গণবিদ্রোহের এই পঞ্চম দিন খবর প্রতি মুহূর্তেই পুরোনো হয়ে যাচ্ছে। সংক্ষেপেঃ
গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে জনজোয়ার, যা ছাত্রছাত্রীদের গন্ডী ছেড়ে জনসমাজের বিক্ষোভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু সহ অন্তত ১৩ টি বড় শহর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। আমেরিকা, ইউরোপের অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যাল্যেও হয়েছে প্রতিবাদ।
দেশের বহু জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ। রাজধানী দিল্লিতেই সরকার নানা জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছে। অন্তত ১৩টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ, প্রচুর জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি। গুরগাঁওতে পুলিশ নিজেই ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে রেখেছে। প্রসঙ্গত চিলের রাজধানী সান্তিয়াগোতেও স্বৈরতান্ত্রিক সরকার বিক্ষোভ ঠেকাতে একই রকম ব্যবস্থা নিয়েছিল। তাতে কী ফল হয়েছে, আমরা সবাই জানি।
এরই মধ্যে ইন্টারনেটে ভাসছে 'বাঙালি-বিরোধিতা'র শঙ্কা। আউটলুকের এক সম্পাদক সুনীল মেননের একটি টুইট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, আগামীকাল গুরগাঁওয়ের বাঙালি ঝুপড়ি ভেঙে দেবার কথা মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে।
The lady who works at my house. Staring out into the fog at her home, a jhuggi cluster, far below. They came and announced on mikes that all "Bengali jhuggis" will be demolished tomorrow.
— Sunil Menon (@kazhugan) December 19, 2019
What is happening? @gurgaonpolice @cmohry @mlkhattar#CAA_NRC pic.twitter.com/WAbIC9cBps
উত্তর-পূর্বে টানা আটদিন ধরেই ইন্টারনেট নেই। বিক্ষোভ বন্ধ রাখতে ১৪৪ ধারা দিল্লিতে, বেঙ্গালুরুতে। শুনা যাচ্ছে গোটা উত্তরপ্রদেশেও সেই একই অবস্থা। হায়দ্রাবাদেও ১৪৪ ধারা জারি। যোগাযোগ বন্ধ। আন্দোলন নিষিদ্ধ। আন্দোলনে হিংসার সম্ভাবনার কারণেই নাকি এমন ব্যবস্থা। যদিও হিংসার অভিযোগ আসছে সরকার-পক্ষের বিরুদ্ধেই। মুর্শিদাবাদে ট্রেনে আগুন দেবার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল কয়েকদিন আগে। ছবির যুবক গ্রেপ্তার হয়েছেন কলকাতা থেকে। অভিযোগ, তিনি আর-এস-এস কর্মী, এক নেতার বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। বেলডাঙায় ইতিপূর্বেই অন্য একজন ধরা পড়েছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সংবাদপত্র সূত্রে জানা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ থেকে আরও ছজন ধরা পড়েছেন ট্রেনে ঢিল ছোঁড়ার একটি ভিডিও শুট করার সময়। 'জামিয়া মিলিয়া'র বোরখা-পরা এক পুরুষ 'ভক্ত'র ছবিও ভাইরাল ছবি হয়েছে কাল। হিংসায় উস্কানির প্রতিটি অভিযোগই একই দিকে যাচ্ছে।
তারপরেও বিক্ষোভ চলছে। কলকাতায় দুটি বিরাট মিছিল হয়েছে, যে খবর সকলেই জানেন।
মুম্বাইতে হয়েছে বিশাল এক বিরাট বিক্ষোভ। কোথাওই গোলমালের খবর নেই। তা আসছে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ-শাসিত দিল্লি থেকে। লক্ষৌ এবং ম্যাঙ্গালোরের অবস্থা ভয়াবহ। আগুন জ্বলছে। গুলি চলেছে। অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারী মারা গেছেন বলে এখনও জানা গেছে।
দিল্লিতে দমনপীড়ন নামিয়ে আনা হচ্ছে আন্দোলনের উপর। অন্তত ১০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তালিকায় আছেন প্রকাশ কারাত, যোগেন্দ্র যাদব এবং সীতারাম ইয়েচুরি। বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহকে। নাটকীয়ভাবে একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেবার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করার সময় তিনি পুলিশের অন্যায় গ্রেপ্তারি নিয়েই বলছিলেন। স্পষ্টতই 'রামচন্দ্র' বা 'সীতারাম' নামগুলি বিজেপির হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করেনি।
ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ গ্রেপ্তার
সব মিলিয়ে বিজেপি-শাসিত এলাকাগুলিতে পুলিশি রাজত্ব চলছে। নেটনাগরিকরা ঠাট্টা করে বলছেন, কাশ্মীরকে 'ভারত' বানাতে গিয়ে এই সরকার, গোটা ভারতকেই কাশ্মীর বানিয়ে দিল। সেটা বোধহয় আর খুব ঠাট্টাও নয়।