতে নাকি আর্য মাইগ্রেশনের থিওরি নস্যাৎ হয়ে গেছে! অনেক ওয়েবসাইটে সোনায় মোড়ানো রথের ছবি দেখলাম- ওটা নাকি কৃষ্ণের রথ। কিন্তু মজাটা হল এই রথের চাকা কিন্তু সলিড চাকা- স্পোকযুক্ত নয়- যেটি হরপ্পার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আর ঘোড়ার কোনো চিহ্নও পাওয়া যায় নি। আর হরপ্পার চিহ্নগুলির মধ্যে (যেগুলিকে হরপ্পা লিপি বলা হয়) স্পোকযুক্ত চাকার মত চিহ্ন থাকলেও সেটি চাকা কিনা বোঝার উপায় নেই। স্পোকযুক্ত চাকার চিহ্নগুলি কখনোই গাড়ীর সাথে দেখা যায় নি। এগুলি হরপ্পা লিপির জ্যামিতিক চিহ্নগুলির একটি হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা পরিযানের শুরু ভারত থেকে হলে য়ুরোপের দেশগুলোতে জেনেটিক চিহ্ন থাকত ভারতের আদি বাসিন্দাদের অর্থাৎ ASI/AASI দের, যা কোথাও পাওয়া যায়নি।

    এ তো গেল আর্যদের পরিযানের কথা। আর্য আক্রমণের ব্যাপারটা কতটা সত্যি? মহেঞ্জোদড়োতে পাওয়া ৩৭টা কঙ্কাল যারা অবিন্যস্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়েছিল, এবং সিন্ধু সভ্যতায় এই জাতীয় আরও বেশ কিছু কঙ্কালসমূহ দেখে আক্রমণের একটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। এত মানুষ একসাথে মরে যাওয়া এবং ঠিকভাবে কবরে স্থান না পাওয়াটা বিস্ময়কর। এছাড়া বৃত্রঘ্ন ইন্দ্র ও তাঁর পুরন্দর নামেও একটা ইঙ্গিত রয়েছে। বৃত্র পৃথিবীর যাবতীয় জল আটকে রেখেছিল। তাই ইন্দ্রর বৃত্রকে হত্যা করাটাকে অনেকে হরপ্পাবাসীদের তৈরী বাঁধ ভাঙার ইঙ্গিত হিসাবে দেখেন। পুরন্দর মানে যিনি পুর অর্থাৎ নগর বা দুর্গকে ভেদ করেন- এটাও গ্রামবাসী বা যাযাবরদের হাতে একটি নগরসভ্যতার উপর আক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। তবে এগুলো খুব জোরদার এভিডেন্স হয়ে উঠতে পারেনি। কঙ্কালগুলো থেকে বড় আকারের আক্রমণ বা নগর ধ্বংস করার জোরালো সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বৃত্রঘ্ন ইন্দ্রের কাহিনী আবেস্তাতেও দেখা যায় যেটা আরও আগের যুগের এবং হরপ্পার সাথে অসম্পর্কিত কোনো লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয়। আবার এটাও ঠিক যে দুটো জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ খুব শান্তিপূর্ণভাবেও হয় না।

    পরের পর্বে আইকোনোগ্রাফি ও শিল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি দেখব।
    (চলবে)

    তথ্যসূত্র:
    David Reich- Who we are how we got there
    Tony Joseph- Early Indian
    https://core.ac.uk/download/pdf/5105465.pdf
    https://www.penn.museum/sites/expedition/the-mythical-massacre-at-mohenjo-daro/
    Moorjani P, Thangaraj K, Patterson N, et al. Genetic evidence for recent population mixture in India. Am J Hum Genet. 2013;93(3):422‐438. doi:10.1016/j.ajhg.2013.07.006 https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3769933/

    প্রথম ছবিটি উপরিউক্ত বাগীশ নরসিংহনের টুইটার থেকে সংগৃহীত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছবিগুলি যথাক্রমে ভরাট চাকা আর স্পোকযুক্ত চাকা।



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় পর্ব
  • ধারাবাহিক | ০৬ জুন ২০২০ | ৩৪৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মাহবুব লীলেন | 73.212.***.*** | ০৬ জুন ২০২০ ২২:২২94057
  • আগের পর্বটাও পড়ছি। খুব সহজে দুর্দান্ত একটা আলোচনা

    ০২

    এইখানে ব্যবহার করা 'স্তেপ' অঞ্চলটার বর্তমান ভৌগলিক অবস্থান এক দুই লাইনে যোগ কইরা দিলে বুঝতে আরেকটু সুবিধা হইত

  • শঙ্খ | 116.206.***.*** | ০৬ জুন ২০২০ ২৩:৪০94061
  • খুব ভালো হচ্ছে, অনেককিছু জানা যাচ্ছে, আর সবচেয়ে বড় কথা, খুব সহজ করে বোঝানো। পরের পর্বের অপেক্ষায়
  • কুশান | 103.218.***.*** | ১০ জুন ২০২০ ১৪:২৪94199
  • চমৎকার লেখা। আগের পর্বটা এখনো পড়ি নি। পড়তে হবে।

    লেখা চলুক পর্বে পর্বে।
  • শুভজিৎ | 2409:4061:580:564::b3f:***:*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৮:৩৪94931
  • খুব ভালো লেগেছে লেখাটা। ইতিহাস এর উপর এই রকম আরো লেখা চাই।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন