লেখক: অন্যকথা
অনুবাদ ও পরিমার্জন: কুইয়ার আর্কাইভস অফ দি বেঙ্গল ডেল্টা (ক্যাব)
কুইয়ার আর্কাইভস অফ দি বেঙ্গল ডেল্টা (ক্যাব) একটি আন্তঃদেশীয় কুইয়ার সংগ্রহশালা। ক্যাব বঙ্গীয় ব-দ্বীপ সম্পৃক্ত কুইয়ার মানুষের ভূ-রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, মানসিক, আইনগত, মৌখিক, এবং অলিখিত ইতিহাস/স্মৃতি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, এবং গবেষণা করে।
আর্টিকেলটিতে কুইয়ার শব্দটি দ্বারা লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, নন-বাইনারি, ইন্টারসেক্স, এসেক্সুয়াল সহ আরো যে সকল লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর সদস্যরা রয়েছেন তাদের সকলকে বোঝানো হয়েছে।
“কামিং আউট” এইসময়ের সারাবিশ্বের কুইয়ার জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রায় প্রশ্নাতীত, সর্বজনীন এবং সবার জন্য প্রযোজ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুইয়ার পরিচয়ের গোপনীয়তা ভেঙে অকপটে তা তুলে ধরাটা যেন বিশ্বব্যাপী আবশ্যক একটি ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে; বাংলাদেশের কুইয়ার জনগোষ্ঠীও এই ট্রেন্ডকে ফলো করতে শুরু করেছে। এখানেও জনসাধারণের প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন এবং কুইয়ার ভিসিবিলিটিকে স্বাভাবিক ব্যাপার বানানোর আশায় আর কামিং আউটকে অনুপ্রেরণা যোগাতে বহু কুইয়ার এক্টিভিস্টের পাশাপাশি অনেক এলাইদেরকেও হরহামেশাই তাদের আওয়াজ তুলতে দেখা যায়। গত জুন মাসে, প্রাইড মান্থ-২০২০ এর উদযাপনের মুহূর্তে, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রকাশিত ভিডিও (আলো আসবেই)-তে হিজড়া, ট্রান্সসহ অন্যান্য লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর কোভিড-১৯ মহামারীতে চলা দুর্দশাকে তুলে আনা হয়েছে। কুইয়ার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় এবং অর্গানাইজিইং-কে উৎসাহ দিতে নানা এলাইদেরকেও বিভিন্ন ওয়েবিনার আয়োজনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সরব হতে দেখা গেছে। অতি সম্প্রতি, শামির মোন্তাজিদ নামের ‘১০ মিনিট স্কুল’ প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক টিউটর কুইয়ার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থন করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সে পোস্টটি ফেসবুকেই একদিকে প্রচুর হোমোফোবিক কমেন্ট আর হুমকি যেমন পেয়েছে, তেমনি আবার সাহসিকতার অনেক প্রশংসা ও সমর্থনও কুঁড়িয়েছে। এদিকে আবার ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে প্রাইড মান্থ উপলক্ষ্যে সমকামী অধিকার আদায়ের এক্টিভিস্ট জুলহাজ মান্নান এবং মাহবুব রাব্বী তনয়ের হত্যার স্মরণে একটি শোকাবহ পোস্টও দেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমগুলো দিয়ে আসলে ভিসিবিলিটি রাজনীতির একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কুইয়ার জনগোষ্ঠীর ভিসিবিলিটিকে সমর্থনের এই প্রচেষ্টাগুলো, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, সবার মাঝে কতগুলো বদ্ধমূল ধারণার জন্ম দিয়েছে। তারা মনে করে, কুইয়ারবান্ধব কতগুলো ব্যাপার যেমন কুইয়ার ভিসিবিলিটিকে দ্রুত স্বাভাবিক বানানো, সামাজিক পরিসরে নিজেদের কুইয়ার পরিচয়কে সামনে আনা, ৩৭৭ ধারার মতন ঔপনিবেশিক আইনের বিলুপ্তি ঘটানো বা সমকামী-বিবাহ ইত্যাদির প্রচলন হলেই যেন কুইয়ারদের মুক্তি আসবে, অন্যথায় নয়। একথা সত্য যে, কামিং আউট ব্যাপারটি কুইয়ার জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, কামিং আউট এবং এর পরিণাম যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক স্তরে একেক রকমের সে বিষয়টি কতটুকু ভেবে দেখা হয়েছে? খোদ কুইয়ার সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই যখন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য দেখতে পাই, সেখানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কামিং আউটের যে অনেকরকম অর্থ দাঁড়াতে পারে সেগুলো ঠিক কী কী? বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক আবহাওয়ায় কামিং আউট করাই কি আমাদের আকাঙ্খিত লক্ষ্য? এই আর্টিকেলটিতে প্রাথমিক কতগুলো ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন লিঙ্গ ও যৌন, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানের কুইয়ার জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে ফোনে এবং ইমেইলে মোট ২৩ জন ব্যক্তির ইন্টারভিউ নিয়ে কামিং আউটের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের চিন্তাভাবনা ঠিক কী সেটি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। কোন মানুষটির কাম আউট করা উচিত আর কার নয় এ বিষয়ে আমরা কোনো পরামর্শ বা মতামত দেয়ার জায়গায় নেই; আমরা কেবল একটি বিষয়ই স্পষ্ট করতে চাই যে, কামিং আউট ফলস্বরূপ কুইয়ার কোন মানুষের প্রতি সামাজিক যে বিদ্বেষ, লাঞ্ছনা আর বৈষম্যের আবির্ভাব ঘটে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবে নেই।
কামিং আউটের সমূহ বাস্তবতা
এ কথা শতভাগ সত্য যে বাংলাদেশের মত একটি দেশ যেখানে ধর্মান্ধতা, সামাজিক লাঞ্ছনা আর কুইয়ার ভীতিপ্রবণতা দিন দিন হু হু করে বেড়েই চলেছে, কামিং আউট সেখানে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কামিং আউট একদিকে যেমন সমাজের স্বাভাবিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে, তেমনি লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্যময়তার বিষয়টিকে নিয়ে খোলাখুলি আলোচনারও জায়গা তৈরি করে। হোক জনসম্মুখে কিংবা পারিবারিকভাবে, কামিং আউট একজন কুইয়ার মানুষের অনন্য বাস্তবতাগুলোকে পরিবারের সদস্য এবং বৃহত্তর সমাজের সামনে মেলে ধরে; এবং বিনিময়ে, একজন কুইয়ার মানুষকে তার প্রকৃত সত্ত্বাকে প্রকাশ করার জায়গা করে দেয়। উদাহরণ দিতে গেলে, এই আর্টিকেলটির ইন্টারভিউকালীন একজন ইন্টারভিউ প্রদানকারী বলেছিলেন, কুইয়ার মানুষদের প্রতি এদেশের জনসাধারণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দিনের পর দিন তিনি তার স্বত্ত্বাকে অস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু কামিং আউটের মাধ্যমে তিনি নিজের স্বত্ত্বাকে স্বীকার করতে পেরেছেন এবং নিজের আত্মবিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করতে পেরেছেন।
পৃথিবীর অন্যপ্রান্তের দেশগুলোর মতই, বাংলাদেশেও কামিং আউট ব্যাপারটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের কিছু ইন্টারভিউ প্রদানকারীদের বক্তব্য থেকে সেটি আঁচও করা যায়। যেমন, তাদের মধ্যে একজন পরিবারের কাছে কাম আউট করার পর পরিবারিক চাপের সম্মুখীন হয়ে এই “প্রকৃতিবিরুদ্ধ” আচরণ থেকে “সুস্থ” হওয়ার নামে মনোবিজ্ঞানীদের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়েছেন, এমনকি বাধ্য হয়েছেন থেরাপি নেয়া থেকে শুরু করে উচ্চমাত্রায় বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণেও। শহর বা গ্রাম সবখানেই নিজের কুইয়ার পরিচয় প্রকাশের কারণে কুইয়ার মানুষজনকে বাস্তুচ্যুত এবং পারিবারিক আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতন ঝুঁকি অনুভব করতে হয়েছে। শাওন নামের গ্রামীন পরিবেশে থাকা একজন জানিয়েছেন, “আমার পরিবার আমাকে কোনদিনও বুঝতে পারবে না যে কেন আমি নিজেকে জেন্ডারকুইয়ার বলছি; আর কেনই বা আমি “ছেলে” হয়ে আরেকটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে চাচ্ছি! আমার বয়স এখনো অনেক কম; তাই আমার ভয় হচ্ছে যে, আমি যদি কাম আউট করে বসি, তখন তারা আমার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে পারে; অথবা আরো খারাপ কিছু যেমন, বাসা থেকে বেরও করে দিতে পারে”। আরো কিছু ইন্টারভিউ প্রদানকারী জানিয়েছেন যে, যখন কারো কামিং আউট ব্যাপারটি পরিবারের বাইরে জানাজানি হয়ে যায়, পরিবার তখন সেই কুইয়ার মানুষটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে আরো বেশি মরিয়া হয়ে ওঠে। অন্যদিকে আবার, যেখানে ব্যাপারটি শুধু পরিবারের ভেতরেই থাকে, বাইরে জানাজানি কম হয়, সেখানে খোদ পরিবারের ভেতরেই কুইয়ার মানুষটিকে অনেক নির্যাতন আর বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়। মামুন নামের বিশ বছর বয়সী একজন সমকামী পুরুষ জানান, “আমি আমার পরিবার আর বন্ধুবান্ধবদের কাছে কাম আউট করেছি……তারা এটিকে ভালোভাবে নেয়নি……তাদের কাছে এটা অস্বাভাবিক একটা বিষয়। আমাকে এর জন্য অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। কেউ কেউ আমাকে উপেক্ষা করেছে, কিছু সম্পর্ক চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমার পরিবার আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, আমার উপর মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে, পরিবার থেকে বিছিন্ন করে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে”। প্রায়ই দেখা যায় কিছু ট্রান্স মানুষ পরিবারের কাছে কাম আউট করার পর পরিবার ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবারের দৃষ্টিতে, বিপরীত লিঙ্গের পোষাক পরা হারাম, প্রকৃতিবিরুদ্ধ এক জঘন্য আচরণ এবং সভ্যসমাজে লজ্জার ব্যাপার। আরো কিছু ইন্টারভিউ থেকে এটিও পরিষ্কার হয় যে, ট্রান্স এবং নারীসুলভ কুইয়ার মানুষদের জীবনে উত্যক্ত হওয়া, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হওয়া যেমন খুব সাধারণ ঘটনা; তেমনি এমন অনেক অভিজ্ঞতাও তাদের জীবনে হরহামেশাই ঘটে যেগুলোর জন্য তারা নিরুপায় হয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান, এমনকি অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হন।
কামিং আউট বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভালো করে ভেবেচিন্তে হিসাবনিকাশ করে করার মতন একটি বিষয়, কারণ এতে যে কেবল বিভিন্ন ব্যক্তিগত ঝুঁকিই আছে সেটিই একমাত্র চিন্তার বিষয় নয়, একটি গোটা পরিবারের ভবিষ্যত পরিণতিও এর সাথে জড়িত। অধিকাংশ বাংলাদেশীই বড় হয়ে যাওয়ার পরেও পরিবারের সাথেই বসবাস করে থাকে। জীবনধারণের প্রচলিত রীতি, সম্পদের বণ্টন, উত্তরাধিকার ইত্যাদির কারণে, বিশেষত পরিবারের পুরুষ সদস্যরা আজীবন একই বাড়িতে তাদের বাবা-মার সাথে জীবন অতিবাহিত করে থাকে। রাষ্ট্র প্রদত্ত কোন সামাজিক নিরাপত্তা না থাকার দরুণ, অনেক পরিবারেই প্রাথমিক যত্নআত্তি আর ভরণপোষণের ভার সন্তানের উপর বর্তায়। সন্তানের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থান পুরো পরিবারের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থানের সাথে একই সুতোয় গাঁথা। সেকারণেই পাবলিকলি কামিং আউট কেবল একজন ব্যক্তিবিশেষের ব্যাপার থাকে না, বরং পরিবারে একজন কুইয়ার সদস্য থাকার যে সামাজিক লজ্জা, সেটিকে নিয়ে পুরো পরিবারের কামিং আউট হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে, যে মানুষগুলো কাম আউট করার সিদ্ধান্ত নেন, তাদের, পরিবারের কাছে ব্যক্তিগত কাম আউট এবং সমাজের কাছে পরিবারসহ কাম আউট-এই দু’টি মানসিক চাপের মধ্যে মধ্যস্থতা এবং দরকষাকষির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, একান্নবর্তী পরিবারে বাবা-মা কেবল তাদের সন্তানের কুইয়ার পরিচয় মেনে নেন, কিন্তু তার সমলিঙ্গের সঙ্গী থাকার বিরোধীতা করেন এবং বাকী পরিবারের বা সমাজের কাছে নিজের সন্তানের কুইয়ার পরিচয় গোপন করে তাদের সন্তানটিকে “রক্ষা” করে থাকেন। আর ক্ষুদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে এই কুইয়ার পরিচয় আরো কঠোরভাবে গোপন করা হয়। বাংলাদেশের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় লেসবিয়ানদের কামিং আউটের চ্যালেঞ্জের যে তফাতগুলো রয়েছে তা আমাদের আরো জানা ও বোঝার প্রয়োজন রয়েছে।
আবার কিছু কুইয়ার মানুষ আছেন যারা নিজেদের কুইয়ার পরিচয় অস্পষ্ট রাখাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকেন। বাস্তবে পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী হলেও তারা বিষয়টিকে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করেন। বাংলাদেশ সামাজিক ও আইনী নিরাপত্তার দিক থেকে অপ্রতুলতার একটি দেশ, সেখানে নিজের কুইয়ার পরিচয়ের অস্পষ্টতা তাদের পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে বজায় রেখে নানা সহিংসতা থেকে তাদের রক্ষা করে এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারে। অন্যদিকে আবার এখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে, সেখানে এই অস্পষ্টতা তাদেরকে পরিবারের পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরতার একটি নিরাপত্তাও প্রদান করে। এ জটিল বিষয়গুলোকে আলোচনা করতে গিয়ে বিদেশে বসবাসরত একজন বাংলাদেশি সমকামী পুরুষ সাদমান জানান যে, যেকোন কুইয়ার মানুষ তার পরিবারের কাছে কাম আউট করতে গিয়ে যেন তার প্রতিক্রিয়াগুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকে, ভেবে চিন্তে কাজ করে, এবং নিজের বা অন্যের উপর যাতে বোঝা চাপিয়ে না দেয় তার দায় যেন সে নেয়। এই একই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নীলা নামের একজন ট্রান্সম্যান জানান, “সবচেয়ে ভালো উদ্দেশ্য নিয়েও কাম আউট করতে গিয়ে কুইয়ার বন্ধুরা অনেকসময় তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। আমরা আসলে একটু একটু করে আমাদের জায়গা হারাচ্ছি, আর বর্তমান পরিস্থিতিতে তো আরো বেশি করে হারাচ্ছি……সত্যি বলতে কুইয়ার পরিচয়ের এই অস্পষ্টতা বাংলাদেশে সুরক্ষা দিতে পারে, অন্তত আমার জন্য তো পারেই। তাই আমার মনে হয় চোখ বন্ধ করে নিজের পরিচয় প্রকাশের আগে এর পরিণতিতে কি ধরণের প্রতিবন্ধকতা আর নির্যাতনের সামনে পড়তে হবে, সেটা যেন সবাই অন্তত একবার হলেও জেনে নেয়। সত্যি যদি বলতে, আমার এখনো মনে হয়, ইশ! যদি আরেকটু ভালো করে জেনে বুঝে আগাতাম”।
বাংলাদেশের সব কামিং আউটই যে শেষমেশ পরিবারিক বা সামাজিক লাঞ্ছনা, বর্জন কিংবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াতে গিয়েই ঠেকে তা অবশ্য না। উদারহণ দিতে গেলে বলা যায়, দিনা নামের একজন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট যিনি বর্তমানে একটি এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা, তিনি বলেন, “আমার কাছের মানুষ বলতে হাতেগোনা……এদের মধ্যে যারাই আমার ব্যাপারে জেনেছেন, তারা বিষয়টিকে খুব সহজভাবেই নিয়েছেন- এজন্য আমাকে তেমন কিছুই করতে হয়নি, শুধু ভেবেছি যে আমার কথাবার্তায় আমার বাইসেক্সুয়ালিটিকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসবো বা তাদেরকে গে মিম পাঠাবো; ব্যস এইটুকুই। আমার পরিবার বা বন্ধুদের কাছে এটা একেবারেই তেমন বড় কোন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি”। কেউ কেউ হয়ত বলবে যে, শ্রেণীগত সুবিধা এবং এরকম নানাবিধ বিষয়ের সুবিধা থাকার কারণে এইরকম সহজ কাম আউটগুলো সম্ভব হয়।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশে কামিং আউট
বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজের চোখে সমকামীতা পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানীকৃত একটি ধারণা। তাদের কাছে এটি সমালোচনা ও নিন্দার যোগ্য এবং এটিকে কঠোরভাবে বিশ্লেষণ করে এর তীব্র বিরোধীতা করা উচিত। তারা এটিকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং স্বাভাবিক বলে মানতে রাজি নয়। অন্যদিকে আবার, বাংলাদেশের প্রগতিশীল এবং বামঘেঁষা সমাজের কাছে, সমকামীতা সারাবিশ্বের একটি সর্বজনীন ঘটনা এবং এর অস্তিত্ব এই দক্ষিণ এশিয়াতেও চিরকাল ধরেই উপস্থিত ছিলো। একদিকে যেমন রক্ষণশীলরা তাদের বক্তব্যে, এই অঞ্চলের কুইয়ার জনগোষ্ঠীর যে গভীর ও সুদীর্ঘ ইতিহাস সেটিকে পুরোপুরি এড়িয়ে যান; অন্যদিকে আবার প্রগতিশীলদের বক্তব্যে এই ইতিহাসগুলো অনেকটা সাদামাটা করে দেখা হয়, আমাদের এই যে সংগ্রাম তার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্বহীন করে ফেলা হয় এবং বিশ্বের উত্তর আর দক্ষিণ অংশের মধ্যে ক্ষমতার বিরাট যে ভারসাম্যহীনতা সেটিকে একেবারেই উপেক্ষা করা হয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে কুইয়ার কমিউনিটিতে কুইয়ার ভিসিবিলিটি এবং কামিং আউট দু’টি অতিপ্রয়োজনীয় আলোচনার বিষয়। বিষয়দুটিকে যেমন বিভিন্ন অর্গানাইজিং-এর অভিজ্ঞতা আর চলমান ক্ষমতার ওঠানামার দৃষ্টিকোণ দিয়ে বোঝা উচিত; তেমনি পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখাটা জরুরী যে, এই বিষয়গুলোকে আজকের এই জায়গাতে আনতে এই উপমহাদেশে কুইয়ার জনগোষ্ঠীর ইতিহাস কতটা ভূমিকা রেখেছে। সত্যি বলতে কুইয়ার ভিসিবিলিটির প্রয়োজনীয়তা আগে না পরে - এই প্রশ্নে খোদ বাংলাদেশের কুইয়ার অর্গানাইজাররাই ইতিমধ্যে দ্বিধাবিভক্ত। সবশেষ ২০১৬ তে, রুপবান ম্যাগাজিনের যাত্রা আরম্ভের মতন কিছু উদ্যোগ বাংলাদেশে কুইয়ার ভিসিবিলিটির রাজনীতির ধারক ও বাহক হয়ে ওঠে। কুইয়ার ভিসিবিলিটির প্রবর্তকেরা এই বিশ্বাস রাখেন যে, নিজেদের লিঙ্গ-যৌন পরিচয় নিয়ে জোরালোভাবে আত্মপ্রকাশ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশী কুইয়ার মানুষেরা তাদের যথাযোগ্য অধিকার এবং একটি সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা পাবে না। কুইয়ার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের যে নেতিবাচক পরিণতিগুলো সামনে আসবে সেগুলোকে তারা অপরিহার্য বলিদান হিসেবে দেখে থাকেন। অন্যদিকে এই মতবাদের বিরোধী অর্গানাইজার যারা, তারা মনে করেন, ভিসিবিলিটি দিয়েই সমাজে কুইয়ারদের গ্রহণযোগ্যতা বা অধিকার অর্জিত হবে এমন কোন কথা নেই। তাদের মতে, কুইয়ার মানুষদের বাসস্থান, কর্মসংস্থান বা পারিবারিক নির্যাতনের মতন জরুরী বিষয়গুলোর সুরাহা করা গেলে অধিকার আদায়ের এই যে আন্দোলন সেটির খুঁটি আরো বেশি শক্ত হবে। তাদের দৃষ্টিতে কুইয়ার সম্প্রদায় এখনও অনেক অগোছালো, এছাড়া পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তাদের প্রতি অনেক সহিংস আর হেটেরোসেক্সিস্ট সমাজ কুইয়্যার মানুষদের প্রতি এখনও অনেক ঘৃনাপ্রবণ। সেজন্য ভিসিবিলিটির এই লড়াই কুইয়ার মানুষদের জন্য অনেক বেশি সংগ্রামের, অনেক বেশি দুঃসাধ্য। ২০১৬ সালের জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডটি ভিসিবিলিটি-বিরোধীদের এই বিশ্বাসকে আরো জোরালো অবস্থান দিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা নিজেকে কখনো কুইয়ার প্রগতি আন্দোলনের প্রথম সারির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপনও করেনি, আবার কখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে তীব্র কুইয়ারবিরোধী কোন প্রচারণা করে নিজেকে তথাকথিত আচারপ্রথা-মূল্যবোধের রক্ষক বলে দাবীও করেনি। অন্যান্য মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও-গুলোর মতই, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও এই বিষয়ে অস্পষ্ট নীরবতা পালন করছে। রাষ্ট্রের এই নীরব ভূমিকা দিনশেষে বাংলাদেশে কুইয়ারবিদ্বেষী ফ্যাসিস্ট রাজনীতির বিস্তারের পথকেই আরো মসৃণ করেছে। অনেকের মতে, একারণেই, বাংলাদেশের কুইয়ার মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরো বেশি উদ্বেগজনক একটি বিষয়। ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা বাহিনীর অঙ্গসংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (বর্তমান নাম আনসার-আল-ইসলাম) কর্তৃক ২০১৬ সালে সংঘটিত গে-এক্টিভিস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির পর কুইয়ার মানুষদের নিরাপত্তাহীনতা আরো গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর উপর আবার, সম্প্রতি প্রবর্তিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, কুইয়ার সম্প্রদায়ের মানুষের ডিজিটাল ভিসিবিলিটি এবং এক্টিভিটিকে আরো হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এটি এমন একটি দুর্বিষহ আইন যেটি দিয়ে রাষ্ট্রের কোন কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করামাত্রই কিংবা কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে “ধর্মানুভূতিতে আঘাত” বলে মনে হয় এমন কোন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়ামাত্রই একজনকে জেলে যেতে হতে পারে। বিশেষ করে, করোনা মহামারীর এই লকডাউনে মধ্যে বাংলাদেশ সরকার এই আইনের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়ে এক্টিভিস্টদের অপরাধী সাব্যস্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব ব্যাপার থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয় যে, আমাদের মত কুইয়ারদের সুরক্ষা দেওয়ার মতন কোন আইন বাস্তবে নেই, উল্টো আমাদের এবং আমাদের অর্গানাইজেশনগুলোকে দূর্বল করে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক আইনের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। আরো একটি বিষয় হলো, হোমোফোবিক আক্রমণগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের এই উদাসীনতা, হিংসাত্মক একটি তৃতীয়পক্ষের মনে একটু একটু করে দুঃসাহস জুগিয়েছে যে তারা চাইলেই যা খুশি করতে পারে, তারা অপ্রতিরোধ্য।
৩৭৭ ধারা, সমকামীতাকে অপরাধ সাব্যস্তকারী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের রেখে যাওয়া আইনটিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমলে নেয়ার মতন একটি বিষয়। যদিও কমিউনিটি অর্গানাইজারদের মতে, এদেশে কুইয়ার মানুষদের জেল-জরিমানা করতে ৩৭৭ ধারার ব্যাপক কোন ব্যবহার চোখে পড়ে না। নীলার মতে, “সমকামীদের প্রতি এই যে বিদ্বেষ, ঘৃণা, ভীতি আর খবরদারি, সেগুলোর বিভীষিকা খোদ আইনটির চেয়েও ভয়াবহ। এটি আদতে একটি গা ছম ছম করার মতন আইন”। দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশী কুইয়ার এক্টিভিস্টদের একটি অংশ বিশ্বাস করে যে কুইয়ার ভিসিবিলিটিই বাংলাদেশে কুইয়ার স্বাধীনতার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এই অভিবাসী এক্টিভিস্টদের প্রায়ই তাদের অনুপ্রেরণায় ১৯৬৯ সালের স্টোনওয়াল বিদ্রোহের প্রসঙ্গ নিয়ে টেনে আনতে দেখা যায়। ভিসিবিলিটিকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু করে ফেলার প্রেক্ষিতে একজন ইন্টারভিউ প্রদানকারী বলেন, “পশ্চিমা বিশ্বের কুইয়ার এক্টিভিটি কামিং আউটের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল; সেটির সাথে আমাদের এখানকার সংগ্রামকে গুলিয়ে ফেলাটা বোধহয় ঠিক হবে না……পশ্চিমা এক্টিভিস্টদেরকে রোল মডেল হিসেবে নেয়াটাও বাস্তবে সমস্যাপূর্ণ, এবং এর ফলে, তাদের আন্দোলন প্রগতিশীল আর আমাদেরটা পশ্চাৎপদ-এমন একটি ধারণা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে”। এছাড়াও, কুইয়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিসিবিলিটির দাবীর এই ব্যাপকতা কারো কারো কাছে মানসিক চাপের মতন হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটি এমন যে, কামিং আউটের উপর ভিত্তি করে কমিউনিটিতে একটি মর্যাদার শ্রেণীবিন্যাস দাঁড়িয়ে গিয়েছে, যিনি কাম আউট করলেন তিনি যেন বাকীদের তুলনায় উচ্চমর্যাদার কোন আসন পেয়ে গেলেন, আর বাকীরা নিচে পড়ে রইলেন। ফলে সামগ্রিকভাবে এই ব্যাপারগুলো অনেকের মধ্যেই লজ্জা এবং দূর্বলতা বোধের জন্ম দেয়; আর তাদের মনে কাম আউট করার একটা কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি করে। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, কুইয়ার ভিসিবিলিটিকে স্বাভাবিক করার কাণ্ডজ্ঞানহীন যেকোন প্রচেষ্টা আমাদের দূর্বলতাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। খুব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ‘১০ মিনিট স্কুল’-এর সাবেক কর্মী শামীর মোন্তাজিদের ঘটনাটি এর জলজ্যান্ত প্রমাণ।
শামীর মোন্তাজিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাইডের পতাকার ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট করেন, এবং তাতে অসংখ্য হোমোফোবিক প্রতিক্রিয়া আর পাল্টা-প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে। সেই সাথে বাংলাদেশের এলাইদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়। মোন্তাজিদ তার পোস্টে বাংলাদেশকে প্রসঙ্গ করে কিছু বলেন নি ঠিক, কিন্তু জনপ্রিয় এবং শিক্ষামূলক একটি প্ল্যাটফর্মের প্রাক্তন শিক্ষক হবার জায়গায় থেকে এই পোস্টটি করার জন্য বাংলাদেশের হোমোফোবিক জনগণ তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান অভিযোগ তোলে। তাদের মতে, মোন্তাজিদ বাংলাদেশী তরুণসমাজে মধ্যে ইসলামবিরোধী আদর্শকে ছড়াতে ভূমিকা পালন করছে; এমনকি ‘১০ মিনিট স্কুল’ পর্যন্ত এর সাথে জড়িত। ব্যাপারটি এতদূর গড়িয়েছিলো যে অনলাইন শিক্ষামূলক এই প্ল্যাটফর্মের কো-ফাউন্ডারকে মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত পেতে হয়েছে। এছাড়া মোন্তাজিদকে সাধুবাদ জানানো বা তার পোস্টে সমর্থন জানানোর জন্য কুইয়ার কমিউনিটির অনেককে হুমকি, গালিগালাজ থেকে শুরু করে নানা ধরণের নজরদারির স্বীকারও হতে হয়েছে। এই ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের মতন একটি প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশী কুইয়ার স্বাধীনতার লক্ষ্যে কুইয়ার ভিসিবিলিটি নিয়ে কথা বলা যথেষ্ট তো নয়ই, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতিকরও বটে। এলাই ভিসিবিলিটি নিঃসন্দেহে জরূরী একটি ব্যাপার, তাই সেটিকে কিভাবে দেশীয় অর্গানাইজিং-এর সাথে আরো গভীরভাবে একসুতোয় গাঁথা যায় এবং বাংলাদেশি কুইয়ার মানুষদের জীবনযাত্রাকে সমর্থনের আরো লাভজনক উপায় খুঁজে বের করা যায় -সেটি নিয়ে ভাবা দরকার।
নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ, সামাজিক বঞ্চনা, রাষ্ট্রনির্ধারিত আইনি বিরোধীতা, একটি হিংসাত্মক তৃতীয়পক্ষের উপস্থিতি, সহযোগীতামূলক কোন কাঠামো না থাকা, আর্থ-সামাজিক দুরাবস্থা, এবং এলাইদের বিবেচনাহীন কর্মকাণ্ড সবমিলে বাংলাদেশে কামিং আউট এবং ভিসিবিলিটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে একটি বিতর্কিত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। কামিং আউট, যেটি অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, শুধু সেটিকেই আন্দোলনের কেন্দ্র বানিয়ে ফেললে, এই যে কুইয়ার মানুষজনের যন্ত্রণার দ্বন্দ্ব, মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা, বেকারত্ব এবং গৃহহীনতা সহ আরো অগণিত সমস্যা সেগুলো আড়ালে চলে যায়। এটা ঠিক যে, কামিং আউট ব্যাপারটি একান্ত ব্যক্তিগত এবং ক্ষমতায়নের একটি জায়গা, তবে কে কীভাবে কাম আউট করছেন তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশী কুইয়ার সম্প্রদায়ের ভেতরে এমনকি তার বাইরেও, কামিং আউট ব্যাপারটি সাম্প্রদায়িক বিবাদ এবং জাতীয় রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই আর্টিকেলটি শুদ্ধস্বরে প্রথমে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।
ভাবতে ভাল লাগছে মুক্তমনা বন্ধু "শুদ্ধস্বর" এর আহমেদূর রশিদ টুটুল হিজড়া ও সমকামীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।
লেখাটি বাংলায় ও বাংলা হরফে হলেও ইংরেজির যথেচ্ছ ব্যবহারে পড়তে গিয়ে বার বার হোচট খেতে হয়, এরচেয়ে ইংরেজিতেই লেখা ভাল ছিল বোধহয়।
চাপাতিতন্ত্রের ভেতর কোনো মুক্তমনা আন্দোলনই সহজ নয়, তাই আন্দোলনকারীদের বলবো নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই এগিয়ে যেতে।
অবশ্যই, আলো আসবেই
এপারবাংলার অভিজ্ঞতার বা পরিস্থিতি নিয়ে কোন লেখা? যাদবপুর সাফো?