কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরের এই সাইটটায় স্কুল শিক্ষা নিয়ে প্রচুর ডেটা আছে। আগেও দেখেছিলাম, রাজ্য ভিত্তিক, সর্বভারতীয়, জেলা স্তরের, বিভিন্ন ফর্ম্যাটে। বিভিন্ন নিউজ রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রে এই সাইট থেকে তথ্য আর পরিসংখ্যান নিয়ে লেখা লেখে।
২০২১-২২ এর ডেটা নিয়ে দেখছিলাম, মূলতঃ গভঃ স্কুল, প্রাইভেট স্কুল, শিক্ষার্থী সংখ্যা ইত্যাদি। এই রিপোর্টটা থেকে পরিসংখ্যানগুলো নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ কিছু রাজ্যকে নিয়েছি ; দিল্লী - কেরালা শিক্ষায় তাদের উন্নতির জন্য , দক্ষিণের বাকি রাজ্য তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য, উত্তরের রাজ্য বা মধ্যপ্রদেশ , তাদের আয়তন ও জনসংখ্যার জন্য আর পশ্চিমবঙ্গ, এই সব রাজ্যগুলোর সঙ্গে তুলনার জন্য। ছোট রাজ্য যেমন হিমাচল প্রদেশ, গোয়া বা সিকিম, সচেতন ভাবেই নেওয়া হয়নি।
১। স্কুলের সংখ্যা অনুযায়ীঃ
চারটে ভাগ আছে, গভঃ স্কুলের মধ্যে আবার উপবিভাগ আছে, রাজ্য সরকারের স্কুল, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, সৈনিক স্কুল। কিন্তু রাজ্য সরকারের স্কুলের সংখ্যাই প্রধাণ, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অন্য উপবিভাগের স্কুলের সংখ্যা ২০০ র কম।
লক্ষ্য করার কয়েকটা বিষয় আছে মনে হলঃ
- পশ্চিমবঙ্গে গভঃ স্কুলের অনুপাত সর্বভারতীয় অনুপাতের থেকে অনেক বেশী, আবার প্রাইভেট স্কুলের অনুপাত অনেক কম ! আমাদের যা ধারণা, প্রাইভেট স্কুলের সংখ্যা সংক্রান্ত, সেই ধারণর সঙ্গে একেবারেই মেলে না।
- দিল্লীতে সরকারি স্কুলের শতকরা ভাগ, যা ধারণা, তার থেকে যেন অনেক কম।
- কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, এই রাজ্যগুলোতে প্রাইভেট স্কুলের অনুপাত বেশ বেশী। এর সঙ্গে ঐসব রাজ্যের অর্থনীতির যোগ আছে কিনা জানা নেই।
- কেরালায় সরাসরি সরকারি স্কুলের অনুপাত কম কিন্তু সরকারের থেকে অর্থনৈতিক সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের অনুপাত অনেক বেশী। এই দ্বিতীয় বিভাগটির সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে খুবই কম (88)।
- সরভারতীয় ক্ষেত্রে সংখ্যাগুলো কিন্তু ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী সব রাজ্য মিলিয়ে, কিন্তু এই লেখায় কয়েকটি বিশেষ রাজ্যকে নেওয়া হয়েছে, ফলে এই তালিকার সঙ্গে সর্বভারতীয় সংখ্যাগুলো মিলবে না।
২। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ীঃ
১ নং ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেঃ
- পশ্চিমবঙ্গে গভঃ স্কুল আর প্রাইভেট স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীর অনুপাত , ওপি দুই রকমের স্কুলের সংখ্যার অনুপাতের সঙ্গে একেবারে মিলে যায় ! এই সংখ্যাগুলো আবারও সর্বভারতীয় ফিগারগুলোর সঙ্গে মেলে না, সরকারি ব্যবস্থার দিকেই হেলে থাকার জন্য হয়ত।
- দিল্লীর ক্ষেত্রে এই দুই রকমের সংখ্যার মধ্যে তফাত আছে, সরকারি স্কুলের অনুপাত কম হলেও সেখানে অন্তর্ভুক্তির অনুপাত বেশী। হয়ত সরকারি স্কুলের গুণমানের সঙ্গে এর যোগ আছে।
- ব্যাপারটা মনে হয় অন্ধ্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকে উল্টে গেছে, সেখানে প্রাইভেট স্কুলে অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশী।
৩। শিক্ষার্থী - শিক্ষক অনুপাত অনুযায়ীঃ
- স্কুলের ভাগগুলো রাখা হয়নি, শ্রেণী অনুযায়ী ভাগ কর হয়েছে।
- পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী অবধি এই রেশিওতে মনে হয় সমস্যা আছে। কিন্তু, ব্যাপার হল, দিল্লীর ডেটাও বিশেষ ভাল নয়।
- তামিলনাড়ুর সব ক্ষেত্রেই ভাল পারফর্ম্যান্স, কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্র, তামিলনাড়ু মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই ঠিকঠাক। রাজস্থানও দেখা যাচ্ছে বেশ ভাল।
৪। স্কুল ত্যাগ ( ড্রপআউট )
- এইটা ইন্টারেস্টিং। উঁচু ক্লাসে গিয়ে ড্রপআউটের প্রবণতা মনে হয় বেশী, মোটামুটি সব রাজ্যেই। তবে দিল্লী, কেরালা, তামিলনাড়ু কমের মধ্যে রাখতে পেরেছে।
- পশ্চিমবঙ্গে নীচু ক্লাস বা উঁচু ক্লাস দুই ক্ষেত্রেই , ড্রপআউটের সংখ্যা বেশী।
- এই ডেটাটার মধ্যে ছেলে - মেয়ে অনুযায়ী ভাগ করা আছে, সেটা এখানে আনিনি।
- গ্রাম - শহর, সরকারি - বেসরকারি স্কুল, জাতভিত্তিক বা আয় ভিত্তিক ক্লাসিফিকেশন করলে মনে হয় আরো বেটার বোঝা যায়।
৪। ক। ২০১৮ - ২০১৯ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী
- ২০২১ -২২ এর রিপোর্টে কোভিডের প্রভাব থাকতে পারে, অতএব পিছিয়ে গিয়ে ২০১৮ - ১০২৯ এর সংখ্যাগুলো দেওয়া হল
- পশ্চিমবঙ্গে নীচু ক্লাসে এই পর্যায়ে যা ড্রপআউটের হার ছিল পরে গিয়ে সেটা বেড়ে গেছে। উঁচু ক্লাসের ( ৯ - ১০ ) হার মোটামুটি একই থাকছে কিন্তু সেও যথেষ্ট বেশী।
- সর্ভভারতীয় ক্ষেত্রে ৯ম - ১০ম শ্রেণীর হার ড্রপআউটের হার ২০১৮ - ১৯ থেকে ২০২১ - ২২ e গিয়ে কমে গেছে, কিন্তু সেরকম কমে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ঘটেনি। কর্ণাটক, তামিলনাড়ু বা মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রে অনেকটাই কমেছে।
৫। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনুযায়ী
- কেরালা এখানে পারফেক্ট, যতজন স্কুলে পড়তে ঢুকছে, তারাই স্কুল শেষ করে বেরোচ্ছে। কিন্তু এটা দেখে মনে হল, কেরালার তো একতা ড্রপআউট ফিগার ছিল, ৯ম - ১০ম শ্রেণীতে, তাহলে এ ক্ষেত্রে শেষে গিয়ে ১০০র কম হওয়া উচিত ছিল ? এই বস্তুটি বুঝিনি।
- দিল্লীতে ক্লাস টেন অবধি ঠিকঠাক।
- পশ্চিমবঙ্গের কোন পর্যায়তেই ভাল নয়। সর্বভারতীয় গড়ের থেকে বেশ খারাপ, ১০ম বা দ্বাদশ শ্রেণী অবধি কম পড়ুয়াই যাচ্ছে।
- এই ডেটাতেও, ছেলে - মেয়ের ভাগ ছিল যা এখানে আনিনি। ড্রপআউট রেটের সঙ্গে এই সংখ্যাগুলোর যোগ কোথায় সেটা বোঝা উচিত।
৫।ক। ২০১৮ - ২০১৯ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী
- ক্লাস টুয়েল্ভ অবধি ডেটা এই বছরের রিপোর্টে নেই।
- সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই হার, ১ম - ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত, এই বছরের তুলনায় ২০২১ -২২ এ গিয়ে বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও বেড়েছে কিন্তু মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু বা কর্ণাটকের মত জায়গায় নেই। অন্দ্রপ্রদেশের ক্ষেত্রে অনেকখানি বেড়েছে, কেন, কীভাবে কোন ধারণা নেই।
- মোটামুটি বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে উঁচু ক্লাস অবধি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ও ড্রপআউট, এই দুই দিকই সমস্যার বিষয়। সরভারতীয় হারের তুলনায় খারাপ এবং অন্য প্রধান রাজ্যগুলোর তুলনাতেও।
- প্রসঙ্গতঃ ২০২৩ r গোড়ায়, কলকাতা হাইকোর্টে একতা কেসও হয়েছিল এবং কোর্ট শিক্ষা দপ্তরকে ব্যাপারটা দেখতে বা ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কোভিড একটা ফ্যাক্টর বলে তখন মনে করা হত, কিন্তু আগের ডেটা দেখে মনে হয়, সমস্যাটা অনেক দিনের।
৬। কার্যকরী বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা অনুযায়ী
- ইলেকট্রিসিটি নিয়ে দুই রকমের তথ্য আছে, স্কুলের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে availability of electricity আর functional electricity অনুযায়ী। আমি দ্বিতীয় ভাগটিকে এখানে নিয়েছি।
- পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা সরভারতীয় হারের থেকে বেশী ঠিকই কিন্তু বেশ কিছু রাজ্যে সরকারি স্কুলের জন্য সেই হারটি ১০০% এর খুব কাছে (মহারাষ্ট্র বাদে )। আবার প্রাইভেট স্কুলের ক্ষেত্রে এই হারটি যে সর্বভারতীয় সংখ্যাটিকে ছুঁয়েছে মাত্র কিন্তু অন্য কিছু রাজ্যে সেটি ১০০% বা তার কাছে, সেটা থেকে বোঝা যায় প্রাইভেট স্কুল মানেই চকচকে দামী স্কুল নয়, তারও স্তরভাগ আছে।
৭। কার্যকরী ডেস্কটপ - পারসোনাল কম্পিউটারের ব্যবস্থা অনুযায়ী
- ডিজিটাল ইন্ফ্রা সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য আছে, এইটি একটি। এছাড়া স্কুলে ল্যাপটপ / নোটবুকের ব্যবহার, মোবাইল ডিভাইস বা প্রোজেক্টরের ব্যবহার, ডিজিটাল বোর্ডের ব্যবহার ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য আছে। স্কুল শিক্ষাও ডিজিটাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত, তার প্রযুক্তি ও যন্ত্র নির্ভর, যুগের উপযোগী করার জন্য আর উন্নত করার জন্য।
- দিল্লীর স্কুল শিক্ষা যে প্রশংসিত, তার কারণ তাদের এই ডেটা থেকে বোঝা যায়।
- তামিলনাড়ুর সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি অতি অল্প, kaaraN সম্বন্ধে ধারণা নেই।
- লক্ষ্য করার, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি বেশ কম কিন্তু প্রাইভেট স্কুলের ক্ষেত্রে অনেকটাই বেশী।
- পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সরকারি অথবা বেসরকারি, দুই ক্ষেত্রেই এই হারটি সর্বভারতীয় হারের তলায়। ডিজিটাল সুবিধে যদি এখন স্কুল শিক্ষার পরিকাঠামোর বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে এখানে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে আছে অনেকটা। বেসরকারি স্কুলেও এই ব্যবস্থার অপ্রতুলতা (যা অন্য রাজ্যগুলোতে অনেক ভাল অবস্থায় ) হয়ত প্রমাণ করে এই রাজ্যে প্রাইভেট স্কুলেরও অনুন্নতির ছবি।
৮। প্রোজেক্টরের ব্যবস্থা অনুযায়ী
- দিল্লী বা কেরালার কথা যে বলা হয়, স্কুল শিক্ষা নিয়ে আলোচনায়, তা কেন, এই তথ্য থেকে বোঝা যায়। সরভারতীয় অবস্থা থেকে এইসব ব্যবস্থার দিক দিয়ে এরা এগিয়ে।
- তামিলনাড়ুর সরকারি ক্ষেত্রে সংখ্যাটি অতি অল্প (ওপরে ৭-এর মত), কর্ণাটক বা অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারি স্কুলেও অবস্থা বিশেষ ভাল জায়গায় নয়।
- পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যা দেখে যা মনে হয়, তা ওপরে ৭-এর শেষ মন্তব্য অনুযায়ী।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।