এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কাদামাটির হাফলাইফ নিয়ে কৌশিক লাহিড়ী

    Eman Bhasha লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ জুলাই ২০২৪ | ১০২ বার পঠিত
  • মাটিতে গাঁথা বর্শাফলক

    কৌশিক লাহিড়ী

    আমরা আসলে স্রেফ কথামৃত (নাস্তিক হলেও সে বইটা আমার বড্ড প্রিয়), জীবন-স্মৃতি আর অর্ধেক জীবন পড়েই বড়ো হয়েছি তো তাই মোহনদাসের ট্রুথ নিয়ে সামান্য এক্সপেরিমেন্টের ভনিতাতেই আমাদের প্রায় অর্গাজমিক ব্রেথলেসনেস শুরু হয়ে যায় !

    কয়েকটা ষষ্ঠীব্রত আর পরিতোষ সেনে কি আর খোঁয়ারি কাটে ?

    পিকাসো, হুইটম্যান, হেমিংওয়ে বাদ থাকাই ভালো ! 

    লোম উঠে যাবে !

    তাই এই বইয়ের নামের মধ্যে হাফলাইফ দেখে সন্দ হয়েছিল এটাও কি তবে আরেক অর্ধেক জীবনের সতর্কী-ক্যাভিয়েট!

    বইটি পড়ে সে ধারণা ভাঙল! 
    নিজেকে নিয়ে এমন নির্মোহ নির্মোক-উন্মোচন খুব সম্প্রতি চোখে পড়ে নি। 
    তাও এমন অনাবিল কথ্য-গদ্যে!
    এ তো লেখা নয়!
    এ তো বলা! 
    স্বচ্ছতোয়া স্বগতোক্তি।

    তিরানব্বইয়ের শেষ বর্ষায় ইমানুলকে নিয়ে যে লেখাটা লিখেছিলাম, তার প্রথম লাইনটা ছিল এই রকম

    “নায়াগ্রা বা ভিসুভিয়াসের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব চলে তবে ইমানুল হক আমার বন্ধু।”

    গুরুচণ্ডা৯ থেকে প্রকাশিত তার “কাদামাটির হাফলাইফে” ধরা পড়েছে এক অনাদি-অনন্ত আবহমান বাংলা।
    আমরা এই বাংলাকেই চিনি। 
    এই বাংলাতেই আমরা বেড়ে উঠেছি। একটু পড়া যাক।

    “আজ পোষ সংক্রান্তি। আমরা ছোটবেলায় পৌষ নয় পোষ সংক্রান্তি ই শুনে এসেছি মা মাসিদের কাছে। আজ স্মৃতি কন্ডুয়নের ভাবসকাল।
    ভোর ভোর উঠে মা দিদি এবং বাড়ির সহায়িকাদের মিলে পিঠে বানানো শুরু।  অবশ্য গোটা শীতকাল জুড়েই সকালে পিঠের রেওয়াজ ছিল বাড়িতে। তবে এদিন একটু বিশেষ আয়োজন। বাঁধাকপি দিয়ে মাংস রান্নার গন্ধ চাগিয়ে দিত আমাকে। বাড়িতে খেজুর রসের অভাব ছিল না। খেজুরের গুড় তখনো কেনা শুরু হয়নি। বাড়িতেই হতো।
    বাবা বলতেন, দূর দূর দোকানের কেনা গুড় মানে ভেলিগুড় মেশানো।
    অতএব বাড়িতেই রস থেকে গুড়। ভোর চারটেয় উনুন জ্বলতো। নিভতো বেলা দুটো নাগাদ। 
    চা নয়, সকালে চুমুক দিয়ে এক গ্লাস ধোঁয়া ওঠা খেজুর রস। টগর ভাইয়ের পিছু পিছু ঘুরে বেড়াতাম আমি আর আমার সেজভাই। 
    ও তো কলসীতে চুমুক দিয়ে চমকের পক্ষপাতী। বালতি ভর্তি দোয়ানো দুধ মেরে দিত চোঁ চোঁ করে। ( ও না পড়লেই মঙ্গল) । 
    খেজুর গুড় দিয়ে ধুঁকি আর গোঁজা পিঠে সুরুয়াত।
    তারপর আঁশকে পিঠের সাথে বাঁধাকপি আর হাড় মেশানো মাংস।
    ইসস।
    আর লিখতে পারছি না।”

    অথবা
    “…পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরা যখন রাতে গরুর গাড়িতে বাঁশি বাজাতে বাজাতে মেলা/জাত দেখে ফিরতো -- ভাবতাম কবে বড় হবো।
    বড় হয়ে এগার ক্লাসে পড়তে বর্ধমান এলাম।
    দামোদরের সেই বিশাল চরে ঘুড়ি আর ছুঁড়ির মেলা দেখলাম।
    কিন্তু মনের আয়েশ মিটল না।
    ছোটবেলার আবেগ বড়বেলায় এমন ভোঁতা হয়ে যেতে আছে?”

    তিরানব্বইয়ের শেষ বর্ষায় ইমানুলকে নিয়ে যে লেখাটা লিখেছিলাম, সেটা ছিল এই রকম
    “নায়াগ্রা বা ভিসুভিয়াসের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব চলে, তবে ইমানুল আমার বন্ধু। জন্ম তার বর্ধমানের আউশাড়ায়… কৈশোরের আবির্ভাব তাকে পৌঁছে দিল নতুন দিগন্তে। কবিতা লিখল প্রথম। শুরু করল সাংবাদিকতা। ‘কিশোর জগৎ’এর ক্ষুদে সাংবাদিক হলো সে। ‘নতুন চিঠির’ চত্বরেও তার পা পড়ল। শহর বর্ধমান। বিতর্কে তুমুল, তাৎক্ষণিক বক্তৃতায় দুরন্ত, কুইজে সপ্রতিভ এই ছেলেটির সঙ্গে আমার পরিচয় বিরাশি সালে।
    বেশ মনে পড়ে, সেবারের শেষ-হেমন্তে, মিউনিসিপ্যাল স্কুলের মাঠের হিম-ঘাসে বসে শুনছিলাম, ‘চারজন যুবকের গল্প’।
    শুনেছিলাম আর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। 
    নাটক! নাটক লিখেছে আমারই এক সহপাঠী! তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত মঞ্চস্থ করতে হবে।
    যেমন বলা তেমনি কাজ।
    সেবার সরস্বতীপুজোর দিন হই হই করে নেমে গেল নাটক! 
    শতাব্দী প্রাচীন ইস্কুলটিতে সম্ভবত সেই প্রথম মঞ্চস্থ হলো কোন রাজনৈতিক নাটক!
    তাও অনেক বিরোধ, উত্তেজনা, উত্তপ্ত তর্কযুদ্ধ পেরিয়ে!
    ইমানুলের জন্য একবার স্কুলে পুলিশ-প্রবেশ-পর্বও পেরিয়ে এলাম আমরা! সেও সরস্বতী পুজো নিয়েই! (বিস্তারিত আছে এই বইয়েই)।
    বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমানুল বেছে নিল তার মাতৃভাষা বাংলা।
    একানব্বই সালে প্রকাশ পেল তার প্রথম কবিতার বই। 
    ‘বর্শাফলক স্নান করছে’। 
    আবির্ভাবেই আলোড়ন। নতুন ভাষা, নতুন কথা। একই বছর এলো কবিতা বই ‘আমরা জারের জন্য লড়ছি’।
    বিরানব্বইয়ে এলো শ্লেষাত্মক কাব্যগ্রন্থ ‘প্রশস্তিমালা’। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের তীক্ষ্ণ কৌণিকতা থেকে সরাসরি,সটান ঋজু পংক্তিপাত!

    প্রতিকবিতায় বিশ্বাসী ইমানুল তার কবিতায় বিবেক শব্দটাকে নতুন করে বাঁচিয়ে তোলে। সে বিশ্বাস করে সব কবিতাই রাজনৈতিক। আর মানুষের কাছে না পৌঁছলে সে কবিতা ব্যর্থ।
    ওড়িয়া ভাষায় অনুদিত হলো তার গল্প ‘দাঙ্গা বিরোধী আটটি টুকরো’।
    এম এ পরীক্ষায় হয়ে গেল প্রথম শ্রেণিতে একেবারে প্রথম!
    শুধু অক্ষরপ্রেম নয়! শুরু হলো লিপিশিল্পের নিত্যনতুন নিরীক্ষা-পরীক্ষা, প্রচ্ছদ অঙ্কন।
    সবাই মিলে শুরু করা গেল চুরাশির শেষে নতুন কবিতানির্ভর সাহিত্য পত্রিকা “ঈক্ষণিকা”!

    প্রতি সংখ্যার জন্য সে কী উৎসাহ-উদ্দীপনা-উত্তেজনা!
    ওর আঁকা, ওর লেখা, ওর তুমুল ঝর্ণার মত কথা বলা, ওর ভ্রমণ, ওর তর্ক, ওর নিরন্তর নিজেকে খুঁড়ে চলা, খুঁজে চলা এগুলোর মধ্যে একটা জিনিস কোনোদিনই ছিলনা, নেইও। 
    আর সেটা হলো গতানুগতিকতা!
    কোনোরকম মধ্যবর্তিতায় বিশ্বাসী নয় ইমানুল, তা সে প্রেমে হোক, বা রণে!
    এই ইমানুল আমার বন্ধু, যদি নায়াগ্রা বা ভিসুভিয়াসের সঙ্গে বন্ধুত্ব চলে তবেই!”

    কিনে, ধার করে বা চুরি করে যে ভাবে হোক বইটা পড়ুন!

    গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশনা
    কাদামাটির হাফলাইফ
    ৩৯০ টাকা

    কাদা লাগবে না, মাটির গন্ধে মজে যাবেন।

    গুরুচন্ডালগুরুচন্ড প্রকাশনা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন