সিপিএমের আচরণ কি আদৌ মার্ক্সবাদ সম্মত? এর উত্তর খুঁজছে আজ অনেকেই। কারণ, এবারের নির্বাচনে কে বড় বা প্রধান শত্রু, সেই প্রশ্নে সিপিএম নেতৃত্ব সম্পুর্ন ভুল যুক্তিকে হাতিয়ার করে মমতাকেই চাঁদমারী বানায়। যদিও বর্তমানে প্রায় সবাই বিজেপির ভয়ঙ্কর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তাকে প্রতিহত করাই প্রধান ও একমাত্র কর্তব্য বলে মনে করছে, তখন সিপিএম প্রচার করতে লাগলো যে, বিজেপিকে হারাতে গেলে আগে মমতাকে সরাতে হবে। এমনকি দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মুখ দিয়েও একথা বলানো হলো। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতা থেকে মমতার অপসারণকে সুনিশ্চিত করা এবং তার ফলশ্রুতিতে বিজেপি ক্ষমতা দখলে সফল হলেও, ভালো। কারণ, মমতা বিদায় পাকা হলেই 'কেল্লা ফতে'।
ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা মানিক সরকার যদিও প্রচারে এসে তাঁর বক্তব্যে বার বার সাবধান করেছেন যে, বিজেপির ক্ষমতায় আসার মারাত্মক ভুল যেন না করা হয়। কারণ, ত্রিপুরার মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন যে, বিজেপি ক্ষমতায় বসলে মানুষের কি পরিমান সর্বনাশ হয়। অমর্ত্য সেন সহ বহু বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞ পন্ডিত মানুষেরা সবাই বিজেপিকে প্রতিহত করাই প্রধান কর্তব্য বলে বার বার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ভবি যে ভুলবার নয় এবং চোরের সাক্ষী মাতালের মতো জুটে গেল রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। ওনাদের যুক্তি হোল- রাজ্যের মানুষ সরকারের উপর এমন ক্ষেপে আছে যে, এর বিরোধীতা না করলে সরকারের বিরুদ্ধ সব ভোট চলে যাবে বিজেপির কাছে। এসব ছেদো যুক্তি দেখিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করতে চাইলেও জমিনী বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ন ভিন্ন। আসলে, অনিচ্ছুক ঘোড়াকে জোর করে জলাশয়ের কাছে নিয়ে যেতে পারলেও ঘোড়াকে জোর করে জল খাওয়ানো কখনোই সম্ভব নয়। ফলে যা হবার তাই হলো। মনে মনে স্থির ছিল- আগে রাম পরে বাম। কিন্তু জানত না যে, আসলে বিধিই ছিল বাম। ফল হোল জোড়া শুন্য।
মমতাকে হারাতে ও বিজেপিকে জেতাতে সিপিএম আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখেনি। মমতার প্রতি মুসলিম ভোট সমর্থনও ভাগ করতে জোটানো হোল সংখ্যালঘু উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির এক মুখ পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীকে, যার অতীতের চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক বক্তব্য শুনলে হিন্দু ভোটের বড় অংশ বিজেপিতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যাধিক। অর্থাৎ নির্ভুল এক 'শাঁখের করাত' কৌশল। এছাড়াও মমতার দলকে আখ্যায়িত করা হোল 'বিজেমূল' বলে, বলা হতে লাগলো, মোদি - মমতার সেটিং আছে, মোদিও মমতা দুজনেই সমান ফ্যাসিবাদী, ইত্যাদি অপবাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল এসব কথার মধ্য দিয়ে নিজেদের গোপন অপরাধকে আড়াল করা। ভোট প্রচারে সিপিএম নেতারা বক্তব্য রাখতে গিয়ে গণেশ পুজোর মতো বিজেপির বিরুদ্ধে ২/৪টি কথা বলে বাকি সব সমালোচনাই করেছেন মমতার বিরুদ্ধে। এর ফলে বাম ভোটারদের বিজেপি বিরোধী একটা অংশ এবার ভোট দিয়েছে মমতাকেই।
কথায় আছে, মানুষ ভাবে এক (ফল)হয় আরেক। কিন্তু এরকম অবিশ্বাস্য খারাপ ফল বাম-কংগ্রেস তো নয়ই, অন্যরাও কেউ কল্পনাতে আনতে পারেনি। এখন প্রশ্ন- অতঃকিম? সিপিএম দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, এই চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দায় কে নেবে? কেন দলের মধ্যে বিস্তৃত আলোচনা ব্যতিরেকেই আব্বাস সিদ্দিকীর মতো একজন উগ্র ধর্মীয় মুখকে এনে মোর্চা গড়া হোল? সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে কার বা কার কার বিশেষ উদ্যোগ ও উৎসাহে এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হল এর ফলাফল সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়েই? এমনটাই কি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নমুনা? এবার কিন্তু এসব গুরুতর প্রশ্নের বিশ্লেষণী কাটাছেঁড়া না করে এবং এর সম্পুর্ন সদুত্তর না দিয়ে পাস কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, এটা এখন দলের ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের প্রশ্ন। রাজ্য কমিটিতেই এর সব উত্তর মিলবে এমন সম্ভাবনাও কম। জাতীয় পর্যায়ে এর বিস্তারিত পর্যালোচনা প্রয়োজন। কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার যে, এই নির্বাচনী ফলে রাজ্য নেতৃত্ব এখন সম্পূর্ন ব্যাকফুটে। এমনকি সর্বভারতীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পর্যন্ত এবার খুব বেশি এদের সমর্থনে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে হয়না। তবে এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, সিপিএম দল যদি এখনও মমতা বিদ্বেষের কানাগলি থেকে বেরোতে না পারে তবে আগামীদিনে দলকে অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে পড়তে হবে।
আগামী দিনে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের মুখ হিসেবে অথবা মূল চালিকা শক্তিরূপে মমতার ভূমিকাতেই অধিকাংশ বিরোধীদল আগ্রহী। কিন্তু সিপিএম দল এর বিরোধী এবং কংগ্রেসদল দ্বিধান্বিত। যদিও নেতৃত্বের প্রশ্নে কিছুটা গুরুত্ব পেলেই দ্বিধা কাটতে সময় লাগবে না এবং অচিরেই কংগ্রেসের নেতৃত্ব নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসছে। সেখানে সবটাই বিস্তারিত আলোচনা হবে। এমতাবস্থায় সিপিএম কি নিজেকে সরিয়ে রাখবে না মমতার ত্রুটি অন্বেষণেই ব্যস্ত থাকবে? অথবা যথেষ্ট সদর্থক ভূমিকা পালন করে বামশক্তির প্রাসঙ্গিককতা বজায় রাখবে? মনে রাখতে হবে, আজীবন একই সুরে মমতা বিরোধিতা বজায় রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বা বাস্তবসম্মতও নয়। জাতীয় রাজনীতিতে মোদি-শাহের এই ভয়ঙ্কর বিদ্বেষের রাজনীতির সাথে চূড়ান্ত ক্ষতিকর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সমূহকে পরাভূত করতে না পারলে দেশকে রক্ষা করা যাবে না। এই জরুরি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মমতা বৈরিতা কিছুটা কমিয়ে মানানসই একটি বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে জাতীয় পর্যায়ে অংশ গ্রহণের ক্ষেত্রেও বাংলা অনেক সম্মানজনক জায়গায় থাকতে পারবে।
এখন বিষয়টি সম্পুর্ন না হলেও অনেকখানি নির্ভরশীল সিপিএমের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের শুভবুদ্ধি ও কুশলতার উপর। মনে রাখতে হবে, ইতিহাস কিন্তু বার বার ভুল শোধরাবার সুযোগ দেয় না। আসন্ন দেশব্যাপী বড় লড়াইয়ে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামশক্তি যদি যোগ্য ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে অন্যরা অনায়াসেই সে সুযোগ নিয়ে নেবে, কারণ কোন স্থানই অপূর্ন থাকে না, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
*Statistics বলছে এবার বঙ্গ নির্বাচনে মুসলিম ভোটার ছিলো 33% , যার 32.3% ই তৃনকে ভোট দিয়েছে । মুসলিমদের প্রদত্ত ভোট ছিলো 94.9 % ..*
*অর্থাৎ সোজা অংকে তৃনমূলের পাওয়া মোট মোট ভোটের ( 48%) এর মধ্যে 30.7% মানে প্রায় 31% ভোটটাই দিয়েছে মুসলিমরা , যা ভারতের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত হয়নি। আর বাকী মাত্র 17%(48 -31) ভোট এসছে অন্যদের থেকে । এর থেকে প্রমানিত মুসলিম ছাড়া বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মাত্র 17% ভোট পেয়েছে শাসক দল ।*
*এর থেকে প্রমানিত একমাত্র মুসলিম ছাড়া , বাংলার অধিকাংশ মানুষ কিন্তু সত্যিই এই সরকারটাকে একেবারেই চায়নি ।*
*বিজেপি যে প্রায় 39% ভোট পেয়েছে তাতে হাতে গোনা কয়েকটি মুসলিম ভোট , বাকি ভোটের --সেই বিশাল সংখ্যাটা কিন্তু 2 কোটি 30 লাখ --তারা কিন্তু মনেপ্রানে এই সরকারটাকে চায়নি আলবাৎ।*
*বাংলায় তৃনমূলও জেতেনি , বিজেপিও হারেনি --জিতেছে Communal Force Muslim jihadis led by the Bengali Women pretending herself as so called Hindu!*
Fascinating...@ Sandip দত্ত।
@ Sandip দত্ত
তাহলে কি মুসলিমদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত, মনে হয় আপনার? কি বিদঘুটে উগ্র হিন্দুত্বের গন্ধ আপনার (অপ)ব্যাখ্যায়!
দত্তবাবু, আপনার হিসাব অত্যন্ত সরলীকৃত। আপনি বিধানসভা কেন্দ্র অনুযায়ী দেখুন। রাসবিহারী কেন্দ্রতে ক'জন মুসলমান পাবেন? সেখানে তৃণমূল জিতল কী করে? তেমনি বালিগঞ, টালিগঞ্জ, ইত্যাদি। শতাংশ হিসাব একটু ঝামেলার বিষয়। ওটা খুব সাবধানে করতে হয়।