এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • ট্রুথ

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ০৬ আগস্ট ২০২৩ | ৮৪৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • ‘সত্য’ জিনিসটাই গোলমেলে! এতটাই গোলমেলে যে এই নিয়ে হাজার হাজার বই লেখা হয়েছে এবং তার থেকেও বড় কথা সেই ভাঙিয়ে লাখ লাখ লোক করেকম্মে খাচ্ছে সেই প্রাচীন কাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত।  এবার প্রশ্ন উঠতে পারে – তাহলে তো হয়েই গেল! নতুন কথা আর কি শোনাবে কেউ?
     
    এটা সত্যি যে ‘সত্য’ নিয়ে একেবারে নতুন কিছু বলা চাপের – তবে ওই মহাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার মত আর কি! চাপের হলেও নতুন করে রাতের আকাশ এবং সময় ব্যায় করলে ‘নতুন’ কিছু বেরিয়ে আসতে পারে বৈকী! নতুন নক্ষত্র, নতুন নতুন ছায়াপথ খুঁজে পাবার মত, নতুন করে ‘সত্য’ খুঁজে পাওয়া!
     
    ও হ্যাঁ, মহাকাশ বলতে মনে এসে গেল – মানুষ কি চাঁদে ‘সত্যি’ করেই গিয়েছিল? তবে আজকের লেখা এমন ‘সত্য’ নিয়ে নয় – নয় ‘দার্শনিক’ সত্য নিয়ে, যেখানে প্রায় সবাই ঠিক। আজকের লেখা ‘একমাত্র সত্য’ টাইপের জিনিস নিয়ে – বা অন্যভাবে ভাবলে আদালতের ‘সত্য’, যে ‘সত্য’-র সংজ্ঞা বুঝে নিয়েই আমরা শপথ করি, “যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না”।
     
    আচ্ছা সত্যের বিপরীতে কি সবসময়েই মিথ্যে? আমার যদি এমন প্রশ্ন করি – কোন জীবিকার মানুষ সবচেয়ে বেশী মিথ্যাবাদী? সন্দেহাতীত ভাবে সেই ভোটে জিতবে রাজনীতিবিদরা।  কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় - কোন জীবিকার মানুষ সবচেয়ে বেশী সত্যবাদী? এর উত্তর অত সোজা নয় – কারণ ওই যে আগেই বলেছি ‘সত্য’ জিনিসটাই গোলমেলে!
     
    ১৯১০ সালের কথা, হ্যালির ধূমকেতু নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গেছে সব জায়গায় কারণ ১৮৩৫ সালের পর সেই প্রথম হ্যালির ধূমকেতু-কে দেখা যাবে আমাদের আকাশে।  সেই হইচই-এ খবরের কাগজের ভূমিকাও যে থাকবে তাতে আর আশ্চর্য কি! নানা কাগজ নানা কথা লিখছে – এর মধ্যেই নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌ এর একটা প্রতিবেদন মারাত্মক দূর্ভাবনার সৃষ্টি করল প্রচুর সংখ্যক মানুষের মনে।  মাত্র তিন প্যারাগ্রাফের রিপোর্ট, তবে প্রথম পাতার নীচের দিকে, শিরোনাম “ধূমকেতুর বিষাক্ত লেজ”।  এতে লেখা আছে যে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা নাকি আবিষ্কার করেছেন যে হ্যালির ধূমকেতুর পিছন দিকের ল্যাজ নাকি ভরা আছে প্রচন্ড বিষাক্ত সব পদার্থে! তাতে করে নাকি বিজ্ঞানী মহলে হইচই পড়ে গেছে যে তাহলে পৃথিবীর কাছ দিয়ে এ জিনিস গেলে আমাদের কি হবে! এবং খবরের কাগজের যা টেকনিক, মানে রিপোর্টের শেষের দিকে টুক করে ক্যাজুয়ালি এক ফরাসী জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ক্যামিলি ফ্ল্যামারিওয়ন-এর নাম উল্লেখ আছে, যাঁর মতে “হ্যালির ধূমকেতুর সেই বিষাক্ত পদার্থ আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করবে এবং পৃথিবী থেকে সব প্রাণের ছিহ্ন মুছে দেবে”!
     
    এবার ব্যাপার হল নিউ ইয়র্ক টাইমস অসত্য কিছু লেখে নি! কারণ ক্যামিলি এই মর্মে সত্যিই এমন মতামত পেশ করেছিলেন।  নিউ ইয়র্ক টাইমস পরের প্যারাগ্রাফে উল্লেখ করেওছিল যে “কিন্তু বেশীরভাগ জ্যোর্তিবিজ্ঞানী-ই ক্যামিলি-র সাথে সহমত পোষণ করেন না”! কিন্তু দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফ আর কে পড়ে! কাগজ জানত তারা কি খাওয়াতে যাচ্ছে পাবলিক-কে, আর পাবলিক কি খাবার জন্য বসে আছে! পাবলিক তাদের ঘরের দরজার জানলার ফাঁক বোঝাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল, দোকানের গ্যাস মাস্কের সাপ্লাই শেষ, কেউ কেউ মহাচালাক তো আবার ধূমকেতু নিরোধক বড়ি বিক্রী করতে শুরু করে দিল, যা খেলে নাকি ধূমকেতুর বিষাক্ত গ্যাস কিছুই করতে পারবে না! বলাই বাহুল্য হ্যালির ধূমকেতু কিছু ক্ষতি না করেই পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে গেল – কেউ মরল না, একজন ছাড়া।  নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌ই রিপোর্ট করল যে বাড়ির ছাদে ধূমকেতু দেখার পার্টি করতে গিয়ে এক ষোল বছরের মেয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে!
     
    যেখানেই টু-পাইস ইনকামের চান্স আছে সেখানেই ইতিহাস জুড়ে দেখা গেছে কেউ না কেউ ‘সত্য’ হালকা টুইষ্ট দেবেই! মোচড় বা বিকৃতিও বলতে পারেন।  আমরা অনেকেই বলি আজকাল ‘টাকা পয়সা’ বড় বার বেড়েছে! ব্যাপারটা আদপেই এমন নয় – টাকা পয়সার জোড় সেই মানব সভ্যতার আদিম কাল থেকেই প্রকট।  মানে মুদ্রা ব্যবস্থা চালু হবার পরের কথা বলছি আর কি J আর টাকা এমন জিনিস যে সে থাকলেই আপনি না চাইলেও সাথে আসবে ক্ষমতা।  অবশ্য এমন পাবলিক খুব কমই আছেন যাঁরা কেবল টাকা চান, কিন্তু কোন রূপ ক্ষমতার দিকে মোহ নেই।  মোদ্দা কথা টাকা থাকলেই আসবে ক্ষমতা – এবার সেই ক্ষমতা নিয়ে আপনি কি করবেন সেটা আপনার ব্যাপার।  টাকা আর ক্ষমতা কাছে চলে এলে আপনি আপনার চারিদিকে যে পাবলিক ঘুরঘুর করছে তাদের কন্ট্রোল করতে পারবেন – এবং তারা আপনার জন্য আপনার চাদিকের পৃথিবী পালটে দেবার চেষ্টা করবে আপনার পছন্দ মত।  এবং সেই ক্ষমতা বাড়তে বাড়তে একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আপনি চারপাশের ‘বাস্তবতা’ নিজে ইচ্ছে মত তৈরী করে নিতে পারবেন! এই পর্যায়ে আপনাকে আর সত্যের বিকৃতি ঘটাতে হবে না টাকা উপায়ের জন্য, টাকাই আপনার জন্য সত্যের বিকৃতি ঘটিয়ে দেবে!
     
    চাপপাশের সবাই যদি আপনাকে পৃথিবীর সেরা ব্যবসায়ী বলে মানতে শুরু করে – তাহলে আপনি তাই! আপনার জন্য সেই সব পথ খুলে যাবে যা অন্যদের জন্য রুদ্ধ, আপনার কাছে সেই সব ব্যর্থতা তুচ্ছ হয়ে যাবে যা অন্য কেউ করলে তার পতন হতে বেশী সময় লাগতো না! কি খুব চেনা মনে হচ্ছে এই প্রস্তাবনা? এখানে যদিও আমরা ব্যবসায়ী মানুষের কথা বলছি, কিন্তু ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি একে অন্য কিছু দিয়েও প্রতিস্থাপন করে নিতে পারেন। 
     
    ২০০৭ সালের কথা – সানফ্রান্সিস্কোর মসকোন সেন্টারে এবং তার সাথে সারা বিশ্বের অনেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন স্টিভ জোবসের আই-ফোন প্রথম উন্মোচনের জন্য। যা নাকি মোবাইল জগতে একই সাথে যুগান্তকারী এবং জাদুকরী টাইপের।  এটা আমরা আজকে প্রায় সবাই জানি আই-ফোন সত্যিই বদলে দিয়েছিল ফোনের সম্পর্কে আমাদের ধারণা।  কিন্তু ২০০৭ সালের আই-ফোন উন্মোচনের দিন স্টিভ জোবসের সামনে একটা সামান্য সমস্যা ছিল – ‘সত্যি’ বলতে গেলে তখনো প্রর্যন্ত আপেল কোম্পানী তৈরী করতে পারে নি এমন একটাই আই-ফোন যেটা ঠিক ঠাক কাজ করে! তখনো পর্যন্ত আই-ফোনের সমস্ত প্রোটোটাইপ বারেবারে ক্র্যাশ করছিল, বা ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছিল বা কল কেটে যাচ্ছিল।  তাহলে স্টিভ জোবস যখন মসকোন সেন্টারে উচ্ছসিত জনতার সামনে আই-ফোনের ডিস্প্লেতে এক অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে মাখনের মতন চলে গিয়ে এদিক সেদিক করে ডেমো দেখালেন, আর সবাই সেটা নিজের চোখে দেখল, সেটা কি ‘সত্যি’ নয়? অবশ্যই সত্যি! কিন্তু দর্শক যেটা জানতো না সেটা হল, স্টিভ জোবস একটা বিশেষ প্যাটার্ণে, যেটা তাঁকে বারে বারে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল – এটার পর এটা করতে হবে, এই অ্যাপ থেকে ওই অ্যাপে যেতে হবে – সেই ভাবেই ডেমো দেখিয়েছিলেন।  মোটামুটি বলা হয় যে ওই বিশেষ প্যাটার্ণ-টা ফলো করলেই কেবল আই-ফোন ক্র্যাশ করছিল না!
     
    তাহলে কি স্টিভ জোবস সেদিন ‘সত্যি’ –টা আমাদের বলেন নি?
     
    কিংবা মনে করুন বিল গেটস এর ব্যাপারটা। মাইক্রোসফট তখন বাজারে কোথায়।  একদিন বিল গেটস ফোন করলেন পল অ্যালেন (মাইক্রোসফটের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা) সেজে – আর ফোনটা করলেন কাকে? করলেন সেই সময়ের বিখ্যাত আলটিয়ার পার্সোনাল কম্পিউটারের প্রেসিডেন্ট এড রবার্টস-কে এটা জানিয়ে যে তাঁরা এক প্রোগ্রাম বানিয়েছেন অলটেয়ার কম্পিউটারের জন্য।  এড সেই প্রোগ্রামের কথা শুনে খুবই ইম্প্রেসড হলেন এবং আমন্ত্রণ জানালেন পল অ্যালেন রূপী বিল গেটস-কে এসে একটা ডেমো দেখাবার জন্য।  ডেমো দেখাবার সুযোগ পাওয়া খুব বড় ব্যাপার - কিন্তু এখানেও একটা সমস্যা ছিল।  ‘সত্যি’ হল এই যে বিল গেটস-এর দাবী একদমই যথার্থ ছিল না – তাঁদের কাছে এমন কোন রেডি প্রোগ্রাম তো ছিলই না! এমনকি তাঁরা সেই প্রোগ্রাম লেখার কাজটাও শুরু করেন নি! জানলে হয়ত অবাক হবেন যে সত্যিকারের প্রোগ্রাম লেখা হয়েছিল সেই ফোন কল এবং ডেমো দেবার তারিখের মধ্যে থাকা দুই মাসের মধ্যে! বিল গেটস এবং পল এর কাছে আলটিয়ার কম্পিউটার না থাকার জন্য প্রোগ্রাম লেখার পর তাঁরা জানতেনও না যে সেই প্রোগ্রাম কাজ করছে কিনা! তাঁরা সেটা জানলেন একদম ডেমো দেবার দিন।
     
    আজকের দিনে বিল গেটস এবং স্টিভ জোবসের নাম বিজনেস দুনিয়ায় ওই দুই প্রোডাক্টের সাথে সম্মানের সাথে উচ্চারণ এবং যুগান্তকারী বলে ধরা হয়।  তার কারণ মূলত একটাই – প্রথম দিকের হালকা জালিয়াতির পরে, তাঁরা বানিয়ে দেখিয়েছিলেন মাইক্রোসফট এবং আই-ফোন।  যাঁরা ব্যবসা ক্ষেত্রের হাল হকিকত জানেন তাঁদের কাছে এটা তেমন আশ্চর্য লাগবে না, কারণ মার্কেটে একটা কথা খুব চালু আছে – “ফেক ইট টিল ইউ মেক ইট”।  গেটস বা জোবস জালিয়াত ছিলেন না – তাঁরা একটা জুয়া খেলেছিলেন নিজেদের দক্ষতার উপর বিশ্বাস রেখে – যার মার্যদা তাঁরা নিজেরা রাখতে পেরেছিলেন। 
     
    কিন্তু যদি নিজেদের প্রমিসের মর্যাদা না রাখা যায়? বা জেনেশুনে সত্যের থেকে অনেক দূরে থেকে ব্যবসার জগতে কিছু ক্লেম করা হয়? এর উদাহরণ আপনারা নিজেরা খুঁজলেও চারিদিকে পাবেন অনেক – এদের মধ্যে মিল একটাই, সেই জচ্চুরি ধরার জন্য যে বুদ্ধির দরকার হয় সেটা আমার-আপনার মত আম জনতার সবসময় থাকে না।  আমরা যখন বুঝতে পারি তখন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক দেরী হয়ে গেছে –
     
    মনে আছে নাকি এলিজাবেথ হোমসের কথা? থেরানস নামক বায়োটেক কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা? যে কোম্পানী রক্ত পরীক্ষা-কে যুগান্তকারী করে দেবার স্বপ্ন দেখিয়েছিল।  তারা নাকি এমন সব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যাতে করে কেবল কয়েক ফোঁটা রক্ত দিয়েই যাবতীয় তথ্য জানা যাবে – আজকের দিনে যেটা জানতে আমরা বোতল বোতল রক্ত দিয়ে আসি টেষ্ট সেন্টারে।  একটু জালিয়াতি দিয়ে এদের ব্যবসার শুরু – পরে আরো একটু জালিয়াতি এবং তারপর আর কন্ট্রোলে থাকল না কেসটা।  জালিয়াতি করে থেরানস কোম্পানীর ভ্যালুয়েশন দাঁড়িয়েছিল প্রায় পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা – এবং এলিজাবেথ হয়েছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে কমবয়সী বিলিওনার।  ২০১৬ সালে এই পাঁচাত্তর হাজার কোটি থেকে কোম্পানীর ভ্যালুয়েশন দাঁড়ালো শূন্য এবং এই ২০২৩ সালের মে মাসে এলিজাবেথ-কে সাজা দেওয়া হল এগারো বছর জেলের সাথে অনেক টাকার ক্ষতিপূরণ ভিক্টিম-দের। 
     
    তাহলে পার্থক্য কি বিল গেটস আর স্টিভ জোবসের সাথে এলিজাবেথ হোমসের?
     
    জানেন কি জন ব্রিংকলি-র ঘটনা? যিনি নিজেকে ডাক্তার বলে দাবী করতেন এবং বিশাল নাম করে ছিলেন একসময় ছাগলের বীচি মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করে! তাঁর সময়ে তিনি ডাক্তারী জগতে পরিচিত ছিলেন “ছাগল বীচির ডাক্তার” হিসেবে।  এই ভদ্রলোক কোনদিনই ডাক্তারী পাশ করেন নি – যদিও নানা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন – কিন্তু নানা কারণে কোন কলেজেই পড়া শেষ করতে পারেন নি! কিন্তু সামান্য ডিগ্রী আর কবে কাকে স্বপ্ন দেখা থেকে থামিয়েছে! ডাক্তার না হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকার ক্যানসাস শহরে সার্জারী-র প্র্যাক্টিস খুলে বসলেন। এই সময় তাঁর কাছে কিছু পুরুষ আসে তাদের যৌন এবং বন্ধ্যাত্ব সমস্যা নিয়ে।  সেক্সের ব্যাপারে জনতার দাবীর চাপে কি করব কি করব ভাবতে ভাবতে তিনি একদিন ছাগলের বীচি খুলে রুগীর শরীরে ফিট করে দিলেন!  বুঝতেই পারছেন এতে কাজের কাজ কিছু হবার কথা নয় – কিন্তু রাখে হরি মারে কে! এমনি সময় ব্রিংকলি-র এক রুগীর বউয়ের গর্ভে বাচ্ছা চলে এল যা তারা অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছিল।  সেই থেকে ব্রিংকলি-র ব্যবসা আরো ফুলে ফেঁপে উঠল – এমন প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন তিনি যে ১৯৩০ সালে ক্যানশাস স্টেটের গভর্নর হবার লড়াই-তে নামবেন ঠিক করলেন।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হল না – কিন্তু রুগী মারা যেতে শুরু করল শরীরে ছাগলের বীচি নিয়ে। অনেকে মামলা করে দিল ডাক্তারের বিরুদ্ধে।  সেই সব মামলার চাপে ব্রিংকলি শেষ পর্যন্ত নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন একদিন।
     
    এমন সব নানাবিধ আপাত বিষ্ময়কর কিন্তু ‘সত্য’ ঘটনা, মিথ্যে রটনা এবং তাদের উদঘাটন নিয়ে লেখা হয়েছে টম ফিলিপ্স-এর বই ‘ট্রুথ’।  প্রায় ৩০০ পাতার এই বইটি টানটান ভাবে পড়ে ফেলা যাবে – আটটি চ্যাপ্টারে ভাগ করা বইটি – চ্যাপ্টারের নামগুলিও খুব সুন্দর তাদের মধ্যে ধরে রাখা তথ্যের সাথে সাথে। 
     
    Chapter 1: The Origin of the Specious
    Chapter 2: Old Fake News
    Chapter 3: The Misinformation Age
    Chapter 4: The Lie of the Land
    Chapter 5: The Scam Manifesto
    Chapter 6: Laying in State
    Chapter 7: Funny Business
    Chapter 8: Ordinary Popular Delusions
     
    বইতে উল্লিখিত একটা ঘটনা ভাগ করে নিয়েই আজকের লেখা শেষ করব।  ২০১৯ সালে বইটি লেখার সময় পর্যন্ত ওয়াশিংটন পোষ্ট-এর ফ্যাক্ট চেকিং টিম প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প-র নানাবিধ কমেন্টের সত্যতা খতিয়ে দেখে।  সেখানে দেখা যায় যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব পাবার পরের ৮৬৯ দিনে ট্র্যাম্প ১০,৭৯৬ টি ‘মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর দাবী’ দাওয়া পেশ করেছেন! ২০১৮ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর ১২০ মিনিটের ব্যবধানে ট্র্যাম্প ১২৫ টি মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর দাবী রাখেন।  মানে মিনিটে একটা করে মিথ্যে! আমরা অনেক সময় উন্নত দেশগুলিতে কিছুতে হারাতে পারলে গর্ব অনুভব করি।  তা এই ব্যাপারে আমাদের সামনে এক সুবর্ণ সুযোগ আমেরিকা-কে হারাবার! ট্র্যাম্প আজ নেই তো কি হয়েছে! তাঁর লিগ্যাসি ডাটা তো রয়েছে! এখন যদি কেউ আমাদের দেশের ডাটা খুঁজে আমেরিকার সাথে তুলনা করে, আমরা জিতব কিনা নিশ্চিত নই, তবে হাড্ডাহাড্ডি কম্পিটিশন হবে তাতে করে কোন সন্দেহই নেই!  

     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বইপত্তর | ০৬ আগস্ট ২০২৩ | ৮৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhik Chattopadhyay | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৪522193
  • খুব ভালো রিভিউ | তবে ট্রাম্প বা কর্পোরেট বস রা যেটা করছে সেটাকে ঠিক মিথ্যা না বলে "বুলশিটিং" বলা ভালো | যেটাকে আমরা ভাট বকা বলি | এরা বা এদের অনুগামীরা একটা কাল্পনিক জগতে (অল্টারনেট রিয়েলিটি) বিচরণ করে আর ভাবে আমিই ঠিক |
  • Sobuj Chatterjee | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২৬522205
  • ্ঋদ্ধ হলাম।
  • dc | 2401:4900:1f2a:5099:ec4f:cf87:3f59:***:*** | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৪:০৪522206
  • “হ্যালির ধূমকেতুর সেই বিষাক্ত পদার্থ আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করবে এবং পৃথিবী থেকে সব প্রাণের ছিহ্ন মুছে দেবে”
     
    এখানটা পড়ে ​​​​​​​আর্থার কোনান ​​​​​​​ডয়েলের ​​​​​​​পয়জন ​​​​​​​বেল্টের কথা ​​​​​​​মনে ​​​​​​​পড়ে ​​​​​​​গেল ​​​​​​​:-)
     
     
  • সুকি | 49.206.***.*** | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৫৭522211
  • ধন্যবাদ।
     
    অভীকবাবু, আপনি যেটা বলছেন সেটা ট্রাম্প বাবুর ক্ষেত্রে সত্যি হলেও হতে পারে। তবে কর্পোরেট বস-রা, অন্তত যাদের কথা আমি এখানে উল্লেখ করেছি তারা অন্য জিনিস।  তারা ঠিক ঠাকই জানত তারা কি বলছে এবং তার ভিতরে কতটা জল আছে। 
  • kk | 2607:fb91:142e:498e:c143:e25f:2e37:***:*** | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৩522215
  • ইন্টারেস্টিং বই। রিভিউ পড়ে বইটা পড়ার ইচ্ছে হলো।
  • এরা বা এদের অনুগামীরা একটা কাল্পনিক জগতে (অল্টারনেট রিয়েলিটি) বিচরণ করে আর ভাবে আমিই ঠিক | | 165.225.***.*** | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৭522217
  • না, ট্রাম্প কাল্পনিক জগতে বিচার করে না। সে কোন কিছুই ঠিক বিশ্বাস করে না (প্রকৃত বৈজ্ঞানিকদের মত)। এটা তার স্বভাব। 
    তার্পর স্ট্রাটেজিকালি যে পদ্ধতিতে তার নিজের কাজ সিদ্ধ হবে বলে ভাবে সেটাই সবাইকে বোঝায়!   
  • রিভিউ | 165.225.***.*** | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৩০522218
  • ট্রাম্প ও  এই বইয়ের বক্তব্য ভীষণভাবেই সম্পৃক্ত। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন