যা ঘটে চলেছে, তার বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত। ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় প্রতিটি রাজ্যে, প্রতিটি বড় শহরে। উত্তরপ্রদেশে প্রবল রক্তক্ষয় হয়েছে। অন্তত ছজন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন গুলিতে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তারা গুলি চালায়নি। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের গুলিতে নিজেরাই মারা গেছেন। তাঁদের দাবী সত্যি হলে পৃথিবীতে প্রথমবার এরকম ঘটনা ঘটল, যে, বিক্ষোভকারীরা নিজের দলের লোককেই নিশানা করে গুলি করে মারছেন। সম্ভবত বিক্ষোভকারী খুব বেশি হয়ে গেছে।
এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের ডিজি দাবী করেছেন, গোলমালের পিছনে বহিরাগতদের হাত আছে। অনেকে বাংলায় কথা বলছিল। বাঙালি মাত্রেই সন্দেহজনক, এবং উত্তরপ্রদেশে কেউ বাংলায় কথা বলতেই পারেনন, এই তথ্য অবশ্য নতুন না। বাঙালি বিদ্বেষের টুকটাক বিক্ষিপ্ত খবর ইতিপূর্বেও পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যম ভেসে যাচ্ছে 'উসকানিদাতা'দের খবরে। গুরুতে গতকালের খবর প্রকাশের পর থেকে সংবাদপত্রে অজস্র খবর আসছে, যেখানে হিন্দুত্ববাদীরা 'মুসলমান বিক্ষোভকারী' সেজে কোথাও ইট ছুঁড়ছেন ট্রেনে, কোথাও আগুন দিয়ে ফটোশুট করছেন। সঙ্গে আরও একটি খবর খুবই কৌতুহলোদ্দীপক, যে, গোলমালের খবর আসছে কেবলমাত্র বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি থেকেই। মুম্বই, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ সহ অ-বিজেপিশাসিত সমস্ত রাজ্যে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ।
উসকানি, দমন-পীড়ন, নাকি পিছু হটা, বিজেপি এই ত্রিমুখী নীতি নিয়ে চলছে, নাকি তারা ফাঁপরে বোঝা যাচ্ছেনা। একদিকে বিপির সরকারি হ্যান্ডল থেকে একটি টুইট মুছে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা ছিলঃ তাঁরা গোটা দেশেই এন-আর-সি চালু করবেন ("We will ensure implementation of NRC in the entire country. We will remove every single infiltrator from the country, except Buddha, Hindus and Sikhs")। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহও সংসদে জোরগলায় তাইই বলেছিলেন। এখন শুধু টুইট মুছে দেওয়া নয়, সংবাদপত্রে বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হচ্ছে, এন-আর-সি এখনই হচ্ছে না। কে মিথ্যে বলছেন, সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না সরকার, বোঝা মুশকিল। তবে খুব সম্ভবত এটা সাময়িক পিছু হটা। আজ না হয়ে একমাস পরে এন-আর-সি চালু হলে দুই পক্ষেরই মান থাকবে।
সরকারের এই গোলমেলে পদ্ধতিতে আন্দোলন থামছেনা। এন-আর-সি বিরোধিতায় আরেক ধাপ এগিয়েছে কেরল সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে এনপিআর করা হবেনা ঘোষণা করে দিয়েছে।
এরই মধ্যে কর্ণাটকের বিজেপি মন্ত্রী জানিয়েছেন, এসব চলতে থাকলে, সংখ্যাগুরু কিন্তু গোধরা করে দিতে পারে। বিজেপি কেন্দ্রীয় ভাবে তার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছুই বলেনি। বিজেপি নেতৃত্ব এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহে কিছুটা দিশেহারা। গরম-নরম নীতির কতটা মিশ্রণ হলে তাঁরা খেলা ঘোরাতে পারবেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। ইতিপূর্বেই তাঁরা দিল্লির শাহী ইমামকে পকেটে পুরে ফেলে বিষয়টা ধামাচাপা দেবার মরীয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আন্দোলন যে স্রেফ ধর্মীয় আন্দোলন নয়, সেটা প্রমাণ করার জন্যই দিল্লির জামা মসজিদে শাহী ইমামকে প্রায় পরিত্যক্ত করে সমবেত মুসলমানরা নেতা হিসেবে বেছে নেন জন্মসূত্রে হিন্দু চন্দ্রশেখর আজাদকে।
আন্দোলন তুঙ্গে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতেও কোনো ফাটল দেখা যাচ্ছেনা, এখনও পর্যন্ত।