হস্টেলে একটা ছেলে আছে, বয়সে আমাদের থেকে অনেকটাই বড়। এই সর্বগ্রাসী লকডাউনের অস্থিরতা কাটাতে ফ্লোরে ও রটিয়ে দিয়েছে যে ও নাকি চরম মোটিভেশনাল একটা বইতে পড়েছিল- নিজেকে সবসময় ভাবাতে হবে। একটা কিছু আবিষ্কার করার এটাই নাকি প্রকৃষ্ট সময়। ফ্লোরে আটকে থাকার খারাপ সময়কে ভালো করার নানারকম টোটকা দিচ্ছে সবার রুমে ঘুরে ঘুরে। আমার ঘরে এসে বলছে 'এই তোমার গিটারের যে তারগুলো, সেগুলোকে খুলে এদিক ওদিক করে সাজিয়ে সাজিয়ে দেখো তো কী হয়। চমৎকার আওয়াজ বেরনোর একটা সম্ভাবনাও তো নাকোচ করা যায় না। আমি লাফিয়ে উঠে বললাম- আচ্ছা সে দেখা যাবে। দেখি ও করিয়েই ছাড়বে। ওই কাজে প্রবল বাধা পেয়ে তারপর বলল- কিটক্যাটের উপর একটু লবণ ছড়িয়ে দিয়ে খেলেই তো হয়, খাবে? সেদিনের মত চলে গেল। পরেরদিন দুপুরে ঘুমাচ্ছি, হঠাৎ দেখি দরজায় নক করে বলছে- তুমি তো মিউজিশিয়ান তুমি একটা অদ্ভুত গিটার দেখো। তারপর ট্যাবে একটা ম্যান্ডোলিনের ছবি দেখিয়ে বলল- একটা জিনিস দেখো, সবকটায় দুটো দুটো করে তার। তুমি তোমার গিটারে করবে এরকম? নতুনমত কিছু হয় তাহলে। যেমন কনভিন্সিং তার গলার স্বর, তেমন দৃষ্টি। সুপরিকল্পিত সেসব বাক্যবন্ধ শুনে ঘুমচোখে মনে হয়- আদিম কালের চাঁদিম হিম, তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম। কালের নিয়মে হস্টেল ভরা সমস্ত পাবজি বিজ্ঞানী, যাদের অনেকেই ওর কথা মেনে নিয়ে নিজ নিজ প্রকল্পের বাস্তবায়নে মন দিয়েছে যার কিছু অভুতপূর্ব ফল পাচ্ছি আমরা। যেমন-
১. একটা ছেলে একটা রোবোট আবিষ্কার করেছে। সেটা দেখার জন্য গেলাম। দেখি একটা বোতলের তলায় চাকা লাগিয়ে ঠেলে দিচ্ছে চপ্পল দিয়ে। তারপর ব্রহ্মার মত মুখ করে বলছে 'এর মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঢোকাবো, দাঁড়াও'।
২. একটা ছেলে একটা কাঁচির শেষ প্রান্তদুটো ভোঁতা করেছে ঘষে ঘষে। বলছে যে এটা নাকি আগের চেয়ে অনেক সেফ।
৩. একজন আলফ্রেড নোবেলের পেটেন্টের লিস্ট দেখছিল যাতে একই জিনিস দুবার আবিষ্কার না হয়ে যায়।
৪. আরেকটা ছেলে কী আবিষ্কার করবে বলে দুটো ডাস্টবিনকে ঠেলে করিডোরের শেষপ্রান্তে নিয়ে গেছে ফলে কেউ আর ময়লা ফেলতে পারছে না।
৫. আরেকজন পাইথন ডেভেলপ করছে কার যেন সিগনাল জ্যাম করবে বলে। কার সিগনাল জ্যাম করবে সেটা অবশ্য বলছে না। দাঁতে করে টুথপিক চিবোচ্ছে সারাদিন।
৬. এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। একটা এক্সটেনশন কর্ড। খুবই লম্বা যেন ট্রান্স অতলান্তিক কেবল্। গুরু কৃপাহি কেবলম। সম্পূর্ণ রিমোট কন্ট্রোলড একটা ব্যাপার হবে যেখানে রোধ হবে মিনিমাম। কিন্তু ভেতরে ফেজ, নিউট্রাল, আর্থিং সংক্রান্ত ভুলভালে যেই প্লাগে গুঁজছে আর হস্টেলসুদ্ধ লোকের MCB যাচ্ছে নেমে। আর এইজন্য বাকি সবার আবিষ্কার যাচ্ছে থেমে। একটু আগে সমস্ত উদ্ভাবকদের কাছে উদোম খিস্তি খেয়ে আপাতত MCB কেন নেমে যায় এই নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখছে আর স্যুইচ দিচ্ছে, আবার MCB নেমে যাচ্ছে।
যাতা! ঃD
ধন্যবাদ
এই জঁরের আরেকটা হোক, বেশ মুচমুচে হচ্ছে।
ধন্যবাদ। বেশ,দেখি এরকম ঘটনা ঘটলেই লিখব।
আরো চাই।
এরকম ঘটনা তো ঘটে না, ঘটাতে হয়। তাইই হোক না।