এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • আসলে এগুলো তো ভারতীয় নেশন -স্টেট নিয়ে তর্ক - গত ক'দিনের তর্কের প্রেক্ষিতে 

    সিএস লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ১০ মে ২০২৪ | ২৬৫৯ বার পঠিত
  • কিছু লোকের মত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া, সেই নিয়েই গত ক'দিনের তর্ক চলছিল। গভীরে, আমার যা মনে হয়, এই তর্ক আসলে ব্যক্তিমানুষের মত সংক্রান্ত ব্যাপার নয়, তাদের মতের মধ্যে দিয়ে যা ফুটে বা ফেটে বেরোচ্ছে, যা সমস্যার মনে হচ্ছে, সেগুলো ভারতীয় নেশন-স্টেটের চরিত্র কেমন হবে সেই তর্ক পরিণতি পায়নি বলেই, সেরকম ঘটছে।

    ইউরোপীয় নেশন স্টেটের মূলে একটি সোশাল গ্রুপ, তাদের ভাষা, তাদের ধর্ম, তাদের লোকাচার বা তাদের বিশ্বাসকে মূল বা প্রধাণ ধরা হয়েছে, এবং স্টেটটি সেইগুলিকে ভিত্তি করেই তৈরী হয়েছে, ব্যক্তিমানুষের বিবিধ অধিকারকেও মেনে নিয়ে। একটি ভাষা বা সংস্কৃতি (ফরাসী বা জার্মান), খ্রীস্টিয়ানিটি ধর্ম হিসেবে, এই দিক্গুলি প্রধান। এদের ঘিরে আরো অন্য কিছু। এইটি নেশন-স্টেটের একটি মডেল, যা ইউরোপ থেকে পাওয়া গেছে, আজ নয়, অনেক দিনই।

    বঙ্কিমের 'ভারত-কলঙ্ক ' লেখাটি ভাল করে পড়লে দেখা যাবে, এই লেখাটি ঐরকমের নেশন-স্টেট তৈরীর একটি থিওরাইজেশনের চেষ্টা। বঙ্কিম অনুযায়ী, ভারতের কলঙ্ক হল, তার একতা নেই, নেই কারণ সে জাতিভেদে বিভক্ত। এই জাতিভেদ উঁচু জাত - নীচু জাতের ভেদ নয়, এই ভেদ ভাষা, ধর্ম, বংশ সব কিছু নিয়েই ভেদ, ফলে একতার পরিণতি নেই। লেখাটিতে সমাধান পুরোপুরি নেই, কিন্তু ইঙ্গিতটা আছে, ইউরোপের তুলনা দিয়েই আছে, ইতালীর একত্রীকরণ ইত্যাদি দিয়ে , যে কোনভাবে ভারতকেও এক হতে হবে। ইংরেজের প্রসংসা এই জন্যই যে, উনিশ শতকের বাঙালী ইন্টেলেকচুয়ালদের কাছে ইংরেজ-ইউরোপ প্রধান মডেল, তাদের কাছ থেকে শিখে নিয়ে, ভারতের সমাজ-রাজনীতি গঠন করা যেতে পারে, ভারতীয় নেশন স্টেটটিও।

    উনিশ শতকের ইংরেজী শিক্ষিত বাঙালী ইন্টেলেক্চুয়ালদের ক্রাইসিস বলা যেতে পারে, ঐ শতকের প্রায় শেষ ভাগ অবধি - যতদিন না বিশ শতক এসে পড়ল, ইংরেজ শাসনের প্রতি বীরাগ তৈরী হতে থাকল, এবং বিশ্বযুদ্ধও ঘটে উঠতে থাকল - যে ভারত নামক দেশটি কেমন হবে সেই বিষয় ইংরেজদের কাছ থেকেই শিখতে হচ্ছে কিন্তু একই সাথে বিবিধ রকমের দোটানা থাকছে, ফলে সময়মত ইংরেজদের সমালোচনাও করতে হচ্ছে। বঙ্কিম বা ভূদেব, এনারা এই দোটানার মধ্যেই তাদের লেখাপত্তর করেছেন। ভূদেব ইংরেজদের জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, আবার বাঙালী-ভারতীয় সমাজ জীবন কেমন হবে, পারিবারিক জীবন কেমন হবে, ইউরোপীয় মত জাতি বা দেশ গঠনে ব্যাবহার করার পরেও নিজস্বতা কেমন হবে, সেই নিয়ে অজস্র লেখা লিখেছেন। তো একটি সোশাল গ্রুপ ভিত্তিক জাতিগঠন বা নেশন গঠন- যা বঙ্কিম বা ভূদেবের ক্ষেত্রে মূলতঃ হিন্দুকেন্দ্রিক, এবং বঙ্কিমের ক্ষেত্রে প্রশ্নটা থাকলেও সমাধানটা পুরোপুরি আসেনি অর ভূদেবের ক্ষেত্রে সমাধানটা দুইদিক রেখেই - রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে, নেশন-স্টেটের সমাধানটি অন্যভাবে। সেটিই হল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং  হিন্দু-মুসলমান সমঝোতা দিয়ে। অতএব, বঙ্কিম-ভূদেব একটা মডেল, রবিবাবুর ধারণাগুলি আর একটা মডেল, নেশন - স্টেটের চরিত্র কেমন হবে সে নিয়ে । রবিবাবু যে এই ধারণাটি  দিতে পারলেন, তার কারণ মনে হয় না এই জন্য যে তিনি অন্যদের থেকে উদার, এই জন্যই যে তিনি অন্য সময়ে বাঁচছেন, উনিশ শতকের শেষ থেকে ইংরেজদের দাঁত-নখ আরো বেরিয়ে যাওয়ার পরে বাঁচছেন, বিশ্বযুদ্ধর মধ্যে বাঁচছেন, ইউরোপীয় সভ্যতার বিবিধ ক্রাইসিস দেখ্ছেন, রাশিয়ার বিপ্লবও দেখছেন, মুসোলিনির কাজকর্মও। ফলে চেতনা সম্প্রসারিত হয়েছে এবং তার সাথে দেশীয় ভাবের সাথে হয়ত বেশী পরিচিত, ইংরেজ শিক্ষার ওপরে নির্ভরতাও অনেক কমে এসেছে (সেই সময়ের দেশবাসীর মধ্যেও হয়ত )।

    তো সাভারকার-আরএসএসের মডেল বলা যায় বঙ্কিম-ভূদেব ধারণাকৃত নেশন-স্টেট-সমাজকে অনুসরণ করে। সিএএ সেই মডেলের এক্সট্রীম বা বিকৃত পয়েন্ট।

    আর স্বাধীনতার পরে, সংবিধান তৈরীর ডিবেটে রবিবাবুর ধারণাগুলি গুরুত্ব পায়। রবিবাবুর নাম করেই গুরুত্ব পায় সেটা বলছি না কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে যেহেতু বিবিধ ভাব মিশে  ছিল, সেই সব ভাবের মধ্যে ভারতীয় বৈচিত্র্যকে মেনে নেওয়া ছিল (গান্ধীর ভারত পরিক্রমা ঐ বৈচিত্র্যকেই বোঝার চেষ্টা বা গান্ধী-রবিবাবুর সখ্যতা ঐ কারণেই, নানারকমের ডিবেট নিয়েও), ফলে যে সংবিধান তৈরী হয় তা একমুখী, হিন্দুবাদী, মিলিটারিস্টিক না হয়ে বিবিধ সোশাল গ্রুপকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতীয় নেশন-স্টেটকে তৈরী করতে চেয়েছিল। সকল ধর্মের মানুষের ধর্মাচরণের অধিকার, মাইনরিটি রাইটস, রাজ্যগুলোর অধিকার ইত্যাদি ছিল বৈচিত্র্যকে মেনে নেওয়ার উপায়। কিন্তু সংবিধানের তো নানারকমের ক্রিটিসিজমও হচ্ছে এখন, দোটানা ঐ সংবিধানের মধ্যেও ছিল, অনেক ক্ষেত্রে কিছু দিলেও পুরোপুরি দেওয়া হয়নি, সে না দেওয়ার ফাঁক দিয়ে নেশন-স্টেটটির চরিত্র বদল করে ফেলা যায়। তো, গত দশ বছরের অস্থির অবস্থা, ভারতীয় নেশন-স্টেটের চরিত্র বদলেরই চেষ্টা। যখন বলি, আরএসএস তো দীর্ঘদিন ধরে ভেতরে ছিল, তখন মনে হয় এটাই বলি যে, নেশন-স্টেটের অন্য একটা মডেল বা দিক  - যা সংবিধানের মধ্যে পুরো গুরুত্ব পায়নি বা '৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র গঠনে পুরো গুরুত্ব পায়নি, অথবা গান্ধী পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলন যা গণ-আন্দোলন তার মধ্যে সেই মডেলের অনুসরণকারীরা বেশী গুরুত্ব পায়নি - সেই হিন্দুকেন্দ্রিক, তাদের মত ও বিশ্বাসকেন্দ্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা তৈরী করে নেওয়ার ইচ্ছেটা সুপ্ত ছিল, ঐ মডেলটি সংবিধান-আইন ইত্যাদি তৈরীর পরেও রয়ে গেছিল।

    অতএব, ভারতীয় নেশন-স্টেটের চরিত্রটি এখনও পুরো পরিণতি পায়নি, আপাতভাবে মনে হয় বৈচিত্র্যকে মেনে নেওয়াই হয়ত ঠিক পথ কিন্তু তাকে কাজে পরিণত করতে গিয়ে দেখা গেছে সবকিছু ঠিকভাবে ঘটেনি। ভোটের রাজনীতি বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই ফাঁকে ভরা ! সন্দেহ আছে, নেশন-স্টেটটি মনোমত পরিণতি পাবে কিনা, ফিরে ফিরে আসবে হয়ত নেশন-স্টেটের ক্রাইসিসগুলি, কখনও চাপা পড়বে, কখনও ফেটে বেরোবে। বৈচিত্র্য আছে বলেই ক্রাইসিসমুক্তি ঘটতে পারে, আবার বৈচিত্র্যগুলিকে আত্মসাৎ করে একমুখী মডেলের দিকে যাওয়াই ক্রাইসিসমুক্তির উপায় (যা আরএসএস-এর মত ), সে মতও রয়ে যাবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১০ মে ২০২৪ | ২৬৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:a0eb:473d:d1b4:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ০৯:০৮531545
  • এটা একটা ভালো টই হতে পারে। এই বিষয়ে আমার একেবারেই জ্ঞান কম, তবে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রেক্ষিতে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।

    "গত দশ বছরের অস্থির অবস্থা, ভারতীয় নেশন-স্টেটের চরিত্র বদলেরই চেষ্টা। যখন বলি, আর এস এস তো দীর্ঘদিন ধরে ভেতরে ছিল, তখন মনে হয় এটাই বলি যে, নেশন-স্টেটের অন্য একটা মডেল বা দিক যা সংবিধানের মধ্যে পুরো গুরুত্ব পায়নি বা '৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র গঠনে পুরো গুরুত্ব পায়নি, সেই হিন্দুকেন্দ্রিক, তাদের মত ও বিশ্বাসকেন্দ্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা তৈরী করে নেওয়ার ইচ্ছেটা সুপ্ত ছিল, ঐ মডেলটি সংবিধান - আইন ইত্যাদি তৈরীর পরেও রয়ে গেছিল। "

    এইটা নানান খবর ইত্যাদি পড়ে আমারও মনে হয়, বা আগেও এ নিয়ে নানা জায়গায় পড়েছি। স্বাধীনতার সময়েই আরেসেস ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল, কিন্তু সেই সময়ে সফল হয়নি। কিন্তু সত্তর বছর ধরে গ্রাসরুট লেভেলে কাজ করে গেছে, আর গত দশ বছরে একজন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী (আর ফ্যাসিস্ট গৃহমন্ত্রী) কে সরকারে পেয়ে এখন সমস্ত দিক দিয়ে সেই লক্ষ্য পূরনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংবিধান পাল্টানোর কথা ভেবে দেখছে, আর সিএএ, এনআরসি, ইউসিসি, ইত্যাদি আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য জয় শ্রীরাম, বন্দে মাতরম, ভারত মাতা কি জ্যায়, গর্ব সে কহো হাম হিন্দু হ্যায় ইত্যাদি জিনিষগুলো ন্যাশনাল ডিসকোর্সে প্রাধান্য পাচ্ছে।
  • b | 14.139.***.*** | ১০ মে ২০২৪ ১৩:১৮531552
  • "এই বিচারে হিন্দুজাতির দীর্ঘকালগত পরাধীনতার দ্বিতীয় কারণ আসিয়া পড়িল। সে কারণ,—হিন্দুসমাজের অনৈক্য, সমাজমধ্যে জাতি-প্রতিষ্ঠার অভাব, জাতি-হিতৈষণার অভাব, অথবা অন্য যাহাই বলুন। আমরা সবিস্তারে তাহা বুঝাইতেছি।
    আমি হিন্দু, তুমি হিন্দু, রাম হিন্দু, যদু হিন্দু, আরও লক্ষ লক্ষ হিন্দু আছে। এই লক্ষ লক্ষ হিন্দুমাত্রেরই যাহাতে মঙ্গল, তাহাতেই আমার মঙ্গল। যাহাতে তাহাদের মঙ্গল নাই, আমারও তাহাতে মঙ্গল নাই। অতএব সকল হিন্দুর যাহাতে মঙ্গল হয়, তাহাই আমার কর্ত্তব্য। যাহাতে কোন হিন্দুর অমঙ্গল হয়, তাহা আমার অকর্ত্তব্য। যেমন আমার এইরূপ কর্ত্তব্য আর এইরূপ অকর্ত্তব্য, তোমারও তদ্রূপ, রামের তদ্রূপ, যদুরও তদ্রূপ, সকল হিন্দুরই তদ্রূপ। সকল হিন্দুরই যদি একরূপ কার্য্য হইল, তবে সকল হিন্দুর কর্ত্তব্য যে একপরামশী, একমতাবলম্বী, একত্র মিলিত হইয়া কার্য্য করে, এই জ্ঞান জাতিপ্রতিষ্ঠার প্রথম ভাগ; অর্দ্ধাংশ মাত্র।
    হিন্দুজাতি ভিন্ন পৃথিবীতে অন্য অনেক জাতি আছে। তাহাদের মঙ্গলমাত্রেই আমাদের মঙ্গল হওয়া সম্ভব নহে। অনেক স্থানে তাহাদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল। যেখানে তাহাদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল, সেখানে তাহাদের মঙ্গল যাহাতে না হয়, আমরা তাহাই করিব। ইহাতে পরিজাতিপীড়ন করিতে হয়, করিব। অপিচ, যেমন তাহাদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল ঘটিতে পারে, তেমনি আমাদের মঙ্গলে তাহাদের অমঙ্গল হইতে পারে। হয় হউক, আমরা সে জন্য আত্মজাতির মঙ্গলসাধনে বিরত হইব না; পরজাতির অমঙ্গল সাধন করিয়া আত্মমঙ্গল সাধিতে হয়, তাহাই করিব। জাতিপ্রতিষ্ঠার এই দ্বিতীয় ভাগ।
    দেখা যাইতেছে যে, এইরূপ মনোবৃত্তি নিষ্পাপ পরিশুদ্ধ ভাব বলিয়া স্বীকার করা যাইতে পারে না। ইহার গুরুতর দোষাবহ বিকার আছে। সেই বিকারে, জাতিসাধারণের এরূপ ভ্রান্তি জন্মে যে, পরজাতির মঙ্গলমাত্রেই স্বজাতির অমঙ্গল, পরজাতির অমঙ্গলমাত্রেই স্বজাতির মঙ্গল, বলিয়া বোধ হয়।ই কুসংস্কারের বশবর্ত্তী হইয়া ইউরোপীয়েরা অনেক দুঃখ ভোগ করিয়াছে। অনর্থক ইহার জন্যে অনেকবার সমরানলে ইউরোপ দগ্ধ করিয়াছে।"
     
    এটা পড়লে কি মনে হচ্ছে না যে বঙ্কিম ঐ জাতীয় ন্যশনালিজম এর বিরুদ্ধে ? অথবা, চিত্তের কিঞ্চিৎ দোলাচল আছে ? 
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ১০ মে ২০২৪ ১৪:৪০531560
  • b কে বলারঃ

    বঙ্কিমের প্রবন্ধটির বড় অংশ জুড়ে আছে হিন্দুদিগের সমালোচনা, সমাধান একটা আছে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ নয়, provisional। সমালোচনা কারণ হিন্দুরা পরাধীন, হ্যাঁ, সাতশো বছর ধরেই পরাধীন, অর্থাত মুসলমান শাসন ধরে। তো সেই পরাধীনতার দু'টি কারণ - স্বাধীনতাস্পৃহা বা স্বাতন্ত্র‌্যভাবের অভাব এবং জাতিভেদ বা নেশনধারণার অভাব, এমন একটি নেশনভাব যা all encompassing !

    ইউরোপে জাতিপ্রতিষ্ঠার যে কথা লিখেছেন, ইতালী বা জার্মানীর কথা লিখেছেন, বঙ্কিম এও জানেন যে ঐভাবে জাতিপ্রতিষ্ঠা ইউরোপকে 'সমরানলে' দগ্ধ করছে এবং আরো খারাপ কিছু হতে পারে ! দোলাচল আছে, দোটানা আছে, ঠিক পথ সেটাই কিনা সে নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু এর পরেই লিখছেন স্বজাতি - প্রতিষ্ঠা ভাল বা খারাপ হতে পারে (এর অনুসিদ্ধান্ত করা যায় যে স্বজাতি প্রতিষ্ঠা হলে স্বজাতিরই কেউ রাজা হতে পারে বা দেশের মাথা হতে পারে, ফলে হিন্দুরা যে রাজা নিয়ে ভাবিত নয়, যে কেউ রাজা হলেই হল, তারা জীবন কাটিয়ে দেয়, সেই 'দোষ'ও কেটে যাবে, অপিচ, ভবিষ্যতে রবিবাবু ভারতের মানুষের রাজাকে পাত্তা না দিয়ে জীবন কাটিয়ে যাওয়াকে ভারতীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য বলবেন কিন্তু বঙ্কিমের কাচে সেটি আক্ষেপের) কিন্তু যে জাতি এটি করে উঠতে পারে তারা 'প্রবলতা' লাভ করে। তো এই প্রবলতা লাভ করাটাই বঙ্কিমের চেতনার mainstay মনে হয়, বাঙালীর বাহুবল হোক বা হিন্দুর বাহুবল, সেসবের উদ্দেশ্য হল এই প্রবলতা লাভ করা, যোদ্ধাভাব, যা না থাকা বা খুঁজে না পাওয়া (অতীত ভারতের লেখাপত্তরও রচাকথা, পুরাণ, সত্য কিছু পাওয়া যায় না উনিই লিখছেন) বঙ্কিমের কাছে আক্ষেপের। রবিবাবুর সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে, রবিবাবু নেশন গঠনে বাহুবলের থেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন 'আত্মশক্তি' - কে, গান্ধীও, মিলিটারি ভাবের বদলে ব্যক্তি বা কমিউনিটির ভেতরের বদল ঘটানোই তাদের লক্ষ্য বা তত্ত্ব। এও আমার ব্যক্তিগত মত যে বঙ্কিমের ক্ষেত্রে এই বাহুবলের প্রতি আকর্ষণ তৈরী হচ্ছে সমসময় থেকেই; একজন ইংরেজী শিক্ষিত, ইংরেজের চাকুরে,ইংরেজের চাকুরির জুতো খেয়ে বেঁকে যাওয়া বাঙালী - হিন্দু - ভারতীয় নিজের আত্মপ্রতিষ্ঠা বা নিজের পজিশন খুঁজতে গিয়ে ইংরেজ বা ইউরোপ থেকেই মডেল খুঁজে নিয়ে বা ব্যবহার করে - যা বাহুবলের ওপর প্রতিষ্ঠিত - ইংরেজ শাসনের থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছে। তো এইসবই দোটানা তৈরী করছে বঙ্কিম - ভুদেবের লেখায় - কথায়, ইংরেজ শাসনের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, সরাসরি না হোক ভেতরে, কিন্তু সেসবই করতে হচ্ছে আবার ইংরেজের মডেল নিয়ে, ফলতঃ নানারকমের কন্ট্রাডিক্শন ! এও হয়ত ভাবার যে বঙ্কিমের 'প্রবলতা' থেকে রবিবাবু - গান্ধীর 'আত্মশক্তি', চেতনার এই পরিবর্তন ঘটল কারণ ইংরেজের শাসন ক্রমশঃ হিংস্র হয়ে উঠল, বাহুবলে তাদের সাথে পেরে ওঠা যাবে না, মার খাওয়া সহ্য করতে হবে, আত্মশক্তির সেই জন্যই প্রয়োজন !

    লেখাটির শুরুতে বঙ্কিমের দেওয়া সমাধান provisional লিখেছিলাম। কারণ যে দুটি উদাহরণ অনতিঅতীত থেকে পাচ্ছেন যা জাতিভেদের ওপরে উঠে বড় শক্তির মোকাবিলা করেছিল, মারাঠা বা শিখ, তাদের জাতিগঠন শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তারা মোঘলদের হারিয়েছে বা ইংরেজদের সাথে টক্কর দিয়েছে কিন্তু নেশন বা জাতিগঠনটি ভারত জোড়া হয়নি ("সমুদয় ভারত এজাতীয় বন্ধনে বদ্ধ হইলে কি না হইতে পারিত"), বঙ্কিমের যেন আকাঙ্খা যে সেরকম কিছু গড়ে উঠুক। এই গড়ে ওঠাটাও আবার হিন্দুকেন্দ্রিকই হবে - জতিভেদের কারণগুলি ভাষা-ধর্ম-বংশকেন্দ্রিক, বাঙালী - রাজপুত - তেলেঙ্গী আছে আবার হিন্দু - মুসলমানও আছে কিন্তু সমস্যাটিকে বোঝা বা সমাধান খুঁজে পাওয়ার কথা হয়ত হিন্দুদেরই বলছেন।
  • এলেবেলে | ১০ মে ২০২৪ ১৫:২৪531562
  • দেদার কপি-পেস্ট করলেই যদি কাউন্টার ন্যারেটিভ হাজির করা যায়, তাহলে সে আর এমন কী কঠিন ব্যাপার! তো কপি-পেস্টই থাকুক।
     
    ১. সন্ত্রাসীদের মতো এক রকম ফকিরেরাও বারংবার ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। ফকির মজনু শাহ এবং তাঁর পালক পুত্র চেরাগ আলি ছিলেন ফকিরদের নেতা। সন্ন্যাসী এবং ফকিরদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভাবটি ছিলো চমৎকার। কোনো কোনো সময়ে সন্ন্যাসী এবং ফকিরেরা মিলিতভাবে ইংরেজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তার ভূরি ভূরি লিখিত প্রমাণ রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেটি করলেন, ফকিরদের ভূমিকা সম্পূর্ণরূপে ছেঁটে বাদ দিয়ে সন্ন্যাসীদের লড়াইকে তাঁর রচনার বিষয়বস্তু করলেনসত্যানন্দকে বীরের গৌরব দিলেন, কিন্তু মজনু শাহর নামটি উল্লেখ করার উদারতা পর্যন্ত দেখাতে পারলেন না। বঙ্কিম তো আসল ঘটনা জানতেন। বঙ্কিমচন্দ্রের অপরাধ— তিনি বাস্তবতাকে খুন করেছেন। হ্যাঁ, কথা উঠতে পারে বঙ্কিম ইতিহাস রচনা করেননি। উপন্যাস লিখেছেন, প্রকৃত ঘটনাকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে নিজের মনোমত করে ঢালাই করার অধিকার আছে। বঙ্কিমকে নিছক উপন্যাস লেখক হিসেবে ধরে নিলে তাঁর ওপর এই পর্যালোচনাটি তৈরি করবারও প্রয়োজন দেখা দিতো না। বঙ্কিম তাঁর এই দু'টি উপন্যাসে এমন একটি ধারণার বিকাশ ঘটিয়েছেন, বৃটিশ বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামের অগ্রগতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও গভীর। হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত লড়াইকে একক হিন্দুর লড়াই দেখাতে গিয়ে ইতিহাসের এমন একটা বিকলাঙ্গ অগ্রগতির খাত খনন করেছেন, যা বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসকে একটা কানা গলির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে, তার প্রভাব এতো সুদূরপ্রসারী হয়েছে ভারতের জাতীয় ইতিহাস অদ্যাবধি স্বাভাবিক পথটির সন্ধান করে নিতে পারেনি
     
    ২. আনন্দমঠের মধ্যেই প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূর্ণ দৈর্ঘ মুক্তি পেয়েছিলো। সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী যাঁদের কাছে আনন্দমঠের স্থান ছিলো ঠিক গীতার পাশে তাঁরা বঙ্কিমকে তাঁদের মন্ত্রগুরু হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন। ডেপুটিগিরির ফাঁকে ফাঁকে এই হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নটি সোনালী পদ্মের মতো বঙ্কিমের মনে দল মেলেছিলো। আনন্দমঠের গল্পটি একেবারেই মামুলি। ইংরেজ রাজত্বের সূচনা পর্বে এ ধরনের ঘটনা এন্তার ঘটেছে। আনন্দমঠের যা কিছু দাম, তাহলো সেই স্বপ্নটির কারণে। মাতৃভূমি দশ হস্তে দশ প্রহরণধারিনী দেবী দুর্গার মতো পরিপূর্ণ এক জীবন্ত সত্তা। বন্দেমাতরম গানটির মধ্যে দিয়ে মাতৃভূমির সেই জগৎজননী রণজয়ী মূর্তিটিই উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।

    বঙ্কিম যদি সম্পূর্ণ একটা কাল্পনিক পটভূমির ওপর প্রতিস্থাপন করে আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচনা করতেন, পরবর্তীকালে বাঙালি সমাজে যে রাজনৈতিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া জন্ম হয়েছে, সেগুলো আদৌ ঘটতো কিনা সন্দেহ।
     
    ৩.  তাঁর রচিত সাহিত্যের একটা বিরাট অংশে আবেগ, অনুভূতি, ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ মানুষকে তাঁর পূর্ণ পরিচয় দেখাতে চেষ্টা করেছেন এবং সে রচনাগুলো সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতার স্পর্শ লেশ বর্জিত। কিন্তু বঙ্কিম যেখানে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন, সেখানে তিনি ঘোরতর হিন্দু। হিন্দুত্ব তাঁর ধ্যান-জ্ঞান, হিন্দুত্বই তাঁর জীবন এবং নির্বাণ হয়ে দাঁড়ায়। হিন্দুত্বের বাইরে কোনো কিছুই তাঁর বিবেচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। একটি হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পথে যা কিছু অন্তরায় মনে করেছেন, সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়া তাঁর পরম পবিত্র কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলো

    হিন্দু রাষ্ট্রের প্রকৃত রূপরেখা কি হওয়া উচিত সে সম্বন্ধে বঙ্কিমের কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা ছিলো না, শুধু অতীতের কিছু ঝাপসা স্মৃতি, ধোঁয়া ধোঁয়া, ছায়া ছায়া কিছু অনুভবই ছিলো তাঁর পাথেয়। সহজাত প্রবণতা বশে তিনি শুধু এটুকু বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁর স্বপ্নের হিন্দু রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে হলে তার প্রতিস্পর্ধী হয়ে উঠতে পারে, যে সকল রাষ্ট্রাদর্শ সেগুলো ঝাড়ে বংশে উৎপাটন করে ফেলতে হবে। বঙ্কিম সমস্ত জীবন ধরে মারাত্মক রোগের জীবাণুর মতো সেই ধ্বংসকীট বয়ে বেড়িয়েছেন। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস, যে বন্দেমাতরম সঙ্গীতের মাধ্যমে স্বদেশাত্মার মর্ম বাণীটি আবিষ্কার করেছিলেন; সেই একই শক্তিমান মন্ত্র মহাকালের খড়গের রূপ ধারণ করে তাঁর আপন মাতৃভূমিকে দ্বি-খণ্ডিত করে ফেলল। মাতৃমুক্তির মন্ত্রের অপপ্রয়োগ করে বঙ্কিম মাতৃ অঙ্গচ্ছেদের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করলেন। 
  • দীপ | 2402:3a80:42f4:216:678:5634:1232:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ১৮:১৪531568
  • বাঃ রবীন্দ্রনাথের লেখা মুছে দেওয়া হলো!
    চালিয়ে যান স্যার! 
    বড়ো বড়ো বাতেলা মারতে ভুলবেন না!
  • এলেবেলে | ১০ মে ২০২৪ ২০:৩৬531576
  • জসীমউদ্দীনকে বলা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কথা
     
  • দীপ | 2402:3a80:198f:6b2e:878:5634:1232:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ২১:১৬531578
  • সেজন্য রবীন্দ্রনাথ বন্দে মাতরমের প্রথম স্তবককে জাতীয় সঙ্গীত রূপে গ্রহণ করতে বলেন, যাতে কারো সমস্যা না হয়।
    পণ্ডিত মহোদয় সেকথা বেমালুম গাপ মেরে গেছেন!
  • dc | 2a02:26f7:d6c1:680d:0:5e30:2645:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ২১:২২531579
  • অর্থাত বন্দে মাতরম নিয়ে প্রায় প্রথম থেকেই কন্ট্রোভার্সি আছে। 
  • এলেবেলে | ১০ মে ২০২৪ ২২:২১531580
  • বেমালুম গাপ মেরে যাওয়ার নমুনা ১
     
    • এলেবেলে | ০৯ মে ২০২৪ ০০:২৫
    • এরপর ১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে এই গানের প্রথম দুটি স্তবক ‘ন্যাশনাল সং’ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। অবশ্য তার আগে ওই বছরেই ‘বন্দে মাতরম’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া উচিত কি না, এই বিতর্ক শুরু হলে জাতীয় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি একটি সাব কমিটি গঠন করে, যার সদস্য ছিলেন নেহরু, সুভাষ বসু, আবুল কালাম আজাদ ও আচার্য নরেন্দ্র দেব। তাঁরা রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ গ্রহণ করেন। 
    • রবীন্দ্রনাথ এ প্রসঙ্গে ১৯ অক্টোবর সুভাষকে সরাসরি লেখেন, "বন্দে মাতরম গানের কেন্দ্রস্থলে আছে দুর্গার স্তব এ কথা এতই সুস্পষ্ট যে এ নিয়ে তর্ক চলে না। অবশ্য বঙ্কিম এই গানে বাংলা দেশের সঙ্গে দুর্গাকে একাত্ম করে দেখিয়েছেন, কিন্তু স্বদেশের এই দশভূজামূর্তিরূপের যে পূজা সে কোনো মুসলমান স্বীকার করে নিতে পারে না। ...যে রাষ্ট্রসভা ভারতবর্ষের সকল সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র সেখানে এ গান সর্বজনীনভাবে সঙ্গত হতেই পারে না।”
    বেমালুম গাপ মেরে যাওয়ার নমুনা ২
     
    • এলেবেলে | ০৯ মে ২০২৪ ০০:৪১
    • এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, জনগণমন-এর মতো বন্দে মাতরম-এরও কেবল প্রথম স্তবকটিই জাতীয় স্ত্রোত্র হিসাবে গৃহীত হয়। কারণ 'ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী' এবং 'তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে' স্পষ্টতই হিন্দু ধর্মীয় পৌত্তলিকতাকে এন্ডোর্স করে। রবীন্দ্রনাথ এরই বিরোধিতা করেছিলেন।
     
    এর আগে রথীন্দ্রনাথকে লেখা চিঠির গপ্পো আসছিল। আশা করি জসীমুদ্দীনের উল্লেখের পর সেটা বন্ধ হবে
  • দীপ | 2402:3a80:198d:bc35:778:5634:1232:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ২২:৩২531581
  • সেজন্য রবীন্দ্রনাথ বন্দে মাতরমের প্রথম স্তবককে জাতীয় সঙ্গীত রূপে গ্রহণ করতে বলেন, যাতে কারো সমস্যা না হয়। পরবর্তী অংশকে গ্রহণ করা হয়নি।
    মহাশয় বোধহয় বাংলাভাষা বুঝতে পারছেন না!
     
     
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:b09f:7982:2c94:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ২২:৩৩531582
  • তার মানে রবীন্দ্রনাথের সময় থেকেই বন্দে মাতরম নিয়ে সংশয় আর বিতর্ক ছিল। 
  • এলেবেলে | ১০ মে ২০২৪ ২২:৪১531583
  • সেজন্য রবীন্দ্রনাথ বন্দে মাতরমের প্রথম স্তবককে জাতীয় সঙ্গীত রূপে গ্রহণ করতে বলেন, যাতে কারো সমস্যা না হয়।
    পণ্ডিত মহোদয় সেকথা বেমালুম গাপ মেরে গেছেন!
     
    এটা হচ্ছে প্রথম দফার দাপট। তার প্রেক্ষিতে টাইম স্ট্যাম্প-সহ মন্তব্য হাজির করার পরে 'বেমালুম গাপ' মেরে দেওয়াটা গিলে নেওয়া হল। দিয়ে ফের এক দফা দাপট দেখিয়ে লেখা গেল:
     
    সেজন্য রবীন্দ্রনাথ বন্দে মাতরমের প্রথম স্তবককে জাতীয় সঙ্গীত রূপে গ্রহণ করতে বলেন, যাতে কারো সমস্যা না হয়। পরবর্তী অংশকে গ্রহণ করা হয়নি।
    মহাশয় বোধহয় বাংলাভাষা বুঝতে পারছেন না!
     
    কে যে বাংলা ভাষা বুঝতেও পারছে না, লিখতেও পারছে না - সেটা জলের মতো পরিষ্কার! আরে বাপু, রবি ঠাকুর যে কেবল প্রথম স্তবকের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, সেটা তো অনেক আগেই বলা হয়েছে। বেমালুম গাপ করা হয়নি তো।
     
    সাদা বাংলায় একে বলে ত্যানা প্যাঁচানো।
  • দীপ | 2402:3a80:198d:bc35:778:5634:1232:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ২২:৫১531584
  • আপনি অদম্য উৎসাহে ত্যানা‌ পেঁচিয়ে শ্রাদ্ধ করতে‌ থাকুন!
  • জসল | 2607:fb90:e3b8:ae68:eccb:188a:e7d2:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ২২:৫৬531585
  • ভারতের সাপেক্ষে জাতীয়তাবাদ নির্মান ও সংজ্ঞায়িত করতে চাইলে একটা ব্যাপক ক্রিটিক্যাল ও র্যাডিকেল চিন্তা চর্চার সংস্কৃতি প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি। সেটা দু:খজনকভাবে মিসিং, আমাদের সংস্কৃতিটাই কনফর্মিস্ট।
    এবং এই সেই দুর্ভাগা জাতি যে একটি নায়ক ছাড়া অসহায়! 
     
    (এলেবেলেকে বলার - স্প্যামারের সংগে এনগেজ করা মানে স্প্যাম পোস্টকে কথোপকথনের আওতায় নিয়ে আসা,  আর সেক্ষেত্রে স্প্যাম ডিলিট করার উপায় থাকবে না)
  • দীপ | 2402:3a80:196c:5473:778:5634:1232:***:*** | ১০ মে ২০২৪ ২৩:৫২531586
  • (১) 
    বন্দে মাতরম্
    সুজলাং সুফলাং 
    মলয়জশীতলাং
    শস্যশ্যামলাং 
    মাতরম্৷৷
    শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনীম্
    ফুল্লকুসুমিত-দ্রুমদলশোভিনীম্
    সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্
    সুখদাং বরদাং মাতরম্৷৷
     
    (২) 
    আনন্দমঠ উপন্যাসে একটা ফুটনোটে শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখে দিয়েছিলেন 'মল্লার- কাওয়ালি তাল'। এটা নিশ্চয়ই বন্দেমাতরম গাইবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। পরে রবীন্দ্রনাথ যখন কংগ্রেসের সম্মেলনে এই গানটি গেয়েছিলেন তখন কি তিনি মল্লার রাগেই গেয়েছিলেন? প্রথমবার কে সুর করেছিল গানটি? কিরকম ছিল সেই সুর? রবীন্দ্রনাথ প্রথম গেয়েছিলেন বটে, কিন্তু আরও কয়েকবার এই গান কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে গাওয়া হয়েছিল। সেগুলি কি সব একই সুরে গাওয়া ছিল? 
     
    এইগুলি জানার কৌতূহল আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। মুক্তধারা বঙ্কিমচন্দ্রের বইগুলি প্রকাশ করেছিল, উপন্যাসগুলি আর কমলাকান্তের দপ্তর আমি একসাথে কিনেছিলাম আজিজিয়া বুক ডিপো থেকে। প্রথম পড়েছিলাম দেবী চৌধুরানী, এরপর দুর্গেশনন্দিনী। এরপরের ধারাবাহিক ক্রম মনে নাই। আনন্দমঠ প্রথমবার পড়ার সময় গানটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়িনি। ছোট ছিলাম, খটোমটো লাগছিল, অর্থ বুঝতে পারছিলাম না। কিছুদিন পরেই আনন্দমঠের দ্বিতীয় পাঠের সময় গানটা পড়তে পড়তে গাঁ ঝমঝম করে উঠেছিল। 
     
    আমার স্পষ্ট মনে আছে, গানের প্রথম অনুচ্ছেদটা শুনে মহেন্দ্র বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে, মা! কে এই মা! দ্বিতীয় অংশটা শুনে মহেন্দ্র আরও চমকে ওঠে, 'ওরে, এ তো দেশ, এতো মা নয়'। এইখানে থেমে আমি গানটা বারবার পড়েছি- পুরো গানটা। এবং সারা শরীরে সেই বিদ্যুৎ ঝলক আমি এখনো মনে করতে পারি। হ্যাঁ, তাই তো এতো মা এবং দেশ! এবং বাংলাদেশ! এতো আমার বাংলাদেশ। বাংলাদেশ। 
     
    (৩) 
    আমার অন্তরে একটা উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রবণতা আছে। আগে অনেক প্রবল ছিল- একদম মেরে ফেলবো কেটে ফেলবো, কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফলব ধরণের উগ্র। অনুমান করি সেই উগ্র জাতীয়তাবাদী বীজটা আমার অন্তরে প্রোথিত হয়েছিল আরও ছোটবেলায়, বুদ্ধি হওয়ারও আগে, একদম যুদ্ধের সময়- যখন আমি নিতান্ত শিশু সেইসময়। আর সেই সুপ্ত বীজে জল হাওয়া রোড জুগিয়েছে আর সেটার ভাষা দিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- বিশেষভাবে এই গানটা। 
     
    আমি এই গানটার যেসব সুর করা হয়েছিল শুরু থেকে সেগুলি জানতে খুবই আগ্রহী। না, অন্তরে সেই উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রবণতা আর নাই- সেই নেতিবাচক ব্যাপারটা থেকে আমি অনেকখানি মুক্ত। সেই মুক্তিটা ঘটেছে বুদ্ধি দিয়ে, পড়াশুনা দিয়ে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও শিক্ষা আলাপ আলোচনা এইসবের ভিতর দিয়ে। কিন্তু আবেগের ব্যাপারটা কিনা একটু ইয়ে, চট করে দুর হয় না। কি করে যাবে? প্রেমের মধ্যে কিনা সবচেয়ে ঝাঁঝালো প্রেম হচ্ছে দেশপ্রেম নামক জাতীয়তাবাদী ধারণাটি।        
     
    বন্দেমাতরম গানটি ওরা নাকি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত করবে ভেবেছিল। করেনি, কিন্তু এর একটা অংশ ওরা স্তোত্র হিসাবে পাঠ করে। এটার আবার নানাপ্রকার 'আধুনিক' সুরও হয়েছে। এ আর রহমান একটা সংস্করণ করেছে সেটা আবার তুমুল জনপ্রিয়। এইটা আমার ভাল লাগেনা। আমাদের বাঙলার গান, ওরা কিসব করে! 
     
    (৪) 
    কিছু না। এমনিই মনে পড়লো- সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং শস্যশ্যামলাং মাতরম্৷ এবার আমাদের বাম্পার বোরো ফলন হয়েছে।
     
    লিখেছেন ইমতিয়াজ মাহমুদ।
    সবার দৃষ্টিভঙ্গিই থাকুক।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:fd1b:3453:953a:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৩:৪৫531589
  • ইমতিয়াজ মাহমুদ- এর লেখাটা ভাল লাগল। মুসলমান হলেই তার বন্দেমাতরম গান অপছন্দ হবে, বাঙালী মুসলমানের ক্ষেত্রে এমন সাধারণীকরণ করা যায় না, ইমতিয়াজ -এর লেখাটা তার প্রমাণ। ধর্মীয় ​​​​​​​অনুশাসন ​​​​​​​সব ​​​​​​​মুসলমান ​​​​​​​যে ​​​​​​​মানবেই, ​​​​​​​এমন ​​​​​​​নয়। ​​​​​​​ধর্মের উর্ধে ​​​​​​​উঠে, ইমতিয়াজের ​​​​​​​মত কেউ, ​​​​​​​দেশকে ​​​​​​​প্রাধান্য ​​​​​​​দিতে ​​​​​​​পারে 
    ছোটবেলার এক মুসলিম বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল , যে বলছিল স্কুলে একসাথে সরস্বতী পূজার কথা, তাই নিয়ে আবেগ। ধর্ম কোন বাধা হয় নি । 
    হিন্দু মৌলবাদ, মুসলিম মৌলবাদ - দুয়েরই সুবিধা হয় , মানুষকে ধর্মীয় পরিচিতির খোপে পুরতে পারলে। অনেকের ক্ষেত্রেই তারা সফল, কিন্তু সবার ক্ষেত্রে নয় 
    আলোচনা চলুক 
  • যোষিতা | ১১ মে ২০২৪ ০৪:০৭531590
  • এই গান বাংলাদেশের কয়েকজন বন্ধু ( তারা সকলেই মুসলমান) তাদেরও প্রিয়। আমার সোনার বাংলা নিয়ে তো রীতিমতো ঝগড়া চেঁচামিচি হয় নিত্য, কোন গানটা বেটার, জনগনমন নাকি আমার সোনার বাংলা। সোনার বাংলাই জিতে যায় প্রত্যেকবার কথায় ও সুরে।
  • &/ | 107.77.***.*** | ১১ মে ২০২৪ ০৪:৫৩531591
  • এই কথাটাই বলতে চেষ্টা করেছিলাম এই ক'দিন ধরে , এমন হৈ চৈ হাইমাইখাই লেগে গেল যে সে আর কী বলব 
  • র২হ | 2607:fb90:e3b8:ae68:eccb:188a:e7d2:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৫:০১531592
    • aranya | ১১ মে ২০২৪ ০৩:৪৫
    • ...মুসলমান হলেই তার বন্দেমাতরম গান অপছন্দ হবে...
     
    অরণ্যদা, এরকম দাবি কেউ করেছে নাকি? দেখিনি তো!
     
    তাছাড়া, এমনকি আব্রাহামিক ধর্মবিশ্বাসী না হলেও মা আর্কিটাইপ গ্রাহ্য হতেই হবে - সেটাও উর্বর কল্পনা।
     
    এই লেখার স্কোপ অবশ্য আলাদা, এই নিয়ে আর কিছু লিখছি না এখানে।
  • অরিন | 119.224.***.*** | ১১ মে ২০২৪ ০৫:১৭531593
  • "হিন্দু মৌলবাদ, মুসলিম মৌলবাদ - দুয়েরই সুবিধা হয় , মানুষকে ধর্মীয় পরিচিতির খোপে পুরতে পারলে।", 
     
    খুব ভাল লিখলেন অরণ্যবাবু, সৈয়দ মুজতবা আলী হলে হয়ত বলতেন ঐ বুঝলে পাগল সারে। 
    সারে নি যে, ত্রিখণ্ডিত উপমহাদেশ তার জীবন্ত প্রমাণ। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:c862:5dc2:b96a:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৬:৩১531595
  • হুমায়ুন আহমেদ - এর একটা ছোট গল্প  আছে - ১৯৭১। পরে সেটা বাড়িয়ে একটা উপন্যাস লেখেন, তার নামও ১৯৭১। সেই উপন্যাসে, একটি চরিত্র আছে, পাক সেনার কমান্ডার-কে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। ভেঙে পড়া কালী মন্দিরের ভিতর কালী মূর্তি, পাক কমান্ডার মন্তব্য করেন - এই যে মূর্তি, মাকড়সার মত কতগুলো হাত, তোমাদের ঘেন্না করে না । লোকটি উত্তর দেয় - আমরা ছোটবেলা থেকে এই মূর্তি দেখে বড় হয়েছি , আমাদের চোখে স্বাভাবিকই লাগে। 
    লোকটিকে পরে গুলি  করে মেরে ফেলা হয়। 
    মধ্য প্রাচ্যের মুসলমান আর বাংলার মুসলমান এক নয়। বাংলার মুসলমান বহু প্রজন্ম হিন্দুদের সাথে পাশাপাশি থেকেছে, একই সংস্কৃতির শরিক। 
    'আমরা সবাই তালিবান 
    বাংলা হবে বাংলাস্তান'- মৌলবাদীদের এই স্লোগানের বিরোধিতা যে বাঙালী মুসলমানরা করে , তাদের অনেকেরই প্রিয় গান -  'আমার সোনার বাংলা' , হয়ত বা বন্দে মাতরম- ও প্রিয় কারও, ইসলামে পৌত্তলিকতা বারণ হলেও দূর্গা বা সরস্বতীর মূর্তি দেখলে তাদের কোন বিবমিষা সৃষ্টি হয় না 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:7912:e566:5d8e:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৬:৪২531596
  • "মুসলমান হলেই তার বন্দেমাতরম গান অপছন্দ হবে, বাঙালী মুসলমানের ক্ষেত্রে এমন সাধারণীকরণ করা যায় না, ইমতিয়াজ -এর লেখাটা তার প্রমাণ। ধর্মীয় অনুশাসন ​​​​​​​সব ​​​​​​​মুসলমান ​​​​​​​যে ​​​​​​​মানবেই, ​​​​​​​এমন ​​​​​​​নয়। ​​​​​​​ধর্মের উর্ধে ​​​​​​​উঠে, ইমতিয়াজের ​​​​​​​মত কেউ, ​​​​​​​দেশকে ​​​​​​​প্রাধান্য ​​​​​​​দিতে ​​​​​​​পারে ছোটবেলার এক মুসলিম বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল , যে বলছিল স্কুলে একসাথে সরস্বতী পূজার কথা, তাই নিয়ে আবেগ। ধর্ম কোন বাধা হয় নি । "
     
    অরণ্যদা, একদম একমত। অনেক মুসলমানেরই বন্দে মাতরম ভালো লাগে, যেমন অনেক হিন্দুরও ভালো লাগে। কিন্তু সব মুসলমানের ভালো লাগে না, কারন অনেক = সবাই না। তাই সবাই এর ওপর চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক না। এই কথাটাই কয়েকদিন ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এলেবেলে আর অন্য কয়েকজনের কোট পড়ে মনে হলো রবীন্দ্রনাথ ব্যাপারটা বুঝেছিলেন, তাই বন্দে মাতরম গানটা পুরোটা নিতে চাননি :-)
     
    আবার দেখুন, অনেক হিন্দু গরু খেতে চায় না ধর্মীয় কারনে। এবার আমার মতো কয়েকজন নাস্তিক দাবী করলো আমরা ইন্ডিয়ায় আছি, আমাদের গরু খেতে ভালো লাগে, বিশেষ করে মিডিয়াম রেয়ার স্টেক উইথ এ সাইড ওফ পোট্যাটোজ অ্যান্ড ক্যারটস, অতএব ইন্ডিয়ার সবার জন্য গরু খাওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক। আমার ভালো লাগে, তার মানেই আমাদের সবাইকে ভালো লাগাতে হবে। ভেবে দেখুন কেমন ভালো হয় ব্যাপারটা :-)
  • aranya | 2601:84:4600:5410:c862:5dc2:b96a:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৬:৪৭531597
  • 'কিন্তু সব মুসলমানের ভালো লাগে না, কারন অনেক = সবাই না। তাই সবাই এর ওপর চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক না'
     
    - সে তো অবশ্যই। এ নিয়ে তর্কের কোন অবকাশ নেই 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:c862:5dc2:b96a:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৬:৫১531598
  • 'মিডিয়াম রেয়ার স্টেক উইথ এ সাইড ওফ পোট্যাটোজ অ্যান্ড ক্যারটস' - উলস, হমীনস্ত 
     তবে সবার জন্য স্টেক খাওয়া বাধ্যতামূলক না হলেই ভাল :-)
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:7912:e566:5d8e:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৬:৫২531599
  • "তবে সবার জন্য স্টেক খাওয়া বাধ্যতামূলক না হলেই ভাল"
     
    একদম একমত। স্টেক যদিও বেজায় ভালো laugh
  • aranya | 2601:84:4600:5410:c862:5dc2:b96a:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ০৬:৫৯531600
  • 'স্টেক যদিও বেজায় ভালো' - yes
  • সিএস  | 2405:201:802c:7815:1169:5a19:4db2:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ১১:৫৮531602
  • ডিসির করা প্রথম পোস্টের উত্তরে বলা যায়, যে আরএসএস কীভাবে টিকে রইল, গ্রাসরুট লেভেলে কাজ করল সে সম্বন্ধে বিশেষ আন্দাজ নেই, তবে হ্যাঁ, টিকে ছিল নিশ্চয়, কাজও করত, বিশেষ করে শিক্ষা সংক্রান্ত বা আদিবাসীদের মধ্যে। সেসব যে চালিয়ে যেতে পারল, তার কারণ নিশ্চয় স্বাধীন ভারতের ' স্টেট' তার কাজ ঠিক ভাবে বা পুরোপুরি করতে পারেনি। শিক্ষার প্রসার বা স্বাস্থ্যের প্রসার, সরকারি মাধ্যম মারফত অথবা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর উন্নতি, সেসব, সবাই জানি সর্বাঙ্গসুন্দর ভাবে ঘটেনি। তো এই সকল ফেলিওর, যা ভারত রাষ্ট্রটি বা সরকারের ফেলিওর, সেইগুলিকেই আরএসএস নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করেছে। উত্তর ভারতে ১৯৯০ র দশক থেকেই ভাজপা একক্ভাবে ক্ষমতায় আসতে থেকেছে, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় স্তরে, তারও আগে জনসঙ্ঘের আমলে তারা কোয়ালিশনে এসেছে ('৭৭ সাল থেকেই, খুঁজলে দেখা যাবে জনসংঘ রাজ্যস্তরে উত্তর ভারতেই '৭৭র আগে থেকে হয়ত ক্ষমতার সাথে যুক্ত ছিল ), এসবের ফলে আরএসএস নিশ্চয় তার ফাণ্ডিংটা জোগাড় করে উঠতে পেরেছে। আজ কং-এর যা অবস্থা যে অন্যদলের ওপর নির্ভর না করলে তার নিজেরও শক্তিবৃদ্ধি ঘটবে না, সমঝোতা করতে হবে, জনসংঘ - বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই সেই কাজ করে এসেছে, কখনও তাদের ক্ষমতা কমেছে কখনও বেড়েছে।

    '৭৭ থেকে '৯০, এই সময়ের মধ্যে, বিশেষ করে ১৯৮০ র দশকে উত্তর ভারতে হিন্দুত্বতবাদী মোবিলাইজেশন হয়েছে, আরএসএস-ের শাখা সংগঠন হয়েছে, ইন্দিরা গান্ধী এমারজেন্সির পরে আরএসএসের সাথে ডীল করেছিল বা করতে চেয়েছিল। তো, বলার কথাই এটা যে আরএসএস যে ক্ষমতা থেকে খুব দূরে ছিল সেরকম নয়, খুব covert, খুব আণ্ডারগ্রাউণ্ড সেরকম হয়ত নয়, ভারতীয় রাজনীতির যা রাজকেন্দ্র, মানে উত্তর ভারত, সেখানে নয়, ক্ষমতার কাছাকাছিই ছিল, ভারতীয় স্টেটের ফেলিওরকে ব্যবহার করেই ছিল, যত সেই স্টেটের ক্ষয় হয়েছে, সেই স্টেটের আইডিওলজির ক্ষয় হয়েছে তত তাদের ক্ষমতা বেড়েছে। হ্যাঁ, এসবের মধ্যে তারা তাদের আইডিওলজি অনুসরণ করে গেছে এবং দেশীয় বা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী তার মধ্যে বদলও ঘটিয়েছে।
     
     
  • র২হ | 2607:fb90:e3b8:ae68:eccb:188a:e7d2:***:*** | ১১ মে ২০২৪ ২১:৩৩531613
  • অরণ্যদা, বিবমিষা সৃষ্টি হয়তো আদৌ কোন সহজ ভাবনার মানুষেরই হয় না।
     
    হিন্দি শুনলে কি আমার বিবমিষা হয়? না।
    হিন্দিকে 'জাতীয় ভাষা' হিসেবে, সবার বোধগম্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে কি আমার আপত্তি হয়? 
    হ্যাঁ, প্রবল ভাবে হয়।
     
    আর বারবার তর্কটা সব মুসলমানদের আপত্তি নেই, সবার বিবমিষা হয় না, সম্প্রীতি তো ভালো জিনিস - এসব, যেগুলি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ঐকমত্য চর্বিতচর্বনে জুতোর চামড়া হয়ে গেছে, সেই পরিসরে ঢুকতে দেখলে মনে হয় হোয়াদ্দা ফ।
    এই আরকি।
  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ মে ২০২৪ ০০:২১531614
  • মৌলবাদী গ্রুপগুলো সোশাল মিডিয়ায় যে এই জায়্গাগুলোতেই সূক্ষ্ম ও স্থূলভাবে ক্রমাগত ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। বলছে 'আমাদের দলে যদি না আসিস তাহলে তোদের অবস্থা কী হবে জানিস? বোনকে বিয়ে করতে হবে, উঠোনে গরু কাটতে হবে, একটু এদিক ওদিক করলে ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেবে।'
    আরেক গ্রুপ বলছে, 'ওরে ভাই, আমাদের কথা যদি না শুনিস  তাহলে ওই কুৎসিত ড্যাশগুলো  একদিন তোদের দিয়ে দুর্গাপুজো কালীপুজো করাবে, একদিন তোদের উপাসনায় নিষেধাজ্ঞা আনবে।"
    কয়েক বছর আগেও ধর্ম নিয়ে কোনো কথাই বলত না এমন লোকেরাও এখন বলছে আমাদের একটামাত্র জায়্গা আছে, সেটা হিন্দুদের জন্য হোক।
    এইসব কাউন্টার করতে গেলে সূক্ষ্ম তর্কে বিতর্কে কাজ কতদূর হবে কেজানে। একেবারে সরাসরি মাঠে নেমে বহুবার জানা কথাগুলো হিন্দুমুসলমানে মিলে বলতে পারলে হয়তো কাজ হবে। জোর গলায় 'এসব হবে না। আমরা একত্রে রামলক্ষ্মণ সেজেছি, আমরা কৃষ্ণযাত্রা করেছি(আরেকটা টইতে ইমানুল এই বিষয়েই বলছিলেন), আমরা জুম্মার বাজারে লেসফিতা কিনেছি, আমরা একই স্কুলে-কলেজে পাশাপাশি বসে লেখাপড়া করেছি, কাজও করেছি। "
    ভয়ের সন্দেহের আতঙ্কের বাতাবরণ দুই দিকের মৌলবাদীরাই তৈরী করার চেষ্টা করছে।
  • দীপ | 2402:3a80:a1f:4bb5:0:46:5660:***:*** | ১২ মে ২০২৪ ১৯:৪১531642
  • Arise, children of the Fatherland,
    The day of glory has arrived!
    Against us stands tyranny
    Her bloody standard has been raised, (repeated)
    Do you hear, in the countryside,
    The roar of those ferocious soldiers?
    They come right into your arms
    To tear the throats of your sons, your wives!
     
    Refrain:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন