তার কথায় মন ফেরাবনা না বলেও, ফিরে যাই। স্থির শান্ত থাকলে তার স্মৃতিই ঝাপটা মারে চোখে, যদিও শান্ত থাকা উঠে গেছে বহুদিন। আসলে শান্ত থাকাতে বুঝেছি ঝক্কি অনেক, আলটপকা চিন্তা মাথায় আসে। বরং তাই এই মোহ গ্রস্থতাই ভালোয়। ইনফেচুয়েশানটাই ঠিকঠাক।
তাই যা লিখছি তাতে কোনো অতীত এর প্যাঁচপয়াজার নেই। পুরোটা বর্তমান। যেই ভেলকি মনের কাছে হাপিয়ে উঠেছি বহুদিন, সেই মনই এবার ডাকে। আমি আর শান্ত থাকব কিভাবে? বন্ধুরা এসব শুনলেই শেষে নিদান দেয়, সবই আমার এতোদিনের ভুল। কেন আমি এতো দিন নির্জীব ছিলাম! সব কথাই আমার প্রতি তখন অতীত নিয়ে ছোটে। আমি তখন গুনি, ঠিক কটা ভুল করলাম জীবনে।
সেই বন্ধুরাই যখন আড্ডা ছেড়ে বাড়ির পথ নেয়, তখন মুখ ফিরিয়ে বলে, শেষ কাউন্টার টা নিয়ে যা। আমি আড্ডা ফিরতি পথেও আবার একটু জিরতে যাই.. বন্ধুর গলি। সেই সব গলি আবার আমার কলোনী পাড়ার গলি গুলোর মতোই, রাত্তির সাড়ে আটটাতেও সেখানে তারস্বরে আইপিএল চলে, তিন চারটে বাড়ী পর সিরিয়ালের জিঙ্গেল এর সুর, জলের গাড়ির আসা যাওয়া, নেড়িদের কুই মুই… এসবের ভিড়েই বন্ধু আবার মুডে ঢুকে পড়ে। আমায় ভুলে থাকার সহজ পাঠ দেয়। আমি ওর দেওয়া কাউন্টার নিতে নিতে জ্ঞান গর্ভ উপদেশ শুনি। সাময়িক মনে টলে কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যে পাকা। আমায় দীর্ঘক্ষণের টলাবে সে ক্ষমতা যে কেউ রাখেনা… এসব জানার সাধ্য তার নেই। তাই আমিও বাধ্য ছাত্রের মতো পড়া বুঝেনি। যেই সব পড়া গুলো আমিই মাস আটেক আগে বন্ধুকে বুঝিয়ে ছিলাম সদ্য ব্রেকআপে, সেসবই সে এখন আমায় বোঝায়। অথচ দেখি কথার মানে যেন অন্য ভেবে ছিটকে এসে লাগছে আমার গায়ে। আমার তো ব্রেকআপ নয়, তবে এর সব শব্দ আমার গায়ে ওই ভাবে বিধে যায় কেন? কেন অন্ধকার গলিতে দাড়িয়ে এই সব কৌশল রপ্ত করা, আমি ওঁর সহজ পাঠ শুনতে শুনতে এই সবই ভাবি।
সেই বন্ধু আমার সমস্ত চাপ খাওয়ারই কারণ আর হদিস জানে। আমিও জানি যেমন জানি তার নতুন নতুন বান্ধবী বদল হওয়ার ফিরিস্তি। আমাদের সব পূর্বাপর ঘটনাই আসলে আমরা জানি, এটাই আমাদের মধ্যে একটা এক্স ফ্যাক্টর। কিন্তু আমাদের ওয়াই ফ্যাক্টর আমাদের জানা নেই। ও আমার পরিস্থিতি ঘাটতে ঘাটতে যেমন নিদান দিয়েছে, আমার এই সম্পর্কটাও হবে না। তখনই আমি মালুম পাই, এবার আমি অন্য দিকে যাচ্ছি। ওদের গলি তখন তাই আরও দীর্ঘ হয় আমার কাছ। ওর কথামুখ আসলে যে আমায় ওর মতো একটা ভালোথাকার রাস্তা বলছে, এটা আমি জানি। তবুও শেষ প্রান্তে এসে মিলে যায়না। ভুলে যাওয়ার নিদান চাইতে এসে তাই আরেকটা ভুল নিয়ে ফিরি।
স্মৃতির ঝাপটা মারা যে আদতে ইনফেচুয়েশান এ সব কথা আগেই জানা। তবুও সাবধান হইনা। শেষ মেশ কি হবে সেটাও জানা, তবুও ভাবনার দিকে চাবুক নিয়ে দাড়াই না। দেখিনা সে কতটা ছুটতে পারে.. আর তো এগারো বারোটা মাসের মত ব্যাপার, তারপর এই আরেকটা খাতার ফিতেও বন্ধ হবে। বন্ধুরা অবশ্য চেয়েছে, যাতে আমি সচল ভাবে আরেকটা পরীক্ষা দিতে পারি। বুঝিয়েছে, ছেলেমানুষীর লাভ আদতে শূন্য! আমায়, আমার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাক্তাল্লা দেওয়ার পর ওরাই যখন পড়তে বসার হুকুম দেয়, তখন আমি ওদের ভুল, সব ভুলে যাই। আড্ডা, কাউন্টার তখন এক মাত্রায় এসে বসে। আমি তার ভুলে থাকার সহজ পাঠ না মেনেও একটু একটু ভুলতে চেষ্টা করি তাকে, তবুও কিছুই যে পারিনা। শুধু সেই এক সময়ের স্কুল সহপাঠী বন্ধুর অন্ধকার গলি টাকে আরেকটু আলোয় দেখতে চাই। তার কথায় আমার বর্তমানের কোনো ওয়াই ফ্যাক্টর না মিললেও, যে কতকটা সময় ওর গলিতে কাটালাম সেসবই ছায়া স্মৃতি হয়ে থাকে।
বাড়ী ফিরলে এই সব ঠিক ভুলই আমার ইনফেচুয়েশানকে আরও জল হাওয়া দেয়.. আর আমিও এসব নিয়েই তাকে মনে রাখি। আর সে গভীর রাত্রে আরও বেশী করে ঝাপটা মারে আমার চোঁখে.. বুঝতে পারি এবার সে ঝাপটায় বুঝি আমার চোখ ভিজল বলে..
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।