এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  খেলা  শনিবারবেলা

  • ভারতের অপারেশন টোকিও: পর্ব ৬

    সৌরাংশু
    ধারাবাহিক | খেলা | ০৩ অক্টোবর ২০২১ | ১৯২৯ বার পঠিত
  • বেশ, তাহলে শুরুর থেকে শুরু করি। বক্সিং-এর ইতিহাস ঘাঁটতে বসলে অবশ্য, ফিরে যেতে হবে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ বছরে মিশরে, মুষ্টিযুদ্ধের মতো ঘুষোঘুষির প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলত বলে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়। যাই হোক আধুনিক অলিম্পিকে বক্সিং কিন্তু শুরু থেকে ছিল না। যুক্ত হয় ১৯০৪এ অ্যামেরিকার সেন্ট লুইতে। ভারত প্রথম বক্সিং-এ অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠায় ১৯৪৮এ। সাতজন বক্সার, রবিন ভাট, বিনয় বোস, বাবু-লাল, রবার্ট ক্র্যান্সটন, ম্যাক জোয়াকিম, জন নিউটল এবং জিন রেমন্ড। এঁদের মধ্যে বাবু-লাল ব্যান্টমওয়েট বিভাগের প্রথম রাউন্ডে পাকিস্তানের অ্যালান মন্তেইরোকে হারিয়ে অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রথম জয় লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তী চারটি অলিম্পিকে ভারতের কোনও বক্সারই যোগ্যতা পাননি। অবশ্য ১৯৭২এর মিউনিখ থেকে ভারতীয় বক্সাররা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন অলিম্পিকে।


    বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন: বক্সিং


    ১৯৮২ সালে রে ম্যাঞ্চিনির সঙ্গে লাইট ওয়েট বিভাগে পেশাদার বক্সিং ম্যাচের সময় মাথায় চোট লেগে কিম ডুক-কুর মৃত্যু হয়। তারপরে ল্যারি হোমসের হেভি ওয়েট লড়াইয়ের সময় বিপক্ষের অবিশ্রান্ত রক্ত ঝরা দেখে চারিদিকে শোরগোল ওঠে। ১৯৮৪ অলিম্পিক থেকে অপেশাদার বক্সিং-এ শিরস্ত্রাণ পরিধান বাধ্যতামূলক হয়।

    কিন্তু ২০১৪র পর থেকে বেশ কিছু গবেষণার ফলাফল সামনে আসে যে শিরস্ত্রাণ থাকলে মাথার চোট থেকে বাঁচে না বিশেষ, বরং মাথা ঢাকা থাকায় পুরোপুরি দেখতে কিছুটা সমস্যা থাকে ফলত: চোটের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। বিভিন্ন মহল থেকে চাপের পর ২০১৬র রিও অলিম্পিক থেকে পুরুষ বক্সাররা শিরস্ত্রাণ ছাড়াই রিং-এ নামে। অথচ মহিলাদের ক্ষেত্রে নাকি যথেষ্ট পরীক্ষা হয়নি বা তথ্য পাওয়া যায়নি এই অজুহাতে শিরস্ত্রাণ বা হেড-গিয়ার পরেই তাঁরা বক্সিং করেন। এ বিষয়ে প্রচুর বিভ্রান্তি আছে, অতএব যুক্তি খুঁজতে গেলে মুশকিলে পড়বেন। শুধু জেনে রাখুন, সুপার হেভি ওয়েট বিভাগে সতীশ কুমার প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে চোখে চোট পান এবং সেই চোট নিয়ে প্রায় এক চোখেই কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উজবেকিস্তানের বাখোদির জালোভের সঙ্গে লড়ে হারেন প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে। এরকম বেশ কিছু ঘটনার পর আবার নাকি শিরস্ত্রাণ ফিরিয়ে আনার অনুরোধ আসতে শুরু করেছে।

    বেশ, তাহলে শুরুর থেকে শুরু করি। বক্সিং-এর ইতিহাস ঘাঁটতে বসলে অবশ্য, ফিরে যেতে হবে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ বছরে মিশরে, মুষ্টিযুদ্ধের মতো ঘুষোঘুষির প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলত বলে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়।
    যাই হোক আধুনিক অলিম্পিকে বক্সিং কিন্তু শুরু থেকে ছিল না। যুক্ত হয় ১৯০৪এ অ্যামেরিকার সেন্ট লুইতে। ভারত প্রথম বক্সিং-এ অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠায় ১৯৪৮এ। সাতজন বক্সার, রবিন ভাট, বিনয় বোস, বাবু-লাল, রবার্ট ক্র্যান্সটন, ম্যাক জোয়াকিম, জন নিউটল এবং জিন রেমন্ড। এঁদের মধ্যে বাবু-লাল ব্যান্টমওয়েট বিভাগের প্রথম রাউন্ডে পাকিস্তানের অ্যালান মন্তেইরোকে হারিয়ে অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রথম জয় লাভ করেন।
    কিন্তু পরবর্তী চারটি অলিম্পিকে ভারতের কোনও বক্সারই যোগ্যতা পাননি। অবশ্য ১৯৭২এর মিউনিখ থেকে ভারতীয় বক্সাররা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন অলিম্পিকে।

    ভারতীয় বক্সারদের কথা বলতে গেলে প্রথমে মনে পড়ে ডিংকো সিং-এর কথা। মণিপুরের অখ্যাত গ্রাম থেকে উঠে আসা ডিংকো ‘৯৭এ থাইল্যান্ডে কিংস কাপে ফেদারওয়েটে সোনা জেতেন প্রথম ভারতীয় বক্সার হিসাবে। এরপর ইতিহাস রচনা করেন ‘৯৮এর ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে এক ধাপ ওপরে ব্যান্টমওয়েট বিভাগে সোনা জিতে। ভারতীয় বক্সিং-এর প্রথম সুপারস্টার দীর্ঘ রোগভোগের সম্প্রতি মারাও গেলেন।

    তবে ভারতীয় বক্সিং নিয়ে কথা বলতে গেলে দুজনের নাম অবশ্যই করতে হবে। এক এম. সি. মেরি কম, মণিপুরের এই কিংবদন্তী ২০০১ থেকে শুরু করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১টা রুপো, ৬টা সোনা এবং একটি ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। আর ২০১২-য় প্রথমবারের জন্য মহিলাদের বক্সিং অলিম্পিকে যুক্ত হবার পর ৩০ বছর বয়সে দ্বিতীয় বক্সার হিসাবে অলিম্পিক পদক ব্রোঞ্জ জেতেন। ৩০-এর পরে কনট্যাক্ট স্পোর্টস বক্সিং, তার উপর সন্তান জন্ম দেবার পর ফিরে এসে রিওর জন্য যোগ্যতা না পাওয়া পেরিয়ে তিনি আবার ২০১৮-য় লাইট ফ্লাই ওয়েট বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন। তারপর ফ্লাই ওয়েটে ২০১৯-এ ব্রোঞ্জও পান।

    এরপরের নামটি বক্সিং-এ ভারতের হয়ে প্রথম অলিম্পিক পদক জয়ী বিজেন্দর সিং। বেজিং-এ ২০০৮-এ তিনি মিডলওয়েট বিভাগে ব্রোঞ্জ জেতেন। পরের বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্রোঞ্জ জেতেন। এবং ভারতের প্রথম বক্সার হিসাবে আন্তর্জাতিক অপেশাদার বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের মিডল ওয়েট বিভাগে একনম্বর র্যা ঙ্কিংও পান। এশিয়ান গেমসে তাঁর একটা সোনা ও একটি ব্রোঞ্জ আছে, কমনওয়েলথ গেমসে দুটি রুপো এবং একটি ব্রোঞ্জ। তবে ২০১২-র লন্ডন অলিম্পিকে এক নম্বর র্যা ঙ্কিং সত্ত্বেও কোয়ার্টার ফাইনালে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আব্বাস আটোয়েভের কাছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর হেরে যান। এই আব্বাসকে অবশ্য ২০১০-এ এশিয়ান গেমসে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন তিনি। যাই হোক, ২০১৪-র কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জেতার পর সবাই যখন ধরে নিয়েছে যে ২০১৬-য় রিওয় আরেকটি অলিম্পিক পদক তিনি আনবেন, তখনই তিনি পরের বছর পেশাদার বক্সিং-এ পা রাখেন সাহস করে। এবং এখনও পর্যন্ত শেষ বাউটটি রাশিয়ার আর্টিস লোপসানের কাছে টেকনিকাল নকআউটে হারার আগে পর্যন্ত ১২টি বাউট জিতেছেন তিনি। বিজেন্দর সুযোগসন্ধানী বক্সার এবং ভারতের বক্সিং ইতিহাসে হয়তো টেকনিক্যালি সেরা বক্সারই তিনি।

    এবারে আসি টোকিওর কথায়। বক্সিং-এ মোট ন’জন এবারের অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পুরুষদের পাঁচ, মহিলাদের চার।
    এক এক করে তাঁদের পারফরম্যান্স দেখে নেবার আগে এবারের বিতর্কিত পয়েন্ট সিস্টেম নিয়ে দু কলি শুনিয়ে দিই। রিও অলিম্পিকের ঠিক আগেই নতুন কম্পিউটারাইজড পয়েন্ট সিস্টেম চালু হয়। এক্ষেত্রে পাঁচজন বিচারক বাস্তব সময়ে প্রতিটি পাঞ্চের উপর মার্কিন করবেন যা সরাসরি দেখা যাবে কম্পিউটারে। এরপর কম্পিউটার পাঁচজনের মধ্যে থেকে তিনজনকে বেছে নেবে। বিচারকরা মার্কিন করবেন ১০ পয়েন্টের উপর এবং যে বক্সার বেশি পাঞ্চ মেরেছেন তিনি সেই রাউন্ড জিতবেন ১০-৯ পয়েন্টে। বক্সার যদি পড়ে গিয়ে কাউন্ট নেন বা বিচারকদের মতে অপর বক্সার একদম একঘরে করে দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে পয়েন্ট ১০-৮ হবে। আবার সমানে সমানে হলে ১০-১০ ও হতে পারে। রিওতে বৃহৎ মাপের কারচুপির অভিযোগে রিওর সমস্ত বিচারকদের এই অলিম্পিকের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। এই যে পয়েন্ট সিস্টেম নতুন তৈরি হল এটির পরামর্শ দেয় আন্তর্জাতিক অপেশাদার বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের টাস্ক ফোর্স। এবং টাস্ক ফোর্সের সদস্য ছিলেন আমাদের মেরি কম। অথচ মেরি কমের নিজের বাউটেই আবার অভিযোগ ওঠে যে তাঁকে বঞ্চিত করা হল। তাহলে একে একে দেখে নিই পারফরম্যান্স!

    অমিত পাঙ্ঘাল: অমিত পাঙ্ঘালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো এবং এশিয়ান গেমসে সোনা আছে। সবমিলিয়ে এই অলিম্পিকে ১ নম্বর র্যা ঙ্কিং নিয়ে পাঙ্ঘাল ভারতের সেরা বাজি হিসাবে অংশ নিতে যান। কলম্বিয়ার হার্নে মার্টিনেজের সঙ্গে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম রাউন্ড দুর্দান্ত ডিফেন্স করে জিতেও যান। কিন্তু তারপর মার্টিনেজের অবিরাম আক্রমণাত্মক বক্সিং-এ দিশাহারা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড হারেন। এইখানে সাধারণত আশা করা যায় যে ট্যাক্টিকাল বক্সারের ট্যাক্টিকাল কোচ হয় কাউন্টার অ্যাটাক করতে বলবেন অথবা ডিফেন্স মজবুত করে বিপক্ষকে ক্লান্ত করে ফেলবেন। বিজেন্দর সিং-এর ব্রোঞ্জের কথা ভাবলে কিংবদন্তী কোচ গুরবক্স সিং সান্ধুর ট্যাকটিক্সের কথা বারবার মনে পড়ে। কিন্তু পাঙ্ঘালের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু ঘটেনি। ফলস্বরূপ প্রথম রাউন্ডে প্রচুর পয়েন্টে এগিয়ে থাকা পাঙ্ঘাল শুধুমাত্র নিরন্তর আক্রমণে দিশাহারা হয়ে প্রথম লড়াইতেই হেরে বসলেন।

    মনিশ কৌশিক, বিকাশ কৃষণ এবং আশিস কুমার যথাক্রমে লাইট ওয়েট, ওয়েল্টার ওয়েট এবং মিডল ওয়েটে নিজের নিজের প্রথম লড়াইতেই পর্যুদস্ত হন।
    তবে সুপার হেভি ওয়েটে প্রথমবারের জন্য কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা কোনও ভারতীয় বক্সার সতীশ কুমারের কথা তো উল্লেখ করতেই হয়। প্রি-কোয়ার্টারে জামাইকার ব্রাউনকে হারাবার সময় ডান চোখের উপরে চোট লেগে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় চোখ। কিন্তু তারপরেও সেমিফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও টেকনিকালে অনেক উন্নত জালভের বিরুদ্ধে সাধ্যাতীত লড়াই করেন তিনি।
    এবারে মেয়েদের দিকে যাই।

    মাংতে চুংনেইজাং মেরি কম। ভারতীয় বক্সিংই শুধু নয়, সার্বিকভাবে ভারতীয় খেলাধুলার এক প্রথম সারির লেজেন্ড। এমনকি সেরা ভারতীয় মহিলা অ্যাথলেট হবার দৌড়ে পিভি সিন্ধুর সঙ্গে একাসনে বসার দাবিদার। বিশ্ব বক্সিং-এও তিনি বন্দিত। বক্সিং টাস্ক ফোর্সকে পয়েন্ট সিস্টেম নিয়ে পরামর্শ দেবার জন্য সারা বিশ্বজুড়ে দশজন সেরা বক্সারকে নিয়ে গঠিত হয়েছে ক্রীড়া দূতের একটি দল। মেরি কম তার সদস্য। অথচ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও এবং টোকিওয় কোয়ার্টার ফাইনালে তিনিই পয়েন্ট ব্যবস্থা নিয়ে সরব হলেন। অন্য যে কোনও বক্সারের থেকে যাঁর মতামতের দাম বেশি তিনি এই নিয়ে আগে বলেননি কেন বুঝতে পারি না। তবে এটা ঘটনা প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে এক তুল্যমূল্য লড়াইতে খুব কাছাকাছি পয়েন্টের ফারাকে তিনি ভিক্টোরিয়া ভ্যালেন্সিয়ার কাছে। গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে বটে, কিন্তু আক্রমণাত্মক মনোভাবের ঘাটতি হয়নি তাঁর। দুর্ভাগ্য আমাদের যে হয়তো তাঁর জীবনের শেষ বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা থেকে এক চুলের জন্য পদক নিয়ে ফেরা হল না তাঁর।

    ২০১৮-য় লাইট ওয়েলটার ওয়েটে রুপো জেতা বক্সার ছিলেন সিমরনজিত কৌর। কিন্তু প্রথম রাউন্ডে বাই পাবার পর দ্বিতীয় রাউন্ডে ওয়েলটার ওয়েট বিভাগের রুপো বিজয়ী থাইল্যান্ডের সিসোন্দের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে বিদায় নিলেন তিনি।

    পদকের খুব কাছে বরং চলে গেছিলেন পূজা রানি। পরিবারের বাধা পেরিয়ে হরিয়ানার এই মেয়েটি অনেক লড়াই করে আন্তর্জাতিক বক্সিং-এ নিজের জায়গা করে নিচ্ছেন, দেরিতে হলেও। অলিম্পিকে দ্বিতীয় রাউন্ডে লড়ে হারান আলজিরিয়ান বক্সার ইস্রাক চাইবকে। তারপর রুপো বিজয়িনী লি কিউ-এর কাছে হারেন টেকনিকাল ফাইটে। তবু এই বর্ষীয়ান বক্সারের উপরে ভবিষ্যতের জন্য আশা রাখা যায়।

    এরপর আসে লভ্লিন বরগহৈঁএর নাম। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ওয়েলটার ওয়েট বিভাগে পরপর দুবার ব্রোঞ্জ-জয়ী বক্সারের জন্ম আসামের গোলাঘাট জেলায়। তিন বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট লভ্লিন বক্সিং-এর জন্য বেশ কষ্ট শিকারই করেছেন। খুব কম বয়সে প্রতিভার পরিচয় দিয়ে গৌহাটির সাই-কেন্দ্রে সুযোগ পান। তারপর থেকে উত্থান কেউ ঠেকাতে পারেনি। এখানেও কোয়ার্টার ফাইনালে প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ বিজয়ী তাইওয়ানের নিয়েন চিন চেনকে অকস্মাৎ আক্রমণে বিপর্যস্ত করে দেন। দ্রুত ১-২-৩ কম্বিনেশন পাঞ্চিং, হুলের মতো জ্যাব এবং রাইট হুককে সম্বল করে পদক নিশ্চিত করেন তিনি সেমি ফাইনালে পৌঁছে। কিন্তু সেমি ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং এবারে অলিম্পিক ওয়েলটার ওয়েট চ্যাম্পিয়ন তুরস্কের সুরমেনেলির কাছে হার মানতে বাধ্য হন সুরমেনেলির উন্নতমানের রিং মুভমেন্ট এবং কাউন্টার পাঞ্চিং-এর মোকাবিলা করতে না পেরে। তবুও দ্বিতীয় মহিলা এবং তৃতীয় ভারতীয় হিসাবে তাঁর ব্রোঞ্জ পদক ছোট সেন্টার থেকে বক্সারদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাফল্যের স্বপ্ন দেখাবে।

    আসলে ভারতে অপেশাদার বক্সিং-এর একটা কৃষ্টি তৈরি হয়েছে। পেশাদার বক্সিং-এ যেমন অ্যামেরিকার দাপাদাপি তেমনই অপেশাদার বক্সিং-এর সেরার শিরোপাটি বরাবরের জন্য ছিল কিউবার কাছে। তিওফিলো স্টিভেন্সন, বেনি পেরেজ, সুগার র্যা মোজ, লুই রড্রিগেজ বা ফেলিক্স স্যাভন হলেন অপেশাদার বক্সিং-এর এক একজন কিংবদন্তী। তাঁদের আক্রমণাত্মক স্টাইল, দ্রুত নড়াচড়া এবং মুহূর্তের মধ্যে বক্সারকে কম্বিনেশন পাঞ্চিং-এ বিবশ করে দেওয়াও কিংবদন্তীর পর্যায়ভুক্ত। মোদ্দা কথা কিউবার বক্সাররা অপেশাদারি বক্সিঙের দুনিয়ার সবথেকে টেকনিকালই উন্নত বক্সার।

    সেই সেখান থেকে বিশেষত বি ফার্নান্ডেজের মতো পোড় খাওয়া কোচকে নিয়ে এসে ভারতের বক্সিং-এর দর্শন বদলে ফেলার পর থেকেই বিশ্বমঞ্চে ধীরে ধীরে ভারতের একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। মহিলাদের বক্সিং-এ তো আছেই। মেরি কম ছাড়াও, লেখা কেসি, জেনি আরএল বা সরিতা দেবীরা বিশ্বমঞ্চ থেকে নটি সোনার পদক এনেছিলেন। ভারতীয় কোচেদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন ও পি ভরদ্বাজ বা গুরবক্স সিং সান্ধু। বর্তমানে ছোটে লাল বা প্রথম কমনওয়েলথ গেমসে সোনা-জয়ী কলকাতার মহম্মদ আলি কামারও ভালো কাজ করছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে বক্সিং-কে আরও ছোটো ছোটো কেন্দ্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। বক্সিং-এর মধ্যে কমব্যাট স্পোর্টসের একটা স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। দ্রুত ফুটওয়র্ক, রিফ্লেক্স এবং সর্বোপরি প্রতিপক্ষকে রিং-এর ভিতরে ছিঁড়ে ফেলার মনোভাব। ভায়োলেন্ট স্পোর্টস হলেও সেই হিংসা যাতে রিং-এর বাইরে না যায় সে ব্যাপারে বক্সিং সদা সর্বদা সতর্ক। শুধু কথা হল রাজনীতি বাঁচিয়ে অলিম্পিক স্পোর্টস হিসাবে আরও প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমেই সাফল্য আসার সম্ভাবনা বিদ্যমান। আর সেটাই দেখার।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৩ অক্টোবর ২০২১ | ১৯২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:6da4:c5d9:2f24:***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০২১ ০৭:০৫499032
  • সুন্দর 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন