এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কাব্য

  • শ্রোতা

    জগন্নাথদেব মণ্ডল
    কাব্য | ০৫ জুলাই ২০২৪ | ২২৫১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)


  • আষাঢ় মাসের বিকেলে ছোট হল্ট স্টেশনে বসে আছি।আকাশ মেঘলা, লোকজন তেমন নেই।চোখে না পড়ার মতো চা দোকান। পাশে কদমগাছে অজস্র ফুল ফুটে আছে।

    হঠাৎ দেখি কিছু লোকজন দল বেঁধে প্ল্যাটফর্মে উঠে এল।গ্রাম্যদেশের মানুষ সব।কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। বেশ ঝলমলে জামাকাপড়।বুঝলাম, হাট থেকে ফিরছে।

    সামনের লোকটির কাঁধে একটা কাপড় জড়ানো খাঁড়া।অল্প কিছু অংশ বেরিয়ে আছে, আলো লেগে অল্প চমকাচ্ছে। কদিন পরে নিশ্চয়ই কোনো জাগ্রত থানে বলির ব্যাপার আছে।

    দলের ছোট সদস্যের হাতে একটা দড়ি, দড়ির শেষ প্রান্তে একটা কালো পাঁঠা আপনমনে নিশ্চুপে হেলতে দুলতে চলছে। পাঁঠার কানে ও মুখের কাছে অদ্ভূত কায়দায় ছোট মেয়েদের চুল বাঁধার লাল রঙের ফিতে জড়ানো,জড়ানোর ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে সযত্নে রচিত।প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ বরাবর ওরা সিধে হেঁটে মাঠে নেমে মিলিয়ে গেল।

    দেড় বা দুদিনের মাথায় যে পশু বলি হবে তার মাথায় বালিকার টকটকে লাল ফিতে, মৃত্যুকে নিয়ে যে লোকটি এমন চিন্তা করেছে সে ভাবুক লোক, রস আছে, সামান্য গম্ভীর, সূর্য পাটে বসলে একটা বিড়ি খায় নিয়ম করে।

    লোকটির কথা ভেবে কদম গাছের নীচে বসে এক কাপ চা কিনি। বোঝার চেষ্টা করি, দোকানি শিল্পী না কারিগর। কতোটা যত্নে লিকার ছেঁকছে, আদারস বা লেবু শেষে বিটলবণ বা গোলমরিচ দিচ্ছে কি না।

    বেলা কিছুটা আছে। চা খেয়ে মিনিট কুড়ি ঘুরে বেড়াই আরেক ইষ্টিশনে। পেচ্ছাপখানার দেওয়ালে সাঁটা বিজ্ঞাপন পড়ছি। লিঙ্গবর্ধক যন্ত্র, মা মনসা মোবাইল সেন্টার, তিন মাসে ফ্রিজ সারানো শিক্ষা।

    হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই বাস রাস্তার পাশ দিয়ে বিরাট এক বটগাছের পাশে। পাশে পুকুর। পুকুরে গভীর কলমিলতার ঢেউ। আকাশে বিরাট চাঁদ উঠব উঠব করছে।

    সিমেন্ট বাঁধানো চাতাল পার করলে আশ্রম। আগে শুনেছি এই আশ্রমের কথা। তমাল গাছের শিকড় বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে বসার জন্য। মাধবীলতা বুকে হেঁটে গাছের মাথায়। চারিদিকে ধূপধুনোজলের ভেজা ভেজা শান্তির গন্ধ।

    শ্রীখোল সামনে রেখে এক ভাঙাচোরা বুড়ো মানুষ বসে আছে। সাদা ধুতি পরনে, খালি গা, গলায় কন্ঠী,একটা পা নেই। দেওয়ালে ক্রাচ ঠেসিয়ে রাখা। বগলে ক্রাচ রেখে লাফাতে লাফাতে চাতাল, তারপর উঠে এল। ক্রাচ আর সিমেন্টের মেঝের ঘর্ষণের আওয়াজে কারুণ্য আছে।

    গিয়ে বসলাম। বাড়ি খবর সব শুধাল সেই মানুষ, কাজকর্মের খবর। বললাম - আমি অনেকদূর পড়াশোনা করেছি কিন্তু আমি বেকার, উপার্জনের চেষ্টা করছি।

    আমিও বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করছি সেই মানুষকে। ফ্যাকাশে মানুষ একটানা কথা বলতে পারছে না, কাশির বেগ আসছে, কপালের শিরা ফুলে উঠছে।

    গানের কথা বলছে। কীর্তন গায়। গৌর অন্তপ্রাণ সে, শ্রোতাদের দেখলে বুঝতে পারে কে কেমন শ্রোতা।

    ধরা যাক, ভেকশ্রোতা অর্থাৎ ব্যাঙ সারাক্ষণ গলা ফুলিয়ে ডেকে চলছে, ও কেবল ডাক নয়, কীর্তন করে চলেছে আপমনে জগৎ সংসার ভুলে।

    সর্পশ্রোতা, গান শুনতে শুনতে ঘোর ও ভাবে আবেশ হল, তখন মানুষ দুলতে শুরু করে বসে বসেই, সাপ যেমন ফণা দোলায়।
    শ্রীখোল খানিক সরিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে থেকেই দুলে দুলে এই ভঙ্গি করে দেখাল আমায়।

    রাজহাঁস-শ্রোতারা গানে ভেজাল থাকলেও মূল সুরটুকু নেয়, বাকি গ্রহণ করে না, ফেলে দেয়, দুধ রেখে জল ফেলে দেওয়ার মতো।

    বকশ্রোতা ভালো না।ভাণ করে।গানের রস না গ্রহণ করেও এমন ভাব করে যেন সে খুব রসিকজন, সে গান শোনে না কাউকে শুনতেও দেয় না।

    আসলে একজন মানুষ সাপব্যাঙহাঁসবক বয়ে নিয়ে চলে, আজীবন।

    খুব চমক লাগল আমার এইভাবে গানের শ্রোতাদের দেখার দৃষ্টিকে। ইতিমধ্যে ঘোমটা-টানা বউ সন্দেশ প্রসাদ দিয়ে গেছে। নিমকাঠের রাধাকৃষ্ণ, ষড়ভুজ চৈতন্যের কাছে প্রদীপ জ্বলছে, শীতলভোগ দেওয়া হয়ে গেছে।

    আমি শুধালাম - সংসার করেছেন?
    সেই মানুষ বলল - ঘোমটা মাথায় এল উনি তো গিন্নি আমার।

    একবার গান সেরে ফিরছিলাম, মোটরসাইকেল ধাক্কা মারে, তাতেই তো একটা পা যায়, উনি সেবা করে খুব।

    ছেলেমেয়ে কটি আপনার?

    উত্তর দিতে একটু সময় নেয়। কাশির দমক সামলায়। তারপর মিষ্টি হেসে বলে - এক ছেলে এক মেয়ে, কিন্তু আমার সন্ন্যাস, ওই দ্যাখো ছ' হাতের চৈতন্য, উপর হাত রামের, মধ্য কৃষ্ণের, নীচের হাত গোরার এক যষ্টি ও এক হাতে কমণ্ডলু, সন্ন্যাস নিলে হাতে তো যষ্টি দেয়, গোরা আমায় চিরদিনের সন্ন্যাসী করেছে হাতে যষ্টি দিয়েছে ওই দ্যাখো তাকিয়ে,দেওয়ালে ঠেসানো ক্রাচ দেখায়।

    বুঝলাম নিজের দুঃখ কষ্টের মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে এও এক রসিকতা। অপরূপ ঠাট্টা।

    আমি হাওয়াবাতাস দুহাতে ধরে বিদায় জানিয়ে বাড়ির পথ ধরি, শেষ লোকালটা ধরতে হবে, আকাশের তলায় আলো অন্ধকারে ভেজা সব গাছপালা হাসছে, আতপচালের গন্ধ বেরিয়েছে সামনের মাঠ থেকে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কাব্য | ০৫ জুলাই ২০২৪ | ২২৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Mira Bijuli | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০০:১৪534227
  • অসাধারণ 
  • kk | 172.56.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০০:১৭534228
  • অসম্ভব ভালো লাগলো
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০১:১৪534230
  • আরে! দন্ডমহোৎসবতলায় মন্দিরে এই ষড়ভুজ মূর্তিই তো দেখলাম আমরাও! রামের সবুজ দু'হাত কৃষ্ণের নীল দু'হাত,  তারপরে সোনালি ঘৃতবর্ণ দুই হাত কার সে আর কিছুতেই আমরা বুঝে উঠতে পারি না। আজ বুঝলাম, গোরার। আহ। অনেক ধন্যবাদ। খুব ভালো লেখা।
  • ইন্দ্রাণী | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪৩534236
  • মাটির সেতারের সুরটি এখানেও ধরা। সহজ আখড়ার কথা মনে পড়ে যায়।
  • শীর্ষা | 2409:4081:be41:c1e6::e14a:***:*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:১৬534241
  • দারুণ লেখা 
  • প্রতিভা | 115.96.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:২৬534242
  • কবিতা জগন্নাথের আঙুল খিমচে থাকে। ঘুরিয়ে বেড়ায়, নিশি ডাকে, ওর আর পরিত্রাণ নেই। 
  • সম্রাট রানো | 2402:3a80:434c:e747:6fa6:ef7e:477:***:*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৫534244
  • এতো তো আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া দৃশ্য।  এত ভালো লেখা। এত ভালো। এত ভালো। জগন্নাথ ভালো থাকিস।
  • প্রজ্ঞাপারমিতা | 103.192.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:৫৩534246
  • জীবনই যার একমাত্র উপজীব্য সে কবিতা তো তো সরস ও মধুময়। এক বিরল মনের কবি। এই মাটি আলো জল আর যত ভালো মানুষের দল আগলে রাখুক কবিকে একদিন প্রতিদিন।
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ১০:১৪534248
  • জগন্নাথদেবের কবিতার মধ্যে মেঠো টান আছে, দেশি সুরও আছে। আউলবাউল আছে কিনা সম্যক বলতে পারিনা। তবে মাটির ছাপ লাগা জিনিসমাত্রেই মাটির জিনিস নয়, শহুরে লোকেদের কাছে তা 'এক্সোটিক' হিসেবে বিকোলেও। সবচেয়ে বড়কথা জগন্নাথদেবের কবিতার ভেতরে কোনো চিৎকার নাই, কোনো সমসাময়িক বিরোধ নাই। এক্কেবারে গ্রামবাংলার নিকোনো উঠান, যা কল্কেতার বাবুরা চিরকাল বড় ভালোবেসে এসেছেন। এসব সাষ্টাঙ্গ ছেড়ে বাংলা কবিতা ঢের এগিয়ে গিয়েছে। সেই ইতিহাস সম্বন্ধে সচেতন না হয়ে কবিতা রচনা পন্ডশ্রম।
  • প্রত্যয় ভুক্ত | ০৬ জুলাই ২০২৪ ১১:০৪534251
  • এই কবিতা সম্বন্ধে কোনো কিছুই বলার ধৃষ্টতা নেই, কিন্তু সমালোচককে বলি, কবি/শিল্পী ভারবাহী গর্দভ নয় যে সবসময় তাকে সমকালের বিবেকের কাজ করে যেতে হবে, তা তার স্বতোৎসারিত না হলেও- নিজে মফস্বলে থাকার সূত্রে জানি, মফস্বল বা পল্লীবাংলার জীবনযাপন এরকমই অনুচ্চকিত, কিন্তু বাঙ্ময় ও বাক্যাতীত অনুভবে পরিপূর্ণ। আপনি নাগরিক সভ্যতার চশমা পরে আশা করতে পারেননা যে সবাইকেই সমানভাবে সমাজসচেতন, ইতিহাসসচেতন হতেই হবে, বা তা সবসময়ই লেখার মধ্যে দিয়ে সোচ্চারে জারি করতে হবে। হতে পারলে সেরকম, নিঃসন্দেহে খুব‌ই ভালো- কিন্তু সব লেখাতেই বা শিল্পকর্মে তা প্রকাশ করা ও শৈল্পিক গুণমান বজায় রাখা দুঃসাধ্য। তাছাড়া এই কবিতা বা এরকম আরো যে কবিতাগুলো আছে জগন্নাথদেবের সেগুলির মধ্যেও আমি সমাজসচেতনতার কিছুমাত্র অভাব দেখিনা, যদিও সেই সমাজের চিত্রণ নগরসর্বস্ব চূড়ান্ত আধুনিক সমাজের থেকে পৃথক। আপনি যদি বেহাগ শুনে জয়জয়ন্তীর তার না পেয়ে আশাহত হয়ে ভর্ৎসনা করেন কেন জয়জয়ন্তী পরিবেশিত হলো না- তা আপনার মূঢ়তা ব্যতীত আর কিছুই প্রমাণ করে না। আপনি বরং সমর সেন পড়ুন বা জয় গোস্বামীর 'দগ্ধ', পিকাসোর "গ্যের্নিকা" দেখুন বা "ভুবন সোম" চলচ্চিত্র- জসিমউদ্দিন, শরৎচন্দ্রের পাঠকের অভাব হবে না তাতে।
  • Kishore Ghosal | ০৬ জুলাই ২০২৪ ১১:৪৫534254
  • অপূর্ব - গদ্যও যে এমন নিখুঁত কবিতা হয়ে উঠতে পারে না পড়লে জানতে পারতাম না। 
     
    @প্রত্যয়বাবু, আপনার সঙ্গে সমপূর্ণ একমত - এমন আশ্চর্য মাটির গন্ধ - এসি রুমের সোফায় বসে অনুভব করা যায় নাকি?   
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ১২:১৫534255
  • এমনিতে শরৎচন্দ্রের লেখায় সাম্প্রদায়িকতা ও নারীঘৃণা থিকথিক করছে, তা বললে সমালোচককে 'আপনি মশাই সমর সেন পড়ুন' বলাটা বালখিল্যপনা। অতেব উত্তর দেওয়া সময়ের অপচয়। আর কিশোরবাবু, আপনি নিশ্চয় ধানক্ষেতে বসে এই কোবতে পড়ছেন না? অতেব অন্যের সোফায় বসা নিয়ে (এসি বা ননএসি) খোঁচা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
     
    অপেক্ষাকৃত বেশি কম্প্রিহেনশন স্কিলওলাদের জন্য উল্লেখ থাকুক, জীবনানন্দ দাশ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা সম্পর্কে লিখেছিলেন -
     
    "'প্রচুর হয়েছে শস্য, কেটে গেছে মরণের ভয়' বালভাষিত, কিন্তু কবিতা নয়; শস্য প্রচুর হলেই কি 'মরণের ভয়' কেটে যায় না আজকের এই জটিল শতাব্দীতে শিশুকে এ-কথা বোঝাবে? নীরেনবাবু হয়তো মনে করেন এ রকম কতকগুলো লাইন লিখতে পারলেই কবিতা হয়, আশাবাদী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় এবং আত্মঘাতী ক্লান্তি থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব; বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিরও উদয় হয়। কিন্তু র্স্বগের সিঁড়ি এত সোজা নয়।"
     
    যে কবি আজকের বাংলার লাশকাটা মাঠ থেকে আতপচালের গন্ধ পান, তাঁর খুরে খুরে দন্ডবৎ।
  • প্রত্যয় ভুক্ত | ০৬ জুলাই ২০২৪ ১৮:১৫534270
  • জীবনানন্দের কথা তো বাদ‌ই দিন, আপনি না নীরেন্দ্রনাথ না জীবনানন্দের সমপর্যায়ের। তাছাড়া জীবনানন্দের ভালোরকম মানসিক গোলমাল ছিল, নিঃসন্দেহে ভালো কবি ছিলেন, কিন্তু লেখার মধ্যে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের ছায়া স্পষ্ট, তাছাড়াও ওনার উপন্যাস বা অন্যান্য গদ্যে সমসাময়িক সতীর্থদের প্রতি যথেষ্ট অসূয়া ও তাঁদের সাফল্যে ঈর্ষা ও নিজের প্রাপ্তির স্বল্পতার জন্য হতাশা, অসুখ ধরা পড়ে। কিন্তু এখানে সত্যিই একটু প্রসঙ্গান্তরে চলে যাওয়া হয়েছে, আমারি কথার সূত্র ধরে, তাই একটু লেখাটার কাছে ফেরত আসি। আমার মনে হয় না আপনি এই কবির লেখা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েন বা সাধারণভাবেই কোনো কবিতার সম্যক অর্থ বা রস গ্রহণ করতে পারেন। এই লেখার তলায় এরকম ভাবে লড়াইয়ের তাল ঠুকতে রীতিমতো খারাপ লাগছে, বেশিদূর গড়ালে আর আমার হাতে সময় থাকলে একটা আলাদা ট‌ই খোলা যেতে পারে, কিন্তু এরকম লেখার তলায় যখন জঞ্জাল এসে জুটেছে, তখন যতোই কর্কশ শব্দ হোক, খচর খচর ঝাঁটা চালিয়ে মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু করে ঝেঁটিয়ে আবর্জনা বিদায় করতে হবে।
     
    এই কবিতায় ও সাধারণভাবে কবির সামগ্রিক লেখার মধ্যে আপনি কেবল মাটির টান, মেঠো সুর, দেশি সুর, গ্রামবাংলার নিকোনো উঠোন‌ই লক্ষ্য করছেন, এবং কেন এই লেখায় সমসাময়িক বিরোধ, প্রতিবাদ-চিৎকার প্রভৃতি নেই তাই আপনার অনুযোগের বিষয়, যদিও সুরটা অনুযোগের নয়, বেশ চড়া তারেই বাঁধা সমালোচনার খাতিরে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি কি সত্যিই দেখতে পান না বা চোখ থাকতে অন্ধের চরিত্রে অভিনয় করছেন? আমি এই কবিতাকে লাশ বানিয়ে তার শব ব্যবচ্ছেদ করতে চাইছি না, তো সেজন্য আমি সরাসরি ব্যাখ্যা করলাম না শুধু, কিছু সূত্র রেখে যাই, কিছু লাইন পুরো লেখাটার সাথে মিলিয়ে একবার পড়ার চেষ্টা করুন-
     
    "আষাঢ় মাসের বিকেলে ছোট হল্ট স্টেশনে বসে আছি।আকাশ মেঘলা, লোকজন তেমন নেই।চোখে না পড়ার মতো চা দোকান। পাশে কদমগাছে অজস্র ফুল ফুটে আছে।"
    "সামনের লোকটির কাঁধে একটা কাপড় জড়ানো খাঁড়া।অল্প কিছু অংশ বেরিয়ে আছে, আলো লেগে অল্প চমকাচ্ছে। কদিন পরে নিশ্চয়ই কোনো জাগ্রত থানে বলির ব্যাপার আছে।"
     
    "বেলা কিছুটা আছে। চা খেয়ে মিনিট কুড়ি ঘুরে বেড়াই আরেক ইষ্টিশনে। পেচ্ছাপখানার দেওয়ালে সাঁটা বিজ্ঞাপন পড়ছি। লিঙ্গবর্ধক যন্ত্র, মা মনসা মোবাইল সেন্টার, তিন মাসে ফ্রিজ সারানো শিক্ষা।
     
    হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই বাস রাস্তার পাশ দিয়ে বিরাট এক বটগাছের পাশে। পাশে পুকুর। পুকুরে গভীর কলমিলতার ঢেউ। আকাশে বিরাট চাঁদ উঠব উঠব করছে।"
     
    "গিয়ে বসলাম। বাড়ি খবর সব শুধাল সেই মানুষ, কাজকর্মের খবর। বললাম - আমি অনেকদূর পড়াশোনা করেছি কিন্তু আমি বেকার, উপার্জনের চেষ্টা করছি।"
     
    "একবার গান সেরে ফিরছিলাম, মোটরসাইকেল ধাক্কা মারে, তাতেই তো একটা পা যায়, উনি সেবা করে খুব।"
    "কিন্তু আমার সন্ন্যাস, ওই দ্যাখো ছ' হাতের চৈতন্য, উপর হাত রামের, মধ্য কৃষ্ণের, নীচের হাত গোরার এক যষ্টি ও এক হাতে কমণ্ডলু, সন্ন্যাস নিলে হাতে তো যষ্টি দেয়, গোরা আমায় চিরদিনের সন্ন্যাসী করেছে হাতে যষ্টি দিয়েছে ওই দ্যাখো তাকিয়ে,দেওয়ালে ঠেসানো ক্রাচ দেখায়।
     
    বুঝলাম নিজের দুঃখ কষ্টের মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে এও এক রসিকতা। অপরূপ ঠাট্টা।"
     
    যদি বোঝেন কিছুমাত্র, ভেতরে রাখবেন। আর তাল ঠুকে তর্ক করতে এলে তখন আমি আমার সময়-সুযোগমতো আলাদা ট‌ই খুলে জ্ঞানাঞ্জনশলাকা দিয়ে চাড় মেরে মেরে আপনার চোখের পাতাগুলো খোলার চেষ্টা করব। আপাতত অলমিতি বিস্তরেণ। নমস্কার জানবেন~~
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ২০:০২534272
  • আবারও সেই বালভাষিত। খোকা সাহিত্য সমালোচনা বা লিটারারি ক্রিটিসিজম বলে একটা সাবজেক্ট হয়। ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয়। ইটা জীবনানন্দ বা নীরেন চক্কোত্তি হওয়ার বিষয় না। ও যুক্তিতে উপন্যাস সম্বন্ধে রোলাঁ বার্থ ও চলচ্চিত্র সম্বন্ধে আঁদ্রে বাঁজার অভিমত খারিজ করে দিতে হয়।
     
    যাকগে, এ ব্যাপারে অশিক্ষিত ভক্তের সংগে টইতে তক্ক করার প্রশ্নই ওঠে না। ইখানে হনু, সিএস, ইন্দো ডাগদার প্রভৃতি বাঘা সাহিত্যবোদ্ধারা এককালে লিখতেন। আধুনিক সাহিত্যের ঝোঁক ও বিপন্নতা সম্বন্ধে তাঁদের পুরাতন আলোচনাগুলি আগ্রহীরা পড়ে ঋদ্ধ হতে পারেন। খোকার জন্য লজেঞ্চুস। অলমিতি।
     
    (এবং হ্যাঁ, জগন্নাথ মন্ডল এযাবৎ যা লিখেছেন, চোখে পড়েছে, তা মামুলি ও কবিতা হিসেবে পাতে দেবার নয়।)
  • কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ২০:৫১534274
  • জীবনানন্দের কথা তো বাদ‌ই দিন, আপনি না নীরেন্দ্রনাথ না জীবনানন্দের সমপর্যায়ের। তাছাড়া জীবনানন্দের ভালোরকম মানসিক গোলমাল ছিল, নিঃসন্দেহে ভালো কবি ছিলেন, কিন্তু লেখার মধ্যে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের ছায়া স্পষ্ট, তাছাড়াও ওনার উপন্যাস বা অন্যান্য গদ্যে সমসাময়িক সতীর্থদের প্রতি যথেষ্ট অসূয়া ও তাঁদের সাফল্যে ঈর্ষা ও নিজের প্রাপ্তির স্বল্পতার জন্য হতাশা, অসুখ ধরা পড়ে।
    @প্রত্যয় ভুক্ত বাবু ,দু একটা উদাহরণ দিলেভাল হয় , কারণ জীবনানন্দের গদ্য বিশেষ পড়া নেই।স্রেফ কৌতুহল বশত জানতে চাইছি
  • কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ২০:৫২534276
  • @সমালোচক
    গুরুতে সার্চ করে ওঁদের লেখার লিঙ্কগুলো পাচ্ছি না। আপনি দু একটা লিঙ্ক দিলে ভাল হয়। সাহিত্য বুঝি না , কিন্তু বিষয়টাতে আগ্রহ আছে
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ২১:৪৮534277
  • এইখানে পাবেন এক ডাগদারবাবুর লেখা সম্বন্ধে আরেক ডাগদারবাবুর মন্তব্য, ওই ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড লোকটাকে নিয়ে।

    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=9624&page=1#pages

    এখানে সিএসের কিছু মন্তব্য রাখা আছে।
    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=9002&page=1

    আর হনুবাবু তো সক্রেটিসের ন্যায় ডায়ালগেই বিশ্বাস করতেন। তাই তাঁর মন্তব্যসমূহ গুরুর বিভিন্ন পাতায় ছড়িয়ে আছে। একটি কথোপকথন রইল।
    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=18360

    ব্যাস, আর কিছু বলবার নাই।
  • কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২৪ ২৩:৩৭534279
  • @সমালোচক
    হনুবাবু মানে কি বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত?
  • r2h | 174.163.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০০:০৩534280
  • সমালোচকের বক্তব্য ইন্টারেস্টিং। কবিতা আলোচনার এই ধারা আমার প্রিয়।
    এই বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত বেদনা আছে - খুব আশা ছিল যে দু'চার ছত্র লিখেছি কোন কড়া তাত্ত্বিক সমালোচক তার অক্ষর ধরে একেবারে ক্যানসেল করে দেবেন, তারপরেও দুয়েকজন বলবেন, আহা তাতে কি, এ বড় মিঠে লিখেছে।
    কিন্তু সেসবের জন্য বড় কবি হতে হয়, আপকা কুছ নেহি হোগা এই ভবিষদ্বানী জাগতিক বিষয়ে সত্য হল তা নিয়ে আক্ষেপ নেই, কিন্তু কাব্যরচনা বিষয়ে আছে।
    তা হোক, খালি নিজের কথা, মর্মপীড় মার্জনা করুন।

    জগন্নাথদেব এই সময়ে আমার অন্যতম প্রিয় কবি - তাঁর কবিতা নিয়ে এই ধারায় কাঁটাছেঁড়া হচ্ছে - তাতে আমি খুব আনন্দিত।

    বিপরীত মতের ক্রিটিক কেউ আসুন - একটু তত্ত্বকথার ঝনৎকার হোক, এই আশা।

    প্রত্যয়ের নীরেনবাবু বা জীবনানন্দের সমকক্ষ হওয়া বিষয়ক উক্তি অর্থহীন, জীবনানন্দের ক্লিনিকেল ডিপ্রেশন বিষয়ক বাস্তবতার ভূমিকাও বোঝা গেল না, জীবনানন্দ কিঞ্চিৎ অসূয়াপ্রবণ ও একটুখানি হিংসুটে মত ছিলেন তা আমিও মনে করি বটে, তবে তাঁর প্রতিভা ও কবিতা বিষয়ক দর্শন ও মত সেই সবের অনেক ঊর্দ্ধে।

    সমালোচকের মন্তব্য কাউন্টার করার মত জ্ঞানগম্যি আমার নেই। তবে "কাকতাড়ুয়ার নীচে আহারে বসেছে ..." কবিতার শুরুতেই "আমার বাপ ঠাকুরদার জমি ছিল। তারপর আইড়িবনের ভিতর বসতভিটে তৈরির জন্য তিন বিঘে ধানিজমি বিক্রি করতে হয়।

    তাই সরাসরি হাতে নিয়ে দেখিনি বিয়োনোর আগে কীভাবে বীজের গতর ফুলে ওঠে ,সারের পরিমাণ,পিঁপড়ের চলাচল দেখে জানি না কখন বৃষ্টি আসবে,বাসি কাপড়ে কখন পানের বরজে যেতে নেই জানি না। 
    "- লাইনগুলি যখন পড়ি, তখন এই প্রত্যয় হয়, যে সমালোচকের অভিযোগ শুধু ভিত্তিহীনই না, তিনি হয়তো আসলে নিতান্ত শয়তানের ওকালতি করছেন!

    এই সূত্র ধরে কিছু অতি মূল্যবান লেখা উঠে আসছে, এ ভালো কথা।

    কোতূহলীকে বলি- হনুবাবু মানে বোদাগু কিনা এই প্রশ্নের সূত্র ধরে কেউ আপনার বিভিন্ন অবতারগুলির মধ্যে সূত্রস্থাপন করতেও উৎসাহী হয়ে উঠতে পারেন।
    হতেই পারে তাতে আপনার আপত্তিও নেই, তাও মনে হলো আরকি।
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০২:০৬534286
  • র২হর কবিতার আমি একজন পাঠক এবং রাধিকা সিরিজ থেকে লাইন কোট করে দেখিয়ে দিতে পারি কেন তা ইন্টারেস্টিং। অন্যদিকে, র২হর কবিতাভাবনা যেটুকু বুঝেছি তারাপদ রায় ইত্যাদি আলোচনা থেকে, আদৌ পছন্দ হয়নি। জগন্নাথদেব সম্বন্ধে মতপার্থক্য ধরে নিচ্ছি স্বাভাবিক।
     
    দেখুন বিভূতিবাবুর অপু দেখেছিল জঙ্গলে এক কবিকে নিরালায় বসে তুলসীদাস না কার মত কবিতা রচনা করতে। আমার সন্দেহ হয় র২হ এরকম সমসময় সম্বন্ধে অচেতন কবিকে কবি বলে স্বীকার করে নেবেন। এখানেই প্রধান মতপার্থক্য। আধুনিক কবির নিজস্ব সময়টুকু ছাড়া আর কিচ্ছু নেই, জাস্ট থাকতে পারেনা। দেশ ও সমাজ নিয়ে তার কোনো দিব্যদৃষ্টি নেই, কেবল নিজের অন্ধত্বটুকু সম্পর্কে সে সচেতন হতে পারে মাত্র। সেখানে জগন্নাথদেবের কবিতা শুধু গ্রামবাংলা নিয়ে নষ্টলজি। আরে মশায় তারাশঙ্কর পর্যন্ত এই রাঢ়বাংলার রিক্ত হয়ে যাওয়া লিখেছেন আপনার জন্মের ঢের ঢের আগে আর আপনি এই একুশ শতকে কোন গ্রামবাংলাকে দেখছেন? কোন চাষিভাইয়ের শ্রমকে নমস্কার জানাচ্ছেন আপনি? আপনার গ্রাম তো নকশাল বা তেভাগা দ্যাখেনি। নিপুণ হাতে যেকোন সংঘাতের চিহ্ন আপনি মুছে দিয়েছেন একটি কৃত্রিম ও এক্সোটিক গ্রামবাংলার ধারণা নির্মাণ করতে গিয়ে।
     
    জগন্নাথ যাদের প্রিয় কবি, ফেবুতে দেখেছি তাঁদের এইরকম ভাব-
    "সবশেষে বলি, জগন্নাথকে নিয়ে আমি একাধারে আশান্বিত এবং আশঙ্কিত। জীবনের প্রাচুর্য ও জৌলুস থেকে অনেকখানি দূরে একেবারে স্বতন্ত্র এক যাপন আর বিশ্বাসের মাটিতে গড়ে উঠেছে তার কবিসত্তা। তাই এমন নিজস্ব মাটির গন্ধ তার প্রতিটি লেখায়। আমি চাইব এই অমলকান্তিটি তার দূরবর্তী নিলয়ের রোদ্দুর হয়ে বাঁচুক। শহুরে সভা-সমিতি, উৎসব, সম্মাননা, পৌনঃপুনিকতার ভিড়ে যেন হারিয়ে না যায় বাংলা কবিতার এই নওলকিশোর…"
     
     
    আমি যেটুকু দেখেছি জগন্নাথের এইটেই ব্র্যান্ডিং, বাংলা কবিতার নওলকিশোর। এবং তাঁর সাজানো গ্রামবাংলা এক্কেবারে শহরবাসী (পড়ুন কলকেতার) পাঠকের নষ্টলজি লক্ষ্য করে। এইসবই সচেতনভাবে তা বলছি না, সাবল্টার্ন যে কথা বলতে পারেনা তাও সত্য, কিন্তু পুঁজিবাদের বিবিধ ছলনা সম্পর্কে সন্দেহপ্রবন হওয়াই একজন আধুনিক কবির চ্যালেঞ্জ। আপাতত জগন্নাথদেবের নির্বিষ রচনায় সেসব কিছু মেলেনি। এটুকুই।
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০২:৩০534288
  • মনে রাখবেন ওই বইটার নাম ভদ্রলোক দিয়েছিলেন 'বাংলার ত্রস্ত নীলিমা।'
  • সুধাংশু শেখর | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০২:৪৬534289
  • ঠিক। আমি শুধু ঐ একটি জায়গা কোট করতে চেয়েছিলাম - "অভিজ্ঞতা তো লেখায় না, লেখায় সচেতনতাবোধ। অনুভূতি।" 

    আবার অনুভূতি তো নৈর্ব্যক্তিক নয়। বাজি ফাটানোর আওয়াজ শুনে কারুর পুজো-উৎসব ক্যাপবন্দুক ইত্যাদি স্মৃতি মনে পড়বে, কারুর যুদ্ধবিক্ষত এলাকায় রাতের পর রাত জেগে থাকার ট্রমা জেগে উঠবে। 
  • r2h | 174.163.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫১534291
  • রাধিকা সিরিজ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে সেটা আমার জন্য আনন্দের খবর, সিরিয়াসলিই। পরের দিকের ঢাকাঢুকির লেখাগুলি নিয়ে আমার কিঞ্চিৎ আশা ছিল, তবে নিজেকে প্রবোধ দিই, অত খায় না।

    কবিতাভাবনা পছন্দ হয়নি - এটা আমার জন্য নতুন বা সারপ্রাইজিং না, কারন আমার ক্ষেত্রে তা ফিকল ও অনিশ্চিত।
    সমসময় সম্বন্ধে অচেতন কবিকে আমি কবি হিসেবে স্বীকার করবো কিনা- এই বিষয়ে আমি নিজেও অনিশ্চিত। আমার নিজের লেখা বিষয়ে আমার সবথেকে বড় অস্বস্তির জায়গা হলো তা সমসময়ের কনফ্লিক্ট থেকে বড় বেশি বিচ্ছিন্ন কিনা। তো, সেটাকে আমি আবশ্যক উপাদান বলে মানি বটে।
    কিন্তু জঙ্গলে বসে নিরালায় তুলসীদাসের মত কাব্য রচনা করা কবিকে কি আমি কবি হিসেবে মেনে নেবো?
    সমালোচক ঠিকই অনুমান করেছেন। মেনে নেবো।
    কিন্তু তাঁর রচনাকে সফল কবিতা হিসেবে মেনে নেবো কিনা- সেটা আমার মতে আলাদা প্রশ্ন।
    বোধহয় মেনে নেবো না। সিনসিয়ার কিন্তু ব্যর্থ কবির বিফল কবিতা...

    কোটেশনের মধ্যের লাইনগুলি... কী আর বলিঃ)
    লিংক খুলে পড়ার আগ্রহ আপাতত, এখনও পেলাম না, পরে দেখি!

    তবে বক্তব্য একটাই, জগন্নাথদেবের কবিতাকে আমার বিচ্ছিন্ন, শহুরে নষ্টলজি বলে মনে হয়নি।

    নির্বিষ?

    ...
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৫534292
  • "কবি কালিদাস যদি সেই যুগের চাষবাসের সমস্যা, রাজসভা থেকে পাওয়া টাকাকড়ির স্বল্পতা, দিনে দিনে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, গদ্যঘৃতের মহার্ঘ্যতা ইত্যাদি সমকালীন সমস্যা নিয়ে লিখতেন, তাহলে কী সর্বনাশ হত", রবীন্দ্রনাথ কোনো এক জায়্গায় এইরকম কিছু লিখেছিলেন বলে আবছা মনে পড়ছে। পুরোপুরি এই কথাগুলো না, তবে ভাবটা একদম এই।
    ঃ-)
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৬534293
  • গব্যঘৃত, গদ্যঘৃত না ঃ-)
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:১১534294
  • জীবনানন্দকে তো শনিবারের চিঠি র দল একেবারে যাচ্ছেতাই সমালোচনা করত। একেবারে 'এই এলেন ঘাইহরিণী', এইরকম সব ব্যক্তিগত আক্রমণ।' ক্যাম্পে' কবিতাটা প্রকাশিত হবার পর। একজায়গায় ছিল হরিণদের হৃদয়ের বোন বা এরকম কিছু, সেখানে শনিবাসরের ওরা তো একেবারে কবিকে তুমি ছাগল, ছাগলেরা হৃদয়ের মায়ের ডাকেও সাড়া দেয়--এইরকম সাংঘাতিক ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিল।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৪534295
  • কাব্য সমালোচকদের ব্যাপার নিয়ে জীবনানন্দ কিছু কবিতাও লিখেছেন। এতটাই তিতিবিরক্ত ছিলেন। কবিতাগুলো নির্ঘাৎ পাওয়া যায়, পেলে কেউ লিংক দিন প্লীজ।
  • ইন্দ্রাণী | ০৭ জুলাই ২০২৪ ১০:৩৫534309
  • "পাশের বাড়ির রূপালিদিদি গায়ে আগুন দিয়ে মরেছিল। দিদির সারা শরীরে লকলকে আগুনের সাপ"

    "প্রিয় , তোমার নাইকুণ্ড অবধি পুড়ে গিয়েছিল আম্রকাষ্ঠের আগুনে। মাতৃস্তন্যও পাওনি, বিগতযৌবনা মা স্তন জুড়ে মাখিয়ে রাখত ভাটপাতার তিক্তরস।"

    "এই নিখিল ভুবনে নেশা করে শুয়ে থেকেছি পিতা-মাতার অগোচরে। আবার ঠাকুরদার
    আফিম শেষের দুধবাটি নিজেই এগিয়ে দিয়েছি হাতের কাছে। কথামৃত পড়বার কয়েক হপ্তা পরেও মনে হয়েছে নীল নীল আলোর নিচে উদোম শুয়ে থাকি। তারপর মেয়েছেলের খোলা পিঠে বিছে উল্কি এঁকে দিয়ে বলেছি, এই দ্যাখ আমার নাভির ভিতরকার মাটি, নে এবারে এই মাটি দিয়ে শিবলিঙ্গ বানা , পুজো কর চতুর্দশীতে।
    একথা বলেই বেলতলার ধারে বাথরুম সেরে ফিরতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়েছি। আর ঋতুরক্ত মেখে শুয়ে থেকেছি কাদাজলে। জলের ভিতরে ন্যাংটো এক গোপালবালক
    এসে বলল, এই নে আঙুল, ননীজ্ঞানে চোষ। কঞ্চি নে, বংশী ভেবে বাজা।
     বাজাতে যেতেই স্বামী আমার চোয়ালে গেঁথে দিল কঞ্চি, বলল, ঢলানি মাগি তুই
    দিবসে পুরুষ আবার রাত্তিরে নারী।
     মরমে একথা যেতেই বাদামের খোলা ভাঙার শব্দ। হ্যাজাক আলো। মাঠে  গ্রাম্য 
    যাত্রাপালা করছি অর্ধেক পুরুষ অর্ধেক নারী হয়ে।
     গৃহে ফিরে দুর্গাপুজো করছি আর, বামুন-্কায়েত 'হিজড়া-মাগি'র পূজা বলে গাল
    দিয়ে আগুন জ্বালাতে আসছে।
      আমি মাইরি রক্ত জিহ্বা বের করে টপাটপ খেয়ে ফেলছি বামুন- কায়েতের দলকে।
    চালে এসে ডাক দিচ্ছে ধূমাবতির বায়স।
     এতগুলো খুনের পর ক্লান্তি বশে শুয়ে আছি পাথরের মেঝেতে। তবু এতটুকু পাপবোধ
    নেই। চিদাকাশ জ্বলজ্বল করছে মাজারের বাতিতে।"

    সাহিত্য সমালোচনার যোগ্যতা নেই। সে চেষ্টাও করছি না।
    "মাটির সেতার থেকে শুধু দুটি লাইন আর একটি সম্পূর্ণ কবিতা টুকে দিলাম। আরো বহু উদ্ধৃত করা যায়। যেটা বলার... জগন্নাথদেবের লেখায় 'নিকোনো উঠান' দেখি নি, কাদা জল, রক্ত, অশ্রুই লক্ষিত হয়েছে। এইটুকুই।

    এবার খোকা খুকু ঠাকুমা বলে গালাগালি দিতে পারেন। অসুবিধে নেই।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন