এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অনর্গল সেই আগল খুলে আজ যা যা দেখছি (২)

    উদয়ন ঘোষচৌধুরি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ১১২২ বার পঠিত
  • যে কোনও ‘সম্পর্ক’ গুঁড়ো করতে, সম্ভবত, দুটো জিনিস যথেষ্ট – বেরহম খিদে আর বেশুমার যৌনতা। খুনের মিথ্যে দায়ে জেলে যায় স্বামী আর মাঝবয়েসি স্ত্রী ফেঁসে যায় খুনি মালিকের শরীরী প্রেমে (থ্রি মাঙ্কিস, ২০০৮, নুরি বিলগে চিলান)। বেরোজগার শ্রমিক আফশোস করে বন্ধুর কাছে, যদি তার রোগা বউটা কারও কামনা কাড়তে পারত, হয়ত ক’টা রুটি জুটে যেত একবেলা পেট চালানোর (সিটি অফ গোল্ড, ২০১০, মহেশ মঞ্জরেকর)। প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকন্যার শরীরে সংযুক্ত হয় ডাক্তার, মায়ের সামনেই; পর্দায় তখনও খোলা-জন্মনালী মায়ের স্মিতমুখ; মানুষের যৌনকারখানায় উদ্ভাবিত ‘নিউবর্ন পর্ন’ (আ সার্বিয়ান ফিল্ম, ২০১০, স্রান স্পাসোজেভিক)। নারীহীন নিরুপায়তায় যেখানে পশুযোনি মেহন অলিখিত প্রথা; পাঁচ ভাই ভাগ করে একজন স্ত্রী, দেহভোগ-ভাগ খুঁজে নেয় বুভুক্ষু বাবাও (মাত্রুভূমি, ২০০৩, মনীশ ঝা)। একঘেয়েমি কাটিয়ে নতুন বাঁচার লোভে স্বামী একদিন নিশ্চুপে খুলে নেয় মৃত্যুমুখী স্ত্রীর অক্সিজেন মাস্ক (অনুব্রত, ভালো আছো?, ২০১৪, পার্থ সেন)। নারীমুগ্ধ সন্ন্যাসী সংসার বাঁধে, কাম তাকে নিয়ে যায় আর-এক নারীতে; মায়াঘূর্ণিতে সে হারিয়ে ফ্যালে পাপ-পুণ্য ভোগ-ত্যাগের ব্রতবৃত্ত (সামসারা, ২০০১, পান নালিন)। ম্যাসাজ পার্লারের দিনমজুর মেয়ে প্রায়ই হস্তমৈথুন করে দ্যায় ‘খদ্দের’ বাবাকে, হারিয়ে যাওয়া যে বাবাকে খুঁজতে সে নতুন শহরে এসেছে; বাবা জানে, এ মেয়ে তারই সন্তান (দ্যাট গার্ল ইন ইয়েলো বুটস, ২০১১, অনুরাগ কাশ্যপ)। যে সিনেমার কথায় হাফিংটন পোস্ট-এ কিয়া মাকারেচি লিখেছেন, “an unnervingly realistic portrait of unimaginable pain – (this film) is one with an ending you’ll wish you could forget.”। একটা ছেলের লোভে বাবা জন্ম দিয়ে চলে অগুন্তি মেয়ের, অথচ ঘরে পর্যাপ্ত খাবার জোটে না; জ্বলতে জ্বলতে এক মেয়ে বাবাকে খুন করে প্রশ্ন তোলে রাষ্ট্রের সামনে, ‘‘সির্ফ মারনা হি গুনাহ কিঁউ হ্যায়? পয়দা করনা কিঁউ নেহি?” (বোল, ২০১১, শোয়েব মনসুর)। রোজগার তাড়নায় ধুয়ে যায় প্রেমমুগ্ধ অ্যাডভেঞ্চার; স্বামী ও সদ্যজাত শিশু ফেলে চলে যায় মা (সামার উইথ মোনিকা, ১৯৫৩, ইঙ্গমার বার্গম্যান)। ধর্ষিতা স্ত্রীকে ভরসা পায় না যুবক; ভাবে, ধর্ষণে সে জেনেছে অন্যপুরুষের গভীরতর সুখ (পিঙ্কি, আই লাভ ইউ, ২০০৭, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য)। অদৃষ্টের টাইরানি (tyranny) যাবজ্জীবন কয়েদি বাবাকে বাধ্য করায় পঙ্গু মেয়ের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে, কারণ তাকে দেখভাল করার আর কেউ নেই (কাঞ্চিভরম, ২০০৮, প্রিয়দর্শন)। নিরপরাধ মানুষটি সাতাশ বছর পরে জেল থেকে বেরোয়, তদ্দিনে পরিবারের কাছে সে মৃত; এলোমেলো রাস্তায় জোটে যুবতী গণিকা, রাত কাটে নেশার্ত সঙ্গমে; সকালে জানা যায়, ওই গণিকা তার স্ত্রীরই ধর্ষণজাত ফসল, হতে পারত লোকটির নিজেরই সন্তান (ইরানি-কুর্দ কবি সাদেঘ কামাঙ্গারকে নিয়ে তৈরি রাইনো সিজন, ২০১২, বাহমান ঘোবাদি)। দারিদ্র্য চাপতে চাপতে বোন বেশ্যা হয়ে যায় আর ‘খদ্দের’ হয়ে ঢুকে পড়ে মাতাল ভাই (সুবর্ণরেখা, ১৯৬৫, ঋত্বিক ঘটক)। এরকম কাহিনির জন্যে, ভারতীয় মূল্যায়নে, যথারীতি প্রশ্নের মুখে পরিচালক। বেশ্যাটি কেন নায়কেরই ‘বোন’ হবে? শোনা যায়, ঋত্বিক বলেছিলেন, যে কোনও বেশ্যাই সম্পর্কে কারুর-না-কারুর বোন, তাহলে সে নায়কের কেন নয়? এ উত্তরে আমাদের যাবতীয় নেকুপুসুমুনু-যাপন এক থাপ্পড়ে জিজ্ঞাসাচিহ্ন হয়ে যায়। বেশি তাইরেনাইরে না করে ভাবা যাক আমাকে যখন শেখানো হয় যে, আমি যেন কখনও বোনের সঙ্গে যৌনতায় না যাই, তখন আসলে কি ‘বোন’-বিষয়ক যৌনপেরেকটাই মগজে পুঁতে দেওয়া হয় না? মানে, আমি সবসময় সতর্ক থাকব (এবং বোনও থাকবে) যাতে দুজনে দৈহিক গাঢ়ত্বে না এগোই। তাহলে, এ-ও তো একরকম যৌনতা; তবে, নঞার্থক – এটুকুই। কখনও কখনও সম্পর্কের আন্তরিককাঁচ আমাদের ‘জন্তু’ বানায়। বাবা-মা সন্তানদের গড়ে তোলে বিধিনিষেধের একবগ্গা ঘেরাটোপে, এমনকি পাঁচিলের ওপাশের পৃথিবী চিনতে না দিয়ে; ছেলে বড় হয়, যৌনচাহিদা আসে; মা সিদ্ধান্ত দ্যায়, দুই বোনের একজনকে বেছে নিতে বিছানায় (ডগটুথ, ২০০৯, ইয়রগস লানথিমস)। নিঃসঙ্গ যুবতী বিধবা স্মৃতিভ্রষ্ট শ্বশুরের কাছে চার হাত-পায়ে সেজে ওঠে উলঙ্গ গরু, যাতে ওই বৃদ্ধ বুঝতে না পারে পুত্রের মতো অসময়ে মারা গেছে তার প্রিয় পশুটিও (আ লোনলি কাউ উইপস অ্যাট ডন, ২০০৩, দাইসুকে গোতো)।

    সাংঘাতিক কোনও গবেষণা না করলেও বোঝা যায়, যৌনপ্রেক্ষিতই মানুষের সামাজিক পরিচয়, সম্পর্ক, ও কৌলীন্যের মূল দাঁড়িপাল্লা; আজও। অর্থ, ক্ষমতা, শিক্ষা – সমস্ত এর পরে। মারিও পাজো যেভাবে তৈরি করেছিলেন ভিটো ও মাইকেল করলিওনেকে; যাদের একমাত্র চূড়ান্ত ভাবাবেগ ‘পরিবার ও সন্তানই শক্তির মূল’ (দ্য গডফাদার, উপন্যাস / চিত্রনাট্য) – সন্দেহ হয়, তারাও কি নিতে পারত যদি সন্তানের যৌনটান সংখ্যাগুরুমতে ‘স্বাভাবিক’ না হত? হ্যাঁ, সমকামিতা। মৃত ছেলের জিনিসপত্র নিতে এসে মা যখন শোনে ছেলের ‘এম্মাছিঃছিঃ’-কথা, মানতে নারাজ হয় মা; কনডোমের প্যাকেট পেয়ে আহ্লাদিত হয়; ছেলের সহকর্মিনীকে বোঝায় কনডোমই বিসমকামিতার অকাট্য প্রমাণ – বিজ্ঞান বোঝে, সে যুক্তি একপেশে উদ্ভট (মেমোরিজ ইন মার্চ, ২০১০, সঞ্জয় নাগ)। ‘ছিনিমায় ওরোম দ্যাকায়, এরোম আবার হয় নাকি!’ ভাবলে কিছু ঘটনার কথা হোক। মা ও তার উভকামী প্রেমিকের নগ্ন-আশ্লেষে সঙ্গী হয় সমকামী ছেলে; নারীদেহে ছেলের মন নেই জেনে একদিন মা স্বয়ং বিপরীতারুঢ় ছেলের শৃঙ্গারে, যাকে বলে ‘কারেকটিভ রেপ’ (স্যাভেজ গ্রেস, ২০০৭, টম কালিন)। হ্যাঁ, বারবারা দ্যালি বেকল্যান্ড-এর (১৯২২-৭২) জীবন। দুই সমকামী কিশোরী – একজনের অতিশাসুনে মা, অন্যজনের বাবা-মা ভাঙনমুখী; নিজেদের বিচ্ছেদ এড়াতে ষড়যন্ত্র, মাথা থেঁৎলে মারে প্রথমজনের মাকে (হিভেনলি ক্রিয়েচারস, ১৯৯৪, পিটার জ্যাকসন)। হ্যাঁ, ১৯৫৪-র পার্কার-হিউম মার্ডার কেস। নিশ্চিত মৃত্যু বা যাবজ্জীবন কয়েদের মুখে লোকটা শেষ-আর্জি জানায়, যেন জুটে যায় তার লিঙ্গান্তরকামী প্রেমিকের অপারেশন-খরচ (ডগ ডে আফটারনুন, ১৯৭৫, সিডনি লুমেৎ)। হ্যাঁ, ১৯৭২-এর ব্রুকলিন ব্যাঙ্ক-ডাকাতির চরিত্র। ‘দুচ্ছাই যত্ত পশ্চিমে রোগ! আমাগো ঐতিহ্যে? তওবা তওবা!’ তাই-ই? গোয়া-মহারাষ্ট্রের ডোমিনিক ডি’সুজা, যাকে জলজ্যান্ত বাঁচতে দিইনি আমরা, সমাজে ও শাসনে নগ্ন দেগেছি; এইডস হয়েছে বলে এলাকা, অফিস, এমনকি পারিবারিক বয়কটের শিকার; বাবা-মা রাতারাতি বদলায় শহর, একঘরে হয়ে যায় সে (মাই ব্রাদার... নিখিল, ২০০৫, অনির; দ্য লস্ট ফ্লেমিংগোস অফ বম্বে, উপন্যাস, সিদ্ধার্থ ধনবন্ত সাংভি)।

    (ক্রমশ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ১১২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sosen | ***:*** | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:০৬57507
  • তারপর?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন