১৯৮০-র দশকে লেখাপড়ার জগতে যখন সবেমাত্র পা রেখেছি, অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্যকে দেখলে খানিক সন্ত্রস্ত বোধ করতাম। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপ্রসিদ্ধ বিদুষী, দেশীয় এবং বিদেশি সাহিত্যে সাবলীল সঞ্চরমাণ এবং সদা প্রশ্নশীল এই অধ্যাপিকা আলাপচারিতার গোড়াতেই প্রায় অমোঘ এক প্রশ্ন করতেন: ‘তুমি এখন কী কাজ করছ?’ কোনো সপ্তাহে বা মাসে দুই বা তিনবার দেখা হলেও উনি একই জিজ্ঞাসা দিয়ে কথাবার্তা শুরু করতেন। এড়াবার উপায় ছিল না, আলগা জবাব দিয়ে পার পাওয়া যেত না; কারণ উনি ভারতীয় ইতিহাস, সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্মকর্ম ও দার্শনিক ধ্যানধারণা নিয়ে টাটাকাতম গবেষণার সম্বন্ধে সম্যক অবহিত থাকতেন। কে কী কাজ করছে, এর মধ্যে কিন্তু কারওকে অস্বস্তিতে ফেলার কোনো প্রবণতা থাকত না। তিনি সর্বদাই জিজ্ঞাসু, তাই নবীনতর প্রজন্মের ভাবনাচিন্তা কেমনতর, তাই-ই ছিল ওই প্রশ্নের প্রধান ভিত্তি। কোনো কিছুই নির্বিচারে মানতে তাঁর বরাবরের অনীহা। মুক্তির বুদ্ধি নয়, বুদ্ধির মুক্তিতেই ছিল তাঁর চিরস্থায়ী আস্থা।
এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগারে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আমার মাস্টারমশাই অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ব্রতীনবাবুর অনুসরণে তাঁকে সম্বোধন করতে শুরু করলাম সুকুমারীদি বলে। এশিয়াটিক সোসাইটিতে ওই দিন ব্রতীনবাবু সুকুমারীদির সঙ্গে গন্ধারী প্রাকৃত ভাষার কয়েকটি শব্দ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ক্রমশ জানলাম ব্রতীনবাবুর কাছ থেকে যে, সুকুমারীদি সংস্কৃত-র মতোই প্রাকৃত ভাষাতেও সমান দক্ষ। পরে সুকুমারীদি বলেছিলেন, কিংবদন্তি পণ্ডিত রাধাগোবিন্দ বসাকের কাছে তাঁর প্রাকৃত চর্চার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। পাশ্চাত্যের ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয় তাঁকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর বিবর্তন এবং প্রাণবন্ত রূপটি বুঝতে সাহায্য করেছিল। তাই তথাকথিত আর্য-সমস্যাকে তিনি বুঝতেন তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের আলোকে। সুকুমারীদি যেহেতু এক আদ্যন্ত সমাজ-সচেতন ব্যক্তি, তাঁর কাছে ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ছিল সমাজ ও সংস্কৃতিকে বোঝার এক প্রধান অবলম্বন। তাই সংস্কৃত ভাষার অসামান্য সম্পদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখেও তিনি তার নিরিখে ভারতীয় সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার আগ্রহ বোধ করেননি। সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবির নেপথ্যে যে সক্রিয় থাকে এক বা একাধিক ‘অন্য’-কে চিহ্নিত করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার দুরভিসন্ধি, সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন সদাসতর্ক এবং তার বিরুদ্ধে চেতাবনিও দিয়ে গিয়েছেন নিরন্তর।
সংস্কৃত সাহিত্যের আধারে ভারতের সমাজ এবং সংস্কৃতির স্বরূপসন্ধান তাঁর প্রধান আকর্ষণের বিষয়। কিন্তু কেবলমাত্র সংস্কৃত সাহিত্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির একদেশদর্শী আলোচনায় তাঁর আপত্তি ছিল প্রবল। যেহেতু তিনি ভারতের সমাজ ও সংস্কৃতির অনেকান্তিক এবং বহুমাত্রিক রূপ সম্বন্ধে সম্যক অবহিত ছিলেন, তাই বহুক্ষেত্রেই ধ্রুপদি সংস্কৃত সাহিত্যের আলোচনা করেছেন অন্যান্য ধ্রুপদি সাহিত্যের—বিশেষত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় রচিত সাহিত্যকীর্তির আলোকে। সুকুমারীদির প্রসিদ্ধি সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের উপর তাঁর বৈদগ্ধ্যের কারণে নিশ্চয়ই, কিন্তু তাঁর কর্মজীবনের সূচনায় তাঁকে আমরা দেখব ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা রূপে এবং তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপিকা হিসেবে। এর পরের পর্বে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপিকা রূপে তাঁর যোগদান। সংস্কৃত সাহিত্যের বহু ব্যাখ্যা সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর বহু গ্রন্থ প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে স্বমহিমায় বিরাজ করতে থাকেন। সুকুমারীদির গবেষণা-পদ্ধতি এবং রচনাশৈলীর এক প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তাঁর ইতিহাসসম্মত কালানুক্রম বোধ। তার সঙ্গে বিজড়িত ছিল তাঁর প্রখর ইতিহাসবোধ। বৈদিক সাহিত্য এবং পুরাণকে যে মিলিয়ে মিশিয়ে তালগোল পাকানো যায় না, তাঁর রচনায় তা বহুবার উচ্চারিত। একইভাবে মহাভারত এবং রামায়ণের রচনাকাল যে সুদীর্ঘ কাল ধরে এবং তাতে সামাজিক পরিস্থিতির জঙ্গম রূপটিই প্রকট, তাও তিনি সযত্নে অনুপুঙ্খসহ বিচার করেছিলেন। কোনো মুগ্ধতাবোধে চালিত না হয়ে যুক্তিনিষ্ঠ মননশীলতাকে হাতিয়ার করে তাঁর সংস্কৃত-সাহিত্য পাঠ এক ভিন্ন পর্যবেক্ষণ উপহার দেয়।
তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি গ্রন্থ ‘দ্য ইন্ডিয়ান থিওগোনি’-তে বৈদিক দেবদেবীর পর্ব পেরিয়ে পুরাণাশ্রয়ী শিব ও বিষ্ণুর উদ্ভব ও প্রাধান্যকে তিনি আলোচনা করেছিলেন সাহিত্যের এই পৌর্বাপর্য মেনে। এই গ্রন্থে সংস্কৃত সাহিত্যের অতিকথার সাংস্কৃতিক-সামাজিক প্রেক্ষিতও তিনি ব্যাখ্যা করেন নৃতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।
শিব। এলিফ্যান্টা গুহা-ভাস্করর্য। সাধারণাব্দ ষষ্ঠ শতক
বৈকুণ্ঠ বিষ্ণু। প্রস্তর-ভাস্কর্য। কাশ্মীর। সাধারণাব্দ অষ্টম শতক (সৌজন্য দ্য মেট)
সাহিত্যের আলোচনায় ইতিহাসমনস্কতার বিস্ময়কর প্রয়োগ দেখা যাবে সুকুমারীদির ‘বুদ্ধিস্ট হাইব্রিড স্যাংস্কৃট লিটারেচার’ এবং ‘হিস্ট্রি অব ক্লাসিক্যাল স্যাংস্কৃট লিটারেচার’ বই দুটিতে।
সংস্কৃত সাহিত্য সম্পদের ব্যাখ্যাতা এবং বিশ্লেষক হিসেবে সুকুমারীদি যেখানে বিদ্বজ্জনের থেকে স্বতন্ত্র, তা হল তাঁর সমাজসচেতন এবং নির্মোহ দৃষ্টি। সংস্কৃত সাহিত্যের সৃজনশীলতার বহু নজির শ্রদ্ধার সঙ্গে দর্শিয়েও সুকুমারীদি স্পষ্ট জানান দিয়েছিলেন যে এই ভাষা ও সাহিত্য মূলত উচ্চকোটির জীবনের সঙ্গে যুক্ত। বহু ক্ষেত্রেই তা ব্রাহ্মণ, পুরোহিত, রাজা, রাজদরবার এবং বিত্তশালী মানুষদের প্রেক্ষিত থেকে এবং ওই গোষ্ঠীগুলির গুণগান করার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট। নিম্নতর এবং নির্বিত্ত মানুষ এই সাহিত্যে গৌণ এবং প্রায়ই নেপথ্যে তাদের স্থান নির্দিষ্ট। বহুপ্রচলিত এক ভ্রান্ত ধারণা ও যুক্তি যে চতুর্বর্ণ ব্যবস্থায় একপ্রকার সামাজিক সুস্থিতি এবং সহাবস্থান বিরাজ করত, এবং জাতিভেদের দ্বারা সেই সুস্থিত সামাজিক বিন্যাস নষ্ট হয়ে যায়। এই ভিত্তিহীন মন্তব্যের নির্মোচন ঘটিয়েছিলেন সুকুমারীদি। বর্ণ এবং জাতি দুই সামাজিক ব্যবস্থাতেই বৈষম্যের প্রকট প্রকাশ; শূদ্রের প্রতি এবং অবর্ণদের প্রতি ব্রাহ্মণ্য সমাজাদর্শে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার সুপ্রচুর প্রমাণ বৈদিক সম্ভার এবং ধ্রুপদি সংস্কৃত থেকে দেখিয়ে দেন সুকুমারীদি।
আরও একটি জনপ্রিয়, সযত্নলালিত কিন্তু প্রমাদপূর্ণ ধারণা যে উপমহাদেশে ইসলামের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েম হবার আগে সমাজে নারীর মর্যাদা ছিল অতি উচ্চ। তা যে আদৌ বাস্তবানুগ নয়, তা-ও সুকুমারী ভট্টাচার্য-র তথ্যনিষ্ঠ সন্দর্ভ থেকে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান পুরুষের তুলনায় ক্রমান্বয়ে গৌণ এবং হীনতর হচ্ছিল যে পরবর্তী বৈদিক আমল থেকেই, তার আলোচনা পাওয়া যাবে সুকুমারীদির বিখ্যাত বইয়ে—‘প্রাচীন ভারত: সমাজ ও সাহিত্য’ এবং ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ (দুই খণ্ডে)। বর্ণ-জাতি ব্যবস্থার কঠোরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল পিতৃতন্ত্রের আধিপত্য, যা নারীর মর্যাদার পক্ষে একান্তই প্রতিকূল হয়ে ওঠে। ঋগ্বেদের পরবর্তী পর্যায়ে নারীর বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত—প্রায় উধাও; গার্হস্থ্য কর্মই তাঁর প্রধান অবলম্বন এবং বিবাহ তাঁর জন্য বেদচর্চার সমতুল। ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রমতে বিবাহে কন্যা সম্প্রদানের মাধ্যমে নারী কার্যত এক হস্তান্তরযোগ্য সামগ্রী—পিতা থেকে স্বামীতে সেই সার্বিক কর্তৃত্ব বদলে যায় মাত্র।
বিরাট রাজের সভায় কীচকের হাতে দ্রৌপদীর অপমান। রাজা রবি বর্মা। ক্যানভাসে তেলরঙ। শ্রী চিত্র আর্ট গ্যালারি (তিরুবনন্তপুরম)
কেবলমাত্র সংস্কৃত বচনের উদ্ধৃতি পেশ না করে সুকুমারীদি প্রসঙ্গসহ সংস্কৃত সাহিত্য তথা শাস্ত্রের উক্তি পাঠকের সামনে রাখতেন। দুই-একটি উদাহরণ এখানে দেওয়া যাক। ব্রাহ্মণ্য সূত্র সাহিত্যের বিধি অনুযায়ী নারীকে বিবাহের পূর্বে (কৌমারে) রক্ষা করতেন পিতা; বিবাহের পর (যৌবনে) স্বামী; বার্ধক্যে (স্থবিরে) পুত্রগণ। এই অবধি উক্তিটি বিচার করলে পিতা, স্বামী এবং পুত্রদের উপর নারীর রক্ষণাবেক্ষণ তথা দেখভাল করার পবিত্র দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল বলেই প্রতীতি জন্মায়। কিন্তু বক্তব্যের শেষাংশটিতে আসল চাবিকাঠি রয়েছে। এই রক্ষণাবেক্ষণ নারীর ক্ষেত্রে দরকার কারণ নারী স্বাতন্ত্র্যের অধিকারীই নন (ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি)। অতএব, রক্ষণ শব্দটি আসলে নারীর উপর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ রাখার সুপারিশ মাত্র। শাস্ত্রবচন অনুযায়ী নারী এবং শূদ্র একই প্রকার সামাজিক বৈষম্য দ্বারা চিহ্নিত; উভয়ে মর্যাদার লাগাতার অবনয়ন শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত। সুকুমারীদির তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ বুঝিয়ে দেয়, কীভাবে মহাভারত এবং রামায়ণের কাহিনি দুটিতে বীরগাথামূলক বিবরণে নারীর যে দৃপ্ত, প্রশ্নশীল, উচ্চশির পরিচয় পাওয়া যায়, ওই দুই মহাকাব্য যখন ব্রাহ্মণ্য হস্তাবলেপন দ্বারা চিহ্নিত হল তখন নারীরা কেবলমাত্র পাতিব্রত্য ধর্ম দিয়েই বর্ণিত। দ্রৌপদী যুধিষ্ঠিরের কাছে ‘প্রিয়া ভার্যা পাঞ্চালী’ বলে অভিহিত। এই দ্রৌপদীর মুখ দিয়েই বলানো হল যে তিনি পঞ্চপতি নিয়ে সুখী, কারণ তিনি স্বামীদের চেয়ে বেশি খাবার খান না, বেশি ঘুমান না, বেশি সাজসজ্জা করেন না; কখনও শাশুড়ির সঙ্গে বিবাদ করেন না (ন পরিবদে শ্বশ্রূং), তিনি সর্বদাই যন্ত্রবদ বশবর্তী থাকেন (সর্বদা পরিযন্ত্রিতা)। একই ভাবে সীতাকে রাবণ যখন হরণ করতে উদ্যত, তখন রাবণের প্রতি সীতা যে তীব্র ভর্ৎসনা, ধিক্কার ও ক্রোধ প্রকাশ করেছিলেন তা রামের প্রতি তাঁর গভীর দাম্পত্যপ্রেম থেকে সঞ্জাত—তার মধ্যে পাতিব্রত্যের প্রকাশ সামান্যই। অথচ লোকাপবাদের ভয়ে বা অজুহাতে রামচন্দ্র যখন সীতাকে ত্যাগ করছেন তাঁর যুক্তি, বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, ছিল—সীতা কুকুরে চেটে যাওয়া (শ্বাবলীঢ়ং) যজ্ঞের ঘৃত বা হব্যের মতোই (হবির্যথা) অপবিত্র। তাই সীতাকে ভোগ করায় রামচন্দ্র আর উৎসাহ পান না (নোৎসাহে পরিভোগায়)। সুকুমারীদির পাঠ আমাদের সামনে ভিন্নতর এক জগতকে উদ্ভাসিত করে।
সীতার অগ্নিপরীক্ষা। মেবার রামায়ণ অলঙ্করণ। সপ্তদশ শতক। (সৌজন্য ব্রিটিশ লাইব্রেরি)
সংস্কৃত সাহিত্যের আধারে তিনি গণিকাদের নিয়ে যে মর্মস্পর্শী গবেষণা করেছিলেন, তা বিশেষ অভিনিবেশ দাবি করে। গণিকা যে কোনো পণ্যাঙ্গনা নয়, নিছক শারীরিক আবেদনই গণিকার মূলধন নয়। গণিকা বহুক্ষেত্রেই সাক্ষর, বহু বিদ্যায় ও কলায় পারদর্শী। এই গুণগুলির সমাহার যাতে কুলস্ত্রীর মধ্যে না থাকে, তাঁর জন্য ব্রাহ্মণ্য সমাজাদর্শ সতত সচেষ্ট। সুকুমারীদি স্পষ্ট করেই লিখেছিলেন, পত্নীর কাছে মানসিক এবং সাংস্কৃতিক সাহচর্য এবং সমমনস্কতা না পেয়ে পুরুষ যাতে অন্য কোনো নারীর কাছে সেই সাহচর্য পেতে পারে, সেই খিড়কি-দুয়ার সমাজই দেখিয়ে দেয়।
আম্রপালী। মধুবনী চিত্রকলা। শিল্পী মালবিকা রাজ
সুকুমারীদির গভীর অধ্যয়ন, নিরাবেগ, অনাবিল ব্যাখ্যা, তীক্ষ্ণধী বিশ্লেষণের সামগ্রিক পরিচয় দেওয়া এই স্বল্প পরিসরে দুঃসাধ্য কাজ। বামপন্থায় তাঁর স্থির এবং দৃঢ় অবস্থান, সমাজকল্যাণে তাঁর আমৃত্যু পণের সেরা স্বাক্ষর তাঁর বহু গ্রন্থ-প্রবন্ধাদিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই সমাজ সচেতনতার কারণেই তিনি ভারতীয় সাংস্কৃতিক অদৃষ্টবাদের অনুসন্ধান করেছিলেন। যখন তাঁর শরীর ক্রমশ ভাঙছে, তখনও অদম্য মনোবলে তিনি লিখে চলেছিলেন বহু পুস্তিকা—বাংলায়। এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাগুলিতে মূলত মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবী সুধী প্রধান মশাই-এর অনুরোধে তিনি বিবাহ, দাম্পত্য, শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে নারীর অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ পাঠককে অবহিত ও সচেতন করার মানসে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছেন। ২০১৪ সালে তাঁর প্রয়াণ এক ব্যতিক্রমী ও বিরতিবিহীন মননকে থামিয়ে দিল।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম শেষে তা-ই আবার বলি। সুকুমারীদি যে দেখা হলেই অবধারিত জিজ্ঞাসা করবেন এখন কী কাজ করছ, তাঁর আসল কথা ছিল যে কী ভাবছে, কেমনভাবেই বা ভাবছে। নতুন প্রশ্ন না উঠলে, নতুন বিতর্ক না তুললে জ্ঞানচর্চা এক আবদ্ধ জলাশয়ে পর্যবসিত হয়। বিতর্ক যিনি তুলছেন তাঁকে দেশের ও দশের শত্রু হিসেবে দেগে দিলে প্রশ্নগুলিকে সাময়িক ঠেকানো যায় ঠিকই, কিন্তু সমস্যার নিরসন হয় না। প্রশ্নগুলি বাঙ্ময় হয়ে আবার ফিরে আসে, হয়তো একটু ভিন্নভাবে, হয়তো বা তীক্ষ্ণতর আকারে। ঋজু ও মিতবাক মানুষটি আমাদের ভাবতে শিখিয়েছিলেন। তাঁর রচনা আমাদের নতুন প্রশ্ন তুলতে বাড়তি সাহস জোগায়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা মানে যে নিছক হিন্দুত্বের আস্ফালন নয়, একশিলাবৎ ভারতীয় সংস্কৃতির বিজ্ঞাপন নয়, প্রাচীনের পুনরুজ্জীবন নয়—তার জীবন্ত প্রমাণ সুকুমারীদির ভূরি পরিমাণ রচনা। জন্মশতবর্ষে সমুজ্জ্বল সুকুমারী ভট্টাচার্য-র ভাবনা আমাদের শুধু বৌদ্ধিক চর্চার জন্য নয়, জীবনযাপনের জন্যও অপরিহার্য।
আমার বিশেষ কোনও পড়াশোনা নেই l কোনও প্রকার বেত্তাও নেই l জাস্ট পড়বো বলে ওঁর লেখা কটি বই লাল পার্টির স্টল থেকে পুজোর সময়ে কিনেছিলাম l ওঁর যে বইটি আমাকে রীতিমতো দোল খাইয়ে দিয়েছে,ইনফ্যাক্ট এই নিষ্প্রভ নিম্নমেধার সত্ত্বায় অশান্ত বাতাসের সঞ্চার করেছে সেটি হলো 'রামায়ণ ও মহাভারত, আনুপাতিক জনপ্রিয়তা' l সংস্কৃতানুগ ঝরঝরে চলিত বাংলায় লেখা ওই বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছিলো, হয় আর কোনও বই পড়ার দরকার নেই,জীবনের উত্তর পেয়ে গিয়েছি আর নচেৎ, পৃথিবীর সব বই ই আবার নতুন করে পড়তে হবে l মহাভারত কেন রামায়ণ অপেক্ষা শ্রেয়সতর এবং মূল্যবোধের সঙ্কটে পড়া মহাভারতের প্রতিটি চরিত্র কী ভাবে রিএক্ট করেছে,ভুল ঠিক নির্ব্বিশেষে, এবং তা করে সাহসের সাথে কর্তব্য ও ধর্ম পালন করেছে --এটার বোধ অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের থেকে জীবনকে মুক্তি দেয় l
বাঃ, সুন্দর বলেছেন।
সুকুমারী ভট্টাচার্য সম্পর্কে বিশেষণ শুনেছিলাম ''উজান পথের যাত্রী'' , সম্ভবত দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন। এই লেখাগুলি পড়ে মনে হল এর চেয়ে সুপ্রযুক্ত সঠিক বর্ণনা বোধ হয় আর হয় না।
নাট্যকার বাদল সরকারের আত্মজীবনী " পুরোনো কাসুন্দি " বইটিতে সুকুমারী ভট্টাচার্যের উল্লেখ পেয়েছি।
One of the greatest হারামি মাগী s of all time. Cpim party r dalal. Er abar শতবর্ষ .