“টু ওনা”…
এভাবেই শুরু বিখ্যাত কমেডিয়ান চার্লি চ্যাপলিনের অটোবায়োগ্রাফি।
শব্দহীন চলচিত্রে যে মানুষটাকে সাদা কালো ছবিতে ছড়ি হাতে গড়াগড়ি খেতে দেখেছি, তার আরেকটা দিক যে এত অন্ধকার ছিল, জানতাম না তখন। চার্লি তাঁর জীবনীতে লেখেন,
“You need Power, only when you want to do something harmful otherwise Love is enough to get everything done.”
চ্যাপলিনের জীবনের চাপান উতোর ও তৃতীয় বিবাহ যখন শেষ পর্যায়ে, তখন এক আশ্চর্য হতাশা গ্রাস করছিল তাকে। ঠিক সেই সময়টায় দমকা হাওয়ার মত উপস্থিত হলেন ওনা’ও নীল। বয়সের এত পার্থক্যও তাদের দূরে রাখতে পারেনি। চার্লির মতে, জীবনের শেষ কুড়ি বছরেই তিনি জেনেছেন “সুখ” আসলে কেমন।
১৬ই জুন ১৯৪৩, ঠিক তাদের বিবাহের পর দিনই ওনা-র উদ্দেশ্যে চার্লি বলেন,
“I have the good fortune to be married to a wonderful wife. I wish I could write more about this, but it involves love, and perfect love is the most beautiful of all frustrations because it is more than one can express.”
১৯৪২ এ চ্যাপলিন নিজের এক ছায়াছবির চরিত্রে ওনা-কে মনোনীত করেন। যদিও ছবিটি শেষ অবধি তৈরী হয়নি কিন্তু তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে যা পরবর্তীতে বিবাহের রূপ নেয়। ছত্রিশ বছরের বড় চ্যাপলিনকে আঠেরো বছরের ওনা যখন জীবন সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেয়, তখন বিতর্ক তুঙ্গে। যদিও দুজনকে দেখে মনে হত, তাঁরা একে অপরের পরিপূরক ও অবশেষে চ্যাপলিন নিজেও তা স্বীকার করেন, যে এই আনন্দমুখর মুহূর্তের জন্য তিনি সারাজীবন অপেক্ষায় ছিলেন।
চ্যাপলিন তাঁর আত্মজীবনীতে ওনা-কে নিয়ে আরো লেখেন,
“As I live with Oona, the depth and beauty of her character are a continual revelation to me. Even as she walks ahead of me along the narrow sidewalks of Vevey with simple dignity, her neat little figure straight, her dark hair smoothed back showing a few silver threads, a sudden wave of love and admiration comes over me for all that she is—and a lump comes into my throat.”
যে সময়টায় তাদের বিয়ে হয়, চ্যাপলিন তখন বিশ্ববিখ্যাত, তবে ওনা ছিলেন নবাগতা নায়িকা। খুব অল্প বয়সে তাঁর মা ও বাবা পৃথক হয়ে যায়। ওনা-র বাবা আমেরিকান নাট্যলেখক ইউজিন ও-নীল, যার মতের বিরোধে গিয়ে সে নাটককে পেশা হিসেবে নেন এবং বাবারই সমবয়সী চ্যাপলিনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবব্ধ হন। যদিও চ্যাপলিনের সাথে বিয়েটা অত সহজ ছিল না। ওনা সেই মানুষটাকে ঘিরে থাকা সমস্ত ঝড় ঝঞ্ঝার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাকে সঙ্গ দেন। এবং নিজের সমস্তটা বর্জন করে পুরোপুরি সংসারী হয়ে যান। ১৯৫২ তে এক জনসভায় তিনি বলেন, পর্দার পেছনে থাকাতেই তাঁর আনন্দ ও চ্যাপলিনকে যথাসম্ভব সাহায্য করাই তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য।
অবশেষে সকল বিতর্ক এড়িয়ে চার্লি, তাঁর পরিবার নিয়ে বরাবরের মতো সুইৎজারল্যান্ডে চলে যান ও অন্তিম দিনগুলি সেখানেই কাটান। ১৯৭৭ এ চ্যাপলিনের মৃত্যুর পর,পরবর্তী চোদ্দ বছর ওনা একান্ত নির্জনতায় কাটান সুইৎজারল্যান্ড ও নিউইওর্ক শহরে। ১৯৯১ এ যকৃত ক্যান্সারে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর পাশেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
ওনা’ও নীল তাঁর শেষ উইলে জানিয়ে যান, তাঁর লেখা সমস্ত ডায়েরি কথন ও চিঠি যেন নষ্ট করে ফেলা হয়। তারা যেন প্রকাশ না পায়।
এভাবেই চ্যাপলিনের প্রিয় মানুষটি বিদায় নেন ও আমরা পাই তাঁর আত্মজীবনী “ Oona: Living in the Shadows” ...
- ঝর্না বিশ্বাস
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।