এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • জয় গোস্বামী - সাক্ষাৎকার (২০০১)

    আর্কাইভ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫৪৫৮ বার পঠিত

  • প্রায় উনিশ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দূরভাষে জয় গোস্বামীর এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন চিরন্তন কুন্ডু। জয় তখন ছিলেন আইওয়া-তে একটি রাইটার্স ওয়ার্কশপে। চিরন্তন এবং জয়-এর অনুমতিক্রমে সাক্ষাৎকারটি এখানে প্রকাশ করা হল।
    জুন, ২০০১। আইওয়া সিটি।

    চিরন্তন: আপনি লেখালেখি করছেন অনেকদিন, সেই শুরুর থেকে শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে কি রকম পরিবর্তন দেখছেন আর নিজেও কীভাবে এই বদলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন - এক একটা কবিতার বইয়ের মধ্যে দিয়ে - এ নিয়ে যদি কিছু বলেন।

    জয়: বদলটা কিরকম হচ্ছে তা তো আমি বলতে পারব না। আমি নিজে এখনও লিখছি সুতরাং সেটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল।

    চিরন্তন: কিন্তু আপনার নিজের যে একটা চেষ্টা…

    জয়: আমার মনে হয় যে, যখন যে ভাষাটা খুঁজি, যখন এক একবার এক এক রকম ভাবে লিখি, তখন মনে হয় পেয়ে যাচ্ছি বোধহয়। খুঁজে পাচ্ছি, তারপরে সেটা চলে যায়। এটা আর থাকে না। তখন মনে হয় কিচ্ছু নেই, তখন আবার নতুন করে খুঁজতে শুরু করি। যত দিন যাচ্ছে এটা তত বাড়ছে। জানি না এটা শেষ হয়ে যাবার লক্ষণ কি না। কিন্তু এটা সত্যি যে আমি আমার ভাষা এখনও খুঁজে পাই নি।

    চিরন্তন: আপনি একসময়ে কবিতার বইয়ে ভূমিকা দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন…

    জয়: প্রত্যেকটি কবিতার বই, বিশেষ করে শেষের দিকে যে সব কবিতার বইগুলো লিখেছি, যেমন, ‘সূর্য পোড়া ছাই’, কিংবা ‘বিষাদ’, ‘জগৎবাড়ি’, ‘মা নিষাদ’, ‘বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা’ – এই বইগুলোতে ভেবেছি একটা ভূমিকা লিখব – এগুলো যে কতটা কবিতা হয়েছে আমার নিজেরই সন্দেহ হয়। ‘বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা’-র প্রথম কবিতা ‘আত্মজীবনীর অংশ’ যখন লিখেছিলাম, তারপরে ‘এক বৃষ্টির দিকে মরিয়া’ এবং ‘আলো সম্পর্কে প্রবন্ধ’ – এই যে কবিতাগুলো – তখন লেখার পর মনে হয়েছিল যে এগুলোকে কি কবিতা বলা যায়। আমি এখনও জানি না। যখন ‘বিষাদ’ লিখলাম তখন মনে হল একটা ভূমিকা লিখে দিই যে এটা ডায়েরির মতন লিখছি। আবার ‘সূর্য পোড়া ছাই’ লেখার সময় পাঁচ-ছটা ভূমিকা লিখেছিলাম, মনে হয়েছিল এই কথাগুলো বলা দরকার – একটাও দিই নি শেষ পর্যন্ত – আমার কাছে এখনও আছে ভূমিকাগুলো।

    চিরন্তন: পাঁচ-ছটা ভূমিকায় কি অন্য অন্য কথা…

    জয়: মানুষ মাঝে মাঝে নিজের মনে মনে কথা বলে, মনের সাথে কথা বলে, যে কথা কারও সাথে শেয়ার করা যায় না। তেমন লেখার ক্ষেত্রেও হতে পারে, কোনও কোনও লেখা মনে হতে পারে যে এই লেখা কারও সাথে শেয়ার করার নয়। এ লেখা শুধুই নিজের মনে মনে বলে বলে যাওয়া। সেরকম ভাবেই লিখেছিলাম ঐ ভূমিকাগুলো। তার আগে আমি কিছুদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি আর লিখব না যদি আমার কাছে লেখা নিজে থেকে না আসে – তাতে যদি আমি শুকিয়ে যাই যাব। আমি এটা এখনও ঠিক করেছি। দু একটা লেখা কখনও কখনও, তবে বই বের করব না ঠিক করেছি, কবিতার বই বের করব না যদি না আমার ভেতর থেকে কবিতা আসে। এটা আমি ঠিক করে ফেলেছি। আমার কবিতার বই বিক্রি হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটার প্রতি আমার একটা নির্ভরতা রয়েছে। এটা না থাকলে আরও স্বাধীন হতে পারা যায়। আমার প্রকাশকদের কাছ থেকে আমি জীবনধারণের জন্যে টাকাপয়সা নিই, তাঁরা আমার কবিতার বই বিক্রি করেন, যদি আমি তাদের কবিতার বই না দিই আমি সংকটে পরব। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা আমি মনে মনে ভেবেছি, আমি জানি না রাখতে পারব কি না – যদি নিজের থেকে কবিতা না আসে আমি লিখব না।
    প্রথম বয়েসে মনে হত যে আমার কবিতা ছাপা হোক, আমার কবিতা কিছু মানুষ পড়ুক। নিশ্চয়ই আমি চাইতাম, ডাকে কবিতা পাঠাতাম। কিছু ছাপা হত, কিছু হত না। তারপরে অনেক কবিতা ছাপা হয়েছে, অনেক বইটই বেরিয়েছে। এখন কবিতা কেউ চাইলেই সেটা ছাপানোর জন্যে দিয়ে দেব – এটা বোধহয় ঠিক না। এখন আমার একটু ভাবা উচিত।
    অল্প বয়েসে যখন হয়ত আমার কাছে পঁচিশটা কবিতা রয়েছে অথচ ছাপানোর জায়গা পাঁচটাও নেই, তখন হয়ত মনে করতাম যে এটা খুব সংকট, এত কবিতা রয়েছে, ছাপানো হচ্ছে না। আমি অবশ্য কখনই এটা মনে করি নি। পাঁচ-সাতটা ছাপা হলে যথেষ্ট এরকম ভাতাম। এই যে কবিতা ছাপা হচ্ছে না, এই ব্যাপারটা তখন সংকট মনে হত। কিন্তু এখন তার থেকে বেশি সংকট হল যে আমার কাছে পাঁচটা কবিতা রয়েছে, অথচ পঁচিশটা জায়গা থেকে লেখার আমন্ত্রণ রয়েছে। আমি সকলকে লিখে লিখে দিয়ে দিচ্ছি। এবং দেখছি যে সবই তো ছাপা হচ্ছে। একটা পর্যায়ের পর আর তো কেউ বলে না যে খারাপ লিখছি। সব লেখাও ছাপা হচ্ছে। সব লেখা ছাপা হবার যে বয়েস আমি সেটায় পৌঁছে গেছি। এটা কি বেশি সংকট নয়? আমার তো মনে হয় বেশি সংকট। যখন আমি যাই লিখব বা লিখতে চাইব তাই ছাপা হবে এমন একটা অবস্থা, এটা একটা সমস্যা বটে।

    চিরন্তন: মানে একজন প্রতিষ্ঠিত কবির যে সমস্যা….

    জয়: সব চেয়ে বড় কথা যে আমার কাছে যে যা লেখা চাইছে, আমি লিখে দিচ্ছি, আর তা ছাপা হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এটা আমি ভাবতে পারি যে আমার লেখার কদর আছে, সম্পাদকরা ডাকছেন, ছাপা হচ্ছে, কিছুটা ভাল লাগছে বলেই ছাপা হচ্ছে, যদিও খুব ভালো করেই জানি যে এখানে কোনো বিচার কাজ করে না। কারণ যারা আমন্ত্রণ করেন তারা আমন্ত্রণ রক্ষার ভদ্রতার খাতিরে লেখা ছাপান। আমন্ত্রণ করলেই লেখা ছাপা হয়। আমাদের দেশের সব কবিদেরই একটা বয়েসের পরই, আমার ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, আমন্ত্রিত হয়ে লেখা কবিতা সরাসরি ছাপা হয়, তার কোনো বিচার থাকে না। তখন তাকে নিজেই তার কবিতার বিচার করতে হয়। আর নিজের লেখা বিচার করা ভীষন শক্ত, আমি পারি না।
    আমি একটা চূড়ান্ত শূন্যতার মধ্যে রয়েছি বেশ কয়েক বছর ধরে। যখন লিখতে যাই সেটা বুঝতে পারি। আর যখন লিখি না, অন্য সময়টায়, তখন আমার কোনো অস্তিত্বও নেই। এই যে আমি ‘দেশ’ পত্রিকাতে যে কাজটা করি তার জন্য কখনও কখনও আমার কাছে লেখা চাওয়া হয়।

    চিরন্তন: সে লেখা কি আপনি সবসময়, মানে পত্রিকা চাইলেই…

    জয়: সাধারণত দিয়েছি। এবং নানারকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেমন যখন ‘আত্মজীবনীর অংশ’ কবিতাটা লিখেছিলাম, সেটা একটা ফরমাশে লেখা। ‘মা নিষাদ’ বলে যে কবিতা সে কবিতাও ফরমাশে লেখা। সম্পাদকের দপ্তর থেকে চাওয়া হয়েছিল। ‘ভুতুম ভগবান’ কবিতাটিও তাই। ফরমাশ পেয়ে আমি লিখতে বসি। ফরমাশের ওপর নির্ভর করে না, কিন্তু যদি কখনও দেখি যে আমার ভেতর থেকে লেখা আসছে না, তখন বলি যে লিখতে পারলাম না, আর পারলাম না।
    আমার নিজের সম্পর্কে মনে করি মানুষ হিসেবে একজন ব্যর্থ মানুষ। মানুষ হিসেবে আমি অনেকগুলো ভুল করেছি আমার জীবনে। জীবন থেকে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। যার জন্যে জীবনের সব ভুল কবিতার মধ্যেও চলে আসে। সেই সব ভুলের অনন্ত সংশোধন আমি কবিতার মধ্যে দিয়ে করার চেষ্টা করি যা জীবনের মধ্যে করা যায় না। কবিতায় ভুল হলে অনেক সহজে লাইন কাটাকুটি করতে পারেন, কিন্তু জীবনের ভুল কাটাকুটি করে সংশোধন করা যায় না। আমি জানি না, এখনও জানি না লিখব কি না, যদি লিখি কবে লিখব, কী লিখব। যে কবিতাগুলো ইদানীং লিখছি, যেমন ‘হরিণের জন্য একক’ বা ‘অভিসারের চার অবস্থা’ – জানি না এগুলোকে কবিতা বলা যায় কি না। ‘সূর্য পোড়া ছাই’ কে কবিতা বলা যায় কি না জানি না, ‘এক’ বলে একটা বই লিখেছিলাম সেটাকে কবিতার বই বলা যায় কি না জানি না। এই বইগুলো বেরোনোর সময় মনে হয়েছে একটা ভূমিকা লিখে দিই যে এই লেখাগুলোকে কবিতা বলে আমার মনে হচ্ছে না, কবিতা নাও হতে পারে।

    চিরন্তন: পুরোনো বই-এর ক্ষেত্রে এরকম মনে হয় নি? একদম প্রথম দিকের বই-এর বলছি, যেমন ধরুন যখন ‘উন্মাদের পাঠক্রম’ লিখছেন…

    জয়: প্রথমে এরকম মনে হয়েছিল ‘আলেয়া হ্রদ’ লেখার সময়। ওতে একটা গুচ্ছ আছে ‘মূর্ছা’ - তখন আমার পঁচিশ বছর বয়েস, আমার কবিতা ছাপা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, তখন আমার মনে হয়েছিল যে এগুলোকে কি কবিতা বলা যায়। সে সব লাইনগুলো আমার মধ্যে আসছে স্রোতের মতন, সে লাইনগুলো আমি লিখেছি

    ধোঁয়াদীপ, কী করে যে ডোবালে তোমার
    লুকোনো বাতাস ঋতু।
    তাকে এই পথের অতলে কি করে বা
    ঠেলে দিলে? আমি সেই দু-এক মুহূর্ত শুধু চকিতরঙীন ঝিঁঝিপাখা
    দেখতে পেয়েছি, যারা তোমার নৌকার মুখে গ্রীষ্ম হেনে যায়


    এই যে শব্দগুলো এইভাবে এল, এর কি কোনো মানে আছে। এই লাইনগুলো আশি সালের জুন মাসের কোনো একটা সময় লেখা, প্রায় একুশ বছর আগে। কীভাবে লাইনগুলো এসেছিল আমার মনে নেই। আমাকে কেউ বলেও নি এটা ভাল কি মন্দ।

    ব্যাবিলনে একা একা এমনই হেঁটেছি আমি রাতের ভিতর
    কেন যেন আজও জানিনাকো হাজার বছর ব্যস্ত বছরের পর


    আমি নিজে জানি না যে আমার কবিতায় কি আছে। সেই জন্য আমি কনফিডেন্ট নই। যখনই একটা কবিতার বই শেষ হয়, আমি কবিতার বইটা আমার যন্ত্রের সামনে বা সময়ের সামনে সমর্পণ করি। সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে – তাহলে লক কিয়া যায়? আমি বলি – হ্যাঁ, তাহলে লক করে দাও। তবে আমি কনফিডেন্ট নই, এই আর কি।
    দেখুন আগের দিন আপনার সাথে যেরকম কথা বলছিলাম, আজ আর সেরকম ভাবে কথা বলতে পারছি না। মনের জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে। কবিতাও ঠিক সেরকম। এক এক সময় এক একটা এফেক্ট হয়। কোনো বই লেখার মাঝখানে হয়ত মনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটল, সেই বইটা সেইখান থেকে হারিয়ে যায়, সেই বইটাকে আর ধরতে পারি না। সময়, সমাজ থেকে পালিয়ে বেড়াই। যেগুলো শুরু করেছি সেগুলো শেষ করতে হবে বা আরও কয়েকটা লেখা বাকি আছে, এমন সময় হয়ত এমন আহত হয়ে পড়লাম, এমন মনটা নষ্ট হয়ে গেল যে লিখতে পারব না। সেই ভয়ে তাই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই।
    ‘দেশ’ পত্রিকায় যে কাজটা করি, সেটাও – আমি আমার ভাগ্যের কাছে কৃতজ্ঞ, আমার পছন্দমত কাজ পেয়েছি। এই অল্প বয়েসীদের কবিতা দেখা, এই সব কাজ। অল্পবয়েসীরা আমার থেকে অনেক বেশি কনফিডেন্ট। এখানকার অনেক তরুণ তরুণী কবিদের দেখলাম, বা যারা একটু নাম করেছে তাদের দেখলাম, আমার দেশের তরুণ কবিদেরও দেখি, তারা কনফিডেন্ট, তারা অনেক জানে, লিখতে জানে। আর লিখতে যে জানে সেটাও তারা জানে। কিন্তু আমার এখনও তা হল না। আর আমি বুঝে গেছি জানেন তো, যে আর আমি কোনোদিন ওপারটা দেখতে পাব না। একবার একটা কবিতা লিখেছিলাম,

    ‘অর্ধেক লিখেছ মৃত্যু, বাকি অর্ধ সে দূর পারের’


    ‘অর্ধেক’ একটা এক লাইনের কবিতা।

    চিরন্তন: কিন্তু এই কনফিডেন্সটা একজন কবির পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যকর?

    জয়: খুব দরকার। এই যে এখানে রয়েছি, এত কবিদের দেখছি, সারাক্ষণ কবি লেখক তৈরি হচ্ছে, কবি লেখক হবে বলেই বাবা-মা তাদের এখানে পড়তে পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই কবি লেখক হয়ে উঠছে। কনফিডেন্সটা দরকার। আমার বুঝলেন, মানে কনফিডেন্সটা আছে জানেন, তবে দেখতে পাই না, পেছন থেকে দাঁড়িয়ে থাকে, আমার চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। উঠে যখন পায়চারি করতে আরাম্ভ করি তখন আমার পেছন পেছন চলে। আপনি 'গুপী গায়েন বাঘা বায়েন' দেখেছেন? তাতে এক রাজা পায়চারি করছিল ছাদের ওপর, আর তার পেছনে একটা বেঁটে ছোট বামন পোশাকের খুঁটটা ধরে একবার এদিক যাচ্ছিল একবার ওদিক যাচ্ছিল। আমার কনফিডেন্সটা সেরকম। আমার আত্মবিশ্বাস। আমি যখন লেখবার সময় পায়চারি করি, একটা অদৃশ্য সেই চাদর চাপিয়ে, বেশ রাজার মতন আলখাল্লা - নিজেকে বেশ লেখক লেখক ভাবতে ভাবতে লিখতে বসি তখন আমার আত্মবিশ্বাস সেই আলখাল্লার খুঁটটা ধরে পেছনে পেছনে লুকিয়ে থাকে। জানি না এ জীবনে আর একটা কবিতা লিখতে পারব কিনা। সত্যি এতটুকু বানিয়ে বলছি না। রিলকে-র তরুণ কবিকে লেখা চিঠিতে আছে -

    রাত্রির নির্জনতম মুহূর্তে নিজেকে প্রশ্ন করুন - আর কবিতা লিখতে পারবেন?

    যদি উত্তরটা হ্যাঁ হয় তবেই লিখবেন। তাই না? আর এক জায়গায় আছে - রাত্রির নির্জনতম মুহূর্তে সকলের আড়ালে নিজেকে নিয়ে যেন একটু গর্বও করতে পারি । সে গর্ব করাটা আর হয় না। এখানে একটি মেয়ে আমার সাথে বসে আলোচনা করে কবিতা অনুবাদ করছে। তার সাথে কবিতা বাছতে বসে একটাও কবিতা খুঁজে পাই না। 'মেঘবালিকার জন্য রূপকথা' কবিতা লিখেছিলাম মনে আছে - 'এক পৃথিবী লিখব বলে...

    চিরন্তন: ...একটা খাতাও শেষ করতে পারি নি

    জয়: হ্যাঁ, একটাও খাতা শেষ করি নি। এতে আমি হতাশ নই। এটাকে ঠিক হতাশা বলা যায় না। যে কাজটার সঙ্গে এতদিন ধরে রয়েছি এখনও সেটাকে ঠিক চিনে উঠতে পারলাম না। যত দিন যাচ্ছে রহস্য ততই বেড়ে চলেছে। চারদিকে দেওয়ালের মত থাকে। মাঝে মাঝে মাথা দিয়ে ঢুঁসো মারি। হঠাৎ দেওয়ালটা গর্ত হয়ে যায়। গর্ত হয়ে গেলেও ভেতরটা অন্ধকার নয় কিন্তু। ওদিকে দিগন্ত দেখা যাচ্ছে। আপনি সাত্রে-র 'নসিয়া' বইটার কভার দেখেছেন। সেটা সালভাদোর ডালি-র একটা ছবির ডিটেইল থেকে করা। তাতে এরকম আছে - একটা বিরাট পাথর, তার মধ্যে একটা ফুটো, সেই ফুটো দিয়ে ওপারে দিগন্ত, সমুদ্র দেখা যাচ্ছে, আর দেখা যাচ্ছে একটা পাখি উড়ছে - সে এক অপূর্ব ডিটেইল। সেরকম একটা ধাক্কা দিয়ে ফাটিয়ে ফেলা, সে চেষ্টা এখনও করি।
    আবার একদিক দিয়ে দেখি আমার এরকম ভাবা ভুল। আমার বোধহয় একটা ক্রাচ দরকার, পা দুটো দুর্বল। তাই আমার ক্রাচ লাগে। অন্যদের যখন দেখি, সে কি আমার দেশে বা এদেশে, ওই আত্মবিশ্বাসটা - ওটা বোধহয় দরকার - তরুণ কবিদের, শুধু তরুণ কেন, কবিদের। ওই একটা কাঁধ ঝাঁকিয়ে - সো হোয়াট !
    আমার দেশে আমি একজন তরুণ কবিকেও চিনি না যে সত্যি সত্যি অসহায়। কিন্তু আমি যদি অসহায় না হই, কখনও যদি আমার সহায় সম্বল থাকে, অসহায়ত্ব বর্জন করতে পারি তো সেটা শুধু লেখবার সময়, বাকি সময়টাতে আমি কিছু দেখতে পাই না। তখন মনে হয় যখন সমস্ত যুগটা একদিকে এরকমভাবে রয়েছে, চলছে - তখন আমার নিজের ক্ষেত্রে এরকম হয় কেন? নিশ্চিন্তে বসে আমি কি বলতে পারতাম না, যে আমি লিখতে জানি, যে আমি লিখতে পারি, আমি লিখতে চাই, আমি লিখতে পারব । এটা তো পারলাম না এখনও।

    চিরন্তন: কিন্তু আত্মবিশ্বাস বলতে এমন তো হয় উচিত নয় যে ঐ সমুদ্র বা দিগন্ত দেখাই যাচ্ছে না, শুধু দেওয়াল দেখা যাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে যে ঐ দেওয়াল অবধি গেলেই হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা।

    জয়: ঠিক তা নয়। সোজাসুজি বলি। লিখতে বসলে অনেক সময় মনে হয় যে জানি না আমি কি লিখব। জানি না কি করে লিখব। এরকম করে যখন একটা লেখা শুরুও হয়ে যায়, কিছুদূর যাওয়ার পর মনে হয় যে এটা আর কোনোদিন শেষ হবে না। এক একটা বই শেষ হবার পর মনে হয় আর কোনো ভাষা আসবে না। ইদানিংকালে লেখা কবিতাগুলো, যেমন 'হরিনের জন্য একক' কবিতাটার প্রথম ৬২-৬৫ লাইন লেখার পর একজনকে শুনিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম - এটা কি কবিতা হচ্ছে - এটা কি লেখা যায়। 'সূর্য পোড়া ছাই'-এ একটা কবিতায় আছে না যে
    'আমার মায়ের নাম বাঁকাশশী, আমার শ্যামের নাম ছায়া'

    এরকম কয়েকটা কবিতা লিখে একজনকে ডেকে... তখন লাইনগুলো হু হু করে আসছিল, ঝড়ের মত আসছিল... যাই হোক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এগুলোকে কবিতা বলা যায় কি না। সে আমাকে বলেছিল - যে তোমার যেমন লেখা আসছে সেরকমই লেখো। সে একজন বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল। সে বলল - তুমি এতদিন ধরে কবিতার মধ্যে আছো, লিখে আসছো, এখন যখন এরকম লেখা হচ্ছে, ড্রপ কোরো না, লিখে যাও। শব্দ দিয়ে আমি আমার অভিজ্ঞাতাকে স্পর্শ করতে পারছি কি না, শুধু আমার একার অভিজ্ঞতা নয়, যে সময়ের মধ্যে বাস করছি সেই সময়টাকে - এটাই তো চেষ্টা। নিজেদের চেনাই কত বাকি রয়ে গেছে।

    চিরন্তন: এই যে আপনার এক একটা বইয়ের মধ্যে পর পর বদল আসছে, 'সূর্য পোড়া ছাই' থেকে 'জগৎবাড়ি' একদম অন্যরকম, 'মা নিষাদ' থেকে 'সূর্য পোড়া ছাই' অন্যরকম - এই যে একের পর এক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া, নিজেকে কোনো একটা জায়গায় আটকে না ফেলা, এটাকে কি আপনার একটা অর্জন বলে মনে হয় না?

    জয়: একজন লেখক যে নিজের ভাষা পেয়ে গেছে সে এটা করবে না। আমি ভাষা পাই নি তাই এটা করি। আর তাছাড়া প্রত্যেক সময় নতুন হবার যদি একটা মরিয়া চেষ্টা থাকে সেই চেষ্টায় ক্ষতি হতে পারে। আমার কোনো মরিয়া চেষ্টা নেই। কিন্তু এটা খুব সত্যি, যত দিন যাচ্ছে আমার মনে হচ্ছে, যে আমি একটা ব্যক্তিগত কারাগারের মধ্যে থাকি। আর যত আমি বুঝতে পারছি যে আমি একটা কারাগারের মধ্যে আছি, তত আমার মন খুলে যাচ্ছে, তত আমি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। যত মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি তত মনে হচ্ছে যে একেবারে ছিঁড়েখুঁড়ে দেখা - যা আমাকে লিখতে বলবে। এবং, সেই ফ্লাইটটা যদি ভেতর থেকে না আসে, যা আমাকে ছুঁড়ে দেবে, তাহলে আমি লিখতে পারি না। আর আমি স্বীকার করব এই ছুঁড়ে দেওয়ার তাগিদটা গত কয়েক বছরে, আমি অনেক সময়ে পেয়েছি আমার অফিসের থেকে। অফিস আমাকে লিখতে বলেছে তবে লিখেছি। 'বারোমাসের জগৎবাড়ি' কবিতার যে গুচ্ছ, সেটা আমার অফিসের এক দীর্ঘ কবিতার চাহিদার থেকে, মাঝখানে দেড় বছর লিখি নি। তারপরে, 'হরিণের জন্য একক' ও তাই, 'অভিসারের চার অবস্থা' ও তাই, 'মা নিষাদ' ও তাই। চেষ্টা করে একটা হয়, ভেতর থেকে জিনিসটা বেরিয়ে আসে। আমার আর কবি হওয়ার ইচ্ছে নেই। এবার কবিতা লেখার চেষ্টা করব।

    চিরন্তন: জীবনানন্দ দাশ-এর তো বোধহয়...

    জয়: জীবনানন্দ দাশ হচ্ছেন আমাদের দেশের বীর, মধ্যবিত্তের কাছে এত বীরত্বের উদাহরণ আমার জানা নেই। আমি রবীন্দ্রনাথকে আলাদা করে রাখছি, কারণ উনি আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়। কিন্তু তিনি মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়েন না। রবীন্দ্রনাথ অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন, ঐরকম শোক সহ্য করেছেন, আবার জীবিতকালে খ্যাতি ভোগ করেছেন - কিন্তু উনি লিখে গেছেন - সবসময় লিখে গেছেন।
    জীবনানন্দ যে পরিমাণ ক্ষমতা নিয়ে এসেছিলেন, যে নতুনত্ব নিয়ে এসেছিলেন, তাঁর সমসময়ে এগুলো সম্পূর্ণ ঢাকা ছিল, তারপরেও তিনি বিচলিত না হয়ে, নিজের ধর্মে নিজের পথের সন্ধান করে গেছেন। এটি বড় কৃতিত্ব। তাঁর জীবিতকালে তাঁর লেখাকে বলা হয়েছে জীবনবিরোধী, তাঁর লেখা নিয়ে হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি হয়েছে, অথচ তাঁর মৃত্যুর চল্লিশ বছর পরে তাঁর লেখার এক একটা লাইন প্রবচনে পরিণত হয়েছে, যা কিনা খবরের কাগজে পর্যন্ত ব্যবহার হয়। তাঁকে এখন মানুষ এত জানে। যাঁকে একসময় জীবনবিরোধী কবি বলে তিরস্কৃত হতে হয়েছিল, তাঁকে এখন সকলে জীবনের কবি বলে মেনে নিয়েছে। এটা করবার সময় তাঁকে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল, কবিতা ছাড়া তাঁর জীবনে কোনো অবলম্বন ছিল না।
    রবীন্দ্রনাথের নিঃসঙ্গতা বুঝতে পারা যায়, কত প্রবল একটা মানুষ, কত বড়, কিন্তু তাঁর কাজও ছিল অনেক, অনেক শেকড় ছিল, অনেক ডানা ছিল। জীবনানন্দের তো কিছুই ছিল না। কিন্তু নিজের ওপর এই বিশ্বাসটা রাখতে পারা, লেখার আনন্দ, লেখার উত্তেজনায় একের পর এক লিখে যাওয়া এবং মৃত্যুর পর অমর কবি হয়ে ওঠা। নিজের কাজের ওপর এতটা বিশ্বাস ছিল। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় কবি রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ - কি শতছিন্ন পাণ্ডুলিপি তাঁদের, লেখবার সময় ওই জায়গাতে তাঁরা কত রক্তাক্ত। ঠিক করতে পারছেন না, কোন শব্দটা বসাবেন, কোন লাইনটা লিখবেন। তাঁরা সম্পূর্ণ অন্য ধরণের মানুষ, কিন্তু এই একটা জায়গার কত মিল।
    জীবনানন্দের জীবনধারা থেকে আমরা শিখতে পারি নি। এই মুহূর্তে স্বীকৃতি দরকার আমাদের সকলের। আমাদের প্রত্যেক কবির মধ্যে এরকম চাহিদা রয়েছে। আমার মধ্যেও কি নেই? নিশ্চয়ই আমার মধ্যে ছিল। সেই অল্প বয়েস থেকে কিছু কিছু পাঠক পেয়েছি। অল্পবয়সে আমার সমবয়েসী কবিরা অনেকে আমার কবিতা পছন্দ করত। পরে আমার কবিতা সাধারণ মানুষের ভাল লাগতে থাকে। আমি ভাগ্যবান। এই আমেরিকায় দুর্গাপুজোয় গেছি, অনেক বাঙালি বলেছেন যে আমার কবিতা পড়েছেন। এক ভদ্রলোক তাঁর মাকে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি আমার চেয়ে বয়েসে বড়, তিনি আমার কবিতা পড়েছেন। আমি তো ঠিক নারীবাদী কবিতা বা সমাজের জন্য লিখব এটা মনে করে কবিতা লিখি না। আমি হয়ত আমার মাকে মনে করে কবিতা লিখি। আমার মেয়েকে নিয়ে লিখি। আমি হয়ত যে কলোনিতে থেকেছি সেখানে যে মেয়েদের দেখেছি তাদের কথা ভেবে কবিতা লিখেছি, আবার হয়ত যৌবনে যাদের দেখেছি - যে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের দেখেছি তাদের কথা লিখেছি। সেই একই জীবন ভাগ করে নিতে চেয়েছি তাদের সঙ্গে। তাই স্বীকৃতি পাবার পরে এখন আর সেটাকে সেরকম কিছু মনে হয় না। কিন্তু কবি হবার বাসনা কবির মধ্যে সাংঘাতিকভাবে থাকে, কবি চায় সবাই তাঁর কবিতা পড়ুক, সবাই মেনে নিক।
    আমি জানি না পর একই লিখব এবং সেটা কিছু হবে কি না। এভাবে ভাঙতে ভাঙতে আমি ক্ৰমশঃ একলা হয়ে যাচ্ছি। আমার মেয়ে, আমার স্ত্রী - এদের প্রতি দায়িত্ব, টান অনুভব করি। আমার কন্যা - তাঁর প্রতি আমি নির্ভরশীল, তার কথা মনে করলে আমার কিরকম কষ্ট হয়। অল্প বয়েসী কবিদের কবিতা - এখন 'দেশ' পত্রিকায় অনেক ছাপা হচ্ছে, তাদের কবিতা ঠিকমত ছাপা হল কি না - এসবের প্রতি টান থাকে। এদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি একটা স্টেজ পর্যন্ত আমার টান থাকে - যে কি করছে এরা, এরা যা লিখতে চাইছে তা লিখতে পারল তো। অন্য কোনো গোলমালে জড়িয়ে পড়ল কি না। এসব কবিতায় চলে আসে।
    আমার সেই তীব্র উচ্চাশা নেই যে সাংঘাতিক ভালো কবিতা লিখতে হবে। শান্ত হয়ে অপেক্ষা করে রয়েছি যে কবিতা যেন মাঝে মাঝে এসে ধরা দেয়।

    চিরন্তন: বাংলায় এখন তো আলাদা করে সেভাবে কবিতার পত্রিকা কিছু নেই, যেভাবে 'কবিতা' বা 'কৃত্তিবাস' ছিল, আপনার কি মনে হয় এরকম কিছু পত্রিকা থাকলে কবিদের সুবিধে হয়?

    জয়: কবিতার পত্রিকা কিন্তু বাংলায় অনেক আছে।

    চিরন্তন: আমি বলতে চাইছি যে সবাই এসে দাঁড়াচ্ছে এরকম একটা ব্যাপার সেরকমভাবে নেই হয়ত, নানারকম শিবির...

    জয়: প্রচুর শিবির আছে। নানারকম মত আছে। আপনি যদি শেষ কয়েক বছরের 'দেশ' পত্রিকা দেখেন, দেখবেন যে এতে নানারকম কবিতা বেরিয়েছে।

    চিরন্তন: হ্যাঁ, কিন্তু 'দেশ' তো শুধু কবিতার পত্রিকা নয়।

    জয়: কবিতার পত্রিকা হয়ত নয় - কিন্তু কবিতাকে সে একটা জায়গা দেয় - আপনি দেখবেন আমরা কবিতা গুচ্ছ পর্যন্ত ছাপতে শুরু করেছি। যেমন খুব অচেনা কবিদের কবিতা ছাপা হচ্ছে, তেমন রণজিৎ দাশ, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, কয়েক বছর আগে আমরা গীতা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাও ছাপিয়েছি। তারপরে এমন অনেক কবিদের কবিতা ছাপানো হচ্ছে যারা নিয়মিত লিখছেন। একদম নতুনদের কবিতা বের করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত নতুনদের কথা বলছি না, যেমন মন্দাক্রান্তা, পিনাকী - এদের কথা বলছি না, আমি বলছি যারা একেবারে একদম নতুন। যেমন কিছুদিন আগে আমরা ছাপিয়েছি কৌশিক বাজারি বলে একজনের কবিতা - খুবই ভাল কবিতা। এবার পুজো সংখ্যাতে ছাপানো হয়েছে জিৎ পাল-এর কবিতা। এদের একেবারে চিনি না আমরা। চেষ্টা করছি। কারও একটা ভাল কবিতা আমরা ছাপাতে পারি কিন্তু পরবর্তীকালে সে কি করল তা আমরা জানি না। জানার ক্ষমতা নেই সেটার। যেসব কবিরা নিজের মনকে, চিন্তাভাবনাকে প্রতিযোগিতার বাইরে নিয়ে যেতে পারেন তারা অনেকদিন পর্যন্ত সত্যিকারের কবিতা লিখতে পারেন। তা নইলে কিছুদূর পর্যন্ত কিছু ভাল কবিতা লেখা যায়, তারপরে শুধু কবিতা ছাপিয়ে যাওয়া যায়।
    জীবনানন্দের দাশ-এর মত এত বড় একটা উদাহারণ রয়েছে আমাদের সামনে। জীবনানন্দ মারা গেছেন আমার জন্মের মাত্রা আঠারো দিন আগে। সুতরাং একেবারে সমসাময়িক কবি বলা যায়, ৪০-৫০ বছরের মধ্যের ব্যাপার। জীবনানন্দের কবিতার উত্থান ঘটেছে গত পঁচিশ তিরিশ বছরে। আমরা যারা এখন লিখছি এবং যাদের বয়েস পঁচিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে, তারা জীবনানন্দের কবিতার এই জীবনলাভ দেখেছি, এ নিকট অতীতের ঘটনা । কিন্তু সেটা থেকে আমরা বিন্দুমাত্র শিক্ষা নিই নি। যে ধৈর্য, নির্লোভ সংযম নিয়ে উনি শুধু কাজ করে গেছেন সেটা থেকে আমরা কিছু নিই নি। বুদ্ধদেব বসু বেশি বয়েসে বলেছিলেন যে - অল্প বয়েসে কবিতা নিয়ে, সাহিত্যের ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি, তর্ক করেছি, শক্তিক্ষয় করেছি। জীবনানন্দ সেই শক্তিক্ষয় করেন নি। লিখে গেছেন। রবীন্দ্রনাথের মতন অত বড় প্রতিভার পাশে নিজেকে স্থায়ী করে রেখে গেলেন তো। মারা গেলেন, একটাও লোক নেই, আত্মীস্বজন নেই, কিস্যু নেই। কিন্তু তাঁর কবিতা ছিল। কারা নিল তাঁর কবিতা? সম্পূর্ণ অপরিচিত, পরবর্তী প্রজন্মের লোকজন তাঁর কবিতা নিল। শব্দের শক্তির ওপর বিশ্বাস করবার এত বড় উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে।
    আধুনিক সমাজ জীবনের দিকে যদি তাকান দেখতে পাবেন হতাশা। সেটা হচ্ছে কেবলই হত্যা আর হিংসা। খবরে শুধু হত্যা, আগুনে পুড়িয়ে মারার খবর, বন্দুকের নলের মধ্যে ঢুকিয়ে মারার খবর, একদল চাষির আর একদল চাষিকে আক্রমণ করে হত্যার খবর। সেই হিংসা, রক্ত, খুন জন্ম নিচ্ছে ঘরের মধ্যেও। পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া, ছোট ছোট পরিবারের মধ্যে আগুন, প্রত্যেকের প্রত্যেকের মধ্যে সিঁধিয়ে যাওয়া। এসবের মধ্যে দিয়ে যে কবিতা লেখার চেষ্টা করে সে কবিতাকে ভালোবেসে চেষ্টা করে, আর কিছু না। কবিতা তো কাউকে কিছু করতে পারে না। ঐ যে সমাজের জন্য কবিতা লেখা, বা কবিতা সমাজকে পাল্টে দিতে পারে - আমি সাধারণ মানুষ, আমি ওসবের জন্যে কবিতা লিখি না। আর, তাছাড়া আমার আর কিছু নেই ও । মাঝে মাঝে মনে হয় যে কবিতাও নেই।

    চিরন্তন: গদ্য লেখার সময়ও কি এরকম মনে হয়?

    জয়: গদ্য লেখাকে আমি কোনো গুরুত্ব দিই না। যেখানে কাজ করি সেখান থেকে আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়, আমি যা খুশি লিখতে পারি। আমি হয়ত কবিতা দিয়ে উপন্যাস লিখলাম। এবার লিখছি শক্তির কবিতা নিয়ে। শক্তি যে কত বড় কবি...
    এখানে লেভিং বলে একটি মেয়ের সাথে কবিতা অনুবাদের কাজ করছি। তাকে মাঝে মাঝে শক্তির কবিতা পড়াই। আশ্চর্য কবি, সত্যিই । সামান্যই আলাপ ছিল আমার সঙ্গে। বাড়িতে গেছি দুবার। ওঁনার কয়েকটা কবিতাই লোকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে, ওঁনার আরও অনেক ভাল কবিতা আছে, লোকে বলে না।

    চিরন্তন: কবিতা যখন আসে না... যেমন বুদ্ধদেব বসু বলতেন যে যখন ওঁনার কবিতা আসে না উনি কবিতা অনুবাদ ইত্যাদি কাজকর্মে নিজেকে...

    জয়: বুদ্ধদেব বসু সম্পর্কে একটা কথা বলি। আমার সাথে অনেক তফাৎ। উনি ছিলেন যাকে বলে স্কলার। পঠনপাঠন জিনিসটা খুব স্বাভাবিক ছিল ওঁনার মধ্যে। আমি সে ধরণের মানুষ নই। আমি অনুবাদ করার চেষ্টা করি নি কখনও। সত্যি কথা বলতে ইংরেজি ভাষার কবিতা যখন পড়ি তখন মাতৃভাষায় তা আপনিই অনুবাদ হয়ে যায়, একটা ছবি ভেসে ওঠে। কোনোদিন সে অনুভূতিকে লেখার চেষ্টা করি নি। হাতে কলমে করছি এই প্রথম। মানে প্রত্যক্ষভাবে বসে সামনাসামনি করছি আর কি। এর আগে আমার কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিল কলকাতার একটি মেয়ে, সে বাঙালি। তার সাথে প্রথম সরাসরি কাজ করেছিলাম, কিন্তু সে তো বাঙালি তাই তার সাথে ব্যাপারটা অন্যরকম ছিল। আসলে আমি একজন অকর্মন্য লোক বুঝলেন তো। আমার কাজ করার ক্ষমতা সামান্য। বই পড়া, গান শোনা, নাটক দেখা - এই হল আমার কর্মসূচি।

    চিরন্তন: এবং এসব থেকেও মাঝে মধ্যে কবিতা উঠে আসে...

    জয়: নাটক থেকে হয়। যেমন অনেকে জিজ্ঞেস করেন, যে কার কবিতা আমাকে প্রভাবিত করেছে, বা, প্রথম কার কবিতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। শুধু কবিতা বললে ভুল হবে। কিছু নাটক দেখেছিলাম অল্প বয়েসে। ভাল লেগেছিল, শুধু ভাল লেগেছিল বললে ভুল হবে, আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম, বার বার দেখেছিলাম। এমন কিছু নাটক যা সেই বয়েসে আমার জীবনের কিছু ভিত্তিমূল তৈরি করে দিয়েছিল। সেই নাটকগুলোকে উচ্চাঙ্গের সাহিত্য বা একরকমের কাব্য বলা যায়। তখন বুঝতে পারি নি নাটকগুলো, কিন্তু এখন বুঝতে পারি যে নাটকগুলো কি সাংঘাতিক ছিল। শেকড় দিয়ে যেভাবে প্রাণ টেনে নেয় গাছ, ঐ নাটকগুলো থেকে সেভাবে প্রেরণা পেয়েছি।

    চিরন্তন: এখানে তো অনেক দেশের কবিতা দেখলেন, বাংলা কবিতার মান কেমন দেখেন অন্য দেশের কবিতার পাশে রাখলে...

    জয়: বাংলা কবিতার মান, এমনকি তরুণ কবিদের লেখার মান, কোথাও এতটুকু কম নয়। বরং, এখানে যে মান দেখছি অনেক জায়গায় তাঁর থেকে বেশি উঁচু। তবে আমার একটা ভয় আছে, সেটা অন্য জগতেও দেখেছি - সেটা হল কবি সম্মেলনের ভয়। যে কবিতা সভায় পড়লে দর্শকরা সাথে সাথে হৈ হৈ করে উঠবে, বা আবৃত্তিকারেরা তা আবৃত্তি করলে সকলে বাহবা দেবে, সেই ধরণের কবিতা লেখার বাসনা কবিদের মধ্যে কাজ করে। এখানে ক্যারোলিন ব্রাউন নামের এক ভদ্রমহিলার সাথে কথা হল - উনি অনেক বাংলা অনুবাদ করেছেন, কলকাতায় গেছেনও। উনি কলকাতার কবিতা উৎসবের কথা বললেন, প্রশংসা করলেন, আমিও করলাম, কত জায়গা থেকে কবিরা আসেন, কবিতা পাঠ করেন, এক অভাবনীয় ব্যাপার। কিন্তু কুন্ঠিতভাবে উনি যোগ করলেন যে, এতে লেখা থেকে মনটা খানিকটা সরে যায় না? কিছুটা তো হয়ই। লেখকের মনে এটা কাজ করে যে - আমি পাঠকদের জন্য লিখছি, পাঠকরা আমার লেখা ভালোবাসে, তাই তাদের জন্য লিখি। এতে করে কবিতার ডেনসিটি থিন হয়ে যায়। এটা খুব হচ্ছে আমাদের কবিতায়। তাড়াতাড়ি পাঠকদের সঙ্গে কমিউনিকেট করবার ব্যাপারটার ওপর জোর দেওয়ার ফলে কবিতার ভাষায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। যেমন গণসংগীত বা লোকগীতি খুবই জনপ্রিয়, কিন্তু ধরুন যদি রাগপ্রধান সংগীত উঠে যায়, কেউ আর ইমন, দরবারি, কানাড়া রেওয়াজ করল না। এগুলো রপ্ত করতে সময় লাগে, অনেক ধৈর্য লাগে, তাই তাঁর চাইতে অন্য ধরণের গান করলে চট করে শ্রোতাদের ক্যাচ করা যায়। কিন্তু সেটা কি গানের পক্ষে স্বাস্থ্যকর? এতে কি সূক্ষ্মতার হানি ঘটে না?
    কবিতার ক্ষেত্রেও এরকম হচ্ছে। আমার একটা কথা মনে আসছে - সরলভাবে আসছে - আমি সেটাকে সরলভাবে বলব, এটা একরকম কথা। আর আমি সবসময়ই এমনভাবে বলব যাতে সেই কথা আমার পাঠকদের চমকে দিতে পারে - এটা মনের মধ্যে আগে থেকে ভাবার ফলে লেখার ঘনত্বটি হালকা হয়ে আসে। এটা সত্যি কথা। আর তারপর যখন কবিরা দেখছেন যে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে, তারা সেটার পিছনে একটা দর্শন খাড়া করছেন। যেমন, আমরা সমাজের জন্য লিখছি, এবং আমরা কমিটেড। তা সত্ত্বেও - বাংলার তরুণ কবিরা যা লিখছেন, তাদের লেখার মান উন্নত, যদিও কোথাও কোথাও কিছু কিছু গোলমাল আছে। তবে সেটা তো সবসময়ই হয়। একসঙ্গে অনেক লেখা হলে হয়। তবে আশার কথা যে তরুণ কবিরা অনেক আত্মবিশ্বাসী। তারা আরও লিখতে চায়। যেটা আমি, মানে, এত বছর লেখার পরেও ভাল করে বলতে পারলাম না, যে আমি আরও লিখব। বুঝতেই পারলাম না মাধ্যমটাকে।
    মনে আছে সাত-আট বছর আগে কবিতা উৎসব হয়েছিল কলকাতায়। সেখানে এক তরুণ কবি বলেছিলেন, কবিতায় কি কি থাকা উচিত, এবং কি কি থাকা উচিত নয়। কবিতা লিখেই শুধু হচ্ছে না, কবিতা লেখার আগে কবিতার ব্যাকগ্রাউন্ড এবং কবিতার নেপথ্যে দর্শনটা কি সেটাও শ্রোতাদের বলে দিতে হয়েছে। সেটা বলে দিতে হচ্ছে কারণ শধু শব্দগুলোর ওপর যদি নির্ভর করেন শ্রোতা তবে তাকে খানিকটা ভাবতে হবে। কিন্তু যদি আগেই বলে দিতে পারি যে এই কবিতার পেছনে এই এই ঘটনা এবং আমার কবিতা লেখার দর্শন হচ্ছে এই, তাহলে পাঠককে সেই ভাবনাটুকুও করতে হয় না। সে কবিতা শুনে শ্রোতা হৈ হৈ করে উঠছেন।

    চিরন্তন: তাতে কি কবিতাটা স্বাবলম্বী নয় বলে মনে হয়?

    জয়: এরকম বইও আছে - যে বইতে কবিতার আগে পটভূমিকা দেওয়া আছে, কেন কবিতাটা লেখা হয়েছে। শঙ্খ ঘোষ-এর 'কবিতার মুহূর্ত'-র কথা বলছি না - ঐ কবিতাগুলো অনেক পুরোনো লেখা - প্রায় ছত্রিশ বছরের কবিতা - ১৯৫১ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত - একটা একটা করে পুরোনো কবিতা নিয়ে সেই বইটা বেরিয়েছিল। এই বইগুলোতে প্রায় ভূমিকার মতন করে কবিতার আগে আগে লেখা হয়েছে এবং তা বই-এর অংশ। পাঠকের যাতে বুঝতে অসুবিধে না হয়। হ্যাঁ, এতে হয় কি, ঐ যে আপনি বললেন - স্বাবলম্বন হওয়া - ওটা চলে যায়। একেবারে তরুণদের ক্ষেত্রে এই জিনিসটার ছাপ এতটা পরে নি।
    আর একটা ভয় ওই তরুণ কবিদের সম্পর্কে। আমাদের দেশের কবিরা মধ্যবয়সে পৌঁছে এক ধরণের অসারতার সম্মুখীন হতেন, হয়েছেন। বিষ্ণু দে হয়েছেন, শক্তি চট্টোপাধ্যায় হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু-র সেই যুদ্ধের কথা আমরা জানি, বুদ্ধদেব সেই অবস্থার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন, কিছুটা বেরিয়ে এসেওছিলেন, 'মর্চে পড়া পেরেকের গান', কিংবা 'স্বাগত বিদায়' প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে দিয়ে। জীবনানন্দ দাশ-এরও মধ্যবয়সে একটা বদল ঘটেছিল, তারপর তো মারাই গেলেন। সুধীন্দ্র দত্ত লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত - উনিও একটা সময়ের পর... । আমি একটা কথা ভাবি যে, এঁদের কবিতা পড়তে পড়তে বড় হলাম, এঁদের কবিতা পড়তে আমার এত ভাল লাগে। একটা বয়েসের পর আমার মনে হয়, একটা চেনা পদ্ধতি, এঁদের নিজ নিজ পদ্ধতি, সেটা বার বার দেখা দিতে থাকে এঁদের লেখার মধ্যে। এটাই হয়ে ওঠে এঁদের পরিচয়। তবে এঁদের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা হয়েছিল চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর পৌঁছনোর পর। এখনকার তরুণ কবিদের ক্ষেত্রে এটা আরও তাড়াতাড়ি হতে শুরু করে নি তো? এই একটা ভয় হয় তরুণ কবিদের নিয়ে।

    চিরন্তন: মনে পড়ছিল শঙ্খ-র 'কবির বর্ম' বইটার কথা। খুব চটি একটা বই, কিন্তু...

    জয়: হ্যাঁ, কত ছোট একটা বই, কিন্তু কত গুরুত্বপূর্ণ...

    চিরন্তন: আমাদের বাংলাতে ছোটোদের জন্য লেখার ভালো ধারা ছিল, সেটা বোধহয় আস্তে আস্তে একটু কমের দিকে চলে যাচ্ছে। আপনি কি ছোটোদের জন্যে কিছু লেখার কথা আলাদা করে কিছু ভেবেছেন?

    জয়: ছোটদের জন্য বছরে একবার 'আনন্দমেলা'-য় লিখি কিন্তু সেটা ছোটদের কবিতা হয় না। একবার 'দাদাভাইদের পাড়া' বলে একটা বই লিখেছিলাম। তাতে বাচ্চাদের কথা ছিল। দেখি যদি কখনও পারি ছোটোদের জন্য লিখব। কিন্তু ঠিক ছোটোদের লেখা লিখতে পারব বলে মনে হয় না। আমার মনের জলবায়ু হল বিষন্নতা। আমি হয়ত খুব হাসি ঠাট্টা করতে পারি, কিন্তু আমার ভেতরটা সবসময় বিষণ্ণ হয়ে থাকে। এই বিষাদের অভ্যেস - এ নিয়ে আমি নিজের সম্বন্ধে বেশ বিরক্ত, এত বছর হয়ে গেল অথচ এটা কাটাতে পারলাম না। প্রত্যাশাশূণ্য মন নিয়ে মানুষের সাথে মিশতে পারলাম না। মনে হয় আমার মধ্যে কোন বড় ভুল আছে, গোলমাল আছে। মনের এত ভেতরে বিষণ্ণতার রেশ থাকলে ছোটোদের জন্যে লেখা মুশকিল।

    চিরন্তন: পাঠকদের সাথে তো আপনার মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হয়।

    জয়: তা হয়।

    চিরন্তন: সেগুলো কেমন অভিজ্ঞতা?

    জয়: জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। পাঠকদের কাছে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা আমার কাছে অকল্পনীয়। ভেবে অবাক হয়ে যাই তেমন কিছু তো করি নি, বাংলায় কবিতা লিখেছি। আমি অবশ্য কবি পাঠকদের কথা বলছি না। তবে পাঠকরা ভালই বলুক আর খারাপই বলুক, পরের লেখাটা যখন শুরু করছি তখন তা সাহায্য করে না। তখন আবার শূণ্য থেকে শুরু করতে হয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫৪৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Garima | 162.158.***.*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:২৪91066
  • ভাল লাগল। জয় গোস্বামী আমার একজন প্রিয় কবি।
  • Surajit | 172.69.***.*** | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৪৮91084
  • ভালো।
    জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ - এঁনাদের নিয়ে জয় গোস্বামীর বক্তব্য এই প্রথম পড়লাম।
  • lcm | 172.68.***.*** | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:০৬91091
  • জয় গোস্বামীর প্রিয় পাঁচ কবি - শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপল কুমার বসু, জীবনানন্দ দাশ ও রবীন্দ্রনাথ -- এঁদের নিয়ে লিখেছেন এই বইতে -
  • বিপ্লব রহমান | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:২৯91099
  • আমার সেই তীব্র উচ্চাশা নেই যে সাংঘাতিক ভালো কবিতা লিখতে হবে। শান্ত হয়ে অপেক্ষা করে রয়েছি যে কবিতা যেন মাঝে মাঝে এসে ধরা দেয়

    এই হলো জাত কবির কথা। এই বিনয়টুকু না থাকলে বুঝি কবিতা হয় না। সে এক অন্য বিষয়।...

    আর্কাইভ পর্বের ধারণাটি ভাল লাগলো। উডুক  
     

  • জ্যোতিষ্ক | 108.162.***.*** | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:০০91136
  • ভালো লাগলো ! ওনার ইন্টারভিউ সবসময়েই ভালো লাগে, একটা অদ্ভুত ক্ল্যারিটি আছে, সততা আছে, আর যাকে ঠিক বিনয় বলে না, কিন্তু বিনয়ের মতো .. খুব শাদামাটা সহজ কথা খুব-ই অক্লেশে বলে দিতে পারা, এইটাও একরকম সাহস ! আর মাঝে মাঝে দু-একটা কথা খুব সুন্দর (কাব্যময়?), যেমন 'আমার মনের জলবায়ু বিষণ্ণতা' !

    চিরন্তন-দাকে ধন্যবাদ !
  • pi | 172.68.***.*** | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:২৪91146
  • এতো পুরো খনি!
  • সঞ্জয় কুমার মাঝি | 2409:40e4:1053:afc:8000::***:*** | ১৬ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৫২536481
  • মেঘবালিকা কবিতাটি আমার খুব প্রিয় কবিতা, কিন্তু কবিতাটির মর্মার্থ কি, কে এই মেঘবালিকা সেটা আমি বুঝতে পারি না, যদি জানা যেত তাহলে খুব ভালো লাগতো।
  • জয়জয়কার | 208.78.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০২৪ ২১:৪৫536584
  • জয় গোস্বামী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। AMRI থেকে কোভিড টেস্ট করালেন। বিল হয়েছিল ৪,৮০০ টাকা । দিল কে? নবান্ন। AMRI থেকে প্রথমে চিকিৎসা করিয়ে বিল পাঠালেন নবান্নে। মেটালো কে? নবান্ন। কত টাকা ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৬৫ টাকা। ফাইন্যান্সিয়াল assistance to distressed person খাতে দান গ্রহণ করলেন জয়। ১২ জুলাই নবান্ন থেকে স্পেশ্যাল সেক্রেটারি ইও, তথ্য সংস্কৃতি দফতর মেমো নং ১৯৭৫- আই সি এ (এন) ইস্যু করে টাকা পাঠালেন নগদে।
     
    প্রশ্ন হল পারতেন না জয় গোস্বামী টাকাটা নিজে মেটাতে? যে মানুষটা রয়ালটি বাবদ মাসে অনেক টাকা রোজগার করেন তিনিও পাবলিক মানি এভাবে বিল জমা দিয়ে নিলেন ?
     
    এরপর নির্বাচন হোক, কোন রাজনৈতিক সংকট আসুক, আনন্দবাজারে পোস্ট এডিট লিখতে হোক, পারবেন জয় গোস্বামী শাসকের বিরুদ্ধে কলম ধরতে? সত্যি কথাটা লিখতে। যেটা শাসককে সতর্ক করতে পারবে?
  • r2h | 134.238.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০২৪ ২১:৫৪536587
  • ধুরো আপদ। জয় গোস্বামীর নাম দেখেই দৌড়ে...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন