আন্দোলন যখন কার্নিভ্যাল হয়ে ওঠে, তখন অনিবার্যভাবেই জন্ম দেয় কিছু সৃষ্টিশীল কারুকর্মের। তারই একটা ছোট্টো সংকলন রইল এখানে। মতামতগুলি অবশ্যই গুরুচণ্ডা৯র নয়।
মেট্রোতে আবর্জনা, NRC, CAA ফেলবেন না, ডাস্টবিনে ফেলুন। দেশকে পরিষ্কার রাখুন।
-- কলকাতা মেট্রোয় দেয়াল লিখন।
স্বচ্ছ ভারত, এন-আর-সি মুক্ত ভারত।
-- কলকাতার প্ল্যাকার্ড থেকে
যব হিন্দু-মুসলমান রাজি, কেয়া করেগা নাজি
-- দিল্লির আন্দোলনকারীর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড থেকে।
রাস্তা বন্ধ আছে। দেশ পরিষ্কারের কাজ চলছে।
-- কলকাতার অবরুদ্ধ রাস্তায় আন্দোলনকারীর হাতের পোস্টার।
মোদী তোর কাগজ কোথায়?
-- অর্ণব সাহা, ফেসবুক।
আমার নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণ রাফায়েল চুক্তিপত্রের সঙ্গেই পিএমওতে রাখা ছিল। একটা খুঁজে পেলেই অন্যটা পাওয়া যাবে। ধন্যবাদ।
-- অয়ন চক্রবর্তী, ফেসবুক।
এই "আজাদি" স্লোগানটা দাসত্বের স্লোগান। হিন্দির দাসত্ব । উর্দুর দাসত্ব। দিল্লির দাসত্ব।
-- গর্গ চট্টোপাধ্যায়, ফেসবুক।
মিছিল পুরনো বন্ধুদের ফিরিয়ে দেয়, পুরনো সাথীদের। মিছিল সমুদ্রের মতো। কতো স্বপ্ন, আশা, দিন বদলের গান, সব ফিরে ফিরে আসে।
এই মিছিলেও এলো। উনিশে ডিসেম্বরের এই শীতদুপুরে মৌলালি রামলীলা ময়দান থেকে সতেরটি বাম দলের ডাকা এনার্সি, ক্যা বিরোধী মিছিলে হাঁটতে গিয়ে দেখলাম সব ধরনের মানুষ পা মিলিয়েছেন। ছাত্ররা আছে তাদের বিখ্যাত আজাদি শ্লোগান নিয়ে। আমার বয়েসিরাও পাশ দিয়ে যাবার সময় চাপা গলায় তাতে গলা মিলাচ্ছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা কেউ নিয়ে এসেছেন বিরাট বিরাট কুশপুত্তলি, দলের পতাকা আর জাতীয় পতাকা। যেন স্বৈরাচারীদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া আমার দেশের পতাকা। কাড়ছে সাধারণ মানুষ। হাঁটছিলাম, আর ভাবছিলাম, তানাশাহী নেহি চলেগার বাংলা কি মামদোবাজি চলবে না হতে পারে। কারণ একের পর এক এই সরকার যা ক'রে চলেছে তাতে মামদোবাজি ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না। দেশের আইন আদালত মন্দির মসজিদ মানুষের জান প্রাণ সব কি ওদের জিম্মায় থাকবে নাকি ? বর্বর ধর্মীয়ভাবে উন্মাদ মামদোদের হাতে ?
তাই মামদো তাড়াবার জন্য যতগুলো মিছিলে যেতে হয় যাব। যা করতে হয় করব।
মামদোবাজি নেহি চলেগা।
- প্রতিভা সরকার, ফেসবুক।
মুম্বই, আগস্ট ক্রান্তি ময়দান, ১৯শে নভেম্বর।
চারিদিকে শুধু কালো কালো মাথা। স্রোতের মত মানুষ আসছেন। কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা নেই, নেই কোনও গন্ডগোল। আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে এত জায়গা নেই যে এত অসংখ্য মানুষকে সঙ্কুলান করে। তাই মানুষের ভীড় ময়দান ভরে উপচে পড়েছে পাশের রাস্তায়। স্টেজের বক্তৃতা সেই দূরত্বে পৌঁছচ্ছে না। তাই তৈরী হয়েছে আরও অজস্র ছোট ছোট জটলা। কোথাও আওয়াজ উঠছে “হামে চাহিয়ে আজাদী”, কোথাও “জয় ভীম”, কোথাও বা “ছাত্র একতা জিন্দাবাদ।” কোথাও হচ্ছে বব ডিলান, কোথাও “উই শ্যাল ওভারকাম”, কোথাও “রংগ দে বাসন্তী চোলা”।
কে নেই সেই ভীড়ে? অশীতিপর বৃদ্ধা, পায়ে প্লাস্টার করা অসুস্থ মানুষ, শিশু কোলে মা। সবথেকে বেশি নজরে পড়ছে অল্প বয়স্ক তরুণ তরুণী। আমাদের ভবিষ্যৎ। আমাদের আলো। হাতে হাত ধরে তারা শপথ নিচ্ছে এই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাঁচিয়ে রাখার। জনপ্রিয় অভিনেতার সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাধারন মানুষ। স্টেজ থেকে আওয়াজ উঠছে, “জোর সে বোলো”।।। জনসমুদ্র গর্জে উঠছে “হাম সব এক হ্যায়”।
যতক্ষণ এই একতা আছে, মোদী-শাহ কেন, হিটলারের বাপেরও সাধ্যি নেই, আমার ভারতের এতটুকু ক্ষতি করে।
- অভিজিত মজুমদার, ফেসবুক।
এত জায়গায় প্রতিবাদ হচ্ছে ক্যা(ব)-এর, পুলিশ ক্যা-লাচ্ছে, আমার উৎসুক মন জানতে চাইল -- গুজরাতে কী হচ্ছে? সত্যিই তো, ফাটকার টাকায় এমএলএ এমপি গায়ক নায়ক খেলোয়াড় সব কেনা যায়, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কিনে নেওয়া যায় না। নাকি যায়? গুজরাতে কি সব মগজ ধোলাই?
উইকিপিডিয়ার পেজ-টা খুললাম। /wiki/Citizenship_Amendment_Act_protests কী দেখলাম? দেখলাম গুজরাতে মহারাজা সায়াজিরাও ইউনিভার্সিটির ফাইন আর্টস ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন ছাত্র (বিশের কোঠার প্রথম দিকে) একটা দেওয়াল চিত্র তৈরি করেছিল -- No CAB Modi. এর মধ্যে o গুলোর বদলে নাজিবাহিনীর ফ্যাসিস্ট স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকেছিল। ব্যস। ১৬ তারিখে যারা এঁকেছিল তাদের নামে এফআইআর হয় -- for "using provocative and humiliating words to hurt sentiments of the people from one community and cause violence, and also damaging public property" (একটি কৌমের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত ও উসকানিমূলক এবং অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করা এবং জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করা)। ১৭ ডিসেম্বর পাঁচজন ছাত্রকে এগুলো আঁকার দায়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরো দু-জন পালিয়ে বেড়াচ্ছে, পুলিশ খুঁজছে।
কী বুঝলেন? এই হল ফ্যাসিবাদ। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের ঘোষিত এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরপর তিনটি বড় বড় মিছিল করে জানান দেওয়া স্ট্যান্ড হল -- ক্যাব নয়, এনআরসি নয়। তবুও এখানে নির্বিবাদে প্রো-ক্যাব পথসভা হচ্ছে, মাইকিং হচ্ছে, ধর্মীয় মেরুকরণ করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। করছে এমন এমন সংগঠন, রাষ্ট্রীয় নাগরিক উদ্যোগ, সনাতন দল ইত্যাদি, যাদের নাম কস্মিনকালেও কেউ শোনেনি। কেউ কিছু বলছে না, না মানুষ, না পুলিশ। লোকে শুনছে কি শুনছে না সে কথা আলাদা।
আর গুজরাতে দুটো দেওয়ালে দেওয়াল চিত্র এঁকেছে আর্ট কলেজের ছেলেমেয়েরা। No CAB Modi. 'o'-এর জায়গায় স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকেছে যা সারা পৃথিবীতে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ঘৃণিত হয়। তার জন্য পুলিশ পাঁচজন একুশ বাইশ বছরের ছাত্রকে অ্যারেস্ট করেছে। আরো দু-জনকে খুঁজছে।
এখনও সময় আছে। বিরোধিতা করুন।
- শমীক সরকার, ফেসবুক।