এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  ইতিহাস

  • বহু জাতি, বহু ভাষা, এক রাষ্ট্র  - স্বাধীনতার পরের কিছু বিস্মৃত টুকরো (৫)

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | ইতিহাস | ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮৬২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ৫। আমেরিকা

    কেশকর তো রেডিও থেকে হিন্দি সিনেমাকে বহিষ্কার করলেন, কিন্তু গ্ল্যামার-শিল্পপতিরা কি ছেড়ে দেবার লোক? খোদ কংগ্রেসেই উল্টোদিকের জোরালো মত ছিল। তার পুরোধা ছিলেন সদাশিব পাতিল। তিনিও মারাঠি, খাস বোম্বের লোক, এবং আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ। পাতিলকে নিয়ে গুচ্ছের কথা শোনা যায়, যেমন, ভারতে 'ব্রিফকেস রাজনীতি'র জনক, বা সিআইএর সরাসরি এজেন্ট। কিছু পরোক্ষ সাক্ষ্যও আছে, কিন্তু প্রমাণিত সত্য বলা কঠিন। সত্য হলেও ব্রিফকেসওয়ালারা তো লিখে রেখে যাবেনা, বা সিআইএ সেইসব নথি খুলেও দেবেনা। যেগুলো মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য, তা হল, তিনি বোম্বের উচ্চকোটি মহল এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। এবং তৎকালীন বোম্বে কংগ্রেসের সর্বেসর্বা। খোদ সিআইএর খুলে দেওয়া নথিতেই একাধিকবার পাতিলকে বোম্বে কংগ্রেসের বস, বা বোম্বের পার্টি বস, বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খোলা অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতের মিল ছিল, এও কার্যপ্রণালী থেকে দেখতেই পাওয়া যায়।

    কিন্তু সেখানে ঢোকার আগে, ৫২-৫৪ সালে আমেরিকার অবস্থাটা কী ছিল একবার দেখে নেওয়া দরকার। তখন কোরিয়াযুদ্ধ শেষ করে ঠান্ডাযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সোভিয়েত পারমানবিক বোমা ফাটিয়ে ফেলেছে ১৯৪৯ সালে। ১৯৫০ এ ম্যাকার্থি আমেরিকায় কমিউনিস্ট চরদের তালিকার কথা ঘোষণা করে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। আমেরিকায় বুদ্ধিজীবী, বিশেষ করে হলিউড শিল্পীদের কালো-তালিকাভুক্ত করা শুরু হয়ে গেছে, বা হতে চলেছে। কমিউনিস্ট জুজুর ভয় সর্বত্র। আরেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব অ্যালেন ডালেস তখন সিআইএর অন্যতম শীর্ষপদে। এশিয়ায় তারা খুবই সক্রিয়। ৫৩ সালেই ইরানে কু ঘটিয়ে দেওয়া হবে। আর এসবের সঙ্গেই দেশে-দেশে চলছে 'মুক্ত বেতার' কার্যক্রম। অর্থাৎ, বাম-ঘরানার দেশগুলোকে রেডিও সম্প্রচার করে, 'মুক্ত দুনিয়া'র ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়া। এশিয়ায় এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল তাইওয়ানের রেডিও।

    তা, এই অবস্থায়, আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ একজন রাজনীতিক এবং এবং 'বোম্বের বস'এর যা করণীয়, পাতিল তাই করেছিলেন। অর্থাৎ সরকারের উপর চাপ তৈরি। তিনি তখনও মন্ত্রী নন, ৫২-৫৩ সালের জনসমক্ষে বলা মতামত খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু  ৫৭ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবার পর, বোম্বে রেডিও মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায়, পাতিল খোলাখুলি বেতারে "বিজ্ঞাপনদাতা প্রযোজিত অনুষ্ঠান"এর পক্ষে বলেন, এবং মন্ত্রীসভায় না বলে বাইরে কথা বলার জন্য নেহরুর কাছে তিরস্কৃতও হন। পরবর্তীতে মন্ত্রীসভার বৈঠকেও ফিল্মি সঙ্গীতের জন্য আলাদা একটা বেতারকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব পাড়েন।(১)

    কিন্তু এগুলো ৫৭ সালের কথা। ৫৩ সালে, অর্থাৎ, যে বছর স্তালিন মারা যান, অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয়, এবং কেশকরও তাঁর বেতারনীতি তৈরি করেন, তখনও পাতিল অনেকটাই বাইরে, কিছুটা সহযোগীর ভূমিকায়। সে বছর নামভূমিকায় ছিলেন এক আমেরিকান নাগরিক, যাঁর নাম ডেভিড মলিনা। মলিনাও বোম্বের পুরোনো খেলোয়াড়। এর দুবছর আগে, ১৯৫১ সালে, যে বছর যখন বামপন্থী শিল্পীরা কলকাতা এবং অন্য জায়গা থেকে দলে-দলে বোম্বে আসছেন, যাঁদের একটা অংশ, এর পরে 'সোভিয়েতমুখী' চলচ্চিত্রনির্মাণে জড়িয়ে যাবেন, সেই মহানিষ্ক্রমণের গোলমালের মধ্যেই মলিনা বোম্বেয় তৈরি করেন খানদুই রেডিওসংক্রান্ত কোম্পানি। একটা বিজ্ঞাপনের (RAS), আরেকটা প্রোডাকশনের (REPL)। মনে রাখতে হবে, ওই সময়েই 'মুক্ত রেডিও'র উপর জোর দিচ্ছে আমেরিকা। এই দুয়ের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আবিষ্কার করা যাবেনা। কিন্তু মিলটা একেবারে কাকতালীয় হওয়া খুবই মুশকিল। বিশেষ করে এই সেই সময়, যখন সদ্যস্বাধীন ভারতবর্ষ আমেরিকা এবং সোভিয়েত, দুই বিশ্বশক্তির দড়ি-টানাটানি খেলার মঞ্চ।

    যাহোক, এরপর যা ঘটে, তা ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসটাই পুরোপুরি বদলে দেয়। ৫৩ সাল থেকেই রেডিওয় সিনেমাসঙ্গীত কমতে থাকে। কিছুদিন পরে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এটাকেই সুযোগে পরিণত করেন মলিনা। তাঁর প্রোডাকশন কোম্পানির জন্য ভাড়া করে ফেলেন বোম্বের সরকারি রেডিওর জনপ্রিয় প্রচারক হামিদ সায়ানিকে। সঙ্গে আসে তাঁর একটা টিমও। মলিনার উদ্দেশ্য খুবই সোজা ছিল। যেহেতু সিনেমার গান সরকারি রেডিওয় আর শোনা যাচ্ছেনা, তিনিই সেগুলো সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। এবং ব্যবসায়িকভাবে।

    কিন্তু সম্প্রচার করব বললেই তো হলনা, ভারতবর্ষের রেডিও সম্প্রচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ সরকারি। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তারও ব্যবস্থা হয়ে যায়। ভারতবর্ষের মাটিতে না, অনেকটা তাইওয়ান মুক্ত রেডিওর ধাঁচে, ভারতের মূল ভূখন্ডের বাইরে, কিন্তু খুব কাছাকাছি একটা দ্বীপরাষ্ট্র থেকে, যার নাম শ্রীলঙ্কা। সেখানে একটা শক্তিশালী বেতারকেন্দ্র ইতিমধ্যেই ছিল, যার নাম রেডিও সিলোন। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ট্রান্সমিটারের দৌলতে ওই একটা কেন্দ্র থেকেই, সারা ভারতে শর্টওয়েভ সম্প্রচার করা যেত। মলিনা এটাকেই কাজে লাগাবেন ঠিক করেন। 

    রেডিও সিলোন এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। হামিদ সায়ানি হিন্দি অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পান। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এবং একই সঙ্গে ঘটে আরও একটা 'কাকতালীয়' ব্যাপার। সিবাকা নামক এক বহুজাতিক কোম্পানি ভারতে ব্যবসা করবে বলে মনস্থ করে। তারা রেডিও সিলোনে 'বিনাকা গীতমালা' নামক একটা অনুষ্ঠানের প্রযোজনা করবে বলে ঠিক করে। ব্যস, সমস্ত বাধা কেটে যায়, হামিদের ভাই আমিনের সঞ্চালনায় শুরু হয়ে যায় ভারতে সম্প্রচারিত একান্তভাবেই ফিল্মি সঙ্গীতের বেতার অনুষ্ঠান (বস্তুত বিনাকা আসার আগে ৫২ সালেই সম্প্রচার শুরু হয়েছিল, কিন্তু জনপ্রিয় হয় ৫৩ সালেই)। এরপর হুড়হুড় করে বিজ্ঞাপন আসতে থাকে। কোলগেট, ওভালটিন, লাক্স। জনপ্রিয় গানের সম্প্রচারের ফলে ভারতীয় শ্রোতাদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে রকেটের গতিতে।

    কেশকরের সাংস্কৃতিক পরিকল্পনায় এ ছিল এক পরিকল্পিত এবং সাফল্যমন্ডিত অন্তর্ঘাত। পরিকল্পিত, কারণ, এত বড় আন্তর্জাতিক 'ব্যবসায়িক প্রকল্প' পরিকল্পনা ছাড়া অসম্ভব। আর সাফল্যমন্ডিত, কারণ, 'সর্বভারতীয় সংস্কৃতি' নির্মাণের পুরো প্রকল্পটাই এতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। ভারতীয় শ্রোতারা সরকারি বেতার ছেড়ে বিপুল পরিমানে রেডিও সিলোনের অনুষ্ঠান শুনতে থাকে। একটা সমীক্ষায় নাকি বেরোয়, ১০ জন রেডিওধারীর মধ্যে ৯ জনই সে সময় রেডিও সিলোন শুনতেন। ১ জন শুনতেননা, কারণ, রেডিওটা খারাপ। এটাকে সমীক্ষা না বলে জনপ্রিয় গল্প হিসেবে নেওয়াই ভালো, কারণ, সমীক্ষার পদ্ধতি ইত্যাদি কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে মোটের উপর চিত্রটা এর কাছাকাছিই ছিল, নইলে গল্প হিসেবেও জিনিসটা চালু হওয়া সম্ভব না। এবং মোটের উপর কেশকর বনাম বোম্বের যুদ্ধে বোম্বের জয় হয়। সরকারি রেডিওর আত্মসমর্পণ, এবং সর্বভারতীয় সংস্কৃতি হিসেবে হিন্দি সিনেমার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়ে দাঁড়ায় কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

    সূত্রঃ 
    ১। https://www.tandfonline.com/doi/pdf/10.1080/14736489.2023.2201541
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:f4bd:1f0f:a75e:***:*** | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০২524089
  • এই পর্বটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। রেডিও সিলোন কতো শুনেছি, কিন্তু এর উৎপত্তির ইতিহাস জানতাম না। আর মনে হলো, কেশকরের মতো লোকেরা যুগে যুগে সাধারন লোকের ওপর নানা দেশে সরকারি কর্তিত্ব চাপানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সাধারন মানুষ বারবার সেই শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। সদাশিব পাতিল আর ডেভিড মলিনাকে অবশ্যই লালে লাল লাল সেলাম দেওয়া উচিত কেশকরের চাপানো সরকারি নীতি ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য, তবে আমার মনে হয় রেডিও সিলোন তৈরি না হলেও হিন্দি সিনেমার গান পপুলার হওয়া কেউ আটকাতে পারতো না। ম্যাংগো পাবলিকের যে গান ভালো লাগে সেটাই শোনে, কাজেই ইন দ্য লং রান কেশকরের নীতি ব্যর্থ হতোই। 
  • সাহরিয়ার হোসেন | 223.223.***.*** | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩৯524107
  • এযাবৎ  প্রকাশিত সব গুলোই পড়লাম  ।পুরানো কিছু ধারণা বদলে গেল ।নতুন ধারণা পেলাম কিছু ।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:১১524118
  • নতুন ধরণের একটা লেখা তৈরি হচ্ছে এইটা। পর্বগুলো এক এক করে জুড়ে জুড়ে বিগ পিকচার টা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিভাবে হিন্দির দাপট, বলিউডের দাপট বেড়ে চলল ভারত জুড়ে আর আঞ্চলিক ভাষা, আঞ্চলিক শক্তিরা আরও কোণঠাসা হয়ে গেল তার একটা ঠাস বুনোট কমেন্ট্রি এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪৪524154
  • এই সিরিজ একটা যথার্থ মূল্যবান কাজ হচ্ছে। মন দিয়ে পড়ছি শুরু থেকেই। নতুন কিস্তি এলেই সাগ্রহে শুরু করছি ।এই জমানায় এত ভালো লেখা, বিশেষ করে প্রবন্ধ, পড়তে পাওয়া সৌভাগ্যের 
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২১524218
    • dc | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০২
    • ... সাধারন মানুষ বারবার সেই শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। সদাশিব পাতিল আর ডেভিড মলিনাকে অবশ্যই লালে লাল লাল সেলাম দেওয়া উচিত ...
     
    ডিসি, এমনিতে এটা শুনতে ঠিকই লাগে, জনমনোরঞ্জনে সরকারি নিয়ন্ত্রন কেন থাকবে।

    কিন্তু দূরদর্শনের একাধিপত্যের পরের যুগে একতা কাপুর এট আলের হাত ধরে বর্তমান সিরিয়েল সংস্কৃতি ইত্যাদির সাপেক্ষে দেখ্লে কী মনে হয়?

    রেডিও সিলোনের কিশোর কুমার আর আজকের জিটিভির সিরিয়েল গুণগতভাবে একেবারে এক না হলেও বাণিজ্যমুখে মনোরঞ্জনের যাত্রাটি একটি ধারা।

    আমার নিজের খুব পোক্ত মতামত নেই, শুধু জনগন গড্ডলিকা এই বিশ্বাস ছাড়া। শুনতে চাইছি আরকি।

    একটা মত হতে পারে, এমন তো হতোই, জনগনের সামনে কেশকর আর কার কেশ।
    হ্যাঁ, তা হয়তো হতোই। তবে বালির বাঁধও হয়। থার্ড রাইখও হতোই, এন্টায়ার গৌবিজ্ঞানও হতোই, ইত্যাদি।
     
    এমনিতে যেকোন সরকারী নীতিকে সন্দেহের চোখে দেখা উচিত এমন আমি মনে করি। আবার মলিনা - পাতিলের কার্যক্রম ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের উদযাপনের না, সাংস্কৃতিক কর্তৃত্বস্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যবসাবৃদ্ধির লক্ষে ছিল, সেটা মনে রেখেই ব্যাপারটাকে দেখা দরাকার, এমনও মনে করি।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:3527:ffd1:8ebc:***:*** | ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪০524222
  • একতা কাপুর যে অতি খাজা, তাতে কোন সন্দেহ নেই :-) তবুও, নব্বুইএর শেষে দূরদর্শনের একাধিপত্য ভেঙে গিয়ে যে এক্সপ্লোশান হয়েছিল, অন্তত শখানেক চ্যানেল তৈরি হয়েছিল, এমটিভি ইত্যাদি এসেছিল, সেটা আমার মতে একটা পজিটিভ ব্যপার। অবশ্য এটা আমার পার্সোনাল ফিলোজফি, আমি সবসময়েই সরকারি নিয়ন্ত্রনের বিরুদ্ধে, ইন্ডিভিজুয়ালিজম আর পার্সোনাল চয়েসের পক্ষে, প্রাইভেট বিজনেসের পক্ষে। 
     
    আর রেডিও সিলোন প্রসঙ্গে মনে হয়, চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাটের দশকে বোম্বেতে অল টাইম গ্রেটদের যে সমাবেশ হয়েছিল, তাতে সেই সময়ের হিন্দি সিনেমাকে ঠেকিয়ে রাখা কেশকর কেন, কোন সরকারের পক্ষেই অসম্ভব ছিল। সুরকার যদি দেখেন তো এসডি, ও পি নাইয়ার, মদনমোহন, নৌশাদ, খৈয়াম ইত্যাদিরা। সিঙ্গারদের মধ্যে রফি, লতা, আশা, সায়গল (বাবা নয়), গীতা দত্ত, মুকেশ, তালাত মেহমুদ ইত্যাদিরা। এনাদের তৈরি করা গান কি কোন সরকারের পক্ষে বেঁধে রাখা সম্ভব হতো? 
     
    আর মলিনা - পাতিলরা ব্যবসা করেছিলেন, তাতেও আমি কোন দোষ দেখিনা। আমি এমনিতেও প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভের পক্ষে, কাজেই ওনাদের ব্যবসার মধ্যে দিয়ে যদি হিন্দি গান আরও জনপ্রিয় হয়ে থাকে তাহলে তো ভালোই।    
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০০:১৩524224
    • ...এনাদের তৈরি করা গান কি কোন সরকারের পক্ষে বেঁধে রাখা সম্ভব হতো? 
     
    বেঁধে রাখা সম্ভব হতো না, বেঁধে রাখতে সরকার চেয়েছিল বলেও মনে হলো না, এই রচনাগুলি পড়ে।
    মনে হলো বহু ভাষা ও সংস্কৃত মোটামুটি একটা সমান সমান বসার জায়গা পাবে টেবিলে, ঐরকম একটা উদ্দেশ্য ছিল। প্রতিভা খুব চমৎকার জিনিস, কিন্তু ব্যাপারটাতে বাণিজ্য এলে আরও পাঁচটা জিনিস আসে। কিশোর কুমার ইত্যাদি মহান গায়ক নিশ্চয়, কিন্তু প্রতিভাই প্রধান হলে ঐ ইন্ডাস্ট্রি ভাঙিয়ে কুমার শানু অভিজিৎ ইত্যাদিরা কয়েক দশক ছড়ি ঘোরাতে পারতেন না, দক্ষিনে বা বাংলায় এঁদের থেকে অনেক দক্ষ কন্ঠশিল্পীরা ছিলেন।
    তো, প্রতিভার জয়গানটা বোধহয় অবান্তর, সময়ের বড় স্কেলে।
     
     
    • ...অন্তত শখানেক চ্যানেল তৈরি হয়েছিল, এমটিভি ইত্যাদি এসেছিল, সেটা আমার মতে একটা পজিটিভ ব্যপার...

    সেই সময় সেটা বেশ মজার ব্যাপার হয়েছিল তা তো বটেই। কিন্তু আরেকটু বড় স্কেলে দেখলে কী মনে হয়? এখনকার বিনোদনের হাল হকিকত, ধারা ইত্যাদি? মানে, এই হামলোগ বুনিয়াদ থেকে পেয়ার কা পেহলা নাম রাধামোহন, বা কিউকি সাস মা বহু বেটি হোতি হ্যায় - এই যাত্রাটা তো আকাশ থেকে পড়েনি, এর একটা চলন আছে, তো সেইটা যে এরকম হয়েছে, তাও কি ভালোই হয়েছে, লাগামহীন ব্যক্তিগত বাণিজ্য এতে প্রশ্রয় পেয়েছে যেহেতু? ওয়েব সিরিজ বলে লাভ নেই, অ্যাফোর্ডেবিলিটির তারতম্য তো থাকবেই কিন্তু মনে হয় যেন রুচিনির্মানের জায়গাতেও একটা সেগ্রিগেশনের জমানা।

    এবার, আমি জানি না সমাধান কী হতে পারতো। লৌহযবনিকা, সর্বহারার একনায়কত্ব, এইসব কোন বাসনাও নেই, সাধ্যমত বিলাসব্যসন, বিনোদন, বিষয় সম্পত্তি, টাকাকড়ি অতি প্রিয়।
    কিন্তু জনপ্রিয়্তার কারন তার শ্রেষ্ঠত্ব, ঐ খোপে হিন্দি গান, এই হিসেবটা বুঝতে চাইছি।

    বিটিডাব্লিউ এবং ডিঃ, আমিও হিন্দি গান খুব ভালোবাসি। অনেক গান, যার হিন্দি বাংলা দুইই আছে, অনেকসময়ই তার হিন্দিগুলো বেশি ভালো লাগে। এই যেমন না জানে কিউ আর পাগল হাওয়া, বা আনন্দের গান গুলি। নিজের মত ভেবেচিন্তে মনে হয় যে ভাষার ভিত্তি হল উর্দু, ব্রজবুলি মাগধী ইত্যাদি, সেই ভাষায় লেখা কাব্যসাহিত্য উমদা হবে এতে আর সন্দেহ কী।
    কিন্তু বাণিজ্যিক সাফল্য আর শৈল্পিক উৎকর্ষ, এমনকি জনপ্রিয়তারও, মধ্যে সোজা হিসেবটা বিশ্বাসযোগ্য মনে করি না।
    আর পুঁজির স্বার্থে সংস্কৃতি নির্মান ব্যাপারটাকে ভয়ের মনে করি, তাই এত প্রশ্ন টশ্ন।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:3527:ffd1:8ebc:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪৫524230
  • "কিন্তু প্রতিভাই প্রধান হলে ঐ ইন্ডাস্ট্রি ভাঙিয়ে কুমার শানু অভিজিৎ ইত্যাদিরা কয়েক দশক ছড়ি ঘোরাতে পারতেন না, দক্ষিনে বা বাংলায় এঁদের থেকে অনেক দক্ষ কন্ঠশিল্পীরা ছিলেন"
     
    সে তো বটেই। আসলে আমি বলতে চাইছি যে চল্লিশ থেকে ষাটের দশকে বম্বেতে যে মাপের প্রতিভারা এক জায়গায় হয়েছিলেন, তাতে সেই সময়ের গান বা সিনেমা পপুলার না হলেই বরং অবাক কান্ড হতো। আর প্রতিভা, পপুলারিটি, বাণিজ্যিক সাফল্য ইত্যাদির মধ্যেও সম্পর্ক থাকে, যদিও বেশীর ভাগ সময়েই এই সম্পর্ক হয়তো ননলিনিয়ার হয় (যেটা আপনিও বলেছেন)। অনেক প্রতিভাধারী ব্যক্তি বাণিজ্যিক সাফল্য পান না, অনেক কম প্রতিভাধারী ব্যক্তি বাণিজ্যিক সাফল্য পান। তবে এক জায়গায় নানান পেশার মানুষ যুক্ত হলে, তাদের মধ্যে কারুর কারুর ব্যাবসায়িক এক্সপিরিয়েন্স থাকলে, মনে হয় বাণিজ্যিক সাফল্য পেতে সুবিধা হয়। 
     
    এবার কথা হলো কুমার শানু এট আল। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, আশির দশকের পর থেকে বলিউডে প্রতিভা ব্যাপারটা কমে যায়, ধীরে ধীরে বাণিজ্য বা মার্কেটিংই প্রধান হয়ে ওঠে। আমার মতে আরডিই শেষ জিনিয়াস লেভেলের সঙ্গীত পরিচালক, কিশোর-আশাই শেষ জিনিয়াস লেভেলের গায়ক গায়িকা যাঁরা অল ইন্ডিয়া লেভেলে প্রতিভার জোরে সাফল্য পেয়েছিলেন, শুধুমাত্র মার্কেটিং এর ওপর ভরসা করতে হয় নি। তবে এক্সেপশানও আছে, যেমন সাউথ ইন্ডিয়ায় ইলায়ারাজা, এ আর রহমান, এস পি বালাসুব্রমনিয়াম, চিত্রা ইত্যাদিদের ক্ষেত্রেও নব্বুই আর দু হাজারের দশকে প্রতিভা আর মার্কেটিং, দুয়েরই সংমিশ্রন ঘটেছিল। তাও ওভারল আমার মনে হয় সত্তর বা আশির দশক থেকে প্রতিভার গ্রাফটা নিম্নমুখী আর মার্কেটিং এর গ্রাফটা উর্দ্ধমুখী হয়েছে। 
     
    " এই হামলোগ বুনিয়াদ থেকে পেয়ার কা পেহলা নাম রাধামোহন, বা কিউকি সাস মা বহু বেটি হোতি হ্যায় - এই যাত্রাটা তো আকাশ থেকে পড়েনি, এর একটা চলন আছে, তো সেইটা যে এরকম হয়েছে, তাও কি ভালোই হয়েছে, লাগামহীন ব্যক্তিগত বাণিজ্য এতে প্রশ্রয় পেয়েছে যেহেতু?"
     
    একেবারেই ভালো হয়নি :-( নব্বুই এর দশক থেকে মোটামুটিভাবে প্রতিভা শেষ (কিছু এক্সেপশান ছাড়া), মার্কেটিংই প্রধান হয়ে উঠেছিল। অথচ এর উল্টোটাই হওয়ার কথা ছিল, কারন নব্বুই এর দশক থেকে আমাদের ইকোনমির লিবারাইজেশান শুরু হয়েছিল, বহু আর্থ সামাজিক বাধানিষেধ ধীরে ধীরে উঠে যেতে শুরু হয়েছিল। কেন এরকম হয়েছিল জানিনা, নানান সোশ্যাল-ইকোনমিক-ডেমোগ্রাফিক কারন ছিল নিশ্চয়ই।  
     
    "কিন্তু বাণিজ্যিক সাফল্য আর শৈল্পিক উৎকর্ষ, এমনকি জনপ্রিয়তারও, মধ্যে সোজা হিসেবটা বিশ্বাসযোগ্য মনে করি না। আর পুঁজির স্বার্থে সংস্কৃতি নির্মান ব্যাপারটাকে ভয়ের মনে করি"
     
    এই দুটো ব্যপারেই একমত। 
  • সিএস  | 2405:201:802c:7838:d9f5:186a:4ee4:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১০:২৮524233
  • মূল লেখাটার বিষয়কে সামারাইজ করলে মনে হয় এগুলো পাওয়া যায়ঃ

    - পাবলিক ব্রডকাস্টিং-এর আদর্শ ভার্সাস প্রাইভেট পুঁজির দাবী

    - সরকার পোষিত জাতীয় সংস্কৃতি নির্মান ভার্সাস হিন্দী সিনেমাকেন্দ্রিক পপুলার 'সংস্কৃতির' দাবী

    - কংগ্রেস সরকার ভার্সাস কংগ্রেস দলের কনফ্লিক্ট

    - নেহেরু ভার্সাস অন্য কংগ্রেসীরা

    আরো কথা হল কংগ্রেস সরকার তো প্রাইভেট পুঁজিকে ফেলে দেয়নি, নিজের মত ব্যবহার করতে চেয়েছে, বিভিন্ন শিল্পপতি ইত্যাদি, তো সেই পুঁজির মালিকেরা বা হিন্দী সিনেমায় যারা পুঁজি খাটায় তারা তাদের প্রচারের জন্যও দাবী করেছে। মিশ্র অর্থনীতিতে তো এরকম হবে।

    আর কেশকারের কাজকর্ম পড়ে মনে হল, AIR মারফত যে জাতীয় সংস্কৃতি তৈরী করার চেষ্টা হচ্ছিল সেখানে 'পপুলার' - কে একট বিশেষ রূপ দেওয়া হচ্ছিল, যেমন 'লাইট' মিউজিক, রবিশংকরের ব্যাণ্ড ইত্যাদি। এগুলো তৈরী করা হচ্ছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ভিত্তি করে কিন্তু সিনেমায় এই 'পপুলার' অনেকাংশেই তৈরী হয়ে গেছিল। গান - গল্প - মেলোড্রামা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে পপুলার সংস্কৃতি গাঁ - গেরাম থেকে সিনেমায় উঠে আসছিল, ১৯৫৩ সাল থেকে নয়, তার আগে থেকেই। সেই পপুলারের সাথে জনগণ বেশী আইডেন্টিফাই করত, 'তৈরী' করা পপুলারের থেকে, এরকম মনে হয়। তো এইসব দিকও ভেতরে থাকে, কাজ করে, কিছু লোক সেগুলো ট্যাপ করে, তারপর পুঁজি - ম্যানিপুলেশন ইত্যাদি। এও মনে হল, সিনেমায় তো এককালে নিউজরীল দেখানো হত, সেও একরকমের পপুলারকে জাতীয় ভাব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, লারে - লাপ্পা কর কিন্তু তার আগে দেশের উন্নতির কথা একটু জেনে নাও।

    সদাশিব পাটিল না সন্দীপ পাটিল সে তো বম্বের বড় নেতা ছিল, একাধিকবার মন্ত্রী, পরে ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম দিকে 'সিন্ডিকেটের' একজন যারা ইন্দিরাকে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করত। এরকমই পড়লাম। তো কংগ্রেসের মধ্যে ননারকমের আভ্যন্তারীণ বিরোধ ছিল, নেহেরু খুব বড় নেতা হয়েও সবকিছু তো আর কন্ট্রোল করতে পারেনি, এই সব সংস্কৃতি নির্মাণ একটা দিক যা দিয়ে এইসব বিরোধ্গুলো ফুটে বেরোত।

    AIR সংক্রান্ত ব্যাপার দিয়ে মনে হয় স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত রাষ্ট্র তৈরীর সময়ের বিবিধ কনফ্লিক্টগুলো বোঝা যায়, খুঁজলে অন্যদিকেও পাওয়া যাবে।

    সিআইএ ইত্যাদির মধ্যে গেলাম না, ওসব চক্করে পড়ে লাভ নেই।
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৫৪524249
  • মন্তব্য করার ইচ্ছে আর গেল না ! 
     
    হুতো আর ডিসির কথাগুলো পড়ে মনে হল -

    পুঁজির সাথে উৎকর্ষের বিশেষ যোগ নাও থাকতে পারে কিন্তু পুঁজি, প্রাইভেট পুঁজিও উৎকর্ষ দেখানোর সুযোগ করে দিতে পারে মনে হয়। ১৯৫০-এর দশকে যে IPTA-র লোকজন বম্বে চলে গেল, বাংলা থেকেই গেল তার কারণ তো এটাই যে বম্বেতে তখন পুঁজির রমরমা। তাঁরা তো আদর্শবাদীও ছিলেন কিন্তু বম্বে ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রীতে কাজ করার সময়ে তাঁরা নিশ্চয় জানতেন যে 'আদর্শ' দেখানোর বদলে, বা আদর্শ কিছুটা হালকা করে দেখিয়ে তারই সাথে তাঁদের নিজেদের ক্রাফট দেখানোর সুযোগ হিন্দী ফিল্ম করে দিচ্ছে। এককালে বাংলায় যা ছিল, '৪৭ পরবর্তীতে বিবিধ কারণে ভারতের পশ্চিমেই পুঁজির চলন চলতে থাকায় ঐসব লোকেদের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ বম্বেই করে দিচ্ছিল এবং এরা তাদের ক্রাফ্ট আর আদর্শ আর পড়াশোনা আর বোধ আর রাজনীতি ইত্যাদি মিলিয়ে একরকমের 'পপুলার' তৈরী করছিলেন। আর এদেশে তো অন্তত ১৯৮০ র দশক অবধি রাষ্ট্রের পুঁজি আর প্রাইভেট পুঁজি দুইই শিল্প - সিনেমা ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। বমবে কেন্দ্রিক হিন্দী সিনেমার সাথে সরকারের এনএফডিসি হয়েছে, এই রাজ্যে সরকার সিনেমায় টাকা ঢেলেছে, নাটক - ললিতকাল সবেতেই সরকার চেয়েছে গুণান্বিত শিল্পকর্ম তৈরী করার জন্য উৎসাহ দিতে এবং নতুনদের সুযোগ দিতে, যদিও সেসব নিয়ে নানারকমের তর্কবিতর্ক আছে। আমি AIR সংক্রান্ত এই লেখাকে '৪৭ পরবর্তী রাষ্ট্রনির্মাণের বিবিধ কনফ্লিক্টের সাথে মিলিয়ে পড়লাম, বিশেষ করে শিল্প - সিনেমা - পপুলার ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ঠিক কীরকম হবে সেই সংক্রান্ত কনফ্লিক্টের সাথে যুক্ত করে।

    ১৯৮০ র দশক অবধি হামলোগ আর তার পরে সাস - বহু, এটা কেন হয়, বিশ্লেষণ করা যায় নিশ্চয়। একটা ব্যাপার আমার মনে হয়, ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির বদল হলে, তার সাথে মানুষের চিন্তার বদলও হলে, তার সাথে পরিবার সংক্রান্ত ধারণার বদলও হলে, কাজের বিবিধ সুযোগ তৈরী হতে থাকলে পরিবারের গ্রন্থি আলগা হতে থাকলে, নয়া অর্থনীতির সুযোগ নেওয়ার জন্য লোকজন এখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়তে থাকলে, তার রিয়াকশন হিসেবে মনে হয় সাস - বহু সিরিয়াল তৈরী হতে পারে যেখানে 'পরিবারবোধ' শেষ চেষ্টা হিসেবে - পপুলার আর মেলোড্রামাকে ব্যবহার করে - মানুষকে যেন তার ভেতরে ধরে রাখার চেষ্টা করে, বলার চেষ্টা করে যে অনেক লোকজন মিলিয়ে পরিবারের ধারণাটি খুবই ভাল, সেখানে নিত্যদিনের কান্না - হাসি আর তার মধ্যে লোকজন নিজেদের মিলিয়ে দিতে পারলে তাদের সুবিধেই হবে ! এর পেছনে যে কালেক্টিভ সাবকনশাস নেই সে কথা কে বলবে !
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:31e2:1970:94e6:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:১৮524254
  • পুঁজির সাথে উৎকর্ষের তেমন কোন যোগ নেই, এটা আমারও মনে হয়। এই দুজন একে অন্যকে নানা সময়ে ব্যবহার করে, কিন্তু কজাল রিলেশান নেই। 
     
    হামলোগ থেকে সাস, এই ডাউনওয়ার্ড জার্নির যে কারন সিএস দেখিয়েছেন সেটা হয়তো সঠিক নাও হতে পারে। বহু দেশে দেখা গেছে, যখন ইকোনমি লিবারাইজড হয়েছে বা ট্রান্সফর্ম হয়েছে (এমনকি ফিউডাল থেকে ক্যাপিটালিজম এ রূপান্তরিত হওয়ার সময়েও), তখন একই সাথে সমাজ ব্যবস্থায়ও গভীর রূপান্তর হয়েছে, পুরনো অনেক বাধানিষেধ শিথিল হয়েছে, ফলে ক্রিয়েটিভ ফিল্ডগুলোতেও একেকটা এক্সপ্লোশান হয়েছে। অথচ ভারতে নব্বুই এর দশকে ইকোনমি লিবারাইজ হয়েছে, প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ অনেক বেশী সহজ হয়েছে, তার পরেও আমাদের দেশে ওই মানের সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশান কেন হয়নি? হামলোগ, নুক্কড়, শান্তি ইত্যাদি সিরিয়াল তৈরি হওয়ার পরেও কেন সাস বহুর মতো ফিউডাল সিরিয়াল জনপ্রিয় হয়ে উঠল? বা ভারত এক খোঁজ বা সুরভির পরেও রামায়ন মহাভারতই বা কেন সুপার পপুলার হলো?  নব্বুইএর দশকে যেখানে আরও বেশী করে ট্যালেন্টেড লোকজন বম্বেতে আসার কথা ছিলো, সেখানে একজনও রাজ কাপুর বা গুরু দত্ত বা দেব আনন্দের ক্যালিবারের লোক এলো না কেন? এগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং বিষয় :-) 
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৩০524255
  • আহ !! দেবানন্দের ক্যালিবার ছিল একথা বলবেন না।

    কিন্তু নব্বইতে আসেনি কই? রামগোপাল ভার্মা - বিশাল ভরদ্বাজ - অনুরাগ কাশ্যপ - মনোজ বাজপেয়ী ইত্যাদিরা তো ঐ নব্বইতেই। কিন্তু তারা ষাটের লোকজনের মত না, এরকম মনে হওয়ার কারণ মনে হয় দুটো আলাদা সেট আলাদা সময়ে আলাদা রকমের সিনেমার সাথে যুক্ত হচ্ছে। ফলে মনে হচ্ছে এরা কম ট্যালেন্টেড। মনোজ বাজপেয়ী কি রাজ কাপুরের থেকে বড় অভিনেতা নয় ? কিন্তু রাজ কাপুর যে সব সিনেমার সাথে যুক্ত হল এবং বিখ্যাত হল তার সাথে ১৯৫০ র দশকের রাষ্ট্রনির্মাণের আইডিয়া যুক্ত ছিল (সৈকত বন্দ্যোপাধ্যয় বলবে সরকারের আদর্শগত মদতও ছিল), সেই আইডিয়াগুলোর আলো রাজ কাপুরের গায়ে পড়ার ফলে ওনাকে উজ্জ্বল লাগে। না হলে টেকনিকালার সঙ্গম সিনেমার ওনার কান্না কাতর প্রেমিক মুখ তো চোখে দেখা যায় না।
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:31e2:1970:94e6:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৪৪524257
  • তা হতে পারে :-) 
     
    আসলে আমি রামগোপাল ভার্মা, মনোজ বাজপেয়ী ইত্যাদিদের সিনেমা সেরকম দেখিনি। রাজ কাপুরের সিনেমাও সেভাবে দেখিনি অবশ্য। আমার ছোটবেলা কেটেছে পুরোটাই অমিতাভের সিনেমা দেখে, আর তারপর বড়ো হয়ে ফিরে দেখতে গিয়ে মনে হয়েছে সেসব কি অখদ্যে সিনেমা ছিলো। 
     
    তবে রাজ কাপুরের কোন স্পেসিফিক সিনেমা না, বডি অফ ওয়ার্ক আর ওভারল কনট্রিবিউশানের কথা বলেছি। সরকারের মদত ইত্যাদি বোধায় সেকেন্ডারি ফ্যাক্টর, রাজ কাপুর বা গুরু দত্ত ইত্যাদিরা প্রথমত নিজেদের ট্যালেন্টের জোরেই নিজেদের পপুলারিটি পেয়েছিলেন। 
     
    মনোজ বাজপেয়ী এট আল দের ব্যাপারে আপনার কথা মেনে নিচ্ছি, এমনিতেও এই কম্পারিজন করতে পারার মতো বিদ্যে আমার নেই। তবে চল্লিশ থেকে ষাট, এই সময়টার ক্রিয়েটিভিটির সাথে কি নব্বই থেকে দুহাজার, এই সময়টার তুলনা চলে? জানতে চাইছি, আমার নিজের এব্যাপারে খুব একটা ভালো আইডিয়া নেই।  
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:31e2:1970:94e6:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৫৮524259
  • মনোজ বাজপেয়ীর স্পেশাল ২৬ সিনেমাটা দেখেছি, মনে পড়লো। আর রামগোপাল ভার্মার রঙ্গিলা। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২০:০৯524260
  • ভূতের সিনেমাগুলো কারা করতেন? রামগোপাল?
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:০৬524265
  • রাজ কাপুর ইত্যাদিদের ট্যালেন্টটা ঠিক কোথায়? মানে, এটা একেবারে নিখাদ দ্বর্থ্যহীন প্রশ্ন কিন্তু। টানটান গল্প বলা, এইটা ঠিক। সময়ের গতি, চাহিদা খুব ভ্লাও ধরতে পেরেছেন। একটা অবদমিত জনতাকে পরিমান মত যৌনতা উপহার দিয়েছেন - আমার মতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপা, মিসেস হেন্ডারসন প্রেজেন্টস মনে পড়ে গেল আবার।
    এসবের সঙ্গে প্রভূত সরকারি আনুকূল্য পেয়েছেন।

    অন্যদিকে গুরু দত্তকে ভাবলে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন লেয়ার্ড জিনিসপত্র, ঝুঁকি, শিল্পের প্রতি বিশ্বস্ততা মনে হয়।

    হামলোগ থেকে সাস - কালেকটিভ সাবকনশাস থাকতে পারে, নির্মাতা নির্দেশকরা মার্কেট রিসার্চ করে থাকতে পারেন, তবে একটা জিনিস আমার মনে হয়, বিক্রেতা আর উপভোক্তার অতিরিক্ত মতের আদান প্রদান শিল্পের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর না। শিল্পের একটা দায় রুচিনির্মান - আর রুচি ব্যাপারটা ঠিক গণতান্ত্রিক ভোটাভুটি না। জনপ্রিয় তো হতেই হবে, কিন্তু ডিম মুর্গির হিসেব গুলিয়ে গেলে মুশকিল। আমি দেখিনি, তবে সবাই বলে গানের ওপারে খুব ভালো হচ্ছিল, কিন্তু অন্য ফর্মুলা সিরিয়েলের সঙ্গে টিআরপির কম্পিটিশনে পিছিয়ে পড়ায় নাকি কী সব হলো। এ অবশ্য ভিত্তিহীনও হতে পারে, তেমন কিছু পড়েছি টড়েছি কিনা তাও মনে পড়ছে না। মানুষ খাচ্ছে বলেই হচ্ছে, আর হচ্ছে বলেই মানুষ খাচ্ছে, এ এক বিষাক্ত চক্র। শিল্পনির্মাতাদের ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতার থেকে শৈল্পিক দায়বদ্ধতা বেশি থাকলে একরকম হতো হয়তো। তো এইখানে পুঁজি একটু গোলমেলে ব্যাপার।
    এখানে আবার একটা মজার জিনিস - ধ্রুপদী সঙ্গীত হয়েছে রাজাগজাদের দাক্ষিণ্যে, লোকসংগীত হলো স্বাধীন।

    ও, একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস পড়লাম, ফেবুতেই, জন অরণ্য সিনেমায় ফরাসী কোলাবোরেশনের কল্যানে নাকি শিল্পীরা, বম্বের শিল্পীদের থেকেও অনেক মোটারকম পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন।
    অবশ্য আজকের দিন হলে বিদেশী পুঁজি দিয়ে সিল্পো হচ্ছে বলে ইডি লেলিয়ে দেওয়ার ভয় ছিল। সে যাই হোক।

    ট্যালেন্টের ব্যাপারেও, একমত, আশি নব্বই এবং তারপরেও অনেক প্রতিভা যাঁরা মৌলিক, চিন্তাশীল ও পরীক্ষামূলক।

    পঞ্চাশ থেকে সত্তর রাফলি, অনেক প্রবাদপ্রতিম তারকাদের হলিউডি নকলনবিশী দেখলে বেদনা হয়।
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:১৪524266
    • dc | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:১৮
    • ...ভারত এক খোঁজ বা সুরভির পরেও রামায়ন মহাভারতই বা কেন সুপার পপুলার হলো? 
     
    মধ্যবিত্তের বৈঠকখানা ছেড়ে আর্থিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া উপভোক্তার কাছে পোঁছে যাওয়া/ যেতে চাওয়ার সঙ্গে যোগ আছে?
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২০524267
  • মানে এমন বলছি না যে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা রামায়ন মহাভারত বা তৎপরবর্তী আরও অনেক খাজা জিনিসপত্রের উপভোক্তা হননি।

    তবে সুরভি ভারত এক খোঁজ তমস হিমালয় দর্শন কব তক পুকারুঁ ইত্যাদি কনজিউম করার জন্য কিছুটা প্রস্তুতির দরকার ছিল হয়তো।
    (বাংলাপক্ষীয়রা রাগ করবেন না, আমি যেখানে বড় হয়েছি সেখানে পশ্চিমবঙ্গের টিভি চ্যানেল দেখা যেত নাঃ))
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২৫524268
  • ধরুন দুজন সিনেমা ব্যক্তিত্ব - রাজ কাপুর আর রামগোপাল ভার্মা, চল্লিশ বছরের তফাত দুজনের কাজের মধ্যে।

    রিপ্রেজেনটেটিভ কাজ ধরলে প্রথম জনের আওয়ারা ও শ্রী ৪২০। দ্বিতীয়জনের গ্যাংস্টার থ্রিলার (সত্য দিয়ে শুরু তারপর ডি কোম্পানি ইত্যাদি) আর পলিটিক্যাল থ্রিলার (সরকার, বচ্চনসাহেব বাল ঠাকরের মত একটি চরিত্র)।

    সময়ের তফাত শুধু নয় বিষয়ের তফাত এত বেশী যা তৈরী হচ্ছে ভারতের পরিস্থিতি চল্লিশ বছরের ব্যবধানে সম্পূর্ণ বদলে যাওয়ার জন্য যে ভাল খারাপের তুলনা অর মুশকিল।

    রাজ কাপুরের সিনেমাদুটো ১৯৯৫১ আর ১৯৫৫ সালের, স্ক্রীপ্ট রাইটার ছিলেন খ্বাজা আহমেদ আব্বাস, আইপিটিএ থেকে বম্বে ফিল্মের সাথে যুক্ত হয়ে পড়া। কিন্তু বামপন্থী অতীত বলে সেই ধারার চিন্তার ছাপ আছে গল্পে আবার নেহরু পরিচালিত ইশ্র অর্থনীতি আর সোশ্যালিজমের জমনায় আর স্বাধীনতার দশ বছরের মধ্যে সিনেমাগুলো হচ্ছে বলে যখন দেশের লোকে ভাবছে যে নতুন ভারত তৈরী হচ্ছে বা হবে, সেসবেরও ছাপ আছে সিনেমাদুটোয়। আওয়ারা সিনেমার থীমটা একই সাথে সোশ্যালিস্টিক ও নয় ভারতের উপযোগী আধুনিক - যে একজন মানুষ বয়সকালে গিয়ে কী হয়ে উঠবে সেটা তার জন্ম- জিন - পরিবারের ওপরের নির্ভর করে না, নির্ভর করে পরিবেশের ওপরে। অতএব পরিবেশের উন্নতি ঘটালে একজন ক্রিমিনালও ভাল মানুষ হয়ে উঠতে পারে, ধনী - দরিদ্রের অসাম্য ঘোচালে মানুষ ক্রিমিনাল হবে না এবং নতুন ভারত আশা দেয় বা দেওয়া উচিত যে সেরকম সত্যি হয়ে উঠবে। অন্যদিকে জিন - জন্মর ওপরের মানুষের ভবিষ্যত নির্ভর করে না বলে, নতুন ভারতে বিবিধ জাত - ধর্ম - শ্রেণী মানুষেরা তাদের পথ ঠিকই খুঁজে পাবে।

    ৪২০ ও এই লাইনেই মোটামুটি, বিবিধ ঘটনা, মেলোড্রামা, প্রেম বিরহ, কোরাপশন - ব্যবসা - ক্রাইম ইত্যাদি পেরিয়ে স্বাধীন ভারতের নাগরিক তার অবস্থার উন্নতি ঘটাবে, লাল টুকটুকে দিন না আসুক, তৎকালীন অর্থনীতি মধ্যে সুরাহা ঘটবে, সমস্যা নেই নয়, যথেষ্ট আছে, খারাপ ব্যবসায়ী, চুরি, আর্থিক অসাম্য ইত্যাদি প্রধাণ সমস্যা, সেসব দেখানোর মধ্যে নেহেরুর সময়কে সমালোচনাও করা হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাল কিছুই হবে। এও লক্ষ্য করার যে দুটি সিনেমাতেই প্রধান চরিত্র, ইউপি থেকে বম্বে আসছে, সেখানেই বড় হচ্ছে, কাজ করছে, বিবিধ ঘটনা আর ওঠানামার মধ্যে পড়ছে। বম্বেই যে নতুন ভারতের ভরকেন্দ্র, যাবতীয় নাটকিয়টা যে সেখানেই আছে, নতুন ভারতের মাইক্রোকোজম যে সেখানেই, সেই ধারণাও তৈরী করা হচ্ছ্হে।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২৯524269
  • এইসব অ্যাতো অ্যাতো হিন্দি সিনেমা একটাও তো দেখিনি! হায় হায় কী হারাইয়াছি! ইউটিউবে পেলে দেখে নেবো তিন তিরিক্কে করে করে। শুরুর কিছুটা, মাঝের কিছুটা আর শেষটুকু। :-)
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৩৭524271
  • আর হ্যাঁ, এই দুটো সিনেমারই crux টা কিন্তু ধরা আছে জাপানী জুতো - রুশি টুপি আর হিন্দুস্থানী দিল - এর গানটায়। যে বাইরে থেকে না, জিনিসপত্র না কিন্তু শেষে তুমি একজন ভারতীয়। আস্থা রাখ ঐ ধারণায়। একজন অতি সাধারণ চরিত্রর মধ্যে দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষদের এই জাতীয় ভাবই দেখানো হচ্ছে ।

    (রামগোপাল বাকি আছে)।
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৩৮524273
  • ** বাইরে থেকে নাও জিনিসপত্র নাও
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৪১524275
  • পড়ছি।

    তবে রাজ আর রামের রিপ্রেজেন্টেটিভ সিনেমার পর একই লাইনে হয়তো, ঠিক পরিচালক ধরে না, মোটামুটি কয়েক দশকে জনপ্রিয় সিনেমা নিয়ে কিছু মাথায় রাখা যেতে পারে, যেমন মাদার ইন্ডিয়া, দীওয়ার জন্ঞ্জীর কালা পাত্থর শোলে, রং দে বাসন্তী, দাবাং টাবাং ইত্যাদি কিছু।
    পাশাপাশি তখন বাংলা ও দক্ষিনে কী চলছে।

    যাই হোক, আপাতত পড়ছি, সিএসের বিশ্লেষণ ভালো লাগছে।
  • kc | 188.236.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৫৭524277
  • dc আর হুতোকে, আমি ইদানিং ওয়েব সিরিজের ব্যাপক ফ্যান, একটা সিরিজের রেকো দিয়ে যাই, জুবিলি, আমাজন প্রাইমে। সেইসময়ের ঘটনাবলীর উপর ঠাসবুনোট ফিকশন, সঙ্গে আন্ডার কারেন্ট হল বোম্বে ফিল্ম আর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির তৈরী হওয়ার স্টেপগুলো, করাচির ইন্ডাস্ট্রি বোম্বেতে চলে আসা, ইত্যাদি...। বাংলার কিছু মানুষও কাজ করেছেন, প্রসেনজিৎও। একটু স্লো কিন্তু রিভেটিং। রিসেন্টলি সেকেন্ড সিজন অ্যানাউন্স করেছে। পারলে দেখবেন। 
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:31e2:1970:94e6:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০৬524278
  • সিএস এর পোস্ট পড়ে কিছুটা শিখলাম। 
     
    "রাজ কাপুর ইত্যাদিদের ট্যালেন্টটা ঠিক কোথায়?" - এর উত্তর দিতে পারবো না, রাজ কাপুরের সিনেমা সেরকম দেখিইনি। গুরু দত্তর কয়েকটা সিনেমা বরং পুরোটা দেখেছি। তবে বহু আগে এদিক ওদিক দুয়েকটা বই বা আলোচনা পড়েছিলাম যে সেই সময়কার সিনেম্যাটিক ইমেজারি বা সোশ্যাল মিলিউ তৈরির পেছনে এনাদের সবারই ভালো অবদান আছে। কাদের লেখা পড়েছিলাম সেসবও ভুলে গেছি। 
    তবে একটা ব্যপার, চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকের ট্যালেন্টেড শিল্পীদের কথা বলতে আমি প্রথমে সুরকার, প্লেব্যাক সিঙ্গারদের নাম করেছিলাম। বলতে চেয়েছিলাম যে সেই সময়কার নৌশাদ বা ও পি নাইয়ারের তুল্য ট্যালেন্ট আশির দশকের পর আর আসে নি। সেখান থেকে আলোচনা কিছুটা সরে গেছে অ্যাক্টর আর ফিল্মমেকারদের মধ্যে, তাতে অবশ্য আমার আপত্তি নেই।  
     
    "মধ্যবিত্তের বৈঠকখানা ছেড়ে আর্থিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া উপভোক্তার কাছে পোঁছে যাওয়া/ যেতে চাওয়ার সঙ্গে যোগ আছে?"
     
    হতেও পারে, ঠিক জানিনা। এমনও হতে পারে যে ইন্ডিয়ায় চিরকালই রামায়ন মহাভারত পপুলার, ইন্ডিয়ানরা চিরকালই ধর্মের দিকে ঝুঁকে থেকেছে, তাই বি আর চোপরার সিরিয়াল পপুলার হতোই। তবে সাস বহু যে কেন পপুলার হলো, সে এক রহস্য (অন্তত আমার কাছে) :-)
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:31e2:1970:94e6:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০৭524280
  • কেসি, ধন্যবাদ। সময় করে দেখবো তাহলে। 
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩৪524281
  • রামগোপাল ভার্মা সত্য সিনেমাটা দিয়ে গ্যাংস্টার ফিল্ম নব্বইতে শুরু করেন, হিন্দী সিনেমায়, জানা নেই তার আগে দক্ষিণেও কিছু কাজ ছিল মনে হয়, সেখানে করেছিলেন কিনা। গ্যাংস্টার ব্যাপারটা কিন্তু বচ্চনের সিনেমাতেও ছিল, সেসব আসত স্মাগলিং ওত্যাদির সুত্র ধরে, যা আবার যুক্ত ছিল ১৯৯০ র আগের ভারতের অর্থনীতি সাথে, যে বিদেশের জিনিসের আকাল ফলে স্মাগলিং হয় আর সিনেমায় সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ঐসব সিনেমায় গ্যাংস্টারগুলো প্রায় কমিক, রিয়েলিটির ব্যাপারই নেই। সত্য সিনেমাটায় গ্যাংস্টাররা সাধারণ চরিত্র, হতে পারে তারা পাশের বাড়ির, তাদেরও পরিবার আছে, তারাও সন্তানের মুখ ধরে চুমো খায়, প্রেম করে কিন্তু কাজ বলতে অর্গানাইজড ক্রাইম, আন্ডারওয়ার্ল্ড তাদের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মনে হয়েছে যে রাজ কাপুরের আমলের বম্বে তার আশার জায়গা হারিয়ে পুরো শহরটাতেই অপরাধের নর্মালাইজেশন ঘটিয়ে ফেলেছে, ফলে রাস্তায় গাড়িতে পাড়ায়, নির্মিয়মাণ বহুতলে এইসব মানুষ ও দলের স্বাভাবিক ঘোরাফেরা। দেশের অর্থনীতি বদলে গেছে, মানুষ আর বম্বে শহর অনেক বেশী ক্রাইমের কাছাকাছি; পলিটিক্স - পুলিশ - ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রী, এসবের সাথে ক্রাইমের ঢের বেশী স্বাভাবিক সখ্যতা। ভায়োলেন্স বা আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে সিনেমাটায় কোন রকম মরালিটি ছিল না, রিয়েলিটি ছিল, সচেতনভাবেই, কিন্তু ভেবে দেখতে গেলে ১৯৯৮ সালে এই যে স্বাভাবিক ভায়োলেন্সময় সিনেমাটা বানানো হচ্ছে তার precursor কিন্তু রয়ে গেছে ১৯৯২ পরবর্তী দাঙ্গা আর পরের ভায়োলেন্সে। আপতিক নয় যে কয়েক বছর পরে যে সরকার নামে সিনেমাটা বানানো হবে সেখানে অমিতাভ প্রায় বাল ঠাকরের মত একটি চরিত্র যে বম্বে শহরটা কন্ট্রোল করে, বম্বে শহরে একরকমের অর্গানাইজ্ড দাঙ্গা বা মারপিট বা পলিটিক্স তো শিবসেনার মাধ্যমেই, যেন সত্য সিনেমায় আগে ক্রিমিনালদের দেখিয়ে তারপরে আরো বড় ক্ষমতাবানদের দেখানো হয়েছে ! তো রামগোপাল ভার্মার এইসব সিনেমাগুলোর কিছু পরে বা ক্রমশঃ সমসাময়িক বিশাল ভর্দ্বাজ বা অনুরাগ কাশ্যপের সিনেমা। ভায়োলেন্সই প্রধান অনেক সিনেমায়, ক্রমশঃ বম্বে ছাড়িয়ে ভায়োলেন্সের থীম তো উত্তর ভারত আর দিল্লী জুড়ে, নেটফ্লিক্সের দৌলতে আরোই, পুরো দেশটাই যে আজ ভায়োলেন্সের ওপরেই দাঁড়িয়ে, স্বাভাবিক ভায়োলেন্স তারও শুরুয়াত ঐ বমবে শহরকে ধরেই সত্য সিনেমাটা থেকে যেন।
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:31e2:1970:94e6:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪৮524282
  • হ্যাঁ, সত্যও দেখেছি, মনে পড়লো। বেশ ভালো লেগেছিল। তবে রিয়েলিস্টিক গ্যাংস্টার মুভি বোধায় তার আগেও কিছু বানানো হয়েছিল। মণি রত্নমের নায়কন মনে পড়ছে, ওটাও ভালো লেগেছিল। 
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:০০524283
  • আর একটু যোগ করলে এরকম বলা যায় যে ১৯৫০ - ৫৫ র বম্বে আর ১৯৯৮ সালের বম্বে, এই দুই সময়ের সিনেমায় শহরটার যে চরিত্র বদলে ঘটল এবং যেহেতু লিখেছিলাম যে প্রথম পর্বে বম্বে ছিল যেন দেশের মাইক্রোকোজম, তেমনি পরের পর্বেও বম্বেকে সেরকম ধরে নিলে এরকম সিদ্ধান্তে যেন আশা যায় যে আগে যেমন বাইরে থেকে লোকে বম্বে আসত, পরে যেন বম্বে তার ভেতরের ভায়োলেন্স সারা দেশে ছড়িয়ে দিল। হয়ত অতিকথন কিন্তু এও তো দেখার যে আজকে যারা ক্ষমতায় তাদের বড়দাই তো ছিল তো শিবসেনা আর আজকে অমুক সেনা তলুক সেনা হয়ে বোঝার কোন উপায় নেই কে লোয়ার ডেপ্থ আর কী বা আপার ডেপথ !

    আর একটা ব্যাপার হল, প্রগ্রেশনের ধারণা, একটি চরিত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে নানা কিছু মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত আশাবাদী পরিণতিতে পৌছবে, এই ছিল ১৯৫০ র সিনেমার ধরণ। যা আবার নতুন ভারতের ধারণা আর অর্থনীতির সাথে যুক্ত ছিল। আমার মনে হয় না, সেরকম সিনেমা এখন আর বানানো সম্ভব কারণ অর্থনীতি - রাশ্ট্রনীতি বদলে গেছে। কিন্তু নব্বইতে অন্য একদিকে প্রগ্রেশনের ধারণাযুক্ত সিনেমা হয়েছিল, যা মূলতঃ এন আর আই কেন্দ্রিক, শারুখ থাকত, তো সেখানে প্রগ্রেশনটা দেশ থেকে বিদেশের, দেশের পিছুটান পুরো না ঘুচিয়ে যদিও।
  • ++ | 143.202.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:০২524284
  • সিএসের লেখা খুবই ভাল লাগছে। আরেকটা ব্যাপার ধরুন রাজেশ খান্নার মত রোম্যান্টিক হিরোকে সরিয়ে অমিতাভ বচ্চন উঠে আসছে। জঞ্জির থেকে দিওয়ার হয়ে কুলি পর্যন্ত বম্বের ফিল্মে ওয়ার্কিং ক্লাসের দাপট, সেটা হয়ত ঐ শহরের পলিটিক্সটাকেই ধরে। বিরাশি সালেই ত বোধহয় দত্তা সামন্তের নেতৃত্বে বিশাল মিল স্ট্রাইক। এরপর শিবসেনার উত্থান কাহিনী। নব্বইয়ের শুরু থেকে দাঙ্গা ও বিস্ফোরণ মিলে রাজনীতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। ফিল্ম ফিরে যাচ্ছে রোম্যান্টিক হিরোর আখ্যানে। কিন্তু সেটা আর রাজেশ খান্না টাইপের হিরো নয়। সেটা শাহরুখ খান এবং কাজল যারা সুইজারল্যান্ডে প্রেম করছে, আবার বাবার অনুমতি না নিয়ে বিয়েও করছে না। উদারীকরণের পরবর্তী ভারতের টানাপোড়েন। এরপর ফিল্মে আবার সাবল্টার্ন চরিত্ররা ফিরে আসছে। কিন্তু তারা শ্রমিক বা চাষি নয়। গ্যাংস্টার ছবি হচ্ছে। রামগোপাল আসছেন। আরও পরে অনুরাগ কাশ্যপ।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন