রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি খাতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এন-আর-সির সঙ্গে এন-পি-আর এর কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও কদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো খুব পরিষ্কার ভাবে জানিয়েছিল, যে, এন-পি-আরই হল এন-আর-আই-সির প্রথম ধাপ। অমিত শাহ নিজেই খুব জোর গলায় এন-আর-সি করেই ছাড়বেন জানিয়েছিলেন। তারও আগে শ্রীযুক্ত দিলীপ ঘোষ তো কতজনকে তাড়ানো হবে তার সংখ্যাই বলে দিয়েছিলেন। তিনি বাংলা থেকে এক কোটি এবং দেশ থেকে দু কোটি বাংলাদেশী তাড়ানো হবে বলে জানিয়েছিলেন। কোথা থেকে এত বাংলাদেশী পেলেন, তিনি মুখ দেখেই বাংলাদেশী চিনে ফেলেন কিনা, বা অবিজেপি বাঙালি মাত্রেই বাংলাদেশী কিনা, সে নিয়ে অবশ্য কিছু বলেননি। ব্যাপারটা মোটেই হাসিঠাট্টার না হলেও, এ নিয়ে নেট দুনিয়ায় ইয়ার্কি হয়েছে বিস্তর। দিলীপ ঘোষ অন্তত কোটি দুই লোককে না তাড়ালে জেতার কাছাকাছিও পৌঁছতে পারবেন না। তাই নিজেই ঠিক করে দেবেন, কারা ভোট দেবে, তারপর ভোটে লড়বেন। এইসব নানা রসিকতায় মুখর হয়েছিল চারদিক।
মোদী-শাহের কারবার নিয়েও ঠাট্টা কম হচ্ছেনা। 'এন-পি-আর এর সঙ্গে এন-আর-সির কোনো সম্পর্ক নেই' শুনে অনেকে বলছেন, কথাটা ঠিকই। অমিত শাহের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির। সরকারের সঙ্গে দেশের এবং নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আর-এস-এস-এরও কোনো সম্পর্ক নেই। ও সবই উপর উপর, সবার উপরে ঈশ্বর, আর তার নিচে দেশের আসল চালিকাশক্তি হলেন আম্বানিরা।
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিপর্যয় অব্যাহত। শিলিগুড়িতে বিজেপির মিছিলে একটি ষাঁড় ঢুকে পড়ে লন্ডভন্ড করে দিতে চলেছিল। কার্বাইনধারী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীরা থাকায় নেতারা কোনোক্রমে রক্ষা পান। অনেকেই ঠাট্টা করে বলছেন, একটা ষাঁড়েই এই অবস্থা, এন-আর-সি বিরোধী জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়লে কী যে হাল হবে বোঝা মুশকিল।
এইসব ঠাট্টাতামাশার মধ্যেই থাবা বসাচ্ছে এন-আর-সি আতঙ্ক। কারণ বিষয়টা এতটুকুও ইয়ার্কির নয়। সংবাদপত্র সূত্র অনুযায়ী আতঙ্কে আরও এক মৃত্যু হয়েছে বাংলায়। মারা গেছেন লিয়াকত কারিগর। আপাতদৃষ্টিতে মৃত্যুর কারণ হৃদ্যন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া হলেও, পরিবারের লোক্জন জানিয়েছেন, মূল কারণ আতঙ্কই।
স্বভাবতই ঘনীভূত হয়েচ্ছে আন্দোলনও। যাদবপুরে সমার্তনের দিনও চলেছে তুমুল বিক্ষোভ। রাজ্যপাল দেড়ঘন্টা গাড়িতে আটকে থেকে সমাবর্তনে পৌঁছতে না পেরে ফিরে গেছেন। একটি বিষয়ের প্রথম স্থানাধিকারী ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী মঞ্চে উঠে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান। তারপর চিৎকার করে বলেন, 'হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে'। প্রসঙ্গত আন্দোলনের আবেগের প্রতি সম্পূর্ণ সহমর্মী হয়েও, ইন্টারনেটে আজও কিছু মানুষ হিন্দি ভাষার অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছেন। সেই আবহে দেবস্মিতার প্রতিবাদের ভাষা আরও কিছু প্রশ্ন তোলে কিনা সেটাই দেখার।
সর্বশেষ আপডেট। এসে গেছে গুরুচণ্ডা৯ এবং লেট ৬৬এ র যৌথ প্রযোজনায় নতুন গান। বিশদ বিবরণ পরে।