ইলেক্টোরাল বন্ডের পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে লেখাটা শুরু করা যাক। ৩০ টি সর্ববৃহত বন্ড ক্রেতার মধ্যে ১৪টি কোম্পানি বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে চাঁদা দিয়েছিল, আরও হয়তো দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের দপ্তরে ইডি গেল। তাই তারা বাধ্য হয়েছিল বিরোধীদের বদলে বিজেপিকে টাকা দিতে।
এক দেশ, এক দল, এক চোর, এক চাঁদা
ইলেক্টরাল বন্ডের আসল উদ্দেশ্য কি ছিল? বিজেপির টাকা আয় নাকি বিরোধীদের আয় বন্ধ করা? দেখে শুনে মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়টাই মুখ্য। ছয় বছর ধরে কম্পানিগুলির উপর নজরদারি চালিয়ে বিজেপি রোজগার করেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা (2018 থেকে ২০১৯, এই এক বছরের হিসেব যেহেতু জানা যায়নি)। তার থেকেও চিন্তার হল, কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস-বিআরএস- বিজেডি-এনসিপি-জেডিইউ-দের ‘প্রাপ্য’ চাঁদা কেড়ে নিয়েছে বিজেপি। এই ধরনের নজরদারির ফলে বড় বৃহৎ কারবারিদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। গত নির্বাচনে মোদীর উপর একচেটিয়া পুঁজির আস্থায় ফাটল ধরেছে। সেই অনাস্থা যদিও এক তরফা নয়, পারস্পরিক। ‘টেম্পো’ করে আদানি-আম্বানি রাহুলকে টাকা দিচ্ছেন এই ভাষণ মোদীর সেই অবিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিই বা বলা যায়?
বহুদলীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতায় থাকা দলকে পুঁজি ঘুষ দেবেই। বিনিময়ে সুযোগ সুবিধা পাবে। আবার ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসতে পারে সেই বিরোধীদেরকেও কিছুটা সন্তুষ্ট রাখে ব্যবসায়ীরা। এই বেনিয়মই, পুঁজিবাদের নিয়ম। ব্যবসায়ীদের বানানো অন্যান্য চাঁদা তহবিল আগেও ছিলই, এখনো আছে। কংগ্রেস আমলেই ২০০৯ সালে এই চাঁদা করমুক্ত করা হয়েছিল। টাটা গোষ্ঠী একটি ফান্ড বানিয়েছিল বিভিন্ন দলকে চাঁদা দেওয়ার জন্য, ১৯৯৬ সালে, তার পর বহু ব্যবসায়িক সংস্থাই সেই পথ অনুসরণ করেছিল। ২০০৪-০৫ আর ২০১১-১২ এই দুই বছর ১০৩ কোটি টাকা দলগুলির কাছে গেছিল এরকম ছয়-টি নির্বাচনী ব্যবসায়িক তহবিল থেকে। এই তহবিলগুলি কোন দলকে কত চাঁদা দেয় সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে হয়নি, কিন্তু বছর শেষে মোট পরিমাণ আর দলগুলির নাম বলতে হয়েছে। ১০০ টাকা ঘুষ বা চাঁদা ধরা থাকলে ৭৫ পাবে সরকারি দল, আর বাকি ২৫ বিরোধীদের মধ্যে ক্ষমতা অনুযায়ী ভাগ হবে, ব্যবসায়ীদের এই ‘নিয়ম’কে মানতে রাজী নয় মোদী।
মোদীর শাসন ব্যবসায়ীদের এই স্বাভাবিক অভ্যেসকে অস্বীকার করছে। অন্য কাউকে টাকা দেওয়া যাবে না, শুধু তাদেরই দিতে হবে। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৯ সালে বহুজাতিক চাঁদা নিষিদ্ধ করেছিলেন। সন্তানম কমিটি বলেছিল যে বহুজাতিক সংস্থাকে চাঁদা দিয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া অনুচিত। যদিও তার আগে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ৫% ছিল চাঁদার সীমা। স্বতন্ত্র পার্টি আর জনসংঘ যাতে ফান্ড না পায় তাই ইন্দিরা ব্যবসায়িক চাঁদা নিষিদ্ধ করেছিলেন বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। যদিও ইতিহাসের এই পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেই জন্যই নাকি জেটলি সাহেব এই গোপনীয় ইলেক্টরাল বন্ড প্রবর্তন করেছিলেন!!
দেখা গেল আম্বানি, এয়ারটেল, মাহিন্দ্রা এন্ড মাহিন্দ্রা, বেদান্ত, বিড়লা, গোয়েঙ্কা, সিপ্লা, জিন্দাল, ফিলিপস, সান, বাজাজ, ভারতী, মারুতি সুজুকি, সকলেই বন্ড কিনেছে। টাটা আর আদানির নাম পাওয়া যায়নি। আদানির কোনো ট্রাস্ট আছে কি না জানা নেই, কিন্তু তিনি কেনই বা এলেক্টরাল বন্ডের সাহায্য নেবেন, ঘরের লোকের কাছে টেম্পো করেই টাকা নিয়ে যাওয়া যখন যায়। কিন্তু এই ইলেক্টরাল বন্ডের প্রবর্তন যে ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলার জন্য সেটা কি বুঝেছিলেন ২০১৭ সালে যারা মোদীর অন্ধ ভক্ত ছিলেন, যারা ২০১৯ সালেও তাকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, সেই সব বৃহৎ ব্যবসায়ীরা? তারা হয়তো ভাবেনি যে ইলেক্টরাল বন্ড প্রবর্তনের পিছনে লুকিয়ে আছে এক বিরাট ষড়যন্ত্র। ব্যবসায়ীদের গতিবিধির উপর নজরদারির এক বিচিত্র ব্যবস্থা। রিজার্ভ ব্যংককেও যে এভাবে পকেটে পুড়ে ব্যবসায়ীরা কোন্ কোন্ দলকে টাকা দিচ্ছে সব তথ্য মোদীর ঘরে জমা পড়বে অনবরত, হয়তো তারাও বোঝেনি।
মেঘা কম্পানি তেলেঙ্গানা রাজ্যে বিনিয়োগ করেছে। সুতরাং পুঁজিবাদের নিয়ম অনুযায়ী এই কোম্পানি কেন্দ্রীয় সরকারি দলের পাশাপাশি তেলেঙ্গানা সরকারি দলকেও চাঁদা, ঘুষ দেবে। নিশ্চয়ই ইলেক্টরাল বন্ড ছাড়াও সেটা তারা দিয়েছে, আবার ইলেক্টরাল বন্ডের সাহায্যেও তা তারা দিয়েছে। মেঘা এপ্রিল ২০১৯ থেকে অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত টাকা শুধু বিজেপিকে দেয়নি। ফিউচার গ্রুপ রাজ্য সরকারি দলগুলিকেও দেবে, আবার কেন্দ্রীয় সরকারি দলকেও দেবে এটাই স্বাভাবিক। ফিউচার ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিজেপি বিরোধী দলকে দিয়েছে। বিড়লা কয়লা খনি খুঁড়বে। ফলে ছত্তিসগড় এবং উড়িষ্যার রাজ্য সরকারি দলকে বিড়লা চাঁদা দিয়েছে বন্ডের মাধ্যমে। বেদান্ত রাজস্থানে বিনিয়োগ করবে, ফলে কেন্দ্র সরকারি দলকে ঘুষ দিয়ে পরিবেশ মন্ত্রককে দিয়ে আইন ঢিলে করার পাশাপাশি রাজ্যের কংগ্রেসী সরকারি দলকেও চাঁদা দেবে। বেদান্ত বন্ড কিনতে শুরু করেছে এপ্রিল ২০১৯ থেকে আর মার্চ ২০২০ সাল পর্যন্ত সেটাই করেছে নিশ্চয়ই। হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক কম্পানি হেটেরো ওষুধ কম্পানির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক কম্পানি মানেই তারা শুধু বিজেপিকে টাকা দেবে না। রেশ্মি গ্রুপ, বাংলায় সদর দপ্তর। তারা তৃণমূল কংগ্রেসকে টাকা দেবেই। অরবিন্দ ফার্মা আপ দলকে টাকা দিচ্ছিল। আইএফবি কলকাতা কেন্দ্রিক। সুতরাং তৃণমূল কংগ্রেসকে দিচ্ছিল। তালিকা বিরাট, দক্ষিণ ভারত, বাংলা, মহারাষ্ট্র, ভিত্তিক কম্পানিগুলি ইলেক্টরাল বন্ডের সাহায্যে বিজেপি বিরোধী সরকারি দল আর বিজেপি, দুইকেই টাকা দিয়ে গেছে। এছাড়া গেহলটের ঘনিষ্ঠের ব্যবসা, রেড্ডীদের ঘনিষ্ঠের ব্যবসাগুলি তো আছেই, যারা হয়তো বিজেপির থেকে কংগ্রেসকে বা রেড্ডিদের দলকে বেশী টাকা দিয়েছে।
বিরোধী দলগুলির এই স্বাভাবিক আয় বন্ধ করতে তাই ব্যসায়ীদের ইলেক্টরাল বন্ডের ফাঁদে ফেলা হল। ইলেক্টরাল বন্ড এমন এক চাঁদা দেওয়ার ব্যবস্থা যার কিছুই গোপন থাকেনা। আগের চাঁদা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল গোপন, আর এটা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, মোদীর কাছে।
যত দিন এগিয়েছে এবং মোদীদের হারার সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে ততই শুধু রাজ্য সরকারি কারণেই নয়, কেন্দ্রে INDIA জোটবদ্ধ সরকার তৈরির সম্ভাবনা যত প্রবল হয়েছে ততই বিজেপি বিরোধী দলগুলির প্রতি সদয় হয়েছে ধনকুবের গোষ্ঠী। আর মোদী নিজের নখ দাঁত বের করে ইডি, সি বি আই, আই টি নামিয়েছে। পার্থ চ্যাটার্জী বা সিসোদিয়াদের ক্ষেত্রে যে আচরণ শুরু হয়েছিল, একই কাণ্ড ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছিল। তাদের দপ্তরে দপ্তরে ইডি হামলা শুরু হয়েছিল। হামলার পর মেঘা, ফিউচার বেদান্ত, কুইক এর মত সংস্থাগুলি শুধুই বিজেপিকে টাকা দিতে শুরু করলো। দেখা গেছে যে ইলেক্টরাল বন্ডের বড় পরিমাণ টাকা এসেছে পরিকাঠামো গত সেক্টর থেকে, অর্থাৎ নীতিন গড়করির দপ্তর হয়েই মেঘাকে টানেলের বরাত দেওয়া হয়েছে। সুতরাং দলের মধ্যে টাকার ভাগ নিয়ে কোন্দলও বেড়েছে।
কিন্তু আসল কথা হল এরকম কড়া নজরদারিতে কাঁহাতক ভয়ে ভয়ে অস্থির হয়ে চলবে ব্যবসায়ীরা? এমনকি আম্বানিও আজ নজরদারির ঘেরাটোপে। তাছাড়া পেটে খেলে পিঠেও সইতো হয়তো। কিন্তু ‘মোদীর গ্যারান্টি’ কার্যকর হচ্ছে না। মেঘার সাথে চীনা কম্পানি বিওয়াইডির যে চুক্তি হয়েছিল, সেই বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির কারখানা খোলার অনুমতি কেন্দ্র সরকার দিল না। ওদিকে আদানি আর বিওয়াইডি-র ঘনিষ্ঠতা বেড়েই চলেছে। এরকম চলতে থাকলে মেঘাকেই কিনে নেওয়ার প্রস্তাবই হয়তো দেবে আদানি। মেঘা এত ঝঞ্ঝাট করে ইলেক্টরাল বন্ডের ফাঁপড়ে পড়ে, আর আজ আবার সিবিআই খপ্পরে পড়ে লাভ কি হল?? ওদিকে এমনকি অম্বানিও আজ দুশ্চিন্তায়। আম্বানি দেখলো জিও থাকা সত্ত্বেও 5G তরঙ্গের মালিকানা আদানির। সেক্ষেত্রে আম্বানির ব্যবসার অন্যতম স্তম্ভে ফাটল ধরবে। এমনিতেই জানা গেছে যে ধনী ব্যক্তি হিসেবে আদানি আম্বানিকে ছাড়িয়ে গেছে। এয়ারটেলও ভেবেছিল ৫জি ব্যবসায় তারাও সম্মানজনক ভাগ পাবে, অথচ আম্বানিই পাচ্ছে না। তারা আর কত আশা করবে?! 2014 সালে এবং 2019 সালে দেশের রাঘব বোয়াল পুঁজিপতিরা সকলেই বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েছিল বিজেপিকে। মোদীর স্লোগান, "এক দেশ এক নেতা এক ধর্ম এক ভাষা...." র অন্তর্নিহিত অর্থ যে এক ব্যবসায়ী, সেটা এই ধনকুবেরের দলবল সেদিনও ভালই বুঝেছিল। কিন্তু হয়তো প্রত্যেকেই ভেবেছিল যে একচেটিয়া-ত্বের তারতম্য হলেও, সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে শাহেনশা হবে। কিন্তু আজ পরিস্থিতি আদানিময়। আর তাদের উপর নজরদারি করছে ইলেক্টরাল বন্ড নামক টিকটিকি।
আর আজ মোদী হাত বাড়িয়েছেন কানাডায়। ওখান থেকে খালিস্তানি টাকা আসছে, এমন হা হুতাশ আমরা মোদীদের মুখে শুনেছি কৃষক আন্দোলনের পর্যায়ে। সুতরাং এক দেশ, এক দল, এক চাঁদা ফর্মূলা অনুযায়ী ওই টাকাও মোদী নেবেন। নিজঝর কান্ড সেই টাকা পুরোটাই হস্তগত করার threat নয় তো?
বিশ্বায়নের যুগ শেষ, অথচ ব্যবসায়ীরা কোনো একটি লবি বাছতে চাইছে না, পুঁজিবাদ বাঁচবে তো?
2021 সালে মুকেশ আম্বানির একটি লেখা ....So far economic reforms have benefited Indians unevenly. The disparity is neither acceptable nor sustainable. Therefore, the Indian model of development should focus on creating wealth for the people at the bottom of the economic pyramid. Our greatest advantage lies in India's continent-sized domestic market, which is still largely untapped. Our economy will begin to witness miraculous growth when we create a middle class of one billion people with rising incomes.... For too long, we have been measuring wealth only in personal and financial terms. We have neglected the truth that India's true wealth lies in achieving 'Education for All', 'Health for All', 'Employment for All', 'Good Housing for All', 'Environmental Safety for All', 'Sports, Culture and Arts for All' and 'Opportunities for Self-Development for All' - in short, 'Happiness for All'. To attain these redefined parameters of prosperity, we have to bring care and empathy to the core of everything we do in business and society....
আম্বানির এই কথাগুলি বিশ্বায়নের কথা নয়। এটা আসলে বিশ্বায়নের যুগের মৃত্যু ঘোষণা। বিশ্বায়নের যুগ যদি শেষই হয়, তাহলে ফ্যাসিস্ট যুদ্ধ অর্থনীতির সম্ভাবনাই কি প্রবল নয়? তবু দশ বছরেও এলো না ফ্যাসিবাদ, তবে এবার মোদী ক্ষমতায় ফিরলে অবশ্যই আসবে। আর তাই তাদের ফিরতে দিতে চাইছে না একদা ভক্ত ধনকুবের কুলও।
শুধু মুকেশ আম্বানির কথা নয়, বিশ্ব বাণিজ্যের চিত্র থেকেও স্পষ্ট যে বিশ্বায়নের যুগ শেষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত সহ বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যের পতন চলছে, একমাত্র ব্যতিক্রম জার্মানি। আমরা দেখেছি বিশ্বায়নের স্লোগান ভুলে ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন পরস্পরের বিরুদ্ধে শুল্ক বসিয়েছে। ইয়োরোপের ব্রেক্সিট বিশ্বায়ন নামক অতীতেরই প্রতিফলন। এখন আইএমএফ-এর ওয়েবসাইটে গেলে জাতীয় সুরক্ষা, জাতীয় অর্থনীতি নিয়েই গবেষণা পত্র বেশী চোখে পড়বে। চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে একটি সমীক্ষা হয়। শিক্ষক, শিক্ষা কর্মী, ছাত্রদের মধ্যে। প্রশ্ন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর শুল্ক বসিয়ে মুক্ত বাণিজ্যে আঘাত আনলো কী? তখন প্রায় সকলেই বলেছিলেন যে এটা মুক্ত বাজারী দর্শনের বিপরীত কাজ, মার্কিন সভ্যতার দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে এই কাজ খাপ খায় না। আর আজ আবার সেই একই সার্ভে হয়েছে, পাঁচ বছর পরে। উত্তর ঠিক বিপরীত। প্রায় সকলেই বলেছেন জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ জরুরী, সুরক্ষা জরুরী। চিনের লেখিকা সাই বলছেন যে চিনে প্রাইভেট বিনিয়োগকারীরা নেতা মন্ত্রীদের সাথে দহরম মহরম করে এগোয়। ওনার ভাষায় নমনীয়তা বজায় রাখে। অর্থাৎ ব্যবসার কোনো আইন নেই। আবার মার্কেল দুর্ভাগ্যকে স্বীকার করে তার পক্ষে সওয়াল করেছেন, আজ পুঁজিবাদ ভোটহীন থাকার পর্যায়ে চলছে। কিন্তু তিনি এটা বলেননি যে ভোট হীন হয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না। মার্কেল জানেন যে পুঁজিবাদের সাথে গণতন্ত্র তেমন ভাবে খাপ খেয়ে কোনোদিনই চলেনি। অন্তত মুখে যেমন বলা হতো। বস্তবে সার্বজনীন ভোটাধিকার চালু হয়েছে অনেক পরে। উপনিবেশের মানুষ, নিজেদের দেশের মেয়েদের বা কালোদের মানুষ ভাবেনি, তাই তাদের ভোটাধিকার দেয়নি। আজ যখন বিশ্বায়নের যুগ শেষ হয়েছে তারা আবার ভোটহীন ব্যবস্থার ফিরে যেতে চাইছে। কারণ এই জটিলতা থেকে বেরোনোর কোনো গণতান্ত্রিক পথ পুঁজিবাদী নেতারা দিতে পারছেন না, মোদী পুতিন শি জিং পিং, তালিবান-রা দিচ্ছে ভোটহীন ব্যবস্থার সমাধান।
ভোটহীন ব্যবস্থার ডাক নাকচ করছে এদেশের ধনকুবেররাই?
যুদ্ধ অর্থনীতির দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি পুরোদমেই চলেছে গত দশ বছর ধরে। আদানির বন্দরে বন্দরে ড্রাগ ধরা পড়ছে। দেশে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৭০ হাজার কেজি হেরোইন, আবার সেটা হাপিসও হয়ে গেছে। আদানির হাতে গোলা বারুদ তৈরীর বরাত দেওয়া হয়ে গেছে। মায়ানমারের সন্ত্রাসী শক্তির সাথে বোঝাপড়া, মনিপুর হয়ে রাস্তা বানিয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা গেছে। বেকার যুবদের মধ্যে যুদ্ধ ক্ষেত্রে চাকরি করার মানসিকতা চালু করা গেছে। ইতিমধ্যেই ১০ হাজার যুব নাম লিখিয়েছে ইউক্রেন ও ইজ্রায়েলে যাওয়ার জন্য, ১৪০০ চলেও গেছে, কয়েকজন মারাও গেছে। আবার পাশাপাশি অগ্নীবীর প্রকল্পের মধ্য দিয়ে দেশ বিদেশের যুদ্ধ ক্ষেত্রে ভাড়াটে সেনা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা পাকা। ভোট হীন একটি কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা তৈরী করে ধর্মের ভিত্তিতে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরী হয়েছে। পূর্ব ইয়োরোপের মত ভারত টুকরো টুকরো হলে এই উপমহাদেশ এক নতুন লোভনীয় যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত হবে, মধ্য প্রাচ্যের মতই। কিন্তু তবু পরিস্থিতি সেই দিকে এগোচ্ছে না। বালকানাইজেশন শুরু হচ্ছে না তো!! এ যেন শৈশবের সেই ফেভিকলের বিজ্ঞাপন, ভারত কা মজবুত জোড় হ্যায়, টুটেগা নেঁহি।
আসলে এত সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও গোল বাঁধাচ্ছেন ধনকুবেররাই। যুদ্ধ অর্থনিতি ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাদের যা করার কথা ছিল তা তারা আজও করেনি। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির কোনো একটি লবিকে তাদের বেছে নিতে হতো। অথচ সেটা হচ্ছে না। কার্যত মোদীও পথপ্রদর্শক হতে পারেনি। হিটলার যা পেরেছিল। এক ঝটকায় ভার্সাই চুক্তি বাতিল করে সিমেন্স, এ আইজি, ফার্বেন দের রাস্তা দেখিয়েছিল। এদেশে মোদী ব্যবসায়ীদের তেমন নেতা হতে পারেনি। আজ পুতিন তো কাল ট্রাম্প করে বেড়িয়েছে সে। টাটা গ্রুপ সফটওয়ার পরিষেবা রফতানিকারক সংস্থা টিসকোর সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার শেয়ার বেচতে চলেছে। তারা চাইছে, সেমিকন্ডাক্টার কারখানা স্থাপন করতে। টাটা তাইওয়ানের পিএসএমসি কম্পানির সাথে এক্ষেত্রে যৌথতায় যাবে ভেবেছে। এদিকে আদানিও সেমিকন্ডাক্টরে বিনিয়োগ চাইছেন, আদানির সাথে মার্কিন কোম্পানি কোয়াসিনমের কথা হয়েছে শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া আদানি ব্যাটারি চালিত গাড়িতে বিনিয়োগের জন্য চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি-র সাথে যোগাযোগ করেছে, আর একই ক্ষেত্রে আম্বানির বন্ধু হয়েছে মার্কিন কোম্পানি টেসলা। আবার টাটা গোষ্ঠী এখনও পর্যন্ত ভারতের বৈদ্যুদিন গাড়ি উৎপাদক হিসেবে এক নম্বরে। হয়তো একই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চাওয়া মেঘা গ্রুপকে আদানি দখল করে নেবে। মেঘা গ্রুপকে এই ক্ষেত্রে বি ওয়াইদির সাথে যৌথভাবে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার, আগেই বলেছি। আদানি সহ ধনকুবেররা চীন মার্কিন দুই দিককেই সামলে চলছেন। কোনো গোষ্ঠিরই একদিকে ঝুঁকে পড়ার মত ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এই ভাবে দুই বিপরীত যুযুধান পক্ষের মধ্য ভারসাম্য রক্ষা করে চললে আর যাই হোক যুদ্ধ অর্থনীতি বা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পাবে না এদেশে।
এই পথে হাঁটতে গেলে মোদীর উপর চরম আস্থা রাখতে হতো সকলকেই। যেটা জার্মানিতে হয়েছিল। যে গুটিকয়েক কোম্পানি হিটলারের পিছনে দাঁড়িয়েছিল তারা আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে বিন্দুমাত্র মান্যতা দেয়নি। যেমন ফার্বেন মার্কিন কম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে এগিয়ে গেছিল হিটলারের সাথে। হিটলার জার্মানিতে যে সংস্থাগুলির সাহায্যে যুদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল, সেখানে কেমিক্যাল কম্পানি ফারবেন সব গিলে নিয়েছিল। কৃত্রিম রবার নিয়ন্ত্রণ করতো ১০০%, লুব্রিকেটিং তেল ১০০%, সেরাম ১০০%, প্লাস্টিক ৯০%, ম্যাগ্নেশিয়াম ৮৮%, বিস্ফোরক ৮৪%, নাইট্রোজেন ৭৫%। মজার বিষয় হল হিটলার প্রতিষ্ঠিত একচেটিয়াদের একাংশকে হাত করার পাশাপাশি ছোট একটা বা দুটো কম্পানিকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। যেমন দুগেসা কম্পানি। ফার্বেন বা সিমেন্স বা এ আইজি দের থেকে অনেক ছোট দুগেসা, আর তাই সে সুবিধা পেয়ে সম্পূর্ণ ভৃত্য পরিণত হয়েছিল। এই দেগুসা গ্যাস মাস্ক, রাবার টায়ারের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন ব্ল্যাক বানাতো, এবং ক্রমেই একাধিপত্য তৈরী করে ছিল এই ক্ষেত্রে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত একচেটিয়াদের মধ্যে দুই একটা আর প্রতিষ্ঠিত নয় এমন ব্যসায়ীকে একচেটিয়া বানানো ছিল হিটলারের নীতি। এই দেগুসাকে দিয়ে ইহুদিদের বাড়ির সোনা দানা লুটের কাজও করানো যেত। বিদ্যুত ক্ষেত্রে হিটলার ১৯৩৪ এবং ১৯৩৫ সালেই কার্টেল গুলিতে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ জারি করলো।একটি বড় ছাতার তলায় এনে জানিয়ে দেওয়া হল এবার থেকে তাদের স্বাধীন সিধান্ত নেওয়ার আর কোনো ক্ষমতা থাকবে না। তাদের সরকারের যুদ্ধ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে। এক্ষেত্রে নেতা হল সিমেন্স আর এইজি। এরা ফার্বেনের মতই কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের দিয়ে কাজ করাতো। অস্ত্র ব্যবসয়ায়ী যে প্রথম থেকেই ভার্সাই চুক্তি বাতিল করে তার ব্যবসায় ফেরত আসতে চাইবে সেটা বলাই বাহুল্য। ক্রুপ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাই চেয়েছিল এবং একাধিপত্য লাভ করেছিল। এক্ষেত্রে সে আর তিনটি সংস্থাকে জুড়ে নিয়েছিল, যার মধ্যে একটা আবার সিমেন্স। তার মানে সব মিলিয়ে ৬/৭ টা সংস্থা দেশ ও যুদ্ধ চালিয়েছিল। যদি এই ব্যবসাদার সংখ্যা অন্তত ৪০/৫০ হতো তবেই হিটলারের পক্ষে আর এই নিয়ন্ত্রণ রক্ষা সম্ভাব হতোনা, তার যুদ্ধ অর্থনীতি দাঁড়াতোই না। According to decartelization branch report germany’s major industrial combines, the structural changes that took place after 1933 would seem to indicate that there was scarcely any economic or political measures, no matter what its ostensible aim, that did not ultimately result in the increased concentration and centralisation of industrial and political power. Further the Nazi party and bureaucracy displayed strong preference for dealing with a single business or small handful business per industry…
১৯৫০-র দশকে বিশ্বে জিডিপি পিছু উৎপাদন ক্ষেত্র ছিল ৪০% আর ফিনান্স সেক্টর মাত্র ১০%। অথচ ২০২২ সালে সেটা ঠিক বিপরীত। উৎপাদন ১০% আর ফিনান্স সেক্টর ৫০%-র উপরে। উৎপাদন নির্ভর ব্যবস্থায় সময় পাওয়া যায়। কিন্তু পুঁজির চলাচলে যদি পণ্য প্রায় উধাও হয়ে যায়, তবে শেয়ার বাজারের এই অতিদ্রুত ওঠা পড়ায় সংসদ, ভোট, বিরোধীদের স্থান কোথায়? ফলে চীনের রাষ্ট্রপতির কথার গুরুত্ব বিরাট। যিনি বাইডেনকে বলেছিলেন যে এখন গণতন্ত্র আর উন্নয়ন খাপ খায় না। তাই বিশ্ব অর্থনীতির নতুন সমীকরণে এক বর্বর ভোট বিরোধী শক্তি উঠে আসছে। যারা শুধু রাস্তা, ব্রিজ বানানোর এক পরিকল্পনা করে দেশের পর দেশকে ঋণী করছে শুধু তাই নয়,তারা নিজেদের দেশেও ভোট করে না। ফিনান্স পুঁজি কেন্দ্রিক ব্যবস্থায় ফাটকা খেলায় অন্তর্দ্বন্দ্ব এতই প্রকট যে over valued শেয়ারের জন্ম দিতে হলে মোদীকে ম্যানেজার বানিয়ে, চল্লিশ বছর তার রাষ্ট্রপ্রধান থাকা নিশ্চিত করে দেশে দেশে ঘুরিয়ে টাকা আদায় হবে। ফলে এই জোচ্চুরির কারবারে একই সাথে অনেকগুলো দলকে হাতে রেখে চলা মুশকিল। তেলেংগানায় যে বিনিয়োগ আদানি করবেন, সেখানে সরকার বদল হতেই আবার তাদের সঙ্গে নতুন করে ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলতে হবে, যা অসুবিধাজনক। ফলে আদানি চেয়েছিলেন এক নেতা এক ব্যবসাদার ফর্মূলা চলুক।
ভোটব্যবস্থাকে রক্ষা না করলে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন শক্তিশালী হবে না
পরিচিতি সত্ত্বার এই ঘৃণ্য দৌড়ে, শ্রেণীর গুরুত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্যক্তির গুরুত্ব অপরীসীম। উত্তর আধুনিকতার গোড়ার কথা হল বিচ্ছিন্নতাই প্রাকৃতিক, ঐক্য হল কৃত্রিম। মাইক্রো স্বাভাবিক, ম্যাক্রো কৃত্রিম। কিন্তু তার মানে এমন নয় যে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ক্ষুদ্রকে অস্বীকার করে। সার্বজনীন ভোটাধিকার মানে একজন ব্যক্তি দেশ গড়ে। গোপনে, একা হয়ে। চরম ক্ষুদ্র আর ম্যাক্রোর এক অপূর্ব সুন্দর সম্পর্ক। পুঁজিবাদের অভ্যন্তরে এই সার্বজনীন ভোটাধিকারকে কমরেড এঙ্গেলস কি চোখে দেখেছিলেন সেটা আমরা জানি। এই অস্ত্রকে ব্যবহার করে মেহনতী মানুষ পুঁজিবাদকে পরাজিত করতে পারে, পুঁজিবাদী অত্যাচারী রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে বৃহত্তর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সরকারে গিয়ে বিপ্লবের প্রথম ধাপটি অতিক্রম করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকে চূর্ণ করতে পারে। এর বিপুল গুরুত্বকে তিনি ট্রেঞ্চের লড়াইয়ের থেকে অনেক উপর এরেখেছিলেন। আর ব্যক্তি স্বাধীনতার ঘোরতর বিরোধী ফ্যাসিস্টরা। ব্যক্তির ধর্মাচরণের স্বাধীনতা তারা মানে না। অথচ সার্বজনীন ভোটাধিকারের গোড়ার কথা হল ব্যক্তি স্বাধীণতা। একজন ব্যক্তি, যিনি নিজের মনে দেশ গড়ছেন, তিনি কিন্তু বহু পরিচিতি সত্ত্বার অধিকারী। একাধারে হিন্দু, নারী, উচ্চ বর্ণের রেল কর্মচারী। শ্রেণী জাত, ধর্ম, লিংগের সমস্ত পরিচয় নিয়েই সে একা একা ভোট দিচ্ছেন। পরিচিতি সত্ত্বা নিয়ে বিষাক্ত বোধ গড়ে ওঠে বিষাক্ত সমূহে। তাই ব্যক্তির বোধে শ্রেণী গুরুত্ব পায়, আর জয় শ্রী রাম বলে বা আল্লাহু আকবর বলে খুন করতে যেতে হলে একটি উন্মত্ত যৌথতা লাগে। সেই সার্বজনীন ভোটই আজ আবার পুঁজিবাদের চক্ষুশূল হয়েছে।
ভিয়েনা চুক্তির মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদ নিজেকে শাসক রূপে প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সেই চুক্তি যা নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে কালেক্টিভ সিকিউরুটির প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হয়ে ইংল্যন্ডে পুঁজিবাদকে শাসক রূপে প্রতিষ্ঠা করেছিল। নেপোলিয়ন যে দেশই আক্রমণ করুক, এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলি একযোগে সেই দেশকে বাঁচাতে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। পুঁজিবাদের তখন নবযৌবন, নতুন রাজার রক্তে ঊষ্ণতা। কিন্তু হিটলারের বিরুদ্ধে সেই ডাঁট দেখানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যন্ড, ফ্রান্স। তাই লজ্জাজনক মিউনিখ চুক্তি করেছিল তারা। আর আজ কালেকটিভ সিকিউরিটি র ডাক দেওয়ার লোক বা দেশ নেই। সুতরাং পুতিন নিশ্চিন্তে যুদ্ধ চালিয়ে গেল, ইজ্রায়েলও তাই।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।