প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খবর আসছিল প্রতিবাদের। উত্তর-পূর্ব দিল্লীর জাফরাবাদ, চাঁদবাগ, খাজুরি খাস, পুরোনো মুস্তাফাবাদ, সেলামপুর, তুর্কমান গেট, করডমপুরি, সুন্দর নগরী, লালবাগ, উত্তর-পশ্চিম দিল্লীর ইন্দরলোক, দক্ষিণ দিল্লীর নিজামুদ্দিন, হৌজরানী, উত্তর দিল্লীর সদর বাজার। সারা দেশ দেখছিল জামা মসজিদ চত্বর, ইন্ডিয়া গেট- শ্লোগানে, গানে উত্তাল! উত্তাল সারাদেশ! তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। কলকাতাতেও পার্ক-সার্কাস, রাজাবাজারে আমরা দেখেছি শাহিনবাগের মতোই সংখ্যালঘু নারীসমাজের নেতৃত্বে নানাবিধ প্রতিকূলতাকে জয় করে দীর্ঘমেয়াদি অসামান্য প্রতিবাদী জমায়েত। ... ...
এ এক অদ্ভুত শিউড়ে ওঠা সময়ের কাহিনী। আমরা সেই সময় অতিবাহিত করছি যখন আমাদের মনে পড়ে যায় “পিচ্ছিল নেপথ্যে আজও রয়েছে মানুষ – একা – নরক দর্শন করে, তবু অন্ধ নয়, খোঁড়া নয়; ... ...
এই লেখা লিখতে লিখতেই শোনা যাচ্ছে বিশ্বভারতীতে সঙ্ঘের পেটোয়া লোকজন নিয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছিল এক সেমিনার যাতে সিএএ ও এনআরসির সুফল ব্যখ্যা করার কথা ছিল। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় রড লাঠি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে আরেক গুন্ডাবাহিনী। বিশ্বভারতী থেকে আসা এই খবর কোনদিকে গড়াবে আমরা জানি না, কিন্তু গোটা দেশজুড়ে যে সমস্ত ক্যাম্পাসগুলিতে আরেসেস এবিভিপির যাতায়াত ছিল সীমিত সেগুলিতেই নানা ফিকিরে ঝামেলার পরিবেশ তৈরী করে এক একটা ফেনোমেনন বানাতে চাইছে তারা। কিন্তু তাদের এই বর্বরতা কোনোভাবেই শেষ কথা হয়ে যে উঠবে না তার প্রমান প্রায় প্রতি মুহুর্তে দিয়ে চলেছেন এই দেশের ছাত্রছাত্রীসমাজ ও তাদের পাশে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষ। আরেসেস বিজেপি যত হিন্দুরাষ্ট্র বা অন্যকে টুকরে গ্যাঙের নাম করে আসলে নানাভাবে ভারতের বিভাজনে ব্রতী হবে ততোই তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হবে এবং অতীত থেকে ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করার শিক্ষা তাদেরও দেওয়ার জন্য একত্রিত হবেন এদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। যে আজাদীর স্লোগান উঠে এসেছিল বিক্ষুদ্ধ কাশ্মীর থেকে আজ তা শোনা যাচ্ছে কলকাতায় মুম্বইতে সব জায়গায় এবং তা দিচ্ছেন সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ গৃহবধু বাচ্চা বুড়ো সবাই। ফয়েজের কবিতার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বসাতে বাধ্য হচ্ছে ভীতু কর্তৃপক্ষ। ... ...
এখানে আসতে থাকুক সব আপডেট। কোথায় কী হবে, কী হল। ... ...
ফিরোজ - দেখ, তোমায় তো বললাম জামিয়া আর 'জেএনইউ' এর ছাত্রছাত্রীরা শুরু করেছিল অবরোধের তা ক্রমে মানুষের প্রতিরোধে পৌঁছেছে। এর বেশিরভাগটাই সামলাচ্ছেন মহিলারা। আট থেকে আশি, এমনকি অন্তসত্ত্বা মহিলারাও রয়েছেন এই দলে। পালা করে তারা আসছেন। বাড়ির কাজ সামলে। পুরুষেরাও আছেন, তবে তাদের ভিড় বেশি সন্ধ্যার পর। আর এই জমায়েতে যে শুধু মুসলমানরাই রয়েছেন তা কিন্তু নয়। এতে অনেক হিন্দু শিখ এরাও রয়েছেন একসঙ্গে জোট বেঁধে। ... ...
আজ মুখোশে মুখ ঢেকে বড় রড হাতে নিয়ে জেএনইউ হস্টেলে ঢুকেছে গুন্ডাবাহিনি, যা ছাত্রদের অভিযোগ অনুযায়ী এবিভিপির। রাষ্ট্রপোষিত গুন্ডা। ফি বাড়ানোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, এনার্সি, সিএএ-র বিরুদ্ধে ছাত্রদের একতা, শাহিনবাগ ধর্ণা,গোটা দেশে বিশাল আন্দোলন, দেশবিদেশে বেইজ্জত হবার অপমান, আর কতো সইবে ফ্যাসিস্ট সরকার। জেএনইউয়ের অধ্যাপক, ছাত্র নির্বিশেষে আজ তাই রক্তাক্ত। নির্বাচিত ছাত্রসংসদ প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ সাংঘাতিকভাবে আহত। হাসপাতালে ভর্তি। অনেক সহযোদ্ধারও একই হাল। আহত অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন। জোর করে জয়শ্রীরাম বলানো হচ্ছে, আর তাও নাকি হচ্ছে সংঘপরিবারঘনিষ্ঠ অধ্যাপকের অংুলিহেলনে। ... ...
এনআরসি, ক্যা, এনপিয়ার - সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল এখন এদেরি দখলে। বড়দিন, নববর্ষে পালাপার্বণের ভরা মোচ্ছবের বাজারেও। এরকম গম্ভীর বিষয় নিয়েও ইয়ার্কি, ফাজলামি, খোরাক, খিল্লি, ব্যংগবিদ্রূপে ছেয়ে যাচ্ছে ফেসবুক ট্যুইটার ফেসবুকের দেওয়াল, রাস্তায় নেমে যুদ্ধের সংগে সমানতালে চলছে মায়াদুনিয়ায় পোস্ট আর পোলের লড়াই। সেসব যুদ্ধেরই কিছু আঁচ, দেয়ালের কিছু ভেংচি কাটা ছবির টুকরো, রইল এই সংকলনে।আপনাদের নজরে মণিমুক্তো কিছু এলে পাঠান এই ঠিকানায়, পরবর্তী দেয়াল লিখনের জন্য, guruchandali@gmail.com ... ...
তারপরই আসরে নামেন, হিন্দু বীর রা। একে তো নারীর শ্লীলতাহানি অতি স্পর্শকাতর বিষয়, জনসমাজে আলোড়ন ফেলার পক্ষে যথেষ্টর অধিক। তদুপরি মুসলমান ছেলে ও হিন্দু মেয়ের সমীকরণ। এসব ব্যাপারে রামচন্দ্রের যুগ থেকেই 'হিন্দু ভীর'রা কখনই অভিযোগের যাথার্থ্য বিচার করে কবে রাবণকে পুলিশে ধরবে, বা আদৌ ধরবে কিনা সেই 'ডিউ প্রসেস'এর জন্য অপেক্ষা করেননি। ফলে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেটিকে গণপিটুনি দেন। ছেলেটি মারা যায়। কীভাবে মারা গেল, এই দ্রুতগতির যুগে নিশ্চিত করে জানা যায়নি। একটি কাহিনী শোনা যাচ্ছে, যে, ছেলেটিকে ক্লাবে আটকে রাখা হয়,পরে সে বাড়ি গিয়ে আত্মহত্যা করে। ... ...
ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে এসে 'ভীর'রা তাঁদের শেষ সম্বলের আশ্রয় নেন, যার নাম আইটি সেল। গভীর রাতে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি গভীর বীরত্বব্যঞ্জক উদাত্ত আহ্বানঃ "যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ডের পাশে CAA সংক্রান্ত এক জনসভাকে কেন্দ্র করে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির কিছু নকশাল পন্থী পড়ুয়া এবং স্থানীয় হার্মাদ বাহিনী সভা বানচাল করার চেষ্টা করে। স্লোগান তোলে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সভা শেষে তারা স্টেজ ভাঙচুর করে, স্টেজে লাল ঝান্ডা গেড়ে দেয়, এবং সেই সময় উপস্থিত আমাদের মহিলা ও বরিষ্ঠ কর্মীদের উপর হাত তোলে। এদের এই সাহস ক্রমশই বেড়ে চলেছে।" ... ...
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বিধানসভার বিজেপি বিধায়কদের এক গোপন সভায় সর্বানন্দ সানোয়াল এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মার উপস্থিতিতে অসমীয়া বিধায়করা বাঙালী বিধায়কদের কোনঠাসা করে ফেলেন। সভায় দাবী ওঠে জনগণনায় অসমীয়া পরিচয় লেখাতে হবে বাঙালী হিন্দুদেরও। অথচ বাঙালী হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে আজও হিন্দুত্ববাদের রমরমা। সবাই বিশ্বাস করে বসে আছে কবে লাইনে দাঁড়াবে আর মোদিশা প্রত্যেকের হাতে একটা করে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেবে। মুসলিমদের যে বাদ দেওয়া হয়েছে তাতেও একাংশ প্রবল খুশী। শুধু ধর্মে হিন্দু হলে হবেনা। কর্মে বিজেপিও হতে হবে। জিঘাংসু অসমীয়া রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে পুচ্ছ আন্দোলন আর উচ্ছিষ্টভোগী বরাকের নেতৃত্ব মুসলিম বিতাড়ণ এর সুখস্বপ্নে বিভোর। তার বিনিময়ে যদি উপত্যকা বেচে দিতে হয় সেও ভি আচ্ছা। ধর্মীয় অত্যাচার কেন হবে, ভাষিক অত্যাচার হোক। ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জার্মানির চ্যান্সেলর আডলফ হিটলার 'বিশুদ্ধ জার্মান রক্তের জনমিতি' সুনিশ্চিত করার অবাস্তব অভিপ্রায়ে ইহুদি ও বামপন্থী নির্মূলের ডাক দিয়েছিলেন। ঠিক সেই উগ্রজাতীয়তাবাদ ও মানবতাবিরোধী কন্ঠের অসহিষ্ণু আর্তনাদ যেন এবার শোনা গেলো ভারতের মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক নানা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-মতের সহিষ্ণু সমাজে। গোটা বিশ্ব ভারতকে এতোকাল দেখেছে অসাম্প্রদায়িক বোধের ও চর্চার রোল মডেল হিসেবে। সেখানে আচম্বিতে লাখ লাখ মানুষকে রাতারাতি অনাগরিক ঘোষণা করে, এমনকি ডিটেনশন ক্যাম্প গড়ে মানবতা বিরোধী ক্রিয়াকলাপ রীতিমত বিস্মিত করেছে বিশ্বসমাজকে। ... ...
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিপর্যয় অব্যাহত। শিলিগুড়িতে বিজেপির মিছিলে একটি ষাঁড় ঢুকে পড়ে লন্ডভন্ড করে দিতে চলেছিল। কার্বাইনধারী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীরা থাকায় নেতারা কোনোক্রমে রক্ষা পান। অনেকেই ঠাট্টা করে বলছেন, একটা ষাঁড়েই এই অবস্থা, এন-আর-সি বিরোধী জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়লে কী যে হাল হবে বোঝা মুশকিল। এইসব ঠাট্টাতামাশার মধ্যেই থাবা বসাচ্ছে এন-আর-সি আতঙ্ক। কারণ বিষয়টা এতটুকুও ইয়ার্কির নয়। সংবাদপত্র সূত্র অনুযায়ী আতঙ্কে আরও এক মৃত্যু হয়েছে বাংলায়। মারা গেছেন লিয়াকত কারিগর। আপাতদৃষ্টিতে মৃত্যুর কারণ হৃদ্যন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া হলেও, পরিবারের লোক্জন জানিয়েছেন, মূল কারণ আতঙ্কই। ... ...
সামাজিক মাধ্যমে ঠাট্টাতামাশা চলছে, যে, বড় মিছিল করেও বিজেপির দুর্ভাগ্যের কোনো শেষ নেই। ঝাড়খন্ড থেকে উৎসাহ নিয়ে যে কর্মীরা এসেছিলেন, মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরে তাঁরা দেখেন, বিজেপি রাজত্বই চৌপাট হয়ে গেছে। এরই মধ্যে, বেশিরভাগ মানুষই, এমনকি খোঁজই রাখছেন না, প্রধানমন্ত্রী মোদী নাকি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আরও একটি সার্জিকাল স্ট্রাইক ঘটিয়ে ফেলেছেন। গোলযোগে পড়লেই তিনি পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেবার কথা ভাবেন, এবারও তাই। গতবার সার্জিকাল স্ট্রাইক করে নির্বাচনে উপকার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পরে দেখা গেছে, আদতে কয়েকটি পাইন গাছ এবং একটি কাক মারা ছাড়া কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ হয়নি, এবং বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখই পুড়েছে। সেই কান্ডের পর মোদীর বিশ্বাসযোগ্যতা এতই তলানিতে, এমনকি কোনো চরম ভক্তও এ নিয়ে মুখ খোলার সৎসাহস পাচ্ছেননা। ... ...
এসবের মধ্যেই পূর্ব ভারতের কেষ্টবিষ্টুদের বাঙালিবিরোধী কর্মপদ্ধতি অটুট। রাজ্যপাল ধনখড় বনহুগলীতে একটি সভায় বলেছেন, 'সংবিধানে বলা হয়েছে হিন্দিই আমাদের ভাষা। তাই ইংরেজির পাশপাশি হিন্দিতেও কথা বলার জন্য নিরন্তন প্রয়াস চালানো উচিত। সংবিধান অনুযায়ী হিন্দি আমাদের ভাষা।' সভাটি ছিল 'রাষ্ট্রীয় গতিশীল দিব্যাঙ্গ জন সংস্থা'র। কোনো বাঙালি যে এর অর্থ বলতে পারবেন না, এ মোটামুটি নিশ্চিত। আসামে মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, রাজ্য ভাষা হিসেবে অসমিয়াকেই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছেন অমিত শাহরা। এমনকী অসম বিধানসভার আগামী অধিবেশনে সেই বিষয়টি পাশ করিয়ে অসমের সব স্কুলে বাধ্যতামূলক অসমিয়া ভাষা রাখা হবে। শুধু তাই নয়, আনা হচ্ছে আরও একটি নতুন আইন। নতুন এই আইন অনুযায়ী অসমিয়া ছাড়া আর কেউ রাজ্যে জমি কিনতে পারবেন না। ... ...
অন্য এক সমালোচক জানিয়েছেন, এই প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক নয়। মুসলমানরা জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করতে বলা যায় বাধ্যই হচ্ছেন, কারণ তাঁদের উপরে প্রমাণ করার দায় চাপানো হয়েছে যে তাঁরা ভারতীয়। একই ভাবে বাঙালিদেরও প্রমাণ করতে হচ্ছে, তাঁরা মূলধারার ভারতীয়, বাংলাদেশী নন। সমষ্টিগত অবচেতনে হয়তো ব্যাপারটা কাজ করছে। কিন্তু সমস্যা হল, আলাদা করে কাউকে কিছু প্রমাণ করতে যাতে না হয়, সেজন্যই তো এ আন্দোলন। ভারতীয় হতে গেলেই যে এক ভাষায় কথা বলতে হয়না, বিভিন্ন আঞ্চলিকতা, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন ভাষার যোগফলই ভারতবর্ষ, এই স্পিরিটটা এই একই স্লোগানে থাকছেনা। একরকম করে অখণ্ড হিন্দুস্তানের প্রচারই চলছে যেন। ঐক্যবদ্ধ প্রমাণ করার জন্য আন্দোলনকারীরা আপ্রাণ হিন্দি বা উর্দু স্লোগান মুখস্থ করছেন। তামিল তেলুগু বাংলা নানা স্লোগান মুখস্থ করে তো দিচ্ছেন না। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য নয়, এ যেন যান্ত্রিক ঐক্য। ... ...
অন্তত ছজন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন গুলিতে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তারা গুলি চালায়নি। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের গুলিতে নিজেরাই মারা গেছেন। তাঁদের দাবী সত্যি হলে পৃথিবীতে প্রথমবার এরকম ঘটনা ঘটল, যে, বিক্ষোভকারীরা নিজের দলের লোককেই নিশানা করে গুলি করে মারছেন। সম্ভবত বিক্ষোভকারী খুব বেশি হয়ে গেছে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের ডিজি দাবী করেছেন, গোলমালের পিছনে বহিরাগতদের হাত আছে। অনেকে বাংলায় কথা বলছিল। বাঙালি মাত্রেই সন্দেহজনক, এবং উত্তরপ্রদেশে কেউ বাংলায় কথা বলতেই পারেনন, এই তথ্য অবশ্য নতুন না। বাঙালি বিদ্বেষের টুকটাক বিক্ষিপ্ত খবর ইতিপূর্বেও পাওয়া গেছে। ... ...
কী বুঝলেন? এই হল ফ্যাসিবাদ। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের ঘোষিত এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরপর তিনটি বড় বড় মিছিল করে জানান দেওয়া স্ট্যান্ড হল -- ক্যাব নয়, এনআরসি নয়। তবুও এখানে নির্বিবাদে প্রো-ক্যাব পথসভা হচ্ছে, মাইকিং হচ্ছে, ধর্মীয় মেরুকরণ করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। করছে এমন এমন সংগঠন, রাষ্ট্রীয় নাগরিক উদ্যোগ, সনাতন দল ইত্যাদি, যাদের নাম কস্মিনকালেও কেউ শোনেনি। কেউ কিছু বলছে না, না মানুষ, না পুলিশ। লোকে শুনছে কি শুনছে না সে কথা আলাদা। আর গুজরাতে দুটো দেওয়ালে দেওয়াল চিত্র এঁকেছে আর্ট কলেজের ছেলেমেয়েরা। No CAB Modi. 'o'-এর জায়গায় স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকেছে যা সারা পৃথিবীতে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ঘৃণিত হয়। তার জন্য পুলিশ পাঁচজন একুশ বাইশ বছরের ছাত্রকে অ্যারেস্ট করেছে। আরো দু-জনকে খুঁজছে। ... ...
কলকাতায় দুটি বিরাট মিছিল হয়েছে, যে খবর সকলেই জানেন। মুম্বাইতে হয়েছে বিশাল এক বিরাট বিক্ষোভ। কোথাওই গোলমালের খবর নেই। তা আসছে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ-শাসিত দিল্লি থেকে। লক্ষৌ এবং ম্যাঙ্গালোরের অবস্থা ভয়াবহ। আগুন জ্বলছে। গুলি চলেছে। অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারী মারা গেছেন বলে এখনও জানা গেছে। দিল্লিতে দমনপীড়ন নামিয়ে আনা হচ্ছে আন্দোলনের উপর। অন্তত ১০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তালিকায় আছেন প্রকাশ কারাত, যোগেন্দ্র যাদব এবং সীতারাম ইয়েচুরি। বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহকে। নাটকীয়ভাবে একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেবার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করার সময় তিনি পুলিশের অন্যায় গ্রেপ্তারি নিয়েই বলছিলেন। স্পষ্টতই 'রামচন্দ্র' বা 'সীতারাম' নামগুলি বিজেপির হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করেনি ... ...
তৃতীয়ত, শুধু হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে বিভেদ তৈরি করছে তা নয়। এই যে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত যারা, তাদের প্রমাণপত্র দিতে হবে, এ প্রমাণপত্র কী করে দেব। বলা হচ্ছে, তুমি যে ওদেশ থেকে চলে এসেছ, তোমার উপরে নিপীড়ন হয়েছে, সেই নিপীড়নের প্রমাণ দেখাও। সে সেই নিপীড়নের প্রমাণ দেখাবে কি করে? আমি অন্য দেশে ছিলাম, সেখানে আমি সংখ্যালঘু ছিলাম, সেখানে আমার উপর নিপীড়ন হয়েছে, আমি চলে এসেছি এই দেশে, সেই নিপীড়নের প্রমাণ আমি দেখাব কীকরে? আবার আমি যে এই দেশে জন্মেছি, এবং এই দেশের নাগরিক, তারই বা প্রমাণ দেখাব কীকরে? আমার নিজেরই কি বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমি যদিও এদেশে জন্মেছি, আমারই কি বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমার তো বার্থ সার্টিফিকেট পাওয়া যাবেনা। আমি দেখাব কীকরে? তা এই ভাবে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনকে যেভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে, অপমানের মধ্যে, প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, এবং একই সঙ্গে বিদ্বেষের বীজ বপন করা হচ্ছে, তা চিন্তা করা যায়না। ... ...
রাজ্যের কিছু হিংসাত্মক ঘটনার পর ফিসফিসিয়ে চলছে প্রচার। 'ওদের' নিয়ে। উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইলে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনার পর থেকে ফিসফিসিয়ে বা সোচ্চারে চলছে সাম্প্রদায়িক প্রচার। 'ওদের আন্দোলন', 'ওরা হিংসা ছড়াচ্ছে'। কিন্তু কী বলছেন স্থানীয় মানুষ? আমাদের হাতে আছে দুই সম্প্রদায়ের কিছু স্থানীয় মানুষের বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও। কী বলছেন তাঁরা? কী হয়েছিল? কী নিয়ে আন্দোলন? কারা করছেন? শোনা যাক, বক্তব্য। উলুবেড়িয়া থেকে সরাসরি. প্রকাশ করা হল গুরুচণ্ডালির পক্ষ থেকে। ... ...