ছুঁতে ছুঁতেই মনে হচ্ছে অনেকটা ছুঁয়ে ফেললাম, একটা উনিশ বছর। এই চরাচর এর মতো ছুঁয়ে যাওয়া আমায় একটা পাড়া, শৈশব , বড়ো হওয়া বেঁধে দেয়। যেই পাড়াতে নাগরিকত্ব পেতে পাড়াতুত দাদাদের চোঁখ আমাকে স্বজনের মৃত্যু মনে করায়। তবুও কি সহজেই বেপাড়া গুলো নিজের হয়ে যায়। আসলে সেইসব পাড়ারা বাঁধ মানেনা। তাই এই বসে থাকা বদ্রীদাস টেম্পল রোডেও মাঝে মাঝে চরাচর এসে ধরা দেয় পূর্ণিমার আগের রাতে। আমি দীনেন্দ্র স্ট্রিট, গৌড়িবাড়ী লেন হয়ে এক একটা নতুন পাড়া খুঁজে ফিরি। সম্পর্কের পর সম্পর্কে যাওয়ার অবিশ্বাসে এই উনিশটা বছর। কি ছোট্ট, কি হাতে গোনা মনে হয়.. এতো কিছুর পরও তবু, তবুও নতুন পরিজনেরা ঢোকে। ঘোলাটে ক্রাইসিসের পরও তারা কোথাও জায়গা করে দেয়। উনিশ বছর পেড়িয়ে বিশে ঢোকার মুখে এই কপর্দক জীবনে তাদের কি আর দেব, এই প্রবল ইনকনসিস্টেন্সি ছাড়া.. তবুও তারা ভালোবেসে ফেলে, আমার আসন্ন শরতের বিকেল গুলো ভেসে যায়।
যে শহর আমার পরিজনের সংজ্ঞা বদলাতে বদলাতে আমাকে আতান্তরে এনে ফেলে, তখন আমারও খানিক প্রতিশোধ জেগে ওঠে। বেড়ে ওঠা পাড়ার প্রতি প্রতিশোধ নিতে নেই, তাই বেপাড়ার চরাচর ভালোবাসাই আমার উজবুক প্রতিশোধ। বাকিটা সময় প্রতিশোধের কিসসা গাইতে গাইতে হয়ত আবার নতুন পাড়া নতুন মোড়। তারপরই এলোপাথাড়ি বন্ধুরা ঢুকবে, যাদের বন্ধু ভাবতাম আগের জন্মে। আমার ভালোথাকা বন্ধুরা, যারা ঘেটে গিয়েও যখন সংযোগ ছেটে ফেলে না, তখনই হয়ত এই পাড়ারা সার্থক। চুপচাপ এই হেঁটে মরা সার্থক হয়।
তারপর বন্ধুরা পাশে এসে বসে কোনো কোনো দিন। কথায় কথায় শুনি, তাদেরও প্রেম ভেঙে গেছে হঠাৎ। প্রেমিকা চার বছরের সম্পর্ক ছেড়ে এখন অন্য আলোয় অন্ধকারে। আমার আতান্তর ওদের ভাঙ্গা প্রেমের অন্ধকারেও এসব রাতে চুপচাপ এসে বসে। স্মৃতি ঝাপটায় ভিআইপি সার্ভিস রোডের। তারপর এই রাত এমনই হওয়ার ছিলো। বন্ধুর ক্ষত, পরিজনের হাত ছুঁয়ে অনেকটা দেখে ফেলা। এটুকু বয়েসে পকেট উপচে ওঠে তাই.. সামান্য জীবন।
এই ছোট্ট, সামান্য জীবন আসলে যেই চরাচর সামনে দাঁড়করায় তখনই আরেকটা বোধ জেগে ওঠে, আমার না লেখা এই কিসসা তে কতটা আর ধরতে পারছি তাদের। ধীরে চলতে চলতে কতটা আর আলো এসে ফেরে একাএকার জানলায়। আমি বারবার সামনে ভাবলেই শত ক্রাইসিস, শত ঝঞ্ঝা একটা উনিশের । এইসব তবু পার করে ফিরতে হবে সেই একটা উৎসবে। মুৎসুদ্দির ফুটবলে, চলমান ফিরে দেখায় আদতে কিছু যে নেই। তবুও মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র চাওয়ায় কাদের খুঁজছি মনে হয়। সামান্য বেপাড়ার জীবনে এতো কি থাকতে আছে? যে শ্রমিক প্রতিদিন উঠে সেই একই সূর্য দেখে, তাদের যেমন শুনতে ভালো লাগেনা ধোকা খাওয়া যৌথখামার এর বুকনি। আমারও তেমন আশা করতে করতে এক অলীক জীবনের পূর্ণিমা আরাম দেয়, শান্তি দেয়না।
শুষ্ক বর্ষা পেরিয়ে আসন্ন শরতের মুখে সেই অনিশ্চয়তা আমায় তাই ডানা মেলেও মেলতে দেয়না। পরিজনেরা হাতের পর আরও একটা হাত বসালে বেপাড়ার জীবনে তাই সাহস আসে, অলীকতার নিশ্চয়তা আসে কই! নিশ্চিত হলে কি বন্ধুর প্রেমও ছেড়ে যেতে পারত এই মরশুমে। এসবই ভাবি মাঝে মাঝে- ঘুম ঘুম চাঁদ আধো আধো তারাদের মাঝে তাই শক্ত হবো ভাবি.. ঠিক ততটাই শক্ত, যতটা হলে উঁকি দেওয়া শরতে এই বেপাড়ার চাঁদ একটা মেহগিনির দরজা বসাতে পারে। তারপরই না হয় ছিটকে যাওয়া বন্ধুরা এক এক করে ঢুকুক... আমিও বন্ধুর ক্ষততে প্রলেপ দিতে দিতে অন্য জানলায় তাকাবো, অন্য সম্পর্কে..
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।