“এমনিতে বাঙালি দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে, বগল-বাজাচ্ছে, সাধারণ জামা-প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে - যেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের নাম শুনল অমনি ঘাড়ে পাউডার, পরণে পাঞ্জাবী।“
দারুণ সত্য ভাষ্য।
রবি সূর্য নিশ্চয়ই বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনে এক বিশাল অধ্যায়। বাঙালির চণ্ডিদাস, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, ১৯৪৭, একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১, আর রসগোল্লা ছাড়া আছে কী?
কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে গুরু থেকে ঠাকুর বানানো, সর্বত্র নিত্য পূজা ইত্যাদি নিছক আহাম্মুকি। এই পয়েন্টে রোদ্দুরকে সমর্থন করি। বাড়া চাঁদ উঠেছিল গগণে...।
পুনশ্চ:
কল্লোল,
ইদানিং যারা গাইছেন, তাদের মধ্যে জয়তি চক্রবর্তির গাওয়া ভালো লাগে। একটু আগের রেজওয়ানার গাওয়াও বেশ ভালো। পুরুষ কন্ঠ তেমন শুনতে পাই না। মোহন সিং বা মনোজ মুরলী খুব একটা দাগ কাটে নি।
মাফ করবেন দাদা, নিজে খুবই সামান্য মানুষ, নিতান্তই নিউজ ক্লার্ক, সংগীতের আর কী বুঝি?
তবু এইপারে একদা শিক্ষকেরও শিক্ষক ছিলেন, গুরুদের গুরু, কলিম শরাফি আজন্ম নিভৃতেই থাকতে চেয়েছেন, মহীরুহরা বোধকরি এইরূপ মহৎ হন।
পারলে অবসরে শুনে দেখবেন, এ এক দারুণ বিস্ময়!
*সংশোধনী = উপরের মন্তব্যের প্রথম অংশটুকু উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরে হবে, যথা--
“কল্লোল,
ইদানিং যারা গাইছেন, তাদের মধ্যে জয়তি চক্রবর্তির গাওয়া ভালো লাগে। একটু আগের রেজওয়ানার গাওয়াও বেশ ভালো। পুরুষ কন্ঠ তেমন শুনতে পাই না। মোহন সিং বা মনোজ মুরলী খুব একটা দাগ কাটে নি।“
এই আলোচনায় ঋদ্ধ হলাম। ন্যাড়াবাবুর মূল ধরতাই আমার একদম যাকে বলে 'করেজুয়া মেঁ তির"। পিটির কিছু বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। কিন্তু নিজে কিছু ক্রিয়েটিভ সৃষ্টি না করলে ক্রিটিক্যাল স্টেটমেন্ট দেওয়া যাবে না --এটা মানতে পারছি নে। তাহলে কোন কমেন্টেটরেরই তেন্ডুলকরের শট সিলেকশনের ভুল নিয়ে কথা বলা মানায় না ।
আমি অধিকারী নই , তাই বেশি বলা উচিত নয় । কিন্তু কল্লোলের এবং আরও একজনের সঙ্গে একমত যে ভালো কীর্তন এবং টপ্পা শুনতে হলে ইউটিউবই আজকাল ভরসা। সেদিন একজন নতুন গায়িকার কীর্তন শুনে মনে হল ছবি বন্দ্যোর অনুকরণ।
“কল্লোল | 162.158.165.235 | ০৯ মার্চ ২০২০ ২৩:১৫91356
ভাই বিপ্লব। কোন এক অত্যাশ্চর্য কারনে এনার নম শুনেছি, কিন্তু গান শুনিনি। এ আমার লজ্জা। তোমার কাছে জীবনের মত কেনা হয়ে থকলাম।“
কল্লোল দা,
এভাবে বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আমি খুবই সামান্য মানুষ।
এই হাই ব্রিড, আর করপোরেট যুগে কলিম শরাফি ওপারে তো বটেই, এপারেও বিস্মৃত প্রায়। প্রথমত, তিনি কখনো আইকন তো দূরের কথা, ফোকাসডই হতে চাননি, তাঁরকা তো ননই। দ্বিতীয়ত, তাকে চিনতে না পারার দায় বাংলাদেশেরই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বামপন্থার ঘনিষ্টযোগ কোনো সরকারই তাকে ভাল চোখে কখনো দেখেনি (ন্যাড়া দাকে আলাদা করে বলছি)।
তবে অধমের সৌভাগ্য হয়েছে, সংবাদসূত্রে একাধিকবার তার লাইভ অনুষ্ঠান দেখার। এখনো চোখ বুজলে তাকে দেখতে পাই, ফিনফিনে আদ্দির সাদা ঢোলা পায়জামা আর খাটো পাঞ্জাবি পড়া পৌঢ় কলিম শরাফিকে, গোমুখ আসনে বসেছেন, “গীতাঞ্জলি“ থেকে অর্ডার দিয়ে বানানো দামি ডাবল রিডের কালো রঙা হারমোনিয়ামেটিকে ধরেছেন একপাশে, দুইজন তবলচি সঙ্গত করছেন তার সাথে, সেঁতার, তানপুরা, এস্রাজ, বেহালা, বাঁশি, মন্দিরা, এমনকি গিটার ও খোলও আছে। তবে মঞ্চে আলোক সম্পাত একমাত্র মহানায়কের ওপরেই।
তিনি জলদগম্ভীর স্বরে গাইছেন, “বড় বেদনার মতো বেজছো তুমি হে“...
আবছা অন্ধকারে আমার কয়েক সিট পরেই দেখতে পাচ্ছি, দর্শকের আসনে একদম প্রধান সারিতে বসে আছেন আছেন জামদানি পরা তার পৌঢ়া স্ত্রী, তিনি শব্দহীন করতালে তাল ঠুকছেন।
ওই জাদুকরী কণ্ঠের সাথে কারোরই কোনো তুলনা চলে না। তার ধাঁচই আলাদা।
“কল্লোল | 162.158.165.235 | ০৯ মার্চ ২০২০ ২৩:১৫91356
ভাই বিপ্লব। কোন এক অত্যাশ্চর্য কারনে এনার নম শুনেছি, কিন্তু গান শুনিনি। এ আমার লজ্জা। তোমার কাছে জীবনের মত কেনা হয়ে থকলাম।“
কল্লোল দা,
এভাবে বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আমি খুবই সামান্য মানুষ।
এই হাই ব্রিড, আর করপোরেট যুগে কলিম শরাফি ওপারে তো বটেই, এপারেও বিস্মৃত প্রায়। প্রথমত, তিনি কখনো আইকন তো দূরের কথা, ফোকাসডই হতে চাননি, তাঁরকা তো ননই। দ্বিতীয়ত, তাকে চিনতে না পারার দায় বাংলাদেশেরই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বামপন্থার ঘনিষ্টযোগ কোনো সরকারই তাকে ভাল চোখে কখনো দেখেনি (ন্যাড়া দাকে আলাদা করে বলছি)।
তবে অধমের সৌভাগ্য হয়েছে, সংবাদসূত্রে একাধিকবার তার লাইভ অনুষ্ঠান দেখার। এখনো চোখ বুজলে তাকে দেখতে পাই, ফিনফিনে আদ্দির সাদা ঢোলা পায়জামা আর খাটো পাঞ্জাবি পড়া পৌঢ় কলিম শরাফিকে, গোমুখ আসনে বসেছেন, “গীতাঞ্জলি“ থেকে অর্ডার দিয়ে বানানো দামি ডাবল রিডের কালো রঙা হারমোনিয়ামেটিকে ধরেছেন একপাশে, দুইজন তবলচি সঙ্গত করছেন তার সাথে, সেঁতার, তানপুরা, এস্রাজ, বেহালা, বাঁশি, মন্দিরা, এমনকি গিটার ও খোলও আছে। তবে মঞ্চে আলোক সম্পাত একমাত্র মহানায়কের ওপরেই।
তিনি জলদগম্ভীর স্বরে গাইছেন, “বড় বেদনার মতো বেজছো তুমি হে“...
আবছা অন্ধকারে আমার কয়েক সিট পরেই দেখতে পাচ্ছি, দর্শকের আসনে একদম প্রধান সারিতে বসে আছেন আছেন জামদানি পরা তার পৌঢ়া স্ত্রী, তিনি শব্দহীন করতালে তাল ঠুকছেন।
ওই জাদুকরী কণ্ঠের সাথে কারোরই কোনো তুলনা চলে না। তার ধাঁচই আলাদা।
ন্যাড়া দা,
অনেকটাই সঠিক বলেছেন।
কলিম শরাফি যৌবনে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মি ছিলেন। ওপারে গান্ধির “ভারত ছাড়ো“ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তার একাধিক লাইভ গানের অনুষ্ঠানে স্মৃতিকথায় শুনেছি, নেতাজির অনুপ্রেরণায় তারা খুব অল্প বয়সে “মুকুল ফৌজ“ নামক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন। যাদের কাজ ছিল দাংগা-হাঙ্গামা রোখা, ১৩৫০ এর মান্তরের সময় লঙ্গরখানা খুলে জীবন বাঁচানো, সমাজ সংস্কার ইত্যাদি। কিন্তু এই বাঙালি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর গুপ্ত লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ বিরোধী সেনা বাহিনী গড়ে তোলা, নেতাজির ডাকে সংঘবদ্ধ স্বাধীনতার যুদ্ধ করা, এটি ঠিক বয়েজ স্কাউট নয়।
দেশবিভাগ তাকে খুব আহত করেছিল। শিল্পী মন, অনেক ভার সইতে পারেননি, ওপারে তার মুসলিম নাম-পরিচয় খুব শিগগিরই চেনা জগতে অস্বস্তি তৈরি করেছিল, খোদ অল ইন্ডিয়া কমিউনিস্ট পার্টি তিন-চারভাগে ভাঙল যখন, তিনি “বড় বেদনা“ নিয়েই উদ্বাস্তুর মতো চলে আসেন এপারে। কিন্তু “কমিউনিস্ট“ ট্যাগের কারণে কোনো সরকারই এই গুনিজনকে মূল্যায়ন করেনি। আর তিনিও নিভৃতেই থাকতে চেয়েছেন আজীবন, শান্তিনিকেতনের শিক্ষায়।
তবে একান্তে সংগীত সাধনা, আর অসংখ্য গুণিশিল্পী তৈরি করার ফাঁকে কলিম স্বভাবসিদ্ধ নিভৃতে দুটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন, একটি “ছায়ানট“, নাচগান, অভিনয় ও বাংলা মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা।
তার আরেকটি নেপথ্য অবদান “বেঙ্গল ফাউন্ডেশন“, চিরায়ত বাংলা গানের রেকর্ড প্রকাশ, চিত্র প্রদর্শনী, বিশাল ক্যাম্পাসে বই বিক্রি+গ্রন্থাগার+দুটি ক্যান্টিন চালানো, এটি ১২ ঘন্টার অপারেশন (সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮টা), “বেঙ্গল গ্যালারি“ ও “বেঙ্গল বুকস“ নামে দুটি নান্দনিক দক্ষযজ্ঞ, সব বয়সী পাঠকের মহামিলন মেলা।
কলিম শরাফিকে নিয়ে উইকিতে দু-চার কথা :
ভাই বি,
বাপ্রে! অনেক খপর রাখেন দেখতেছি। আপ্নেরে ধইন্যা। উডুক ... (লাবিউ ইমো)