এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • খেলা

    Arundhati Sarkar Santra লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১১ জুন ২০২৩ | ৭০০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • রাত নির্জন।
    দ্বাররক্ষীদের মৃদু পদচারণা ছাড়া প্রাসাদে আর কোন শব্দ নেই। 
    প্রাসাদ চত্বরের গভীর, বৃহত্ দিঘিটা পূর্ণ গর্ভিনী সাপের মন্থরতায় নিস্তরঙ্গ। চকমকি ঠুকলে যেমন ফিনকি দিয়ে আগুন ছোটে, দিঘির চারপাশে কেয়ারি করা ফুলের ঝোপগুলোতে  কয়েকটা জোনাকি সেই আগুনের ফুলকির মত উড়ে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ এই প্রাঙ্গনে এসে পড়লে যেন মনে হয় এই নৈঃশব্দ্য যেন একরাতের নয়, মহাকালের অনন্ত নীরবতার সঙ্গে  বুঝি তলে তলে এর যোগ আছে। এ রাতের বুঝি ভোর হবেনা।
    তবে সেই ভ্রম পরক্ষণেই কেটে যায়, কারণ হাস্নাহেনার গাঢ় আর উগ্র গন্ধ নেচে নেচে পাক খেতে খেতে বলতে থাকে, 'শেষ নয়, শেষ নেই'। 
    রাত পোহালেই প্রকৃতি আবার  নিত‍্যনতুন মন ভোলানো লোভনীয় পসরা নিয়ে আবির্ভূত হবে। সেই নতুন ভোরে আবারও শুরু হয়ে যাবে হররোজের নিত‍্যি বেচাকেনা, দিনযাপনের শোরগোল। প্রতিদিন ঊষার রঙে তো সৃষ্টির ছবিই আঁকা হয়। 
    কিন্তু সেকথা এখন থাক। 
    এখন রাত। মিশিকালো রাত। 
    এই রাতে প্রকান্ড দিঘিটার ঘাটের কাছটায় আরও একটু বেশিই যেন অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে। প্রাসাদরক্ষীদের চোখে এখনও পড়েনি বটে কিন্তু ঘাটের ধারের ঐ গুলমোহরের গাছের তলায় ঘন আঁধার যেন একবার নড়েচড়েই স্থির হয়ে গেল।
    আজ প্রাসাদে সুলতানের এক মেহমান এসেছেন, তাই রক্ষীরা আজ একটু বেশিই সজাগ। তবুও তাদের চোখ এড়িয়ে গেল ঐ অন্ধকারের নড়াচড়া। 
    ওখানে ওরা কে? গুপ্তচর? 
    অবশ‍্য গুপ্তচরই যে সবসময় নজরদারি এড়ায় তা ঠিক নয়। আরেক দলের ও লক্ষ্য থাকে, যে কোন প্রকারে লোকের চোখ এড়িয়ে যাওয়া। তারা হল গুপ্তপ্রেমী। এই গহীন রাতে যে মানুষ দুটো আঁধারে মিশে আছে তাদের মতলবটাও খানিকটা তাই। 
    তবে ওরা কি প্রেমিকযুগল? সে বিষয়ে ওরা নিজেরাই নিঃসন্দেহ নয়। এখনও ওরা কামরস জারিত আশ্লেষের আলিঙ্গনে বাঁধা পড়েনি। শুধু মনদুটি একে অপরের কাছে আসার অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে থাকে।
    এই গভীর রাতে একে অপরের প্রতি সেই আকর্ষণই যেন অশ্রুত গানের সুর হয়ে তাদের বেঁধে এনেছে এই নির্জনে। 
    একে অপরের সঙ্গটুকু উপভোগ করার এই দুর্নিবার টান, তা যদি পিরিতি হয়, তবে ওরা সেই দোষে দোষী। 

    ওরা সেবন্তী আর ওসমান। 
    সেবন্তী এই প্রাসাদে এসেছে সেই পুবের সুবা থেকে। সুলতানের সেনাদলের লুটের মালের সঙ্গে আরও সব মেয়েপুরুষের সঙ্গে সে এসে পড়েছিল এই সুলতানের খাসমহলে। তার জান বেশ কড়া, মানতেই হবে। নইলে আসার পথেই কতজনার প্রাণ বেরিয়ে গেল, তবু তো সে মরেনি। 
    এই পাথুরে প্রাসাদ থেকে সেবন্তীর সেই গ্রাম,  অনেক অনেক দূরে। সবুজ, শান্ত নিরিবিলি গ্রাম। ধু ধু দুপুরে, ঘুঘু দোয়েল ফিঙের নরম ডাকের ওম মেখে গ্রামটা যেন আদুরে বেড়ালের মত থম হয়ে শুয়ে থাকত। সেবন্তী, মুনিয়া, লছমীরা ভাঙা শিবমন্দিরের পাশ দিয়ে জল আনতে যেত পড়ন্ত বিকেলে। সেই কমলা বিকেল, পোড়ো মন্দিরের গন্ধ এখনও সেবন্তীর নাকে লেগে আছে।
    তবে গাঁয়ে বড় অভাব, বড় খিদের জ্বালা। 
    সেখানে দুবেলা ভাত জোটাই দায়। জমিনদারের খাজনা আর মহাজনের পাওনার জোড়া যাঁতাকলে, আর সব চাষীদের মত সেবন্তীর বাপও বাঁধা ছিল। 
    অভাব থাকলেও সেখানে ওরা মুক্ত ছিল, স্বাধীন ছিল। নদীর জল, আকাশছোঁয়া সবজে মাঠ, গাঁয়ের গা ঘেঁষে গহীন বন এসবই ছিল তাদের গাঁয়ের সবার, নিজের। ভাত রোজ না জুটলেও, নদীর মাছ, বনের গাছের ফল, মূল, কন্দে পেট ভরে যেত। কোন কোন দিন ক্ষেতের শাক কুড়িয়ে দিয়ে যেত পদিবুড়ি। গরম ভাতে সেই শাকের স্বোয়াদ অপূর্ব।   
    কিন্তু একদিন ঐ বনের পথেই  সেনারা এল, লুট হয়ে গেল তাদের ধনসম্পত্তি, মানুষজন, গরু বাছুর সব। জোয়ান মেয়েমদ্দগুলোকে ওরা বেঁধে নিল সুলতানকে ভেট দেবার জন্য। আরও কতলোককে মারল, কেউ আবার পালাল। রক্তে ভেজা ক্ষেতিবাড়ি পিছনে ফেলে সেবন্তীও একটা দলের সঙ্গে এসে পড়ল এক্কেবারে সুলতানের খাসদরবারে। 
    দাসদের বিলিবন্টনের পর যেকজন পড়ে ছিল, সেবন্তী ছিল তাদের দলে। শ‍্যামলা রঙের একহারা সেবন্তী মোটেই সুন্দরী নয়। তার মুখের মধ্যে  একজোড়া চোখ শুধু বড় বাঙ্ময়, অতল। কিন্তু মাংস বেচাকেনার হাটে গভীর চোখের চাহনির মূল্য নেই। তাই বুঝি সেবন্তী লালসার শিকার হয়ে যায়নি। 
    একরকম শাপে বর হয়েছে তার। এখানে এসে সুলতানের প্রাসাদে ফুল যোগানোর ভার পড়েছে সেবন্তীর ওপর। 
    ভালোই লাগে অবশ্য সেবন্তীর। রকমারী গোলাপের ফুলই যে কত আছে সুলতানের বাগিচায়! এছাড়াও আরো হলুদ নীল বেগুনি রংবেরঙের ফুলের মেলা সেখানে। মালির ফুল তোলা হয়ে গেলে সেবন্তী ঐ ফুল দিয়ে কখনও তোড়া বানায়, কখনো আবার ফুলগুলো মালায় গাঁথে। সেই সুগন্ধি মালা, তোড়াগুলোকে দিয়ে আসে প্রাসাদের হরেক মহলে। 
    এই ফুলের যোগান দিতে দিতে তার বেলা কাবার। 
    এরপর বাঁদীঘাটে নেয়ে ধুয়ে নিলেই খানা মেলে। সুলতানের বাবুর্চিখানায হরেক পদ রান্না হলেও দাসনৌকরদের জন্য বরাদ্দ একছিটে গুড় আর রোটি। কখনও আগেরদিনের বেঁচে যাওয়া, পোড়া, আধসেদ্ধ খাদ্য বা অখাদ্য। 
    বাবুর্চিখানা থেকে সেবন্তীদের খাবার নিয়ে আসত ওসমান। 
    কে জানে কালো চোখের সেবন্তীর মায়ায় কেমন করে জড়িয়ে গেল সে। 
    গুড়ের সঙ্গে কখনও সখনও সেবন্তীর জন্য একটু মির্চির আচার, কখনও একটুকরো পাঁপড় লুকিয়ে আনত ওসমান। 
    এরপর ওদের কখনো দেখা হতে লাগলো বাগিচায় বড় পাথ্থরের আড়ালে, কখনও তালাও এর  পাড়ে গুলমোহর গাছের নীচে, কখনও আবার বাবুর্চিখানার পিছনের হাতায়। 
    সেবন্তী ওসমানকে তাদের গাঁও এর গল্প শোনায়। যেদিন ওদের গাঁও থেকে সেনারা ওদের ধরে নিয়ে এল, সেদিন তার গাইটা  মাঠে চরতে গিয়ে আর ফেরেনি। ধবলি গাইটার জন্য বড় মনটা খারাপ হয় ওর। মা ছিলনা মেয়েটার। বাপ আর ছোট ভাই কোথায় যে ছিটকে গেল! 
    আর কখনও কি ওদের সঙ্গে দেখা হবে? 
    সেবন্তীর চোখে কালো মেঘের বাদল ঘন হয়ে আসতেই ওসমান ওকে অন্য গল্প শোনায়। 
    ওসমান কেনা দাস নয়, সে বাবুর্চিখানার নৌকর। বৎসরের শেষে একবার ওর আম্মির কাছে ঘরে যাওয়ার ছুটি মেলে তার। এছাড়া সেবন্তীর সঙ্গে অবস্থার খুব একটা ফারাক নেই তারও। ওসমানের মত নগন্য চাকরেরও কোন আলাদা মূল্য নেই এই প্রাসাদে। 
    ওসমান সেবন্তীকে বাবুর্চিখানার গল্প শোনায়। শাহি রসোই এ দৈত্যাকার চুলায় বৃহৎ, বৃহৎ পাত্রে তেলে, ঝোলে, মশলায় কেমন করে রকমারি পদ রান্না হয়। যেমন তার স্বোয়াদ, তেমনি সুগন্ধ। সেইসব বাহারি খানা যেন নিজেরাই এক একটা রূপসী কন্যে। 
    তাদের পরণে হলদির পিলা ঘাগরা, ধনিয়ার সবজে কাঁচুলি, ঠোঁটে লাল মিরচির ঝাঁঝ। কানে, নাকে, মাথায়, পায়ে দারুচিনি, এলাচ, মেথি, মৌরীর হার, চুড়ি, টায়রা, পায়জেব। শুধুই কি এইসব হররোজের স্বোয়াদ? খাসমওকায়, পোলাও কালিয়ার শরীরে রতন জোত, আনারদানা, জাফরান, বহেড়া, গুলসুপারির জড়োয়াসাজ।
    বাবুর্চিখানায় রাতবিরেতেও ঘুরে বেড়ায়  মিঠা আতর আর গুলাবজলের উমদা খুশবু।
    ওসমান বলে, একদিন ঐ শাহীখানা সেবন্তীকে খাওয়াবেই। সেবন্তী সেই শুনে সব ভুলে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। 

    তবে আজ ওসমানের মুখে এক ভারি অদ্ভুত গল্প শুনলো সেবন্তী। 
    তালাও এর পাড়ে প্রাসাদের খাসবাগিচা থেকে ডাইনে ঘুরে যে বিরাট চাতালটা পড়ে রয়েছে ঐটে নাকি শুধু একটা প্রাঙ্গণ নয়। ওকে আসলে হল একটা খেলার খোপঘর। তা সেবন্তীও দেখেছে বটে চাতালটায় সোজাআড়ে নকসাকাটা। কিন্তু সেটা যে পঁচিশি খেলার ঘর, সেটা সে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। 
    ঐ পঁচিশি খেলা তো  তাদের গাঁয়েও হত। ভাঙা শিবমন্দিরের চাতালে মোড়লবুড়ো ছককাটা লালকাপড় খুলে বসতো। তেঁতুল বিচি, কুমড়ো বিচির ঘুঁটি দিয়ে খেলা হতো কাপড়ের ছক জুড়ে। কাঠপাশায় দানের আওয়াজ উঠত 'খটাখট', 'খটাখট'।
    ওসমান মুচকি হেসে বলে, "এ তোর গাঁয়ের ছকপঁচিশি নয়রে সেবন্। এ হল রাজারাজড়াদের শখ। এদের পাশা গুলো হাতির দাঁতের আর তাতে হিরেজহরতের ফোঁটা কাটা।   
    "আর ঘুঁটি? সেগুলো বুঝি সোনারূপো দিয়ে তৈরী?" সেবন্তীর কথায় গম্ভীর হয়ে যায় ওসমান। 
    একটু চুপ করে থেকে বলে, "না রে, সে ঘুঁটি সোনারূপোর চেয়ে অনেক দামি।''
    সেবন্তী বলে, " সে কি? সোনারূপোর চেয়েও দামী? তাই আবার হয়? সোনা রূপোর জন্যই তো এত লুটতরাজ? এত লড়াই?"
    "তা ঠিক। তবে সোনারূপোর চেয়েও বড় হল রাজারাজড়াদের খেয়াল। সেই আজব খেয়ালে এরা যে কি না করতে পারে! সুলতানের আজব খেয়ালে ঐ ছকপঁচিশির ঘুঁটি হল মানুষ।"
    "মানুষ?" সেবন্তীর কালো চোখে অবাক বিস্ময়।
    "হুমম। সুলতানের ঘরে মেহমান এসেছে। খেলা হবে। কাল সকালে সুলতানের তামাম দাসদাসীদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হবে ঘুঁটি । আর খেলার সময় ঐ দাসদাসীরা ঘুঁটি সেজে ছকের ঘরে ঘরে পাশার দানে দানে নড়বে চড়বে। খেলার শেষে, খেল্ জিতনেওয়ালা অন‍্যের সব দাসদাসীগুলোকেও জিতে নেবে। বুঝলি?"

    সত্যি পরদিন খেল্ হল জব্বর। 
    খটখটিয়ে হাতির দাঁতের পাশায় দান পড়ল। সেই পাশার চালের হিসেবে, ঝকঝকে ঘাঘরা, কুর্তা, ধোতি পরা দাসদাসীরা ঝমঝমিয়ে ঘুরে বেড়ালো পঁচিশি খেলার খোপঘরে। 
    লালনীল পানীয়ের ফোয়ারায় সুলতান আর তার মেহমানের চোখে তখন রঙীন ঘোর। পোলাও, কালিয়া, মাংসের খোস গন্ধে  বাতাস মাতোয়ারা।
    তারপরে যখন নহবতের সানাইয়ে সুর উঠেছে পূর্বী রাগে, সেই শেষ বিকেলে মেহমান জিতলেন আর সুলতানের হল হার। 
    ছকপঁচিশির ঘুঁটিদাসদেরও বদলে গেল মালিকানা। তাদের এখন নতুন হুজুর। খেলার নিয়মমতো পরদিন ঐ মেহমানের সঙ্গে তারা চলে যাবে অন‍্য ঠিকানায়।

    ষোড়শী মেয়ের ঘন কালো চুলের মত অমানিশার অন্ধকারে কেবল হিরের ছিটের মত এদিকে ওদিকে দু একটা নক্ষত্র জেগে আছে। আজ পাহারা একটু শিথিল। সারাদিনের মোচ্ছবের পর মহলের সবাই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। শুধু দুটো মানুষী অবয়ব পাথরের মূর্তির মত স্থির হয়ে তালাও এর পাড়ে বসে আছে। আজ বুঝি ওদের কোন কথা নেই। শুধু নিরবচ্ছিন্ন মরমিয়া অনুভবে বুঁদ হয়ে রয়েছে যুগলে।
    পরদিন সকালে, দিঘির ধারে ওসমান আর সেবন্তীর মৃতদেহদুটো রক্ষীরা দেখতে পেয়ে ফেলে দিয়ে এল একেবারে নগরীর প্রাকারের বাইরে। প্রাসাদে মেহমান রয়েছে, তার মধ্যে একি বিড়ম্বনা! 
    মরার আর মুহরত পেলনা বেয়াক্কেলেরা? 
    প্রাসাদের সব মহলেই গুঞ্জন। এদের মধ্যে যে গোপনে আশনাই চলছে কেউ বুঝতেও পারেনি।  ফুলতুলুনি কালো বাঁদিটাকে সুলতান ছকপঁচিশির ঘুঁটি করেছিলেন। সুলতান হেরে যেতে বাঁদীটার হাতবদল হয়ে যাবে, তাই বুঝি বুরবক্ দুটো গুলাবজলে জহর মিশিয়ে খেয়ে মরেছে। 
    সে যাই হোক। সেবন্তী মরলেও রোশেনারা, লাজবন্তী, নাজনীন..  সেবন্তীর বদলে কোন একটাকে গোঁজামিলে দিয়ে দিলেই হল।
    সুলতানের বাঁদীর কি অভাব নাকি? আর বাঁদীর মুখ আবার কে মনে রেখে বসে আছে? 
    ভালোই হয়েছে, নিজেরা মরেছে। সাহস করে মহব্বতের জিগির তুলতে গেলে এমনিতেই আহাম্মক দুটোর গর্দান যেত। 
     
    ************************
     
    গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক কষে মাথাটা ঠুকে যেতেই চমকে ঘুমটা গেল ভেঙে। শহর থেকে খানিক দূরে ভাঙাচোরা দূর্গ, প্রাসাদ দেখতে বেরিয়েছিলাম সাতসকালে। ফিরতে ফিরতে দিন শেষ হয়ে রাত নামছে  এই গ্রামগুলোতে। ক্লান্তিতে একটু চোখ লেগে গেছিল। ভাঙাচোরা পাশা খেলার বিরাট ছক দেখে ঘোরের মধ্যে কিসব স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ, কে জানে! 
    ঘুম ভেঙে বাইরে তাকিয়ে দেখি দেহাতি সব গরীব মানুষের দল কাজ শেষে ঘরে ফিরছে। কেউ দলবেঁধে, কেউ একলা। কারো সাথে ছোট বাচ্ছা, অন‍্যজনের হাতে গরু ছাগলের দড়ি। কোন কোন দল হাসিখুশি। কেউ বা একটু চুপ। আজকের বিকিকিনির বাজারে তার সওদা হয়তো ঠিক দামে বিকোয়নি। সন্ধ্যেবেলার মরা আলোয় এদের দেখে মনে হল এইসব গরীব, আনপড় মানুষগুলোর সময় কি সত‍্যিই বদলেছে? এখনই সত্যিই ভালো আছে এরা? নাকি যারা ধনী, যাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে, তারা আজও সরল মানুষগুলোকে ঘুঁটির মত চালাচ্ছে, শুধু ছকপঁচিশি খেলার নক্সাটাই যা চোখে দেখা যাচ্ছে না?
    ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। সামনে শহরের তীব্র আলো স্পষ্ট হচ্ছে, পিছনে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে গ্রাম, ভাঙা দুর্গ, গরিব মানুষের দল, ছকপঁচিশির নক্সা…..

    (পঁচিশি খেলাটি অনেকটা পাশা খেলারই মতো। লুডো খেলার প্রাচীন সংস্করণও বলা যেতে পারে। মানুষ ঘুঁটি নিয়ে পঁচিশি খেলার কিংবদন্তি ইতিহাসে পাওয়া যায়। বাকিটা লেখকের কল্পনা)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১১ জুন ২০২৩ | ৭০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 174.25.***.*** | ১১ জুন ২০২৩ ১০:৩৮520362
  • যুগটাকে কেন যে অন্ধকার যুগ আখ্যা দিয়েছেন ঐতিহাসিকেরা তার একটি উদাহরণ। বৃপূসোভার লোকজন কী মনে করবেন কে জানে! 
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ১৪ জুন ২০২৩ ০০:৪৭520408
  • "হুমম। সুলতানের ঘরে মেহমান এসেছে। খেলা হবে।'' ।.......হ্যাঁ জমেছে সেই খেলা। চলছে এখনো। 
    এই কলমের শক্তিমত্তা পাঠকের আগেই জানা। শুধু তাদের অপেক্ষা থাকে নতুন কোন আখ্যানের। আশ পুরো মিটেছে,অন্তত আমার মত পাঠকের এটুকু বলতে পারি। 
    আগেও দেখেছি এই কলমের শক্তি নাটকীয়তা সৃষ্টির অপূর্ব কৌশলে। এ গল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। 
    'সুলতানের বাঁদীর কি অভাব নাকি?'বাহ,মহাকাব্যিক 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন