আজকের গোলমাল যাদবপুরে। এন-আর-সি বিরোধী সভা ডাকলেই বিপুল ভিড় হচ্ছে। এমনকি যে সমস্ত সংগঠনরা এতদিন মাছি তাড়াতেন, এন-আর-সির বিরুদ্ধে মাইক নিয়ে বলতে উঠলেই তাঁদের জমায়েত শুনতেও লোকে হাজির, অনেকেই একে মোদী সরকারের কৃতিত্ব বলছেন। উল্টোদিকে হিন্দুত্ববাদী জমায়েতে লোকজন দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই তাঁরা গেরিলা টেকনিক নিয়েছেন। যাদবপুরের কাছে একটি নারীবাদী গোষ্ঠীর এন-আর-সি বিরোধী সভা ছিল। সভার শেষে বাঘাযতীনে একটি চায়ের দোকানে তাঁরা চা খাচ্ছিলেন। ভিড় কম ও মহিলা, সম্ভবত এই যুগলবন্দী থেকে কয়েকজন হিন্দু বীর মুখোশ এঁটে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিতে-দিতে তাঁদের আক্রমন করেন। পরিকল্পনা ছিল আক্রমন করেই গেরিলা কায়দায় পশ্চাদপসরণ করার। কিন্তু, এমনকি ফাঁকা জায়গায়ও আজকাল 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি শুনলেই প্রতিরোধ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে একজন ধরা পড়েন। তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী, শোনা যাচ্ছে, এক কথায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে মিথ্যেবাদী বলেছেন। দিল্লিতে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কাল বলেছেন, এন-আর-সি নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে কোথাও কোনো কথাই হয়নি। ওদিকে কদিন আগেই তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওর গলায় বলেছিলেন, এন-আর-সি করেই ছাড়বেন। তার কদিন আগে রাষ্ট্রপতিও সংসদে একি কথা বলেছিলেন। অবশ্য এও হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর বা নিজের সুট নিয়ে চিন্তায় বিভোর থাকায় শুনতে পাননি। অথবা রাষ্ট্রপতি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেন না। কোনটা ঠিক জানা যায়নি।
উত্তরপ্রদেশে হিংসা অব্যাহত। মার ধোর, গুলিগোলা তো ছিলই, শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী যোগি এখন 'শিক্ষা' দেবার পদ্ধতি নিয়েছেন। এন-আর-সি-বিরোধী জানলেই দোকানদারদের দোকানে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে তালা। এ কাজ আইন বা সংবিধান সম্মত কিনা সে প্রশ্ন কেউ অবশ্য আর তুলছেন না। এই সময়ে প্রশ্নটাই অর্থহীন।
এসবের মধ্যেই পূর্ব ভারতের কেষ্টবিষ্টুদের বাঙালিবিরোধী কর্মপদ্ধতি অটুট। রাজ্যপাল ধনখড় বনহুগলীতে একটি সভায় বলেছেন, 'সংবিধানে বলা হয়েছে হিন্দিই আমাদের ভাষা। তাই ইংরেজির পাশপাশি হিন্দিতেও কথা বলার জন্য নিরন্তন প্রয়াস চালানো উচিত। সংবিধান অনুযায়ী হিন্দি আমাদের ভাষা।' সভাটি ছিল 'রাষ্ট্রীয় গতিশীল দিব্যাঙ্গ জন সংস্থা'র। কোনো বাঙালি যে এর অর্থ বলতে পারবেন না, এ মোটামুটি নিশ্চিত।
আসামে মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, রাজ্য ভাষা হিসেবে অসমিয়াকেই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছেন অমিত শাহরা। এমনকী অসম বিধানসভার আগামী অধিবেশনে সেই বিষয়টি পাশ করিয়ে অসমের সব স্কুলে বাধ্যতামূলক অসমিয়া ভাষা রাখা হবে। শুধু তাই নয়, আনা হচ্ছে আরও একটি নতুন আইন। নতুন এই আইন অনুযায়ী অসমিয়া ছাড়া আর কেউ রাজ্যে জমি কিনতে পারবেন না।
এই আইন পাশ হলে, নিঃসন্দেহে আসামের বাঙালিদের উপর তা বিরাট আঘাত। এবং ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামো নিয়েই পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন, মনে করছেন অনেকে। এ নিয়ে তেমন হেলদোল অবশ্য দেখা যাচ্ছেনা। উত্তরপ্রদেশের অবস্থা এবং ঝাড়খন্ডের নির্বাচনের ফল, এ নিশ্চয়ই আসামের চেয়ে অনেক বড় খবর। আসমুদ্র হিমাচল তাই নিয়েই ব্যস্ত।