এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • 'চুল'কানি

    Avik Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ মে ২০১৪ | ৬৮৯১ বার পঠিত
  • ‘চুল’কানি
    স্থানঃ রানাঘাট স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্ম।
    কালঃ রাজ্যে পঞ্চম তথা শেষ দফা ভোটের আগের দিনের সকাল।
    পাত্রঃ চিনতে হলে শেষ অবধি ধৈর্য ধরুন।
    পোলিং পার্টির বাসে রানাঘাট কোর্ট পাড়ায় নেমে ষ্টেশন অবধি আসতে আসতে পাক্কা ছ’ মিনিটের জন্য ফুলিয়ার ট্রেনটা যখন মিস করলাম তখন অশান্ত মনের হোমাগ্নিতে আরও খানিক হবি বিসর্জন হল। সকাল চারটেয় উঠে রেডি হয়ে বেরতে দাঁতে কুটোটি কাটার সুযোগ পাইনি। সামনের শেডে ভাজা কচুরি দেখে মনে অসম্ভব লোভ সৃষ্টি হলেও হাইজিনের দোহাই দিয়ে মনকে যেভাবে নিরস্ত করলাম, সেই সংযমের একটু দেখালেও বোধ হয় বিশ্বামিত্রের ঔরসে মেনকার গর্ভে শকুন্তলার জন্ম হত না। পিতৃপ্রদত্ত প্রাণের ক্ষুধার নিরসন করতে মাতৃপ্রদত্ত কেক ব্যাগ থেকে বের করব কি না করব এটা ভাবছি, হঠাৎ খানিক দূর থেকে কানে এল, ‘লাগান, লাগান। লাগালেই ভালো লাগবে। আজ অব্দি কেউ বলেনি লাগিয়ে খারাপ লাগে।’ তাকাতেই সামনে অন্তত জনা পঞ্চাশ লোকের বৃত্তাকার বেষ্টনী দেখলাম। এমনিতেই রানাঘাট ব্যস্ত ষ্টেশন। উৎসাহী জনতা কিছু একটা ঘিরে তামাশা দেখছে। কথাগুলো কর্ণগোচর হলেও ঘটনাটা ঘটছিল আমার অগোচরেই, তাই কতকটা মনোলগের আকারে তা তুলে ধরতে চেষ্টা করলাম।
    ‘শুধু বৌদিদের জন্যে বলব। কারণ বৌদিরাই লাগান বেশি। বৌদিদেরই তো লাগানোর সময়। থাকে সকলের, কিন্তু কচি খুকিরাও লাগাতে পারেনা, আবার পাঁড় বুড়িরাও লাগাতে চায় না। শুধু বৌদি বা হবু বৌদিদেরই বলব লাগান, নিজে লাগান এবং অন্যকে লাগাতে উৎসাহিত করুন। হবু বৌদিরা লাগানো অভ্যাস করুন, বিয়ের পরে খুব কাজে দেবে। অনেকে বলেন লুস হয়, ফস্কে যায়, ভিজে থাকলে পব্লেম হয়, আমি বলব লাগিয়ে দেখুন, লুসকে টাইট করা যায়, ফস্কে গেলে ধরা যায়, ভিজলেও অসুবিধা নেই। শুনুন বৌদিরা, লাগালে খারাপ লাগবে এটা কোনও বাপ কা বেটা বলতে পারবে? পোত্যেক বৌদি নিজের দাদাকে জিগেস করুন তো লাগিয়ে খারাপ লাগে নাকি! বাড়ির দাদা থেকে শুরু করে পাড়ার ছোকরা অব্দি সব্বাই একমত হবেই। বৌদিরা দাদাকে দিয়ে লাগান। আপনারা নিজে থেকে লাগাতে বললে দাদারা অবশ্যই খুশি হবেন। যদি দাদা না লাগাতে চান, ব্যস্ত থাকেন তাহলে বাড়িতে দেওর থাকলে তাকে লাগাতে বলুন। সাধারনত মেয়েতে মেয়েতে ভাব জমে না, তবে এখন অনেক বাড়িতেই ননদ- ভাজ এর সম্পর্ক বন্ধুর মতই, পারলে ননদকে দিয়ে লাগান। কেউ যদি না থাকে যদি ছোট ছেলে থাকে বাড়িতে তাকে দিয়েই লাগান। যদি সে নাগাল না পায় বসে লাগান। কাউকে না পেলে নিজে নিজেই লাগান। মনে রাখুন সাইজ আসল নয়, খাপে খাপে ঢোকানোই আসল ব্যাপার। বাইরে গেলে তো লাগাবেনই, বাড়ি থাকলেও লাগান। গরমে লাগিয়ে দেখুন আরাম পাবেন। কেউ শাড়ি পরে লাগান আবার কেউ নাইটি পরে লাগান। অনেকে তেল দেন তাই স্লিপ করে, তবে আমি বলব তাতেও অসুবিধে হবেনা। লাগানোর সময় কাজের মেয়ে রচনা থেকে দিদি নম্বর ওয়ান রচনা অব্দি সব্বাইকে এক মনে হবে। আপনার নাম মিতালি হোক বা চম্পাকলি লাগিয়ে তাক লাগান। অসুবিধে হলে দেখে লাগানোর জন্যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লাগান, দাঁড়িয়ে লাগাতে অসুবিধে হলে বসে লাগান, ঘুরতে ফিরতে লাগান, গোটা ঘর ঘুরে লাগান। যদি ওপর দিয়ে লাগান তাহলে মনে রাখুন ঘোরানোর সময় নিচে দিয়ে হবে, আর যদি নিচে দিয়ে লাগান তাহলে মনে রাখুন ঘোরানোর সময় ওপর দিয়ে হবে।যদি প্রথম প্রথম অসুবিধে হয় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাগান। কিন্তু মনে রাখুন সেই ফুলশয্যা থেকে শুরু করে হানিমুন বা গোটা জীবন লাগাতেই হবে। বৌদিরা আবদার করে যদি দাদাকে বলেন লাগাতে কোনও দাদা না লাগিয়ে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করিনা। দাদাকে পিছনে দাঁড়িয়ে লাগাতে বলুন সুবিধা হবে। এই যে বৌদি আপনার দাদা কোথায়? ও দাদা সঙ্গে নেই! ঠিক হ্যায় কই বাত নেহি, আমি আছি কি করতে? আমিই লাগিয়ে দেখাই, আরে ভয় পাচ্ছেন কেন? চুপটি করে দাঁড়ান দেখি!’
    আমার মনোলগ এখানেই শেষ করলাম, মানে করতে বাধ্য হলাম। কারণ বৌদি সশরীরে পটভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় আমিও অতি উৎসাহে ‘লাগানোর’ ব্যাপারটা দেখতে এগিয়ে গেলাম ভিড় ঠেলেই। তবে আমার ঐ অব্দি পৌঁছানোর আগেই অবিশ্যি বৌদিকে ‘লাগানো’ শুরু হয়ে গিয়েছে।
    ‘বৌদি লাগছে নাকি? ব্যথা লাগার কথা নয়, তবু পব্লেম হলেই বলবেন।’ সর্বসমক্ষে কি ঘটে চলেছে তা দেখতে গিয়ে আমার চোখের সামনে পর্বত মূষিক প্রসব করে বসল। দেখলাম ক্ষয়াটে চেহারার বছর চল্লিশের এক লোক, গায়ে নীল রঙের রং চটা টি-শার্ট, পরনে পুরানো জিন্স, পায়ের কাছে বড় ব্যাগ নামিয়ে রাখা। পাশে একটা আবক্ষ ম্যানিকুইন দাঁড় করানো আছে স্ট্যান্ডের ওপর, যার মাথার চুলে খোঁপা করা। আর ঐ নীল রঙের রং চটা টি-শার্ট এক পূর্ণ যৌবনবতী বৌদির পিছনে দাঁড়িয়ে তার চুলে একপ্রকার বিশেষ ক্লিপ বা কেশবন্ধনী দিয়ে নানা স্টাইলে খোঁপা বাঁধছেন, তার ডেমো দিচ্ছেন। ঐ ক্লিপ দিয়ে খোঁপা বাঁধাকেই উনি ‘লাগানো’ বলছিলেন। অদ্ভুত মার্কেটিং পলিসি। এম.বি.এ. পাস হনু’রাও পারবে কিনা সন্দেহ। অন্তত ছয়-সাত রকমের খোঁপা বাঁধা দেখিয়ে গোটা পাঁচেক বৌদি আর অন্তত গোটা দশেক দাদার অর্থভার দশ টাকা করে লাঘব করলেন। তার মধ্যে অন্তত পাঁচ জন দাদা বিকচ মানে চলতি বাংলায় টেকো। কানাকানি করে খবর এক থেকে একশ হয় জানি। ‘চুল’ নিয়ে এই যে কানাকানি হল বক্তা আর আমার মাঝে তাতে এর নাম ‘চুল’কানি দিলাম।
    হঠাৎ কানে এল আটটা আঠারোর শান্তিপুর লোকাল তিন নম্বর থেকে ছাড়বে, যা কেকটা বের করাই হলনা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ মে ২০১৪ | ৬৮৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • DODO | ***:*** | ১৪ জুন ২০১৪ ১০:৫৫72977
  • anticipation এর ভালো বাংলা জানি না ...তবে ভালো তৈরী হয়েছিল
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন