এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  শিক্ষা

  • সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্জলি যাত্রা

    সীমান্ত গুহঠাকুরতা
    আলোচনা | শিক্ষা | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১২৯০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)


  • ১.

    ‘তুমি যুদ্ধার্থ উত্থিত হও; শত্রু জয় করিয়া যশঃ লাভ কর, নিষ্কন্টক রাজ্য ভোগ কর । হে অর্জুন, আমি ইহাদিগকে পূর্বেই নিহত করিয়াছি; তুমি এখন নিমিত্ত-মাত্র হও।'
    --- শ্রীমদ্ভাগবতগীতা, একাদশ অধ্যায়



    বলুন দেখি, পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা দুটো কী কী? দেখুন, সেই বিরানব্বুই সালে মনমোহন সিংজী লাইসেন্স রাজের অবসান ঘটিয়ে সর্বত্র দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। তারপর ভাগীরথির বুক দিয়ে কত জল বয়ে গেল, দেশী-বিদেশী শিল্পপতিরা কত চেষ্টাই করলেন, কিন্তু এ পোড়া রাজ্যে একটাও বড় মাপের কারখানা বানানো গেল না। বুদ্ধবাবুও পারেননি, মমতা ব্যানার্জীও পারলেন না। প্রতি বছর প্রচুর ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শিল্প-সম্মেলন হয়, হাজার-কোটি লক্ষ-কোটি বিনিয়োগের গল্প শোনা যায়, তারপর সময়কালে দেখা যায় সব ঢুঁ ঢুঁ। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের তো বসে থাকলে চলে না। নাই বা হল শিল্প, বিরাট একটা বাজার তো রয়েছে এ রাজ্যে। মোটামুটি সম্পন্ন একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা সব সময়ই এ রাজ্যে বিপুল। এরা মূলত চাকুরিজীবী, জেনেটিক্যালি অসম্ভব ভীতু, আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রত্যাশী, কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চান না এবং খুব বেশী ভোগবাদী জীবনেও অভ্যস্থ নন। এই বাজারে যদি বিনিয়োগের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়, যেকোনো সময় দেখা যাবে দুটি পণ্য এখানে সর্বাধিক পরিমাণ বিক্রির সম্ভাবনা --- – শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য।

    যেকোনো ‘প্রোডাক্ট’ বিক্রি করার তিনটে মূল কৌশল হল – কৃত্রিমভাবে চাহিদা তৈরি করা, বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করা এবং লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট --- বড় কোনো প্রতিযোগী ইতিমধ্যেই বাজারে থাকলে ছলে-বলে-কৌশলে তাকে সরিয়ে দেওয়া। ওহো, বলতে ভুলেছি আরেকটা জরুরি কথা – বড় বা ছোট যেকোনো ব্যবসাই হোক না কেন, শিল্পপতিদের সবার আগে চুক্তি করতে হয় শাসকের সঙ্গে। শাসক -- তা সে লাল, হলুদ, সবুজ যে রঙেরই হোক না কেন --- বণিকের বাণিজ্যে সহায়তা না করলে কোনোদিন গদিতে টিকতে পারেননি। পারেন না। মীরজাফর তো নিমিত্তমাত্র, জেনে রাখুন, ইংরেজরা যদি উমিচাঁদ বা জগৎ শেঠকে সময়মত হাতে না আনতে পারত, বাংলার সিংহাসন থেকে সিরাজকে কোনোদিনই সরানো যেত না। উল্টোদিকে এটাও সত্য যে সিরাজ তাঁদের যথেষ্ট ব্যবসার সুযোগ দিতে পারছিলে না বলেই তাঁরা ‘বিরোধীপক্ষে’ যোগ দিয়েছিলেন।



    ২.

    একটা-দুটো সহজ কথা
    বলব ভাবি চোখের আড়ে
    জৌলুসে তা ঝলসে ওঠে
    বিজ্ঞাপনে রংবাহারে
    --- মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে (শঙ্খ ঘোষ)



    থিওরি ক্লাস শেষ, এবার প্রাকটিক্যাল শুরু। শেষ কৌশলটা দিয়েই শুরু করি। বলুন দেখি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যে বিনিয়োগকারীর এ রাজ্যে সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কে বা কারা? খেয়াল করে দেখেছেন কি, মোটামুটি বিগত মোটামুটি দশ বছর ধরে এ রাজ্যে বারবার কোন দুটো ক্ষেত্র খবরের শিরোনামে আসছে? আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। ধর্মটাও আসে, তবে সেটা গৌণ, স্টপ গ্যাপে ক্লাসে আসা শিক্ষকের মত। পরপর মনে করুন -- শিক্ষামন্ত্রী গ্রেপ্তার ও তার বাড়িতে নোটের বাণ্ডিল উদ্ধার, হাইকোর্টের নির্দেশে ছাব্বিশ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল, সেটা থিতোতেই আর জি কর কাণ্ড, সেটা একটু সামলাতে না সামলাতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্যালাইন কেলেঙ্কারি, আবার তার পরপরই সুপ্রীম কোর্টে রায়। এর ফাঁকে ফাঁকে আসছে দীর্ঘ দুমাস করে গরমের ছুটি, মাধ্যমিকের প্রশ্নপ্ত্র ফাঁস, উৎসশ্রীর কল্যাণে গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষকের হাহাকার নিয়ে চর্চা, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতির মৃত্যু, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু এবং ভাঙচুর, জাল ও মেয়াদ ফুরনো ওষুধের চক্র…শিক্ষা-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য…।

    এ হল সেই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাজা ভেঙে দেবার নীতি। এ রাজ্যে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বাজার ধরার সবচেয়ে বড় দুই বাধা হল সরকারী স্কুল এবং সরকারী হাসপাতাল। এখনও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী পড়তে যায় সরকারী স্কুলে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চিকিৎসা পাবার জন্য নির্ভর করে সরকারী হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপর। ভাল ব্যাটসম্যান যেমন পরপর চার-ছয় মেরে বোলারের কাঁধ ঝুলিয়ে দেয়, তার আত্মবিশ্বাসের ভিত ধ্বসিয়ে দেয়, ঠিক তেমনিভাবে এই দুটি ক্ষেত্রে একেবারে চালিয়ে খেলার নীতি নিয়েছে এই লাইনের ‘বেওসাদার’রা। আর দোসর সুগ্রীব, থুড়ি শাসক তো আছেই। তাদের লাভ দ্বিবিধ --- এক. শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বোঝাটা মাথার ওপর থেকে যতটা সম্ভব হালকা করা এবং দুই. ব্যবসাদারদের লাভের বখরা।

    খেয়াল করে দেখেছেন কি, এই ডামাডোলের বাজারে, সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়ে এরকম একটা চরম উত্তপ্ত পরিস্থিতে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বসেও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী টুক করে গরমের ছুটি বাড়িয়ে দেবার ঘোষণাটি করে দিতে ভোলেন না। এখনও সেরকম গরম আদৌ পড়েনি এবং দুদিন আগেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান এ বছর অতিরিক্ত গরমের ছুটি দেবার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তাতে কী? শাসককে ব্যবহার করেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে অন্তর্ঘাতটা চালিয়ে যেতেই হবে। ঠিক যেমন কোভিড পর্বে সবচেয়ে বেশিদিন স্কুল বন্ধ ছিল আমাদের রাজ্যে, ঠিক যেমন স্বাস্থ্যসাথী বিমার ব্যবস্থা করে অন্তত এক তৃতীয়াংশ রুগীকে বেসরকারী হাসপাতালে ঠেলে দেওয়া গেছে। কমে গেছে পরিকাঠামো ও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ। লাভ বেড়েছে বেসরকারী হাসপাতালের।

    খাস কলকাতার শিক্ষার বাজারটা মোটামুটি বাম আমলেই চলে গিয়েছিল এই সব বিনিয়োগকারীদের হাতে। তৃণমূল আমলে তা আড়ে-বহরে বেড়েছে অনেক। ধরে নিয়েছে মফস্বলের ছোট-বড় শহরগুলোকেও। দুর্গাপুর, বহরমপুর বা জলপাইগুড়ির মত বড় শহর ছেড়ে এখন তা বারাকপুর, আমতা, উলুবেড়িয়া, মগরা বা আলিপুরদুয়ারের মত ছোট টাউনেও জাল ছড়াচ্ছে। একটু নজর করলেই দেখা যাবে, আজকাল এসব জায়গাতেও অজস্র সেন্ট নামধারী, ওয়ার্ল্ড স্কুল নামধারী, পাবলিক স্কুল নামধারী অজস্র স্কুল গজিয়ে উঠছে। আর তৈরি হচ্ছে অসংখ্য বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং আর মেডিকেল কলেজ।

    কিন্তু শুধু কারখানা বানালেই তো চলবে না, উৎপন্ন দ্রব্যটিকে তো মানুষের হাতে গছাতে হবে। তার জন্য চাই বিজ্ঞাপন। না, এসব স্কুল-কলেজের বিজ্ঞাপন সেভাবে খবরের কাগজে বা টিভিতে দেওয়া হয় না। এদের বিজ্ঞাপন-কৌশল কিঞ্চিৎ অন্যরকম – আপনার চোখের সামনে দিয়ে এই সবপড়ুয়ারা দামী ও সুদৃশ্য ইউনিফর্ম পরে, গলায় টাই আর আইডেন্টটিটি কার্ড ঝুলিয়ে, ঝাঁ চকচকে হলুদ রঙের বাসের চেপে স্কুলে যায়। দেখে, ক্ষমতাহীনের চোখ টনটন করে ওঠে। তাঁরাও মরিয়া হয়ে ওঠেন নিজের সন্তানকে এরকম কোনো স্কুলে পড়ানোর জন্য। এদের পাশে বিবর্ণ মলিন পোশাক আর জুতোর বদলে হাওয়াই চটি পরা সরকারী স্কুলের বাচ্চাদের রাস্তার ধার দিয়ে হেটে যাবার ছবি সেই সে বাসনাকে আরও উদ্গ্র করে তোলে। এই তো সেই বিজ্ঞাপনের মহিমা, যা আপনাকে লেবুর জল ছেড়ে ঠাণ্ডা-পানীয় কিনতে বাধ্য করে।

    এ প্রসঙ্গেই একটা মজার গল্প না বলে পারছি না। লোকাল ট্রেনের সহযাত্রী একদল প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারমশাই আর দিদিমণির মুখে শুনছিলাম, ইদানীং প্রতিবছরই নাকি ছাত্রসংখ্যা মোটামুটি দশ শতাংশ করে কমে যাচ্চে। ওঁরা যেসব স্কুলে পড়ান, সেগুলো প্রায় সবই অনেকটা ভিতরের দিকে, একেবারেই প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানে তো বেসরকারী স্কুলের প্রতাপ নেই বলেই জানতাম। তাহলে? প্রশ্ন শুনে ওঁরা হাসলেন, বড়ই ম্লান, বড়ই বিষন্ন সে হাসি। বললেন, সেদিন আর নেই দাদা। যত প্রত্যন্ত গ্রামই হোক না কেন, সর্বত্রই এখন ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে অজস্র নার্সারী আর প্রাইমারি স্কুল। আর এদের ব্যবসার প্রধান ভরসা কী জানেন? ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা আসে সরাসরি মায়েদের হাতে, আরে মেয়েদের সাংসারিক বুদ্ধি যে পুরুষের থেকে অনেক বেশি তা ইতিমধ্যেই একাধিক নোবেলজয়ী গবেষণায় প্রমাণিত। কাজেই এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই যে, মহিলারা ওই টাকার একটা অংশ ছেলে বা মেয়ের পড়াশুনার জন্য ব্যয় করতে চাইবেন। এটা তাদের কাছে খুব বড় একটা স্বপ্নকে সফল করার জন্য জীবনপণ লড়াই। সচরাচর এই সব ছোট ছোট স্কুলগুলোর বেতন হয় মাসে তিন-চারশো টাকার মত। বছরের শুরুতে ভর্তি আর বইপত্র বাবদ হাজার দুয়েক টাকা নেওয়া হয়। ব্যস। এটুকু মহিলারা ইদানীং স্বচ্ছন্দেই দিতে পারছেন। খোঁজ নিলে দেখবেন, এসব স্কুলে কিন্তু শিক্ষার পরিকাঠামো বলতে প্রায় কিছুই থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কুলবাড়িটিও কোনো গৃহস্থবাড়ি ভাড়া নিয়ে তৈরি হয়। পর্যাপ্ত আলো হাওয়া, উপযুক্ত শিখন সামগ্রী বা সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক – কিছুই এদের থাকে না। কিন্তু সেই অভাবগুলো এরা ঢেকে দেয় ঝকঝকে ইউনিফর্ম, ইংরেজি বোলচাল ইত্যাদি বহিরঙ্গের জাঁকজমক দিয়ে। গ্রামগঞ্জের অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত অভিভাবকেরা তাতেই বেজায় খুশি। এটা আলাদা কথা যে আমার সেই সহযাত্রীরা যে সরকারী স্কুলগুলোতে পড়ান, সেখানে ওইরকম চাকচিক্য বা পরিকাঠামো কিছুই থাকে না। এ রাজ্যের সরকারী স্কুলগুলোকে এক অদ্ভুত ‘নেই-রাজ্য’ বানিয়ে রাখা হয়েছে অনেকদিন ধরেই। ইদানীং তো কম্পোজিট গ্রান্টের টাকাটুকুও প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

    এবার বোঝা যাচ্ছে, কত শাসক-বানিয়ার যৌথ উদ্যোগে বিচিত্র পদ্ধতিতে ধ্বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারী শিক্ষাব্যবস্থাকে?

    পূর্বোক্ত বিভিন্ন শিল্পপতি গোষ্ঠীর সেন্ট বা পাবলিক নামধারী বড় বড় স্কুলগুলো যদি হয় বৃহৎ শিল্প, তবে ওইসব ছোটছোট নার্সারী স্কুলগুলোকে বলা যেতে পারে অনুসারী শিল্প। ঠিক যেমনটা দেখা যায় স্বাস্থ্যেও। আপনার এলাকায় সম্প্রতি তৈরি হওয়া ছোটখাটো নার্সিং হোম আর প্যাথোলজি ল্যাবগুলোর কথা মনে করুন, দিব্য ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।



    ৩.

    আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে
    আমরা দুজনে সমান অংশীদার
    অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে
    আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার
    ---- উটপাখি (সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)



    মজার ব্যাপার হল, এই বিরাট বাণিজ্যচক্রে সবার লভ্যাংশ আছে। সব্বার।

    যত স্ক্যাম, যত দুর্নীতি, শাসকের তত পকেট ভারি। সেই শাসক কখনো ‘বর্তমানের’, কখনো বা ‘ভবিষ্যতের’’। কারণ ব্যবসাদারদের সবার আগে যুগের হাওয়া বুঝতে হয় এবং সেই মত গদীয়ান সরকারপক্ষকে ছেড়ে সম্ভাবনাময় বিরোধী পক্ষের হাত ধরে নিতে হয়। এটুকু দূরদৃষ্টি ছাড়া ব্যবসা হয় না। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ সব সময় চায় গরম গরম ইস্যু। একটা আর জি কর কাণ্ড অথবা আদালতের এই রকম একটা ভয়ঙ্কর রায় মানেই সরকার ফেলে দেওয়ার এক-একটা সুবর্ণ সুযোগ। ছাব্বিশ হাজার শিক্ষকের এই পুরো প্যানেলটাই বাতিল হোক – এটা এ রাজ্যের যে দুজন লোক সবচেয়ে আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন এবং সেই মর্মে ক্রমাগত আদালত এবং আদালতের বাইরে সওয়াল করে গেছেন তারা হলেন বিকাশ ভট্টাচার্য এবং শুভেন্দু অধিকারী।

    তবে কিনা, ওই দুজনও পলিটিক্যাল ডিভিডেন্টের ছোটখাটো অংশীদার। সবার আড়ালে এ রাজ্যের শাসনক্ষমতা দখলের জন্য সেই ব্যবসাদারদেরই দেওয়া টাকার থলি নিয়ে বসে আছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তার জন্য – রামমন্দির সাক্ষী -- প্রয়োজনমত একটা-দুটো আদালতের রায় নিজের পক্ষে টেনে নিতে তাদের খুব একটা বিবেকে বাঁধে না। বিচারবিভাগও আমাদের গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসীপাতা নেই আর। সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিদের বাড়ি থেকেও আজকাল বান্ডিল বান্ডিল নোট পাওয়া যাচ্ছে, দুমদাম চাকরি ছেড়ে দিয়ে তাঁরা লোকসভার ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ছেন, জিতেও যাচ্ছেন পটাপট। অবসরের পর তাদের অনেকেই আবার রাজ্যসভার সদস্যপদও পেয়ে যাচ্চেন। তেমন তেমন একটা-দুটো ‘রায়দানের’ পর তাদের অনেককেই কোটি টাকা দামের বিদেশী গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। তাই সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে লঙ্ঘন করে এমন রায়-টায়ও আজকাল হামেশাই বেরিয়ে যাচ্ছে তাঁদের কলমের ডগা দিয়ে। অন্যদিকে মিডিয়াও এ খেলার বাইরে নেই। লাভের গুড়ের একটা বড় অংশ যাচ্ছে তাদের ঘরেও। এরকম এক-একটা ‘ব্রেকিং নিউজ’ মানেই টি আর পি-র গ্রাফ উর্ধ্বগামী। মানে ব্যবসাদারদের আরও বিজ্ঞাপন দেবার সুযোগ, আরও লাভ। ওই যে বলে না, প্রবলেম ইজ দ্য সলিউশন, সলিউশন ইজ দ্য প্রবলেম – এ হল সেই কেস।

    অলস অকর্মণ্য সারাদিন ঘাড় গুঁজে মোবাইলে আঙুল চালানো নিধিরাম সর্দারদের দলও ভারি খুশি, বেশ কয়েকদিন ধরে রগড়াবার মত ইস্যু তারা পেয়ে গেছেন। তারা ওটুকুতেই খুশি। বড় বড় ন্যারেটিভ নামাবার মত ‘বিতর্কিত বিষয়’ ছাড়া তাদের আর কিছুই চাই না। পরোক্ষভাবে লভ্যাংশ পান সরকারী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। মুখে যাই বলুন, তাদের বেশিরভাগই অবচেতনে চান ছাত্রসংখ্যা কমুক, চাপ কমুক কাজের। যত কম খেটে যত বেশি মাইনে পাওয়া যায় ততই মঙ্গল। (দাঁড়ান দাঁড়ান, আগেই চেঁচাবেন না স্যর, একবারটি ফেসবুকে শিক্ষকদের পেজগুলোতে ঘুরে আসুন। দেখবেন ইতিমধ্যেই গরমের ছুটির দাবিতে কী রকম হাউমাউ শুরু করেছেন আমাদের কর্মবীর শিক্ষক সমাজ।) ঠিক এভাবেই ভিতরের লোকগুলোকে ফাঁকিবাজির নাড়ু খাইয়ে কিছুদিন আগেই লাটে তুলে দেওয়া হয়েছিল সরকারী টেলিকম সংস্থাটিকে, মনে পড়ে সেকথা? পশ্চিমবঙ্গের সরকারী শিক্ষকসমাজ হল সেই কালিদাসের দল, যারা নিজেদের জীবিকার গোড়ায় নিজেরাই প্রতিনিয়ত কোপ মেরে চলেছেন। যেকোনো সরকারী স্কুলের টিচার্স রুমে ঢুকে দেখুন, দেখবেন একদল লোক নিজেদের মধ্যে অনেকগুলো দল বানিয়ে সারাদিন কোন্দল চালাচ্ছেন। এই ডামাডোলে লাভবান ছাত্রসমাজও। যত নামছে সরকারী শিক্ষার মান, তত বাড়ছে পাশের হার, বাড়ছে নাম্বারে ভর্তুকি, বাড়ছে বিলকুল পড়াশুনা না করেও ‘শিক্ষিত’ তকমা পেয়ে যাবার সুযোগ। তাদের আর এর থেকে বেশি চাহিদা কী-ই বা ছিল?
    গতকাল সান্ধ্য আড্ডায় জনৈক বন্ধু বিষণ্ণ মুখে জানতে চাইলেন, ‘হ্যাঁরে, কী মনে হয়, এই ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক চাকরি ফিরে পাবেন?’ ম্লান হেসে বললাম, ‘জানি না রে। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত জানি যে এর ফলে আমাদের সরকারী শিক্ষা-ব্যবস্থা যে মর্যাদা হারাল, তা আর কোনোদিন ফিরে পাবে না’।

    অতএব হে কলমচি অর্জুন, সংবরণ করো তোমার কলম। আর কাকেই বা আহত করবে তুমি ওই কলমের ঘায়ে? সবাই যে যার তালে আছে, সবাই যে যার লাভটুকু চুপচাপ পকেটস্থ করছে, এই বিরাট খেলায় তুমিও নিমিত্ত মাত্র, যাকে যার মারবার তাকে তিনি মেরেই রেখেছেন। বিগত পনেরো বছরে উক্ত বেওসারদার এবং এ রাজ্যের বর্তমান সরকার পরস্পরকে চিবিয়ে চুষে একেবারে ছিবড়ে করে ফেলেছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ব্যবসা দুটো প্রায় স্যাচুরেশন লেভেলে পৌঁছে গেছে। এখন অন্য কোনো বড় ব্যবসা বা শিল্প দাঁড় না করালেই নয়। কিন্তু মাননীয়া যতদিন গদিতে আছেন, তা আর হবার নয়, তাও তাঁরা দিব্য্ বুঝে গেছহেন। এ রাজ্যে বিনিয়োগ মানে এখন দাঁড়িয়েছে কিছু হাঁ হয়ে থাকা মুখের গর্তে ক্রমাগত টাকা ঢেলে চলা। শুধু দাও আর দাও। ঘরে ফেরত আসে না প্রায় কিছুই। অতএব এবার গুজরাটি ‘মোটাভাই’-কে একটা সুযোগ দিয়ে দেখা যাক। তাই খেলা ঘুরছে, তাই ফাস্ট ছেড়ে এখন শুরু হয়েছে স্পিন বোলিং। আসন্ন ছাব্বিশে পলাশীর দ্বিতীয় যুদ্ধ।



    ৪.

    আজকে রাতে চামচিকে আর পেঁচারা
    আসবে সবাই মরবে ইঁদুর বেচারা।
    --- হ-য-ব-র-ল (সুকুমার রায়)



    এ রাজ্যের সরকারী স্বাস্থ্য আর শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, এখন শুধু মুখে গঙ্গাজলটুকু পড়ার অপেক্ষা



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১২৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • b | 14.139.***.*** | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪৪542110
  • "সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিদের বাড়ি থেকেও আজকাল বান্ডিল বান্ডিল নোট পাওয়া যাচ্ছে,"
    বিচারপতি ভর্মার কথা বলছেন কি ? উনি দিল্লি হাইকোর্টের । 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:102f:2f55:d429:***:*** | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১৩542111
  • ভাল এবং জরুরী লেখা 
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৪৭542119
  • অর্থনীতিতে একটা এফেক্ট নিয়ে আলোচনা হয় -ডেমন্স্ট্রেশন এফেক্ট। শিক্ষায় এটা অনেকদিন ধরে আছে। আমি বাড়ির পাশের বেড়ার স্কুলে মাধ্যমিক অব্দি পড়েছিলাম। যা হোক একটা পোশাক পড়ে পায়ে হাওয়াই চটি। তখন অল্প কিছু সম বয়সীদের দেখতাম ইউনিফর্ম পরে টুই টুই করে ইংরেজি বলতে বলতে স্কুলে যাচ্ছে মা কিংবা বাবার সাথে। এর বেশ কিছুকাল বাদে বাড়িতে আয়া সেন্টার থেকে এক যুবতী মা কে কাজে পাঠাল। হিঙ্গলগঞ্জ থাকে। মাসে দশ হাজার -ও পাবে আট হাজার। কাজে যোগ দিয়ে পরদিন সে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করল। এখানে কোথাও জি পে সেন্টার আছে কিনা। ওর এখুনি পাঁচ হাজার লাগবে ওর মেয়ের পাড়াতুত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মাইনে। না ধার চায় নি। ওর ব্যাংক থেকে তুলবে। তিন টে নদী পেরিয়ে যেতে হয় ব্যাংকে টাকা তুলতে বা ATM ব্যবহার করতে। তাই জি পে (গুগল পে) ব্যবহার করে পাড়ার মুদি দোকানির ব্যাংকে টাকা পাঠায় আর মুদি কমিশন কেটে ক্যাশ দেয়। যাদবপুরে এমন কোন সেন্টার আছে কিনা খোঁজ করছিল।
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০৪542120
  • আমার সেই পাড়ার স্কুল এখন পাকা বাড়িতে। সাদা জামা নীল প্যান্ট পরে যেতে হয়। আমাদের সময় বেঞ্চে জায়গা পেতে মারামারি করতে হত। এখন ছাত্র নেই। তবে মাস গেলে মাইনে আছে সরকারি হারে। তখন ওরা খেপে খেপে মাইনে পেত। তাই এখন পড়াতে হোক বা না হোক পনের লাখ দিয়ে হলেও চাকরি পেতে চায়। বাম আমলে স্কুলে যোগ দিতে লাখ খানেক দিতে হত বলে শুনেছি। তবে পার্টির অনুমোদনে প্যানেল হত। ওর থেকেই নিয়োগ হত। একবার বাটা নগরের একটা স্কুলে ইন্টারভিউ নিতে আমায় যেতে অনুরোধ করল এক পরিচিত অধ্যাপক সহকর্মী। জীবনে প্রথম বলে সানন্দে রাজি হলাম। তারপর শুনলাম একটা চিরকুট দেখে টিক দিতে হবে। গেলাম না।
    সরকারি স্কুলের অন্তরজলি যাত্রা অনেকদিন ধরেই চলছে।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০০:১১542125
  • যেসব লোকেরা এই নিয়ে এই হ্যানো সেই ট্যাঙোও ওই ত্যান লেখালিখি  করছেন তাঁরা  নিজেদের সন্তান  নাতিপুতি  ইত্যাদিদের  কোন স্কুলে  ভর্তি  করেন ? 
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০৬542130
  • পাঁচ বাড়ি বাসন মেজে জীবিকা অর্জন করা মায়েরা ও বেসরকারি 'এলিট' স্কুলে তাদের বাচ্চাদের ভর্তি করার চেষ্টা করে। কিছু মিশনারি স্কুল এদের ভর্তি নেয়। কিন্তু সরকার মাইনে দেয় এমন স্কুলে চাকরি তো অনেকে খোঁজে। প্রয়োজনে পনেরো বিশ লাখ ঘুষ ও দেয়। তাই তোলামুল নেতারা ফুলে ফেঁপে ওঠে। বঞ্চিতরা মামলা না করলে জানতেই পারতাম না কী চলছিল।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০২542134
  • @ &/ এখানে একটা কথা বলার, আমার কোনো বিষয়ে পার্সোনাল স্টেক না থাকলে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে না, এটা ঠিক নয় বোধহয়। আমেরিকায় বা বাংলাদেশে না থাকলে কি আমেরিকার বা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা যাবে না? কেন শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী সরে এসেছে, সেটা নিয়েই তো অনেকটা আলোচনা করা হয়েছে লেখায়।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৫542135
  • জিনিসটা শখের  আলোচনা হয়ে  দাঁড়ায়  তাহলে। দ্বিচারিতাও খানিক।  নিজের নাতিপুতিকে  যে সিস্টেমে ভর্তি করছি , সঙ্গে সঙ্গে সেটার লেজিটিমেসিও দিয়ে দিচ্ছি , সেটা  সকলেই  বোঝে।  আলগালগা আলগা  হরিনামের  মত  তাত্ত্বিক  কথায়  কী আসে যায় ?
  • π | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪৩542149
  • তাহলে &/ কেন আম্রিগায় বসে ভারত বা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এত পোস্ট করেন, এই যুক্তিক্রমে সেই প্রশ্নও কেউ তুলতে পারেন। ভেবে দেখবেন। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৪542150
  • অ্যান্ডরের চৌদ্দ গোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে ও ভারতে বাস করেন।
  • π | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৯542151
  • এণ্ডর তো করেননা। আপনি যাঁদের আক্রমণ করছেন, তাঁদেরও গোষ্ঠীর কে কী করেন, আপনি জানেননা,  তাই না?  
    এরকম কুযুক্তি দিয়ে আক্রমণ করলে, তার জালে নিজেই জড়াবেন। তার চেয়ে এসব ছেড়ে আলোচনায় আসুন। 
    ব্যক্তি আক্রমণ ছেড়ে বাংলা মাধ্যম, সরকারি স্কুলের দূরবস্থা নিয়ে আলোচনা করুন না। অভিভাবকেরা কেন সেখানে পাঠাচ্ছেন না, সেই নিয়েও তর্ক, আলোচনা হতেই পারে, আগেও হয়েছে।
     
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৯542152
  • পশ্চিমবঙ্গে, ভারতে
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩০542153
  • হ্যাঁ, আলোচনা তো অবশ্যই হবে। তার তো কোনো অসুবিধে নেই। করুন, আলোচনা করুন। সবিস্তারে।
  • ইস | 107.77.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৯542159
  • আগে তবু "আমাকে গাল দিচ্ছে" বলে নাকে কাঁদা যেত, এখন ভদ্র প্রতিবাদে আলোচনা করুন ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪২542160
  • আমার পোস্টে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত কারুরই  তিলমাত্র কিছু আসবে যাবে না , তাই সবই 'শখের ' আলোচনা . আপনারা  যাঁরা মাঠে আছেন, আন্দোলন ইত্যাদি করেন তাঁদের অনেক বেশি গুরুত্ব এ কে না জানে 
  • সিএস | 103.99.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০০542188
  • লেখাগুলো যে লেখা হয়, লেখকরা তথ্য - ফথ্য দেখে লেখেন, খোঁজ করার চেষ্টা করেন ? এখন কিন্তু সহজেই পাওয়া যায় সেসব। নাকি, অশোক মিত্র et al রা এককালে যেমন বলতেন যে শহরের লোককে দেখে গ্রামেও টাই পড়ে ছেলেপুলেরা স্কুলে যাচ্ছে, সেই একই যুক্তি আউড়ে যাওয়া হচ্ছে, যা এই লেখায় আছে। সঙ্গে টাকনা হিসেবে কর্পোরেটের চক্রান্ত্ম বেওসাদার ইত্যাদি ?

    দশ % করে সরকারি স্কুলে ছাত্র কমছে আর অজস্র অজস্র বেসরকারি স্কুল - কলেজ গজিয়ে উঠছে, এই তো হল যুক্তি ? fact আছে ? অজস্র বেসরকারি কলেজ, পঃবঃ -এ, ক'টা রে ভাই ? যাই হোক, নীচে কিছু সংখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হল, দিল্লী সরকারের সাইট থেকে, ইচ্ছুকরা আরো নেড়ে - ঘেঁটে দেখতে পারেন। দেখলেও অবশ্য লাভ আছে বলে তো মনে হয় না, perception দিয়ে পলিটিক্স চলে, আর এখানে যারা লেখা পড়ছেন বা লিখছেন তাদের perception হল, সব করপোরেটের চক্রান্ত আর লোভী মধ্যবিত্তদের কর্পোরেট আকুতি।

    https://kys.udiseplus.gov.in/#/home থেকে Region Profile হয়ে

    https://kys.udiseplus.gov.in/#/region

    ১। ২০১৯-২০ এ পঃবঃ সর্বমোট স্কুল ৯৫৭৫৫, গভঃ স্কুল % ৮৭.১৬%
    ২। ২০২২-২৩ এ পঃবঃ সর্বমোট স্কুল ৯৪৪০২, গভঃ স্কুল % ৮৭.৩৫%।
    ৩। ২০২৩-২৪ এ পঃবঃ সর্বমোট স্কুল ৯৩৮৬৫, গভঃ স্কুল % ৮৭.৬%।

    ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন ?
    স্কুল সংখ্যা সামান্য কমেছে কিন্তু গভঃ স্কুল % সামান্য করে করে বাড়ছে ! এই গভঃ স্কুলের মধ্যে নানা রকমের ভাগ আছে, সেসব দেখা প্রয়োজন।

    কিন্তু আপনারা তো এসব দেখবেন না, গ্রাণ্ড ন্যারেটিভ আউড়াবেন, 'পলিটিক্স' আর কর্পোরেট নেক্সাস দেখবেন, পারসেপ্শন দিয়ে চালিত হবেন, সংখ্যা ফংখ্যা দেখে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নিজের পারসেপ্শনের সঙ্গে না মেলাতে পারলে, ব্যাপারটা কী বুঝতে চাইলে, অনেক মাথা খাটাতে হবে।

    শিক্ষার্থী সংখ্যার ব্যাপারও এই সাইটে আছে, দেওয়ার চেষ্টা করব, পড়লাম কিনা বছর বছর ১০% করে নাকি ছাত্র সংখ্যা কমছে ! এক কালে অন্যত্র এসব নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম, তারপর আর ইচ্ছে হল না, আমার আর কী।

    আচ্ছা, আরো একটু দেখে যাই, যেমন ধরুন আলিপুরদুয়ার, সেখানে নাকি অজস্র বেওসাদারদের স্কুল !

    ১। ২০১৯-২০ এ, এই জেলায় সর্বমোট স্কুল ২০২০, গভঃ স্কুল % ৮১.৪৪%
    ২। ২০২২-২৩ এ এই জেলায় সর্বমোট স্কুল ২০০১, গভঃ স্কুল % ৮১.৬৬%।
    ৩। ২০২৩-২৪ এ এই জেলায় সর্বমোট স্কুল ১৯৯৪, গভঃ স্কুল % ৮১.৯%।

    ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন ?
    এই জেলাতেও স্কুল সংখ্যা সামান্য কমেছে কিন্তু গভঃ স্কুল % সামান্য করে করে বাড়ছে ! এই গভঃ স্কুলের মধ্যে নানা রকমের ভাগ আছে, সেসব দেখা প্রয়োজন। কেসটা সব রাজ্যস্তরে যা ঘটছে, সেরকমই।

    তো এই হল ছোট করে ব্যাপার। ডেটা - ফেটা দেখলে সেসব আপনাদের পারসেক্শনের সঙ্গে মিলবে না। কিন্তু পলিটিকাল হওয় কবেই বা ডেটার সঙ্গে মিলেছে, ডানপন্থীরাও মেলায় না, অন্যদিকের ক্রিটিকরাও মেলায় না। নিজেদের বায়াসই পলিটিক্স।
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২৬542190
  • জন সংখ্যা বৃদ্ধি কে হিসাবে এনে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে বাড়ছে না কমছে দেখা দরকার।
     
    স্কুলের সংখ্যা বাড়তেই পারে। সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুল স্থানীয় দাবিতে বা রাজনীতির চাপে বাড়ে। এরকম কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয় ও প্রতি জমানায় বাড়ে। যেখানে চাকরি বিক্রি হয় সেখানে শিক্ষক পদ বাড়াতে পারলে ঘুষের রেভিনিউ বাড়ে।
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩০542191
  • পড়ুয়া সংখ্যা ইত্যাদি একটু ঘাঁটা যাক।

    রাজ্য স্তরেঃ

    ১। ২০১৯-২০ তে সর্বমোট পড়ুয়া ১,৮৭,৪৮,২৭১, গভঃ স্কুলে যাওয়া পড়ুয়া ৮৪.৫%।
    ২। ২০২২-২৩ তে সর্বমোট পড়ুয়া ১,৭৭,৫৬,৫৫৮, গভঃ স্কুলে যাওয়া পড়ুয়া ৮৯.৩২%।
    ৩। ২০২৩-২৪ তে সর্বমোট পড়ুয়া ১,৭৯,৩৭,৬৫৯, গভঃ স্কুলে যাওয়া পড়ুয়া ৮৮.৫৮%।

    কী বুঝলেন ?

    ৫ বছরের তফাতে গভঃ স্কুলে যাওয়া % বেড়েছে কিন্তু মোট স্কুল পড়ুয়া সংখ্যা কমেছে। এই কমে যাওয়াটা হয়ত এক সময়ের কোভিড এফেক্ট (আরো দেখার বিষয় এবং এও হয়ত হয়েছিল যে লোকজন ছেলেপুলেদের সরকারি স্কুলে পাঠিয়েছিল), কিন্তু ডেটা বলছে যে বছর বছর ১০% করে পড়ুয়া সংখ্যা কমছে ?

    আলিপুরদুয়ারেঃ

    ১। ২০১৯-২০ তে সর্বমোট পড়ুয়া ৩,২৪,৩৩৬
    , গভঃ স্কুলে যাওয়া পড়ুয়া ৭৭.২৪%।
    ২। ২০২২-২৩ তে সর্বমোট পড়ুয়া ২,৮৫,০৫১, গভঃ স্কুলে যাওয়া পড়ুয়া ৮৬.০৯%।
    ৩। ২০২৩-২৪ তে সর্বমোট পড়ুয়া ২,৯২,৭৪১, গভঃ স্কুলে যাওয়া পড়ুয়া ৮৪.৭৭%।

    এখানেই মনে হয়, সেই একই। মোট সংখ্যা কমে গিয়ে বেড়েছে, % সংখ্যা ৫ বছরের তফাতে বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ডেটা বলে যে পড়ুয়া সং্খ্যা ১০% করে কমছে ?

    মাইরি, পঃবঃ শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপার আর তর্ক হল সেই ক্লাসিক কেস যেখানে পারসেপ্শন আর তথ্যর মধ্যে তফাত আছে। তো ঐ আর কী, ডেটা কেউ দেখে না, কিন্তু ডানপন্থীদের গলার জোর আছে আর এক রকমের 'আইডিওলজি' আছে ফলে তথ্যের উল্টোদিকে গিয়েও পলিটিক্স করতে পারে। অন্যদিকও ডেটা দেখে না, দেখলেও তাদের 'আইডিওলজির' আর ধারণার সঙ্গে মিলবে না, বুঝতে গেলে অনেক খাটতে হবে, ফলে নানা রকমের লেখা লিখে দিলেই হল, বাহবাও জুটবে।
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৮542192
  • একেই বলে ক্যাজুয়াল empiricism যেটা সি এস এক্সপোস করলেন।
  • π | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৪৯542194
  • % বাড়লেও গভ: স্কুলের সং্খ্যা  কিন্তু কমছে।
     
    পড়ুয়া সং্খ্যাও দেখতে হবে, % না। 
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০০542196
  • দেখা যাক, কলকাতা ডিস্ট্রিকের ডেটাগুলো। (এই সেই জায়গা যেখানে কলোনিয়াল ও কর্পোরেটের চক্রান্ত পুরোদমে)।

    ১। ২০১৯-২০, স্কুল সংখ্যা ২৪২১, গভঃ স্কুল ৮৬.২৯%।
    ২। ২০২২-২৩, স্কুল সংখ্যা ২৩৭৪, গভঃ স্কুল ৮৫.৯৭%।
    ৩। ২০২৩-২৪, স্কুল সংখ্যা ২৩৫৪, গভঃ স্কুল ৮৬.১৫%।

    আর,

    ১। ২০১৯-২০, পড়ুয়া সংখ্যা ৬,১১,১৪১, গভঃ স্কুল ৬১.৭%।
    ২। ২০২২-২৩, পড়ুয়া সংখ্যা ৪,৬৯,১৫৯, গভঃ স্কুল ৭১.৭৮%।
    ৩। ২০২৩-২৪, পড়ুয়া সংখ্যা ৪,৯০,৫০০, গভঃ স্কুল ৬৯.৭২%।

    দঃ চব্বিশ পরগণার ডেটাও দেখুন, কলকাতার কাছে, নিশ্চয়ই বেওসাদারদের প্রতিপত্তি খুবই বেশী।

    ১। ২০১৯-২০, স্কুল সংখ্যা ৭৩৯৭, গভঃ স্কুল ৮৩.৭২%।
    ২। ২০২২-২৩, স্কুল সংখ্যা ৭২৭০, গভঃ স্কুল ৮৪.৪%।
    ৩। ২০২৩-২৪, স্কুল সংখ্যা ৭২৭৮, গভঃ স্কুল ৮৪.৪২%।

    ১। ২০১৯-২০, পড়ুয়া সংখ্যা ১৭,২৬,৪৫৪, গভঃ স্কুল ৮৪.২২%।
    ২। ২০২২-২৩, পড়ুয়া সংখ্যা ১৬,৯৬,৪৮৬, গভঃ স্কুল ৮৯.৯৮%।
    ৩। ২০২৩-২৪, পড়ুয়া সংখ্যা ১৭,১০,৬৫৪, গভঃ স্কুল ৮৯.৪৫%।

    কী বুঝলেন ?

    আমি যা বুঝিঃ-

    ক) কলকাতা ডিস্ট্রিক্টে গভঃ স্কুলের %, রাজ্য স্তরের কাছাকাছি হলেও, সেই সব স্কুলে পড়ুয়া % রাজ্যস্তরের থেকে বেশ কম। যদিও, কোভিড সময় কালে কিন্তু গভঃ স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা বেড়ে গেছিল, অর্থাৎ গভঃ স্কুল 'সাধারণ' মানুষদের সাপোর্ট দিয়েছিল, সেই % মোটামুটি এখনও চলছে, দেখার যে সে সংখ্যা কমে যায় কিনা।

    খ) দঃচঃ পঃ তে গভঃ স্কুল %, রাজ্যস্তরের থেকে সামান্য কম কিন্তু পড়ুয়া % একই রকম ! আগের বোঝা আর এই বোঝা মিলিয়ে হয়ত বলা যায় যে বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের যাওয়ার ঝোঁক, সেটা এখনও কলকাতাকেন্দ্রিকই। কাছের দঃচঃপঃ তেও সেই কর্পো-কলোনিয়াল মানসিকতার এফেক্ট আসেনি, বেওসাদাররা - শাসক চেষ্টা করলেও আসেনি।

    মানে, বলার হল, ভাইসকল পঃবঃ অর্থনীতি এখনো ঐ স্তরে যায়নি, যাবেও না অদূর ভবিষ্যতে যে বেওসাদার আর কর্পোরেট শিক্ষাব্যাবস্থা দখল করে নেবে। হ্যাঁ, কলকাতা অঞ্চলে তার এফেক্ট থাকবে কারণ এই রাজ্যের অর্থনীতি তো ঐ জায়গা কেন্দ্রিক, এবং এটা যে রয়ে গেল, এর যে বদল হল না, তার দায় শাসকেরই। এর ফলও তারাই ভোগ করবে কিন্তু সেরকম ঘটবে বলে সবই কর্পোর সুতো টানা, টিএমসিপন্থী সেরকম apologia লেখার প্রয়োজন নেই।

    আর দ্বিতীয় কথা হল, যারা এইসব লেখা লিখছেন, তারাও হয়ত কলকাতাকেন্দ্রিক, অতএব সেখানকার ছবিই দেখছেন আর ভাবছেন সেই ছবি সারা রাজ্যেই ! তো, কর্পোরেটের ক্রিটিক হতে গিয়ে প্রকরান্তরে তারাও কর্পোরেটকেন্দ্রিক ব্যবস্থা দিয়েই নিয়ন্ত্রিত এবং কলকাতাকেন্দ্রিক চিন্তা দিয়েই, সেই কর্পোরেটীয় প্রভাব ছিঁটেফোঁটা যা এখানে সেখানে আছে সেইটুকুই দেখছেন।

    আর এও জেনে রাখুন, রাজ্যভিত্তিক পড়াশোনার মানেরও ডেটা পাওয়া যায়, কেন্দ্রীয় সরকারেরই ডেটা। মোটামুটি বেশীরভাগ রাজ্য যেখানে, পঃব-এ স্কুল শিক্ষার মান কিন্তু সেখানেই (বছর দুয়েক আগের ডেটা, দিল্লী আর কেরালা সবথেকে ভাল জায়গায় ছিল)। তবে হ্যাঁ, শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তর পড়াশোনা সংক্রান্ত একটা 'স্বর্ণযুগ' ছিল, বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ছিল, অতএব হাহুতাশ সেইসব দ্বারাও চালিত। 
     
    কিন্তু তাহলে দুর্নীতি আর চাক্রি বিক্রির ব্যাপারগুলো কী করে সরকারি শিক্ষা, তার ব্যাপ্তি ও মানের সঙ্গে মেলাব ? সেসবের কী সরকারি শিক্ষার সঙ্গে যোগ নেই ? এইটা একটা কঠিন ঠাঁই বলে মনে হয়, মানে এটা আমি এখনও বুঝিনি। এই এতসব টাকার খেলা, কোথায় গিয়ে এফেক্ট ফেলছে।
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:২৭542203
  • স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংক্রান্ত কিছু ডেটা একটু দেখা যাক, সবই ২০২৩-২৪ অনুযায়ী, সরকারি - বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে।

    ১। একজন শিক্ষক নিয়ে স্কুল ১.১১% (সরভারতীয় ক্ষেত্রে ১.১৩%), মোট সংখ্যার হিসেবে ১০৪০ টি স্কুল। কেউ যদি সভায় বলে বা লেখে যে পঃবঃ হাজার খানেক স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক, তার একটা প্রভাব অবশ্যই আছে, আর যদি হাজারকে "হাজার হাজার" বানিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো হয়েই গেল ! কিন্তু এরকম কথা কেরালায় বলতে পারবেন না, যেখানে ০.০৩% সেরকম স্কুল, মোট হিসেবে ৫ টি মত, অথবা তামিলনাড়ুতে সেরকম স্কুল আছে ০.০৫% বা ৩০টি মত ! ফলে ঐ দুই রাজ্যে এই তথ্য দিয়ে গভঃ এর সমালোচনা করা সম্ভবই না, সংখ্যায় এতই ছোট। অথবা ঐ দুই রাজ্যে যদি ঐ অল্পসংখ্যক স্কুলগুলোকে বন্ধ করে অন্য স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয় তারও এফেক্ট খুবই কম হবে পঃবঃ এর তুলনায়, যেখানে হাজার খানেক স্কুল বন্ধ করে অন্য স্কুলের সঙ্গে মেশাতে গেলে হয়ত সেই কাজটি 'খবর' হয়ে যাবে। আপাতভাবে মনে হয়, সেটাই হয়ত পথ যদি না শিক্ষক ও পড়ুয়াসংখ্যা ঐসব স্কুলে বাড়ানো যায়। কিন্তু কিছুই না করলে,  সরকারকে কথা শুনতে হবে।

    ২। একজন শিক্ষক নিয়ে স্কুলগুলোর জেলাভিত্তিক ভাগ এরকমঃ

    কলকাতা - ০.৩২%
    মালদা - ০.৪৭%
    হুগলি - ০.৬৪%
    নদীয়া - ০.৭৫%
    উঃচঃপঃ - ০.৮১%
    পঃ বর্ধমান - ০.৮২%
    হাওড়া - ০.৮৪%
    মুর্শিদাবাদঃ - ০.৮৫%
    দঃচঃপঃ - ০.৯০%
    জলপাইগুড়ি - ০.৯৫%

    পূঃ বর্ধমান - ১.৪৬%
    পঃ মেদিনীপুর - ১.৫০%
    পূঃ মেদিনীপুর - ১.৫৬%
    বাঁকুড়া - ১.৮৫%
    পুরুলিয়া - ১.৯৩%
    বীরভূম - ২.০১%
    ঝাড়গ্রাম - ২.৫৫%
    দার্জিলিং - ৩.৮৫%

    - প্যাটার্ন হয়ত কিছু আছে। কলকাতায় যথারীতি % টি সর্বনিম্ন এবং সেই পাহাড়ে দার্জিলিং -এ সেটি সর্বোচ্চ !
    - বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম জেলাগুলো যাদের 'পিছিয়ে পড়া' বলা হয়, সেখানে সংখ্যাটি বেশ বেশী।
    - দার্জিলিং - এ গভঃ স্কুলে পড়ুয়া % ৬৭ মত, ঝাড়গ্রাম - পুরুলিয়াতে ৯৫% - ৯৬%। এইসব সংখ্যাগুলোর ভিত্তিতে হয়ত rationalise করা যায়, স্কুলগুলোকে যুক্ত করা অথবা শিক্ষক নিয়োগ।

    আরো অনেক দিকের মতই পঃবঃ স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রেও মাঝামাঝি একটা জায়গায়, খুব ভালও নয় আবার অন্তর্জলিও ঘটেনি। কিন্তু যা করার আছে, সে অনেক কাজ, গভঃ এর জন্য, ঐ যে বলে সরকারের সদিচ্ছা, তার সঙ্গে তো অনেক কিছুই যুক্ত, অর্থনীতি থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা। শুধুই কর্পো নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা বলে গভঃ আর কী করবে, যুক্তি মনে হয় না অত সোজা। কোন কর্পো এসেই এই ১০০০ খানেক স্কুল চালাবে না, সেসব নিয়ে কার্যকর কিছু করার সে গভঃ কেই করতে হবে আর কি !
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫২542205
  • শিক্ষক সংখ্যা বিষয়ক আরো একটু দেখা যাক। Regular Teacher দের নিয়ে ডেটা, এটা মনে হয় সেই ক্যাটাগরি যা দিয়ে স্কুলে পড়ানোর মান বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে, স্কুলে কত পদ ভর্তি বা খালি সে নিয়েও, সরকারের খরচ ইত্যাদি নিয়েও কারণ এরাই হল পার্মানেন্ট শিক্ষকগোষ্ঠী যাদের জন্য গভঃএর 'বোঝা' বাড়ে।

    - সব ডেটাই ২০২৩-২৪ এর।
    - সরকারি / বেসরকারি কোন ভাগ করা হয়নি।

    ১। জাতীয় হার ৮৪.৪১%
    ২। পঃবঃ এর হার ৮২.৭৭% (Non Regular 17.23%). জাতীয় হারের তুলনায় খারাপ।

    অন্য কিছু রাজ্যের এরকমঃ

    তামিলনাড়ু - ৮৫.৪৬%
    অন্ধ্র - ৮৬.৫৬%
    কর্ণাট্ক - ৯৪.৪১%
    কেরালা - ৯২.১৫%
    এমপি - ৯০.৭৭%
    গুজরাট - ৮৭.৮৪%
    মহারাষ্ট্র - ৯০.৪২%
    আসাম - ৭৮.১০%
    তেলেঙ্গানা - ৯০.৫২%
    ত্রিপুরা - ৭২.৯৭%

    পঃবঃ % আর অন্য রাজ্য যেখানে % বেটার, তাদের সঙ্গে তুলনা করলে হয়ত এই পারসেপ্শন তৈরী হতে পারে, যেঃ

    - পঃবঃ র স্কুলে শিক্ষক অপ্রতুল।
    - প্যারা টীচার বা সিভিক টীচার ইত্যাদি দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা চলে।
    - সরকার খরচ বাঁচাবার জন্য পার্মানেন্ট টীচার নেয় না।
    - কিছু জেলায় এই হার ৮০% এরও নীচে, ঝাড়গ্রাম, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি। শিক্ষকের অপ্রতুলতা ইত্যাদি আরো বড় ইস্যু হতে পারে এই সব জায়গায়।

    গত কয়েক বছরের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা পার্মানেন্ট শিক্ষকের এই হার নিয়ে হয়ত তৈরী হয়েছে। গভঃ জানত, এই ক্যাটাগরির শিক্ষকের সংখ্যা নিয়ে সমস্যা আছে, সেই হার বাড়ানো যায় রিক্রুটমেন্টের মাধ্যমে, জনগণ উৎসুক হবে সরকারি চাকরির দিকে এবং পুরো ব্যাবস্থাটির মধ্যে দুর্নীতি ঢোকানো যায়। সরকারি শিক্ষা ব্যাবস্থা তুলে দেওয়ার হলে আর রিক্রুট করবে কেন, প্রয়োজন সত্যিই আছে, কিন্তু তাকে ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর এসবের মধ্যে কর্পোর খেলা ইত্যাদি যা আনা হচ্ছে, সেসবের মূল্য আমার কাছে নেই।

    (প্রসংগতঃ, যেসব রাজ্য কর্পো অধ্যুষিত, দক্ষিণের না মহারাষ্ট্রা সেখানে কিন্তু এই সংখ্যাটি বেশীর দিকে, মানে কর্পো এলেও শিক্ষকদের খুব সমস্যা হবে, 'শোষিত' হবে, সেরকম হচ্ছে ?)
  • ;-) | 51.158.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৫২542218
  • সম্পাদিত লেখায় এরকম মিসইনফর্মেশন ছড়ানো হচ্ছে? স্রেফ ওয়ার্ড থেকে বুবুভায় কপিপেস্ট করাকে কি আর সম্পাদনা বলে?
  • π | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৩৭542219
  • বছরের পর বছর পড়ুয়া সং্খ্যা কমার কী কারণ?  
  • সোমনাথ | 203.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৬542221
  • আমার মনে হয় একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডেক্স ছাত্র-শিক্ষক রেশিও। শিক্ষার মান ইত্যাদি সরাসরি যেটার উপর নির্ভর করে,সেটা হল এই অনুপাত। পশ্চিমবঙ্গে এই অনুপাত জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেকটা কম। রাইট টু এডুকেশন যে ন্যূনতম মাত্রা রাখতে বলে তার চেয়েও বেশ কম। সংখ্যাগুলো দিলাম না, গুগলে ফেললেই দেখা যাবে।
     
    কিন্তু, যেটা আলাদা করে দেখার,এই গড় খুব স্কিউড। কলকাতায় শহরাঞ্চলে,সহজে যাতায়াত করা যায় এইসব জায়গায়,যেখানে ছাত্র সরকারি স্কুলে কম আসে  এবং জীবনযাত্রা লোভপ্রদ,সেখানে এই গড় খুব বেশি ভালো,আর জিলার অভ্যন্তরে,গ্রামাঞ্চলে খুব খারাপ- এইটা অবশ্য আমার আঁখো দেখি মন্তব্য। এই নিয়ে কেউ তথ্য জোগাড় করে দেখতে পারেন।
    এর পিছনে একটা বড়ো সমস্য রাজ্যওয়াড়ি এস স সি বা টেট হওয়া। নিয়োগগুলি বিকেন্দ্রিভূতভাবে ডিস্ট্রিক্ট বা ব্লক ধরে হলে এই সমস্যা সহজেই এড়ানো যেত।
  • সোমনাথ | 203.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৯542222
  • সরকারি স্কুলের শিক্ষার মান খারাপ- এই পার্সেপশন চালু হওয়া, ব্যাঙের ছাতার মতন বেসরকারি স্কুল গজিয়ে ওঠা এবং এস এস সি চালু হওয়া একই সময় থেকে।  এস এস সি বা টেট-এর আগে সরকারি স্কুলের কমিটি নিজেই নিয়োগ দিতে পারত। যে নিয়োগাধিকার বেসরকারি স্কুলের হাতে আজও আছে বলে আমরা মনে করি সেখানে ভালো পড়াশুনো হয়।
  • b | 14.139.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:১৪542223
  • " এস এস সি বা টেট-এর আগে সরকারি স্কুলের কমিটি নিজেই নিয়োগ দিতে পারত"
     
    দেখুন দুরকম স্কুল ছিল বলে তো জানতাম , এখন কি ব্যব্স্থাটা পালটেছে ?
    ১। সরকারী স্কুল যেমন হিন্দু/হেয়ার / বালিগঞ্জ গভ্ট /বেথুন ও প্রায় সমস্ত জেলা স্কুল ইত্যাদি  । এগুলির শিক্ষক নিয়োগ হত পি এস সি-র মাধ্যমে, শিক্ষক শিক্ষিকারা গণ্য হতেন  সরকারী গেজেটেড কর্মচারী হিসেবে। শিক্ষকেরা ট্রন্স্ফার হতেন। সদাশয় বাম সরকার ডব্লু  বি এইচ এ-র ত্যাড়া শিক্ষকদের bumএ   বাম-্বু দেবার জন্যে এই ট্রান্স্ফারাস্ত্র ব্যবহার করতেন। 
     
    ২। বেসরকারী স্কুল ( বা বলা ভালো গভর্নমেন্ট এইডেড প্রাইভেট স্কুল )ঃ সরকার টাকা দিতো , তাতে স্কুলের খরচ ও মাইনে পত্তর  চলতো , কিন্তু  শিক্ষক শিক্ষিকারা  নিয়োগ হতেন বিকেন্দ্রীভূত স্কুল কমিটির মাধ্যমে।  ট্রান্সফারের গল্প নেই । 
     
    এই নম্বর ২ তে , একটা সময়ে নিয়োগে দুর্নীতি ঢোকে । শুধু বেছে বেছে নিজের পার্টি নয় , লোকজনে (লোভ জিনিসটা পার্টি নিরপেক্ষ ) টাকা চেনার পর থেকে হবু শিক্ষকদের কাছ থেকে ইন্টারভিউয়ের সময়ে স্কুলের বাবদে মোটা অঙ্কের ডোনেশন চাওয়া হত ( এটা অবশ্য ডেটা নেই, এক এক্জনের মুখেই শোনা  )। সেজন্যে ভাবা হয়েছিলো যে এস এস সির মতো একটি সেন্ট্রাল প্যানেল থাকলে এরকম দুর্নীতি কম হবে । 
     
    **ডিঃ ১ নং এর নিয়োগে দুর্নীতি হতো না এরকম ক্লেম নাই । 
  • সোমনাথ | 203.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩২542224
  • নং ২এর কথা বলছি।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন