দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে চল্লিশ বছর কমিউনিজমের সঙ্গে পশ্চিমি ধনতন্ত্রের নিত্যিদিন মুখোমুখি দেখা হতো বার্লিন শহরে , দেওয়ালের এপার আর ওপার ! ইউরোপের আর কোথাও দুই বিপরীত সমাজ ব্যবস্থা প্রায় করমর্দনের দূরত্বে আসে নি।  কিন্তু আফ্রিকায় , মাত্র  বছর তিরিশেক আগে আমেরিকান  সিটি ব্যাঙ্ক সোভিয়েত ইউনিয়নের উপস্থিতি লক্ষ করেছে খুব কাছ থেকে – নদীর ওপার থেকে । আমার দীর্ঘদিনের আমেরিকান সহকর্মী ডেভিড তৎকালীন জাইরের রাজধানী কিনশাসার (বেলজিয়ান লিওপোলডভিল ) সিটি ব্যাঙ্কে কাজ করতো  ।  সে দেশ এবং তার একনায়ক মোবুতু তখন আমেরিকার পরম মিত্র । তিনি একাই লাল জুজুকে ঠেকিয়ে রেখেছেন – সন্দেহ হলে কিনশাসার কোন বহুতল অট্টালিকার পাঁচতলায় দাঁড়িয়ে কঙ্গো নদীর অন্য পাড়ে কঙ্গোর রাজধানী ব্রাজাভিলে সোভিয়েত বাহিনির মার্চ পাস্ট দেখুন! অ্যাঙ্গোলা মোজাম্বিকে সেই একই ছবি ।  আজকের মতন সোভিয়েত ইউনিয়ন সেদিন শুধু গম ও ভোজ্য তেল সরবরাহ করে নি, রা সৈন্য ,কালাশনিকভ ,  চেক পিস্তল পাঠিয়েছে । সোভিয়েত ইউনিয়ন সেদিন ছিল সুপার পাওয়ার আজ চিন আফ্রিকাতে সুপার পাওয়ার । রাশিয়ার রপ্তানি করার আছেটা  কি ? ঘুরে ফিরে সেই গম,  জব,  ভোজ্য তেল-  তার অর্ধেকটা আজ ইউক্রেনের কবলে !

মস্কোতে মেদভিয়েদেভ বলেছিলেন টাকার পোঁটলা নিয়ে রাশিয়া আফ্রিকায় যাবে না । ইঙ্গিত সেখানে অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল।  এবার সোচিতে চিনের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে  পুতিন আশা প্রকাশ  করলেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আফ্রিকা রাশিয়া বাণিজ্য অন্তত ডবল হবে । সেটি পরিকাঠামো ভিত্তিক বা দানছত্র নয় । সোচির সমারোহের পরে তিন বছর কেটে গেছে রাশিয়া আজও গম যব ভোজ্য তেল রপ্তানি করে আফ্রিকাতে । আধুনিকতম ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম সস্তার ফোন বা কোন টেকনোলজি তার রপ্তানির তালিকায় নেই । রাশিয়ান তেল বা গ্যাসের বাজার আফ্রিকায় নেই ।  আফ্রিকা পাঠায় সবজি ফল আর খনিজ দ্রব্য।

সন্ধ্যালগনে 
 
ইউক্রেন যুদ্ধের পরে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলি অবরোধ করে মহামতি পুতিন কেবল ইউরোপ নয়, গোটা আফ্রিকায় ফসল পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন।  ওডেসা বন্ধ হলেও ট্রেন বা ট্রাক যোগে  ইউক্রেন তার খানিকটা শস্য ইউরোপে পাঠাতে পারে।  আমার শ্বশুরবাড়ির দেশ সেই পথেই গম কিনছে। কিন্তু মিশর নাইজেরিয়া লিবিয়া আলজেরিয়া কেনিয়া সহ আফ্রিকার আরও অনেক দেশ গভীর খাদ্য সঙ্কটে নিমজ্জিত হতে চলেছিল।  

শেষ অবধি শুভ চেতনার বা বেওসা বুদ্ধির জয় হলো ।

গতকাল ইস্তানবুলে তুর্কী রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান এবং রাষ্ট্রসংঘের প্রধান গুতিয়েরেথের উপস্থিতিতে দুই  যুযুধান পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হল :  কৃষ্ণ সাগরের বন্দর থেকে রাশিয়া  তার অবরোধ তুলে নেবে  আফ্রিকার খাদ্য সঙ্কট এড়ানো গেলো , আপাতত।

টুমরো ইজ অ্যানাদার ডে ।

২৩শে জুলাই ২০২২