এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ইউক্রেন, বাংলাদেশ, এবং মিডিয়া -- বর্বরতার সেকাল একাল

    Partha Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ মার্চ ২০২২ | ১৪২৯০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ঊনিশশো একাত্তরের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর -- বাংলাদেশের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে -- আজ এই দুহাজার বাইশ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পৃথিবীতে কতগুলো যুদ্ধ হয়েছে, এবং তার পরিণতি হিসেবে কত কোটি নিরীহ মানুষকে নিজের দেশ ছেড়ে চিরকালের মতো অন্য দেশে গিয়ে উদ্বাস্তুর জীবন কাটাতে হয়েছে? কেউ কি তার হিসেব রেখেছে কোনো?
     
    আজকে নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, বিবিসি এবং প্রায় সমস্ত মার্কিন ও পশ্চিমি মিডিয়া রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের জন্যে কেঁদে আকুল। কেবলমাত্র পোল্যাণ্ডেই দশ থেকে পনেরো লক্ষ ইউক্রেনিয়ান পুরুষ, নারী ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে। এর পর আছে পশ্চিম ইউরোপের আরো দেশ -- যেমন জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি। ইউক্রেনের চারপাশে আরো যেসব দেশ আছে, যেমন বেলারুশ, হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক, মলডোভা, জর্জিয়া, রোমানিয়া ইত্যাদি। 

    ইউক্রেনে রাশিয়ার বর্বর আক্রমণ এই প্রতিটি দেশকেই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বাধ্য। পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপরে যে নিদারুণ প্রভাব পড়বে, এবং কত কোটি গাছ কাটা পড়বে, পার্ক ও তৃণভূমি জ্বলে যাবে, কত লক্ষ কোটি গ্যালন জল চিরকালের মতো বিলীন হবে, তার হিসেব কে করে? এবং যারা বেঁচে থাকবে, বিশেষ করে শিশুরা, তাদের মনের ওপর এই যুদ্ধ ও বোমাবর্ষণ চিরকালের মতো কেমনভাবে ছাপ ফেলে যাবে, তার হিসেব কে করে?
     
    বাংলাদেশ যুদ্ধের সময়ে আমরা দেখেছি, কত লক্ষ নিরীহ পরিবারকে এই ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। কত অসংখ্য নারীর মর্যাদা লুন্ঠিত হয়েছিল। কত মানুষ বিকলাঙ্গ, পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলো। অথচ, বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানী হানাদারদের বর্বরতার খবর আমার পরিচিত অনেক সাধারণ পাকিস্তানীই জানেনা। আমি যখন তাদের এসব কথা বলি, তারা আশ্চর্য হয়ে যায়। তারা তাদের দেশে থাকার সময়ে কখনো এসব কথা শোনেনি। শুনলেও তার যে বীভৎসতা, বিভীষিকা, তার কোনো সঠিক খবর তাদের দেশের মিডিয়া তাদের দেয়নি। এও হলো আমার পূর্বকথিত "জার্নালিজম অফ এক্সক্লুশন" বা কৌশলে বর্জন করার সাংবাদিকতা। আজ আমরা নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, বিবিসি এবং পশ্চিমি মিডিয়াতে তার এক আধুনিক সংস্করণ দেখতে পাচ্ছি।
     
    এই আধুনিক, নবতম মগজধোলাইতে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া ও পুতিন কেমনভাবে ইউক্রেনের ওপর বর্বর আক্রমণ চালাচ্ছে, কত নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, মারিপল, ম্যারিটোপোল, খারসন, ইত্যাদি শহরে হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র এসব রাশিয়ার বোমার আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। তার ছবি আমরা দিবারাত্র পশ্চিমি মিডিয়াতে এবং তাদের বশংবদ ভারতীয় ও বাংলাদেশী মিডিয়াতে দেখছি। এবং শিহরিত হচ্ছি। হওয়ারই কথা।
     
    রাশিয়ার এ আগ্রাসন ও বর্বরতাকে চরম ধিক্কার জানাই। 
     
    কিন্তু এখানে একটা বিরাট প্রব্লেমও আছে। আজ পৃথিবীতে যেমন সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো খবর দেখলে তেমন কেউ তার সম্পর্কে খোঁজখবর করেনা বা রিসার্চ করেনা, এবং সেই উড়ো খবরকেই ধ্রুবসত্য বলে মনে করে এবং নিজের বন্ধু পরিজনের সঙ্গে চোখ বন্ধ করে শেয়ার করে ফেলে, ঠিক তেমনি নিউ ইয়র্ক টাইমস বা সিএনএনের খবরকে কেউ যাচাই না করেই নিজেদের মিডিয়াতে প্রকাশ করে দেয়। এবং কে কত বেশি আগে প্রকাশ করতে পারলো, তার প্রতিযোগিতা চলে। 

    অথচ, নিউ ইয়র্ক টাইমস জাতীয় মিডিয়া একপেশে রাশিয়াবিরোধী খবর প্রচার করে চলেছে, যা ওয়ার প্রোপাগাণ্ডা -- যুদ্ধ সম্পর্কে একটা জিগির সৃষ্টি করা।
     
    সেই একপেশে সাংবাদিকতায় যেমন যুক্তিতর্ক, বিশ্লেষণ, কারণ অনুসন্ধান সমস্ত বিলুপ্ত, ঠিক তেমনই ইতিহাসের কোনো আলোচনাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই তথাকথিত "মুক্ত ও স্বাধীনতার দেশ" আমেরিকায় আজ যদি কোনো মূলস্রোত মিডিয়া সেসব কারণ বা ইতিহাসের কথা তোলে, সঙ্গে সঙ্গেই সে মিডিয়া জনপ্রিয়তা হারাবে, এবং যেসব বড় বড় কর্পোরেশন -- গাড়ি থেকে ওষুধ থেকে ম্যাকডোনাল্ড থেকে পিৎজা হাট থেকে ডিজনি ওয়ার্ল্ড -- তাদের বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে, তারা সে বিজ্ঞাপন গুটিয়ে নেবে, এবং সে মিডিয়া মুখ থুবড়ে পড়বে। সে ঝুঁকি নিয়ে সৎ, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার সাহস কোনো মূলস্রোত মিডিয়ার নেই।
     
    অথচ সৎ, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করার এই মুহূর্তে খুব বেশি দরকার ছিল। আগের তিন সপ্তাহে আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাতায় সেসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আজ করছি যুদ্ধ এবং শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আলোচনা। ইমিগ্রেন্ট এবং ইমিগ্রেশন নিয়ে মার্কিন মিডিয়ার একপেশে আলোচনা দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়। ইরাক, আফগানিস্তানের যুদ্ধের সময়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন সে দুই দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছিলো, এবং বলতে গেলে বিনা কারণেই বোমার আঘাতে দুটো দেশকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো, তখন মার্কিনি ও পশ্চিমি মিডিয়ার এই কুম্ভীরাশ্রু কোথায় ছিল? 

    প্রতিটি ছবি, প্রতিটি খবর দেখলে আজ সেই হিপোক্রিসি, দ্বিচারিতার কথাই খুব বেশি করে মনে আসে। কিন্তু সেসব কথা বলা জনপ্রিয় নয়। 

    ইতিহাসের আলোচনা জনপ্রিয় নয়। আপনার চাকরি চলে যেতে পারে, আপনার ফোন হ্যাক করা হতে পারে, আপনার পরিবারের ওপর নজরদারি করা হতেই পারে। এমনিতেই আমেরিকায় গুগল, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বিনা পয়সায় ব্যবহারের পরিবর্তে আপনার ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য বা পছন্দের খবর মার্কিনি কর্পোরেশনগুলো জানে। আপনার ফোনে বা ইমেলে যে কোনো সময়ে যে কোনো কর্পোরেশন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আপনার বাড়িতে যদি অ্যালেক্সা-জাতীয় অনলাইন রোবট থাকে, তাহলে তার মাধ্যমে আপনার বলা সমস্ত কথা কর্পোরেশনগুলির হাতে সরাসরি চলে যেতে পারে। 

    এই তথাকথিত "ল্যাণ্ড অফ প্রাইভেসি" আমেরিকায় কোনো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আপনার অবশিষ্ট নেই।
     
    একাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েই কিন্তু ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, চিলি এসব দেশে বিশাল বিশাল যুদ্ধ চলছিল, এবং প্রতিটি যুদ্ধের পিছনেই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত। সেই একই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকায় গুয়াতেমালা, সালভাডোর, হণ্ডুরাস এসব দেশে মার্কিন মদতে সেখানকার অত্যাচারী রাষ্ট্রনায়করা বর্বর আক্রমণে বিরোধী শক্তিকে শেষ করে দেওয়ার খেলায় নেমেছিল, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ জমি, ঘরবাড়ি, স্বজন পরিজন হারিয়ে স্ত্রীপুত্রকন্যার হাত ধরে নিজের প্রিয় দেশ ও পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলো অন্য দেশের আশ্রয়ে।
     
    ফিলিপিন্স থেকে এ্যাঙ্গোলা, বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কা, সুদান থেকে কঙ্গো, কসোভো থেকে ইউক্রেন -- সমস্ত যুদ্ধের পিছনেই ওই যে কথা আগেই বললাম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং তাদের ট্রিলিয়ন ডলার, ট্রিলিয়ন পাউনড অস্ত্র ও যুদ্ধ কর্পোরেশনের মদত রয়েছে। ঠিক যেমন পট্যাটো চিপসকে জনপ্রিয় না করলে খামারের আলু বিক্রি হবেনা এবং পচে যাবে, ঠিক একই ভাবে যুদ্ধ না লাগালে এবং যুদ্ধ চালিয়ে না গেলে এই ট্রিলিয়ন ডলারের মজুত করা অস্ত্রভাণ্ডার পড়ে থাকবে, এবং শেয়ার বাজারে তাদের লাভ দ্রুত পড়ে যাবে। 
     
    অস্ত্র ও যুদ্ধ বিক্রি না হলে লাভ নেই, এবং লাভ না থাকলে শেয়ার মার্কেট নেই। স্টকহোল্ডাররা ক্ষেপে উঠবে। 

    যুদ্ধ কর্পোরেশনের সঙ্গে কেবলমাত্র অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো যুক্ত নয়। যুক্ত আছে ওষুধপত্র, কম্পিউটার ও সফটওয়্যার, হাজার ইলেক্ট্রনিক্স ও অনলাইন বাণিজ্য, সাবান থেকে খাদ্যসামগ্রী। গাড়ি থেকে গ্রেনেড। বস্তুতঃ, যুদ্ধ না লাগালে, এবং যুদ্ধ চালিয়ে না গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে। এই কারণে, আপনারা একবার গুগল সার্চ করে দেখে নিতে পারেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকা পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো ভাবে যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আছে।
     
    আজকে পৃথিবীতে এই মুহূর্তেই সৌদি আরব ইয়েমেনের ওপর বর্বর আক্রমণ চালাচ্ছে। এবং মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমস বা সিএনএন বা বিবিসিতে তার কোনো খবর আপনি পাবেন না আদৌ।
     
    কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বক্ষণ যুদ্ধ চলেছে। আফ্রিকার অনেকগুলো দেশের মধ্যে নিরন্তর যুদ্ধ চলেছে। ইজরায়েলের কথা বলে আর মার্কিনি মিডিয়ার লজ্জা বাড়ালাম না। অবশ্য, জার্নালিজম অফ এক্সক্লুশনে লজ্জা বস্তুটাই তাদের আর নেই।
     
    সব জায়গাতেই -- বার্মা থেকে বাংলাদেশ থেকে বলিভিয়া থেকে বার্কিনা ফাসো -- যুদ্ধের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারা ওই মেক্সিকো, গুয়াতেমালার সর্বস্বান্ত মানুষের মতোই দেশ হারিয়ে, স্বজন পরিজন হারিয়ে, জমি হারিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে অন্য দেশের আশ্রয়ে। এই মুহূর্তে যেমন ইউক্রেন থেকে পোল্যাণ্ডে পাড়ি জমাচ্ছে ওই দশ থেকে পনেরো লক্ষ মানুষ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে যেমন ইউরোপ থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিল কোটি কোটি মানুষ।
     
    আমেরিকা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলো। যেমন ইউরোপের নতুন যুদ্ধগুলোর শরণার্থীরা অনেকেই আশ্রয় পেয়েছে জার্মানিতে, ফ্রান্সে।
     
    কিন্তু আমেরিকায় আজ উদ্বাস্তুবিরোধী, শরণার্থীবিরোধী রাজনৈতিক ও সামাজিক হাওয়া অতি প্রবল আজ যদি কুম্ভীরাশ্রু নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন বলতো, ইউক্রেন থেকে যে কেউ আমেরিকায় আশ্রয় পেতে চাইলে আমেরিকা তাদের বিনাশর্তে আশ্রয় দেবে, এ্যাসাইলাম দেবে। বলবে কি?
     
    বিবিসি কি রাণীর ওপরে চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে ইউক্রেনের শরণার্থীরা সবাই ব্রিটেনে নিরাপদ আশ্রয় পায়?
     
    যেমন একাত্তরে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি নিঃস্ব, ছিন্নমূল নিরীহ মানুষ ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলো?
     
    ###

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ মার্চ ২০২২ | ১৪২৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:d8c4:9655:26a5:***:*** | ২২ মার্চ ২০২২ ২৩:০৪505199
  • পার্থবাবু,
    এটি শেয়ার করতে পারি?
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:d8c4:9655:26a5:***:*** | ২২ মার্চ ২০২২ ২৩:০৯505200
  • আরও দুটো লেখা এখানে পেস্ট করে দিচ্ছি।
     
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:d8c4:9655:26a5:***:*** | ২২ মার্চ ২০২২ ২৩:১১505201
  • ইউক্রেন, রাশিয়া ও ডায়াবলিক মনন
    শাহাব আহমেদ

    রুশ ও ইউক্রেনিয়ান এই দুই জাতির মধ্যে বিভাজন ঘটানোর প্রয়োজন ছিলো আমেরিকার, যাতে রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশিয়া আর কখনও একজোটে আবদ্ধ হতে না পারে। তাই এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ ঠাণ্ডামাথার পুতিনের মাথা আউলিয়ে শুরু করিয়েছে পশ্চিম। যেহেতু সারা বিশ্বের মিডিয়া পশ্চিমের হাতে, তাই পুতিন আজ ভিলেন ( আমি তার সমর্থক নই), কিন্তু গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সে নয়, বরং আমেরিকা ও তার তাবৎ তাবেদার গোষ্ঠি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কে বলবে, বা বললেই কে শুনবে?
    আজকের সাপ্তাহিক বাঙালীতে এ নিয়ে আমার একটি লেখা।
    ইউক্রেন, রাশিয়া ও ডায়াবলিক মনন 
    শাহাব আহমেদ
    রাশিয়া অন্যায়ভাবে ইউক্রেন ও ইউক্রেনের জনগণকে ধ্বংস করছে। অপরাধ- দেশটি ন্যাটোতে যোগ দিতে চেয়েছিল। 
    একটি দেশ কি তার নিজের পছন্দমত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে কার সাথে বন্ধুত্ব করবে, কার সাথে করবে না?
    অবশ্যই পারে।
    আমরা তো ইওটোপিয়ান সমাজে বাস করি, তাই না? যেখানে বিগত দশহাজার বা দশলক্ষ বছরেও মানুষ কোনো অন্যায় করে নাই, বড়দেশ তার প্রতিবেশি ছোট দেশকে গ্রাস করে নাই, শোষক নাই, শোষিত নাই, চারিদিকে বিরাজ করেছে একচ্ছত্র ন্যায়, শান্তি, আর পছন্দের স্বাধীনতা। এখানে মন্দাকিনী নদী বয় কুলুকুলু, অপ্সরিরা নাচে, ঘন সবুজপ্রান্তরে কামধেনু ঘাস খায়, অশ্বিনীকুমারদ্বয় দেবতাদের পাত্রে সযত্নে সোমরস ঢালে, আর গন্ধর্বরা ডানে বামে সঙ্গম করে, গান গায় আর মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে।
    আমরা দেবতা নই, অন্তত গন্ধর্ব, তাই তো?
    এবং ইউক্রেন রাশিয়া আমেরিকা ইংল্যান্ড জার্মানি ফ্রান্স চীন জাপান সবাই সেই মহান ইওটোপীয়ার সদস্য। 
    “প্রতিটি দেশের তার নিজের মত চলার অধিকার আছে” এটা এই দেশগুলোই বলে। বলে আমাকে, তোমাকে, তাকে এবং সর্বাপরি আমাকে ধাপ্পা দেবার জন্য। আমরা আসলে বাস্তব পৃথিবীতে বাস করি যেখানে এই বাক্যটি একটি সুবর্ণ মুখোশ, প্রয়োজনে তারা তা পরে, প্রয়োজনে নামিয়ে রাখে। তারা যখন চিলিতে গিয়ে আয়েন্দেকে হত্যা করে, বা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে, ইরাকে সাদ্দাম হোসেনকে, লিবিয়ায় মোয়াম্মার গাদ্দাফিকে…… বা তারা যখন জাপানে এটম বোমা ফেলে, ভিয়েতনামে , আফগানিস্তানে বা সার্বিয়ায়….. মানুষ মারে, তখন কিন্তু এই কথা বলে না। এ কথা তাদের মনেও থাকে না। আমরা যারা বিবেকবান ও বিজ্ঞ, আমরা কিন্তু সবসময় বলি। কিন্তু সত্য হলো, একচ্ছত্র ক্ষমতার পৃথিবীতে যদি ১৬০টি দেশের প্রতিটি মিডিয়ায় তারা দিন রাত, রাত দিন, সকাল সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা ও সকাল, একই সাথে, একই মিথ্যা পুনরাবৃত্তি করে, মিথ্যা ছবি বা ভিডিও দেখায়, তারা কি দানবকে দেবতা ও দেবতাকে দানব বানাতে সক্ষম নয়? 
    অবশ্যই। 
    তীক্ষ্ন মনন ও জ্ঞানের আধিক্য দিয়ে আমরা তর্ক দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু উত্তরটি তারপরেও অবশ্যই, হাজারবার এবং লক্ষবার অবশ্যই। দানব ও দেবতা সে-ই, যাকে পৃথিবীর মোড়লরা পছন্দমত চিহ্নায়িত করে।
    ন্যাটো ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ারশ জোটের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
    এখন ন্যাটোর শত্রু কে?
    রাশিয়া।
    কিন্তু রাশিয়ার তো কোনো জোট নেই, তারা সমাজতন্ত্রিক ও নয়, পৃথিবীকে পুঁজিবাদমুক্ত করার শ্লোগানও তারা আর দেয় না। তারা অন্য সবার মতই লুটপাট করে, মিথ্যা বলে এবং জনসাধারণকে শোষণ করে ছোবড়া করে দেয়। তারা তো এখন সব ধার্মিকের মাসতুত ভাই! তবে চুক্তি ভেঙে ন্যাটো কেন সম্প্রসারিত করে চারিদিক দিয়ে রাশিয়াকে ঘিরে ফেলতে চায়?
    কেন তাদের ইউক্রেন দরকার?
    প্রতিবার কি রাশিয়া পোল্যান্ড ও ইউক্রেন দিয়ে আক্রান্ত হয়নি? পৃথিবী স্বীকার করুক আর না করুক, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়া হলো রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য বিশাল হুমকি। ২০০৪ সালের দুর্বল রাশিয়া পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, লাতভিয়া ও এস্টোনিয়ার ন্যাটোতে যোগদান মেনে নিতে বাধ্য হলেও, ২০২২ সালের তুলনামূলকভাবে সবল রাশিয়া তা মেনে নেবে? 
    ইওটোপিয়ান বলবে- “হ্যাঁ, অবশ্যই, ন্যায় তো তাই।” কিন্তু বাস্তববাদীরা বলবে, “না, মেনে নেবে না।” এবং এ নিয়ে বিস্মিত বা বোকার ভান করে কোনো লাভ নেই।
    রাশিয়া ক্রিমিয়া কেড়ে নিয়েছে? 
    হ্যাঁ, ১৭৭৪ সালে। অটোমানদের কাছ থেকে, তীব্র যুদ্ধ কর, বহু জীবনের বিনিময়ে। 
    ১৯৫৪ সালে ইউক্রেনের ক্রুশ্চেভ মদ্যপান করে, রাশিয়ার জনগণ বা কাউকে জিজ্ঞেস না করে, ইতিহাসের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া উপহার দিয়েছিল। 
    কবি হাফিজ নাকি প্রেমিকার গালের তিলের জন্য তৈমুরের সমরখন্দ বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তৈমুর সৈন্য পাঠিয়ে হাফিজকে বেঁধে এনে প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমার এতবড় সাহস, যে সাম্রাজ্য আমি এত রক্তের বিনিময়ে জয় করেছি, তুমি তা কোথাকার কোন্ মেয়ের গালের তিলের জন্য বিলিয়ে দিতে চাও!”
    হাফিজ কুর্নিশ করে বলেছিলেন, “মহারাজ এই অর্বাচীনতার জন্যই তো আমার এই দীন দশা!”
    ক্রুশ্চেভ তো কোনো মেয়ের জন্য দিওয়ানা হয়ে তা করেনি, মাতাল অবস্থায় করেছিল। তার  ভাগ্য ভালো যে, সেই হিরকরাজার দেশে তাকে প্রশ্ন করার বা তার গর্দান কাটার কোনো তৈমুর ছিল না।
    ক্রিমিয়া ছাড়া কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া কানা, তার নিজের দেশ রক্ষা করার ক্ষমতাও থাকে না। তারপরেও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর তারা উচ্চবাচ্য করেনি। ইউক্রেন ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ, হাজার বছরের ভ্রাতৃত্ব, একই ধর্ম, একই শ্লাভিয়ান শিকড়। তারা ইউক্রেনকে কোটি কোটি ডলার পে করে ক্রিমিয়া লিজ নিয়ে কাজ চালাবে।
    কিন্তু না, হাজার বছরে প্রোথিত সেই শিকড় উৎপাটন করে, লাখো লাখো রাশিয়ান, ইহুদি, ইউক্রেনিয়ান হত্যাকারী নাৎসি কোলাবরেটর স্তেপান বান্দেরার সমর্থকদের কাঁধে ভর দিয়ে আসা নেতৃত্ব যখন সেই ক্রিমিয়ায় ন্যাটোকে ঘাঁটি বসাতে দিতে চায়, তখন রাশিয়ার সামনে পথ কী থাকে?
    আমেরিকা কী করতো? ইংল্যান্ড? জার্মানি? ফ্রান্স? চীন? জাপান?
    সবাই যা করতো, রাশিয়া তা-ই করেছে, তাহলে অন্যায়টা কোথায়? অন্যায়টা হল তাবৎ দুনিয়ার সাথে সাথে আমাদেরও চিন্তার ইওটোপিয়ানায়।
    আমি এই যুদ্ধ সমর্থন করি? হলোই তা না, বা হলোই তা হ্যাঁ, কিন্ত তাতে কী আসে যায়? আমার ইচ্ছা অনিচ্ছায় সূর্য কি পশ্চিমদিক থেকে উঠবে?  
    কিন্তু আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব আগামিকাল যদি পুবকে পশ্চিম বলা শুরু করে তাদের সমস্ত মিডিয়ায়, স্কুলে কলেজে এবং ধর্মগ্রন্থে, তাহলে কিন্তু ঠিকই পশ্চিম দিকেই সূর্য উঠবে।
    তাই, বুদ্ধিমানের বাপের, বা বাপের বাপের চেয়ে  বুদ্ধিমান হলেও আমাদের মননের ক্ষমতা, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তি, টনটনে ন্যায়-অন্যায় বোধ, মানবিকতা, মানুষের দুঃখে কষ্টে কেঁদে ফেলার ক্ষমতা বা অক্ষমতা আসলে তারাই মোল্ড করে। তারাই অতি সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্মভাবে তাদের মত ভাবতে, বিচার করতে, বিশ্লেষণ করতে ও ব্যখ্যা করতে শেখায়। আমরা যখন ভাবি এটা আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব ও মৌলিক মতামত, শয়তান হেসে লুটোপুটি খায়। 
    তাই পাকিস্থানীরা যখন বাংলাদেশে গণহত্যা চালায় তখন পৃথিবী একাট্টা হয়ে হিংস্র গর্জন তুলে বয়কট ঘোষণা করে না, আমেরিকা যখন দেশে দেশে গিয়ে বোমা ফেলে ইওরোপের সব “সিউডো গণতন্ত্র” মুখে শুধু কুলুপই মেরে থাকে না, বরং আমেরিকার সাহায্যে এগিয়ে যায়। “সব শেয়ালের এক রা” এবং আমরা তো শেয়ালশা পীরেরই দরগার মুরিদ। কোনো না শেয়ালের প্রথম “রা” টি তো তুলতে হবে, অন্য সবার তাতে যোগ দেবার জন্য, যদি কেউ কোনো “রা” না করে, তার মানে ঘটনা ঘটে নাই। যেমন ইউক্রেনে আমেরিকার ধ্বংসাত্বক “বায়োল্যাব” নিয়ে কেউ কোনো “রা” করছে না,
    তাই আমরাও চুপ করে আছি। অমন একটা ল্যাব পঞ্চাশটা ইওরোপকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে, কিন্তু ওটা যে আমেরিকার!  
    বেশি দিন হয়নি যখন আমেরিকা সার্বিয়ায় গণহত্যা চালিয়েছে। সেটাও তো ইউক্রেনের চেয়ে কম ইওরোপ নয় কিন্তু তখন সবকিছু চুপচাপ ছিল কেন? কারণ ওটা করেছে বিল ক্লিনটন। বৃটিশ, জার্মান, ফরাসি বা আমেরিকানরা অন্যায় করে নাকি? 
    করেছে কখনও?  
    সিএনএন বাইবেল ছুঁয়ে বলবে, করে নাই, কোনো দিনও না। এবং আমরা বিশ্বাস করবো। 
    কিন্তু পুতিন সোনার দেশ ইউক্রেন ধ্বংস করে ফেলছে, তাই দেখে কত শোরগোল, মানুষ মরছে, হাসপাতালে, মাতৃসদনে বোমা পড়ছে, বিল্ডিংগুলো ধ্বংস হচ্ছে, আমরা বিচলিত, মর্মাহত এবং ইউক্রেনের জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং পুতিনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এটা আমাদের শেখানো মানবিকতাবোধ, আমরা নিজেদের যতটা মানবিক মনে করি, তারচেয়ে অনেক বেশি অমানবিক আমরা, অনেক বেশি সুবিধাবাদী ও খল। আমরা একইভাবে সোচ্চার নই লেবানিজ, প্যালেস্টাইনিয়ান, ইয়েমেনি, আফগান বা সিরিয়ানদের কষ্টে। কারণ ওদের চামড়া শাদা নয়, চোখ ব্লু নয়, চুল ফর্সা নয়, ওদের অশ্রুগুলো কদর্য, রক্তও নীল নয়, বরং অসভ্য লাল, অবিকল রাশিয়ানদের রক্ত ও লাল পতাকার মত।
    পুতিন বলে, সে ইউক্রেনকে “ডি নাজিফাই” করবে। এবং সিএনএন নিষ্পাপ প্রশ্ন করে, “জেলেনস্কি তো ইহুদি, সে নাৎসি হয় কী করে?”
    নির্বোধের জন্য দারুন প্রশ্ন! 
    যেন ইহুদিরা নাৎসি হতে পারে না, যেন পৌনে এক শতক ধরে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্যালেস্টাইনীদের হত্যা করে চলছে না অবিকল নাৎসি কায়দায়। 
    ইউক্রেনের জনগণের সিংহভাগই রাশিয়ানদের সাথে সন্মান ও সদ্ভাবের সম্পর্ক রক্ষা করে এসেছে চিরকাল। শুধু পশ্চিম ইউক্রেনের ল’ভিভ, ইভানা ফ্রান্কভস্কসহ কয়েকটি পোলিশ বর্ডার সংযুক্ত শহরের অধিবাসিরা ছাড়া। ওরা সব সময়ই ছিল কট্টর রুশবিরোধী। আমরা তা সোভিয়েত ইউনিয়নেও দেখেছি। ওরা বেশিরভাগ সময় ছিল রাশিয়ার বাইরে, পোলিশ, লিথুনিয়ান ও হাঙ্গেরির অধীনে। রুশদের সাথে ওদের কোনো বন্ডিং নেই। স্তেপান বান্দেরার জনপ্রিয়তা ও কর্মকাণ্ডের স্থান ছিল এখানেই। রুশবিরোধী কট্টর এই ফ্যাসিবাদি শক্তিগুলো শক্তি অর্জন করতে থাকে ইউক্রেন স্বাধীন হবার পর পর, কিন্তু ওরা ক্ষমতায় আসে ইউশেন্কোকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে জিতিয়ে আনার পর। তাই প্রেসিডেন্ট হয়ে ইউশেন্কো নাৎসী বান্দেরাকে মরনোত্তর “ইউক্রেনের বীর” উপাধি দেয় ২০১০ সালে, পোস্টাল স্ট্যাম্প বের করে তার নামে। ইওরোপ আমেরিকার ক্ষমতাচক্র একজন নাৎসির এই পূনর্জন্মে চুপ করে থাকে। কিন্তু রাশিয়ানরা ২ কোটি মানুষ হারিয়েছে নাৎসিদের হাতে, সুতরাং তাদের জন্য নাৎসি যা আমেরিকা জার্মানি ইংল্যান্ডের জন্য তা নয়। তাদের কাছে মিত্র নাৎসি হলেও মিত্রই। যাদের এ নিয়ে সন্দেহ আছে, তারা গুগলে “স্তেপান বান্দেরা” সার্চ দিলেই বর্তমান ইউক্রেনের এই বীরকে খুঁজে পাবে এবং 
    “মাইদান পিকচার্স ২০১৪” বলে সার্চ দিলেই দেখতে পাবে এই “মহান ঘাতকের” পুষ্পমুখের ছবিসহ অসংখ্য পোস্টার, ফেস্টুন এবং বিশাল বিশাল “হরাইজন্টাল” ব্যানার। ওরা ক্ষমতায় বসে দিনরাত এন্টিরুশ প্রচার প্রপাগান্ডার মাধ্যমে রুশদের প্রতি জাতিগত ঘৃণার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ইয়ং জেনারেশন, যাদের রুশদের সাথে কমন কোনো ইতিহাস নেই। তারা রাশিয়ার সাথে সৌহার্দ বজায় রাখতে আর ইচ্ছুক নয়। ভবিষ্যতে রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশিয়া যাতে সম্মিলিতভাবে ইওরোপের শক্তিশালী জোট হয়ে দাঁড়াত না পারে, তার জন্য পশ্চিম মরিয়া হয়ে ইউক্রেনকে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে।
    এবং অপশক্তিগুলোই ২০১৪ সালে নির্বাচত প্রেসিডেন্টকে ন্যাটোর অস্ত্রহাতে উৎখাত করে আইন করে রুশভাষাকে রাষ্ট্রভাষার থেকে খারিজ করে দেয়, রাশিয়ানদের এবং ৪০ জন রাশিয়ানকে ওডেসার বিল্ডিংএ বন্দি করে আগুনে পুড়িয়ে মারে। আমেরিকা তার নাগরিকদের এভাবে হত্যা করতে দিতো? 
    জার্মানি?
    ইংল্যান্ড?
    এরা নাৎসী নয়? তাহলে নাৎসিদের চেহারা কেমন? এদের কাঁধে ভর করা জেলেনস্কির কি এর চেয়ে বড় নাৎসি হবার প্রয়োজন আছে? যাদের বান্দেরা বীর, তাদেরই তো বীর জেলেনস্কি। এবং তারাই বাধ্য করে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ানদের অস্ত্রহাতে নিয়ে রুখে দাঁড়াতে এবং দানেৎস্ক এবং লুহান’স্কে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে। ইউক্রেন সেখানে যুদ্ধ ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। রাশিয়ানের রক্ততো ইউক্রেনিয়ানের রক্ত নয়।
    ফিরে আসি প্রতিটি দেশের নিজস্ব পছন্দের প্রসঙ্গে। ধরা যাক, আগামিকাল বা পরশু বা তারপরের দিন বা পরের বছর সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা এসে আমাদের দেশকে বলল, “তোমাদের সোনার পাথরবাটি দেব এবং উন্নতি ও সাফল্যের সাপের পাঁচ পা দেখাবো, যদি আমাকে ভারতের দোরগোড়ায়, তাদের দিকে তাক করে, দূর ও অদূরপাল্লার কিছু মিসাইল বসাতে দাও।”
    ধরে নিলাম আমাদের সেই সময়ের নেতারা ডারউইনের বংশধর বুদ্ধিমান প্রাইমেট এবং তারা লেজ নাচিয়ে লাফাতে লাফাতে মিছিল করে, মিটিং করে, মিডিয়ায় দ্রাম দ্রাম দ্রিম দ্রিম ট্রাম্পেট বাজিয়ে সমস্ত হেফাজতি, জামাতী, বিএনপি, যদু, মধু, আওয়ামী একচোখা এন্টি ইন্ডিয়ানদের সংহত করে বিশাল জনমত তৈরি করে ফেলল। 
    জনগণ চায় মিসাইল আসুক, প্রতিবেশি হারামজাদাদের স্কাই দেখিয়ে দেয়া হোক। 
    এটা তো ঠিকই আছে তাই না? জনগণের নিজস্ব পছন্দের গণতান্ত্রিক অধিকার, অসুবিধা কোথায়?
    ভারত বললো, “আমাদের দোরগোড়ায় বিদেশি মিসাইল আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি, তোমরা এক পা ও আগাবে না।”
    সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা বললো, “না না, আমরা তোমার জন্য মোটেও হুমকি নই, আমরা শুধু নিজেদের নিরাপদ করতে চাচ্ছি।”
    ভারত বলে, “কার থেকে নিরাপদ? আমাদের থেকে? আমরা কি মিসাইল নিয়ে তোমাদের দরজায় গিয়েছি?
    সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা আকর্ণ হাসি দিয়ে বলেন, “না মানে, হে হে, বাংলাদেশ তো আমাদের মিত্র, হোক ওরা ফ্যাসিবাদী, কিন্তু মিত্র বুঝলেন না? ”
    ভারত দিনের পর দিন হুশিয়ারী দেয়া সত্ত্বেও আমাদের নেতারা লাফায়, আমাদের জনগণ কাছা খুলে পেশি দেখায়, “আমাদের দেশ, যাকে ইচ্ছা তাকে চাই, কারো কোনো নাক গলাবার অধিকার নাই।”
    উপায়হীন ভারত তার ট্যাংক নিয়ে, এয়োরোপ্লেন নিয়ে, মিসাইল নিয়ে আমাদের দেশে এসে দেশটিকে ধূলিতে মিশিয়ে দেয়, শুধু তাই নয় আমাদের দেশের স্ট্র্যাটেজিক বহু জায়গা তাদের দেশের চিরন্তন অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণা করে। 
    আগ্রাসী কে? 
    ভারত, তাই না?
    ধ্বংস হল কে? আহা, সেই প্রশ্ন থাক! 
    শ্যাম চাচা বা চীন মামা? পেয়ারের মিত্র। তারা তো যুদ্ধ বাঁধায় নাই, যুদ্ধ বাঁধিয়েছে ভারত।” 
    সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা সারা বিশ্বব্যাপী শোরগোল তুলে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক স্যাংকশন দেয়। 
    অথচ সেটা আর আমাদের বিষয় নয়, ভারত ও সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামার ব্যাপার, তাদের কে মরে কে বাঁচে, কে হারে কে জিতে, তারাই বুঝবে। আমাদের “যা হইবার তা হইয়াই গেছে!”
    আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে? 
    অবশ্যই আছে, অন্যের কথায় লম্ফ ঝম্প করে, ধ্বংস হয়ে যাবার অধিকার থেকে  আমাদের বঞ্চিত করে কে? 
    ইউক্রেনের যেমন রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করার অধিকার আছে, রাশিয়ারও তেমনি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকার আছে। তার জন্য যদি প্রতিবেশিকে গ্রাস করতে হয়, করবে, ক্রাস করতে হয়, করবে, আমাদের কথা, আমাদের প্রতিবাদ এর এক বিন্দুও ব্যত্যয় ঘটাবে না।  
    অথচ রাশিয়ার দুয়ারে তুলনামূলকভাবে ছোট দেশটি ফিনল্যান্ড, সুইডেন ইত্যাদি দেশগুলোর মতই ন্যাটোর বাইরে থেকেই “ধনধান্যে পুষ্প ভরা” দেশ হতে পারতো। 
    রুশ প্রবাদ বলে, “শিষ্ট বাছুর দুই মায়ের ওলান চোষে।” শিষ্ট প্রতিবেশি হয়ে ইউক্রেন রাশিয়া
    ও পশ্চিমের দুধ পান করে অপরিসীম লাভবান হতে পারতো। কিন্তু পশ্চিমের অন্ধত্ব ও ফ্যাসিবাদী শক্তির কাঁধে ভর করা অর্বাচীন নেতৃত্ব এতসুন্দর একটি দেশ, সুন্দর জনগোষ্ঠি ও সংস্কৃতির মহান পাদপীঠকে কতদিনের 
    জন্য ধ্বংস করল তা শুধু সময়ই বলতে পারবে।
    ইউক্রেনের জনগণের যদি কোনো মূল্য পশ্চিমাদের কাছে থাকতো তবে এভাবে উস্কানি দিয়ে যুদ্ধে নামিয়ে হঠাৎ করেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধূঁয়া তুলে সরে দাঁড়াতো না। কোনঠাসা ভাল্লুক আর উত্যক্ত পাগলা কুকুর কোনো আইন মেনে বা হ্যান্ডবুক পড়ে যুদ্ধ করে না। অস্তিত্বের যুদ্ধে তাদের কাছে অন্যায় কিছু নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় তার নিজের অস্তিত্বের বিধ্বংসন, সুতরাং পুতিন ও তার নষ্টচক্র ওই দেশটিকে ধ্বংস না করে বা নিজেরা ধ্বংস না হয়ে ঘরে ফিরবে বলে মনে হয় না।
    ২০২০ সালে আমেরিকায় নির্বাচনের আগে  নভেম্বর মাসে সাপ্তাহিক বাঙালীতে প্রকাশিত “ভাল্লুক, হরিণ ও গাঁজার পল্লীতে নির্বাচনী হাওয়া” নামে একটি প্রবন্ধে আমি উল্লেখ করেছিলাম যে, নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাইডেন ইউক্রেনে যুদ্ধ বাঁধাবে। এক বছরের বেশি সময় সে নেয়নি যুদ্ধটি বাঁধাতে। 
    শয়তান কিন্তু যুবক নয়, শয়তান বৃদ্ধ ( তবে যুবাবয়সী হতেও তার কোনো বাধা নেই), কিন্তু চিরকালই সে নিষ্পাপ শিশুর মত হেসে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এসেছে এবং সে তা করতেই থাকবে। ন্যায় অন্যায় পছন্দ অপছন্দের স্বাধীনতার যুক্তিগুলো হলো “ডায়াবলিক” যুক্তি। পৃথিবীতে সবসময় বড় দেশগুলোই নির্ধারণ করে তার পাশের দেশগুলোর জন্য ন্যায় কী, অন্যায় কী এবং তাই সূত্রবদ্ধ করে “মনরো ডকট্রিন” নামের অভ্রান্ত বাইবেলে। 
    We should consider any attempt on their part to extend their system to any portion of this hemisphere as dangerous to our peace and safety.
    আমেরিকার জন্য যা সত্য, রাশিয়া বা চীন বা ইন্ডিয়ার জন্য তা সত্য হবে না, এ কথা বিশ্বাস করার দিন ছিল গতকাল, পৃথিবী খুব দ্রুতগতিতে আগামীকালের দিকে ছুটছে। 
    তবে তা রৌদ্রময় হবে, না মেঘাচ্ছন্ন হবে আমরা এই মুহূর্তে বলতে অক্ষম।
    মার্চ ১৪, ২০২২
  • s | 100.36.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০১:১৩505203
  • পার্থবাবুর কিছু কিছু কথার সাথে একমত। যেরকম বৃটেন, আমেরিকার কলোনিয়াল পাস্ট, বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বাধানো ইত্যাদি। তবে রাশিয়াকে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়েছে কেন বুঝ্লাম না। ইস্টার্ন ইওরোপ ছাড়াও আফ্গানিস্তান আর রিসেন্টলি সিরিয়াতে রাশিয়ার কার্য্কলাপ হোয়াইট ওয়াশ করার কোনো বিশেষ কারণ আছে কি?
    "এই আধুনিক, নবতম মগজধোলাইতে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া ও পুতিন কেমনভাবে ইউক্রেনের ওপর বর্বর আক্রম চালাচ্ছে, কত নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, মারিপল, ম্যারিটোপোল, খারসন, ইত্যাদি শহরে হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র এসব রাশিয়ার বোমার আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে।"
    এটা মগজধোলাই? রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনের শহর, গ্রাম গুঁড়িয়ে যাচ্ছে, মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, সেটা দেখে বিশ্বাস করলে ওনার মতে মগজধোলাই? আমি পাল্টা বলব উনি যদি মনে করেন রাশিয়া এসব কিছু করছে না, তাহলে ওনার মগজ পুরোপুরি ধোলাই হয়ে গেছে, রাশিয়ান প্রোপাগান্ডা শুনে।
    আবার উনি বলছেন পশ্চিমি প্রেস নাকি আর কোনো যুদ্ধের কথা সেরকম ভাবে প্রচার করছে না। আমি ইংরেজি ভাষার দু চারটে কাগজ নিয়মিত পড়ে আর শুনে থাকি, ইওরোপ আর আমেরিকার। আমি তো দিব্যি ইয়েমেন কনফ্লিক্ট, রোহিঙ্গা সমস্যা, বলিভিয়ার কু, কাশ্মীর, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ সব কিছুর খবর পাই। পার্থবাবু যদি সেসব না দেখতে পান তাহলে সমস্যাটা ওনার। তার জন্যে আমেরিকার সংবাদপত্রকে গাল দিয়ে লাভ আছে? নিরপেক্ষ খবর জানতে চাইলে মেনস্ট্রিম কাগজ পড়ে দিব্যি জানা যায়। পার্থবাবু কি ওয়াশিংটন পোস্টের আফ্গানিস্তান পেপার সিরিজটা পড়েছেন? পেন্টাগন পেপারের পর আমার মনে হয়না এই রকম এক্সপোজে আর হয়েছে বলে। আমি পুরো সিরিজটা পড়েছি। শুরুটা এই রকম -
    A confidential trove of government documents obtained by The Washington Post reveals that senior U.S. officials failed to tell the truth about the war in Afghanistan throughout the 18-year campaign, making rosy pronouncements they knew to be false and hiding unmistakable evidence the war had become unwinnable.
    আচ্ছা, রাশিয়া থেকে এই রকম পেপারের কথা শোনা যায় না কেন বলুন তো?
    ইয়্মেন নিয়ে কদিন আগেই এল এ টাইমসে দেখ্লাম -
    As Ukraine grabs headlines, keep Yemen in mind, Red Cross official asks।
    মোদ্দা কথা, এই লেখায় পশ্চিমি মিডিয়া বা সংবাদ্পত্র নিয়ে যেসব ক্লেম করা হয়েছে তার প্রায় বেশিরভাগটাই আনসাব্স্ট্যান্শিয়েটেড। নিজের অজ্ঞানতা ঢাকতে পশ্চিমি মিডিয়ার ঘাড়ে দোষ চাপানো।
     
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০১:৪৩505204
  • এই মুহুর্তে সিএনেনের হোমপেজে রাশিয়া দিয়ে সার্চ করলে ২৭টা আর ইউক্রেন দিয়ে সার্চ করলে ১৬টা ম্যাচ পাওয়া যাচ্ছে। ইয়েমেন দিলে ০।
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:d8c4:9655:26a5:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০২:০২505205
  • এখানে কিছু সাবটাইটেল আছে। পুরোটা নেই।
     
  • সম্বিৎ | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৩:৫৩505207
    • S | 2405:8100:8000:5ca1::a0ad | ২৩ মার্চ ২০২২ ০১:৪৩505204
    • এই মুহুর্তে সিএনেনের হোমপেজে রাশিয়া দিয়ে সার্চ করলে ২৭টা আর ইউক্রেন দিয়ে সার্চ করলে ১৬টা ম্যাচ পাওয়া যাচ্ছে। ইয়েমেন দিলে ০।

  • lcm | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৪:২৬505208
  • "... নিউ ইয়র্ক টাইমস বা সিএনএনের খবরকে কেউ যাচাই না করেই নিজেদের মিডিয়াতে প্রকাশ করে দেয়... "

    পার্থবাবু কি বলতে চাইছেন যে NYT/CNN গুল মারছে, ইউক্রেনে বাড়ি ভাঙে নি, ওগুলো সব ফটোশপড/মর্ফড ছবি ??

    আমেরিকান ফরেন পলিসি থেকে শুরু করে, wmd থেকে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমালোচনা নিয়ে নিয়ে স্কেদিং আর্টিকল পড়ে হেজে গেলাম এই NYT/CNN/BBC তেই।

     
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::5:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৪:২৭505209
  • এটা কি সিএনেনের হোমপেজ?
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::5:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৪:৩০505210
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::3:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৪:৩২505211
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৪:৩৮505212
  • ইয়েমেন এ কি এই মুহূর্তে ইউক্রেন এর লেভেলে যুদ্ধ হচ্ছে ? তাহলে প্রাইম হেডলাইনে কেন আসবে ? 
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৪:৪৯505213
  • "ইউক্রেনের যেমন রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করার অধিকার আছে, রাশিয়ারও তেমনি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকার আছে। তার জন্য যদি প্রতিবেশিকে গ্রাস করতে হয়, করবে, ক্রাস করতে হয়, করবে, আমাদের কথা, আমাদের প্রতিবাদ এর এক বিন্দুও ব্যত্যয় ঘটাবে না। "
     
    ভালো। মানে মোদ্দা সোজা কথাটা হলো পাড়ার গুন্ডাকে খুশি না রাখতে পারলে সে যখন ইচ্ছে এসে পিটিয়ে যেতে পারে। তাহলে  তো ঠিকই আছে। ইন্ডিয়া পাকিস্তানকে পেটাক , চীন ইন্ডিয়াকে পেটাক , ইজরায়েল প্যালেস্টাইন কি পেটাক - যে যেখানে যার যার মতো হিসেব মিটিয়ে নিক। কারোর কিচ্ছু বলার নেই। যা ইচ্ছে হোক। 
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৪:৫৭505215
  • দুমাসে ৪৭ জন ? সেই হিসেবে দেখতে গেলে বীরভূমের তো বেশি হেডলাইন পাওয়া উচিত। 
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::4:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৫:০১505216
  • ৪৭টি অশ্বেতাঙ্গ মুসলমান শিশু যথেষ্ট নয়? সে হবে হয়তো।

    যাগ্গে, ইয়েমেন যুদ্ধ সিএনেনে কোনওদিনও ইউক্রেন যুদ্ধের মতন গুরুত্ব পায়নি। কারণগুলো সহজেই অনুমেয়। যারা অন্যথা দাবী করছে, বোঝা যায় তারা নিয়মিত সিএনেন দেখেনা। সেটা হতেই পারে।

    সেসবের আগেও আইটির লোককে একটা সাইটের হোমপেজ চেনাতে হলে মুশকিল।
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৫:১৪505217
  • ওকে। ওয়েস্টার্ন মিডিয়া হাড়বজ্জাত  এন্ড চূড়ান্ত রেস পার্শিয়াল। এগ্রিড। 
     
    সেক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান মিডিয়া বা অন্য দেশের মিডিয়া গুলো ইয়েমেন নাইজেরিয়া সুদান কলম্বিয়া মোজাম্বিক আফগানিস্তান সিরিয়া এসব যাবতীয় দেশের গৃহযুদ্ধ বা জঙ্গি কার্যকলাপ কভার করছে না কেন ? কে বারণ করেছে বা আটকাচ্ছে ? 
     
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৫:২৪505218
  • ইভেন আজকের আল জাজিরার হোম পেজে ইউক্রেন এর খবরেই ভর্তি। ইয়েমেন যুদ্ধ র সাত বছর নিয়ে কেবল একটা ছোট ফটো স্টোরি। এটাও ওয়েস্টার্ন ​​​​​​​মিডিয়ার ​​​​​​​ই দোষ মনে ​​​​​​​হয়। 
     
  • lcm | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৫:৫৭505219
  • কীভাবে একটা সাইট সার্চ করতে হয়?

    (১) সাইটের ওপরে মেনুতে সার্চ আইকন এ ক্লিক করতে হবে। এই  যেমন CNN এর পাতায় ওপরে ​​​​​​​ডানদিকে ​​​​​​​মেনুতে ​​​​​​​সার্চ আইকন 
     
    (২) এরপর সার্চ বাক্সে শব্দ টাইপ করে সাবমিট। এই যেমন "Yemen" টাইপ করে সার্চ 
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::2:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:০৬505220
  • আমি হোমপেজ সার্চ করার কথা লিখেছি। এনিওয়ে এবারে তক্কটা আজে বাজে দিকে যাচ্ছে।
  • lcm | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:০৬505221
  • বড়েস যেটা সার্চ করছে ওটা ব্রাউজার (ব্রেভ) বুকমার্ক/ফেভারিট এর মধ্যে সার্চ, cnn সাইট সার্চ নয়।
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::6:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:১০505222
  • "বড়েস যেটা সার্চ করছে ওটা ব্রাউজার (ব্রেভ) বুকমার্ক/ফেভারিট এর মধ্যে সার্চ"

    না।
    সেরেছে এটাও শেখাতে হবে?

    ১) যেকোনও সাইটের হোমপেজে যান। যেমন সিএনেন ডট কম।
    ২) কন্ট্রোল এফ টিপুন।
    ৩) যে টেক্সটা সার্চ করতে চাইছেন, সেটা টাইপ করুন।

    এর ফলে ঐ হোমপেজে আপনার টেক্সট কতবার আর কোথায় কোথায় মেনশন করা আছে, সেটা পেয়ে যাবেন।
  • s | 100.36.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:১৪505223
  • আমি ইয়েমেন ওয়ার সার্চ করে পেলাম - গত একমাসে ইয়েমেনের যুদ্ধ নিয়ে খবর, ওপিনিয়ন ইত্যাদি, অ্যাপ্রক্সিমেটলি-
    ওয়াশিংটন পোস্ট - ৩০
    নিউ ইয়র্ক টাইমস - ২৮
    এবিসি নিউজ - ৬০
    আল জাজিরা (ইংরেজি) - প্রচুর
    সিনেনেও অনেক আছে। lcm এর মেথডেই সার্চ করে ডেট দিয়ে আরো রিফাইন করা যায়। একটা খবর আবার চোখে পড়ল-
    Syrians are watching in horror as Putin deploys the Aleppo playbook in Ukraine
    https://www.cnn.com/2022/03/18/middleeast/mideast-summary-03-18-2022-intl/index.html
     
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:২৪505224
  • কিন্তু বুঝতে পারছিনা এই নিউস আর্টিকল গুনে গুনে ঠিক কি এচিভ হবে ? হ্যা সোজা কথায় আজকে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের যে জিওপলিটিকাল গুরুত্ব সেটা ইয়েমেন এর গৃহযুদ্ধের নেই। তাতে কি করা যাবে ? 
     
    আজকে বীরভূমের মাস মার্ডার নিয়ে বাংলা কাগজ টিভি চ্যানেল গুলো ভর্তি। ওটাই বড়ো করে হেডলাইন। একটু খানি এবিপি আনন্দ লাইভ টিভি শুনে এলাম - সেটা নিয়েই কাঁটা ছেঁড়া চলছে। সেখানে হিন্দুতে বা ডেকান ক্রনিকলে একটা ছোট করে খবর এসেছে অন্য স্টেট্ এর খবরে। হেডলাইন কিছু নয়। লাইভ এনডি টিভি তে জাস্ট নিছে ছোট্ট করে দেখাচ্ছে খবরটা। 
     
    তাহলে এটাও বলা হোক  যে ইন্ডিয়ার সমস্ত লোকাল মিডিয়াগুলো এন্টি -বেঙ্গলি ?  তাতেই বা কার কি আসবে যাবে ? 
  • s | 100.36.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:২৪505225
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::6:c4f5 | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:১০১)
    "যেকোনও সাইটের হোমপেজে যান। যেমন সিএনেন ডট কম।
    ২) কন্ট্রোল এফ টিপুন।
    ৩) যে টেক্সটা সার্চ করতে চাইছেন, সেটা টাইপ করুন।

    এর ফলে ঐ হোমপেজে আপনার টেক্সট কতবার আর কোথায় কোথায় মেনশন করা আছে, সেটা পেয়ে যাবেন।"
    এই পদ্ধতিতে সিনেনের হোম পেজে আমেরিকা সার্চ করলে আমেরিকা আসছে মোটে তিনবার আর রাশিয়া ১২ বার। এর থেকে কনক্লুশন কি দাঁড়াবে?
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:২৫505226
  • ইউক্রেণ নিয়ে কটা খবর?
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::7:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:৩৮505227
  • "এর থেকে কনক্লুশন কি দাঁড়াবে?"

    সিএনেন ডট কমে তো আমেরিকার খবর "আমেরিকা" লিখে দেবেনা। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের নিউজ সেই দেশগুলোর নাম উল্লেখ করেই দেবে।

    ইয়েমেন কেন কোনও রিসেন্ট যুদ্ধই ইউক্রেন যুদ্ধের মতন গুরুত্ব পায়নি ওয়েস্টার্ণ মিডিয়ায়। এইটাই কনক্লুশান।
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:৪২505228
  • কোন কোনটার পাওযা উচিত ছিল ? 
  • dc | 122.174.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২২ ০৭:১৯505230
  • ফিফটি শেডস অফ পুটিন অ্যাপোলজিস্টস। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন