এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পাহাড়ি হাওয়ায় পতপত ওড়ে কাগজের  বাঘ, আর শাল সেগুনের বনে চরে খায় পুঁজির হরিণ। 

    দধীচি মুনি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৮২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • উত্তরবঙ্গের বক্সা বাঘ প্রকল্পের ভেতর দিয়ে তিরতিরে এক নদী।সেই নদীর পাশে মেঘ মেঘ পাহাড়ের তলায় জয়ন্তী গ্রাম।গ্রামের মানুষ কমতে কমতে এখন জনা কয়েক। বাঘ প্রকল্প হবার আগে, এখানে অবশ্য মানুষ ছিল অনেক। বাঘও  ছিল বই কি! সরকারী হিসেবেই খান তিরিশ। আরও ছিল সিন্ধিয়ার কোম্পানি। গোটা চার ডলোমাইট খনি। রেললাইন ।তারপর একদিন সব সংরক্ষিত হল। মানুষ ভেবেছিল, এবার তারা ভাল থাকবে খানিক। বাঘেরাও তেমনই ভেবেছিল, মনে হয়।অথচ, বছর চল্লিশ পরে আজ, তারা আর তেমন করে ভাবছে না।তারা বলতে, মানুষগুলোই।বাঘেরা তো নেই।চলে গেছে। কিন্তু গেল কই? কেউ বলেন, ভুটানের দিকে। আবার কেউ চুপি চুপি অন্য কথাও বলতে চান।ভয়ে ভয়ে।ভাবতে, বলতে কি দেওয়াও হয় তাদের? 

    বনদপ্তরের বাবুদের আনাগোনা গ্রাম জুড়ে।বাবুরা মানুষের ভাল চান।বাঘেদেরও।তাই জঙ্গলের মধ্যিখানের এই গ্রাম তাদের ছেড়ে দিতে বলেন।মানুষ থাকায় বাঘেদের নাকি কষ্ট বাড়ছে।তা ছাড়া সেই গ্রামে আছে গুটিকয় হোমস্টে। নদীর বুক শূন্য করে চুরি যায় বোল্ডার।আদালতে মামলা চলে।তবু নিষ্পত্তি হয় না। বনবাবুদের অভিযোগ অনেক।কিন্তু তারা ভাল চান।পুনর্বাসন দিতে চান। 

    সে গ্রামের কেউ কেউ অবশ্য অন্য কথাও বলেন।ইতি উতি চৌদিক পানে চেয়ে, আমতা আমতা করে ঢোঁক গিলে ফিসফিস করেন  - হ্যাঁ গা.. বাঘেদের কষ্ট আমরা কি চাইতে পারি? যুগান্ত ধরে আমরাই তো ওদের বাঁচিয়েছি।আর ওরা আমাদের।কিন্তু সেই বাঘই তো নেই আর! এই জঙ্গল, পাহাড়, নদী - সব ছেড়ে তারা চলে গেছে সেই কবে! বনবাবুরা বাঘেদের জমিতে শাল সেগুনের চারা লাগালেন।ঘাস জমি গেল মরে।ঘাস খাওয়া জীব প্রথমে গেল।তারপর গেল খেতে না পাওয়া বাঘ।আমরাও তো আর খেতে পাই না।খনি বন্ধ।কোম্পানি কবেই উঠে গেছে।হোমস্টে’কটা ছিল বলে একবেলা জোটে কিছু।শহরের মানুষ আসেন।তাও, বনবাবুদের পাহারা কম নয়।কে এল, কে গেল, বাস থামিয়ে গুনতি করা হয়।শুধু বাঘগুলোকে গুনে  রাখতে কেউ বেমালুম ভুলে গেল! আজ আমাদের মাটি ছেড়ে আমাদের চলে যেতে বল, কিন্তু যাব কই গো? মানুষের বাজারদর তো বাঘের চাইতেও কম! 

    মেঘলা গ্রামের ধার ধরে বওয়া ঠান্ডা বাতাসের সাথে সেই ফিসফিস মিলে পাহাড়ে পাহাড়ে শনশন পাক খেয়ে যায়। শহর অবধি আর পৌঁছাতে পারে না। 

    কিন্তু পড়াশোনা করা বনবাবুরা বাঘেদের ভাতে মেরে এমন শাল সেগুনের চারা লাগালেন কেন? এ প্রশ্নেরও উত্তর আসে না।কানাঘুষো, এসব গাছের বাজারদর অনেক।বাঘেদের মতই। 

    অথচ, ভারতীয় সংবিধান কি এমন কথা বলে? দুহাজার ছয় সালের বনাধিকার আইন কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দেয়। জঙ্গলের মালিকানা নাকি গ্রামসভার। তাতে বনদপ্তর হাত দিতে পারে না।বরং, বনের বুকের ভেতর এসব গ্রামের রাজস্ব-গ্রাম হবার কথা।আর এই মানুষগুলোর পাবার কথা বনভূমির পাট্টা। 

    সে সব কথা থাক।এমন অনেক কিছুই তো হবার কথা। তা কি আর হয়! অভিযোগ করা সার। আর করলেই বা শুনছে কে? সামান্য কটা বনমানুষ উদবাস্তু হলে এই বিপুলা নাগরিক সমৃদ্ধির কতটুকুই বা ক্ষতিবৃদ্ধি? হয়তো সেই ছেড়ে যাওয়া জমিতে একদিন হবে চোখ ধাঁধানো রিসর্ট।এমিউজমেন্ট পার্ক।সভ্যতার উন্নয়ন দরকার।বিনোদনেরও।

    তাও কিছু যেন একটা খচখচ করে ভিতরে।কী, সেটা ঠাহর হয় না। কাঁটাও অনেকদিন ভিতরে রইলে নরম হয়ে আসে।ক্ষতের তলা না শুকিয়ে বাইরে চামড়া উঠে যায়।জপ করতে করতে ফাঁক পেলেই ঠাকুম আমায় নওগাঁর গল্প বলত খালি।আটচল্লিশের পর এতগুলো দীর্ঘ বছর, ঠাকুমের কি আর কোন গল্প তৈরী হয় নি? উদবাস্তু ঠিক ছিলাম না আমরা। বর্ণহিন্দু তো। জমি বদল হয়েছিল।তবু মূল তো সেই ছিঁড়েছিল।কোন পুনর্বাসন গাছকে তার মূল থেকে তুলে আগের মতন বাঁচিয়ে রাখতে পারে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৩৭539145
  • ভালো লাগলো এই লেখাটা।
  • | ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০২539147
  • বিরাট একটা মন্তব্য করে পোস্ট করতে গিয়ে দেখি।পোস্ত ডিলিটেড। আবার এলো, দেখি এবারে কতটা লেখা যায়। 
     
    উত্তরবঙ্গ সিকিম চষে বেড়ানো এক বন্ধু বলছিল সেই যে বামফ্রন্টের আমলে সরকার থেকে শ্লোগান দিয়েছিল একটা সেগুন গাছ মানে একটা মেয়ের বিয়ে বা ওইরকমই কিছু,  তাতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে গাদা গাদা শাল সেগুনের চারা বসিয়ে দিয়েছিল বক্সা চিলাপাতায়। সরলবর্গীয় বৃক্ষের মধ্যে ছোট জন্তু থাকতে পারে না, নীচের দিকটায় ঝোপঝাড় না থাকায় লুকানোর জায়গা পায় না। ফলে ফুডচেন ধরে বাঘ পর্যন্ত সবাই উধাও।
     
    লাটাগুড়ির সরকারি বাংলোর এক কর্মচারির কাছে শুনেছি বাঘ কোন শিকার করে প্রথমদিনে খেয়ে রেখে ঘুমোতে গেলে গ্রামের দুএকজন লোক গিয়ে সেই আধখাওয়া শিকারে বিষ মাখিয়ে এসেছে। পরেরদিন সেটা খেয়ে বাঘ বা এমনকি ছানাপোনাশুদ্ধ বাঘিনীও মরে গেছে। বনবিভাগের লোক সেখানে পৌঁছানোর আগেই বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশ হাওয়া। তিনিই বলছিলেন বনদপ্তরের দু একজনের হাত না থাকলে কি আর এরকম বারেবারে হতে পারে। 
     
    বক্সায় এখন কেবলি ঝিঁঝিঁর ডাক।  আমার  এই ভিডিওটা  এপ্রিলে তোলা। থাক। 
     
  • দধীচি মুনি | ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ০০:১৬539148
  • বলদপ্তরের নতুন খেলা পুনর্বাসন। গ্রাম "স্বেচ্ছায়" খালি হলেই বাঘের ছানায় জঙ্গল ছেয়ে যাবে!সাজা কাগজে সই পর্যন্ত করিয়েছে কাউকে কাউকে দিয়ে। 
  • দধীচি মুনি | 2607:fea8:3123:9100:807f:7471:8fc8:***:*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০২:৩৭539186
  • আজকে আবার। একই কায়দায় রণথম্বোর খেকে নাকি হাওয়া পঁচিশটা বাঘ। যথারীতি,বনদপ্তর কিচ্ছুটি জানে না। 
  • ্স্বাতী রায় | 117.194.***.*** | ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৪৫539273
  • রণথম্ভোর এ পঁচাত্তর টা বাঘ এর রিপোর্ট টাই  সত্যি তো  ? আমি ২০০৫ সালে রণথম্ভোর গেছি। তখন শুনেছি যে  বাঘ খুব কম নাকি সেখানে। এক জোড়া নাকি দুর্গের ভিতরে একটা পুকুরে মাঝে সাঝে জল খেতে আসে। খুব কপাল করলে দেখা যায়।  লেপার্ড অছে যদিও।   তার পর সারিস্কা  গিয়ে শুধু হরিণ দেখলাম আর শুনলাম যে ওখানে নাকি পরের বছর গুজরাট থেকে এক জোড়া বাঘ এনে ছাড়া হবে।তেমন টা  হয়েও ছিল খবর পেয়েছি।  হঠাৎ ২০২৪ সালে এসে সেই রণথম্ভর এ ৭৫ টা বাঘ শুনে একটু অবাক লাগছে।  হাতের কাছে রণথম্ভর এ এত বাঘ থাকতে সারিস্কা গুজরাট থেকেই বা বাঘ আনাল কেন?
  • | ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৩২539277
  • স্বাতী, ২০২২ এ টাইগার সেন্সাসের রিপোর্টে  ৮০ টা বাঘ ছিল রণথম্ভোরে। ২০২০র ৬৩ না ৬৫ থেকে অনেকটা বেড়ে গেছিল বলে খবরে ছিল। ২০০৫ মানে তো প্রায় ২০ বছর আগে। রণথম্ভোর পেঞ্চ তাড়োবা টিপেশ্বরায় বলে বলে সাইটিং হয় তো। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:ad7c:a2cc:a0ad:***:*** | ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৪539283
  • ভাল লেখা + মন্তব্য 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন