মুসলমান সেজে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। এবার 'হিন্দু বীর' রা প্রত্যাশামাফিকই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ধর্মীয় গোলযোগ পাকাতে শুরু করেছেন। এবারের ঘটনা দত্তপুকুরের। গুরুচণ্ডালির সদস্য হাবড়ার বাসিন্দা সৈকত মিস্ত্রি জানাচ্ছেন, মূল ঘটনাটি সামান্যই। একটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলে দত্তপুকুরের আশেপাশে দোকান করে।হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মেয়ে তার দোকানে যায়। কিছু কেনা কাটা নিয়ে বচসা,তারপর শোনা যায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ।
তারপরই আসরে নামেন, হিন্দু বীর রা। একে তো নারীর শ্লীলতাহানি অতি স্পর্শকাতর বিষয়, জনসমাজে আলোড়ন ফেলার পক্ষে যথেষ্টর অধিক। তদুপরি মুসলমান ছেলে ও হিন্দু মেয়ের সমীকরণ। এসব ব্যাপারে রামচন্দ্রের যুগ থেকেই 'হিন্দু ভীর'রা কখনই অভিযোগের যাথার্থ্য বিচার করে কবে রাবণকে পুলিশে ধরবে, বা আদৌ ধরবে কিনা সেই 'ডিউ প্রসেস'এর জন্য অপেক্ষা করেননি। ফলে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেটিকে গণপিটুনি দেন। ছেলেটি মারা যায়। কীভাবে মারা গেল, এই দ্রুতগতির যুগে নিশ্চিত করে জানা যায়নি। সরাসরি খুন ছাড়াও একটি কাহিনী শোনা যাচ্ছে, যে, ছেলেটিকে ক্লাবে আটকে রাখা হয়,পরে সে বাড়ি গিয়ে আত্মহত্যা করে।
এরপর মৃত ছেলেটির কিছু পরিচিত ছেলে ক্লাব/পিটুনিদাতাদের পাল্টা মার দেয়। এই পাল্টা মার দেওয়া ছেলেরা ধর্মে মুসলমান। ব্যস, সুযোগ হাতে এসে যায় বীরদের। তারপরই শুরু হয়ে যায় তান্ডব। নানা গুজব ছড়ায়। শোনা যায় ধর্ষণের অভিযোগ। শোনা যায়, হিন্দু মন্দির ভাঙার কথা। হিন্দু বাড়ি ভাঙার কথা। এক কথায় নারী বিপদে এবং হিন্দুরা বিপদে।
'জয় শ্রীরাম' বলতে বলতে একদল মত্ত দুর্বৃত্ত আগুন জ্বালায়। রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে ট্রেন আটকায়। যশোহর রোড বন্ধ হয়ে যায়। বনগাঁ শাখার রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে আটকে থাকেন। সম্পত্তি নষ্ট করার বিরুদ্ধে, হয়রানির বিরুদ্ধে, যে বীররা এতদিন গলা ফাটাচ্ছিলেন, তাঁদের আর সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস নিয়ে কিছু বলতে অবশ্য শোনা যায়নি।
সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ায়, র্যাফ নেমেছে এলাকায়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সৈকত বলছেন, র্যাফ দূরস্থান, দীর্ঘক্ষণ পুলিশও দেখা যায়নি। বহু সময় পরে ফায়ার ব্রিগেড যায়। পুলিশ যায় রাত ১০টার পর যায়। মোটামুটি ১০-৩০ নাগাদ আবার রেল চলতে শুরু করে।
এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার এই, যে, এখনও ঘটনাটি নিয়ে সাম্প্রদায়িক কোনো উত্তেজনা ছড়ায়নি এলাকায়। বীরদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও। ভিডিওয় যেমন দেখা যাচ্ছে, গুটিকয় উন্মত্ত লোকই গোলমাল পাকায়, তার বেশি লোকজন জড়ো হয়নি। তবে ভবিষ্যতেও এই লাইনে আরও নানা চেষ্টা চলবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।