এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • হারশেল সাহেবের উত্তরাধিকার

    স্বাতী রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২০ জুন ২০২০ | ৩১৪৩ বার পঠিত
  • তারা, নেবুলা, নক্ষত্রজগতের পরিসীমা এই সব নিয়ে কাজ করতে করতে একদিন তিনি একটা পর্যবেক্ষণ করলেন। আসলে ভালো করে সূর্য-পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ফিল্টার বানাতে চাইছিলেন। বিভিন্ন রং-এর কাঁচ দিয়ে পরীক্ষা চলছিল – তখন দেখেন যে কিছু রংএর কাঁচের মধ্য দিয়ে তিনি বেশি উত্তাপ অনুভব করছেন কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন কম আবার কিছু রংএর কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখলে তাপ আর পৌছাচ্ছে না, কিন্তু প্রচুর আলো এসে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। তখন আরও ভালো করে পরীক্ষা করার জন্য তিনি একটি যন্ত্র বানান যাকে আজকের স্পেক্ট্রোমিটারের প্রাথমিক রূপ বলা যায়। সুর্যের থেকে আসা আলোকে বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেন যে বিভিন্ন রঙের আলো থার্মোমিটারে এসে পড়লে তার থেকে যে তাপমাত্রা মেলে তা হিসেবমত বিভিন্ন রঙের আলোর জন্য বিভিন্ন, বেগুণীর জন্য তাপমাত্রা সবথেকে কম আর বাড়তে বাড়তে কমলা-লালের দিকে পৌঁছায়। এই তাপমাত্রাগুলিকে জুড়ে একটি বক্ররেখা আঁকলে সে কিন্তু ক্রমশঃ উপরের দিকে চলছে – দৃশ্যমান আলোর জগতে সে বক্ররেখা কোন শীর্ষবিন্দুর আভাস দিচ্ছে না বা সে রেখার প্যাটার্ণে নীচের দিকে নামার কোন লক্ষ্মণ নেই। তাহলে কি যে দৃশ্যমান আলোর জগতের বাইরে গিয়ে সবথেকে বেশি তাপমাত্রার বিন্দুটি মিলবে? হারশেল এই না-দেখা তরঙ্গরাজ্যের নাম দেন “অদৃশ্য আলোক”। তিনি প্রথম ধরতে পারেন যে এই চোখে-না-দেখতে-পাওয়া তাত ( যাকে হারশেল নাম দেন রেডিয়েন্ট হিট ) আর আমাদের চোখে-দেখতে-পাওয়া আলো দুই-ই আসলে একই গোত্রের। অবশ্য সেই ১৮০০ সালে তখনো “ইনফ্রারেড” শব্দটা ব্যবহার হয় নি। এই নাম চালু হয় আরও প্রায় ৮০ বছর পরে। কে যে প্রথম শব্দটা ব্যবহার করেন, তা স্থিরনিশ্চিত জানা নেই।

    অর্গান থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান

    বেশ দিন কাটছিল চার্চে অরগান বাজিয়ে। সুরের ঝর্নায় ডুবে থেকে। মিউজিক কম্পোজ করে। সুরের থেকে গড়িয়ে গেলেন অঙ্কে। সেখান থেকে আলোকবিজ্ঞানে, জ্যোতির্বিজ্ঞানে। মনে হল, যা কিছু বইয়ে পড়ছেন তাকে তো বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া যাবে না। নিজে দেখতে হবে, বুঝতে হবে, তবে তো মেনে নেওয়া। জোগাড় হল একটা আড়াই ফুটের টেলিস্কোপ, আকাশ দেখার খেলার সঙ্গী। ততদিনে আকাশের নেশায় পেয়েছে, এই ছোট টেলিস্কোপে মন ভরছে না। চাই আরও বড় টেলিস্কোপ। কিন্তু বড্ড দাম যে, তাই বাড়িতেই নতুন টেলিস্কোপ বানানো শুরু হল। ১৭৭৪ সালে তৈরি হল প্রথম গ্রেগরিয়ান টেলিস্কোপ। পরের বছরই তৈরি হল সম্পুর্ণ নিজে হাতে বানানো নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপ। তাদের সব কিছু, এমনকি রিফ্লেক্টর আয়নাগুলিও সম্পুর্ণ নিজ হাতে কেটে-মেজে-ঘষে বানানো। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখে পড়ল একটা আশেপাশের তারাদের থেকে বড় একটা একটু অন্য রকম দেখতে কিছু একটা। এটার কথা আগের কোন আকাশ-মানচিত্রে বলা নেই – তাই প্রথমে ভাবলেন এটা বোধয় একটা ধুমকেতু। পরে অঙ্ক কষে বেরোল এটা একটা নতুন গ্রহ, ইউরেনাস। ১৭৮১ সাল। উইলিয়াম হারশেল রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। রাজানুগ্রহও পেলেন। এরপর থেকে পুরোপুরিই নিজেকে সঁপে দিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানের পায়ে।





    তারা, নেবুলা, নক্ষত্রজগতের পরিসীমা এই সব নিয়ে কাজ করতে করতে একদিন তিনি একটা পর্যবেক্ষণ করলেন। আসলে ভালো করে সূর্য-পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ফিল্টার বানাতে চাইছিলেন। বিভিন্ন রং-এর কাঁচ দিয়ে পরীক্ষা চলছিল – তখন দেখেন যে কিছু রংএর কাঁচের মধ্য দিয়ে তিনি বেশি উত্তাপ অনুভব করছেন কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন কম আবার কিছু রংএর কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখলে তাপ আর পৌছাচ্ছে না, কিন্তু প্রচুর আলো এসে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। তখন আরও ভালো করে পরীক্ষা করার জন্য তিনি একটি যন্ত্র বানান যাকে আজকের স্পেক্ট্রোমিটারের প্রাথমিক রূপ বলা যায়। সুর্যের থেকে আসা আলোকে বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেন যে বিভিন্ন রঙের আলো থার্মোমিটারে এসে পড়লে তার থেকে যে তাপমাত্রা মেলে তা হিসেবমত বিভিন্ন রঙের আলোর জন্য বিভিন্ন, বেগুণীর জন্য তাপমাত্রা সবথেকে কম আর বাড়তে বাড়তে কমলা-লালের দিকে পৌঁছায়। এই তাপমাত্রাগুলিকে জুড়ে একটি বক্ররেখা আঁকলে সে কিন্তু ক্রমশঃ উপরের দিকে চলছে – দৃশ্যমান আলোর জগতে সে বক্ররেখা কোন শীর্ষবিন্দুর আভাস দিচ্ছে না বা সে রেখার প্যাটার্ণে নীচের দিকে নামার কোন লক্ষ্মণ নেই। তাহলে কি যে দৃশ্যমান আলোর জগতের বাইরে গিয়ে সবথেকে বেশি তাপমাত্রার বিন্দুটি মিলবে? হারশেল এই না-দেখা তরঙ্গরাজ্যের নাম দেন “অদৃশ্য আলোক”। তিনি প্রথম ধরতে পারেন যে এই চোখে-না-দেখতে-পাওয়া তাত ( যাকে হারশেল নাম দেন রেডিয়েন্ট হিট ) আর আমাদের চোখে-দেখতে-পাওয়া আলো দুই-ই আসলে একই গোত্রের। অবশ্য সেই ১৮০০ সালে তখনো “ইনফ্রারেড” শব্দটা ব্যবহার হয় নি। এই নাম চালু হয় আরও প্রায় ৮০ বছর পরে। কে যে প্রথম শব্দটা ব্যবহার করেন, তা স্থিরনিশ্চিত জানা নেই।



    নফ্রারেড তরঙ্গ কেন বেরোয়?



    ( যাঁদের বিজ্ঞান পড়তে ঘোর অনীহা, তাঁরা এই অনুচ্ছেদটি এড়িয়েও যেতে পারেন। )



    একটা পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস যার মধ্যে ঠাসাঠাসি করে থাকে নিউট্রন আর প্রোটন। আর তার বাইরে, বিভিন্ন এনার্জী স্তরে, থাকে ইলেকট্রনেরা, তারা আবার নিজেদের অক্ষের চারপাশে ঘোরে। যেহেতু কেন্দ্রটি প্রোটনের জন্য ধনাত্মক তড়িতায়িত আর ইলেকট্রন ঋণাত্মক তড়িৎবাহী, তাই ভিতরের দিকের ইলেকট্রনগুলোকে কেন্দ্র বেশি জোরে টানে, - চট করে তারা সেই টান ছেড়ে বেরোতে পারে না। কিন্তু একদম বাইরের দিকে থাকা ইলেকট্রনের ( ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বলে এদের ) উপর এই টানটা তুলনায় কম। তাই তারা পাশের পরমাণুর সঙ্গে হাত মেলাতে পারে, যাকে বলে বণ্ড তৈরি করা - একাধিক পরমাণু জুড়ে তৈরি হয় একটি অণু। একটা স্থিতিশীল পরমাণুতে ইলেকট্রনরা সবসময় এমন ভাবে থাকতে চায় যাতে তাদের মোট শক্তি সব থেকে কম হয়। আর পরমাণু জূড়ে অণু তখনই তৈরি হয়, যখন অণুর মধ্যের ইলেকট্রনের মোট শক্তি আলাদা আলাদা করে পরমাণুগুলির ইলেকট্রনসমূহের মোট শক্তির যোগফলের থেকে কম হয়।



    কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে যে অনু-পরমাণুরা এবং তাদের প্রতিটা ইলেকট্রন, প্রোটন নিউট্রন একটা নির্দিষ্ট শক্তির স্তরে বাস করে। আবার যে কোন পরিমাণের শক্তি না , একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের শক্তি ( কোয়ান্টাম ) পেলে তবেই তারা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যেতে পারে। সব থেকে কম শক্তির স্তর থেকে অন্য স্তরে গেলে তারা কিন্তু স্বস্তিতে থাকে না। তখন আবার সে তাড়াতাড়ি সে নির্দিষ্ট কোয়ান্টাম শক্তি ছেড়ে দিয়ে আগের অবস্থায় ফেরে। এই যে শক্তি ছাড়ল, এটাকেই আমরা বিচ্ছুরণ হিসেবে দেখি।



    কোন পদার্থ যখন একদম জিরো কেলভিনে ( যাকে বলে পরম শূন্য তাপমাত্রা বা -২৭৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ) থাকে, তখন তার অনু-পরমানূগুলোর নড়নচড়ন সবচেয়ে কম থাকে । এবার একটুখানি তাপ পেলে পদার্থের ভিতরের শক্তি বেড়ে যায়। তখন অনু-পরমানুগুলি বেশি বেশি করে নড়তে-চড়তে শুরু করে। আমাদের চারপাশের যে তাপমাত্রা, ধরা যাক ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সেটা ওই জিরো কেলভিনের থেকে অনেকটাই বেশি। সেই তাপমাত্রায় অনু-পরমাণুগুলো বিভিন্ন ধরণের নড়নচড়ন করতেই থাকে। এর মধ্যে যেমন এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে সরে যাওয়া আছে ( ট্র্যান্সলেশনাল মোশন ) , আবার একটা অণুর মধ্যে তার পরমাণুগুলোর একের সাপেক্ষে অপরের পর্যায়ক্রমিক গতিও আছে (ভাইব্রেশনাল মোশন ) আবার রোটেশনাল মোশন অর্থাৎ কিনা অণুর নিজের অক্ষের চারপাশে ঘুরপাক খাওয়াও আছে।



    রোটেশনাল, ভাইব্রেশনাল ও ইলেক্ট্রনিক শক্তি ( একটা অণু যখন তার সাধারণ অবস্থার ইলেক্ট্রনের অবস্থান বদলে ফেলে, যাকে বলে এক্সাইটেড অবস্থানে চলে যায়, তখন পোটেনশিয়াল এনার্জী হিসেবে যে শক্তি অণুর মধ্যে জমা হয় ) মিলে একটা অণুর মোট শক্তি হয় আর এটা কোয়ান্টামের হিসেবে বাড়ে কমে। এর মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ট্রানজিশনে ( যাতে একটা ইলেকট্রন নিজের জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়) সব থেকে বেশি শক্তি লাগে (১০০০০-৫০০০০ প্রতি সেন্টিমিটারে আর রোটেশনাল ট্রানজিশনে (যাতে ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগের বদল ঘটে) সব থেকে কম শক্তি লাগে ( ১-২০ প্রতি সেন্টিমিটারে )।



    ভাইব্রেশনাল ট্রানজিশনে শক্তি লাগে দুয়ের মাঝামাঝি। (২০০০ – ৪০০০ প্রতি সেন্টিমিটারে )। খুব সরল ভাবে বললে, সাধারণতঃ অণুর মধ্যে পরমাণুগুলির যে বিভিন্ন বন্ড থাকে, সেগুলির দৈর্ঘ্য বা কৌণিক মান পর্যায়ক্রমিক গতিতে পাল্টায়, যাকে বলে কম্পনজনিত গতি বা ভাইব্রেশনাল মোশন । যখন অনেকগুলো বিভিন্ন পরমাণু নিয়ে একটা অণু তৈরি হয় তখন এই কম্পনজনিত গতি ব্যাখ্যা করাও খুব কঠিন হয়ে যায়, কারণ অণুর সব কটি অংশই আলাদা আলাদা করে কাঁপতে পারে আর সবটা মিলিয়ে একটা ভজঘট ব্যাপার হয়। তবে সে জটিলতা বাদ দিলেও স্বাভাবিক অবস্থায় অণুর যে ভাইব্রেশনাল শক্তি থাকে তার থেকে অণু যদি শক্তি শুষে নিয়ে উপরের শক্তিস্তরে চলে যায়, তখন সে আবার তড়িঘড়ি সেই শক্তি ছেড়ে দিয়ে আগের অবস্থায় ফিরতে চায়। এই ভাইব্রেশনাল শক্তির এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়াকেই বলে ভাইব্রেশনাল ট্রানজিশন। আর এক্ষেত্রে উত্তেজিত অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে যে শক্তি ছাড়ে, তার থেকে জন্ম নেয় ইনফ্রারেড তরঙ্গ।



    একটা জিনিস পরিষ্কার হওয়া দরকার, জিরো কেলভিনের উপরের তাপমাত্রার কোন বস্তুতে সব ধরণের নড়া-চড়াই কম বেশি থাকে । আর সেজন্যই তার থেকে একদম ছোট থেকে অনেক অনেক বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ, সবরকমই একটা বর্ণালীর আকারে বিচ্ছুরিত হয়। কিন্তু সেই বস্তুর তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে, একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আশেপাশের তরঙ্গের সংখ্যাই বেশি থাকে। একে বলে  বিচ্ছুরণ-বর্নালির শীর্ষ বা এমিশন পিক। আর আমাদের মানবদেহ স্বাভাবিক অবস্থায় ( জ্বর হলে বা না হলে ) যে তরঙ্গ সব থেকে বেশি ছাড়ে তা ওই ইনফ্রারেডের সীমানায় পড়ে।



    স্পর্শহীন ইনফ্রারেড থার্মোমিটার



    এত কথা আবার নতুন করে ঝালাতে হত না যদি না করোনা মারী রূপে ছড়িয়ে পড়ত। দীর্ঘসময় লকডাউনে কাটানোর পরে এখন আনলক পর্ব শুরু হয়েছে। এই সময়ে সাবান, স্যানিটাইজার আর মাস্ক ছাড়া আর একটা জিনিসের বাজার হুড়মুড়িয়ে চড়ছে, কি বলুন তো ? অফিস-কাছারী-শপিং মল সর্বত্র তার চাহিদা - ঢুকতে গেলেই আপনার কপালের দিকে সটান তাক করা হচ্ছে, প্রায় একটা পিস্তলের মতই দেখতে – শুধু যিনি তাক করছেন তিনি কিন্তু গব্বর সিং-এর মত অট্টহাসি হাসার বদলে গভীর মনোযোগ দিয়ে যন্তরটার গায়ে ফুটে ওঠা লেখা দেখতে ব্যস্ত। এইটা একটি ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। দূর থেকে, আপনাকে না ছুঁয়েই, আপনার শরীরের তাপমাত্রা মেপে ফেলবে ছুমন্তরে।



    কি আশ্চর্য না! গায়ের সঙ্গে না ছুঁয়ে কি করে আপনার তাপমাত্রা বলবে? ম্যাজিক নাকি? না ম্যাজিক নয়, একদম কেঠো বিজ্ঞান।



    বাজার চলতি ইনফ্রারেড থার্মোমিটারগুলো সাধারণভাবে একটা লেন্সের মধ্যে দিয়ে শরীর থেকে বেরোন ইনফ্রারেড তরঙ্গগুলোকে সংহত করে একটা থার্মোপাইলের উপর ফেলে।



    থার্মোপাইল

    এই থার্মোপাইলটা কি বস্তু? এটা অনেকগুলো থার্মোকাপলের একত্র সমাহার। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে দুটো বিভিন্ন তড়িৎ-পরিবহনক্ষমতাওলা ধাতুকে যদি দুটো বিন্দুতে জোড়া হয়, আর একদিকের জোড়কে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে অন্য জোড়কে গরম করা হয়, তাহলে দুটি জোড়ের মধ্যে একটা ইলেকট্রিক পোটেনশিয়ালের তফাৎ দেখা যায়। একে বলে থার্মোকাপল। এই কাজে দুটো আলাদা ধাতুই লাগবে – নাহলে পোটেনশিয়ালের তফাৎ বোঝা যাবে না। এই যে তাপমাত্রার তফাৎটা সরাসরি ইলেকট্রিক পোটেনশিয়ালের তফাতে বদলে যাচ্ছে, এই ব্যাপারটাকে বলে সিবেক এফেক্ট বলে। পোটেনশিয়ালের তফাৎ যেটা হয় সেটা ওই দুই জোড়ের তাপমাত্রার তফাতের সঙ্গে সমানুপাতিক। কাজেই এটা মাপতে পারলেই ওই দুটো জোড়ের তাপমাত্রার তফাৎ বোঝা যাবে।



    এখানে একটা ব্যাপার আছে - একজন মানুষের কপালের দিকে তাগ করে যখন ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে মাপা হচ্ছে, তখন আসলে কিন্তু মাপা হচ্ছে পরিপার্শ্বের তুলনায় সেটা কত কম বা বেশি। এদিকে যেখানে সেই তাপমাত্রা ফুটে উঠছে, সেটা কিন্তু মানুষের শরীরে তাপমাত্রা দেখাচ্ছে। কিকরে? এজন্য একটি পারিপার্শ্বিক (এম্বিয়েন্ট ) তাপমাত্রা কম্পেন্সেশন সার্কিট ব্যবহার করা হয়। সেই সার্কিটের থেকে যে তাপমাত্রা বেরোয় সেটি এবার ফুটে ওঠে সামনের ডিসপ্লেতে। সেই ফুটে ওঠা সংখ্যার উপর ভিত্তি করে আপনি অফিসে বা মলে ঢোকার অনুমতি পাবেন।

    অবশ্য আজকের থার্মোমিটারে প্রাপ্ত তাপমাত্রাকে বাস্তবের অনুসারী করার জন্য আরও অনেক আলাদা আলাদা অংশ জোড়া হয়। থার্মোপাইল ছাড়া অন্যান্য ডিটেক্টরও ব্যবহার করা হয়। সে আলোচনা করতে গেলে এই লেখার দৈর্ঘ্য আরও বাড়বে। তাই আপাতত সেটা বাদ রাখি।



    কি ভাবছেন? ভাগ্যিস ইনফ্রারেড তরঙ্গ আবিষ্কার হয়েছিল। তাই তো এই সময়ে সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা হল আবার ছোঁয়া বাঁচিয়ে নিজের কাজটাও হল। উইলিয়াম হারশেলকে একটু “ধন্যবাদ” বলে দিন মনে মনে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২০ জুন ২০২০ | ৩১৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কুশান | 103.87.***.*** | ২০ জুন ২০২০ ১৪:২১94479
  • হার্শেল সাহেব এবং স্বাতীদি, দুজনকেই ধন্যবাদ জানাই। লেখাটি নিঃসন্দেহে চিত্তাকর্ষক। বিশেষত সাধারণ ব্যাখ্যাগুলি বেশ প্রাঞ্জল। কিন্তু রবি ঠাকুরের ছোট গল্প পড়ার মতন অন্তরে অতৃপ্তি রহিয়া গেল। পরবর্তীকালে এই বিষয়ে আরো দীর্ঘতর লেখা পাওয়ার প্রত্যাশা রইল।
  • b | 14.139.***.*** | ২০ জুন ২০২০ ১৯:৫১94488
  • খুব ভাল হয়েছে। আমার মত অগা পাবলিকের কাছেও স্পষ্ট। নিজেকে ইনফ্রারেড শক্তির উৎস জেনে আরো ভালো লাগলো।
  • স্বাতী রায় | 2402:3a80:a49:959b:2687:3558:ac85:***:*** | ২০ জুন ২০২০ ২১:২৪94489
  • @কুশান আর @b অনেক ধন্যবাদ। উৎসাহ পেলাম। 

  • রৌহিন | 2401:4900:3142:2d46:4fc7:f687:932c:***:*** | ২০ জুন ২০২০ ২১:৪৮94491
  • এই যে কোয়ান্টা, ইলেক্ট্রনের ক্ষেত্রে সেটা কল্পনা করা সহজ - কিন্তু প্রোটন নিউট্রনে এসে বড্ড ঘেঁটে যাই। একটু ভাল করে বুঝতে হবে

  • পিনাকী মিত্র | ২১ জুন ২০২০ ১৪:৪০94515
  • দিব্যি হয়েছে। শক্তির এককটা বাদ পড়েছে। ওটা পারলে জুড়ে দিও। 

  • মো. রেজাউল করিম | ২১ জুন ২০২০ ১৮:১৫94520
  • বিজ্ঞানের খটোমটো কথাও যে কত সরল ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা যায় স্বাতী রায় এই লেখায় দেখিয়েছেন।

  • স্বাতী রায় | 2402:3a80:a99:f3a3:bb3f:6876:d245:***:*** | ২২ জুন ২০২০ ০৩:৩৪94526
  • সবাইকে ধন্যবাদ। 

    @পিনাকী wavenumber টা বলা আছে। যদিও SI ইউনিট বলতে গেলে জুল বলা উচিত ছিল। প্লাাঙ্কস কনস্টান্ট আর আলোর গতি দিয়ে গুুুণ করলেই পাওয়া যাবে। নেটেও সহজলভ্য।  স্পেক্টরোস্কোপিতে অবশ্য ওয়েভনাম্বারই ব্যবহার হয়। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন