পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রী ধনখড় যথারীতি আরও একবার অপমানিত হয়েছেন। বিনা নিমন্ত্রণেই তিনি গিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, কোর্ট সভায় যোগদান করতে। দলমত নির্বিশেষে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করায় মাঝপথেই আটকে পড়েন। নানা অপ্রীতিকর প্রশ্নের উত্তরও তাঁকে দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত মিটিং আর হয়নি।
আজই যাদবপুরের সমাবর্তন। শোনা যাচ্ছে সেখানে ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যপালকে বয়কট করে আরও একবার অপমান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এমন আইন প্রণয়ন করার দাবী করেছেন, যাতে কোনো রাজ্যপাল আর কোনো কোনো বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের আচার্য না হতে পারেন। কয়েক ধাপ এগিয়ে আরও কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যপাল পদটিই তুলে দেবার সুপরামর্শ দিয়েছেন। বিগত কোনো রাজ্যপাল এই ধরণের অভ্যর্থনার মধ্যে পড়েছেন বলে জানা নেই। তথাগত রায়ও এর মধ্যেই ছুটিতে, ধনখড়ও উপর্যুপরি অপমানিত, পূর্ব ভারত বেচারি রাজ্যপালদের অপমান ছাড়া আর কিছুই দিচ্ছেনা।
এরই মধ্যে কলকাতায় ছিল বিজেপির মিছিল। পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সি-এ-এ বিরোধী ছাত্রীকে সমাবর্তনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছেনা, উত্তরপ্রদেশ বা অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যেখানে বিজেপি-বিরোধী বিক্ষোভ হলেই চলছে গুলি, ধরপাকড়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শান্তিপূর্ণভাবেই নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার পালনের সুযোগ পাচ্ছে। মিছিলও করতে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল অবধি তাতেও হিন্দুত্ববাদীদের মিছিলে লোক হচ্ছিলনা। অনেকেই ঠাট্টাতামাশা করছিলেন, যে, বিজেপির উত্তর ভারতীয় নেতাদের কাছে স্থানীয় নেতারা লিলিপুট মাত্র। তাঁরা এলে তবেই লোকজনের টিকি দেখা যাবে। কারণ টিকি ওখানেই বাঁধা আছে। আজও দেখা যায় মিছিলে গাড়িতে চড়ে বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা ও সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গী। বাকিরা পদব্রজে।
মিছিলে ভিড় হয়েছিল ভালই। তবে সি-এ-এ ও এন-আর-সি বিরোধী ঝড়ের মধ্যে একটিমাত্র মিছিলে কর্মীদের মনোবল কতটা বাড়বে তাতে যথেষ্ট সন্দেহ। কারণ অনেকেই বলছেন, রীতিমতো উদ্যোগ নিয়ে ঝাড়খন্ড থেকে লোক আনা হয়েছিল মিছিলের জন্য। সামাজিক মাধ্যমে ঠাট্টাতামাশা চলছে, যে, বড় মিছিল করেও বিজেপির দুর্ভাগ্যের কোনো শেষ নেই। ঝাড়খন্ড থেকে উৎসাহ নিয়ে যে কর্মীরা এসেছিলেন, মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরে তাঁরা দেখেন, বিজেপি রাজত্বই চৌপাট হয়ে গেছে।
এরই মধ্যে, বেশিরভাগ মানুষই, এমনকি খোঁজই রাখছেন না, প্রধানমন্ত্রী মোদী নাকি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আরও একটি সার্জিকাল স্ট্রাইক ঘটিয়ে ফেলেছেন। গোলযোগে পড়লেই তিনি পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেবার কথা ভাবেন, এবারও তাই। গতবার সার্জিকাল স্ট্রাইক করে নির্বাচনে উপকার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পরে দেখা গেছে, আদতে কয়েকটি পাইন গাছ এবং একটি কাক মারা ছাড়া কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ হয়নি, এবং বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখই পুড়েছে। সেই কান্ডের পর মোদীর বিশ্বাসযোগ্যতা এতই তলানিতে, এমনকি কোনো চরম ভক্তও এ নিয়ে মুখ খোলার সৎসাহস পাচ্ছেননা।
এরই মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ঝাড়খন্ডে বিজেপির তুমুল পরাজয়। এন-আর-সি, এন-পি-আর, ক্যা বিরোধী প্রায় গণবিদ্রোহ, অন্যদিকে সার্জিকাল স্ট্রাইকের মহৌষধ কাজ না করা, দেশে এবং বিদেশে তুমুল সমালোচনা। এইত্রিমুখী ফাটা বাঁশের মধ্যে দাঁড়িয়ে মোদী সরকারের পরবর্তী চমকপ্রদ পদক্ষেপটি কী হয়, তাই দেখার।