এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • লে হালুয়া

    Avik Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ মে ২০১৪ | ২০৭০ বার পঠিত
  • নিবন্ধ
    লে হালুয়া
    অভীক মুখোপাধ্যায়
    (১)
    ‘রাখাল একজন বাজে ছেলে – Rakhal is a cheater.’ লাইনটা খাতায় দেখে চমকে উঠলাম। বাঁদর ছেলে পড়াশোনায় মন নেই, ভুলভাল লিখে খাতা ভরিয়ে নিয়ে এসেছে। বাপ-মা কতো আশা করে মানুষ করার চেষ্টা করছে আর ইনি আমার কাছে ইংরাজি শিখে নিজের বংশের টাইটানিকসম সুনামের সাথে সাথে আমার এই ক্ষুদ্র টিউশানির ভেলাও ডোবাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। চপেটাঘাতে সম্বিৎ ফেরালাম দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করেও উত্তর না পেয়ে, ‘Cheater কথাটা কোত্থেকে পেলি? বাজে শব্দটার ইংরাজি মানে তোকে আগের দিন অনেক বার বলে দিয়েছি, আর না বললেও এটা পারা যায়, তাছাড়া আমি তো তোকে cheater কথাটা শেখাইনি!’ ক্লাস সিক্সে আমাকে কেউ ওরকম মারলে আমি যে কি হারে কান্না জুড়তাম আমিই জানি, কিন্তু এ নেহাত বিটলে শয়তান তাই আমার ডান হাত ওর বাম কান মর্দন করতে থাকা সত্ত্বেও খানিক পরমব্রত চ্যাটার্জীর মত বিরহপূর্ণ ভঙ্গীতে বলল, ‘বাবাই বলেছে।’
    আমি একইভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই বাবাইটা কে? আর তোকে পড়ায় কে? আমি না বাবাই?’
    -‘বাবা, আমার বাবার কথা বলছি।’
    আমি নিজেই লজ্জায় পড়ে ওর কান ছাড়তে বাধ্য হলাম। বুঝলাম বাবার প্রতি ভরসা করে জোর দিতে গিয়ে ‘বাবা’ শব্দের পড়ে একটা ‘ই-কার’ যোগ করেছিল। নিজের বোঝার অক্ষমতা ঢাকতে তখন আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, ‘বাজে কথার ইংরাজি হল ব্যাড আর তুই যেটা বলছিস ওটা মানে ঠকায় যে...।’
    -‘তো বাবা কি ভুল বলেছে নাকি? বাবা তো সেদিন বলল রমেশ হালদার বাজে লোক একটা চিটার।’
    এরকম একটা স্পর্শকাতর ব্যাপারে যে কি করে জবাব দেওয়া যায় যাতে ছেলেটার মনে ওর বাবার জ্ঞান নিয়ে কথাও না ওঠে আবার ভুলটাও ভাঙে সেটাই ভাবছি তারই মাঝে বাবু বলে উঠলেন, ‘তাহলে কি বাবা মিথ্যে বলল? কিন্তু বাবা তো মিথ্যে বলেনা। বাবা তো বলছিল রমেশ হালদার টাকা মেরে দিয়েছে।রমেশ হালদার বাজে লোক একটা চিটার। মা সারদার নামও বলছিল জানো কাকু। মা সারদা তো ঠাকুর রামকৃষ্ণের বউ ছিল। ওর নাম করে কেউ মিথ্যে বলে নাকি?’
    লে হালুয়া...
    (চলবে)
    (২)
    আপাদমস্তক ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আমাদের চিট ফান্ড সংক্রান্ত যাবতীয় আলাপ-আলোচনা চলে। ‘চিট’ মানে ‘প্রতারণা করা’ এই একটা কমন কনসেপ্ট থেকে আমাদের মত অল্পশিক্ষিত তথাকথিত সুশীল সমাজের বিজ্ঞতা প্রদর্শন যে সম্পূর্ণ ভুল তা অনেকেই জানেন না। প্রথম কথা হল যে Cheat মানে প্রতারণা করা তার বাংলা বানান হল ‘চীট’, আর যে ‘চিট’ আমরা সাধারণ ভাবে চিট ফান্ডের সাথে মিলিয়ে বলি সেই ‘চিট’ – এর মানে হল ‘ক্ষুদ্র’ এবং আর একটি অর্থ হল ‘চিরকুট’। এখনো অব্দি আপামর বঙ্গবাসী একটা ভুল ভেবে আলোচনা করে যাচ্ছে। কিন্তু সবই আর কি অত সহজে মেলেরে বাবু (লিঙ্গান্তরে বিবি)! কেউ যদি তার কাজের আগেই বলে দেয় যে আমি তোমাকে ‘চীট’ করতে চাই, তুমি টাকা নিয়ে আমার দুয়ারে এসো, কেউ কি যাবে? যদি এর জবাব এক কথায় দিতে বলি আমার সকল বন্ধু বলবেন ‘না’। আমিও শুধু সহমত প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হলাম, কারন যদি সম্ভব হত আমি এই ‘না’ শব্দের পর অন্তত ‘n times’ ‘আ-কার’ যোগ করতাম, যাতে জোর প্রয়োগ করছি এটা বোঝা যায়। কিন্তু ঐ কাজটি করলে বাংলা সাহিত্যের দাদা – দিদিরা রে রে করে মারতে আসবেন, তাই সাহসে কুলিয়ে উঠল না।
    কিন্তু এটা তো গেল কমন কন্সেপ্সন। আমি বললাম যদি কেউ বলে যে টাকা রাখো আমি ঠকাতে চাই তাহলে কেউ রাখবে না। কিন্তু যে মানুষেরা ঠকলেন তাদের ১০০%-ই তো রাখলেন। কেন? কেন রাখলেন? এখন যদি কেউ বলে আমার টাকা আমি রাখব কি পুড়িয়ে দেব আমার ব্যাপার তাহলে অবিশ্যি আমার কিছু করার নেই (তবে পুড়িয়ে দেব বলার আগে অন্তত ২ বার ভাববেন, কারণ টাকা পুড়িয়ে দেওয়া বা জলে ফেলা বা ছিঁড়ে ফেলা দণ্ডনীয় অপরাধ)। যাই হোক লাইনে ফিরি। কেন রাখে? ‘লোভ’। লোভের কেসটায় আসি, ওটা হালুয়া খাবার মতই। যে খায় সে পেট খারাপ করে মরে আর যে খায় না সে হাঁ করে দেখে আর জিভে চকচক আওয়াজ তোলে। আমার খুব পরিচিত এক দাদা, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে। দাদার মাসিক ইনকামের বেশ মোটা টাকা তিনি আমাদের তথাকথিত ‘চিট ফান্ডে’ রেকারিং হিসাবে জমা দিতেন। হঠাৎ শুনছি মাস সাতেক হল সেই সংস্থা টাকা ফিরত দেয়নি। অবধারিত ফল কোর্ট কেস। দাদাকে বললাম, ‘কেন রাখো এসবে? টাকাতো গেল!’
    এক গাল গুটখা নিয়ে একটা ঋষিসুলভ চাহনি দিয়ে দাদার স্বাভাবিক গলায় উত্তর, ‘আরে বাওয়া, এতো চাইনিজ মালের মত, জানি তো কবে টেঁসে যাবে ঠিক নেই। তবে আগে যে টাকাগুলো ম্যাচিওর করেছে তাতে যা দাঁও মেরেছি না ওতেই টাকা উসুল করে নিয়েছি।’
    আমার টাকা হলে আমি হার্টফেল করতাম। শুধু নিজের নয় বলেই বললাম, ‘লে হালুয়া’।

    (চলবে)
    (৩)
    যেটা বলছিলাম। ভ্রান্ত ধারণা। চিট ফান্ড নিয়ে আমরা জ্ঞান দিই। মাথা নাড়ি। বেশী উত্তপ্ত হলে নভজ্যোত সিং সিধুকে নকল করে হাত ছুঁড়ি। এখন বলবেন (বলার অধিকার আছেই) ‘তাহলে যে জ্ঞান দিতে এলেন চিটফান্ড নিয়ে সেখানে আমরা ভুলটা কী জানি?’ সত্যি শুধু তো ‘চোখে আঙুল দাদা’ হলে চলবে না। নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানপেটিকা থেকে কিঞ্চিৎ বিতরণও কাম্য।
    ভারতে এই ‘চিটফান্ড’ নামক ব্যবসাটির সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আছে (তবে তা গৌরবমণ্ডিত কিনা তার যাচাই করার দায়িত্ব আপনাদের উপর ন্যস্ত করলাম)। এমনকি ১৯৮২ সালের একটি আইনও আছে এ নিয়ে। তবে আইনের কচকচানি না টেনে খোলসা করাই ভালো। আসলে ‘চিট’ বলতে এক টুকরো কাগজ (যাকে লটারি বলা যেতে পারে)-এর বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন বোঝাবে যেখানে একজন ব্যক্তি একদল ব্যক্তির সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করবে, যাতে দলের প্রতিটি সদস্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে নিয়মিত ভাবে চাঁদা দিয়ে একটি ফান্ড গঠন করবে আর নিয়মিত সময় অন্তর লটারি (বা অন্য কোন মাধ্যমে)দ্বারা ঐ টাকা সদস্যদের মধ্যে বণ্টিত হবে। যে ব্যক্তি ঐ দলটির সাথে যুক্ত হয়ে পরিচালনা করবেন তিনি হলেন ‘ফোরম্যান’।
    সাধারণত অল্প লোকজন একজন ফোরম্যানের নেতৃত্বে তাদের অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এবার উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক- ১২ জন প্রতিমাসে ১,০০০ টাকা করে একটি ফান্ডে জমাবে। প্রতি মাসের শেষে লটারি দ্বারা একজন টাকাটা পাবে। এইভাবে ১২ জন লোক ১২ মাসে একবার টাকা পাবেই। শর্ত থাকবে কেউ টাকা পাবার পরও তার প্রদেয় কিস্তি জমা দিয়ে যাবে, কিন্তু একবার টাকা পেলে আর দ্বিতীয়বার তার নাম লটারিতে নেওয়া হবে না।
    কিন্তু গুরু ছবি এখনও বাকী। আমার লেখা থেকে মনে হতে পারে প্রতি মাসেই যেহেতু ১২,০০০ টাকা জমা হচ্ছে সেহেতু একজন সদস্য বছরে ১২,০০০ টাকা পাবেই। তাহলে লাভ কখন? যদি সে টাকাটা বছরের শুরুতেই পাবে? বিষয়টা যে তা নয় তা বোঝার জন্য একটু ‘ওয়ান-টু-কা-ফোর’ খেলাটা বোঝা যাক।
    যেমন লটারি দ্বারা টাকাটা কে পাবে ঠিক হবে তেমনি একটি ব্যাপার থাকবে টাকাটা আগে পাবার জন্যে কে তার লভ্যাংশ থেকে কতটা ছাড়বে (deduction)। সাধারণ ভাবে টাকাটা যার বেশি দরকার তাকেই দেওয়া হয়। তার বদলে সে কতটা ছেড়ে দেবে সেটাই বিবেচ্য।
    ধরা যাক, একজন ১২,০০০ টাকার মধ্যে ২,০০০ টাকা এবং দ্বিতীয়জন ৫০০ টাকা ছাড়তে রাজী হলেন। এক্ষেত্রে সেই মাসের লটারিতে টাকা দেওয়া হবে প্রথম ব্যক্তিকে। তবে তার মানে এই নয় যে তিনি (১২,০০০-২,০০০)টাকা = ১০,০০০ টাকা পাবেন। তাঁর প্রাপ্য টাকার ৫% (এই শতাংশ ওঠা-নামা করতে পারে)পাবেন ফোরম্যান। এক্ষেত্রে সেই পরিমান হয় ৫০০ টাকা। আর তিনি যে ২,০০০ টাকা ছাড়লেন তা বছর শেষে সবার মধ্যে ভাগ হবে। কোনও কোনও রাজ্যে মোট জমার নির্দিষ্ট শতাংশই পুরস্কার অর্থে গ্রাহ্য হয়, যেমন কেরালাতে মোট জমা রাশির ৭০%, আর বাকী শর্তাবলী আগের মতই।
    তার মানে যতটা লাভ ভাবা হচ্ছে আদপে তা নয়। আর যে জিনিস বা সংস্থাগুলিকে আমরা ‘চিট ফান্ড’ বলে মাথা খারাপ করছি সেগুলো মোটেই ‘চিট ফান্ড’ নয়।
    এবার কি বলতে ইচ্ছে করছে – ‘লে হালুয়া’? (চলবে)


    (৪)
    তাহলে বন্ধুরা যে জিনিসকে চিটফান্ড বলে মরা ব্যাঙের মত চিৎপটাং হয়ে আমরা পড়ে থাকছি তা আদৌ চিটফান্ড নয়। প্রতারিত হবার ব্যথায় ‘চিট’ আর ‘চীট’ শব্দের উচ্চারণের সামঞ্জস্য থেকে মানেরও মিল খুঁজে বের করছি। জানি, মনে মনে বলছেন, ‘জ্ঞানপাপীর মত না বকে আদপে জিনিসটা কী তা বললেই তো হয়।’
    অথঃ শুনঃ শ্রী শ্রী ‘পনজি’ সাহেবের কথা (পঞ্জি বা পঞ্জী নয় কিন্তু)। দিন পনেরো আগে একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে দেখলাম লেখা বেরিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি তাঁর এজলাসে একটি তথাকথিত চিট ফান্ডের কেস আসায় বিব্রত হয়ে ‘পনজি স্কিম’ সম্পর্কে জানতে চান বাদী পক্ষের আইনজীবীর কাছে(সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বা বিচারকরা তাঁদের ব্যাকগ্রাউণ্ডে এত বইপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন, তাতে আমার ধারণা ছিল উনারা ক্ষুদে এনসাইক্লোপেডিয়া। যাই হোক আমার এই ধারণা ভুল প্রমানিত হল বলে আমার তাতে কোনও ব্যক্তিগত ‘লস’ হয়নি।)। আইনজীবী অবশ্য তাঁকে সন্তোষজনক ব্যাখ্যাই দেন।
    ‘পনজি স্কিম’ জিনিসটা কি? খায় না মাথায় দেয়?
    পনজি স্কিমের এই নামটি এসেছে আমেরিকান চার্লস পনজির নামানুসারে। পনজি আদতে অবশ্য ইতালির বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ১৯১৯ সালে আমেরিকায় একটি ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নেন। সেইমত জনৈক স্পেনীয়র কাছে গ্রাহক হবার প্রস্তাব পাঠালেন। সেই ব্যক্তি যখন ঐ প্রস্তাবে রাজি হলেন তখন পত্রিকা পাঠানোর প্রয়োজনীয় ডাকটিকিট সংগ্রহের জন্যে তাকে একটি International Postal Reply Coupon প্রেরণ করতে বলা হয়। তিনি স্পেনে কুপন কিনে তা আমেরিকায় পনজিকে পাঠান। আর এখানেই খেলা শুরু। যে কুপন কিনতে এক আমেরিকান সেন্ট খরচ পড়ত স্পেনে, তার বদলে ছয় আমেরিকান সেন্ট মুল্যের ডাকটিকিট মিলত আমেরিকায়। অর্থাৎ, পনজি সাহেব বিনা ব্যয়ে ৫ সেন্ট লাভ করলেন। এই ভাবে অনেকের থেকে নিজের মূলধন বানিয়ে নিলেন। এরপর লগ্নিকারিদের কাছ থেকে টাকা তুললেন। তাদের নানা স্কিম বোঝালেন। এরপর তিনি ব্যবসা যত বাড়ালেন তত নতুন লগ্নিকারিদের টাকা দিয়ে পুরানো লগ্নিকারিদের টাকা মেটালেন। শুধু এটাই না, যাদের টাকার মেয়াদপূরণ হয়ে যাচ্ছিল তাদের আকর্ষণীয় প্রকল্পের কথা বলে পুনর্বিনিয়োগে রাজি করাতে শুরু করলেন। যাতে যথাসম্ভব বেশি সময় অব্দি তিনি মাছের তেলে মাছ ভেজে যেতে পারেন। পনজির প্রকল্পগুলির মেয়াদ বেশি দিনের হত না। ফলে যারা প্রথম দিকে মেয়াদ শেষে টাকা লাভসহ ফিরত পেত তারা আর বেশি আকৃষ্ট হত। আর এই পদ্ধতি মেনেই আমাদের ‘চিট ফান্ড’ গুলি কাজ করে। এই ভাবেই মার্কেট থেকে টাকা তোলে, কিছু ফিরত দেয়, আর গতি লাভ করে যখন তহবিল ফুলে ফেঁপে ওঠে তখন কিছু দিনের মধ্যেই পগার পার।
    মানে সেই ‘লে হালুয়া’।
    (চলবে)

    (৫)
    গ্রামের মানুষ সমালোচনা – নিন্দা এসবের সুযোগ পেলে করতে যেমন ভালবাসেন, তেমনি তাদের আর একটা গুণ (গুণ না বলে এদেরকে বেগুন বলতেই ইচ্ছে হচ্ছে) আছে। তা হল বেশ কিছু অভাবীর মাঝে যদি কেউ একজন বিত্তবান থাকে, সে ভালবাসে তার বিত্ত প্রদর্শন করতে।
    নিজ অভিজ্ঞতা থেকে জানাই; আমার এক নিকটাত্মীয়ের স্ত্রী, অর্থাৎ তিনিও সম্পর্কে আমার নিকটাত্মীয়াই (যদিও আত্মার সাথে মিল আমি আজ অব্দি খুঁজে পেলাম না) হবেন। যাই হোক, তাঁর স্বামীর সরকারি চাকরি ছিল (এটা অবশ্য উনার নিজের মত, কারণ আমি জানি তিনি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে চাকরি করতেন)। বছরে একটা ইনক্রিমেনট, আর ছয়মাস অন্তর একটা হিসাবে দুবার (বছরে) মহার্ঘ ভাতা বাড়ত। এই মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি যত না খবরের কাগজে প্রকাশ পেত তার থেকে বেশি আমাদের বাড়ির রকে; সৌজন্যেঃ আমার নিকটাত্মীয়া। আর পে কমিশন বসলে তো মনে হত উনি নিজেই সেই কমিশনের সদস্যা, পারলে কমিশন নিজের রিপোর্ট জমা দেবার আগেই উনি ইনটেরিম রিপোর্ট দিয়ে দিতে পারেন। যে সংসারে কেউ সরকারি চাকরির মুখ দেখেনি এবং সীমিত রোজগারে টেনেটুনে চলে সেখানে এই কথাগুলো ছড়ানো মানে অনেকটা বুভুক্ষুর সামনে ‘চেলো কাবাব’-এর গল্প করার সামিল।
    হঠাৎ সেই নিকটাত্মীয়া একদিন ঘোষণা করলেন, তাঁর স্বামীকে প্রধান অতিথি করে একটি কোম্পানি (তথাকথিত চিটফান্ড) গ্রামের বাজারে একটি অনুষ্ঠান করছে, বিশাল সমারোহ, বড় বড় নামীদামী গন্যিমান্যি ব্যক্তিরা সব আসবেন, গোটা খাসির আধখানা হবার সংখ্যা নাকি গুণে রাখতে খাতা–কলম লাগবে। তবে সত্যিই নাকি সেদিন এগুলো হয়েছিল। কোম্পানির ব্যবসা বাড়ল। তিনটে দুর্গাপূজায় তাদের প্যান্ডেলে ঠাকুর এল, আশপাশের ক্লাবগুলোতে ছেলেপুলের সংখ্যা বাড়ল। এর মাঝে একদিন আমার নিকটাত্মীয়া বলে গেলেন সাড়ে তিন লাখ ডবল হবে তিন বছরে (অনেকটা হরেক মাল সাড়ে ছ’টাকা টাইপের), একটা রেকারিং নাকি ফিরত পেয়েছে অনেক লাভ হয়েছে। তবে আর চার নম্বর পূজাটা হল না। শুনলাম কোম্পানি যে ঘরে ভাড়া নিয়ে কাজ করছিল সেখানে তালা দিয়েছে নিজেরাই। মানে পাখি হাওয়া। কিন্তু সেই আমার নিকটাত্মীয়ার নরম হবার চিহ্ন দেখলাম না। পরের দিন সদর্পে ঘোষণা করে গেলেন যে ঐ এলাকায় সব থেকে বেশি গেছে ওঁদেরই।
    কথাগুলো সব তো শুনলেন। ভাবছি শেষটায় যদি বলি ‘লে হালুয়া’ তাহলে অনেকটা প্রেডিকটেবেল হয়ে যাবে। তাই বলছি, ‘গুরু, দেখলে হবে খরচা আছে!’

    (সমাপ্ত)
    (এই লেখার সাথে সম্পর্কিত স্থানের কোনও নাম নেই, প্রত্যেকে নিজের আশপাশটা চিন্তা করুন; কাল অতীত আর বর্তমান বললে ভুল হবে কারণ এ জিনিস আবার ঘটবে, আর সব চরিত্র কাল্পনিক নয়।)
    কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ-
    ১. দৈনিক আনন্দবাজার
    ২. দৈনিক বর্তমান
    ৩. দৈনিক এই সময়
    ৪. মাসিক যোজনা পত্রিকা
    ৫.The Times Of India Newspaper (Daily)
    ৬. নিজস্ব গদাসম বুদ্ধি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ মে ২০১৪ | ২০৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Biplob Rahman | ***:*** | ১৪ মে ২০১৪ ০২:১৭72913
  • মন ভরেনি। আরো লিখুন প্লিজ
  • Avik Mukherjee | ***:*** | ১৫ মে ২০১৪ ০৩:১৪72914
  • অবশ্যই। নেক্সট অংশ দেব কিছুদিনের মধ্যেই।মন ভরেনি বলতে কি বললেন বিপ্লব দা? লেখার মান খারাপ নাকি আর একটু বেশি পরিমাণ আশা করলেন?
  • Avik Mukherjee | ***:*** | ১৮ মে ২০১৪ ০৪:২৯72915
  • লেখা দিলাম বিপ্লব দা দেখবেন।
  • Sudipta | ***:*** | ১৮ মে ২০১৪ ০৫:১৬72916
  • চিট ফান্ড টা সত্যি ই জানতাম না। ধন্যবাদ অভীক দা
  • Avik Mukherjee | ***:*** | ১৮ মে ২০১৪ ০৫:২১72917
  • এটা অনেকেই জানেনা। এমনকি খবরের কাগজও ভুল লেখে।
  • Sim San | ***:*** | ২৪ মে ২০১৪ ০৩:৫৮72918
  • দেখা যাক শেষ অবধি।
  • nina | ***:*** | ২৭ মে ২০১৪ ০৬:০৭72919
  • :-)))) সুস্বাদু হালুয়া---
  • Avik Mukherjee | ***:*** | ২৮ মে ২০১৪ ০৩:২০72920
  • নিনা পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। আশা করি ভুল ভাবনা থেকে খানিক আলোয় আনতে পারলাম অনেককে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন