এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • একটি মন খারাপের দিন

    Arundhati Sarkar Santra লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১১১৩ বার পঠিত
  • জানলার ঘষা কাঁচের ওপরটা পাতলা কাপড় দিয়ে সন্তর্পণে মুছে নিয়ে মেহতাজী পাশের চটাওঠা হাতবাক্সটা থেকে একটা ব্রাশ বের করলেন। রংচটা, কাঠের হাতল দেওয়া চ্যাপ্টা মতন ব্রাশটাকে ঝেড়ে ঝুড়ে জানলার লোহার ফ্রেমটা থেকে এবার  ধুলো ঝাড়তে লাগলেন। ধুলো ঝাড়ার নিবিষ্টতায় রোগা শরীরটা ধনুকের মত সামনের দিকে নুয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে চশমাটা ঠিক করে নেওয়া ছাড়া মগ্ন একাগ্রতায় কোন শৈথিল্য নেই। জানলার সমস্ত কাঠামোটা থেকে অনু পরমানু ধুলো খুঁটে খুঁটে তুলে আনাতেই যেন তাঁর শৈল্পিক সাধনার সিদ্ধি।

    মহুয়া উল্টোদিকের ব্যালকনি থেকে গত তিনদিন ধরে মেহতাকে এই ধুলো ঝাড়তে দেখছে। 

    সমর অফিসে বেরিয়ে যাবার পর এই সময়টায় মহুয়া কাচা জামাকাপড়গুলো শুকোতে দেয়। ব্যালকনির লোহার জালির মধ্যে দিয়ে পিছলে আসা রোদে কখনো একটু চুলটা শুকিয়ে, বা কখনো হাতপা সেঁকে নেয়। নইলে এই পুরণো আবাসনের ফ্ল্যাটগুলোয় রোদের বড় অভাব। ঘরগুলো বড় গায়ে গায়ে ঠেকানো, ঘিঞ্জি। তাই সকালবেলার যাবতীয় কমলা রোদটুকু শুষে নেবার জন্য এই বারান্দাটাই ভরসা। এখান থেকেই আকাশটা দেখা যায়। ঐ বারান্দা থেকেই কোনাকুনি ভাবে সামনের দিকে মেহতাদের ফ্ল্যাটটা। তাই ইচ্ছে করে না দেখলেও চোখে পড়েই যাচ্ছে মহুয়ার। কদিন ধরে মেহেতার জানলার ধুলো নিয়ে নাড়াচাড়া দেখে মহুয়ার রাগে ব্রহ্মতালু জ্বলে যাচ্ছে। ফ্ল্যাটের অন্যকোন জায়গায় যদি এতটুকু রোদ আসত তাহলে সে মোটেই এই ধুলো শিল্প দেখতে ব্যালকনিতে আসত না।

    ব্যাপারটা এমন নয় যে মেহতাদের সঙ্গে মহুয়ার পড়শিতুতো ঝগড়া আছে বা আধবুড়ো লোকটা মহুয়াকে কোন অশালীন ইঙ্গিত দিচ্ছে। বরং ঐ জানলা পরিস্কারের মনসংযোগে লোকটির কোনদিকে এতটুকু হুঁশ নেই। শুধু মহুয়া কেন, আশেপাশে কোনদিকেই তার নজর নেই। তবুও মহুয়ার রাগ হচ্ছে। যেমন তেমন রাগ নয়, কেমন যেন একটা ঘৃণায় গা পাক দেওয়া তেঁতো রাগ।

    আসলে মেহেতার এই আত্মনিমগ্ন নিবিষ্টতাকে মহুয়া সহ্য করতে পারছে না। কোন হতাশা নেই, হাহুতাশ নেই, ভেঙে পড়ার কোন লক্ষণই নেই। ভারি শান্ত, সমাহিত। একজন মানুষ এত দ্রুত সব ভুলে আত্মমগ্ন কি করে হতে পারে?

    পনেরো দিন ও হয়নি মেহেতার স্ত্রী মারা গেছে। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই একদম হঠাৎ। কোন চিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই নাকি মেহতা গিন্নির হৃদযন্ত্রটি জবাব দিয়ে দিয়েছে।
    মেহেতার অবশ্য সেসবে খুব একটা ভ্রূক্ষেপ আছে বলে মনে হচ্ছে না। বারান্দার জানলা থেকে ধুলো ঝাড়তে তিনি খুবই ব্যস্ত। 

    মেহতাকে মহুয়া অবশ্য খুব একটা চেনে এমনটা নয়। মহুয়ারা খুব একটা বেশিদিন এই আবাসনে আসেনি। মেহতাদের সঙ্গে সামনাসামনি আলাপও হয়নি কোনদিন। ঐ মুখচেনা বলা যেতে পারে। তবুও পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিমার মার সঙ্গে মেহতা গিন্নির মৃত্যুর পরে গিয়েছিল ওদের ফ্ল্যাটে।

    ভিতরের অবস্থা দেখে মেহতাদের নিম্নবিত্তই মনে হয়েছিল মহুয়ার। আকস্মিক মৃত্যুর শোক ছাপিয়েও যেন একটা দীর্ঘকালীন মলিনতার চাদরে ঢাকা ছিল ঘরের ভিতরটা। মেহতাদের ছেলে প্রবাসী। সে তখনও এসে পৌঁছয় নি। তাই  মেহতা গিন্নি তখন শেষকৃত্যের অপেক্ষায় শুয়েছিলেন হলের মেঝেতে।

    দু একজন মহিলা নীচুস্বরে কান্নাকাটি করছিল। 

    আজকাল অবশ্য সন্তান বিয়োগ না হলে কেউ আর আগেকার মত উচ্চস্বরে, বুক চাপড়ে কাঁদে না। শোকও এখন অনেক পরিশীলিত। দিনেশ মেহতাও  ছিলেন সেখানে। একটি চেয়ারে বসে, চুপচাপ। বাইরে পুরুষদের শবযাত্রার ব্যবস্থাপনার হাঁকডাকে ছিলেন না। তখন মহুয়ার মনে হয়েছিল আচমকা শোকে বুঝি মানুষটা কথা হারিয়ে ফেলেছে। ঠাকুমা বলত, 'অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর।'

    খানিকক্ষণ থেকে চলে এসেছিল ওরা। 

    দত্তবৌদিরা অনেকদিনের বাসিন্দা, বললেন, দিনেশের বাবারই কেনা ফ্ল্যাট। নইলে এখানে ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য নেই মেহেতার। কোন দোকানে হয়ত কাজ করেন দিনেশ। রোজগার সেরকম ভালো নয়।  কবছর হল ছেলে চাকরি পেয়েছে। তাই অবস্থা একটু ফিরেছে। মেহেতা গিন্নির কপালে সেই সুখ বুঝি সহ্য হলনা। ভোগ না করেই চলে গেলেন। 

    প্রতিটি মানুষের জীবনেই বুঝি কিছু ইচ্ছা, কিছু ভোগ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মানুষের যত দিন জীবন, তত সীমাহীন ভোগের তৃষ্ণা। একমাত্র মৃত্যুতেই সম্ভবতঃ তার ইতি। 

    সকালটা মহুয়ার খুব তাড়াহুড়োর মধ্যেই কাটে। 

    সমরের অফিস, বুবলাই এর স্কুলের তাড়া সব মিলিয়ে দম ফেলার সময় নেই। তবে এতো সব সংসারেরই রোজনামচা। তবু তো মহুয়ার মাথার ওপর কর্তৃত্ব করার কেউ নেই।
    বাবাই দেখেশুনে পছন্দ করেছিলেন সমরকে। সমরের বাবা মা মারা গেছেন আগেই। দাদা বৌদি আছে। কিন্তু সমরের বদলির চাকরি। বাবা এখানেই বিয়ে ফাইনাল করে ফেলল। বাবা বলল, "সংসারে নাক গলাবার কেউ নেই। এই ছেলে হাতছাড়া করা ঠিক নয়।" 

    তবে সমর ও বাবার হিসেব কাঁটায় কাঁটায় মিলিয়ে দিয়েছে বটে। 

    সমর মহুয়ার জীবনে খোলা হাওয়ার মত, সুরের ঝর্ণার মত। কখনো সমরের মনের কোন নীচতার সঙ্গে মহুয়াকে মোকাবিলা করতে হয়নি। মহুয়ার সবটুকুকেই নিজের মত করে ফুটে উঠতে দিয়েছে সমর।

    মহুয়া কোনদিনই বাইরে গিয়ে কাজ করবে ভাবেনি। সে চাকরি করতে গেলে কি সমর রাগ করত? তা জানা নেই মহুয়ার, এভাবে ভেবেও দেখেনি কোনদিন। তবে এছাড়া অন্য যেকোন বিষয়েও তো সমর স্ত্রীকে কখনও বাধা দেয়নি, বরং বলা ভালো উৎসাহই দিয়েছে। আর সমরের ইচ্ছেতেই তো সে বহুদিন গানের রেওয়াজ ও চালিয়েছে।

    সমর বলে, '' বিষয়টা শুধু গান শেখা নয় মহুয়া, জীবনে কোথাও একটা খোলা আকাশ রাখতে হয়। নাহলে সংসার তোমাকে পাকে পাকে জড়িয়ে ধরবে। তখন সংসার শুদ্ধ সমস্ত জীবনটাই দুর্বিসহ হয়ে যাবে। তার থেকে কোন একটা খোলা জানলা রেখো।'' 

    তবে মহুয়াও ভালোবেসে নিজেকে এই সংসারে রেণু রেণু করে ছড়িয়ে দিয়েছে। বুবলাই এর ভার সে একটুও সমরকে নিতে দেয়নি। বুবলাই আসার পর তাদের কারো বাড়ি থেকেও কেউ মহুয়া কে সাহায্য করতে আসতে পারেনি। সংসারের সঙ্গে সঙ্গে মহুয়া বুবলাইকেও একলাই দিব্যি সামলে নিয়েছে।

    বুবলাই ক্রমশ একটু একটু করে বড় হয়েছে, মহুয়াও সেই সুরে, সেই তালে নিজেকে মেলে ধরেছে। তখন বুবলাই এর মা হয়ে ওঠাটাই ছিল মহুয়ার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

    সমর তো বলেই খালাস, '' মহুয়া, দুমদাম পিটিয়ে ছেলেমানুষ করার দিন আর নেই। এখন হলিস্টিক এডুকেশনের যুগ। শুধু পড়া মুখস্থ করলেই চলবে না। শিক্ষাটা যেন ভার না হয়ে যায়।'' মহুয়া অবশ্য মাথায় রেখেওছে কথাগুলো। ছেলেকে খুব চাপ দেয়নি, আবার একটা রুটিনে বেঁধেও রেখেছে। এই করতে করতে বুবলাই এখন নামী স্কুলের ভালো ছাত্র। দাবাটাও ভালোই খেলে।

    শুধু কি বুবলাই? সমস্ত সংসারটাকেই তো মহুয়া প্রশ্রয় আর শৃঙ্খলার একটা অনুপম ককটেলে ধরে রেখেছে। নয় কি?

    কিন্তু সেটা কি শুধু মহুয়ার উপস্থিতিতেই?একদিন যদি মহুয়া হঠাৎ না থাকে? মেহতা গিন্নির মত আচমকা যদি তারও এই সংসারে দিন শেষ হয়ে যায়? 

    তাহলে কি ঠিক এই ছন্দে, এই গতিতে সংসার চলবে? নাকি বাধা পাওয়া নদীর মত খুব সহজেই অন্য খাত খুঁজে নেবে? 

    যাকগে একটু বোধহয় বেশীই ভাবছে মহুয়া। সমরকে এই বিষয়টা বললে হেসেই উড়িয়ে দেবে।

    কিন্তু কথাটা একেবারে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেও দিতে পারছে না। আগে যেমন মাকে সব কথা ফোন করে বকবক করে বলে যেত, এখন তো আর তাও বলা হয় না। মা আর আগের মত নেই। 

    বাবা চলে যাবার পরপরই মা কেমন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। মাতো এতটা চুপচাপ ছিলনা কখনোই। এমনকি বাবার তিক্ত, ঝাঁঝালো চরিত্রের সঙ্গে যুঝতে যুঝতেও মা ছিল একেবারে স্বাভাবিক, হাসিখুশি।

    সংসারে মা ছিল বাবার শিকার। সহজ শিকার। বাবার উদ্ধত ইগোর গরলটুকু মার ওপরেই ছিটকে ছিটকে পড়ত। কারণে, অকারণে বিদ্রূপ, অপমানের তপ্ত গরলে চাকা চাকা ফোস্কা পড়ে যেত মায়ের সারামনে। মানুষকে কি শুধু হাত দিয়েই মারতে হয়? তেমন ভাবে বলতে জানলে কথার চাবুকের বিষও কম নয়। বাবার হাতে ছিল সেই কথার মার। তাতে অবশ্য সংসারযাত্রা নির্বাহ হতে কোন বাধা ছিলনা। কারণ মা তো প্রতিবাদ করতোনা। তারা কেউই প্রতিবাদ করতো না। মা তো নয়ই, মহুয়া বা ওর দাদাও নয়। বাবার শাসনের বজ্রমুষ্ঠিতে ওদের জীবনটা বাঁধা ছিল। 
    কিন্তু সবাই সেই বজ্রমুষ্ঠির শাসন মেনে নেবে এমন নয়। 

    বৌদি আসার পর বাবার মুঠো একটু হলেও আলগা হয়েছিল। বৌদিকে পছন্দ করে এনেছিল বাবাই। মাকে বলেছিল, ''পড়াশুনো জানা শিক্ষিত মেয়ে, দেখতেও সুশ্রী। স্কুলের টিচার। একেবারে পারফেক্ট মেয়ে পেয়েছি বুঝলে?" নিজের পারফেক্টনেসের ওপর বাবার চিরকালই খুব কনফিডেন্স।

    তবে এর পরের বাক্যটিই মেয়ে পছন্দের আসল কারণ, "তোমরা হলে এসব দেখেই নাচতে নাচতে চলে আসতে, আমি দেখলুম বিধবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, মেয়ে আমাদের তাঁবে থাকবে। ফোঁস করবার জোর নেই। পরিমল সান্যাল না ভেবেচিন্তে কোন কাজ করেনা।"

    শুভলগ্নে বিয়ে হয়ে গেছিল বিধবা মায়ের মেয়ে সুজাতার সঙ্গে পরিমল সান্যালের ছেলের। কিন্তু বাবার ধারণা কিছুটা হলেও মিললনা। বিধবা মায়ের মেয়ে হিসাবে বৌদি একটি সহজাত বর্ম অর্জন করে শ্বশুরবাড়ি এল। ছোট ছোট সাংসারিক বিষয়ে বৌদি বুঝিয়ে দিতে পেরেছিল, তার গণ্ডীতে ঢুকে তাকে তাঁবে রাখা যাবেনা। চাপা আবেগ, পরিমিত উচ্ছ্বাস, দায়িত্ববোধের মিশেলে বৌদিকে একটু যান্ত্রিক মনে হতো বটে মহুয়ার। কিন্তু সে ঐ রকমই।

    মা ফোন করে মহুয়া কে দু একটা ঘটনা বলেছিল। ঠিক লাগানি ভাঙানির জন্য নয়। মাও কি একটু আধটু খুশি হচ্ছিল? মাঝে মাঝে তাই মনে হত মহুয়ার।

    বিয়ের মাস তিনেক পর দাদারা হনিমুন করতে যাওয়ার কথা। ডেস্টিনেশন গোয়া। বৌদিও আগে হয়তো কোথাও খুব একটা ঘুরতে যায়নি। সেও আনন্দে ডগোমগো। বেড়াতে যাবার জন্য রোজই কিছু না কিছু মার্কেটিং করছে।

    কিন্তু বাবা আপত্তি জানালো। বাবার মত অনুযায়ী পুরী, দীঘা গেলেই হয়, ওসব পয়সা ওড়ানোর জায়গায় যাবার প্রয়োজন নেই। বাবা আপত্তি জানাতেই পারেন কিন্তু তিরিশ বছরের সরকারি চাকুরে সুপুত্র সেকথা নির্বিবাদে মেনে নেবে?

    ওদের বন্ধ দরজার পিছনে কি আলোচনা হয়েছিল মা সেটা আর জানেনা। কিন্তু ট্যুর ক্যানসেল হয়ে গেল। মা জিজ্ঞাসা করাতে বৌদি একটু মলিন হেসে বলেছিল, "ওর বোধহয় অফিসের কাজ পড়ে গেছে।"

    এর ঠিক একমাসের মধ্যেই একদিন বৌদির মা একদিন ফোন করে মাকে বললেন, "দিদি সুজাতার মামার বাড়ি থেকে ওর মামারা সবাই মধুপুর যাচ্ছে, আপনারা যদি অনুমতি করেন তাহলে মেয়েটাকে সপ্তাহখানেকের জন্য নিয়ে যাই। আমিও আর ঠিক ওকে ছাড়া এইবয়সে সাহস করে উঠতে পারিনা। "

    এর মধ্যে না বলার কিছুই নেই।

    "জামাই যদি ছুটি পায়, ওকেও বলবেন দিদি।"শেষের কথাটা একটু যেন দায়সারা।

    বৌদি চলে গেল, একসপ্তাহ ঘুরেও এল। বিয়ের পর প্রথমবার, স্বামী ছাড়াই। এই একটা সপ্তাহ বাবা অবশ্য মাকে গঞ্জনা দিতে ছাড়ে নি।

    কিন্তু চরম সমস্যা হল আরও বছর দুয়েক পর।

    বৌদি তখন এক সন্তানের মা। মা তখনও শক্তপোক্ত তাই সংসারটি মায়েরই হাতে, কিন্তু বৌদিও একেবারে নববধূটি নেই। ছেলের মা হয়েছে, সংসারে পা জমেছে। বৌদি স্কুলে গেলে নাতি মার কাছেই থাকে। একটি ছোট মেয়ে রাখা হয়েছে, সে মাকে হাতে হাতে সাহায্য করে। বৌদি ফিরে এলে সে চলে যায়। এভাবেই বেশ চলছিল।

    একদিন বৌদি কাগজের লেফাফা নিয়ে ফিরল। দাদা ফিরল ভীমনাগের মিষ্টি নিয়ে। বছরখানেকের ও আগে বৌদি কলেজ সার্ভিস কমিশনের ইন্টারভিউ দিয়েছিল। আজ তার রেজাল্ট বেরিয়েছে। বৌদির নাম একেবারে ওপরের দিকে। এখন শুধু পোস্টিংটি কোথায় পড়বে তাই চিন্তা। বৌদি স্কুলটিচার থেকে অধ্যাপিকা। মহুয়া ও ফোনে বৌদিকে কনগ্রাচুলেট করলো।
    বৌদি বলল, "খুকু তুমি আসলে তবেই আমরা সেলিব্রেট করব"।

    বাবা কিন্তু সেই ভীমনাগ মুখে তোলেনি।

    মহুয়া ফোনে সেকথা শুনে মা কে বললে, "সে কি কেন? এতে আবার কি হল?"

    মা বললেন, "বৌমা স্কুলে বেরিয়ে যেতেই রাজুকে তোর বাবা বলছে, বৌমানুষ ইস্কুলের চাকরি করে পোষাচ্ছে না? আবার এসব কি?"

    দাদা খানিকটা ভেবে বলেছে, "তা কলেজ তো আরো ভালো। সুজাতার স্বপ্ন... "

    বাবা চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছেন নিশ্চয়ই, "তা আর স্বপ্ন নয়? তুমি কেবলাকান্ত একটি। একেই তেঁএটে মেয়ে, তারপর কলেজের প্রফেসর হলে তোমার মাথায় চড়ে ধেই নৃত্য করবে না তা কে বলতে পারে? তুমি এই চাকরি করা বন্ধ কর। যেমন চলছে তেমন চলুক। এ বাড়িতে থেকে স্বামীর মাথার ওপর দিয়ে মসমসিয়ে কলেজ যাওয়া চলবে না।"

    মহুয়ার কেমন যেন মনে হয়, 'দাদা'? নাকি 'বাবা' ই ক্রমশ বৌদির কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছিল?

    যাই হোক এই সমস্যার সমাধান খুব সহজে হয়ে গেল। বৌদি একরকম বাবার কথা বিনা প্রতিবাদেই মেনে নিলো।

    বাড়িতে থেকে সে ঐ চাকরিতে জয়েন করলো না।

    একটিও কথা না বলে পরদিন সকালে, বৌদি বাক্স গুছিয়ে খোকনকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। দাদাকেও সঙ্গে নিলনা। বিধবা মায়ের মেয়ে একলা লড়াই লড়তে জানে। মাকে প্রণাম করে বলে গেল, "সাবধানে থাকবেন মা। গুণিকে হঠাৎ ছাড়িয়ে দেবেননা। আপনার একার হাতে সবটা সম্ভব নয়। আমি জয়েন করে আপনার সঙ্গে দেখা করে যাব।"

    বাকি সব চুপচাপ। দাদা যেমন অফিসে যায়, আসে। কোনদিন মাকে বলে যায় ঐ বাড়ি থেকে খেয়ে আসে। কখনো ওবাড়িতেই থেকে যায়। গুণি মার হাতে হাতে কাজ করে দেয়। এভাবেই কেটে গেল কয়েকটা মাস। মহুয়া মাকে ফোন করে সব খবরই পায়। সমরও একবার বললে, "মহুয়া তোমার বাবার এ অন্যায় জেদ।"

    তা জেদটা যে অন্যায় শুধু নয় মহা অন্যায়, তা পরিমল সান্যাল নিজেও বুঝেছিল খানিকটা বটে। নাতিটিকে ছেড়ে থাকাও কষ্টের, কিন্তু নিজে থেকে নত হবার কোন সম্ভাবনাই ছিল না । 
    তারপর তো বাবাই চলে গেল। হঠাৎ সেরিব্রাল স্ট্রোক। বৌদিও ফিরে এল। কিন্তু মা যেন কেমন চুপচাপ হয়ে গেল।  বাবার প্রবল ব্যক্তিত্বের ছায়ায় থাকাটা বোধহয় মার অভ্যাস হয়ে গেছিল। কিন্তু বাবা চলে যেতে সেই বজ্রমুষ্ঠির শাসন থেকে মা কি মুক্তির স্বাদ পায় নি? তবে নিজেকে এভাবে গুটিয়ে নিল কেন? 

    কে জানে? নিজের মাকেই কি ভালো করে বুঝতে পেরেছে মহুয়া? তবে এটুকু বোঝে যে এখন আর মার সঙ্গে সব গল্প করা যায় না, মা নিজেকে একটা খোলসে গুটিয়ে নিয়েছে। 

    এর মধ্যেই কলিং বেলের টুং টাং।

    কনক আসতে বেশ দেরি করেছে আজকে। 

    এরকমটা তো করেনা। কনকের কাজে আসার সময় ধরে ঘড়ি মিলিয়ে নেওয়া যায় প্রায়। মহুয়ার বাড়িতেও ঠিক ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চকচকে করে বাসন মেজে, ঘরদোর মুছে বেরিয়ে যাবে কনক। ঘড়ির কাঁটার মত চলেও সব কাজ শেষ করে যখন সে খাল পাড়ের বস্তিতে ফেরে তখন প্রায় দুটো বেজে যায়। 

    - "আজ এত দেরি করলি কেন রে কনক?" মহুয়া একটু বিরক্ত, কনকের আসার সঙ্গে সঙ্গে তার রুটিনটাও বাঁধা থাকে যে।

    - "বৌদি কাল থেকে এই সময়ে আসলে হবে গো?" 

    - "হবে না কেন? তুই তো একঘন্টা আগে আসছিলি, তাই বলছিলাম।" 

    - "হ্যাঁ গো বৌদি। ঐ মেহেতাবৌদি মারা গেল না? ওদের ঘরেই রান্নার কাজটা ধরলাম গো। আগে শুধুই বাসন মেজে চলে আসতাম, এখন দাদাবাবু রান্নার কাজেও রাখলো।" 
    মহুয়া বুঝতে পারে তার মাথা টিপটিপ করা রাগটা আবার ফিরে আসছে। সে তো ঠিকই! ঝণাৎ করে টাকা ফেললেই রান্না করার লোক পাওয়া যায় অবশ্য। 

    বোকা, বোকা। মেয়েগুলো এক্কেবারে হদ্দ বোকার ধাড়ি। গোটা জীবনটা ধনে, জিরে, জোয়ানের, গন্ধে সেঁকে নিতে নিতে জীবনের আসল মানেটাই ভুলে বসে থাকে। আহা! মেয়েমানুষের কাছে ধনে, জিরে মানে কি শুধুই মশলা? আলু, বেগুন, বড়ি, ট্যাংরা দিয়ে হালকা করে ধনে জিরে বাটা দিয়ে ঝোল খেয়ে ছেলেমেয়ের চোখেমুখে যে তৃপ্তি খেলা করে সেটাও কি ঐ মশলার কৌটোয় মায়েরা ভরে রাখেনা? আলুর পরোটায় সামান্য জোয়ান, বা মুগের ডালে একটু মিষ্টি কর্তার রসনায় সসম্মানে উতরে যায়, আর তাই রান্না করতে গিয়ে তো একবারও গৃহিনীর মিষ্টি আর যোয়ানে গুলিয়ে যায়না। এই করতে করতে তারা জীবনটাকে ছোট ছোট লবঙ্গ, হিং, মৌরির কৌটোয় ভরে ফেলে আর মুক্ত আকাশটাকে এক্কেবারে ভুলে যায়। অথচ দেখো, শুধুমাত্র মেয়েমানুষের প্রাণপাখীটা কুঠুরি ছেড়ে যাবার অপেক্ষা। পয়সা দিয়ে রাঁধাবার লোক দিব্যি হাজির। কারো কিচ্ছুটি আটকে থাকবেনা। একমুহুর্তেই ধনে, জিরে, হলুদ, লঙ্কা সব্বাই ওসব স্নেহ, মায়া মমতা মুছে ফেলে এক্কেবারে পারফেক্ট স্বাদ নিয়ে হাজির। 

    মাথায় এসব ঘুরলেও মহুয়া বেজার মুখে বলল, "কিন্তু তোর দাদাবাবুর রান্নাটা একটু পরের দিকে করলেও তো হয়। একটা লোকের তো রান্না! আর খাবেও তো সেই দুপুরবেলায়।" 
    -"নাগো বৌদি ইস্কুলের রান্না তো। তাই একটু তাড়াতাড়ি।" কনকের মুখ আর হাত একই সঙ্গে ঝড়ের গতিতে চলছে। 

    মহুয়া একটু অবাক হয়, "ইস্কুলের রান্না? ওদের বাড়িতে ইস্কুলের রান্না আবার কার জন্যে রে? " 

    - "ওই বৌদির বোনের ছেলে এসে থাকবে গো।"

    - "সে কিরে, কেন? কতটুকু ছেলে? বাপ মা ছেড়ে এখানে এসে থাকবে কি করে? মাসিও তো আর নেই।"

    কনক হাতের কাজটুকু সেরে চা নিয়ে মহুয়ার সামনে বসে পড়েছে। 

    - "ও বৌদি তুমি এখানে নতুন তো তাই জাননি। বৌদির বোনও তো এখেনে থাকতো গো। পাশের ফেলাটেই। তারপর ক্যানছার হয়ে মরে গেল। কি ভোগান ভুগল। আর বৌদিকে সমানে বলত, ‘আমার ছেলেটাকে দেখিস দিদি। ওর বাপ আবার ঠিক বে করবে।‘ কিন্তু বৌদি ছেলেটাকে রাখলোনি। বোন মরে যেতে বৌদি ছেলেটাকে বাপের সাথে পাঠ্ঠে দিলো। বাপটা সত্যি গাঁয়ের দিকে আবার বিয়ে বসেচে গো। সেও কি নে যেতে চায় নাকি? তবু বৌদি রাখলনি। বললে, 'আমি আর ঐ ছোটছেলের ভার নিতে পারবুনি বাবা। একটা পেট চালানো কি মুখের কথা? তাছাড়া এক গাছের ছাল অন্য গাছে লাগেনা।' ছেলেটা ইস্কুলে পড়ত এখেনে। ওর বাপ নাকি ছাড়িয়ে নিয়ে চাষের কাজে লাগিয়েচে। বাপের অন্য বৌটাও নাকি ছেলেটাকে রাখতে চায়না। তবে ছোটকুর ওপর মেহতাদাদার চেরকালই খুব টান গো। দাদা পাটাতে চায়নে মোটে। কিন্তু বৌদিই চাইলনা। ও ছেলে শহরে মানুষ, গাঁয়ে গিয়ে চাষকাজ কি করতে পারে? জানি না বাপু।"

    এক ঢোঁক চা গলায় ঢেলে কনক বলল, "এখন দাদা বলল, - একলাই তো থাকব কনক। ছেলেটাও চলে যাবে কদিন বাদে। ছোটকুকে আসতে বলে দিলাম, ওকে আবার এখানে পুরণো ইস্কুলে ভর্তি করে দেব বুঝলি। দুজনে মিলে থাকব। তুই দুটো ফুটিয়ে দিস।"

    কনক ঘরদোর মুছে দিয়ে চলে গেছে।

     মহুয়া বসে আছে ঘর আর বারান্দার মাঝের চৌকাঠে। সকালের কড়া রোদটা আর নেই। কালো কালো, এলোথেলো দু একটা মেঘের ছায়া পড়েছে রোদের ওপর। কোনখানে মেঘ ঘন কালো, কোথাও আবার পাশুঁটে মেঘের ওপর দিয়ে উথলে উঠছে আদুরে সোনাগলা রোদ। দূরে দিগন্তে কাছটায় আবার কয়েক গোছা কোদালে কোপানো সাদা মেঘ জমে আছে। ঠিক সংসারের মত, ঠিক জীবনের মত। কোন নির্দিষ্ট নক্সা নেই। সুখ দুঃখ, প্রেম বিরহ, আলো অন্ধকার কিছুরই খাপে খাপে এঁটে যাওয়ার  দায় নেই। একঢালা আকাশের মত জীবনের চালচিত্রে যে যার মতো থেকে যায়। কখনো হিসেব মেলে, কখনো মেলেনা। 

    গড়িয়ে যাওয়া বেলার মেঘলা রোদের আলোছায়ায় বসে থাকে মহুয়া। বসে থাকতে থাকতে মেহতা গিন্নির মা মরা বোনপোটার জন্য তার গলার কাছে কেমন একটা মনখারাপের কান্না দলা পাকিয়ে ওঠে। 

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১১১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ০৭ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫৪517104
  • সুন্দর গল্প!  শব্দচয়নে দারুণ কারুকাজ! আর দৃশ্য রচনায় অসাধারণ মুন্সিয়ানা!  
  • Prativa Sarker | ০৮ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৬517108
  • আমি দিন দিন তোমার গল্পের অনুরাগী হয়ে উঠছি।
  • tutul shree | ০৯ মার্চ ২০২৩ ০২:১৬517157
  • কী অপূর্ব
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন