এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • ধ্যান ও  স্নায়ুবিজ্ঞান 

    অরিন লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ১২ জুন ২০২৪ | ৬৫০৯ বার পঠিত | রেটিং ৩.৮ (৪ জন)
  • | |

     
    গোড়ার কথা: কি, কেন, ইত্যাদি 
     
    এই প্রবন্ধটির আলোচনার বিষয় ধ্যান এবং স্নায়ুবিজ্ঞানএর পারস্পরিক সম্পর্ক, বা বলা যেতে পারে স্নায়ুবিজ্ঞান এর "চোখ" দিয়ে ধ্যানের মতো একটি বিষয়কে বোঝার চেষ্টা করা। আজ অবধি এই বিষয়ে মোটামুটি যা যা জানা হয়েছে ও জানা হচ্ছে তার একটি অতি সংক্ষিপ্ত, হয়তো কিছুটা লঘু ধরণের অবতরণিকা পেশ করা। এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে হঠাৎ করে এইরকম একটি বিষয় নিয়ে, বিশেষ করে ধ্যান ও স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে দু চার কথা পাড়তে গেলে যা হয়, আপনারা যারা পাঠক আপনাদের কারো কারো মনে হতে পারে যে কোথায় কি নিয়ে গপ্পো? মানে কোথায় ধ্যানের মতো গুরুগম্ভীর ধর্মীয় বিষয়, রীতিমতন সাধারণ ভাবে যার সঙ্গে নানারকমের ধর্ম কর্মের যোগ প্রবল, আর কোথায় নিউরোসায়েন্স, অতি জটিল বিজ্ঞান, বিশেষত মস্তিষ্কের জটিল অন্তর্জগতের হদিস দেওয়া যার কাজ - এই দুটো বিপ্রতীপ বিষয় কি তেল আর জল মেশানোর মতো অসম্ভব ব্যাপার নয়? এখানে আমার উত্তর "না নয় :-) ",  কিন্তু কেন নয়, ক্রমশ প্রকাশ্য । 
     
    এ নিয়ে সন্দেহ নেই যে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুবিজ্ঞান অতি জটিল বিষয়, এবং অনেকেই হয়তো ভাবেন যে যাদের ও বিষয়ে ব্যুৎপত্তি নেই, তাদের পক্ষে ও বিষয় না যায় বোঝা, না যায় বোঝানো । তার থেকে অপেক্ষাকৃত ভাবে ধ্যান ব্যাপারটি আপাতভাবে আরেকটু সোজাসাপ্টা ও হাতেকলমে করে দেখা যেতে পারে। এইটা আমার মনে হয়, তাই এই লেখাটিতে প্রথমে ধ্যান ব্যাপারটিকে নিয়ে চর্চা করা যাক। তারপর পর্যায়ক্রমে ধ্যানের সঙ্গে নানান রকমের ব্যবহারিক প্রয়োগ, এই করে আমরা স্নায়ু, মস্তিষ্ক, সেখান থেকে নির্গত সংবেদনাকে ধরার জন্য ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাফি (EEG), মস্তিষ্কের অভ্যন্তর দেখার জন্য MRI ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে, কারণ ধ্যান, এবং মনোবিজ্ঞান এবং স্নায়ুবিজ্ঞান ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ের অবতারণা করতে গেলে এই বিষয়সমূহ আসবেই ।
     
    লেখাটার গোড়ায় এখানে একটা কৈফিয়ত দেবার ব্যাপার আছে। সেটা এই যে আমাদের এই আলোচনা কিন্তু ধ্যানের ধর্মীয় দিকগুলো নিয়ে আমরা করব না, আমরা বরং বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখার চেষ্টা করব। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে ধ্যানের ধর্মীয় ব্যাপারটি কম গুরুত্বপূর্ণ, বরং উল্টোটা। ধ্যানের অবশ্যই একটি ধর্মীয় দিক রয়েছে, এবং সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এবং সে দিকটি বিভিন্ন ধর্মের ধ্যানের চর্চায় দেখা যায়। উপনিষদিক ব্রাহ্মণ্যাধৰ্মে যেমন হঠযোগ (বিশেষ করে প্রাণায়াম প্রক্রিয়া ইত্যাদিতে) এবং রাজযোগে ধ্যানের অপরিসীম গুরুত্ব, তেমনি বৌদ্ধধর্মে অনপনসতী (শ্বাস প্রশ্বাস এর দিকে নজর রেখে ধ্যান), বা কায়াগত সতী (শরীরের বিভিন্ন অংশে নজর রেখে ধ্যান) বা বিপাসনা (আসলে বলা উচিত বিপস্যনা), তেমনি আবার খ্রীষ্ট ধর্মেও সুপ্রাচীন কাল থেকে ধ্যানের তাৎপর্য রয়েছে (মরু যাজকদের সূত্রে, desert fathers , দেখুন, https://www.contemplativeoutreach.org/the-christian-contemplative-tradition/ ), তেমনি ইসলাম ধর্মেও ধ্যানের  ভূমিকা রয়েছে।  সেইসব জটিল পারমার্থিক বিষয়ের মধ্যে না গিয়ে আমরা আপাতত ধ্যান কি সেই দিকটায় প্রাথমিক মনোনিবেশ করি, কারণ ধ্যান কি ও কত রকমের । এছাড়াও ধ্যান বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যে কতরকমের অদ্ভুত ধারণা আমাদের সমাজে আছে, সে সমস্ত নিয়ে দু একটি কথা আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে নয়। এখানে আরেকবার লিখে রাখা যাক যে  ধ্যান মানেই ধর্ম-কর্মের ব্যাপার নয়, এই ব্যাপারটা স্পষ্ট করে না লিখলে এ আলোচনা এগোনো যাবে না। 
     
    ধ্যান বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা 

    এক কথায় ধ্যান কথার সঙ্গে  মনোনিবেশ বা মনঃসংযোগ ব্যাপারটির একটি যোগাযোগ রয়েছে, যদিও সচরাচর বাংলা ভাষায় ধ্যান কথাটি বললে সেই ব্যাপারটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে না । সে তুলনায় হিন্দি ভাষায় যদি "মন দিন" বলতে হয়, বলা হয় "কৃপয়া ধ্যান দিজিয়ে"। আমরা বাংলা ভাষায় ধ্যান বলতে অনেকটা এইরকম একটা ছবির কথা ভাবি সাধারণত :
     

    (জনৈকা ধ্যানরতা)
     
    ছবিটা "মন দিয়ে" দেখুন । ছবিতে যে মানুষটিকে দেখা যাচ্ছে তাঁর চোখদুটি বন্ধ, দুই হাত দুই হাঁটুতে রেখে, তিনি  বসে আছেন। ধ্যানরত লিখলাম বটে, তিনি কি প্রকৃত পক্ষে ধ্যান করছেন? অস্যার্থ , কারোর এই রকম ছবি দেখে কি বোঝা যায় যে  তিনি সত্যি সত্যি ধ্যান করছেন? সেটা আমরা জানছি কি করে? ধ্যান ব্যাপারটা কি শুধুই হাতের মুদ্রা আর বিশেষ রকম পিঠ টান টান  করে বসে থাকার ব্যাপার? ইনি  ধ্যান আদৌ করছেন কিনা আমরা কিন্তু জানি না, কাজেই যে কেউ তাঁর ধ্যানস্থ অবস্থায় বসে থাকার নানাবিধ ছবি দেখাতে  পারেন (আজকাল বৈদ্যুতিক সামাজিক মাধ্যমের যুগে অনেকেই সেই ধরণের ছবি পেশ করে থাকেন), তা থেকে কিন্তু প্রমাণিত হয় না যে তিনি অভিনয় করছেন, না সত্যিকারের ধ্যান করছেন । আপাত ছবি দেখে যদি সত্যিকারের ধ্যানের কথা ভাবা যায়, তাহলে ভুল হবে । একথা লিখছি কেন?  একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করি । 
     
    চুপটি করে বসে থাকো, কিছু কোরো না
    যেমন ধরুন, ছোট বয়েসে  "চুপটি  করে বসে থাকো, কিচ্ছু করো না" এই কথাটা আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি । কিন্তু এই ব্যাপারটাই, যে কোন কাজ কর্ম না করে চুপ করে বসে থাকার ব্যাপারটি প্রাপ্ত বয়েসে কেমন হয়?   মনে করুন আপনি স্থির হয়ে বসে থাকা মনস্থ করলেন। আরো মনে করুন আপনি স্থির করলেন প্রায় ২০-২৫ মিনিট মতন ঐরকম এক ঠায় একটি চেয়ারে বা আসনে বসে থাকবেন। কাজ কর্ম কিছু করবেন না, শুধু এক জায়গায় চোখ বুজে চুপ করে বসে থাকবেন। প্রথমত ঐরকম করে বসে থাকা, নেহাত সহজ নয়, বা করলেও যেটি অবধারিত ভাবে হবে, মনে নানান রকমের চিন্তা ভিড় করে আসতে থাকবে, মন যেন জংলী বাঁদরের  মতন, এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে বেড়ায় (বৌদ্ধ ধর্মে এই মনের অবস্থাকে বলে "কপিচিত্ত ", আমরা আপাতত ধর্মকর্ম জাতীয় আলোচনা না করা মনস্থ করেছি, অতএব এ নিয়ে কথা বাড়াবো না)। এখন "কপিচিত্ত " দশা প্রাপ্ত হলে যা হয়, মনে নানান রকমের চিন্তা ভিড় করে আসে, এক চিন্তা অন্য চিন্তায় মিশে যায় বিস্তর দিবাস্বপ্ন দেখা হয়। বাইরে থেকে আপনাকে দেখলে মনে হবে আপনি বুঝি গভীর ধ্যানে নিমগ্ন, আসলে তা তো নয়। এবং এই ব্যাপারটি ধ্যানও নয় কারণ ধ্যানের অন্যতম শর্ত  মনোনিবেশ করা, সেটি না হলে ধ্যান বলা যাবে না।
     
    এবার আমরা আরেকবার বিষয়টিকে বিবেচনা করে দেখি । এইবার, আবার, বসে থাকার একই ব্যাপার, কিন্তু আগের থেকে এবারের তফাৎ, এবার চোখ বন্ধ করে ও সুখাসনে উপবেশিত হয়ে আপনি "মনোনিবেশ" করবেন, মনকে একেবারে লাগামহীন অবস্থায় ছেড়ে দেবেন না । অতএব আবার সেই  ব্যাপার, একই রকমের বসার ভঙ্গি, এবারও ২০ মিনিট ঘড়ি ধরে একটি নরম গদিতে ধরুন আসন পিঁড়ি হয়ে বসলেন, বা একটি চেয়ারে বসলেন । চোখ বন্ধ করলেন, এবং , এইবার স্থির করলেন যে "মনোনিবেশ" করবেন, মনকে লাগামহীন ঘুরতে দেবেন না । এই অবধি তো হল, এখন মনোনিবেশ করবেন কিসে? 
     
    সব ধ্যান একরকম নয় (যে ধরণের ধ্যানের কথা আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করছি না )
     

    এইখানে দুটি কথা বলার আছে। প্রথমত, মনে করুন মনোনিবেশ করবেন কোনো একটি রূপকল্পনায়, কোনো একটি  শব্দে, বা কোন একটি  মন্ত্রে ।  মহাঋষি মহেশ যোগী বলতেন শব্দের ওপর "ধ্যান দিতে", যাকে এখন বলা হয় transcendental meditation । এই ধরণের ধ্যান করার সময় অন্য কোন কিছুকে মনে স্থান দেওয়া যাবে না । অনেকে তাই এই ধরণের ধ্যান কে চিন্তাশূণ্য ধ্যান বলেন । এই জাতীয় ধ্যান বা মনোনিবেশ আমাদের এই আলোচনার বিষয় নয়, অন্য কোনো সময় একে নিয়ে চর্চা করা যাবে। দ্বিতীয়ত, আমরা যে ধরণের ধ্যান নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করতে চাই তাকে "মুক্ত ধ্যান" (open awareness meditation) বলা যেতে পারে। সে কিরকম ধ্যান? আসছি সে কথায় ।
     
    আমাদের আলোচ্য ধ্যান: মনোনিবেশিত ধ্যান বা Mindfulness Meditation
     
    আগের বারের মতন এবারেও আপনি মনে করুন ২০-২৫ মিনিট সময় নিয়ে ঘড়ি ধরে ধ্যান করতে শুরু করেছেন। এইবার আপনি "মন" দেবেন আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি, আপনার নাসারন্ধ্রে শ্বাস নেবার সময় হাওয়া প্রবেশ করছে, শ্বাস নির্গত হচ্ছে ওই পথে, আপনি তার প্রতি মনোনিবেশ করবেন । এবার দেখবেন কিছু পরে পূর্ববর্ণিত কপিচিত্তের কার্যকলাপ শুরু হবে, আপনার মনে নানান রকমের চিন্তাভাবনা আসতে থাকবে। এক্ষেত্রে আপনি সেইসব চিন্তাসমূহ দূরে কোথাও সরিয়ে রাখবেন না, বরং নিজেকে বলুন যে "আমি আর আমার মন আমার চিন্তা এক নয়, অতএব সবিশেষ কৌতূহল নিয়ে তাদের দেখি", এই বলে  নিজের শরীর থেকে মন সরিয়ে নিয়ে কৌতূহল সহকারে এই যে নানান ধরণের চিন্তা মনে আসছে, তাদের দেখতে থাকুন ।  এই ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়, এই কাজটি করতে আপনার সময় লাগবে, ধৈর্য্য লাগবে । আপনার ভাবনাচিন্তা এমন ভাবে  "দেখতে" থাকুন, যেন গ্যালারিতে বসে খেলা বা নাটক দেখছেন । চিন্তার উদয় হওয়া মাত্রই, তাদের একটি নাম দিন, এবং তারপর আবার পুনরায় আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি  মনোনিবেশ করুন। যেমন ধরুন, ধ্যান শুরু করেছেন, শ্বাস প্রশ্বাস এর দিকে নজর রাখতে শুরু করেছেন, এমন সময় মনে একটি চিন্তা উদিত হল  যে অমুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, এখন অবধি করা হয়ে ওঠেনি । সে চিন্তা ভারী প্রবল হয়ে মনে উপস্থিত হল । এখন আপনি ধ্যান করা ছেড়ে উঠে গিয়ে অমুকবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, কিন্তু তা না করে, এই চিন্তাটির যে উদয় হয়েছে, তার প্রতি কৌতূহল প্রকাশ করে মনে মনে নিঃশব্দে নিজেকে বলতে লাগলেন "যোগাযোগ", "যোগাযোগ", এবং একাগ্র মনে আবার শ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি নজর ফিরিয়ে আনলেন । এই ধরণের যে ধ্যান, যেখানে মনোসংযোগ করা হচ্ছে ঠিকই, তবে অন্যান্য ধারণাকে দেখে, তাদের অগ্রাহ্য করা হচ্ছে না, এই ধরণের ধ্যান নিয়ে আমাদের আলোচনা (এর ইংরেজি পরিভাষায় "open awareness meditation" বলা হয়, আমরা বাংলা করে বলতে পারি "মুক্ত চেতনার ধ্যান" ।
     
    আকাশ ও মেঘ 
     
    এবার এখানে একটা ব্যাপার নজর করুন । এই যে পদ্ধতিতে ধ্যানের কথা বলা হচ্ছে, এই যে শ্বাসের প্রতি মন নিবিষ্ট রেখে অন্যান্য যে সমস্ত চিন্তা ভাবনা মনে আসছে তাকে চিহ্নিত করতে থাকছেন, তাতে করে কিন্তু মন থেকে চিন্তা "দূর" করার কোন  ব্যাপার নেই,  মনকে "চিন্তাশূণ্য" করার কোন প্রয়োজন নেই। ক্রমাগত যদি চিন্তা ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের উদয় এবং অস্ত যাওয়া লক্ষ করতে থাকেন , তাহলে একটা ব্যাপার অচিরে বুঝতে পারবেন।  প্রতিবার এই যে চিন্তাভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করতে থাকবেন, এরা একবার করে উদিত হবে, তারপর আবার মিলিয়ে যাবে। ধ্যানের বিভিন্ন ঘরানায় (বিশেষত বিভিন্ন ধর্মে), এর একটা উপমা দেওয়া হয়, এ যেন অনেকটা নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনার মতন ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের পূজা ও প্রার্থনা পর্যায়ের "মাঝে মাঝে তবে দেখা পাই" গানের কথা স্মরণ করলে দেখবেন কবি লিখেছিলেন, "কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না", এও তাই । আপনার হৃদয় একটি আকাশের মতন, সেখানে নানান চিন্তা ভাবনা মেঘের মতন আসে, কিছু সময় যেন ভেসে বেড়ায়, তারপর মিলিয়ে যায় । আপনার মন আকাশ, আর চিন্তা ভাবনা, ধারণাসমূহ মেঘের মতন ভেসে বেড়ায় ।  উপনিষদেও "চিদাকাশ" কথাটির ঐরকম একটি  ধারণা পাওয়া যায় । এই রকম করে, আপনি যতক্ষণ অবধি  ধ্যান করবেন, আপনার মনে একেকবার একেকটি চিন্তা আসতে থাকবে, আপনি তাদের চিহ্নিত করবেন, তারপর আবার ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে মন নিবদ্ধ করতে থাকবেন । কালক্রমে ক্রমশ এলোমেলো চিন্তা ভাবনার মনে আসা যাওয়া কমে আসবে, মন পুরোপুরি শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি নিবদ্ধ হবে। আমি যেভাবে লিখলাম, কথাটা লেখা সহজ, কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটি অমন সহজ নয় । বেশ কয়েকদিন নিয়ম করে ধ্যান করতে থাকলে তখন দেখবেন এই ব্যাপারটি হয়তো কিছুটা সম্ভব হবে, তবে সে হতে দীর্ঘ সময় ধরে আপনাকে প্রায় প্রতিদিন কিছুটা সময় ধ্যানে ব্যয় করতে হবে ।

    তার পর লক্ষ  করবেন, মন হয়তো কিছুক্ষন এর জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসে নিবেশিত হয়েছে । তারপর, শরীরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানান রকমের ব্যাথা বেদনা  সংবেদনা এসে উপস্থিত হবে। আপনি এই অবস্থায় ধ্যান করার অভ্যাসে রণে ভঙ্গ দিতে পারেন, আবার  নাও পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো ক্ষণকালের জন্যে আপনার  মনকে শরীরের থেকে "আলাদা" করে নিয়ে ভাবতে শেখাতে হবে যে, এই সাময়িক শারীরিক সংবেদনা নেহাতই শারীরিক ব্যাপার, একে আপাতভাবে শরীরের "হাতেই" ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে । তবে এখানে একটা কথা মনে রাখবেন  বলে সব রকমের শারীরিক সংবেদন উপেক্ষা করার বিষয় নয়, কোনটা করার আর কোনটা নয় ধরে নেওয়া যেতে পারে সে বোধ আপনার রয়েছে । বেশ কিছুক্ষন যদি এইভাবে স্থির থাকেন, তখন দেখবেন ঠিক যেমন প্রাথমিক উড়ো চিন্তাভাবনা গুলো প্রথমে জড়ো হয়ে তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল (অবিশ্যি মিলিয়ে আর গেলো কোথায়, মনের গভীরে কোথাও সে রয়ে গেলো, শুধু আপনাকে আপনার ধ্যান থেকে সরিয়ে দিতে পারল না), এই শারীরিক ব্যাপারগুলো সেইরকম, উদিত হবে, কিছুক্ষন জ্বালাতন করবে, তারপর অস্তমিত হবে। তারপর আবার যখন আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে মনোনিবেশ করেছেন, তখন আবার অন্য রকমের কিছু মানসিক চিন্তা ভাবনার উদয় এবং অস্ত হতে থাকবে। এরকম চলতেই থাকবে। ব্যাপারটি অনেকটা এইরকম,
     

     
    এখন, এই যে ধরুন মনের মধ্যে একেকটি ভাব চক্রাকারে চলতে থাকছে এবং একে যদি আপনি নিয়ম করে প্রতিনিয়ত ধ্যান করে যেতে থাকেন, বিশেষ করে এই যে নানান রকমের ভাব উদিত হচ্ছে, তা থেকে আপনি নিজেকে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হন, কোনো রকম আলাদা করে ভালো মন্দর বিচারবোধ দিয়ে তাকে না দেখেন, এই ব্যাপারটিই  মনোনিবেশিত ধ্যান যাকে ইংরেজি পরিভাষায় mindfulness meditation বলা হয় । একে যদি  আপনি মাস দুয়েক নিয়ম করে চালিয়ে যেতে সক্ষম হন, আপনি  "নিজের মধ্যে" দুটি ব্যাপার লক্ষ  করবেন :
     এক, আপনার শারীরিক, মানসিক বা চেতনায় যে সমস্ত সংবেদন আসবে, তার কোনটির প্রতি কতটা মনোসংযোগ করবেন, আপনি স্বয়ং তার নিয়ন্ত্রক, অর্থাৎ, ক্রমাগত আস্তে থাকা অনুভূতি গুলো আপনাকে আপনার একাগ্রতা থেকে সরাতে সক্ষম হবে না ।
    দুই, এই যে আপনার বিভিন্ন রকমের অনুভূতি, সে যা হোক, ব্যাথা,  বেদনা,মানসিক উদ্বেগ, বিষন্নতা, প্রতিটির প্রতি আপনার এক ধরণের ঔৎসুক্য বলুন, কৌতূহল বলুন, এমন একটা সম্পর্ক স্থাপিত হবে, যেন আপনি আর তারা আলাদা, আপনি ও আপনার অনুভূতি, আপনার মন এক নয়, ব্যাপারটির  উপলব্ধি হবে  । বিশেষ করে, যত দিন যাবে, তত ক্রমশ নিজের মধ্যে নজর করবেন মনের মধ্যে এক ধরণের পরিবর্তন আসছে  যে আপনি যা ছিলেন, তার তুলনায় আরো অনেক নিস্পৃহ ও শান্ত হয়ে পড়ছেন । আপনাকে বাইরে থেকে দেখলে হয়তো কেউ বুঝতে পারবে না, সে পরিবর্তন অন্তরের পরিবর্তন । আপনার উদ্বেগ, রাগ, একই  কথার চর্বিতচর্বন, এই ধরণের চিন্তা ভাবনা গুলো ক্রমশ কমতে থাকবে  ।  সে ধরণের পরিবর্তন হয়তো আপনি নিয়মিত ধ্যান না করলে হত  না, আর আপনি যদি ধরুন কয়েক সপ্তাহ ধ্যান করা বন্ধ করে দেন, আপনি আবার আপনার পুরোনো অবস্থায় ফিরে যাবেন ।  এই ব্যাপার গুলো থেকে মনে হতে পারে আপনার অন্তরের যে পরিবর্তন তাতে ধ্যানের একটা প্রভাব রয়েছে ।
     
    স্নায়ুবিজ্ঞানের কথাটা আসছে  কেন?
     
    এই  ব্যাপারগুলো যেহেতু সাধারণ মানুষের মধ্যে লক্ষ করা যায়, স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে যে কি কারণে এমন হচ্ছে? তাহলে কি ধ্যান ব্যাপারটি কোন ভাবে আমাদের চেতনায় একটা পরিবর্তন আনছে? তাই যদি হয়, তাহলে তাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? যেহেতু মস্তিষ্ক এবং চেতনার কথা উঠছে, তাই স্নায়ু এবং সেই সূত্রে স্নায়ুবিজ্ঞানের বিষয়টিও আসছে । সেই সূত্রে যে প্রশ্নগুলো অবধারিত ভাবে আসবে, ধ্যান যদি/হয়ত "কাজ" করে, কিন্ত তার কারণ কি? এখন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন অনেকবার হয়েছে যে প্রামাণ্য তথ্য মিলেছে, কিন্তু তার মূল কারণ কি জানতে বহু সময় পেরিয়েছে । হাতের কাছে চটজলদি  উদাহরণ  ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক জন স্নো সাহেবের লন্ডনে  কলেরা মহামারীর প্রতিকার । যখন তিনি প্রতিকার করেছিলেন, তখন কলেরার জীবাণু কি তাই নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না,  কলেরার জীবাণু  আবিষ্কার করবেন  ১৮৮৩ তে রবার্ট কখ (তার সঙ্গে অবশ্য কলকাতার একটি যোগাযোগ আছে, এখানে সে সব আলোচনার অবকাশ নেই) । এইরকম আরেকটি আবিষ্কার, অষ্টাদশ শতাব্দীতে, ১৭৪৭ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক জেমস লিন্ড স্কার্ভি অসুখের চিকিৎসা করার জন্য এর নাবিকদের লেবু খাবার পরামর্শ দেওয়া ১৯৩৩ সালে চার্লস কিং এর  ভিটামিন সি  আবিষ্কার করবেন । অতএব চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস ঘাঁটলে  এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে যেখানে ডাক্তাররা কিছু একটা লক্ষ করছেন, রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন, পুরো ছবিটা তৎক্ষণাৎ  জানা যায় না, পরে জানা যাবে ।  এই ধরণের ব্যাপারগুলো কেন্দ্র করে আজকের দিনের  evidence based medicine গড়ে উঠেছে, কাজেই আজকে ধ্যান কেন কাজ করে, তার একেবারে ঠিক মূল্যায়ন যদি আমরা নাও জানি, কাল যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে না, কেউ বলতে পারেন না ।  সে সব পরের কথা, আপাতত যে বিষয়টি নিয়ে শুরু করেছিলাম,তার উত্তর খোঁজা যাক,যে, এই যে মনোনিবেশিত ধ্যান  (mindfulness meditation ) এর কথা আলোচনা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে মনোবিজ্ঞান,  সাইকিয়াট্রি, চিকিৎসা, এমনকি স্নায়ুবিজ্ঞান কে জড়ানোর কারণটি কি? এই ধরণের ব্যাপারগুলো কারা শুরু করেছিলেন এবং কোথা  থেকে শুরু হয়েছিল? 
     
    অন্তত বাংলায় বা বাঙালির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশ্নগুলো অবান্তর নয় । কারণ ধ্যান ব্যাপারটা আমরা যতদূর বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ বুঝি তাতে সাধু বা ধরুন, সাধু সন্তদের ভেক ধরে  যারা ধর্মের বা ধর্মের "ব্যবসার" সঙ্গে জড়িত, এই সমস্ত লোকজন লোক দেখানো ধ্যান ইত্যাদি করে থাকেন । দুঃখের বিষয়, এদের সবাই যে সৎ , এমন বলা যাবে না, অনেকেই নানারকম অলৌকিক ব্যাপার স্যাপার নিয়ে মানুষকে হতচকিত করে ঠকিয়ে দেবার চেষ্টা করেন, শুধু তাই নয়, যুক্তির বদলে, তর্কের বদলে, এরা  চান মানুষ এদের বিশ্বাস করুন, যার জন্য এমনিতেই যুক্তিবাদী লোক এদের ব্যাপারে বিরক্ত , বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না । আরো একটা ব্যাপার রয়েছে । মনে করুন  যদি ধ্যান ব্যাপারটায় মানুষের সত্যি সত্যি মানসিক পরিবর্তন হয়ও, যারা ধর্মের ব্যবসায়ী, তারা ব্যাপারটাকে "ধর্মীয় কীর্তি"  বলে চালিয়ে দেবেন, সে পরিবর্তনের পশ্চাৎপটে নিয়মিত  ধ্যান করার একটা "মনস্তাত্বিক" ব্যাপার আছে, সেই প্রসেস  বা সেই প্রচেষ্টাকে সেভাবে এরা গুরুত্ব দেবেন না । এই সমস্ত নানান কারণে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যে হঠাৎ মনোবিদ, স্নায়ু বৈজ্ঞানিক, ডাক্তার, যারা পেশাগত ভাবে বিজ্ঞান চর্চা করেন, এরা  এইসব নিয়ে কেন মাথা ঘামাচ্ছেন । তো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখতে দুটি ভিন্ন বিষয়ে লিখতে হয়, দুটিই এই ধরণের ধ্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত । স্নায়ুবিজ্ঞানের সূত্রে ধ্যানের তাৎপর্য নিয়ে লেখার আগে ধ্যান ও স্নায়ুগত আরো দুয়েকটা ব্যাপার দেখা যাক:  (১) একটা ধ্যান এবং Flow (জানিনা, বাংলায় ইংরেজির ফ্লো  কথাটিকে হয়তো প্রবাহ বলা যেতে পারে), (২) ধ্যান এবং আধুনিক মনোবিজ্ঞানে ও চিকিৎসায় তার তাৎপর্য ।
     
    (এর পরের পর্বে বাকিটা, চলবে  )
     
     
     
    ---
    তথ্যপঞ্জী 
    ১) Keng SL, Smoski MJ, Robins CJ. Effects of mindfulness on psychological health: a review of empirical studies. Clin Psychol Rev. 2011 Aug;31(6):1041-56. doi: 10.1016/j.cpr.2011.04.006. Epub 2011 May 13. PMID: 21802619; PMCID: PMC3679190
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • প্রবন্ধ | ১২ জুন ২০২৪ | ৬৫০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debasis Bhattacharya | ২৯ জুন ২০২৪ ১৯:১১533888
  • আমি নিজে আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে হুগলি জেলার খানাকুল অঞ্চলে এক কৃষক বাড়িতে ভূতের প্রকোপ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এই ধরনের শিশুমৃত্যুর ঘটনার সন্ধান পাই, যা আসলে 'এস আই ডি এস' বলে আমি সন্দেহ করেছিলাম (নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব, যদিও)। এই ঘটনাটিই ওই মৃত শিশুটির স্বল্পশিক্ষিত ও অসচেতন বাবা-মায়ের মধ্যে ভীতি সন্দেহ ও অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলে তাদেরকে ভুতুড়ে আচরণে প্রবৃত্ত করেছিল। 
  • তদন্ত | 103.249.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ১৯:২৮533889
  • দেবাশিসবাবুকে অনুরোধ করছি , যুক্তিবাদী সমিতি যা যা তদন্ত করেছে ,সমস্ত ডিটেইলসে নথিভুক্ত করে একটা বই বের করুন।
  • Debasis Bhattacharya | ২৯ জুন ২০২৪ ২০:০৭533892
  • আপনার আগ্রহের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। প্রাণপণে চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু নানা কারণে পেরে ওঠা যাচ্ছে না। প্রচুর তদন্ত এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নথি। বহু খণ্ডে গুছিয়ে প্রকাশ করা বেশ কঠিন কাজ, আমাদের মত অপেশাদার প্রকাশকদের পক্ষে। তবু, হবে নিশ্চয়ই। শুধু কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। 
  • তদন্ত | 103.249.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ২০:৩৩533893
  • দেরি হোক ক্ষতি নেই । কিন্তু পুরনো নথি আর ইনফরমেশন গুলো সব সংগ্রহে থাকে আপনাদ্রমেশন
  • তদন্ত | 103.249.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ২০:৩৮533894
  • আপনাদ্রমেশন--->আপনাদের?
  • Debasis Bhattacharya | ২৯ জুন ২০২৪ ২১:১৯533900
  • হ্যাঁ, আমাদের অফিস সেক্রেটারি ভীষণই দক্ষ এবং কমিটেড। সাংগঠনিক নথি তো বটেই, বহু পুরোনো এবং অতি মূল্যবান অনেক মিডিয়া ক্লিপিং তিনি অতি যত্নে আগলে রেখেছেন। 
  • cognition | 199.255.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ২২:২২533902
  • দেবাশীষবাবু, ঠিকই বলেছেন। বলা যায় চেতনা যত widely reported ফেনোমেনা, ধ্যানের উপকারিতা হয়ত তার তুলনায় ঢের কম। তা হোক, একটি জিনিস যা আমরা সাবজেকটিভলি টের পাচ্ছি কিন্তু ব্যাপারটিকে সংজ্ঞায়িত করতে পারছি না, ফলে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান শুরু করতে পারছি না, এইটে বোঝানোর জন্য চেতনার প্রসঙ্গ টেনেছিলাম।
     
    অরিনবাবু, সেলফ রিপোর্টকে মাপজোক হিসেবে ধরা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় কিন্তু সাইকোলজির একটি দীর্ঘদিনের বিবাদ। যে রিভিউ পেপারটির উল্লেখ করেছিলাম, সেখানেও এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে লেখা আছে। সমস্যাটা কি জানেন, এককালে সাইকোলজির মাথাব্যথা ছিল অবচেতন মন নিয়ে। কিন্তু বেঞ্জামিন লিবেতের পরীক্ষা থেকে, যা ফ্রি উইল এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে বিখ্যাত, আমরা বুঝেছি আমাদের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয় মনের অচেতন অংশে। ফলে হাত নাড়াচ্ছি আগে, তারপর সচেতনভাবে ভাবছি হাত নাড়ানোর কথা। এর সঙ্গে ফ্রি উইল-ফুইলের সম্পক্ক নেই। এবার বলুন সেলফ রিপোর্ট থেকে মনের অচেতন অংশকে আপনি কিভাবে একসেস করবেন? ফলে সাইকোলজির চর্চা বিশবাঁও জলে চলে গেছে।
     
    আপনি লিখুন মাপজোক নিয়ে যা লিখতে চান। পড়ব। তবে মস্তিষ্কের সাবসিস্টেমগুলোকে (জেরি ফোডোর) আইডেন্টিফাই না করলে blood oxygen level dependent fMRI ইত্যাদি দিয়ে লজিক্যাল ফ্লো অফ ইনফরমেশন বোঝা যাবে না। ঠিক যেমন কম্পিউটার কিভাবে এলগোরিদম ইমপ্লিমেন্ট করছে বুঝতে আপনাকে সাবসিস্টেম গুলোকে (রেজিস্টার, মেমোরি, এ এল ইউ, রিড/রাইট হেড) এনালাইজ করতে হবে। (মারের লেভেল অফ এনালিসিস নিয়ে প্রথম পোস্টে লিখেছিলাম)
     
    খুব ভাল করেছেন জিনের উল্লেখ করে। খেয়াল করুন-
    Initially, the term “gene” was coined to denote an abstract “unit of inheritance,” to which no specific material attributes were assigned. As the classical and neoclassical periods unfolded, the term became more concrete, first as a dimensionless point on a chromosome, then as a linear segment within a chromosome, and finally as a linear segment in the DNA molecule that encodes a polypeptide chain.
     
    হরি হরি! কোথা থেকে কোথায় এল? হ্যাঁ সময়ের সঙ্গে একটি জিনিসের বৈজ্ঞানিক কনসেপ্ট নিশ্চয় বদলায়। তাই নিউটনের তত্ত্ব আইনস্টাইনে এসে "পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত" হয়। কিন্তু যে সংজ্ঞা ধোঁয়াটে ও specific material attributes নিয়ে কথা বলেনা, তার ওপর নির্ভর করে বৈজ্ঞনিক অনুসন্ধান শুরু হতে পারেনা। জিনের এই "unit of inheritence" সংজ্ঞাটি কেবল ইউজেনিক্সের মত ভুয়ো বিজ্ঞানকে সাহাজ্য করেছে বলে মনে করি। একই কথা বুদ্ধিমত্তার পরিমাপ বা আইকিউ নিয়ে বলতে পারি। স্টিফেন জে গুল্ড অনেক লিখেছেন এইসব নিয়ে। সেই কুখ্যাত বেল কার্ভ বইয়ের সঙ্গেও আপনি হয়ত পরিচিত।
     
    আরও বলা যায় কমপার্টমেন্টালাইজেশন অফ নলেজ নিয়ে। ধরুন আমরা ফিজিক্সের তত্ত্ব বুঝি, কেমিস্ত্রিও বুঝি। কিন্তু ফিজিক্সের তত্ত্ব দিয়ে কেমিস্ত্রিকে ব্যাখ্যা করে ফেলতে পারিনি। ইউনিফিকেশন সম্ভব হয়নি। কেমিস্ট্রি ও বায়োলজির ক্ষেত্রেও একথা সত্য। ফলে বায়োলজিস্টকে আপনি যদি প্রাণ কি জিজ্ঞেস করেন, উনারা বলতে পারবেন না। অথচ আমরা পরিষ্কার জানি প্রাণীরা অর্গানিক মলিকিউলগুলি জুড়ে জুড়ে তৈরী একটা জটিল সিস্টেম ছাড়া কিচ্ছু না। অথচ অতিপ্রাকৃতিক সংজ্ঞা ছাড়া আপনি প্রাণের সংজ্ঞা দিতে পারবেন না। বায়োলজিতে এককালে তাই ভাইটাল ফোর্সের রমরমা ছিল। এখন বায়োলজি হার্ড সায়েন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু 'প্রাণ কি' এই মূল প্রশ্নটি বায়োলজি এড়িয়ে গিয়েছে। ফিজিক্সেও ঠিক এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল যখন নিউটন গ্রাভিটি আবিষ্কার করেন। তার আগে অবদি ছিল ক্লকওয়ার্ক ইউনিভার্সের ধারণা। মহাবিশ্ব যেন একটা বিশাল ঘড়ি বা যন্ত্র। সেই যন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলিকে আমরা ব্যাখ্যা করলে গোটা যন্ত্রটার কার্যকলাপ বুঝে যাব। এমত পরিস্থিতিতে নিউটন এসে বললেন এই মহাবিশ্বের যেকোন দুটি বস্তুর মধ্যে রয়েছে একটি অদৃশ্য টান। লাইবনিৎস নিউটনকে একিউজ করলেন, দেকার্ত বিজ্ঞানের যে ভিত্তি স্থাপন করেছেন (মেকানিক্যাল ফিলোজফি), নিউটন সেখানে ফের আধিভৌতিক আধিদৈবিক ধারণা আমদানি করছেন বলে। নিউটন নিজে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিজের তত্ত্বে বিশ্বাস করতে পারেননি:
     
    "That gravity should be innate inherent & {essential} to matter so that one body may act upon another at a distance through a vacuum without the mediation of any thing else by & through which their action or force {may} be conveyed from one to another is to me so great an absurdity that I beleive no man who has in philosophical matters any competent faculty of thinking can ever fall into it. Gravity must be caused by an agent {acting} <7v> consta{ntl}y according to certain laws, but whether this agent be material or immaterial is a question I have left to the consideration of my readers."
    (রিচার্ড বেন্টলিকে লেখা চিঠি)
     
    এইখান থেকে বিজ্ঞান সীমাবদ্ধ হয়ে গেল যে বিজ্ঞানের পক্ষে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, প্রাইম নাম্বার মেজে দৌড়োতে থাকা ইঁদুর যেমন মৌলিক সংখ্যার ধারণা বোঝে না, তেমনি আমাদের কাছে মহাবিশ্বের অনেককিছুই অবোধ্য থাকবে। আমরা কেবল বোধগম্য কিছু তত্ত্ব খাড়া করতে পারি মাত্র। ডেভিড হিউম বলেছিলেন বিজ্ঞানে নিউটনের সবচেয়ে বড় অবদান বিজ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া। অনেকে ভাবেন নিউটন থেকেই তো বিজ্ঞানের শুরু যেখানে আধিভৌতিক ধারণার (ghost in the machine) কোন জায়গা রইল না। এব্যাপারে নোম চোমস্কির বিখ্যাত উত্তর: Newton did exorcise the machine, but he left the ghost intact. প্রতিটি বিজ্ঞানের শাখায় এই ভুত আছে এবং থাকবে কারণ বিজ্ঞান আসলে সেই মাতালের মত যে ঘরে চাবি হারিয়ে ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে খুঁজছে কেননা আলো সেখানেই আছে। ফলে হতে পারে ধ্যান বিষয়টির বোধগম্য সংজ্ঞা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে আমাদের রিসার্চ প্রব্লেমকে আরো সংকীর্ণ ভাবে ডিফাইন করতে হবে, তাতে আমরা মস্তিষ্কের ওপর ধ্যানের প্রভাব অনেকটাই হয়ত ব্যাখ্যা করতে পারবো না, কিন্তু ওইটুকুই হয়ত ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দৃশ্যমান। ধ্যান নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এই জায়গাটাতেই পৌছানো এখনো সম্ভব হয়নি বলে মনে করি। সেজন্যই কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নেই।
  • একটা প্রশ্ন | 103.249.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ২৩:৩৬533904
  • @কগ্নিশন 
    একটা বিষয়ে আমার কৌতুহল আছে। আই কিউ কি কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে? নাকি পুরোপুরি ছদ্ম বিজ্ঞান?
  • Debasis Bhattacharya | ২৯ জুন ২০২৪ ২৩:৪২533905
  • কগনিশন, 
     
    কোথায় পৌছতে চাইছেন শেষ পর্যন্ত? আমি কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত। এতক্ষণ তো আমরা তর্ক করছিলাম এই জায়গা থেকে যে, জানবার যোগ্য একটা বাস্তব জগৎ আছে, সে সম্পর্কে জানাবার জন্য বিজ্ঞান আছে, এবং তার সাহায্যে আমরা জগৎকে ক্রমশ একটু একটু করে জেনেও ফেলছি, কিন্তু ধ্যান সম্পর্কে সঠিক কথাটা বলতে পারছি না কারণ সেখানে আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারছি না। আমার ধারণা ছিল, আপনিও এই তর্কটাই করছেন। 
     
    কিন্তু এখন যা বললেন তাতে মনে হচ্ছে, আপনি বলতে চাইছেন, ধ্যান কী বস্তু সেটা জানা যাবেনা, বা অন্তত বিজ্ঞান দিয়ে জানা যাবেনা --- কারণ, বিজ্ঞান আসলে তার অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতার কারণে কোনও দিনই কিছুই জানতে পারেনি! 
     
    সত্যিই আপনি এটাই বলতে চাইছেন নাকি? 
     
    যদি তাইই বলতে চেয়ে থাকেন, তো সেটা আপনার ব্যক্তিগত অধিকার। তবে, এটা কিন্তু মিস্টিক/অবস্কুরান্টিক অবস্থান, যুক্তিবাদী অবস্থান নয়। 
  • ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ২৩:৪৭533907
  • ঠিক এটাই আমিও বলতে চাই। বিজ্ঞান দিয়ে একটা সীমার পর কিছুই জানা যায় না। তখন অধ্যাত্মের শরণ নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এটাই আমি আগের মন্তব্যগুলোতেও বলার চেষ্টা করেছি , অধ্যাত্ম আর বিজ্ঞান এঁকে ওপরের পরিপূরক । মূলত সায়েন্স ফান্ডামেন্টালিস্টরা এঁদের এঁকে ওপরের প্রতিযোগী হিসাবে দেখাতে চায় , গলদটা এখানেই 
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ০০:২৩533910
  • হ্যাঁ, আপনিও ঠিক তাইই বলেছেন। তবে, আপনার কথাটা গোড়া থেকেই বোঝা গেছে।
  • cognition | 199.255.***.*** | ৩০ জুন ২০২৪ ০০:৫১533911
  • হ্যাঁ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তো খুবই সীমাবদ্ধ এবং সেই জন্যই তা সত্যকে জানবার একমাত্র উপায় বলে মনে করি। এই সীমাবদ্ধতা বায়োলজিক্যাল অর্গানিজম হিসেবে আমাদের বোধের সীমাবদ্ধতা। দেবদূত হলে হয়ত এই সীমাবদ্ধতা থাকত না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যে সবকিছুর ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করিনা, ফলে মিস্টিরিয়ানিজম এড়ানো যাবেনা। কিন্তু যেটুকু জানা সম্ভব তা একমাত্র বিজ্ঞানের সাহায্যেই।
     
    এইটে দেকার্ত যুগের মেকানিক্যাল ফিলোজফাররা মানতেন না, কেননা তখন মাইন্ড-বডি ডুয়ালিজম প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই যে আপনি বললেন বাস্তব জগৎ বা বডি, এর একটা পরিষ্কার সংজ্ঞা ছিল। বাস্তব জগৎ হল যেখানে ক বস্তু খ বস্তুকে প্রভাবিত করলে ক ও খ-কে পরস্পরের সংস্পর্শে আসতে হবে। Action at a distance ছিল অকাল্ট আইডিয়া। মেকানিক্যাল ফিলোজফাররা মনে করত বাস্তব জগৎ বা বডিকে একটি মেশিনের মত ব্যাখ্যা করা যাবে। কিন্তু নিউটন গ্রাভিটি আবিষ্কারের পর action at a distance বিজ্ঞানকে মেনে নিতে হল। অর্থাৎ মাইন্ড ও বডির ডুয়ালিজম ভেঙে পড়ল। ফিজিক্সে আর কন্ট্যাক্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, সবকিছুই ফিল্ডের ধারণা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এখন আমরা যখন বাস্তব জগৎ বলি, তার অর্থ আমাদের চারপাশে যা আছে তাই। বাস্তবজগৎ ও মনোজগতের আর কোনো ফারাক নেই।
     
     
    In 1687 Isaac Newton published his Principia which combined his laws of motion with a new mathematical analysis able to reproduce Kepler's empirical results.[2]: 134  His explanation was in the form of a law of universal gravitation: any two bodies are attracted by a force proportional to their mass and inversely proportional to the square of the distance between them.[5]: 28  Thus the motions of planets were predicted by assuming forces working over great distances.
    This mathematical expression of the force did not imply a cause. Newton considered action-at-a-distance to be an inadequate model for gravity.[6] Newton, in his words, considered action at a distance to be:
    so great an Absurdity that I believe no Man who has in philosophical Matters a competent Faculty of thinking can ever fall into it.[7]
    — Isaac Newton, Letters to Bentley, 1692/3
    Metaphysical scientists of the early 1700s strongly objected to the unexplained action-at-a-distance in Newton's theory. Gottfried Wilhelm Leibniz complained that the mechanism of gravity was "invisible, intangible, and not mechanical".[1]: 339  Moreover, initial comparisons with astronomical data were not favorable. As mathematical techniques improved throughout the 1700s, the theory showed increasing success, predicting the date of the return of Halley's comet[8] and aiding the discovery of planet Neptune in 1846.[9] These successes and the increasingly empirical focus of science towards the 19th century led to acceptance of Newton's theory of gravity despite distaste for action-at-a-distance.[1]
  • cognition | 199.255.***.*** | ৩০ জুন ২০২৪ ০১:৫১533913
  • ধ্যানের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু পরিষ্কার করে লিখি। তাহলে বোঝা যাবে কোথায় পৌঁছতে চাইছি। ধরুন আপনি প্রশ্ন করলেন A ঘটলে কি B ঘটে? অর্থাৎ ধ্যান করলে কি মনের সমতা বাড়ে?
     
    A এবং B কোনোটাই রিগোরাসলি ডিফাইন্ড নয়। বিজ্ঞানীরা প্রথমে প্রশ্নটা এমনভাবে ডিফাইন করবেন যা থেকে একটা টেস্টেবল প্রপোজিশন পাওয়া যায়। ধরুন সেই প্রশ্নটা হল A1 ঘটলে কি B1 ঘটে? এইবার ওনারা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে এর উত্তর দেবেন। ধরা যাক, প্রমান হলো A1 ঘটলে B1 ঘটে (প্রমান কিছু হয়না, অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেও ফলসিফাই করা গেল না আরকি)। তখন আপনি বলবেন আমি তো এই প্রশ্নের জবাব চাইনি। A,B সংজ্ঞায়িত নয় বলে A এর সংগে A1 ও  B1 এর সংগে B এর সম্পর্ক আমাদের জানা নেই। পরিস্থিতিটা দাঁড়ালো-
    A->X->A1->B1->X->B
     
    এইবার কেউ এটাকে দুভাবে ইন্টারপ্রেট করতে পারেন।
    এক, ধুর মশায়, বিজ্ঞান তো কেবল A1 থেকে B1 হয় বলতে পারে। বৌদ্ধ ধর্মের বইতে লেখা আছে A থেকে B হয়।
    দুই, ধুর মশায়, বৌদ্ধ ধর্মের বইতে A,B ডিফাইন করেছে? কেবল ধোঁয়াটে কথাবার্তা।
     
    খেয়াল করুন প্রথমটা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে মন্তব্য। দ্বিতীয়টা অবিজ্ঞানের অর্থহীনতা নিয়ে মন্তব্য। দুটোই সত্যি। কে কোন পক্ষ নেবেন সেটা আইডিওলজির ব্যাপার। কিন্তু তার থেকেও মূল জিনিসটা লক্ষ্য করুন, একমাত্র A1 ঘটলে B1 ঘটে এইটুকুই সত্য এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ওইটুকুই ল্যাম্পপোস্টের নিচের আলো, বাকি সব অন্ধকার।
  • অরিন | ৩০ জুন ২০২৪ ০৭:১৩533917
  • @দেবাশিসবাবু, আবারও আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনার প্রতিটি প্রশ্নই আলোচনাগুলোকে একটি সদর্থক দিকে গিয়ে নিয়ে যায়, এই ব্যাপারটি  সবিশেষ  প্রশংসনীয় ।
    @যদুবাবু, আশ্বস্ত হওয়া গেলো যে আপনি "আহত" হন নি। হলে আমি সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেতাম। আলোচনাটা চলুক, আমারও ভালো লাগছে।
    @cognition এর ২২:২২ থেকে ০০:৫১ পর্যন্ত যা লিখেছেন, খুব ইন্টারেষ্টিং, এইগুলো নিয়ে পরে কখনো হয়তো আলোচনা করা যাবে, তবে দু- একটা কথা এখানে আমার তরফে লিখে রাখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি ।
     
    চেতনা -- আমি কিছুটা "সচেতন" ভাবেই চেতনার ব্যাপারটি এখানে আলোচনা করতে চাই নি, তার সংজ্ঞা (সংজ্ঞার সংজ্ঞা ;-) ) , পরিমাপ, বিশেষ করে perception ব্যাপারটি নিয়ে অন্যত্র একটু আলোচনা শুরু করেছিলাম (বাদ দিন, আমিও আর লিংক শেযার করছি না), তবে কারো যদি উৎসাহ থাকে, তো তাঁরা ইয়াকুব হোহি র এই প্রেজেন্টেশনটি দেখতে পারেন, বইগুলোও ভারী চমৎকার পাঠ্য (বিশেষ করে অনিল শেঠ মশাইয়ের "Being You " বইটি), আর কার্লের বইটি (Active Inference) পড়ে দেখতে পারেন (চাইলে)
     
     
    তবে @cognition এর ১:৫১ র কমেন্টটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছে (এখন আমার ভুল হতে পারে, আপনি হয়তো বলতে চান নি, আমি ভাবছি), যে আপনি যাকে "definition" বলছেন, সে এক ধরণের "reification"। কেন বলছি? যেমন ধরুন, এই যে আপনি লিখেছেন,
     
    > "A এবং B কোনোটাই রিগোরাসলি ডিফাইন্ড নয়। বিজ্ঞানীরা প্রথমে প্রশ্নটা এমনভাবে ডিফাইন করবেন যা থেকে একটা টেস্টেবল প্রপোজিশন পাওয়া যায়। ধরুন সেই প্রশ্নটা হল A1 ঘটলে কি B1 ঘটে? এইবার ওনারা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে এর উত্তর দেবেন। ধরা যাক, প্রমান হলো A1 ঘটলে B1 ঘটে (প্রমান কিছু হয়না, অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেও ফলসিফাই করা গেল না আরকি)। তখন আপনি বলবেন আমি তো এই প্রশ্নের জবাব চাইনি। A,B সংজ্ঞায়িত নয় বলে A এর সংগে A1 ও  B1 এর সংগে B এর সম্পর্ক আমাদের জানা নেই। পরিস্থিতিটা দাঁড়ালো-
    A->X->A1->B1->X->B"
     
    এই A -->  X --> A1 ব্যাপারটা খাড়া করার জন্য আপনাকে A কি, সম্পূর্ণ না জানলেও চলবে, কারণ, A1 A'র পরিমাপক, A এক্ষেত্রে একটি অদৃশ্য ভ্যারিয়েবল (latent variable), এবং A কে আপনি A1, A2, ..., An এইরকম নানাবিধ "দৃশ্যমান" ভ্যারিয়েবল দিয়ে "reify" করতে পারেন, একই রকম ভাবে B এর ক্ষেত্রেও তাই, ফলে যে কারণে A বা B র  একটি working definition হলেই কাজ চলে যায়, অন্তত, খুব রিগোরাসলি ডিফাইন্ড  না হলেও পারস্পরিক সম্পর্ক বিধৃত করতে অসুবিধে হবার কথা নয়, এবং এইভাবেই নানান reification  এর মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ definition গড়ে ওঠে বা সে পথ পাওয়া যায় । এর একটা উদাহরণ ব্যক্তিত্ব মাপার সূচক Big Five, যার কথা দিন দুয়েক আগে ধ্যানের সূত্রে দেবাশিস বাবু জিজ্ঞাসা করছিলেন ( যাঁরা জানতে চান, তাঁদের জন্য এই পাঁচটি হল 
    •  openness to experience (inventive/curious vs. consistent/cautious)
    •  conscientiousness (efficient/organized vs. extravagant/careless)
    •  extraversion (outgoing/energetic vs. solitary/reserved)
    • agreeableness (friendly/compassionate vs. critical/judgmental)
    •  neuroticism (sensitive/nervous vs. resilient/confident)
    )
    আরো পড়তে চাইলে বা জানতে চাইলে দেখুন, https://my-personality.vercel.app/blog/article/what-is-big-5-personality-test
     
    এবার এগুলোকে নানান ভাবে মাপা যায় । এবং এদের মাপবার পর, এদের Factor Structure থেকে ব্যক্তিত্বের ম্যাপ নির্ণীত হয় । এর জন্য কিন্তু ব্যক্তিত্ব কি জিনিস তার পূর্ণাঙ্গ সংযজ্ঞাপনের প্রয়োজন পড়ে না। 
     
    ধ্যানের ক্ষেত্রেও তাই। ধ্যান ব্যাপারটি একটি প্রক্রিয়া, যার সংজ্ঞা "মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা" এইটুকুই। সেটা তো ব্যাপার নয়, মন দিয়ে আপনি "কি" বা "কাকে" পর্যবেক্ষণ করবেন? এই জায়গাটাতে একটা ব্যাপার আছে, মন দিয়ে "মন" পর্যবেক্ষণ করার ব্যাপারটা হচ্ছে Mindfulness, কিন্তু এই ব্যাপারটার কোন সহজ সংজ্ঞা নিরূপিত করা সহজ নয়, তবে মোটামুটি দুটো ব্যাপার লোকে (লোকে বলতে যারা এই নিয়ে কাজকর্ম করেন) আজকাল মেনে নেন,  
    (1) self regulated attention ("স্বনিয়ন্ত্রিত", নিজের কন্ট্রোলে কোন ব্যাপারটির বা কোন জিনিষটির প্রতি মন দেবেন সেই ক্ষমতা)
    (2) orientation to experience (প্রতিমুহূর্তে বা এক মুহূর্ত থেকে আরেক মুহূর্তে এই যে মনে "অভিজ্ঞতা" সঞ্চারিত হচ্ছে, তাকে মানুষ কিভাবে গ্রহণ করবে)
    দুটো মিলিয়ে এক ধরণের "non judgmental awareness" (সমস্ত রকমের ধারণার প্রতি সজাগ অথচ কোন রকম জাজমেন্ট দিচ্ছেন না, যেটা যা সেটাকে তাই রূপে "দেখছেন'" বা উপলব্ধি করছেন) 
    এখন এ জিনিস সংজ্ঞায়িত করা মহা সমস্যার। 
    দেবাশিসবাবু যেমন লিখেছেন, 
     
    > "জানবার যোগ্য একটা বাস্তব জগৎ আছে, সে সম্পর্কে জানাবার জন্য বিজ্ঞান আছে, এবং তার সাহায্যে আমরা জগৎকে ক্রমশ একটু একটু করে জেনেও ফেলছি" 
     
    এই অজানাকে জানার কাজটাই চলতে থাকে। 
     
    এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জানবার যোগ্য বাস্তব জগতের মধ্যে একটা অন্তর্জগৎ, "আত্মানং বিদ্ধি " এ যাত্রা তার সন্ধানে।
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ১২:২০533928
  • কগনিশন,
     
    এবারে আপনার আর্গুমেন্ট কিন্তু আর সেভাবে বোঝা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে বলেই সেটা জগতকে জানার একমাত্র উপায় --- এ কথার অর্থ কী? এই 'সীমাবদ্ধতা' --- তার অর্থ যা-ই বুঝিয়ে থাকুন, সেটা না থাকলে বিজ্ঞান আর জগতকে জানার হাতিয়ার হতে পারত না? এই সীমাবদ্ধতা জৈব প্রাণ হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা --- এরই বা অর্থ কী? অজৈব প্রাণ যদি কিছু থাকে, তো তার কোনও সীমাবদ্ধতা থাকবে না, নাকি, সে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে না? বিজ্ঞান সবজান্তা নয় এইটা মেনে নিলেই আর মিস্টিসিজম-কে এড়ানো যাবেনা --- আপনার এ হতাশারই বা উৎস কী? মনে করুন যদি বলি, বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত অমুকটা জানতে পারেনি বটে, তবে চেষ্টা চলছে, হয়ত কাল পরশুই জেনে ফেলা যাবে --- তাতে আপনার সমস্যাটা কোথায়? 
     
    নিউটনীয় মাধ্যাকর্ষণতত্ত্বের 'অ্যাকশন অ্যাট আ ডিস্টেন্স' ধারণাটি কার্তেজীয় যান্ত্রিক দর্শনের কাছে অস্বস্তিকর --- ঠিকই। কিন্তু তাতে করে কেন যে মন আর বস্তু একাকার হয়ে যাবে --- এটা কিন্তু বুঝতে পারিনি। বস্তুকে 'মনের ধারণা' বলে সাব্যস্ত করাটা ভাববাদী দর্শনের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, কিন্তু তার সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণতত্ত্বের সম্পর্ক আছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। নিউটনের তিনশো বছর পরে বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি, নিউরোলজি, কমপিউটার সায়েন্স ইত্যাদির উদ্ভবের ফলে বস্তু আর মন অনেক কাছাকাছি এসেছে বটে, এবং তাতে অন্য এক অর্থে 'মাইন্ড-বডি ডুয়ালিজম' পরাস্ত হয়েছে, মনকে বস্তুর এক ধরনের ক্রিয়া বলে দাবি করবার রাস্তা দিনকে দিন চওড়া হচ্ছে। তবে, যদ্দুর বুঝি, তার ফলে ভাববাদের অসুবিধে বই সুবিধে বিশেষ কিছু হয়নি। 
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ১২:৫৭533930
  • ধ্যান এবং 'মনের সমতা' বিষয়ক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও, আপনার অত দুশ্চিন্তার দরকার আছে কি?
     
    আমার মনে হয়, এখানে মাত্র চারটি জিনিস বিবেচ্য।
     
    (১) ধ্যান এবং 'মনের সমতা' ফেনোমেনন-গুলো ঠিক কী?
    (২) পরীক্ষায় যে ভ্যারিয়েব্ল-গুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো কি ওই ফেনোমেনন-গুলোর ঠিকঠাক প্রতিনিধিত্ব করে?
    (৩) পরীক্ষায় যে ফলাফল পাওয়া গেল, তাতে কি ওই ভ্যারিয়েব্ল-গুলোর মধ্যেকার কার্যকারণ আদৌ প্রতিষ্ঠিত হল? 
    (৪) পরীক্ষাটি যেভাবে পরিকল্পিত হয়েছে তার মধ্যে ওই ফলাফলগুলো অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়ে যায়নি তো? 
     
    আমাদের ইতিমধ্যে অর্জিত জ্ঞানবুদ্ধি দিয়েই এ প্রশ্নগুলোর বিচার সম্ভব, অরিনবাবুর লেখা শেষ হলে সে বিচারে প্রবৃত্ত হওয়া যাবে। 
     
    কোরিলেশন আর কার্যকারণ নিয়ে বিরাট ফাটাফাটি করে বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয়না। অন্য কোনও ব্যাখ্যার সুযোগ যদি না থাকে, তো কোরিলেশন-কে কার্যকারণের ইঙ্গিতবাহী বলে ধরে নেওয়াটাই ভাল। তা না হলে আর কোনও পরীক্ষানিরীক্ষারই কোনও মানে থাকবে না। 
  • অরিন | ৩০ জুন ২০২৪ ১৩:৪৮533931
  • @দেবাশিসবাবু, এই চারটি প্রশ্নই এখানে অসম্ভব রকম গুরুত্বপূর্ণ, এই পুরো body of research এ । 
    তবে, এর মধ্যেও (৩) আর (৪) নম্বর প্রশ্নদুটো কোরিলেশান থেকে কার্যকারণের পথে অগ্রসর হবার ঈঙ্গিত বহন করবে । ব্যাপারটা এইরকম দাঁড়ায়:
    মনে করুন আসলে  A -> B (A  এর কারন ), কিন্তু পরীক্ষা বলুন বা observational study বলুন, কোথাও তো আর "কার্য -কারণ " ব্যাপারটা "দেখা" যাবে না, যেটা দেখা যাবে A <--> B , মানে A  আর B  এর কোরিলেশান । এখন A ,B কোরিলেশানের চার রকমের ব্যাখ্যা হতে পারে:
     
    (১) A  সত্যিকারের B  এর "কারণ " তাই কোরিলেশান হয়েছে ।
    (২) আসলে A  B  এর কারণ নয় , B উল্টে A 'র কারণ, তাই কোরিলেশন দেখতে পাওয়া গেল । 
    (৩) A  B  এর কারণ নয়, B ও A র কারণ নয়, এই যে দুজনের কোরিলেশান দেখা যাচ্ছে, তার উৎস অন্য একটি ভ্যারিয়েবল C , যে নাকি উভয়ের ই কারণ, এবার যেইমাত্র C  নামক ভ্যারিয়েবল টিকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তখন দেখা যাবে A  ও B , এদের মধ্যে আর কোন কোরিলেশানই রইলো না ।
    (৪)  A  B  এর কারণ নয়, B ও A র কারণ নয়, এই যে দুজনের কোরিলেশান দেখা যাচ্ছে, তার উৎস অন্য একটি ভ্যারিয়েবল D , যার উৎস, A এবং B (এই ব্যাপারটিকে যদুবাবু collider বলছিলেন) । এখানে মুশকিল হচ্ছে এই ভ্যারিয়েবল D কে যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, সে একরকম, যেই মাত্র A  ও B এর সম্পর্কে D  নামক ভ্যারিয়েবল টিকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, অমনি যেখানে কোন সম্পর্ক থাকার কথা ছিল না, সেখানে একটা মিথ্যা কোরিলেশান তৈরী হবে (যদুবাবু আগের দিন এই ব্যাপারটির কথা বলছিলেন) ।
     
    যেমন ধরা যাক, ধ্যান ও স্ট্রেস ।
    (১) হতে পারে ধ্যান করার জন্য মানুষের  স্ট্রেস কমেছে, নাও হতে পারে
    না যদি হয়, তাহলে 
    (২) এমনও হতে পারে, যে, যাদের স্ট্রেস এমনিতেই কম, তারা বেশী বেশী ধ্যান করছে, বা তারা ধ্যানপ্রবণ । 
    বা,
    (৩) অপেক্ষাকৃত বিত্তবান মানুষ,  ছেলেপিলের হাতে ব্যবসার হাল দিয়ে ঝাড়া হাত পা লোক, হাতে অনেকটা সময়, তার জীবনে স্ট্রেস কম, তিনি  ধ্যানেও অনেকটা সময় দিচ্ছেন, আবার এমনিতেও স্ট্রেস কম । এইরকম লোক যদি স্টাডিতে বেশি থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেই সব স্টাডিতে দেখা যাবে যে ধ্যান করলে স্ট্রেস কম হচ্ছে, মানে 
    ধ্যান < -- বিত্ত --> স্ট্রেস 
    (সেক্ষেত্রে আবার দেখা যাবে যে যদি স্টাডিতে বিত্ত কে "control " করা হয়, তাহলে ধ্যান আর স্ট্রেস এর মধ্যে আর কোন সম্পর্ক দেখা যাবে না )
    তও যদি না হয়,
    (৪) ধ্যান করলে মানুষের নানান রকমের বিষন্ন অভিজ্ঞতা মনে উঠে আসে, আবার স্ট্রেস হলেও মানুষ বিষন্ন হন, এখন যে স্টাডি করা হয়েছে, তাতে মনে করুন বিষন্নতা ব্যাপারটিকে "control " করা হয়েছে, মানে 
    ধ্যান --> [ বিষন্নতা ] <-- স্ট্রেস 
    এই যে  তীর নিজেদের মধ্যে ধাক্কা মারছে, এই ধাক্কা র ব্যাপারটা বিষন্নতা ফ্যাক্টর টিকে কন্ট্রোল করে নিয়ন্ত্রণ করে দেওয়া হয়েছে (যেমন ধরুন স্বভাব বিষন্ন মানুষকে রিসার্চের সাবজেক্ট করে নেওয়া হয়নি), ফলে ধ্যান ও স্ট্রেস কম হবার একটা পারস্পরিক সম্পর্ক পাওয়া গেল  ।
     
    পরবর্তী লেখাগুলো লেখার সময় আমি যতটা সম্ভব পারব দেখাব যে এই গবেষণাগুলোতে যাঁরা স্টাডি করছেন তাঁরা কিভাবে এই বিভিন্ন ব্যাপারগুলোকে বিচার বিবেচনা করে দেখছেন ।
    তবে এই ধরণের framework যাঁরা শুধু ধ্যান কেন, অন্য যেকোন বিষয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ের গবেষণার গুণমান বিচার করে দেখতে চান, তাঁদের কাজে লাগবে । 
    গতকাল b এর কমেন্ট তা মনে করুন, যে, correlation থেকে causation এর উত্তরণ নিয়ে ওনার একটি প্রশ্ন ছিল ।
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ১৪:৫৪533933
  • হ্যাঁ, চমৎকার ব্যাখ্যা করেছেন, ঠিক এটাই তো বলছিলাম! পরীক্ষায় যে কোরিলেশনটা দেখা যাচ্ছে সেটার যদি অন্য কোনও বিকল্প ব্যাখ্যা না থাকে, তো তাকে কার্যকারণের ইঙ্গিতবাহী বলেই ধরতে হবে (কার্যকারণের অভিমুখটা পরের বিচার)। কোলাইডার বা কনফাউন্ডার বা সাপ্রেসর বা কনফার্মেশন বায়াস --- কিছুই যদি না পাওয়া যায় তবে কার্যকারণ মানতে হবে, সে কার্যকারণের মেক্যানিজম তখনই বুঝতে না পারলেও। তবে ওইগুলো যে সত্যিই নেই, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সতর্কতাটা জরুরি। 
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ২০:১৭533950
  • চেতনার 'ইজি প্রবলেম' সমাধান না হলে 'হার্ড প্রবলেম' সমাধান হবেনা। সে এখনও বেশ দূরের রাস্তা বলেই মনে হয়। 
  • রঞ্জন | 106.202.***.*** | ৩০ জুন ২০২৪ ২০:৫১533954
  • অধ্যাত্ম  এবং বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক?
    কখনই নয়।
     
    মনোজগত এবং চেতনাকে বোঝার চেষ্টা এক জিনিস আর কোন অদৃশ্য সর্বশক্তিমান স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস আধারিত কথিত অধ্যাত্ম আর এক জিনিস যা পদ্ধতি এবং তত্ত্বের দিক থেকে বিজ্ঞানের বিপরীত। 
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ২১:০৯533957
  • রঞ্জনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত 
  • রঞ্জন | 106.202.***.*** | ৩০ জুন ২০২৪ ২১:২৪533961
  • যদি কোন হাইপোথিসিস "ফলসিফায়েবল" না হয়,-- অর্থাত সেটি কোনমতেই  বা কোন শর্তে ভুল প্রমাণ করা যাবে না-- তাহলে তা ইডিওলজি,  ধর্মশাস্ত্র বা ব্যক্তিগত বিশ্বাস হতে পারে, কিন্ত   বিজ্ঞান নয়।
     
    বিজ্ঞানের আওতায় আসার জন্য 
    কার্ল পপারের "ফলসিফায়েবলিটি" শর্ত বোধহয় এখন সর্বমান্য।
     
    আমার ভুল হলে অবশ্যই শুধরে দেবেন।
  • ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ৩০ জুন ২০২৪ ২২:৩৯533967
  • রঞ্জনবাবুর ব্যক্তিগত মতামত থাকতেই পারে ,কিন্তু দেবাশিসবাবু এই মন্তব্য সমর্থন করলেন কী করে ,তাতে অবাঁক হলাম! যতদূর জানি দেবাশিসবাবু যুক্তিবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত। যুক্তিবাদী আন্দোলন মানেই তো অধ্যাত্ম আর বিজ্ঞানের মেলবন্দন ,এটাকি উনি জানেন না?? স্বামী বিবেকানন্দই তো একজন যুক্তিবাদী ছিলেন , অধ্যাত্ম আর বিজ্ঞানের মেলবন্দন ঘটানোয় তিনি অথরিটি , এটা কি উনি জানেন না?
  • মেলবন্দন | 2405:8100:8000:5ca1::ce:***:*** | ৩০ জুন ২০২৪ ২২:৫২533968
  • এই অধ্যাত্ম আর বিজ্ঞানের মেলবন্ধন যারা রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে থেকেছে তারা হাড়ে হাড়ে জানে। (আর একটা জিনিস ছিল ইণ্ডিয়ান কালচার। বাপ রে। কেউ যদি প্রশ্ন করত যে মুসলমান কালচার কি ইণ্ডিয়ান কালচার নয়, সে এক দক্ষযজ্ঞ কেস! ওদিকে কথায় কথায় বেদান্ত আর কোয়ান্টার মেকানিক্স! বললে বলে তোমরা বড় হয়ে পড়বে হাইজেনবার্গের আনসার্টেন্টি প্রিন্সিপল আর শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল)

    যা হোক, বাব্বা সকালে সন্ধ্যায় ঠাকুরঘরে ধ্যান আর সেই ধ্যান কেন উপকারী তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা!!!!

    আপনারা পারেনও।
  • ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ৩০ জুন ২০২৪ ২৩:০৫533969
  • @মেলবন্ধন
    মুসলমান কালচার কি ইন্ডিয়ান কালচার নয় , জিজ্ঞেস করলে রামকৃষ্ণ মিশনে কী হত?
  • chandal | 2405:8100:8000:5ca1::34:***:*** | ৩০ জুন ২০২৪ ২৩:১৮533971
  • ভদ্রবিত্তদের সমস্যা হল তারা নিজেদের উপনিবেশের গর্বিত প্রজার বাইরে কিছু ভাবতে পারে না। অধ্যাত্ম বলতে তারা মুসলমান বা খ্রীষ্টান প্রভুদের সর্বশক্তিমানের ধারণাকেই বোঝে। অদ্বৈত বেদান্ত, বৌদ্ধ বা জৈন্ধর্মের মত নিরীশ্বর ধর্ম তারা ধারণাই করতে পারে না।
  • ্ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ৩০ জুন ২০২৪ ২৩:৩৩533972
  • @চঞ্চলবাবু 
    সহমত। এটা আসলে কলোনিয়ালিজম এর সমস্যা। সবকিছুকে আমরা ইউরোপীয় চোখ দিয়ে দেখতে ভালবাসি। তবে ভারতীয় অধ্যাত্ম হিন্দু ইসলাম খ্রিস্টান জৈন বৌদ্ধ নাস্তিকতা বিজ্ঞান সবের মেলবন্ধনে সৃষ্ট এক চমৎকার দর্শন। এগুলো আসলে আমাদের এখানে জানতে দেওয়া হয় না। ধার্মিকরা বা অনেক বিজ্ঞানমনস্কও দেখেছি অন্ধের হস্তি দর্শন করেন
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ২৩:৪৩533973
  • রঞ্জনবাবু,
     
    পপারের ফলসিফায়েবিলিটি আজ আমাদের বিজ্ঞানবোধের এক মস্ত উপাদান বটে, কিন্তু তাকে বেদবাক্য বলে ধরে নেওয়াটা বোধহয় খুব নিরাপদ নয়। জৈববিবর্তনতত্ত্বের ফলসিফায়েবিলিটি নেই এই অভিযোগে তিনি একে 'বিজ্ঞান' অভিধা থেকে বঞ্চিত করেছিলেন, অথচ, বিবর্তনবাদ আজ আমাদের বৈজ্ঞানিক বিশ্ববীক্ষার এক অন্যতম ভিত্তিপ্রস্তর। 
     
    এ ছাড়াও, অন্য সমস্যা আছে। ধরুন যদি বলি, 'ভোর চারটের সময়ে মাহেন্দ্রক্ষণে উত্তর দিকে মুখ করে পদ্মাসনে বসে শিবনেত্র হয়ে হ্রিং-ট্রিং-ফটাস মন্ত্র উচ্চারণ করলেই মুষলধারে বৃষ্টি নামবে' --- তাহলে সেটা অবশ্যই ফলসিফায়েব্‌ল্‌ হল, কিন্তু বিজ্ঞান হল কি? 
     
    আরও সমস্যা থাকতে পারে। মনে করুন, একটা বিশেষ কোনও তত্ত্বের মধ্যে ফলসিফায়েবিলিটি আছে। এবার বৈজ্ঞানিকেরা তাকে মিথ্যে প্রমাণ করবার চেষ্টা করে যাবেন, এবং তাতে যদি তা মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে যায় তো তা বাতিল হয়ে বিজ্ঞানের ইতিহাসে ঢুকে গেল, আর চেষ্টা সত্ত্বেও যদি তা না হয় তো তা বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের ভাণ্ডারে জায়গা পেয়ে গেল --- এই হচ্ছে পপারীয় প্রক্রিয়া। এবারে যদি দীর্ঘদিন কোনও বিজ্ঞানী কোনও কারণে সেটাকে খণ্ডন করবার চেষ্টা না করেন, বা, চেষ্টা করেন কিন্তু সেটা যথেষ্ট যোগ্য এবং/অথবা আন্তরিক না হয়, তাহলে সেই তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক পরিচিতি কী হবে? এক্ষেত্রে কি ফলসিফায়েবিলিটি তত্ত্ব এক বিমূর্ত পদ্ধতি-দার্শনিক সূত্রের উচ্চাসন থেকে নেমে ঐতিহাসিক আকস্মিকতার ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে না? 
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ জুন ২০২৪ ২৩:৪৭533974
  • ধ্যানবাবু,
     
    বিবেকানন্দ মস্ত যুক্তিবাদী --- এ কথাটা আমিও যে শুনিনি, তা না। তবে, ইলিশ মাছ আর সিগারেট খেয়ে খেয়ে উনচল্লিশ বছরেই মোক্ষলাভ করবার মত দম কী আর আমার মত সামান্য মানুষের আছে? সেইজন্যে, স্রেফ সাহসের অভাবে তাঁর মত যুক্তিবাদী হতে পারলুম না! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন